ভূমিকা
বাংলা গানের ইতিহাস বেশ পুরনো। শুরু সেই চর্যাপদ থেকে। এদিক থেকে চর্যাপদাবলী বাংলা সাহিত্যের নয় শুধু, বাংলা গানেরও আদি উৎস। সেদিনের গানের ধারা যেমনই হোক না কেন, পদাবলীকারগণ যে-গান রচনা করেছিলেন তার বৈশিষ্ট্য ও গঠন পদ্ধতির আলোচনা আছে লোচন প–তের রাগতরঙ্গিণী ও শার্ঙ্গদেবের সঙ্গীতরত্নাকর (১২১০-৪৭) গ্রন্থে।১ এ-পদগুলোতে উনিশটি রাগিণীর উলেস্নখ আছে। জয়দেবের গীতগোবিন্দে বারোটি রাগিণীর মধ্যে চর্যাপদের চারটি২ ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে আটটি রাগিণীর উলেস্নখ আছে।৩ এছাড়া, বঙ্গদেশের লোকেরা যে-গান গাইতেন, তার সুর ও তাল এবং বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। এমনকি, এ-দেশে আসার পর আর্যরা কী ধরনের গান ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন, তার কোনো খবর পাওয়া যায় না। তবে আর্যদের ধর্ম স্থানীয় ধর্ম ও আচার-আচরণের সঙ্গে মিলেমিশে যেমন একটা নতুন রূপ নিয়েছিল, গানের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে যেসব রাগরাগিণীর উদ্ভব হয়েছিল, তা জানা না গেলেও, ‘বঙ্গাল’ ও ‘ভাটিয়ালি’র মতো রাগিণীর নাম জানা যায়, যা চর্যাপদাবলীতে উলেস্নখ আছে। এছাড়া, রাগরাগিণীর বেশিরভাগই ছিল দেশজাত ও জাতিজাত, এবং এই রাগরাগিণীগুলো যে অনার্য জনগোষ্ঠী থেকে আর্য সংগীতের মধ্যে প্রবেশ করেছিল তার প্রমাণ আছে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম থেকে সপ্তম শতকের দিকে সংগীতশাস্ত্রী মতঙ্গ-রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থে। মতঙ্গ বলেন : চতুঃস্বরাৎ প্রভৃতি না মার্গঃ, শবর-পুলিন্দ-কাম্বোজ-বঙ্গ-কিরাত-বাহ্ণীক-অন্ধ্র-দ্রাবিড়-বর্ণাদিষু প্রযুজ্যতে। অর্থাৎ চার স্বরযুক্ত সংগীত মার্গ শ্রেণির মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। এগুলোর অনুশীলন ছিল শবর, পুলিন্দ, কম্বোজ, বঙ্গ, কিরাত, বাহ্ণীক, অন্ধ্র, দ্রাবিড় প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে।৪ এ-সকল জনগোষ্ঠীর নামে সুরের নাম ছিল শবরী (সাবরী, স্রাবেরী), আন্ধ্রী, পুলিন্দিকা, আভীরী (আহিরী) ইত্যাদি, এবং অন্যান্য দেশজাত ও জাতিজাত রাগ যেমন, গান্ধার (কন্দাহার থেকে জাত), কলিঙ্গদেশ থেকে জাত কলিঙ্গড়া (কালেঙড়া), গুর্জর থেকে গুর্জরী, বাংলাদেশ থেকে বঙ্গালরাগ, গৌড় থেকে গৌড়ী, মহারাষ্ট্র থেকে মহারাষ্ট্রী, দক্ষিণদেশ থেকে দাক্ষিণাত্য, দ্রাবিড় জাতি থেকে দ্রাবিড়ী, সিন্ধুদেশ থেকে সৈন্ধবী, মালবদেশ থেকে মালব বা মালবী রাগ আর্য সংগীতধারাকে শুধু নয়, সর্বভারতীয় সংগীতধারাকে পুষ্ট করেছে।৫ এরপর ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি গান, খেউড়, আখড়াই, হাফ-আখড়াই, শাক্তপদাবলী, বাউল, তর্জা, টপ্পা, ঠুংরি, ধ্রম্নপদ, কবি প্রভৃতি গানের ধরনের মধ্যে প্রেম, সাধনা, যুক্তি-তর্ক, শস্নীল-অশস্নীলতা অনুষঙ্গ করে বাংলা গানের হয়েছে বিবর্তন। এই বিবর্তনে শরিক হয়েছেন অনেক গুণিজনের মধ্যে কলকাতায় আগত অনেক ওসত্মাদ। তাঁরা হিন্দুসত্মানি গান, শাস্ত্রীয় সংগীত ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কলকাতায় আসেন। সে-সময় যাঁরা বিভিন্ন ধরনের গান গাইতেন, তাঁরা উত্তর ভারত থেকে আগত ওসত্মাদদের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে বিশেষ তালিমপ্রাপ্ত ছিলেন। এঁদের মধ্যে দাশরথি, শ্রীধর কথক, গোপাল উড়ে ও মধু কাণ প্রধান। এছাড়া, কলকাতায় থাকার সুবাদে যাঁরা গান শিখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩), দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬) ছিলেন অন্যতম। এঁদের মধ্যে রামমোহন গান লিখতেন। এ-সময় শাস্ত্রীয় সংগীতকে নতুন করে প্রবর্তন করার উদ্দেশ্যে পাথুরিয়াঘাটার শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮৪০-১৯১৪) বাড়ির ওসত্মাদ ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীকে দিয়ে প্রথম স্বরলিপি করান ও তা প্রচার করেন। প্রায় একই সময়ে স্বতন্ত্রভাবে আকারমাত্রিক স্বরলিপির উদ্ভাবন করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪০-১৯২৬)। এ-পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫) যে-পদ্ধতি সৃষ্টি করেন, তা আজকের দিনেও স্বরলিপির আদর্শ।
