নাসরীন নঈম

  • অনুভবে জন্মেছিলে তুমি

    গগনঠাকুরের জলরঙা ছবি থেকে হঠাৎ ছলছলিয়ে উঠলো পদ্মা জলঝাঁঝির মৃত্যুগন্ধ চমকে উঠলো চকচকে আপেল থেকে স্থিরচিত্র উড়াল দিলো বকের সারি সূর্যাস্তের কমলায় মিশে গেল। বেগুনি ফুলের আভা চিনেবাদামের খোসার মতো নৌকাটা ক্রমশ লম্বা হয়ে উঠতে লাগলো আর তখনই ভাবতে ভাবতে বজরার ওপর উঠে এলে তুমি গলুইয়ে দাঁড়ালে দীর্ঘকায় ক্রমশ অন্ধকার সরে সরে গেল – তখনই…

  • নখের আঁচড়ে হিংস্রতা

    নাসরীন নঈম আমি তো নিজের ভেতরে নিজেই একটি ঋতু পরিবর্তনের মানচিত্র এঁকেছিলাম শুধু তোমাদের বাধাই আমাকে এগোতে দিলো না আমি আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকি তাই আমার বোধ-বুদ্ধি সব বটের ছায়ায় লুকিয়ে থাকে। মন্দার মনি থেকে চিল্কা হ্রদ পর্যন্ত হেঁটে যাই তোমার সন্ধানে তুমি যে আমার বুকের পাঁজর টুকরো টুকরো করে দিয়ে…

  • ফোলডিং চেয়ার

    নাসরীন নঈম   ফোলডিং চেয়ার ঘরে রেখে কী হবে এখন? জীবন তো আর ঘরে বসে থাকে না জীবন বেড়ায় উড়ে উড়ে এখানে-ওখানে নদীর তীরে ঘাসের ওপর রোদ পোহানো কুমিরের পিঠের ওপর জীবন বসে থাকে কোনো কাজে লাগবে তোমার ফোলডিং চেয়ার সারারাত নির্ঘুম চোখ অতীত দেখে বর্তমান ভুলে যায় সমুদ্র পাহাড় আর সমতলভূমিতে ঘন ঘন মৃত্যুসংবাদ…

  • বাতিঘর

    নাসরীন নঈম   শাদা কাগজে একটি নিঃসঙ্গতা রাতের আকাশে ছটফট করে দিনের বেলায় বড় বেশি প্রাঞ্জল মধ্যদুপুরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে অন্যপথ ধরে।   হাঁটতে হাঁটতে পুরনো রাসত্মায় এসে দেখি শিরীষের ছায়া নেই বটের ডালে নেই কোকিলের বাস নীরব দুপুর হাঁটু মুড়ে বসে আছে আগত বিকেলের ছায়ায় ভেসে ওঠে আমার বিপুল সর্বনাশ।   চোখের কার্নিশে…

  • অপরাধ

    নাসরীন নঈম   বিছানায় শুয়ে আছি জানালার পর্দা সরিয়ে সকালে দেখি এক ফালি আকাশ আমার একমাত্র অবলম্বন দিঘির পাড়ের এক বিঘা জমির মতোই একান্ত সম্পদ।   ঘুরে-ফিরে ওই বিছানাই আমার ঠিকানা কেউ তেমন খোঁজখবর করে না। বয়সী মানুষের কুশল নিয়ে কী বা হবে শুনতে হবে শুধু ঘ্যানর ঘ্যানর হাঁটুব্যথা গিঁটে ব্যথা, রুচি নেই। খাওয়া যায়…

  • সাপ

    নাসরীন নঈম একটি কুড়াল কাঁধে ঝুলিয়ে দুম্ দুমাদুম পা চালিয়ে যাচ্ছি হেঁটে খাচ্ছি খেটে তারপরেও কল্জেটাতে লেপটে আছে দুধে ভাতে একটি কালো সাপ।   অমাবস্যায় পুণ্যি দেখে জীবনটাকে বাজি রেখে চলছি ছুটে নিচ্ছি লুটে তোমার দেওয়া দুঃখবুকে আর কতদিন ধুকেপুকে উদ্যত অই সাপের মুখে দিতে হবে ঝাঁপ?

  • চলে যাওয়া কত সুন্দর

    নাসরীন নঈম   চলে যাওয়ার জন্য আমি প্রতিদিন প্রস্ত্তত হয়েই থাকি যা কিছু জমিয়েছিলাম এতদিন ধরে কাকে কোনটা দেব লিখে রাখি।   মন খারাপের বাঁশি একবারও বাজে না আমার এ-মনে শুধু মনে হয় অনেক তো হলো এবার চলে যাই সঙ্গোপনে।   সংসারের বিষপাত্র আর অনেক বেশি নিঃসঙ্গতা মনের ভেতরে মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করছে দ্বিতীয়…

  • ইচ্ছেপাখি

    নাসরীন নঈম   একটি টাটকা কবিতার জন্য আমার কলম কাঁপছিল বহুদিন এখনো কাঁপছে। আমি মনকে বোঝাচ্ছি থামো মন যখন নির্জলা অবসরে যাবো জীবন ঘষে ঘষে আগুন জ্বালাবো অবশ্যই টাঙ্গাইল শাড়ির পাড়ের মতো মিহি সুতার কবিতা আমার কলমে উঠবে।   আমি সেই কবিতাটি নিয়ে একবার শামসুর রাহমান আল মাহমুদ নয়তো সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছে…