কবিতা

  • সব সন্ধ্যাই রাতের তলপেট নয়

    দ্রাবিড় সৈকত   এই বাতিকের কোনো উত্তর নেই রূপচাঁদা সময়ের পেট থেকে পিছলানো জমাট হীরক যাকে তুমি জেলি ভেবে দাঁত এবং চিবুক বসাও বিষুবরেখার প্ররোচনায় জানোই তো, পরিপাকে বেঁচে থাকে মাছের নিয়ম এই পরিপাক ধরে তোমার চলার পথে যারা হয়েছে উড়াল সড়ক তাদের ডানায় বসে আছে ঠিকাদার ঠিকুজি ঘুরিয়ে দেখার অবসরে তিনি অংক করেন তোমাদের…

  • ঈর্ষা

    চাণক্য বাড়ৈ আমার প্রেমিকা, তবু রোজ সে ঘুমোতে যায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, আমি ভাবি পরের জনমে তবে জমিদারই হবো। বনবাসে ধ্যানে যাই, তাতেও জন্মে না বিশ্বাস ধুলো পরিমাণ ‘জন্মান্তরবাদে’। সামান্য বালির কণা, তার কাছে হিমালয় খুব ক্ষুদ্র মনে হয়। উদয়াস্ত সমর্পিত রবীন্দ্রনাথে। তানপুরা কোলে নিলে পৃথিবীতে পাই না তাকে আর। ভাবি, পরের জনমে তবে অর্ফিয়াসই হবো। তবু…

  • দুটি কবিতা

    জাহিদ হায়দার ঘুমের কোনো ভবিষ্যৎ নেই কিছু নেই, ঘুমের উজ্জ্বল বর্তমানে জেগে আছ তুমি; জাগরণে তোমার ভেতর কবেকার এক স্বপ্নভোর পাখির ডানায় উড়ছে। ঘুমাবার জন্যে ফিরছো বাসায়। একটি চেনা মাধবীলতা শীতের বাতাসে অন্য কার্নিশে দুলছে, তুমি তার সঙ্গ খুঁজে রৌদ্রতে চঞ্চল, বৃষ্টিতে ছিলে অধিক নীল; মনে করা যাক, আকাশের সাবলীল থেকে ফিরে পাখিটার ঘুম পাচ্ছে।…

  • শ্রাবণের পদাবলি

    কামরুল ইসলাম কখনো মনও ডুবে যায় শ্রাবণের সামন্ত জলে তখন তালগাছের মাথা বেয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা নির্জন অাঁধারে ডুবে যায় পাঠশালা আর কাঁঠালপাতারা রাতভর পড়তে থাকে জলের নামতা এ-সময়ে কোনো সোনাব্যাঙের জলকেলির দিকে মুখস্থ ফুলেরা ফুটতেই পারে –   দুই জানালায় ঝুলে থাকা দুঃখগুলো লতিয়ে ওঠে মেঘের জাংলায় ভোরের অদূরে শববাহী মানুষেরা যেন সব কুয়াশা-পথিক…

  • প্রেমিক ও পতঙ্গ

    আহমেদ বাসার                                                               পোড়ার আগে পতঙ্গ শুধু আগুনের রূপই দেখে ফণা-তোলা লেলিহান অগ্নির নৃত্য-মুগ্ধ পতঙ্গ বহুদূর থেকে ছুটে আসে প্রাণপণ আত্মাহুতির আনন্দ যতক্ষণ না ভস্ম…

  • বুদ্ধ বললেন, তবু…

    সৌম্য সরকার একদিন ছিল যেদিন বুদ্ধের শরীরে দেশলাই ঠুকে দিলে জ্বলে উঠতো আগুন : কষ্টগুলো হামলে পড়লে কুঁকড়ে যেতেন তিনি, বেদনায় নীল, কামে-ঘামে বেগুনি হয়ে উঠতো শরীর – তারপর আবার একদিন অন্য এক আগুনে পুড়ে যখন শুদ্ধ হলেন তিনি, দীর্ঘ উপবাসের পর সুজাতার হাতে দগ্ধ একবাটি পায়েস খেয়ে প্রথম বললেন, ‘জগতের সব প্রাণী সুখী হোক’…

