শুভাশিস সিনহা
এক
দূরে যে দাঁড়িয়ে থাকে, সে পেছনে দেখে না তাকিয়ে
কেবল এদিকে চায়, মাপে পথ চোখে-চোখে, জানে নয়া ঠার, নীরব ধ্বনিতে
ওড়াবে মরণধূলি, তারপর হাতে হাত মেলাবে আনন্দে, ‘পরিচয় পেয়ে ভালো হলো’
দূরে থাকে, আরো দূরে তার ছায়া ছুটে গেছে শরীরের দাসত্বের শিকল আলগা করে
সে তা দেখল না, এদিকে তাকাল, দেহ এক মায়া এক কেড়ে নেবে বলে
ছায়াও ছিল না তার, পোড়া অঙ্গ মিশে গেল রোদে, ছাই হলো হাড্ডি-চাম সব
সাধের বিছানো নুড়ি, তুলে নিয়ে গেল কুড়ানিরা, গেল ছায়া, জীবন বিপন্ন সেতু,
তাও বুঝল না।
দুই
হাতে যা ধরেছি অনিমেষে, সে আসলে ধরেছে আমাকে, টেনে-টেনে
নিজের নিকটে নিয়ে গোপনে হাজির করে শত-শত বিষপোকা, ফিসফিসিয়ে
বলেছে, ধরো তো ধরো, জীবন ক্ষয়েছে হুলে-হুলে, শত হুলস্থুলে, তবু হাতে
ধরতে গিয়েছি অবিরত ক্ষত-বিক্ষত জীবন, হাসির বকুল ফুলে সাদা সাদা গন্ধ বরিষণ
ভিজে সারা অঙ্গভঙ্গ, শরীরের রন্ধ্র ছিঁড়ে থোকা-থোকা করবীর মুখ
ছুঁয়ে দেখি, সে আসলে আমাকে ছুঁয়েছে, জানে বলে, মৃত্যু সরল সহজ
কাঁটাঝোপে অথবা ডাঁটায়, গন্ধে-গন্ধে, পরশনে-পরশনে ভাসে, ডুবে যায়…
তিন
পাখি মানে খেরোকাগজের ভাঁজ, তিন-চারটে কোণ আর পাখার মতোই ছলনার
উড়ে-উড়ে যেতে চেয়ে বুঝে উঠবে কাগজের শিরা বা ধমনি নেই,
ওড়ার জন্যও লাগে রক্ত, সে-রক্ত ফিনকি দিয়ে শেষে ছুটে বেরবে আকাশে,
অস্তকালে পাখালাগা সূর্যগুলো ডুবে যাবে কালো এক অদেখা দিঘিতে,
যাও-যাও শিখে এসো বেপথু সাঁতার, পাখি মানে সাঁতার না শেখা জলযান,
শূন্যপথে প্রতিরুদ্ধ ঢেউয়ে-ঢেউয়ে ফুরাবে জ্বালানি তার, কলিজায় মরিচাপ্রাচীর,
ক্ষয়ে আসা, অভিশাপে অভিমানে অভিবাসনের উড্ডয়নে…
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.