শ্রদ্ধান্জলি

  • আনিসুজ্জামানের সাথে দেখা-সাক্ষাতের স্মৃতি

    আনিসুজ্জামানের সাথে দেখা-সাক্ষাতের স্মৃতি

    অনুবাদ : আশফাক স্বপ্ন ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বসার কক্ষ ছিল সে-সময়কার ঘটনাবলি, ইতিহাস আর রাজনীতি নিয়ে সারগর্ভ ও সুবেদী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বঙ্গ বা বাংলা নিয়ে আলোচনা তখন তুঙ্গে – এই অঞ্চলের সমসাময়িক অস্বস্তি আর রাজনৈতিক প্রতিরোধ, এর সাংস্কৃতিক আর সাহিত্যিক পুনর্জাগরণ ছিল আলোচনার বিষয়। এসব আলাপ-আলোচনার মধ্যমণি ছিলেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। তাঁকে ঘিরে…

  • আনিসভাই

    আনিসভাই

    ১৯৬১ সাল। ঢাকায় তখন রবীন্দ্রবার্ষিকী পালনের জোর তোড়জোড়। দুটো কারণ। এক. শতবার্ষিকী। দুই. পাকিস্তানি সরকারের রবীন্দ্রচর্চার ওপর নিষেধাজ্ঞা। সুতরাং আমাদের জিদ ষোলো আনা ছাড়িয়ে। মানব না এ-বন্ধনে, মানব না এ-শৃঙ্খলে – তরুণসমাজ, মাঝবয়সী ও বয়সী সবাই একাট্টা। আমাদের দাবি প্রাণের। সংস্কৃতির। অধিকারের। পাকিস্তানের বয়স তখন তেরো-চৌদ্দো। আমাদের মূল সাংস্কৃতিক বন্ধনটি হাজার বছরের বাঙালি ও বৃহত্তর…

  • মৃত্যুঞ্জয়ী আনিসুজ্জামান : তাঁর প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও তাঁর লেখালেখিতে বাংলাদেশের শিল্পী ও শিল্প

    মৃত্যুঞ্জয়ী আনিসুজ্জামান : তাঁর প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও তাঁর লেখালেখিতে বাংলাদেশের শিল্পী ও শিল্প

    ‘মানুষ মৃত্যুকে এড়াতে পারে না, কিন্তু কেউ কেউ মৃত্যুকে জয় করতে পারে।’ কথাগুলো লিখেছিলেন আনিসুজ্জামান ২০০৬ সালে তাঁর এক প্রিয় শিল্পীবন্ধু নিতুন কুন্ডু সম্পর্কে তাঁর মৃত্যুর পর। নিতুন কুন্ডু ছিলেন আনিসুজ্জামানের সমবয়সী। মারা গিয়েছিলেন ৭০ বছর বয়সে। নিতুন কুন্ডুকে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষদের একজন আখ্যায়িত করেছেন। আনিসুজ্জামান মৃত্যুবরণ করেন তিরাশি বছর বয়সে। তিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন।…

  • আমাদের একাত্তর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আনিস স্যারের সান্নিধ্যে

    আমাদের একাত্তর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আনিস স্যারের সান্নিধ্যে

    বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে অর্থাৎ ১৯৫০-এর দশকে বাংলাদেশে যে-রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল, সেই রেনেসাঁসের অগ্রণী পুরুষরা ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ড. কাজী মোতাহের হোসেন, ড. এনামুল হক, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আবুল ফজল, সরদার ফজলুল করিম, আব্দুর রাজ্জাক, বদরুদ্দীন উমর, রেহমান সোবহান, ড. মাহমুদ, শওকত ওসমান প্রমুখ। পঞ্চাশের দশকেই এই অগ্রণী চিন্তানায়কদের সঙ্গে…

  • আনিসভাই

    আনিসভাই

    আনিসভাই, সারা পৃথিবীর বাঙালি এবং বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগীদের কাছে অতি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গত ১৪ মে (২০২০) প্রয়াত হয়েছেন। সব মৃত্যুই মানুষের মৃত্যু, প্রিয়জনদের কাছে এক বিপুল বেদনাময় শূন্যতা, এবং মৃত্যু ক্ষুদ্রমহতের বাছবিচার করে না; তবু ভাবতে খারাপ লাগে যে, বিশ্বব্যাপী করোনার অতিমারি বাঙালির এই মহিমাপূর্ণ অভিভাবককেও তুলে নিল, তাঁকেও রেহাই দিলো না। পৃথিবীর অনেক…

