November

সেলিম মাহমুদ   উড়ে-পুড়ে যায় আজাদ-দিনের ভক্তিভরা ভালোবাসা আর সংকটের গান গায় বিজন বনের গাধা! তোলা ছিল অড়হড় পাতা, নামাতে হলুদ, জন্ডিসের- টোটকায় আস্থা রাখে মূর্খ ও গোঁয়ার! আমরা চালাই কলের গানে আঙুরবালার গান পুরাতনী শুনি পূর্ণ পুণ্য মনোযোগে ফিরে পাই তেঁতুলতলার ভূত-প্রেত আর গয়না-নৌকার রহস্যজনক মাঝি! পুড়ে-দৌড়ে আসে, জিরোবার ছলে, দমকল গাড়ি লালফিতা-লালফিতা, ওহে…

সুশীল মণ্ডল   অনেক শব্দ ঘোরে আনকোরা নতুন ওদেরকে বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সাদা পাতার দেয়ালে কবিতার শরীর।   গরিব মানুষের পেটে খাবার থাকে না যাপনে জীবনে কবিতার রেণু ঝুরঝুর করে ওড়ে ভাবি এই রেণু নিয়ে বুনি কবিতার বীজ। ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের গায়ে জড়িয়ে থাকে নিদারুণ শব্দ বিষণ্ণ পাখির ডানায় শিশিরের গুঁড়ো সমুদ্রের তরঙ্গে বিছিয়ে দেয়…

শারদুল সজল   চাঁদের বারান্দায় এ কার লাশ! কার বিরহে ভেসে গেছে গোলাপ-গন্ধের ইতিহাস আলফা সেনচুরির নিকটবর্তী হয়ে কষ্টগুলো আমাদের ঘরে বড় হয়েছে, মাও আহ্লাদি ওগুলো যত্ন করে করে রোয়া চৌকাঠে একের পর এক সাজিয়ে রেখেছে   আর বাবা নিরুদ্দেশ ভোরের বাজার থেকে প্রতিদিন ব্যাগভর্তি অন্ধকার কিনে বাড়ি পাঠাতেন   মা যতই একটুকরো হাসি রান্না…

রনক জামান   নাতাশার বারান্দা চিনে ফিরে যাচ্ছে বিকেলের রোদ। কিন্তু সে-নাতাশাই কিনা, তা তো বলতে পারি না, বা অন্য যে-কোনো নামে কেউ থাকে কি থাকে না ও-ফ্ল্যাটে, তাও জানা হয়নি। কেবল ওই বারান্দাটাকে খুব একা লাগছিল, যেনবা এই বিকেলস্য রোদ ফিরে যাবার আগেই নাতাশানাম্নী কারো বারান্দায় আসা দরকার।   অথচ এরকম ছোট ছোট ট্র্যাজেডি,…

মুস্তাফিজ রহমান   এক   তীর্থে গেলে সাথে নিও আমায়, রেখে এসো কোনো এক নদীর কিনারে, শাপলার ডগা মেপে মেপে সন্ধ্যায় ফিরব কোথাও। রাতভর আঁধারে বিলাস করে ঝিঁঝিঁ পোকার গল্প শুনতে চাই, পূর্ণ চাঁদের ছলনায় নাই বা গেলাম! বুনো ঘাস যদি কিছু বলে, কান পেতে থাকি, এমন কিছু, তেমনি গোপন, বলেছিলে তুমি হয়তো কোনো একদিন,…

দেবাশিষ মহন্ত   কাউকে না বলতে পারি না। শব্দে, চলাফেরায় সৎ থাকি নিজের কাছে। কার্তিকের জ্যোৎস্নায় অন্য ঘোড়া। ঠোক্কর মারছে ক্ষুরে ক্ষুরে। ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে আস্তাবলের দিকে। নতুন সওয়ারি। ভাবছে ‘কিছুই দেখেনি খোয়ার…।’   আস্তাবলের চিঁহি। টিউশনে টেনে দিচ্ছে ইন্টারভ্যাল। মাঝেমধ্যে আমার পথ না আগলে একটা নতুন বনভূমি খুঁজে নিলে… যেখানে কবিতা, রোদ্দুর আর…

আব্দুলস্নাহ মারুফ   ঝিঁঝি পোকার গর্তে কান পেতে শুয়ে রয়েছি ছাবিবশ বছর ভেড়াখালীর গভীর তলদেশে বয়ে চলা নদীটার কলধ্বনি শুনব বলে, এখনো যে-নদী আবিষ্কার করা হলো না! মাটি ছেড়ে উঠেছি বলে মনে পড়ে না মাঝে মাঝে পাশ ফিরে মাটিকে বুকে জাপটে ধরি গড়াগড়ি খাই অন্য একটা গর্ত পর্যন্ত! এখানে প্রেমের কোনো স্থান নেই বেদরকারি ভালোবাসা…

সোহরাব পাশা   মৃত্যু এক অসমাপ্ত শিল্প   স্বপ্নশূন্য ফেরারি জীবন আলোর শেকড় ছেঁড়া দীর্ঘ অন্ধকারে মার্ক্সের বণ্টনসূচি চশমায় ঘনীভূত মেঘ, দাপাদাপি কুয়াশার খোয়া যায় কারো শেষ পাড়ানির কড়ি, মেঘলা দুপুর কাঁপে শঙ্কিত আলোকে নীলকণ্ঠ পাখি তিন সন্ধের পরেও ফেরে না, দূর অনন্তে ওড়ে;   নিরপেক্ষ অন্য পক্ষে শুদ্ধ পক্ষপাত দুঃখেরা জন্মান্ধ চিরকাল আর্তনাদে ব্যবহৃত…

মেহেদী ইকবাল   আমাদের সামনে এখন গোলকধাঁধা আমরা এখন এসে দাঁড়িয়েছি অনেকগুলো পথের সম্মুখে! সবগুলো পথের মুখে এখন আলোর ফোয়ারা, অজস্র বিপণিবিতান উপচেপড়া দ্রাক্ষারস আর আগ্রাসী মাংসের তুফান! কোন সে পথ, যে পথ আমাদের নিয়ে যাবে গন্তব্যে? আমরা বারবার হারিয়ে পথের দিশা হেঁটে চলি ভুল পথে। অথচ বালির ঢেউ মাড়িয়ে নির্ভুল ছুটে চলে উটের কারাভান…

শ্যামশ্রী রায় কর্মকার   তোমার শিরালী হাত আমার হাতের পাশে রেখে একবার দেখে নিতে পার, উৎস থেকে অন্ত ঘোরে সেইসব অবিরত স্রোত তারা সব একাকার, সমান তাপিত আর লাল। যেসব আধার আজ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে তাদের প্রবাহ কিছু ভিন্নতর নয়, মাটি হয়ে আছে সব পলি হয়ে আছে, পুরনো স্রোতেরা এসে নতুন বীজের গান গায়…

তমিজ উদ্দীন লোদী   জল যাচ্ছিল গড়িয়ে জলের মতন তুমি তাকে কাপে তুলে নিলে তুলে নিলে স্বচ্ছ-কাচ জারে   জল এখন কাপের মতন জল এখন জারের মতন   জল, আহা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মতন জমাট বরফ কাদা, মেঘের ধরন কখনো স্রোতস্বিনী কখনো খরস্রোতা বান ডাকা বজ্রের গর্জন।   কখনো সে বোতলজাত করপোরেট আকারবিহীন তবু অসংখ্য…