রবীন্দ্রনাথের দুবছর পরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩), চার বছর পরে রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫-১৯১০), দশ বছর পরে অতুলপ্রসাদ সেন (১৮৭১-১৯৩৪), আটত্রিশ বছর পরে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) আর সতেরো বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪-১৯১২)। তাঁরা সবাই ছিলেন গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। রবীন্দ্রনাথের গানের শিক্ষক ছিলেন যদু ভট্ট, বিষ্ণু চক্রবর্তী, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী, শ্যামসুন্দর মিশ্র। এঁরা প্রধানত ধ্রম্নপদ গাইতেন। ধ্রম্নপদ গানে চারটি স্তবক, যাকে বলা হয় ‘তুক’ অর্থাৎ স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগ।৬ রবীন্দ্রনাথ বাংলা গানের ভুবনে চার তুকের গান রচনায় যে-স্থায়ী আসন গড়েছিলেন, কাজী নজরুল ইসলাম৭ সেই ধারার ছিলেন সফল গীতিকার। শুধু গীতিকারই নন, আধুনিক বাংলা গানের জনকও।৮ তিনিই সে যুগের সেরা কম্পোজার কমল দাশগুপ্তকে (১৯১২-৭৪)৯ নিয়ে আসেন গ্রামোফোন কোম্পানিতে (১৯৩২ সাল); এবং তাঁর হাতেই সৃষ্টি হয় বাংলা গানের স্বর্ণযুগ। তাঁর অসাধারণ সুর আর গায়কীর গীতিসুধায় সেদিন যে-আবহ সৃষ্টি হয়েছিল তার মূলেই ছিলেন কমল দাশগুপ্ত এবং পরোক্ষভাবে প্রণব রায়, যুথিকা রায় ও জগন্ময় মিত্র। এ-কথা একটু জোর দিয়েই বলা যায়, ‘নজরুল-পরবর্তী দশকে কমল দাশগুপ্তের সুর আর প্রণব রায়ের কথাই ছিল বাংলা গানের প্রধান ধারা।’১০
শিক্ষা, জীবন ও কর্ম
কমল দাশগুপ্ত আধুনিক বাংলা গানের প্রথিতযশা সুরকার। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকের সুরশিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। নড়াইল জেলার কালিয়া জনপদের বেন্দা গ্রামে ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই তাঁর জন্ম।১১ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিকম পাশ করা ছাড়া তাঁর বিদ্যারম্ভ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। ব্যবসায় সূত্রে ও মহারাজার ক্রিকেট টিমের পরিচালক হিসেবে পিতা তারাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত১২ একসময় কুচবিহারে ও পরে কুমিল্লায় বসবাস করেন। ‘ক’ অনুপ্রাসযুক্ত এই তিনটি জায়গা অর্থাৎ কালিয়া, কুচবিহার ও কুমিল্লার মধ্যে ঠিক কোথায় কমল দাশগুপ্তের জন্ম হয়েছিল তা নির্ণয় করা যায়নি। কুমিল্লায় কমল দাশগুপ্ত বেড়ে উঠলেও সেখানকার বিখ্যাত সংগীতশিল্পী শচীন দেববর্মন, অজয় ভট্টাচার্য, হিমাংশু দত্ত, সুনীল মজুমদারের সঙ্গে কখনো কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কি না সে-বিষয়েও কিছু জানা যায় না।১৩ দিঠি হাসনাত জানিয়েছেন, তাঁর শৈশব কাটে কালিয়াতে, কৈশোর কুচবিহারে, এরপর কলকাতার মানিকতলার একটি বাড়িতে। এ-বাড়ির নিচতলায় ছিল একটি প্রেস। এই প্রেসটিই ছিল তাঁদের আয়ের উৎস।১৪
কমল দাশগুপ্ত সংগীতে ওসত্মাদ জমিরুদ্দীন খাঁ, কাজী নজরুল ইসলাম, কৃষ্ণচন্দ্র দে (১৮৯৩-১৯৬২), ডিএল রায়ের ছেলে দিলীপকুমার রায়ের (১৮৯৭-১৯৮০) কাছে পাঠ নিলেও প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর পিতা তারাপ্রসন্নের কাছে ও পরে বড় ভাই বিমল দাশগুপ্তের কাছে।১৫ আর পাশ্চাত্য সংগীতে পাঠ নেন এইচএমভির অর্কেস্ট্রা-পরিচালক নিউম্যানের কাছে। আর, প্রায় শ-পাঁচেক রবীন্দ্রসংগীত শেখেন ব্রজেন গাঙ্গুলি ও অনাদি দস্তিদারের কাছে।১৬ অগ্রজ বিমল দাশগুপ্তের সহকারী হিসেবে এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানিতে ঢুকে প্রায় ২৩ বছর বয়সে সংগীত পরিচালনা ও গানের সুর করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।১৭ কমল দাশগুপ্ত খুব কম সময়ের মধ্যে তাঁর প্রতিভা ও নিষ্ঠার গুণে বাংলা গানের মুলুক ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সর্বভারতীয় পর্যায়ে। তাঁর সুরের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন বলেই নজরুল ইসলাম ‘কমল দাশগুপ্তকেই দিয়েছিলেন অনুমোদন ছাড়াই তাঁর গানে সুর করার অধিকার।’১৮
