‘একটা টেবিল’ এটা বললে আমরা বুঝি, একটা টেবিল পেটার বিক্সেল

অনুবাদ : সাইদ বদরুল করিম

আমি তোমাদের একটা গল্প বলতে চাই। একজন ক্লান্ত-বয়স্ক মানুষের গল্প। লোকটি কোনো কথা বলতেন না। সবসময় এমন ক্লান্ত থাকতেন যে, ক্লান্তিতে তিনি হাসতেনও না। এমনকি, ক্লান্তির জন্য কারো ওপর রাগ করার শক্তিও তার ছিল না। একটা ছোট্ট শহরে তিনি থাকতেন। সেই শহরের কোনো এক রাস্তার শেষ মাথায় অথবা চৌমাথার কাছে তার বাসা। তাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অবশ্য এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তিনি সবসময় পরতেন ধূসর রঙের ক্যাপ, ধূসর প্যান্ট, ধূসর জ্যাকেট এবং শীতকালে ধূসর রঙের লং কোট। হাড্ডিসার গলার চামড়া, খসখসে এবং কুঁচকানো। সাদা শার্টের কলারটা তার সরু গলার তুলনায় অনেকটা ঢিলা। একটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সবচেয়েওপরের তলায় তার ফ্ল্যাট। এমন হতে পারে, ভদ্রলোক কোনো একসময় হয়তো বিয়ে করেছিলেন। হয়তো তার সন্তানও ছিল। অথবা তিনি এর আগে অন্য কোনো শহরে থাকতেন। তবে একটা কথা জোর দিয়ে বলা যায়, অবশ্যই তার একজন সন্তান ছিল; কিন্তু সেটা বহু আগে। এত আগে যে, যখন বাচ্চাদের পোশাক এবং বড়দের পোশাক একই রকম ছিল। পুরনো ফটো অ্যালবামের ছবিতে যেরকম দেখা যায়, দাদি-নানিরা যেরকম পোশাক পরতেন, সেরকম পোশাক পরার কোনো একসময়ে।
তার ঘরের ভেতর দুটো চেয়ার, একটা টেবিল, একটা কার্পেট, একটা খাট এবং একটা ওয়ারড্রোব। একটা ছোট সাইড-টেবিলের ওপর একটা টেবিল-ঘড়ি, তার পাশে সবসময় পড়ে থাকত পুরনো কয়েকটা পত্রিকা, আর একটা ফটো অ্যালবাম। দেয়ালে লাগানো একটা বড় আয়না আর একটা ছবি। তিনি রোজ সকালবেলায় একবার হাঁটতে বেরোতেন এবং বিকেলবেলায় একবার হাঁটতে বেরোতেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা হলে দু-একটা কথাও বলতেন। সন্ধ্যায় তিনি বসতেন তার চেয়ার-টেবিলে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তার এই রুটিনের কোনো অনিয়ম ঘটত না। তিনি যখন চেয়ার-টেবিলে বসতেন, শুনতে পেতেন ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ। ঘড়িটা সবসময় টিকটিক আওয়াজ করেই যেত।
বৈচিত্র্যহীন এই রুটিনের মধ্যেও হঠাৎ একটা বিশেষ দিন এসে হাজির হলো। রোদ-ঝলমলে একটা দিন, খুব গরমও না আবার খুব ঠান্ডাও না। এরকম চমৎকার দিনে যেমনটা হয়, ঝকঝকে রোদে ওড়ার সময় পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ, চমৎকার আবহাওয়ায় সুখী মানুষজনের বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, ছোট বাচ্চাদের বাইরে খেলায় মত্ত থাকার দৃশ্য। সবকিছু সুন্দর এবং স্বাভাবিক। কিন্তু এই বিশেষ দিনের সবচেয়ে তাৎপর্যের বিষয় হলো, ক্লান্ত-বিষণ্ন এই মানুষটির কাছে আশপাশের স্বাভাবিক সবকিছু হঠাৎ খুব ভালো লাগতে শুরু করল। তার ক্লান্তিভাব চলে গেল, তিনি একটু হাসলেন।
