কবিতা

  • গহিন কুয়াশা

    রোকসানা আফরীন তুমি না এলেই বুঝি ভালো এই শব্দ শীতের শব্দ হয়ে যাক বনভূমি ভরে উঠুক নিস্তব্ধতায় নিজের ভেতরে যাই নিজের ভেতরে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে নদীর কী রং কী বা ঠিকানা প্রান্তরের গানের মতোন নিশিজাগানিয়া গহিন কুয়াশা সুর তোলে সেই সুর অতল জ্যোৎস্নাময়তার দিকে নিয়ে যাক আমাকে…

  • কিশোরীফুল

    অথির শেরপা কিশোরীফুল, শোনো, তরল আগুন খেয়ে আমি আমার নামটারও সম্পূর্ণ অধিকার ফলাতে পারিনি। তবে আমার সজল চোখ আর বেকার হৃদয়ের কী হবে? কিশোরীফুল তুমি কি শীতকাল আসার আগাম ঘ্রাণ হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছ চারদিকে – রটিয়ে যাচ্ছ কুয়াশাবিস্তার – ভাব ও ভাষা এই অপ্রতিরোধ্য শীতে কোন অদৃশ্য কলিংবেল বেজে বেজে ওঠে সাধ আর সাধ্যের মাঝখানে…

  • পৃথিবীটা

    দিলীপ কির্ত্তুনিয়া পৃথিবীতে কাটাতে এসেছি সময় পৃথিবীটা কক্সবাজার সি-বিচে সন্ধ্যা হয়! পৃথিবীতে তুলে নিতে এসেছি রং পৃথিবীটা এলিট পেইন্ট রঙের কৌটোটা ঢেলে পড়ে। পৃথিবীটা দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, ড্যাশ – পৃথিবীটা ব্যাকরণ বইতে থাকে।

  • সহোদরা

    চাণক্য বাড়ৈ আমার যমজ বোন – সে থাকে মালতীনগর – আমি তাকে জ্যোৎস্নািলপি ডাকি। আমাদের আয়না ছিল না কোনোদিন – নিজেকে দেখতে হলে আমাকেই দেখে নিত সে – আমিও তার মুখ দেখে মিটিয়েছি আয়নার দায় – সে পোষে সাদা রাজহাঁস – আমি কবুতর -অথচ অভিন্ন প্রেমিক নিয়ে ছাড়াছাড়ি হলো – সে থাকে মালতীনগর – আমি…

  • জলজঙ্গলের শব্দাবলি

    তুষার কবির ওই উপত্যকা পার হয়ে দেখা পেয়ে যাই দিগন্তের শেষ রেখা; শূন্যতার ভেতর বেরিয়ে আসে আরো কিছুটা শূন্যতা, মৌনতার ভেতর ছড়িয়ে পড়ে হাড়হিম নিস্তব্ধতা! সারিবদ্ধ মেঘের রঙিন বিজ্ঞাপন দেখে বুঝে উঠি কিছুক্ষণ পর জঙ্গলের  সবুজ পাতার ফাঁকে আরণ্যিক বৃষ্টিরা ঝরবে। বৃষ্টির পেরেকে ভিজে যাবে জেব্রার গ্রীবার ছাপ, হাওয়ায় হারানো ভায়োলিন, কুমারীর শেষ লেখা ভাঁজপত্র।…

  • মহামায়া ও আমার সময়

    নাজমীন মর্তুজা আমাকে ঠেলে দেয় দূরের বনান্তরে ক্ষয়ে যায় স্মৃতি আবেগ অনূভূতি মহামায়া কঙ্কাবতী তোমাকে পেতে পৃথিবীর কথা আর ভাবি না জল ঢালি নিরলস কুসুমকলি প্রেমের প্রসারে ফুটে ওঠো আরও একবার মমির পুতুল আমাকে ক্ষমতাহীন অসফল করে দূরত্ব রচো না নীহারিকা ক্লিষ্ট রক্তাক্ত পায়ে ছুটে এসেছি বহুপথ সাহারায় ধূলিময় ম্লান রক্তাক্ত হাতে এঁকে যাই অজন্তার…

