কবিতা

  • আমাদের প্রয়োজন এখন

    রবিউল হুসাইন   আমাদের প্রয়োজন এখন নিজের মুখ দিয়ে কথা বলা নিজের ফুসফুস দিয়ে নিশ্বাস নেওয়া নিজের পায়ে হাঁটা নিজের হাত দিয়ে কাজ করা নিজের চোখ দিয়ে দেখা   নিজের কানে শোনা নিজের নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেওয়া নিজের জিহবার সাহায্যে স্বাদ নেওয়া নিজের শরীর দিয়ে স্পর্শ নেওয়া নিজের মন দিয়ে বুঝতে শেখা নিজের হৃদয় দিয়ে…

  • কৃষ্ণচূড়া

    রীপা রায়   চারিদিকে এত বেগানা বাতাস কৃষ্ণচূড়ার খোলা চুলে লালটিপ অগোছালো অগোছালো লাগে।   ওর কি হায়া আছে? মেঘ ডাকলে তাকে ডেকে যায় বৃষ্টি এসে ওকেই ভেজায়।   অসময়ে ছড়িয়ে দেয় আধপনা ঠোঁটে আকুলে-বিকুলে একা লাগা রূপ প্রগাঢ় ভোরে খুব বেহায়া হয়ে ফুলে আর ফাগুনে ধুলো মেখে নিশ্চুপ।   ওর প্রতি কি ছায়া আছে,…

  • অঙ্গে আসা অঙ্গে যাওয়া

    মুহম্মদ নূরুল হুদা তুমি আমার ওড়ার সঙ্গী, নামার সঙ্গী নও তুমি আমার চলার সঙ্গী, থামার সঙ্গী নও। উড়তে উড়তে কোথায় এলে কোন সে তেপান্তর – হাট পেরিয়ে ঘাট পেরিয়ে ঘর পেরিয়ে চর? চরের দেখা পেলেই কিন্তু যায় না থেমে দাঁড়, সতী যখন পাহারাদার ভেলায় পতির হাড়। আকাশগাঙে উড়ছে ভেলা মাটির শেকড় ছেড়ে আয় দেখি আয়…

  • দুটি কবিতা

    শামীম হোসেন   ব্যাকরণ   ভাষার অধীনে যাই – করি কার শরীর-বন্দনা!   পাতায় লুকিয়ে রেখে কাঁচুলির ঘ্রাণ ভ্রূণপিঠে হেঁটে যায় – পিঁপড়ের সারি…   অনুবাদে মিলে যায় শাড়ির দু’ভাঁজ!   যাত্রা   পাহাড়ে ওঠার আগে জঙ্গলে যেতে হয়   হেঁটে হেঁটে ঝোপঝাড়ের পাতা সরিয়ে ক্লান্ত শরীরে কি ছুঁয়ে আসা যায় –   চুড়ো…?  …

  • ধ্রুপদ

    পিয়াস মজিদ   বেঁচে থাকার শীতার্ত সরণিতে ফুটে আছি একা কুয়াশাকুসুম। রূপে-রূপে মালঞ্চে মৃত্যুই পলস্নবিত – জীবন যেন। জীবন তো ওই দূরে বনভূমির সবুজ রান্না আর অনন্ত যত পিয়া বসন্ত। তবু তোমার টাইমলাইনে শীতবসন্তের অর্কেস্ট্রা হয়ে আমি নামের ঋতুহীন কেউ মৃত্যু ও জীবনের সীমান্ত ফুরোতে থাকি।

  • দুটি কবিতা

    টোকন ঠাকুর   কেমন যেন লাগে   যে কারণে শীতকে বউ, বসন্তকে শালি ভাবতে ভালস্নাগে কেমন যেন লাগে আমার কেমন যেন লাগে   এই ঋতুতেই হরিণীকে স্যালুট করে চুমু খেতে চায় বাঘে   দুদিন পরই পৌষ ছাড়িয়ে দেহ পড়বে মাঘে ভাবলেই, কেমন যেন লাগে আমার কেমন যেন লাগে   পরিস্থিতি   সুন্দর একটি বাগান দেখলে…