‘এখন থেকে সবকিছু বদলে যাবে’ – লোকটি মনে মনে বললেন। তিনি তার শার্টের সবচেয়ে ওপরের বোতামটি খুললেন, ক্যাপটা হাতে নিলেন, তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলেন। জোরে হাঁটার সময় তার হাঁটু কিছুটা প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। তার অনুভূতিতে হঠাৎ কোনো একটা বাড়তি ভালোলাগা কাজ করছিল, সেজন্যে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করলেন না। হাঁটতে হাঁটতে তিনি তার নিজের ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তায় এসে পৌঁছলেন। বাচ্চারা খেলা করছিল, চলতে চলতেই তিনি তাদের হাই বললেন। তার অ্যাপার্টমেন্টের গেট দিয়ে ঢুকলেন, তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলেন, কি-হোল্ডার থেকে চাবি বের করলেন এবং ঘরের দরজা খুললেন।
কিন্তু ঘরের ভেতর তো সেই আগেরই মতো সবকিছু : একটা টেবিল, দুটো চেয়ার, একটা খাট। তিনি যখন চেয়ারে বসলেন, শুনতে পেলেন ঘড়ির সেই পুরনো টিকটিক আওয়াজ। মুহূর্তেই তার সমস্ত ভালোলাগা উধাও হয়ে গেল। কোনো কিছুই তো আসলে বদলায়নি। ভদ্রলোক প্রচণ্ড রেগে গেলেন। তিনি আয়নায় নিজেকে দেখলেন, তার চেহারা লাল হয়ে উঠল, চোখ কুঁচকে গেল, হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ হলো; ওপরে তুললেন এবং টেবিলের ওপর সজোরে আঘাত করলেন। প্রথমে একবার, তারপর আরেকবার, তারপর আরেকবার, এরপর ড্রাম পেটানোর মতো, একটার পর একটা টেবিলের ওপর আঘাত করতে লাগলেন এবং প্রতিবার আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘কিছু একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার।’ এভাবে আঘাত এবং চিৎকার করতে করতে তিনি কোনো একসময় চেতনার অন্য কোনো এক স্তরে পৌঁছে গেলেন। ঘড়ির সেই একঘেয়ে শব্দটা তিনি আর শুনতে পেলেন না। কিন্তু অনেকক্ষণ আঘাত করতে করতে তার হাত ব্যথা করতে লাগল, চিৎকার করতে করতে তার গলার স্বর ভেঙে গেল; আর শব্দ বেরোচ্ছিল না। একসময় তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন এবং ঘড়ির সেই একঘেয়ে শব্দটা আবার শুনতে আরম্ভ করলেন। তিনি বুঝলেন, কোনো কিছুই আসলে বদলায়নি।
‘সারাক্ষণ সেই একই টেবিল’ – লোকটি বললেন, ‘সেই একই চেয়ার, একই খাট, একই ছবি। চেয়ারকে মানুষ বলে চেয়ার, কিন্তু এটাই বা হতে হবে কেন? চেয়ারকে কেন চেয়ারই বলতে হবে? ফরাসিরা খাটকে বলে li, টেবিলকে বলে tabl, ছবিকে তারা বলে tablo এবং চেয়ারকে তারা বলে chaise, তারা একে অন্যের কথা বুঝতে পারে। চীনারাও তাদের ভাষায় একে অন্যের কথা বুঝতে পারে।’ কিন্তু, ‘খাটকে কেন অন্যকিছু বলা যাবে না?’ লোকটি চিন্তা করলেন এবং হাসলেন, একটু থামলেন এবং আবার হাসলেন, এরপর তিনি হাসতেই থাকলেন, হাসতেই থাকলেন, হাসতেই থাকলেন … যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ দেয়ালে টোকা দিয়ে বললেন, ‘এবার চুপ করুন।’
