কবিতা

  • জাগরণ

    মোহাম্মদ রফিক মৃত্যুর দুয়ারে খাড়া, বর্ণহীন নির্বাক নিস্তব্ধ আকাশ গুমোট, রাস্তা ধূলি কীর্ণ, বাস-ট্যাক্সি-স্কুটারের বেয়াদব ছোটাছুটি, এন্তার ধুলোর ঝড়ে হতশ্বাস মাথামুণ্ডু ঢাকা একা একটি বৃক্ষ উবু হয়ে ড্রেনের ওপরে; বৃষ্টি, দেখা নেই, হবে হবে করেও হলো না; এমন সময় কথা নেই বার্তা নেই এক পশলা ঘূর্ণিহাওয়া হঠাৎ মাতিয়ে দিলো চরাচর, বৃক্ষটির ডালপালা ধুলো ঝেড়ে ফের…

  • চারটি কবিতা

    মহাদেব সাহা সন্দ্বীপের চরে কী যে সে ইচ্ছে ছিলো চলে যাই সন্দ্বীপের চরে দুইজনে যেতে থাকি ঢেউ-লাগা সমুদ্রের ঘরে, কথা বলি সারাদিন জলে-ওড়া পাখিদের সাথে ঘুমাই নদীর তীরে জ্যোৎস্নার গন্ধমাখা রাতে; মনে হয় সেইখানে নদী ছাড়া আর কেউ নেই জলের উপরে তাই ঘুমিয়েছি শুধু দুজনেই, হয়তো সাঁতার কাটে কিছুদূরে একজোড়া হাঁস সন্দ্বীপে নেমেছে বৃষ্টি, সেইখানে…

  • শীতের রাতে

    অরুণাভ সরকার এসো, আর বিন্দুমাত্র বিলম্ব করো না আকাশে এখন কোনো সোনা নেই, বহু আগে ঝরে গেছে। রাগে গর্জাতে গর্জাতে উত্তরের বায়ু ছুটে আসে। ত্বক চাটে। পরমায়ু টেনে ছিঁড়ে খায় অন্ধকারে, থাবায় থাবায় তাই এসো, আর কোনো বিলম্ব করো না হাতে গোনা এই তো সময়। আগে-পরে দিন ছোট দিন, তারও দাবি সীমাসংখ্যাহীন সে-দাবি মেটাতে হয়…

  • ভেবে নাও

    উৎপলকুমার বসু জোনাকির কাছে আমি চকিতে ওড়ার শিক্ষা নিতে যাই সন্ধ্যা নামছে আর সারাদিন অনুসরণের পর আমিও কিছুটা ক্লান্ত, হয়ত কাতর; ওই যে আসছে ঝড়,  বাতিদানে দীপশিখা কাঁপছে সংঘাতে, মেঘের আড়ালে বহু নরকের পাল্লা ও দর্পণ বাতাসে আছড়ে পড়ছে – হেথা মানুষেরই সমবেত মাথাঠোকা নির্দয় রাক্ষসীর পায়ে, কাকে ধন্যবাদ দেবে ভেবে দ্যাখো – অল্পবয়েসি ওই…

  • সাতাশিটা বছর পার ক’রে দিয়ে আমার বাবা

    ভূমেন্দ্র গুহ সাতাশিটা বছর পার ক’রে দিয়ে সে-সব বছরের সকল সকালবেলাকে পাখির কিচির-মিচিরে ভরাট ক’রে তুলে আমার বাবা মাত্রই তাঁর সাতাশিটা বছরের সাতাশিটা শীতের ডালপালা রূপকথার সূর্যেরও চেয়ে পুরনো আর-এক রূপকথার দিকে এক্ষুনি বাড়িয়ে দিলেন। বড়ো উঠোনের সামনে সরু রাস্তা, তার পাশে ছোটো পুকুর তার বাঁ দিকের মুখোমুখি ঘন হিজল-বনের মন-কেমন-করার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাঁর যে…

  • হেমন্তসন্ধ্যা

    কাইয়ুম চৌধুরী হেমন্তছায়া ক্রমশ দীর্ঘায়িত হয় এখনো সর্ষেক্ষেতে উজ্জ্বল হলুদ এলানো রক্তরাঙা শাড়ির চারপাশে। কোলাহল ক্লান্ত মধুফুলের গুঞ্জন অস্পষ্ট অন্ধকারে বিলীয়মান। ক্যানভাসে রক্তøানের প্রস্তুতি কবে যে কোথায় অবগাহনের মধুর আলাপন সোনালি জলে ভাসমান। দীর্ঘসময়ে খণ্ডিত ছবির নানারং যেন আনন্দ জাগায় বেজে ওঠে ইমনের মৃদুতান নির্মীয়মাণ নিশীথ যাম। কিছু কি দেবার না নেবার ছিল সেই হিসেবের…