তিনি নজরুল ইসলামের প্রায় ২০০ গানের সুর দিয়েছিলেন।১৯ সংখ্যাটি বাড়িয়ে ৩০০ বলেছেন বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান প্রণেতা।২০ আসাফউদ্দৌলার সংখ্যাটা হলো ৪০০২১, আর প্রায় ৪০০ বলেছেন অভীক চট্টোপাধ্যায়।২২ এঁদের মধ্যে আসাদুল হক কমল দাশগুপ্তের সুর করা নজরুল ইসলামের ৯৭টি গানের তালিকা দিয়েছেন। তার মধ্যে ১৪টি গানের একক রেকর্ড করেন কমল দাশগুপ্ত।২৩
কমল দাশগুপ্ত গ্রামোফোন কোম্পানিতে একজন তবলাবাদক হিসেবে প্রবেশ করে বাজাতেন ম্যান্ডোলিন ও জাইলোফোন। তিনি যন্ত্রীদের নিয়ে একটি দলও গঠন করেন। এসব কাজের পাশাপাশি তিনি যূথিকা রায়কে ও কলকাতার ‘কস্ত্তরবা সংগীত বিদ্যালয়ে’ গান শেখাতেন। এভাবে সংগীতজগতে আগমন হলেও ‘তাঁর উদ্ভাবনী-শক্তি, মৌলিক প্রতিভা, নিরীক্ষাপ্রিয়তা ও অসামান্য মেধা তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়।’২৪ তাঁর রক্তে যে-গান ছিল, তা মসৃণ হয়েছে নজরুলের সান্নিধ্য পেয়ে। তিনি শুধু বাংলা ভাষায় নয়, হিন্দি, মারাঠি, তামিল, উর্দু প্রভৃতি ভাষার গানে সুরারোপ করেন।২৫ নজরুল ইসলামের গান তাঁর ভিত গড়ে দিলেও
প্রণব রায় (১৯১১-৭৫), অজয় ভট্টাচার্য,
শৈলেন রায়, বাণীকুমার, সুবোধ পুরকায়স্থ, মোহিনী চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল গুপ্ত, অনিল ভট্টাচার্য-রচিত গানে সুর সৃষ্টির মাধ্যমে কমল দাশগুপ্ত শুধু জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি২৬, সৃষ্টি করেন বাংলা গানের একটি নতুন ধারা। এঁদের গান ছাড়া তিনি সুর দিয়েছেন পদাবলী কীর্তনে; মীরা, কবির ও সুরদাসের ভজনে; হিন্দি-উর্দু গীতিকবি প–ত মাধুর, ভূষণ, কামাল আমরোহি, মহম্মদ বক্স, ফৈয়াজ হাশমি, রাজেশ্বর গুরু, মুনির আলম, হসরত জয়পুরির গীত, গজল ও ভজনে। মীরার ভজনে সুরারোপ করার জন্যে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে সম্মানসূচক Doctorate of Music উপাধি প্রদান করে।২৭ এছাড়া, তিনি সুর দিয়েছিলেন হায়দরাবাদের নিজামের গোল্ডেন জুবলির বিশেষ সংগীতে ও ভারতীয় রণসংগীত ‘কদম কদম বারহায়ে যা’ গানে। আমেরিকার ফিল্ম ডিরেক্টর এলিস জনসনের War Propaganda ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।২৮
তিনি সর্বমোট সাত হাজার গানে শুধু সুর নয়, তা শিখিয়ে শিল্পীর কণ্ঠে রেকর্ডও করিয়েছিলেন।২৯ বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান-প্রণেতা তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা আট হাজার বলে উলেস্নখ করেন।৩০ তিনি একসময় বাংলা ও হিন্দি ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন। বাংলা একাডেমি চরিতাভিধানে এ-সংখ্যা ৮০টি৩১ বলা হলেও আসাদুল হক ২৪টির বেশি বলতে পারেননি।৩২ আর আবুল আহসান চৌধুরী বাংলা (১৮টি) ও হিন্দি (পাঁচটি) মিলিয়ে মোট ২৩টির উলেস্নখ করেছেন।৩৩ তিনি বাংলা ছবির সংগীত-পরিচালক হিসেবে চারবার ও হিন্দি ছবির জন্যে একবার, মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন।
কমল দাশগুপ্তের সুরসম্ভার
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমালোচনা গ্রন্থে ‘সংগীত ও কবিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন :
আমরা যখন একটি কবিতা পড়ি তখন তাহাকে শুদ্ধমাত্র কথার সমষ্টিরূপে দেখি না – কথার সহিত ভাবের সম্বন্ধ বিচার করি।
ভাবই মুখ্য লক্ষ্য। কথা ভাবের আশ্রয় স্বরূপ। আমরা সংগীতকেও সেই রূপে দেখিতে চাই। সংগীত সুরের রাগ রাগিণী নহে, সংগীত ভাবের রাগ রাগিণী। … কবিতা যেমন ভাবের ভাষা সংগীতও তেমনি ভাবের ভাষা।