‘এখন থেকে এটার নাম বদলে যাবে’ – তিনি চিৎকার করে উঠলেন এবং বললেন, ‘এখন থেকে খাটের নাম হবে ছবি।’ ‘আমি ক্লান্ত, আমি ছবিতে শুতে যেতে চাই’, তিনি বললেন। সকালবেলা তিনি অনেকক্ষণ ছবিতে কাটালেন এবং চিন্তা করলেন চেয়ারের নাম কী দেওয়া যায়। চেয়ারের নাম তিনি দিলেন টেবিল-ঘড়ি। তিনি তাঁর এই নতুন ভাষা নিয়ে কল্পনা করতে শুরু করলেন। মনে মনে তার ছেলেবেলার স্কুলের ছড়াগুলো তার এই নতুন ভাষায় রূপান্তর করলেন এবং সেগুলো তিনি গুনগুন করে গাইতে লাগলেন। ছবিতে শোয়া থেকে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, জামা-কাপড় পরলেন, তিনি ঘড়ির ওপর বসে টেবিলের ওপর হাতদুটো রাখলেন। কিন্তু ‘টেবিলের নাম তো এখন থেকে আর টেবিল না। এখন থেকে টেবিলের নাম হচ্ছে কার্পেট।’
তার পরের দিন সকালবেলা, ছবি ছেড়ে তিনি উঠলেন, জামাকাপড় পরলেন, কার্পেটের সামনে ঘড়ির ওপর বসলেন এবং ভাবলেন কাকে কী নাম দেওয়া যায়।
খাটের নাম তিনি দিলেন ছবি, টেবিলকে বললেন কার্পেট, চেয়ারের নাম তিনি দিলেন টেবিলঘড়ি, পত্রিকাকে বললেন খাট, আয়নাকে বললেন চেয়ার, টেবিল-ঘড়ির নাম দিলেন ফটো অ্যালবাম, ওয়ারড্রোবের নাম দিলেন পত্রিকা, কার্পেটকে বললেন ওয়ারড্রোব, ছবির নাম তিনি দিলেন টেবিল এবং ফটো অ্যালবামের নাম দিলেন আয়না।
এর পরের দিনও সকালবেলা তিনি অনেক লম্বা সময় ছবিতে শুয়ে থাকলেন। সকাল ৯টায় ফটো অ্যালবাম বেজে উঠল। ভদ্রলোক ছবি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, ফ্লোর অনেক ঠান্ডা, পা-দুটো যেন ঠান্ডায় জমে না যায় সেজন্য তিনি তার পা-দুটো ওয়ারড্রোবের ওপর রাখলেন। এরপর তিনি পত্রিকা খুলে তার ভেতর থেকে জামাকাপড় বের করলেন এবং পরলেন। দেয়ালে লাগানো চেয়ারে তিনি নিজেকে দেখলেন, তারপর তিনি কার্পেটের সামনে টেবিল-ঘড়ির ওপর বসলেন এবং আয়নাটা নিয়ে এর পাতা ওলটাতে থাকলেন এবং ওলটাতে ওলটাতে তার মায়ের চেয়ারের একটা ফটো যখন খুঁজে পেলেন, তখন তিনি আয়নার পাতা ওলটানো বন্ধ করলেন।
সারাদিন লোকটি তার এই নতুন শব্দগুলো মনে রাখার কৌশল রপ্ত করার চর্চা শুরু করলেন এবং শব্দ নিয়ে এই খেলায় তিনি ভীষণ মজা পেলেন। এখন সবকিছুর নাম বদলে যাবে। এখন থেকে সে আর মানুষ নয়, অন্য কিছু; সে একটা পা। যেটার নাম পা ছিল, তার নাম এখন থেকে সকাল, আর সকালের নাম এখন থেকে মানুষ।
এই গল্পের পরবর্তী অংশটুকু তুমি চাইলে নিজেই লিখতে পারো এবং অন্য মানুষরা এক্ষেত্রে যা করে তুমিও তা করতে পারো। তুমি চাইলে অন্য শব্দগুলোও বদলে ফেলতে পারো।
ঘড়ির অ্যালার্মের মানে তুমি বলতে পারো রেখে দেওয়া; ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মানে হতে পারে তাকিয়ে থাকা; শুয়ে থাকার মানে হতে পারে অ্যালার্ম; দাঁড়ানোর মানে হতে পারে ঠান্ডায় জমে যাওয়া; রেখে দেওয়ার মানে হতে পারে ওলটানো; গল্পটা এখন এভাবে বলা যায় : পরের দিন মানুষবেলায় একজন বয়স্ক পা দীর্ঘসময় ছবিতে অ্যালার্ম রইলেন, ৯টার সময় ফটো অ্যালবামটা রেখে দিলো। খালি ফ্লোরে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার জন্য বয়স্ক পা-র সকালদুটোয় খুব তাকিয়ে থাকছিল, সেজন্য সকালদুটোকে তিনি ওয়ারড্রোবের ওপর রাখলেন, যাতে সে-দুটো তাকিয়ে না থাকে।