  • দুটি কবিতা

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত সুদীপ্তের একতারাটা সুদীপ্ত বিদায় নিতেই আমার আবাসন ভেঙে পড়তে থাকে। ইংল্যান্ডে কোন্ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয়বিদ্যা পড়ায়। বার্লিন থেকে লালন ফকির নিয়ে কাজ করার জন্যে ডাক পড়েছিল। যাবার মুখে এসে হাজির আমার শহরতলির ডেরায়। এসেই জুড়ে দিলো একটার পর একটা লালন, বাড়িটা তখন থৈ থৈ কান্নার সমুদ্র। ফেরার সময় পুঁথিপত্তরের জন্য যতটা এক্সট্রা লাগেজ…

  • তিনটি কবিতা

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ১. তোমার শরীর তোমার ঠোঁটের জন্য আমার তৃষ্ণা তোমার চিকন বুকের জন্য আমার হাহাকার তোমার শরীর আমাকেই গুছিয়ে দিতে হয়। ২. পুরাকালে যেমন হতো পুরাকালে যেমন হতো : তোমাকে আমার জন্য বিশেষভাবে রেখেছি যুদ্ধে আমার জয় হয়েছে একত্রে দুর্গ থেকে সূর্যাস্ত দেখি, দেখি পাহাড়গুলি তিনদিকে দৌড় দিচ্ছে। ৩. ঈশ্বর নিজেই একা ঈশ্বর…

  • রঙ্গ-বিভঙ্গ

    আলোক সরকার আত্মনির্ভর দেশ-কাল তার মুক্তি সুপ্রাচীন সেই বটগাছ, যার ডালপালায় প্রবুদ্ধ ঝঞ্ঝার কৌতূহল; প্রবুদ্ধ যা তাই দ্বিতীয় প্রেক্ষিত বৃক্ষ অন্য তাৎপর্য, এমনকী আঘাত বিপন্নতায় অন্য মাঠ-প্রান্তর। আমরা আঞ্চলিক দেশ-কাল অস্বীকার করি। সবকিছু পিতৃপরিচয় সেই প্রবুদ্ধ, সেই ঝঞ্ঝার কৌতূহল। কৌতূহল নবনব রূপরূপান্তর – সবকিছুই সেই প্রবুদ্ধ, আমাদের কর্মনিয়তি রূপান্তরের কর্মনিয়তি, তাকে একটা ব্রতও বলতে পার।…

  • দুটি কবিতা

    শঙ্খ ঘোষ শোক একবার থম্কে দাঁড়াই। তারপর ফিরে আসি সনাতন ঘরে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। মাঝখানে কত একাঙ্কিকা কিংবা পূর্ণতার ভারে কলরোল চলে। জন্ম থেকে বিলয় অবধি গোটা প্রবাহের চলচ্ছবি চারপাশে ভাসে এলোমেলো। প্রত্যেকে সেখানে নিজেকেই খোঁজে – নিজেরই সংযোগে খোঁজে তাকে। এভাবে সে হয়ে ওঠে প্রায়শ নূতন ইতিহাস। ঘরের ভিতরে বসে দেখি তাকে,…

  • অপ্রকাশিত জীবনানন্দ দাশ

    ৩৩-সংখ্যক কবিতার পাণ্ডুলিপির খাতা থেকে ৩৩/৩৬ ধানের পেলব শীর্ষ১ মাইল-মাইল খেতে মণিমালা – শঙ্খমালা – নারীর মতন কৃষকের সরলতা থেকে জেগে উঠে ঈষৎ অনন্যসাধারণ২। নিমেষে হারায়ে যাবে পৃথিবীর আলোর বাজারে নিমেষে হারায়ে যাবে পৃথিবীর রাতের বাজারে যেখানে ভূমিকা নেই সেই দেশ মূল গায়েনের হাতে তুলে অভিজ্ঞ পেঁচা’র শ্লেষে ফেলে রেখে যাবে শূন্যতারে। বিকল্প : ১.…

  • একটি ঐতিহাসিক উপপাদ্য

    শারদুল সজল বন্ধুত্ব বাঁচিয়ে রাখা যায় না এসো, শত্রু হয়ে উঠি। লিটন লিটমাসে উদ্ধৃতি উপপাদ্য : বন্ধুদহন- আগুনের জল খেয়ে আমরা যারা পৃথিবীর বিপরীত স্রোতে ভাসমান – নিমজ্জিত; শত্র“লগ্ন পাহাড়ের পিঠে অদ্ভুত অন্ধকার যাদের করেছে গ্রাস; তাদের ভেতর পৃষ্ঠার ফটোকপিতে ঈশ্বর কাঁদেন; কেঁদে ওঠে শিলাবৃষ্টির পাথর ভূগর্ভস্থ ৭০ ফিট মাটিস্তন জলের ফোয়ারা বন্ধু আসক্তির মুদ্রিতমায়ায়…