শ্যামলকান্তি দাশ
-
কাদামাটির বই
শ্যামলকান্তি দাশ আমাকে দাও একটি-দুটি সুর ভাঙা ঘাটের পুরনো সেই গান শরৎকালের রৌদ্রছায়াগুলি একলা বাড়ির ঈষৎ অভিমান। আমাকে দাও ঘন শ্যামল লিখা ভরে উঠুক মনপাগলের খাতা, আমাকে দাও দিনান্তের ছবি – হাটবারের শুকনো ফুলপাতা। আমাকে দাও শুরুর শুরুটুকু, অপরিসর সাঁকোর চলাচল, আমাকে দাও আজীবনের মতো চোখের কোণে ফোঁটা দুয়েক জল। আমাকে দাও … কী আর…
-
রচনা
জগতে তোমাকে স্থাপন করিনি আগে নিরুপায় হয়ে এখন করতে হলো মনে যদি কোনো সংশয় জেগে ওঠে আমাকে একটু ফিসফিস করে বোলো। অতি সাবধানে চোখে রেখো দুটি চোখ অক্লেশে রেখো হাতে নির্ভার হাত এ-জীবন যদি মনঃপূত না হয় কী কারণে তবে দিনভর যাতায়াত! কী কারণে এত দিগমেত্ম ছোটাছুটি বনের আড়ালে এতসব জলাশয় ফাঁকা ঘরবাড়ি রচনায় সম্মত…
-
চাঁদের কবিতা
শ্যামলকান্তি দাশ এক চাঁদকে বললাম, শোনো চাঁদ আমাকে খেতে দাও, পরতে দাও, লোকালয়ে শুতে দাও, বসতে দাও, থালাভর্তি চাঁদের কিরণ দাও, আমি আর এখন থেকে দুষ্টুমি করব না। চাঁদ জঙ্গলে বাঘসিংহের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, পাহাড়ের গায়ে গায়ে হাওয়া দেয়, মরুভূমির বুকে মরুবিজয়ের কেতন ওড়ায়, সে এইসব আবোল-তাবোল শুনবে কেন! চাঁদ আমাকে ফুঁ…
-
মুক্তির উপায়
শ্যামলকান্তি দাশ ঘুমের মধ্যে আমি শেষবারের মতো নগ্ন হয়ে গেলাম। ভাবলাম এবার আমি সম্পূর্ণ চোখে আকাশ দেখব, আকাশে টানা লম্বা শরৎলেখা দেখব। কিন্তু তার আগে রাত্রি বারোটা চলিস্নশ মিনিটে ঘুমের পোশাকে নগ্নতার ছিটে লেগে গেল। খানিকটা আগুন আর কিছুটা অঙ্গার। চারপাশে রাস্তা। রাস্তার চারপাশে কিলবিল করছে মানুষের দীর্ঘ ঘুম। যাই কোথায় এবার! পাগলের মতো মুক্তির…
-
তোমার গল্প
শ্যামলকান্তি দাশ কীভাবে আসরে গল্প নামাও তুমি, কোথা পাও এতো জ্বালা, পোড়া, দগ্ধানি, কোত্থেকে আনো অত মাখো মাখো প্রেম, এত সংঘাত… এতসব হানাহানি! কীভাবে গল্প এত ছিলা- টানটান, কোথা পাও শ্যাম-শ্যামাঙ্গিনীর কথা, সংক্ষক্ষপে বলো, আরো বেশি সংক্ষক্ষপে, কীভাবে ফাটাও জাদু ও বাস্তবতা! ঈর্ষার চোখ… দাঁতে দাঁতে কিড়িমিড়ি, হাঁড়ি-কলসিতে লুকোনো বারুদ ফাটে, চাঁদের…
-
মানুষের কথা
শ্যামলকান্তি দাশ মানুষ বড়ো হচ্ছে। একটু একটু উঁচু। মঞ্চ থেকে যাতে লোকে দেখতে পায়। চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলছে। জিভ আলগা। দাঁত ফাঁকা। হুহু করে কথা বেরিয়ে যাচ্ছে। তার আঙুল ঘূর্ণ্যমান। পাখনা উড়ন্ত। উড়তে উড়তে সে এস্পস্ন্যানেড যাচ্ছে। পার্ক স্ট্রিট যাচ্ছে। খিদিরপুরের ট্রাম খুঁজতে খুঁজতে ফুটপাতে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে। তার গায়ে চুন। মুখে কালি।…
-
বিলম্ব
শ্যামলকান্তি দাশ আমাকে হয়তো কিছুদূর নিয়ে গেলে আমাকে হয়তো আরো দূর নিয়ে যাবে ওভাবে পালাতে পারব না আমি আর আমাকে কোথাও পুঁতে রেখে যেও তুমি। গ্রামের দুপাশে উদাত্ত বাঁশবন – কোনো উৎপাত ধারেকাছে ঘেঁষবে না। চোখ ফুঁড়ে-ফুঁড়ে যেদিন উঠবে গাছ বুক খামচিয়ে যেদিন গজাবে পাতা মাথা চুরমার, যেদিন উড়বে ছাই দেখো তো আমার…
-
মাত্র কয়েকটি কান্না
শ্যামলকান্তি দাশ ১ তোমার কান্নাগুলি রত্নসমান। বারবার ভুলে যাই বারবার ভুলতে পারিনি। যতবার বাড়ি ফিরি, গানের আড়াল থেকে কান্না এসে আমাকে কাঁদায়! ২ কেন কাঁদছ? কেন কাঁদছ? কী-বা লাভ কান্নাকাটি করে? সব কান্না মারাত্মক, সহ্যের অতীত – কান্নার ধারাভাষ্য ধুয়েমুছে সযতনে পাত্রে ধরে রাখি। ৩ ছোট-ছোট রক্ত দিয়ে কেউ হয়তো লিখেছে তোমাকে,…
-
চুরি
শ্যামলকান্তি দাশ কেউ তালা ভাঙছে। চড়চড়াৎ শব্দ হচ্ছে পাথরের দরজায়। চুরি করবে। চুরি করবার আগে একটু দম নিচ্ছে। একটা দেশলাই জ্বলছে। ভাবছে, এই এতগুলো সোনার সিঁড়ি, সিঁড়ি টপকে যাওয়ার পর এই এতগুলো মানুষ, মানুষ অতিক্রম করবার পর বাড়িভর্তি অন্ধকার! একটা পূর্ণাঙ্গ ছাদ সুষুপ্তিকে জাগিয়ে রেখেছে। হুড়কো খুলে ফেলবার পর কেউ ভাবছে প্রলয়ের আগে…