লোকটি একটা নীল রঙের স্কুলখাতা কিনলেন এবং তাতে তিনি তার নতুন শব্দগুলো লিখে ভর্তি করতে লাগলেন। এসব নিয়ে এখন তার অনেক ব্যস্ততা, ঘরের বাইরে তাকে খুব একটা দেখাই যায় না। এভাবে অনেকদিন পরিশ্রমের পর অবশেষে তার নতুন ভাষায় সব জিনিসের নাম তিনি শিখে ফেললেন এবং প্রচলিত জিনিসের নামগুলো ক্রমশ ভুলে যেতে থাকলেন। একটা জিনিস ভেবে তার বেশ ভালো লাগল যে, তার নিজের একটা ভাষা আছে, যে-ভাষাটা পুরোপুরি তার নিজস্ব।
কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারলেন এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় বদল করাটা অনেক কঠিন। তিনি তার পুরনো ভাষা প্রায় ভুলে গেলেন এবং নতুন ভাষার সঠিক শব্দটা খুঁজে বের করার জন্য হামেশাই তার সেই নীল খাতার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে লাগল। অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে তিনি ভয় পেতে শুরু করলেন। কোনো কিছু বলার সময় তার অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন পড়তে লাগল, এটা চিন্তা করে, ‘অন্যরা যেন এই জিনিসকে কী বলে?’
তার ছবিকে অন্যরা বলে খাট, কার্পেটকে তারা বলে টেবিল, তার টেবিল-ঘড়িকে অন্যরা বলে চেয়ার, তার খাটকে মানুষ বলে পত্রিকা, তার চেয়ারকে বলে আয়না, তার ফটো অ্যালবামকে অন্যরা বলে টেবিল-ঘড়ি, তার পত্রিকাকে মানুষ বলে ওয়ারড্রোব, তার ওয়ারড্রোবকে অন্যরা বলে কার্পেট, তার আয়নাকে মানুষ বলে ফটো অ্যালবাম, তার টেবিলকে অন্যরা বলে ছবি – অবস্থাটা এমন দাঁড়াল, অন্যরা যখন কথা বলত, লোকটি তখন শুধু হাসতে থাকতেন। এমনকি যখন কেউ একজন খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন করত, ‘তুমিও কি আগামীকাল আমাদের সঙ্গে ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছ?’ অথবা, যদি কেউ বলত, ‘দুই মাস যাবত বৃষ্টি হচ্ছে’ অথবা, কেউ বলত, ‘আমার এক চাচা যুক্তরাষ্ট্রেও থাকেন’ – এসব শুনে তিনি অবধারিতভাবে হাসতেন। তিনি হাসবেনই; কারণ এসবের কোনো কিছুর অর্থই তিনি আর বুঝতে পারতেন না।
সবশেষে বলা প্রয়োজন, এটা কোনো হাসির গল্প নয়; গল্পটা খুবই দুঃখের। এর শুরু হয়েছে দুঃখ দিয়ে, শেষটাও প্রচণ্ড দুঃখের। ধূসর লং কোটওয়ালা মানুষটি অন্য কাউকেই শেষ পর্যন্ত আর বুঝতে পারতেন না – এটা অনেক কষ্টের। কিন্তু তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কষ্টের, অন্য কোনো মানুষ তাকে আর বুঝতে পারত না। এই প্রচণ্ড কষ্টে তিনি কারো সঙ্গেই আর কোনো কথা বলতেন না। তিনি নির্বাক হয়ে গেলেন, তিনি শুধু কথা বলতেন তার নিজের সঙ্গে, অন্য কাউকে তিনি আর কখনো হ্যালোও করতেন না।

লেখক-পরিচিতি
পেটার বিক্সেল (Peter Bichsel) জার্মান সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত লেখক। জন্ম সুইজারল্যান্ডের লুসার্নে ২৪ মার্চ, ১৯৩৫। শ্রমিক বাবা-মায়ের সন্তান, পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে এবং দশ বছরের বেশি শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯৭০-৮০ সময়টায় তিনি মূলত সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিক্সেল বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের সলোথুর্নের কাছে বসবাস করছেন এবং জনপ্রিয় লেখক-সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। সুইস-জার্মান লেখকদের মধ্যে তিনি খুবই জনপ্রিয়।
