কালীকৃষ্ণ গুহ

কালীকৃষ্ণ গুহ   অন্ধের সাহস নিয়ে রাস্তায় বেরোই। হিম পড়ে। অনিঃশেষ হেমন্তকাল। কতকালের আকাশ মাথায় নিয়ে প্রতিদিনের ভ্রমণ!   শূন্যতার ওপারে ঈশ্বর আছেন ভাবতে পারলে আনন্দ হতো। কিন্তু তা হবার নয়। আনন্দের উৎসগুলি খুঁজতে হবে গাছপালার মধ্যে পশুপাখির মধ্যে পোকামাকড়ের মধ্যে সমুদ্র আর অরণ্যপর্বতের নৈঃশব্দ্যের বিস্তারের মধ্যে আশায় বুক বেঁধে উঠে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে।  …

কালীকৃষ্ণ গুহ   ‘ঢাকিরা ঢাক বাজায় খালেবিলে’ – কেন বাজায় কেউ জানে না তা কারা শোনে কে দেয় হাততালি? উত্তর নেই – উড়ছে বটপাতা।   এই কথাটা নিয়ে কবির কবি অনেক কথা ভেবেছিলেন মনে – কতকালের অবাক-করা কথা সময় বহন করছে নির্জনে।   মাঠের পাশে একলা একটা বুড়ি চাটাই বোনে, এই শুধু কাজ তার ডাকাত…

কালীকৃষ্ণ গুহ   ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ এই কথাটা ঘিরে অনেক যজ্ঞবেদি মশাল জ্বালা।   ‘অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে’ এই কথাটায় হঠাৎ কেমন ফুটে উঠল রক্তজবা।   ‘দিন ফুরালো হে সংসারী’ শোনার পরেই ভেঙে পড়ল অনেক সাধের বসতবাড়ি।   ‘দিনের পরে দিন যে গেল’ এমন সরল উচ্চারণে কেঁপে উঠল সপ্তপাতাল।   ‘অশ্রম্ননদীর সুদূর পারে  …

কালীকৃষ্ণ গুহ   খেলাঘর বাঁধছি ভাবো খেলাঘর ভাঙছি আবার কে যে আজ খেলার সাথি জানি না, কী-ইবা জানি – না-জানার নির্জনতার কত-যে জ্যোৎস্নাধারা কত-যে তমালতরম্ন নিহিত প্রেমকাহিনি।   তবুও খেলছি জানি ভাঙছি এক খেলাঘর গড়ছি অন্য আরেক খেলছি আপনমনে এই তো খেলার নিয়ম – অপরূপ খেলার সাথি বহুদূরে তার বসবাস খেলছি ঘোর অজানায়।

কালীকৃষ্ণ গুহ   তমসাপারের গল্প তোমাকে বলেছি। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাউলসাধক – তার গল্প, অবিশ্বাস্য, বলেছি তোমাকে যদিও তা অবিশ্বাস্য নয় বাসত্মবিক। ধীরে ধীরে শামত্ম হয়ে আসে বসবাস – ট্রেন ছাড়ে, কিন্তু কোথায় তা যাবে কেউ জানে না। তবুও ট্রেন ছেড়ে চলে যায়। নিরম্নদ্দেশে যায় না কিছুই কোনোদিন।   তমালগাছের গল্প দিঘির নির্জনে রাখা থাকে,…

কালীকৃষ্ণ গুহ   অনেক রাত হলো অনেক পুণ্য – জানি এ-অর্জন বহু প্রতীক্ষার বলি না কোনো কথা গহন সময়ের অন্তরিক্ষে এ এক ভিক্ষা।   রাত্রি বহমান সকলই তুচ্ছ গ্রহণ-বর্জন নশ্বরের ঘুম ঈশ্বরীয় জাগা সকলই খেলা শুধু বাঁচাই শেষ কথা আনত ফাল্গুন।   ‘অনেক রাত হল’ প্রাচীন কণ্ঠ।

কালীকৃষ্ণ গুহ   সেদিন তুমি বলেছিলে, ‘আমাকে নিয়ে একটা প্রেমের কবিতা লিখুন -’ সেইদিন থেকে তোমার দিকে আর তাকাতে পারিনি।   সেইদিন থেকে মনে হয়েছে অচেনা একটা দিগন্তবিস্তৃত মেয়ে। অলৌকিক। অলৌকিকের দিকে তাকানো যায় না।   মনে পড়বে, ‘অলৌকিকের কাছে সকল আকৃতি ঝরে যায়।’ বলেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

কালীকৃষ্ণ গুহ   তার কথা মনে পড়ে ভাসে তার মুখখানি লুকিয়ে চোখের জল সে মুছেছে আনমনে।   তার গানে ছিল ছায়া তার গানে অবসান আকাশে কী-এক আলো বিদায় নেবার দিনে।   দূরে যেতে গিয়ে দেখি হিম পড়া শুরু হলো – হিমের রাতের আকাশ মায়াবী পথের চলায়।   কালবৈশাখি আসে সময়ের এক বাঁকে তার কথা মনে…

কালীকৃষ্ণ গুহ ‘নিজের তৈরি গহবরের উপর দিয়েই এখন আমার হাঁটা’ গত চল্লিশ বছর ধরে কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তকে নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখার কথা – বলা যায় একটি শ্রদ্ধাপত্র রচনার কথা – ভেবে এসেছি, কিন্তু কাজটি করে ওঠা যাচ্ছিল না। কেন যাচ্ছিল না, তা বোঝাও কঠিন; বাধা একটা ভেতর থেকেই তৈরি হয়ে আসছিল আর বাইরে থেকেও যথেষ্ট…