কবিতা ও সংগীতকে ভাবের ভাষা হিসেবে উলেস্নখ করা হলেও সংগীতের সুরের স্থান বিন্দুমাত্র কম নয়; বরং অনেক বেশি। ঠিক এ-কারণেই বিশেষ বিশেষ ভাব বিশেষ বিশেষ সুরের অপেক্ষা করে। এভাবে বাণী ও সুরের সম্মিলনেই সুরের সার্থকতা। এ দুইয়ের মিলনের ফলে গায়ক ও শ্রোতার মধ্যে যে অনির্বচনীয় যোগসূত্র স্থাপিত হয় তাকে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় : ‘একাকী গায়কের নহে তো গান, মিলিতে হবে দুই জনে -/ গাহিবে একজন খুলিয়া গলা, আরেকজন গাবে মনে’। (‘গানভঙ্গ’, কাহিনী) মনে মনে গান গাইতে গেলে গানের কথা ও সুরের মিশ্রিত দ্রবণটি মর্মের গভীরে যে-অমৃতময় বোধে আন্দোলিত হয় সে-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কথা ও সুরের প্রাধান্য প্রসঙ্গে বলেন :
কথাও যতখানি ভাব প্রকাশ করে, সুরও প্রায় ততখানি ভাব প্রকাশ করে। এমনকি, সুরের উপরেই কথার ভাব নির্ভর করে। … ভাব প্রকাশের অঙ্গের মধ্যে কথা ও সুর উভয়কেই পাশাপাশি ধরা যাইতে পারে। … যুক্তির অতীত আবেগের ভাষায় সংগীতের সুর আবশ্যক করে।
এ সুবাদে বলা যায়, সংগীতে কথা ও সুর উভয়েরই তুল্যমূল্য স্থান। তাই শুধু শব্দকে নিয়ে নয়, এর সঙ্গে সুর যোগ করে যে জিনিসটি পাওয়া যায়, তাই-ই সংগীত। শব্দের ‘হুংকারটা হল শক্তি, এর পরিমাণ পাওয়া যায়, আর সংগীতটা হল অমৃত, হাতে বহরে ওকে কোথাও মাপবার জো নেই।’ [বাতায়নিকের পত্র (২৪) ২৯৭] আসলে গানের মধ্যে গীতিকারের গানের প্রাণপ্রতিষ্ঠায়, সুরকারের কারিগরি বিদ্যার পাশাপাশি গায়ক বা গায়িকার কণ্ঠমাধুর্য আর পরিবেশন-দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এভাবে তিনটি শিল্পীসত্তার সম্মিলনে গান হয়ে ওঠে রসোচ্ছল ও প্রাণদীপ্ত।৩৪ সেই শিল্পীসত্তার একজন কমল দাশগুপ্ত বিরল সুরস্রষ্টা হিসেবে মানুষের হৃদয়ভূমিকে নাড়িয়ে দিয়ে যাননি শুধু, বাংলা গানের জগতে রীতিমতো স্থায়ী আসন পেতে আছেন। তাঁর সুরারোপিত এরকম কিছু গান : ‘আমি ভোরের যূথিকা’ (যূথিকা রায়), ‘সাঁঝের তারকা আমি’ (ওই), ‘শতেক বরষ পরে’ (ওই), ‘এমনি বরষা ছিল সেদিন’ (ওই), ‘মেনেছি গো হার মেনেছি’ (জগন্ময় মিত্র), ‘আমি ভুলে গেছি তব পরিচয়’ (ওই), ‘তুমি কি এখন দেখিছ স্বপন’ (ওই), ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে’ (ওই), ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়’ (ওই), ‘আমার দেশে ফুরিয়ে গেছে ফাগুন’ (ওই), ‘পৃথিবী আমারে চায়’ (সত্য চৌধুরী), ‘যেথা গান থেমে যায়’ (ওই), ‘কথার কুসুমে গাঁথা’ (বেচু দত্ত), ‘মোর হাতে ছিল বাঁশি’ (গৌরীকেদার ভট্টাচার্য), ‘তোমার জীবন হতে’ (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), ‘ঘুমের ছায়া চাঁদের দেশে’ (তালাত মাহমুদ) ইত্যাদি। এছাড়া তাঁর সুরারোপিত শ্রেষ্ঠ বাংলা গান : ‘এই কি গো শেষ দান’, ‘যদি আপনার মনে মাধুরী মিশায়ে’, ‘চরণ ফেলিও ধীরে ধীরে প্রিয়’, ‘দু’টি পাখি দু’টি নীড়ে’, ‘গভীর নিশিথে ঘুম ভেঙ্গে যায়’, ‘আমার যাবার সময় হলো’, ‘তুমি হাতখানি যবে রাখো মোর হাতের ‘পরে’, ‘ঘুমের ছায়া চাঁদের চোখে’, ‘আমি বনফুল গো’ ইত্যাদি। তাঁর স্বকণ্ঠে গাওয়া ‘আজো কাঁদে কাননে’, ‘জগতের নাথ কর পার’ অসাধারণ গান।৩৫ ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে মান্না দে কমল দাশগুপ্তের সুরে প্রণব রায় ও সুবোধ পুরকায়স্থের কথায় যথাক্রমে কণ্ঠ দিয়েছিলেন ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’ ও ‘হার মেনেছি গো হার মেনেছি’ গান দুটিতে।৩৬ তিনি সুর সৃষ্টির পাশাপাশি বেশকিছু গানও রচনা করেন। তার মধ্যে ‘মম যৌবন সাথী বুঝি এলো’, ‘বিফলে যামিনী যায়’, ‘কে আজি দিল দোলা’ গান তিনটি সুরারোপ করে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ডও করা হয়।
গণচেতনামূলক গানে সুরারোপ