  • বিভ্রম

    মাহবুব বারী   শান-বাঁধানো ঘাটে বসে আছে একজন। দৃষ্টি নিবদ্ধ পুকুরের জলে।   আমরা চারজন দূর থেকে দেখছি – জল কেমন করে জলের সাথে মিশে আছে! মানুষ কেন পারে না? – এই কথাই ভেবে যাচ্ছে শুধু – একজন বলে উঠল। অন্যজন বলল, এমন হতে পারে ব্যর্থ প্রেমিক কোনো, হৃদয়ের ক্ষত যদি দূর হয় এইখানে বসে…

  • প্রতিবিম্বে পাওয়া মায়ের মুখ

    ওবায়েদ আকাশ   গাছের বাকল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে শৈশব কিন্তু আজ সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কী করে মায়ের কাছে যাবো?   মা এখনো আগের মতোই স্বজাত রাঁধুনি আমার হাতের শিকারের পাখির আশায় দিনের পর দিন উনুনে আগুন জ্বালিয়ে রাখেন   সশব্দ জাহাজ ভেড়ার শব্দ উড়ে এলো সেখান থেকে হুড়মুড় করে লাফিয়ে পড়ল প্রসিদ্ধ রান্নার মসলা…

  • কোয়াসিমাদোর বিলাপ

    আহমেদ মুনির   কত দূরে ওই স্মৃতির নোতরদাম তবু তার ঘণ্টাধ্বনি শুনে এসমেরালদা তোমাকেই মনে পড়ে। জলা আর জঙ্গলের এই প্রাগৈতিহাসিক দেশে তোমাকে ভিখুর মতো কাঁধে নিয়ে হাঁটি। না, তোমাকে নয় সে এক অনড় মাংসপি- জন্মকুঁজ দেহের ভেতরে তবু দেহের অধিক। কবরেও যেন যাবে একসঙ্গে যেন মালিকের সঙ্গপ্রিয় পোষা পাখি। নাকি এই কুঁজ বিস্মৃতির ধুলো…

  • আড্ডা

    চঞ্চল শাহরিয়ার   দিলীপের চায়ের দোকানে আড্ডা আমাদের প্রতি মুহূর্তের অহংকার, ফেসবুকে চ্যাট করা, নতুন কবিতা পাঠে মনোযোগ মানুষের কোলাহল, ঈদের বাজার শাড়ির দোকানে উপচেপড়া ভিড় শিউলি কুড়ানো ভোর শরতের মেঘমালা ক্যাটরিনা কাইফের হাসি-হাসি মুখ সব যেন স্বপ্নমাখা সমুদ্রের, উন্মাদনা।   দিলীপের চায়ের দোকান সারাক্ষণ উৎসবে ভরপুর।   দুঃখ নিয়ে তাই কবিতা লেখার সময় পাই…

  • হে আর্দ্র অভিভাবকেরা

    হাফিজ রশিদ খান শোক-জাগানো আগরবাতিগুলো এবার নিভিয়ে দিন কুয়াশা তাড়াতে আমরা বাইরে যাবো   হে মুরবিবগণ, যে-উজ্জ্বল আনন্দের প্রয়োজনে আমরা লড়েছি দীর্ঘদিন সেখানে প্রবেশে আমাদের গাঢ় প্রস্ত্ততি এখন মৃত্যুগন্ধী কথাগুলো আপাতত বন্ধ করুন দোহাই   অন্তরিক্ষ বিজয় ও সমুদ্রের বুকে ঝাঁপ দিতে কাঁপছি উত্তেজেনায় গলন্ত মোমের মতো আমাদের কাজের গতিকে নুয়ে দেবেন না আর নমস্য…

  • নাচনি

    নির্মল হালদার   আঁখি তো নয় বাঁশি গো বাঁশি তোকে দু’চোখে ভালোবাসি – অপমানরে অপমান ছুঁড়ি পালায়ছে বাসাল বেটাকে নিয়ে ছুঁড়ি পালায়ছে কলিজা নিয়ে আমি ম’রেও বেঁচে আছি বাঁশের ছায়ায়   বাঁশ ছাড়তে আমি নাই পারলি, যদি রস নিংড়াতে পারি, যদি আরেকবার বাঁশবন থেকে বাঘ হ’য়ে বেরাতে পারি, যদি ভালোবাসাকে করতে পারি হালুম, তোদের খাওয়াবো…