তাঁর প্রথম গদ্য-সংকলন (Eigentlich möchte Frau Blum den Milchmann kennenlernen) ফ্রাউ ব্লুম সত্যিই
দুধ-বিক্রেতার সঙ্গে পরিচিত হতে আগ্রহী, ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই স্বতন্ত্র লেখনী-বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি পাঠক-লেখক মহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর ছোটগল্পের সংকলন (Der Busant : von Trinkern, Polizisten und der schönen Magelone) বুসান্ট-মাতাল, পুলিশ এবং সুন্দরী ম্যাগালোনে প্রকাশ পায় ১৯৮৫ সালে। ছোটদের জন্য তাঁর এ-লেখা তাঁকে ব্যাপক সাফল্য এনে দেয়। পেটার বিক্সেলকে Writer-In-Residence সম্মাননা দেওয়া হয় ১৯৭২-৮৯ সালের মধ্যে (সুইজারল্যান্ডের পাশাপাশি জার্মানির দুটি শহর Bergen এবং Mainz থেকেও তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়)। এই একই সময়ে ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণ করেন। ১৯৮১ সালে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালের জুরি বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন। এ পর্যন্ত তাঁর বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে – (Des Schweizers Schweiz) সুইসদের সুইস, (Irgendwo anderswo) অন্য কোনোখানে, (Zur Stadt Paris) প্যারিস শহরে, (Gegen unseren Briefträger konnte man nichts machen) আপনি পোস্টম্যানদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না, (Die Totaldemokraten) পূর্ণ গণতন্ত্রী, (Eisenbahnfahren) রেলযাত্রা, (Das süsse Gift der Buchstaben) অক্ষরের মধুর-বিষ, (Wo wir wohnen) আমরা থাকব কোথায়। পেটার বিক্সেল এ-পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে : ১৯৬৫ সালে গ্রুপ ৪৭ সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে জার্মান ইয়ুথ বুক অ্যাওয়ার্ড, ইউরোপিয়ান Eassy Prize-2000 ছাড়াও ১৯৯৯ সালে Gottfried-Keller-Preis, ২০০০ সালে Kassel Literary Prize, ২০১১ সালে Solothurner Literaturpreis, ২০১২ সালে Grosser Schillerpreis পুরস্কার। তাঁর কাজের বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে সুইজারল্যান্ডের Basel ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৪ সালে তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাঁর ছোটগল্প (‘Ein Tisch ist ein Tisch’) “একটা টেবিল’ এটা বললে আমরা বুঝি, একটা টেবিল’। প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চাদের ভাষার দক্ষতা তৈরির জন্য গল্পটি লেখা; কিন্তু গল্পের ভেতরের গভীর যে-বোধ সেটা বড়দেরও নাড়িয়ে দেয়।