মোহিনী চৌধুরী নিজেই তাঁর গানের যে-বিভাজন করেছেন তার মধ্যে ‘গণচেতনা’ একটি। একজন নাগরিক কবি হিসেবে তাঁর সমসাময়িককালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার সূত্রে যদি তিনি প্রাণিত নাও হয়ে থাকেন, তবু রবীন্দ্র-নজরুল-বঙ্কিমের স্বদেশবন্দনার ভাবধারায় প্রাণিত হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বোধ করি, এরকম ভাবধারা থেকে ‘গণচেতনা’র গান দেশপ্রেমের জ্বালাময়ী অগ্নিশিখায় প্রজ্বলিত হয়েছে। তাঁর কয়েকটি গণচেতনার গানের প্রথম পঙ্ক্তি : ১. মুক্তির মন্দির সোপানতলে, ২. পৃথিবী আমারে চায়, ৩. আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়, ৪. যাদের জীবন ভরা শুধু আঁখিজল, ৫. শতক বরষ পরে, ৬. জেগে আছি একা জেগে আছি কারাগারে, ৭. ভেঙেছে হাল ছিঁড়েছে পাল। মোহিনী চৌধুরীর এই সাতটি গান কমল দাশগুপ্তের সুরে সত্য চৌধুরী ও যূথিকা-জগন্ময়ের কণ্ঠে পরিবেশিত হয়ে কালজয়িতা লাভ করেছে। এ-প্রসঙ্গে কল্যাণবন্ধু ভট্টাচার্য ‘সুরকার কমল দাশগুপ্ত’ প্রবন্ধে বলেন :
বলতে গেলে তাঁর (কমল দাশগুপ্ত) সংগীত জীবনের শেষ অধ্যায়ে কবি শ্রীমোহিনী চৌধুরীকে কেন্দ্র করে তাঁর সুর রচনার আর এক পর্যায়ের সূচনা হয়েছিলো মাত্র, যার পূর্ণ বিকাশ আর হয় নি। চতুর্থ দশকের মধ্যভাগ থেকে শ্রীমোহিনী চৌধুরী তাঁর গানে
গণ-বিক্ষোভ এবং গণ-মানসের যে ছাপ এঁকেছেন আর কোনও গীতিকারের গানে তা পরিলক্ষেত হয় নি। তার জন্যই শ্রীমোহিনী চৌধুরী রচিত ‘পৃথিবী আমারে চায়’, ‘জেগে আছি একা জেগে আছি কারাগারে’, ‘তখন ভাঙেনি প্রেমের স্বপন খানি’, ‘যাদের জীবন ভরা শুধু আঁখিজল’, ‘ভেঙেছে হাল ছিঁড়েছে পাল’, ‘নাই অবসর – বাজায়ো না বীণাখানি’ – সুর করার সময় কমল দাশগুপ্ত গানের ভাবের দিকে লক্ষ্য রেখেই সুর করেছেন।৩৭
এ-বিষয়ে অভীক চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য,
মোহিনী চৌধুরী ব্যক্তিগত প্রেম ভালোবাসার অনুপ্রেরণায় প্রতিবাদী সত্তাকে খুঁজেছেন। আবার – কোনও গানে মানুষের দুঃসহ অবস্থায় তাদের মনে নিয়ে এসেছেন প্রেমময় স্মৃতি রোমন্থনের অনুভূতি। … কমল দাশগুপ্তের অসামান্য সুররচনায় এবং যথাযথ যন্ত্রানুষঙ্গের প্রয়োগে গানগুলি অন্যমাত্রা পেয়েছিল। এর মধ্যে প্রথমেই আসে সত্য চৌধুরীর গাওয়া ‘পৃথিবী আমারে চায় …’ গানটির কথা। সুরারোপে ছন্দের ব্যবহারের তো তুলনা নেই। তার সঙ্গে অভিনব যন্ত্রানুষঙ্গ। গানটির প্রতিটি প্রিলুড ও ইন্টারলুড মিউজিক শেষ হচ্ছে ক্ল্যারিওনেটজাত এক সুরের রেশে, যা ঠিক রণক্ষেত্রে বিউগলের মত শোনায়। এ
যেন অন্তর বাহির – দুই ক্ষেত্রেই রণভেরী। এছাড়া, মোহিনী-কমল এই যুগলসৃষ্টির আরও কিছু উজ্জ্বল নমুনা … ইত্যাদি উজ্জ্বল হয়ে আছে বাংলা গানের দুনিয়ায়।৩৮
প্রতিভার মূল্যায়ন
কমল দাশগুপ্তের সুরারোপের মধ্য দিয়ে সেদিন বাংলা গানের যে-পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল, তা স্মরণীয় করে রেখেছেন অনেক শিল্পী। তাঁদের মধ্যে তাঁর সংগীতপ্রতিভার মূল্যায়ন করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (বিমানে বিমানে আলোকের গানে, পৃ ১৮০-৮১), কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা নৌশাদ, জগন্ময় মিত্র (‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’, ২০১০), বিমান মুখোপাধ্যায় (বিমানে বিমানে আলোকের গানে, পৃ ৫২-৫৩), কানন দেবী (ওই, পৃ ৫৩), পঙ্কজ মলিস্নক (ওই, পৃ ৭৬-৭৭), জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ (ওই, পৃ ২১৬), প্রণব রায় (দেশ, বিনোদন সংখ্যা ১৯৮৪, পৃ ৬৬-৬৭), হীরেন বসু (ওই, পৃ ১৭১), রামকুমার চট্টোপাধ্যায় (পুরাতনী, পৃ ৭০) ও সমেত্মাষ সেনগুপ্ত (আমার সংগীত জীবন ও আনুষঙ্গিক জীবন, পৃ৭৭-৭৮) প্রমুখ।
তাঁর প্রতিভার মূল্যায়ন যেমন হয়েছে, অনুরূপভাবে খুব কম করে হলেও সমালোচনাও হয়েছে। মোহিনী চৌধুরীর রচনা ও কমল দাশগুপ্তের সুর দেওয়া ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়’ গানে সুশীল ঘোষ চরম ব্যর্থতার প্রতি ইঙ্গিত করলেও কমল দাশগুপ্তের কোনো বিকল্প নেই। তিনি সুরসুন্দরীর যে-বীণা হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তার প্রতিটি তন্ত্রীতে এমনই সুন্দর সুর তুলেছিলেন, যা চিরায়ত হয়ে আছে।
