চার তরুণ পেলেন কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২৩

সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম তরুণদের সাহিত্যচর্চাকে উজ্জীবিত ও বেগবান করার লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে প্রদান করে আসছে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’। নিয়মিতভাবে প্রদত্ত এই পুরস্কারে ২০২৩ সালে ভূষিত হয়েছেন চারজন প্রতিশ্রুতিশীল নবীন সাহিত্যিক।

তাঁরা হলেন – কথাসাহিত্যে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত ‘ভাতের কেচ্ছা’ বইয়ের জন্য কামরুন্নাহার দিপা, প্রবন্ধ ও গবেষণায় কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘জনসংস্কৃতির রূপ ও রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য শারফিন শাহ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সাহিত্যে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘ফাড়াবাড়ি হাট গণহত্যা আদর্শ বাজার গণহত্যা’ বইয়ের জন্য ফারজানা হক এবং শিশু-কিশোর সাহিত্যে অক্ষরবৃত্ত থেকে প্রকাশিত ‘আলোয় রাঙা ভোর’ বইয়ের জন্য রহমান বর্ণিল।

সাহিত্যের পাঁচটি বিভাগে এই পুরস্কার প্রদান করা হলেও ২০২৩ সালে ‘কবিতা’ বিভাগে মানসম্মত বই জমা পড়েনি বলে জানান সম্মানিত বিচারকমণ্ডলী। ফলে এবার এই বিভাগে কাউকে পুরস্কার দেওয়া যায়নি।

‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান উপলক্ষে এবার দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। প্রথমদিন ২৬ এপ্রিল ছিল গল্প লেখা বিষয়ক কর্মশালা ‘গল্পের কলকব্জা’। ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অর্ধশতাধিক নবীন কথাসাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেন। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নির্বাচিত উদীয়মান লেখকরা এ কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হলো।

এতে গল্প লেখার নানা করণকৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করেন সাহিত্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক সুব্রত বড়ুয়া, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম ও মোজাফফর হোসেন।

পরদিন ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে এক অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রদান করা হয় আইএফআইসি
ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২৩’। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা, একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র ও মানপত্র দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘কালি ও কলম’-এর প্রকাশক আবুল খায়ের ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম সারওয়ার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘কালি ও কলম’-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কালি ও কলম-এর সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিচারকমণ্ডলীর পক্ষে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন কবি মাহবুব সাদিক। পরে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য বেদনার, এবার কবিতা বিভাগে পুরস্কার দেওয়ার মতো যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, ‘এবার কবিতায় কাউকে পুরস্কার দেওয়া যায়নি। আমি একজন কবি, এটা আমার জন্যও বেদনার।’

তবে লেখালেখি কেবল পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয় – উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরস্কার নয়, লেখালেখি সবসময় পাঠকের জন্য। আপনার লেখা যেন পাঠককে ভাবায়, কিছু অনুভব করায়, সেই উদ্দেশ্যে কাজ করে যাবেন বলে আশা করছি।’

কালি ও কলম-এর প্রকাশক আবুল খায়ের বলেন, ‘কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকাটি ভালো মানের বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। তাই সবারই দায়িত্ব এই পত্রিকাটি যেন মান বজায় রেখে টিকে থাকতে পারে।’

আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম সারওয়ার বলেন, ‘এই তরুণরা একদিন আরো মেধা-দ্যুতি ছড়িয়ে যাবেন বলেই প্রত্যাশা করি।’

সভাপতির বক্তব্যে এমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্বে এই পুরস্কার বিজয়ী অনেকে এখন দাপটের সঙ্গে সাহিত্যাঙ্গনে বিচরণ করছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এবারের বিজয়ী লেখকরাও আগামীতে অনেক ভালো কাজ করবেন।’

বিশিষ্টজনদের বক্তব্যের পাশাপাশি পুরস্কার বিজয়ী চার নবীন সাহিত্যিক সংক্ষেপে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এই আয়োজনে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সংগীত পরিবেশন।