প্রবন্ধ

সুমিতা চক্রবর্তী প্রেক্ষাপট বাঙালির মনে ফ্যাসিস্টবিরোধী মানসিকতা এবং সমাজতন্ত্রবাদের প্রতি আগ্রহ জেগেছিল মূলত তিরিশের দশকে। রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের পতন ও সমাজতন্ত্রবাদের প্রতিষ্ঠা ঘটে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে। তারই সূত্র ধরে অল্প কয়েকজন বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজতন্ত্রবাদ সম্পর্কে অবগত ও আগ্রহী হয়েছিলেন। সমগ্র বিশের দশক জুড়ে ফ্যাসিবাদ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছিল ইউরোপে – মূলত মুসোলিনির নেতৃত্বে। কিন্তু…

মোস্তফা তারিকুল আহসান ইদানীং বাংলাদেশে কবিতার ক্ষেত্রে যেসব প্রপঞ্চ লক্ষ করা যায়, তাতে নিঃসন্দেহ হয়ে বলা চলে যে, আমরা সত্যিকার কবিতা থেকে পিছিয়ে পড়ছি। ভালো কবিতা লেখা হচ্ছে না, তা নয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবিতা তার স্থির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। অথচ প্রচুর কবিতা লেখা হচ্ছে, অজস্র কবিতার বই বের হচ্ছে। সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন ও…

প্রসাদরঞ্জন রায় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫) মূলত বাংলা শিশুসাহিত্যে নবযুগের প্রবর্তকরূপে পরিচিত হলেও এই বহুমাত্রিক মানুষটির পরিচয় এক কথায় দেওয়া যায় না। গল্পকার, কবি, প্রবন্ধকার, গ্রন্থচিত্রী, সম্পাদক, মুদ্রক, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, আলোকচিত্রী, বৈজ্ঞানিক, কারিগরিবিদ ও ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর পরিচিতি রেখে গেছেন স্পষ্টভাবেই। দেশজুড়ে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনের পটভূমিতেও তাঁর সম্পূর্ণ পরিচয় পাঠকসমাজ পেয়েছেন কি না…

রবিউল হোসেন বাঙালির সামাজিক ইতিহাসে আবদুল হক (১৯১৮-৯৭) শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।১ মননশীল প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত হলেও সাহিত্যের সকল শাখায় তাঁর পদচারণা প্রশংসাযোগ্য। ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, শিক্ষা, ধর্ম-দর্শন প্রভৃতি অর্থাৎ জীবনাচরণের সকল বিষয় তাঁর মননশীল রচনার বিষয়বস্ত্ত হয়েছে। উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ সম্বন্ধে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনে তিনি কোনো পূর্বনির্ধারিত মতবাদপন্থী হননি। বরং নিজেই নিজের মতবাদের প্রচারক…

হাসান আজিজুল হক ‘এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা’ – কথাটা খুব লাগসই।  বাঙালি জাতি, বাঙালি সংস্কৃতি এবং ইতিহাস এত বিচিত্র পর্যায়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছে যাকে এইরকম একটা বাক্য ছাড়া ঠিক বোঝানো যায় না। আমি বৃহৎবঙ্গের কথা ছেড়ে দিচ্ছি, সেটা কবেকার কথা। বৃহৎবঙ্গ কোনোদিন একসঙ্গে যুক্ত বৃহৎবঙ্গ ছিল কিনা সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন। বিশাল বাংলাদেশকে…

ফেরদৌস আরা আলীম ‘যে নিতে জানে তার জন্য ছড়িয়ে রয়েছে আপনিই হয়ে ওঠা গল্প। শুধু দরকার দেখবার চোখ, যেমন করে হীরাকে কেটে বার করতে হয়, তেমনি দরকার তাকে উদ্বুদ্ধ করার শক্তি।’ এ-শক্তি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে প্রথমবারের মতো যাঁর মধ্যে দেখেছিলেন বা আবিষ্কার করেছিলেন তিনি নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের সময়ে তাঁর অর্ধশতাব্দী পরে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সময়ে…