কে বলে তুমি নেই
যে কমল দাশগুপ্ত ১৯৪৬ সালে সাঁইত্রিশ হাজার টাকা আয়কর দেন, গাড়ি ছাড়া চলতেন না, সেই কমল যূথিকার প্রত্যাখ্যান৩৯, পারিবারিক সংকট ও নাথ ব্যাংকে লালবাতি জ্বলায় পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে পড়েন। বাড়ির বিশ্বস্ত পরিচারক অবশিষ্ট যেটুকু জমা ছিল তাও নিয়ে একদিন উধাও হয়ে যায়। আর্থিক ও মানসিকভাবে কমল দাশগুপ্ত যখন সর্বহারা ও বিপর্যস্ত, তখন ফরিদপুরের মেয়ে ফিরোজা বেগম অসমবয়সী এ-মানুষটির হাত ধরে শুধু জাগিয়ে তোলেননি, জড়িয়ে নিলেন নিজের জীবনের সঙ্গে। ১৯৫৫ সালে যখন কমল-ফিরোজার বিয়ে হয়, তখন কমলের বয়স ছিল ৪৩ বছর।৪০ বিয়ের চার বছর পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম হয় কাজি কামাল উদ্দিন। কলকাতায় তাঁদের সন্তান তাহসীন, হামিন ও শাফিনের জন্ম হয়। ১৯৬৭ সালে তাঁরা ঢাকায় চলে আসেন।৪১ মোহাম্মদ আসাফউদ্দৌলা এ-আগমনের সময় উলেস্নখ করেছেন ১৯৬৫ সাল। তিনি তাঁদের আগমন উপলক্ষে যশোর সীমান্তে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।৪২ তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মানে আসার পর তাঁর কোনো জায়গা হলো না যেন। এ-বিষয়ে আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, ‘একদিকে কলকাতা তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু ঢাকাও তাঁকে গ্রহণ করে নি। সেই সময় সরকারও তাঁর প্রতি প্রসন্ন ছিল না। কোনো প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে নি তাঁর মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্যে। আমাদের লজ্জা ও দায় এই যে, কমল দাশগুপ্তকে জীবিকার জন্যে শেষজীবনে ঢাকায় একটা মুদিখানার দোকান খুলতে হয়েছিল।’৪৩
বৃহত্তর যশোর জেলার কালিয়ার বেন্দা গ্রামের এই মানুষটি, বঙ্গদেশের একজন কৃতী শিল্পী ও সুরকার কমল দাশগুপ্তকে অনাদরে-অবহেলায়, এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৬২ বছর বয়সে নীরবে চলে যেতে হলো না-ফেরার দেশে।
উলেস্নখপঞ্জি
১. সঙ্গীতরত্নাকর গ্রন্থে দেখা যায়, গানের চার তুক, যেমন, আস্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী, আভোগ এর বদলে সেকালে ব্যবহৃত হতো উদ্গ্রাহ, মেলাপোক, ধ্রম্নব ও আভোগ। এদের বলা হতো ধাতু। এ চার ধাতু যে সব গানে থাকবে এমন নয়। তবে উদ্গ্রাহ ও ধ্রম্নব সবখানে থাকতো। কোথাও আভোগ এবং কোথাও মেলাপক ও আভোগ একসঙ্গে বর্জিত হতো। এভাবে একটি ধাতু বর্জিত হলে সে-গানকে বলা হতো ত্রিধাতু প্রবন্ধ-গীত, দুটি বর্জিত হলে বলা হতো দ্বিধাতুক প্রবন্ধ-গীত। চর্যাপদগুলো মেলাপক বর্জিত বলে ত্রিধাতুক প্রবন্ধ-গীত বলা হয়।
মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা-সম্পাদিত, চর্যাগীতিকা (বর্ণমিছিল, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা ১৯৭৩), পৃ ৩২-৩৩।
২. চর্যাপদের ১৯টি রাগিণীর মধ্যে গীতগোবিন্দে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র চারটি : গুর্জরী (বা গুঞ্জরী), দেশাখ, বরাড়ী ও ভৈরবী।
গোলাম মুরশিদ, হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি (অবসর, ঢাকা ২০০৬), পৃ ৩১৯-২১।
৩. আটটি রাগিণী : গুর্জরী, বরাড়ী, দেশাখ (গ), ভৈরবী, পটমঞ্জরী, মল্লার, ভাটিয়ালি ও বঙ্গাল।
মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা-সম্পাদিত, চর্যাগীতিকা, প্রাগুক্ত, পৃ ৬৩-১৯৩।
৪. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট (কলকাতা : আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ এপ্রিল ১৯৯৬), পৃ ১৬২।
৫. বৈদিক সামগান পরিবেশিত হতো পাঁচটি স্বরে। একমাত্র ছয় ও সাত স্বরের ব্যবহার ছিল বেদের কৌথুমীয় শাখার গানে।
স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, মহিষাসুরমর্দ্দিনী-দুর্গা (শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা ২০০২), পৃ ৩৫৫।
৬. গোলাম মুরশিদ, প্রাগুক্ত, পৃ ৩২০-৪৩।