  • এক ও অদ্বিতীয় আনিসুজ্জামান

    এক ও অদ্বিতীয় আনিসুজ্জামান

    বলতে পারি না, আমি কখনো তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলাম। গত দু-বছরে দেখা হয়নি একবারও। মফস্বলে থাকি। ঢাকা যাইনি অনেকদিন। এক সাহিত্য-সংস্কৃতি মেলায় তিনিই এখানে এসেছিলেন। তারপর আর না। ফোনালাপও নয়। সংকোচ ছিল আমারই। অকারণে তাঁকে বিরক্ত করা – মন চায়নি। তাছাড়া তাঁর শরীরের অবস্থা! সাবধান হতে হয় বইকি। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান – আমাদের সবার…

  • আমার বন্ধু ও সহকর্মী আনিসুজ্জামান স্মরণে

    আমার বন্ধু ও সহকর্মী আনিসুজ্জামান স্মরণে

    প্রফেসর আনিসুজ্জামান আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন। তিনি আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, সমাজ ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন একটি আলোকবর্তিকার মতো এবং একটি অবিস্মরণীয় নাম। তাই আজ অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাঁকে স্মরণ করছি। অতি অল্পদিনের ব্যবধানে চলে গেলেন আমাদের সমাজের গর্বের মানুষ বেশ কয়েকজন – স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ভাষাসৈনিক ও বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ডা.…

  • আনিসুজ্জামান স্মরণ

    আনিসুজ্জামান স্মরণ

    আনিসুজ্জামানের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় শিকাগোর ইন্টারন্যাশনাল হাউজে, ১৯৬৫-তে। আমার বন্ধু কে.এল. কৃষ্ণ তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পিএইচ.ডি করছেন; আমি ব্লুমিংটন, ইন্ডিয়ানা থেকে তাঁর কাছে বেড়াতে এসেছি। আনিসুজ্জামান ‘দক্ষিণ-এশীয় ভাষা ও সভ্যতা’ বিভাগে পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো। কৃষ্ণই বোধহয় আলাপ করিয়ে দিলেন। ঢাকার মানুষ। নম্র। তাঁর বিদ্যাবত্তার কথা তখন কিছুই জানি না। কিন্তু পরে যখন ১৯৭০-এ…

  • তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা একুশের উত্তাল সময়ে

    তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা একুশের উত্তাল সময়ে

    তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা একুশের উত্তাল দিনগুলোর মধ্যে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল তথা ‘মেডিক্যাল ব্যারাক’ প্রাঙ্গণে – ১২ নম্বর ব্যারাকের সামনে দাঁড়ানো দুই ভাষা-আন্দোলনকর্মী – আনিসুজ্জামান ও আহমদ হোসেন। ওঁরা দুই বন্ধু, জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। হালকা ও পাতলা, দীর্ঘকায় গড়নের তরুণ আনিসুজ্জামানের সঙ্গে সে-পরিচয় পরবর্তীকালের খ্যাতিমান, জাতীয় অধ্যাপক, সুসাহিত্যিক ও গবেষক, স্বল্পভাষী, কিছুটা গম্ভীর, রসবোধসম্পন্ন…

  • নীরবে নিঃশব্দে ইন্দ্রপতন

    নীরবে নিঃশব্দে ইন্দ্রপতন

    মাত্র কয়েকদিন আগে আনিসুজ্জামান আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন। আমি এই লেখায় আনিসুজ্জামান – এই নামটিই শুধু লিখতে চাই। কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই। তিনি নিজে ‘আনিসুজ্জামান’ লিখতেন, আগে কিংবা পরে কোনো উপাধি বা বংশপরিচয় উল্লেখ করতেন না। প্রথম জীবনে হয়তো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত চল হিসেবে এসব উল্লেখ করতেই হতো; কিন্তু কর্মজীবনে এসে সব উপাধিই…

  • বিদায়, প্রিয় রাজপুত্র

    বিদায়, প্রিয় রাজপুত্র

    অনুবাদ : আশফাক স্বপন আনিসুজ্জামানের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে-প্রজন্ম জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিয়েছিল, তার মূল্যবোধকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছিল, সেটি আরো একজন সহযোদ্ধা ও আপনজন হারাল। আমাদের স্বাধীনতার চারটি মূল স্তম্ভ – গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্র – আনিসের মতো আর কেউ অমন অনড় দৃঢ়তার সঙ্গে গ্রহণ করেছে, এবং নিজেই তার প্রতীক হয়ে উঠেছে, তেমন…

  • আনিসদা

    আনিসদা

    আনিসদার চলে যাওয়ার খবর পেলাম বিকেলবেলায়। আমার তিনতলার ঘরের জানলায় বসে মরা রোদ দেখছিলাম, ঢাকা থেকে ফোন এল, আনিসদা নেই। তিনি খুব অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা, এই খবর আগেই পেয়েছিলাম। স্বীকার করছি, আমি বিচলিত হইনি। কারণ আমি জানতাম, এটা আর একটা প্রবল ঢেউ; কিন্তু আনিসদা যা সহজেই পার হয়ে এসে দেখা হলে…