  • অন্ধ হতে পারিনি

    সোহরাব পাশা আমাকে বিশ্বাস করো কেবল তোমার জন্যে অন্ধ হতে পারিনি আজো বহুকাল আগেই পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমার সকল নিঃস্ব জেনে ভালোবাসা যেখানে ব্যাকুল ডাকে একা অধিক উজ্জ্বল দিগন্তের শেষ প্রান্তে ঝরে প্রার্থনার শুদ্ধজল   আমি কোনো গ্রহবৃক্ষ নই ধু-ধু নির্জন ভাঙা সাঁকোর এপারে দাঁড়িয়ে আছি মাঝখানে ডেকে ওঠে দীর্ঘ ভয় অথই জলঘূর্ণি পেছনে…

  • দাঁড়াও পথিকবর

    বীথি চট্টোপাধ্যায় [ফ্রান্সের মার্সাই শহরে অভুক্ত থেকেছেন কবি মধুসূদন ও তাঁর সংসার]   এস্টেট থেকে টাকা আসছে না হাতে বাচ্চারা প্রায় কিছুই খায়নি রাতে, না-পেলে খাবে কী? শুধু কটা বাসি রুটি… পড়ে আছে দেখে, শুতে গেছে গুটিগুটি।   রাত শেষ হয়ে সূর্য ওঠার পরে কী করে উনুন জ্বলবে কবির ঘরে? তারা ঝিকমিক করে ফ্রান্সের রাতে…

  • অধরা

    জরিনা আখতার   জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছ বললে ভুল হবে – আজীবন তুমি আমার স্বপ্নে বসবাস করছ বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে, সেই দূর শৈশবে জেগে উঠেছিলাম তোমাকে পাবার সাধনায় – আলপথে হাঁটতে হাঁটতে একাকিত্বের বেদনা যখন বিস্ময়কর আনন্দে রূপায়িত হলো সেই থেকে শুরু – শস্যক্ষেতে অধীর অপেক্ষায় একটি নিঃসঙ্গ বক জলের আরশিতে একটি হিজল গাছের অকৃত্রিম…

  • অগ্রবিজ্ঞান

    রবিউল হুসাইন   প্রকৃতির শিক্ষায় শিক্ষিত ওরা অক্ষরজ্ঞান ছাড়াই অভিজ্ঞতার বৈদগ্ধে উন্নত ব্যক্তিক উৎকর্ষতায়   ওরাই এখন প্রজ্ঞাবান জিজ্ঞাসু পরিপূর্ণ ধর্মতলার অতলে ম্লান নিগূঢ়তা অসম্পূর্ণ   ধর্মান্ধের তীব্র নেশায় জলসাপ সব নড়ে জংলিফুলের কৃষ্ণছায়ায় জলপরীরা ওড়ে   ধর্মজলে খুব আবেগে সন্তরণ করে হঠাৎ আমি উঠি জেগে অনেক দিনের পরে   তখন বিলম্বকাল সময় তমোময় সবকিছু…

  • দুটি কবিতা

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অজ্ঞেয় এবার যে-নৌকো এসে কূলে ভিড়ল আমি জানি ফেরার উজানি স্রোতে আমি তার একাকী সওয়ার। লোডশেডিংয়ের মোম জ্বেলে ধরে লক্ষ করি তার মাপ অবিকল আমারই দেহের সম্পূরক। তবে কি কফিন সেটা? অথবা কাঠের জামা বুঝতে পারি না। গলুইয়ে যে বসে আছে সে কি অন্ধ নাকি তার চোখে বাঁধা আমারই কাফন? আমি তার জায়গায়…

  • মৃত্যুর আগে

    শ্যামল চন্দ্র নাথ বোবা সন্ধ্যায় আমি ফিরে যেতে চাই, মরে যাব তাই – নিজের বাড়ি ফিরে যাব ভাবতেই কেমন লাগে! কত যুবক-যুবতীর ভিড়ে ব্যর্থ দিনের শেষ প্রহরে দেখেছি প্রেমের বিক্ষিপ্ত উপহার! আর কি চাই? অন্ধকার গলির ভিতর হেঁটে যাওয়া স্মৃতির ব্যঙ্গ সান্ত্বনা নাকি তীব্র যন্ত্রণা; ওই বেদনার চোখে বিজয়ের হার দেয়নি কেউ তুলে; তবু আমার…