৭. নজরুল ইসলামের গানে প্রথমদিকে চারতুক অনুসৃত হলেও শাস্ত্রীয় সংগীতে আকৃষ্ট হয়ে যখন নানা ধরনের গান রচনা করেন, তখন আর তুকের ব্যবহার রক্ষিত হয়নি।
তদেব, প্রাগুক্ত, পৃ ৩৪০।
৮. গৌতম সান্যাল, ‘জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে : গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার’, তথ্যসূত্র, ২১ বর্ষ, ২০১৬, পৃ ২৮৩।
৯. কমল দাশগুপ্ত ছাড়া তাঁর ছোট ভাই সুবল দাশগুপ্ত সেই সময়ে জগন্ময় মিত্রের ‘সাতটি বছর আগে’, ‘সাতটি বছর পরে’ ও ‘চিঠি’র গান এবং অন্যান্য বাংলা ও হিন্দি গানের সুর করা ছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের অনেক গানে সুর দিয়েছিলেন।
সুরঞ্জন রায়, কালিয়া জনপদের ইতিহাস (র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা ২০১৬), পৃ ৩০২।
১০. গৌতম সান্যাল, তথ্যসূত্র, প্রাগুক্ত, পৃ ২৮৩।
১১. দিঠি হাসনাত কমল দাশগুপ্তের জন্মতারিখ বলেন ৯ এপ্রিল ১৯১২।
সংসদ চরিতাভিধানকার জন্মস্থান প্রসঙ্গে একবার বলেন ঢাকা, পরে শুদ্ধ করে বলেন কালিয়া গ্রাম, যশোর (বাংলাদেশ)।
সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু-সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (সংসদ, কলকাতা ২০০২), পৃ ৭৭, ৬৪৮।
১২. তারাপ্রসন্ন দাশগুপ্তের নাম একই রচনায় আসাদুল হক ‘তারাপ্রকাশ’ ও ‘তারাপদ’ বলে উলেস্নখ করেন।
আসাদুল হক, ‘কমল দাশগুপ্তের নজরুল স্মৃতি’, নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা, এপ্রিল ২০০১, পৃ ২৫, ৫৪।
সত্যধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাত্মা মহিমচন্দ্রের বংশেই কমল দাশগুপ্তের জন্ম। মদনমোহন দাশগুপ্তের (স্ত্রী ত্রিপুরা সুন্দরী) চার সন্তানের মধ্যে কামিনীরঞ্জন, শরচ্চন্দ্র, মহিমচন্দ্র ও মেয়ে দক্ষিণা সুন্দরী। এঁদের মধ্যে কামিনীরঞ্জনের দু-পত্নীর মধ্যে বড় পত্নী কমলে কামিনীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন তারাপ্রসন্ন, হেমনলিনী ও কিরণপ্রসন্ন। তারাপ্রসন্নের আট সন্তান : বিমল, অমল (যুবককালে মারা যান), কমল, সুবল ও যুগল (শৈশবে মৃত)। মেয়েরা হলেন : ইন্দিরা ও সুধীরা। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। সবাই শিল্পী ছিলেন।
ভুবনমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, মহাত্মা গুরুনাথ, ১৩৫৬, পৃ ৫৭৮।
সুরঞ্জন রায়, কালিয়া জনপদের ইতিহাস, প্রাগুক্ত, পৃ ২৯৬-৯৭।
১৩. তদেব, পৃ ১২৯।
১৪. দিঠি হাসনাত, প্রাগুক্ত, ১০ মে, ২০১২।
১৫. বিমল দাশগুপ্ত সংগীতে, হাস্যকৌতুকে ও জাদুবিদ্যায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি শ্যামাসংগীত, ভক্তিগীতি, ঝুমুর, ভাটিয়ালি গানের, ও ভ্যাবাকান্ত, পেটুক চাণক্য, দারোগার সম্বন্ধী, বিদ্যার্ণবের বিদ্যের দৌড় ও চন্দ্রগুপ্ত পালা কমিকের গ্রামোফোন রেকর্ড করেন।
সুরঞ্জন রায়, কালিয়া জনপদের ইতিহাস, প্রাগুক্ত, পৃ ২৯৭।
১৬. সিতাংশুশেখর ঘোষ, বিমানে বিমানে আলোকের গানে (তৃতীয় সংস্করণ, কলকাতা ২০০৫), পৃ৭৫।
১৭. সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান (বাংলা একাডেমি, ঢাকা ১৯৯৭), পৃ ১০৮।
১৮. প্রথম আলো, ২৯ জুন, ২০১২।
১৯. আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৪।
২০. বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান, পৃ ১০৮।
২১. প্রথম আলো, ২৯ জুন, ২০১২।
২২.আবুল আহসান চৌধুরী, ‘কমল দাশগুপ্ত : হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে’, বাংলাদেশের হৃদয় হতে, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক, ৫ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৪১৯, পৃ ১৩৫।
২৩. আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ২৯-৩২।
২৪. আবুল আহসান চৌধুরী, প্রাগুক্ত, পৃ ১৩৩-৩৪।
২৫. তদেব, পৃ ১৩৪।