  • শিলাইদহের পাশে কালাইতলার মাঠে

    দুলাল সরকার দেহটাকে রেখে যাবার সময়ও বলব আকাশ, নোঙর ফেলা দূরের দিগন্ত, ছায়াবৃত সূর্যালোক, নদীঘেরা আমার স্বদেশ – পরিচিত পথের ধুলার গাঢ় অধিকার বোধ সবুজোজ্জ্বল বৃক্ষের সান্নিধ্যে নত মেঘলোকে আমার শস্যক্ষেতে পুণ্য প্রণাম; সেদিনও বলব এই তুলনাহীনার গল্প কষ্টের মৃদঙ্গ শেষে তনয় তনয়া ঘিরে জলস্পন্দে রাজহাঁস আবরিত পুকুরের ঢেউয়ে সাদা মেঘের পালক দুটি ঘাড় উঁচু…

  • গেরিলা, ফটোগ্রাফার

    সরকার মাসুদ গেরিলার জন্মভূমি জাঙ্গালিয়া মৃত্যুভূমি জাঙ্গালিয়া পাহাড়ের ঘন বাদাড়ের তীব্র সবুজ ঝাঁঝালো গন্ধে তার মাথা ভারি তখন ট্রিগারে টিপ! বিমানাকৃতি ধাতব পাখিটি স্বাধীন হাওয়ায় ডিগবাজি খায় তার মাথায় আগুন মাটিতে পড়ার আগে পাখি ডিগবাজি খায়! গেরিলার অশেষ বেদনা হয়েছে বুলেট; তাকে খুঁজে পাবে বলিভিয়ার, দিঘিনালার মহাসবুজে তীব্র প্রেমের ঝাঁঝালো আরকে চেতনা ধূসর হয়েছে যখন…

  • অপরাধ

    সুহিতা সুলতানা কে অপরাধী? আর কে অপরাধী নয়? এ যেন আজ আর বিবেচ্য বিষয় নয়। সারাদিন বৃষ্টিভেজা দিনে বাসি তৈজসপত্র বিবর্ণ ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে আছে। কারো কোনো ব্যস্ততা নেই বৃষ্টি ঝরানো এমন দিনে কে খুনি হতে চায়? ঘাতকের নীল বিষ দিগন্ত আঁধার করে রাখে। ভুলে গ্যাছে তার চুলের সৌগন্ধ সুগভীর জলের জঙ্গলে স্বপ্নগ্রস্ত জ্যোসনা ঝুলে…

  • যাচ্ছি ফিরে

    মনিকা রহমান এখন আমি যাচ্ছি ফিরে, অগোছালো আলমারিতে রইল শুধু সুখের চাবি, ইচ্ছে হলে সাজিয়ে নিও এই শহরের সকল বাড়ি

  • ক্ষমা এক নীরব ঘাতক

    শামসুল আরেফিন ঋতুর পরিবর্তন তোমার শরীর থেকে সবকটি পাতার পালক কেড়ে নিয়ে গেলে ঝরাপাতাদের তুমি একাকার করে দাও নিরাভরণ শাখা-মরু-ভূমি তখনও ছুটে আসেনি ছুরি হাতে কোনো স্বশিক্ষিত পাড়ার ডাক্তার অর্জুনের বাকলে লুকিয়ে থাকা রোগের পথ্য বার্ধক্য উতরে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গেছে যৌবনের স্বাদ তুমি এখন প্রকৃতির ছোবলে পাতাবিহীন স্বশিক্ষিত ডাক্তারের ছুরির আঘাতে বাকলছাড়া একটি সুবোধ…

  • একটি অচল পদ্য

    শাহজাহান হাফিজ বৃষ্টি হচ্ছে, ঝড় হচ্ছে; বঙ্গদেশে এখন গ্রীষ্মকাল। লোকায়ত দর্শন পড়ছি, একা বসে; ঝরছে মহাকাশ। ভালোবাসি ভূগোল আমি; ভালোবাসি রাষ্ট্রতত্ত্ব-কথা। রোদ উঠছে, তাপ বাড়ছে; দিবসজুড়ে আসছে নীরবতা। জল ঝরছে, নদী ভরছে; বঙ্গদেশে এখন বর্ষাকাল। ভ্রমণে যাবো, দেশ দেখবো একা-একা, আমি হরিদাস পাল। ভালোবাসি বনতত্ত্ব, কীটতত্ত্ব, এমনকি অ্যারাবিয়ান নাইট। মানুষ আমি অতি সামান্য; পাঁচ ফুটের…