সনৎকুমার সাহা একটা সময় ছিল, যখন আমরা রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষা-যাপন’ কবিতাটির (সোনার তরী, ১৭ জ্যেষ্ঠ, ১২৯৯) শেষাংশের কিছুটাতে সাহিত্যকর্ম হিসেবে ছোটগল্পের সব লক্ষণ ধরা আছে বলে মনে করতাম। গল্পগুচ্ছেই তখন ছিল, বোধহয় এখনো আছে, ছোটগল্পের এক আদর্শ সংগ্রহ। তাঁর রচনাগুলোয় তারা যেন খাপে খাপে মিলে যায়। আমরা আনন্দ পেতাম। কোনো প্রশ্ন মাথা তুলত না। অল্প-স্বল্প বিদেশি…

সৈয়দ শামসুল হক গল্পের কি শেষ আছে? সেই কোন আদ্যিকাল থেকে মানুষ কত লক্ষ কোটি অযুত গল্প বলেছে, বানিয়েছে, লিখেছে। এখনো তো ফুরোয়নি সেই নেশা। কোনোকালে ফুরোবে বলেও মনে হয় না। নেশাই বটে। মহাতামাকের চেয়েও কঠিন এ-নেশা। গল্প না বলে মানুষ থাকতে পারে না। গল্প যেন আপনা থেকেই মনের মধ্যে উঠে পড়ে। চারদিকের দেখা-শোনার জীবন…

অঞ্জন আচার্য  ‘নিজের কবিতা বিষয়ে কিছু লেখা এক বিড়ম্বনা মাত্র। তাতে প্রকারান্তরে স্বীকার করা হয় যে, আমার কবিতার বিশেষ কিছু মূল্য আছে। আমি নিজে বিশ্বাস করি, এতদিন শুধু কবিতা রচনার চর্চা করেছি মাত্র, আসল কবিতা এখনও লেখা হয়নি। এক অসম্ভব অতৃপ্তি ও যাতনা – যা অন্য কারুর পক্ষে অনুধাবন করা অসম্ভব – আমাকে একটি নতুন…

আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ   নামে কী আসে-যায়, কর্মে তার হবে জয় – এমন একটা প্রবাদবাক্যও আছে।  কথায় বলে – বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়! পুষ্প তোমার নাম কী? ঘ্রাণে জগৎময়! শহীদুল হক নামেই প্রথম গ্রন্থ পারাপার লিখেছেন। পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করেন। এ-প্রসঙ্গে লেখক নিজেই জানিয়েছেন, ‘দেখা গেল যে শহীদুল হক নামে লোকে আমাকে চিনতে পারছে…

কামরুল হাসান ভূমিকা বাংলা কবিতার দশকওয়ারি বিভাজন ও আলোচনায় ষাট খুবই উজ্জ্বল কাব্যদশক। যদিও প্রধান দুজন কবি পঞ্চাশের ঘরানার, তবু ষাটের মতো একসঙ্গে এতসংখ্যক প্রতিভাবান কবির আগমন অন্য কোনো দশকে ঘটেনি। ষাটের কবিরা ষাট ছাড়িয়ে সত্তর, আশি, নববইয়ের দশকে কাব্যচর্চা করেছেন, নতুন শতাব্দী পেরিয়ে ষাটের জীবিত কবিরা আজো কাব্যাঙ্গন মুখর করে রেখেছেন। অনেক উজ্জ্বল কবি…

মিনার মনসুর সিকদার আমিনুল হকের (১৯৪২-২০০৩) অকালমৃত্যুর পর লেখা এক দীর্ঘ কবিতায় অগ্রজ কবি সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, ‘তোমার মতো কেউ কবিতা লিখত না, লিখবে না -’। সংকেতময় এই একটি পঙ্ক্তি দিয়েই শনাক্ত করা যায় তাঁকে। কবি হিসেবে শুরু থেকেই তিনি স্বতন্ত্র। এই স্বাতন্ত্র্য যে আকস্মিক বা ভুঁইফোঁড় কিছু নয়, প্রথম কাব্যগ্রন্থ দূরের কার্নিশেই সেই…