২৬. এ-সময় প্রেমেন্দ্র মিত্রের মতো কবি ও সজনীকান্ত দাশের মতো সাহিত্যিকও গান রচনা করেন। আর সুর দেওয়ার কাজে কমল দাশগুপ্তের পাশাপাশি এগিয়ে আসেন দিলীপকুমার রায়, রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, শচীন দেববর্মণ, সুধীরলাল চক্রবর্তী, হিমাংশু দত্ত, অনিল বাগচী, অনুপ ঘটক প্রমুখ।
গোলাম মুরশিদ, প্রাগুক্ত, পৃ ৩৪৪।
২৭. আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৮।
২৮. বাংলা একাডেমি চরিতাভিধানে ‘এলিস জনসন’ বলা হয়েছে। বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান, পৃ ১০৮। অপরদিকে আসাদুল হক লিখেছেন Mr. Alice Deencon; আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৮।
২৯. আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৮।
৩০. বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান, পৃ ১০৮।
৩১. তদেব, পৃ ১০৮।
৩২. আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৮-৫৯।
৩৩. আবুল আহসান চৌধুরী, প্রাগুক্ত, পৃ ১৩৫-৩৬।
৩৪. সমেত্মাষকুমার বিশ্বাস, ‘দুরন্ত বৈশাখী ঝড় : মোহিনী চৌধুরী’, তথ্যসূত্র, ২১ বর্ষ, ২০১৬, পৃ ২৩৭।
৩৫. দিঠি হাসনাত, প্রথম আলো, ১০ মে, ২০১২।
৩৬. মান্না দে, জীবনের জলসা ঘরে (আনন্দ, তৃতীয় মুদ্রণ, কলকাতা ২০০৯), পৃ ২৪৭।
৩৭. কল্যাণবন্ধু ভট্টাচার্য, ‘সুরকার কমল দাশগুপ্ত’, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, কার্তিক-পৌষ ১৩৮৩, পৃ ২৯০। উদ্ধৃত : তথ্যসূত্র ২০১৬, পৃ ২৩৭।
৩৮. অভীক চট্টোপাধ্যায়, ‘বাংলা গানে কমল স্পর্শ’, শারদীয় আজকাল, ১৪১৯, পৃ ৪৫৯। উদ্ধৃত : তথ্যসূত্র, ২০১৬, পৃ ২৩৭।
৩৯. যূথিকা রায় একজন শিল্পী হিসেবে রেকর্ড করেন প্রায় ১১০টি বাংলা ও ২০৯টি হিন্দি গীত-গজল-ভজন-নাত। এর প্রতিটি গানের সুরকার ছিলেন কমল দাশগুপ্ত।
আবুল আহসান চৌধুরী, প্রাগুক্ত, পৃ ১৪২।
৪০. আসাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ ৬০।
৪১. তদেব, পৃ ৬০।
৪২. প্রথম আলো, ২৯ জুন, ২০১২।
৪৩. আবুল আহসান চৌধুরী, প্রাগুক্ত, পৃ ১৪৬।
সহায়কপঞ্জি
১. মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা-সম্পাদিত, চর্যাগীতিকা, বর্ণমিছিল, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা ১৯৭৩।
২. গোলাম মুরশিদ, হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, অবসর, ঢাকা ২০০৬।
৩. সুরঞ্জন রায়, কালিয়া জনপদের ইতিহাস, র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা ২০১৬।
৪. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু-সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সংসদ, কলকাতা ২০০২।
৫. আসাদুল হক, ‘কমল দাশগুপ্তের নজরুল স্মৃতি,’ নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা, বিশেষ সংখ্যা, এপ্রিল ২০০১।
৬. ভুবনমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, মহাত্মা গুরুনাথ, ১৩৫৬।
৭. সিতাংশুশেখর ঘোষ, বিমানে বিমানে আলোকের গানে, তৃতীয় সংস্করণ, কলকাতা ২০০৫।
৮. সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান, বাংলা একাডেমি, ঢাকা ১৯৯৭।
৯. প্রথম আলো, ২৯ জুন, ২০১২।
১০. সমেত্মাষকুমার বিশ্বাস, ‘দুরন্ত বৈশাখী ঝড় : মোহিনী চৌধুরী’, তথ্যসূত্র, ২১ বর্ষ, ২০১৬।
১১. দিঠি হাসনাত, প্রথম আলো, ১০ মে, ২০১২।
১২. মান্না দে, জীবনের জলসা ঘরে, আনন্দ, তৃতীয় মুদ্রণ, কলকাতা ২০০৯।
১৩. কল্যাণবন্ধু ভট্টাচার্য, ‘সুরকার কমল দাশগুপ্ত’, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, কার্তিক-পৌষ ১৩৮৩।
১৪. অভীক চট্টোপাধ্যায়, ‘বাংলা গানে কমল স্পর্শ’, শারদীয় আজকাল, ১৪১৯।
১৫. আবুল আহসান চৌধুরী, ‘কমল দাশগুপ্ত : হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে’, বাংলাদেশের হৃদয় হতে, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক, পঞ্চম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৪১৯।
১৬. সুব্রত রায়চৌধুরী-সম্পাদিত, গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ পত্রিকা তথ্যসূত্র, ২১ বর্ষ, ২০১৬।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.