নাসির আহমেদ
অসহ্য সুন্দর ঘ্রাণ
দীর্ঘাঙ্গী সুন্দর তুমি চলে গেলে ঘরময় তীব্র ঘ্রাণ রেখে
সেই গন্ধে জেগে থাকে বিনিদ্র কবিতা সারারাত
ঘরময় পায়চারি করে এক শিল্পছায়া যেন কিবরিয়ার
ষাটের দশকে আঁকা আশ্চর্যসুন্দর নগ্ন নীল বিমূর্ততা।
নিভৃতে তোমার সঙ্গে মুগ্ধতায় জেগে থাকে অস্থির শব্দেরা
আসলে তুমি তো নও, তোমার ঘ্রাণের সঙ্গে, তোমার প্রাণের
সঙ্গে
জেগে থাকে কবিতার অগোছালো শব্দ রাশি রাশি
আজ রাতে এই ঘরে কবিতার বৃষ্টি হবে ঘ্রাণে উন্মাতাল।
আনন্দের এই ঘ্রাণ কেন ডেকে আনে এই মধ্যরাতে স্মৃতি
বেদনাবিধুর স্মৃতি এচিং মাধ্যমে করা ‘মেমোরি সিরিজ’ যেন!
আসলে তোমার সঙ্গে আমার তো কোনো স্মৃতি নেই!
তাহলে কিসের ঘ্রাণ, কার ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে আছে শিল্পবোধ।
উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছুই মেলে না, গাঢ় কুয়াশা কেবল
জীবনানন্দের মতো আমারও মননজুড়ে শুধু ক্লান্তি আনে
কী এক বোধের কাছে ধরা পড়ে যায় শিল্পতৃষ্ণাভরা মন
তার কোনো ব্যাখ্যা নেই বর্তমান ভবিষ্যৎ কালসীমা নেই।
আসলে আসে না কেউ কবির অফিসে কিংবা ঘরে
স্নায়ুর ভেতরে শুধু অসহ্যসুন্দর ঘ্রাণ মাথাকুটে মরে।
গোধূলিবেলার সৈকতে
খ- খ- কাচ পড়ে আছে সমুদ্রসৈকতে ঝিকিমিকি
গোধূলির সোনা রং ঝলমল করছে ওই জলের ওপর
শাদা কাচের খ-গুলো জুড়ে – তুমি বলবে শিল্প বটে
যেন দক্ষ শিল্পীর ইজেল ছড়িয়ে আছে গোধূলির সৈকতে।
আমি এই জলজ ধূসর নীল সমুদ্রের কাছে এসে যখন দাঁড়াই
একা তখন আমার চোখে পড়ে না শিল্পের কোনো ছায়া
বরং ক্রন্দনরত সমুদ্রের মর্মলোক থেকে আমার ভেতরে দ্রুত
সংক্রমিত হয়ে যায় জীবনের দুঃখদাহ গোপন গোঙানি।
এই হু হু কল্লোলের মধ্যে আমি শুনি লালনের
অধ্যাত্ম বেদনাময় বিরহ সংগীত আর সহস্র বছরব্যাপী
মানুষেরই স্বরচিত নিঃসঙ্গতা। অনন্ত নীরবতার মতো
ভয়াবহ নির্জনতার কুয়াশায় ভিজে ওঠে মন।
সন্ধ্যার সমুদ্রে ক্রমে রহস্যময়তা দানা বাঁধে, শিল্পী তুমি
সেই রহস্যময়তা নিয়ে ছবি এঁকে হয়তো বা পুরস্কৃত হবে
আমি এই আধো অন্ধকারে নান্দনিকতার কোনো দৃশ্য
সাজাতে পারি না
বরং আমার অনুভূতিময় জমা হয় পলিহীনতার নোনা বোধ।
সমুদ্রের নিঃসঙ্গতা এবং নির্জনতা হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে
মানুষেরই মর্মজ¦ালা রচনা করছে নানা প্রতীকে ইঙ্গিতে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.