নাসরীন নঈম

  • সহসা দুপুরে দহন

    সহসা দুপুরে দহন

    একদিন ছাদে হাঁটতে হাঁটতে নিশি দেখলো, বাহ, মজার ব্যাপার তো! কোত্থেকে যেন এক জোড়া দোয়েল এসে ঘর-সংসার পেতে বসেছে পশ্চিমকোণে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের ফিরোজা রঙের স্যানিটারি পাইপটার খোপে। জগৎ-সংসারের কিছু নিয়মনীতি সম্পর্কে নিশির ইদানীং কেমন একটা অনীহার ভাব জন্মেছে, নিতান্তই অবহেলায় বেড়ে ওঠা তৃণাঙ্কুরের মতো। জীবনপ্রদীপ নিভে আসা মানুষের ফ্যাকাশে দৃষ্টির মতোই বহির্বিশ্বটা ওর কাছে…

  • অলকানন্দার তীরে

    আমার কোনো দুঃখ নেই কতবার বলব কষ্টও নেই আমার সুখগুলো হাওয়ায় ওড়ে অহর্নিশ। হিজল গাছটার কথা মনে পড়লে মন বলে, কেন বড় হলি তুই? আমি তো বিশ্বাস করো বড় হতে চাইনি। শৈশব আমাকে বড় করে দিলো আচমকা – একদিন লাল নানু এসে বললেন, এই নে এখন থেকে সালোয়ার কামিজ ওড়না পরতে হবে – ফ্রক পরা…

  • জোছনা-প্লাবিত

    জোছনা-প্লাবিত

    মাঝে-মধ্যে ইচ্ছে হয় মাঘী-পূর্ণিমার রাতে বোধিবৃক্ষের জোছনামাখা ছায়ায় মুখোমুখি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। সে কে, যার সঙ্গে চন্দনার ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে? বয়সের এই মরা-কাটালের সময় নির্দিষ্ট করে কারো নাম এখন মুখে আনতে ভালো লাগে না। শুধু মনে হয়, কেউ একজন থাকলেই হলো। কিছুটা মানবিক বোধসম্পন্ন হলেই হলো। আহা, পাখির নামে তার নাম – চন্দনা!…

  • শেকড়ে জল দাও

    জীবনকে তো আকাশের বিস্তার দেয়া যায় না হেলেঞ্চা লতার মতো সংসার দেয় না কিছুই শুধু ঢোঁড়া সাপের মতো প্যাঁচ মারে সকাল বিকাল একই রং দেখি বিসর্গ শরীর বেয়ে চাপ চাপ কুয়াশা নিয়ে বসে আছি পার্কের ভেতরে সুনসান হৃদয় উজাড় করে হারিয়ে যাচ্ছে সু-সময়। সেই একই খেলা। চৌষট্টি কলা নতুন নতুন আসন তৈরি করা জ্যোৎস্না কাঁপানো…

  • জীবন যাপন

    একদিন সকালের বেলোয়ারি আলোতে দেখলাম এখনো জেগে আছি পূর্ণজ্ঞানে লোকায়ত জীবনের ঋণ কখনো মুছে ফেলা যায় না সে সময়কে কাছে পেতে চায়। লিচুর মতো ঘোলা চোখে পেছনে তাকায়। নদীর মতো জীবন ইতিহাস হয়ে যাক আবহমান সময়ের কাছে এ মনটা একবিংশ শতকের রোদে পুড়ে খাক হাতের মুঠো খুললেই শুধু বালি আর বালি বন্ধুর দায়ভার বুকে নিয়ে…

  • অনুভবে জন্মেছিলে তুমি

    গগনঠাকুরের জলরঙা ছবি থেকে হঠাৎ ছলছলিয়ে উঠলো পদ্মা জলঝাঁঝির মৃত্যুগন্ধ চমকে উঠলো চকচকে আপেল থেকে স্থিরচিত্র উড়াল দিলো বকের সারি সূর্যাস্তের কমলায় মিশে গেল। বেগুনি ফুলের আভা চিনেবাদামের খোসার মতো নৌকাটা ক্রমশ লম্বা হয়ে উঠতে লাগলো আর তখনই ভাবতে ভাবতে বজরার ওপর উঠে এলে তুমি গলুইয়ে দাঁড়ালে দীর্ঘকায় ক্রমশ অন্ধকার সরে সরে গেল – তখনই…

  • এ বিষণ্নতা কাটবে কবে

    পদ্মার তীরে কুমিরের রোদ পোহানো দেখি না বহুকাল। দক্ষিণ কমলাপুরে গোরস্তানে বাবার কবরে যাবো যাবো করে চল্লিশ বছর কাটিয়ে দিলাম নানা ব্যস্ততার অজুহাতে। নীল লাবণ্যের নেপথ্যে অদেখা তোমার শরীর ক্ষমতা দেখে শালিকের মতো সম্মোহিত হই। উতরোল উপত্যকা পেরিয়ে তোমাকে নিবিড় কন্দরে বসুন্ধরার মতো কফিন ভাবতে হলো না আর – দু-চোখে আমার কাশবন শাদা বিষণ্নতা। সমস্ত…