ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট – আইটিআই’র সচিবালয় থেকে জানানো হলো, এবারের (২০২৪) বিশ্বনাট্য দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে চীনের লাংফাওতে এবং সেইসঙ্গে আইটিআই’র এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক ফোরামের সভাও অনুষ্ঠিত হবে। তাই বাংলাদেশ কেন্দ্রের একজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের কেন্দ্রের মূল চালিকাশক্তি – সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ দেবনাথ (দুলাল) এবার চীন যাবে। দুলাল খুব একটা আগ্রহী ছিল না, কারণ বিমান ভাড়াটা ব্যক্তিগতভাবে তাকেই বহন করতে হবে। তবু আমরা বললাম, বাংলাদেশ অনুপস্থিত থাকবে তা তো হতে পারে না। বিমান ভাড়ার একটা ব্যবস্থা হবেই।

২০শে ফেব্রুয়ারি অপ্রত্যাশিতভাবে আমিও সাম্মানিক সভাপতি হিসেবে আমন্ত্রণ পেলাম এ-উপলক্ষে চীন যাওয়ার জন্যে। আমার বিমান টিকেট অবশ্য ওরা পাঠাবে লিখেছে। গত নভেম্বরেও আইটিআই চার্টার পরিবর্তনের জন্যে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় চীন যাওয়ার আমন্ত্রণ এসেছিল। কিন্তু আমি আজকাল বিদেশে দূরের পথ একা যেতে সাহস করি না, তাছাড়া সে-সময়ে শরীরও একটু খারাপ ছিল। তাই যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি।

চীনে দশ-বারোবার আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বেইজিং, নানজিং, শামেন, সাংহাই, গোয়াংজো, ইনচুয়ান, হাইকু, চোংকিং – এসব শহরে। শামেনেই গেছি তিনবার। প্রথমবার চায়না ক্যাম্পাস থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে এবং পরের দুবার আইটিআই কংগ্রেস উপলক্ষে। প্রথমবার শামেন গিয়ে ওখানকার অবকাঠামো দেখে আমি চীনা আইটিআই কেন্দ্রের সভাপতি জি গুপিংকে বলেছিলাম, এখানেই তো আপনারা কংগ্রেস করতে পারেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত করেন এবং দীর্ঘ সময় পর নানা আমলাতান্ত্রিক স্তর পেরিয়ে শামেনে ২০১১-তে আইটিআই’র ৩৩তম বিশ্ব কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়, যা সব মিলিয়ে আমার দেখা ১৫টি কংগ্রেসের মধ্যে অন্যতম সেরা আয়োজন ছিল।

এবার আমি দুলালকে জোর দিয়ে বললাম, তোমাকে যেতেই হবে। তাহলেই আমি যেতে পারি। সঙ্গী পেয়ে ও যাওয়া নিশ্চিত করল। চীনা ভিসা পেতে কিছু জটিলতা থাকলেও এবার আইটিআই সরকারি আমন্ত্রণের একটা আবশ্যিক কাগজ তাড়াতাড়ি পাঠানোর ফলে আমরা সহজেই ভিসা পেয়ে গেলাম। চীনা দূতাবাসের বাঙালি কর্মী লিমন অনেক সাহায্য করল। আর অনলাইনে জটিল ভিসা ফরম পূরণ করে দিয়েছিল জামাতা আপন।

২৫শে মার্চ ২০২৪ রাত ১১টায় আমি আর দুলাল চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্সে বেইজিংয়ের পথে গোয়াংজো রওনা হলাম। কিছুকাল আগেও যখন যেতাম ব্যাগেজ সরাসরি গন্তব্যে যেত না। গোয়াংজো বা কুনমিং নেমে ইমিগ্রেশন সেরে ব্যাগেজ নিয়ে তাড়াতাড়ি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ধরার জন্যে দৌড়াতে হতো। এখন ব্যাগেজ সরাসরি গন্তব্যে চলে যায়, কানেকটিং ফ্লাইটেরও বোর্ডিং কার্ড দিয়ে দেওয়া হয়। ফ্লাইটে চীনা খাবার সুখাদ্য নয় বলে আমরা আগেই বিমানবন্দরের স্কাই লাউঞ্জে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম।

তিন ঘণ্টা পর গোয়াংজো পৌঁছালাম। রাতে একদম ঘুম হয়নি। গোয়াংজোতে নামলাম ২৬ তারিখ স্থানীয় সময় ভোর ৪টায়। চীনের সময় আমাদের থেকে দু’ঘণ্টা এগিয়ে অর্থাৎ ওদের ভোর ৪টা মানে আমাদের রাত ২টা। এখানেই ইমিগ্রেশন হলো। দীর্ঘ লাইন ধরে এগিয়ে কাউন্টারে পৌঁছার আগেই দুজন কাগজপত্র পরীক্ষা করেন, নানা প্রশ্ন করেন। প্রচুর বাংলাদেশি চীন যায় ব্যবসা করতে। তাদের কাছে নগদ টাকা দেখতে চায়। তারা ব্যাগ থেকে বান্ডিল বান্ডিল চীনা মুদ্রা দেখিয়ে পুলসিরাত পার হন। তবে বাংলাদেশ থেকে এভাবে এত নগদ চীনা মুদ্রা নেওয়া নিশ্চয়ই বৈধ নয়।

গোয়াংজোতে আমাদের চার ঘণ্টার যাত্রাবিরতি। আমরা কফি খাওয়ার জন্যে অনেক ঘোরাঘুরি করছি। কিন্তু এখনো দোকান খোলেনি। একটা রেস্টুরেন্ট খোলা পেলাম, কিন্তু কেউ ইংরেজি বোঝে না। ছবি দেখে আমরা একটা র‌্যাপ জাতীয় জিনিস আর ড্রিংস অর্ডার করলাম। আমার সঙ্গে আগের বারে থেকে যাওয়া কয়েকটা চীনা নোট ছিল, তা থেকে দাম মেটানো গেল। তবে ড্রিংসটা অখাদ্য।

সকাল ৮টায় আমাদের ফ্লাইট ছাড়ল বেজিংয়ের পথে। আড়াই ঘণ্টার যাত্রা। ক্ষুধার্ত ছিলাম বলে প্লেনের ব্রেকফাস্ট খারাপ লাগল না। বেজিংয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে আইটিআই’র স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন। আমরা ডলার ভাঙালাম ও ফোনের সিমকার্ড কিনলাম। যদিও সে সিমকার্ড তেমন কাজে এলো না। আমার একটা রোমিং নাম্বার ছিল, কিন্তু সিমকার্ডটা আসার আগে খুঁজে পাইনি। এবার ঠিক করেছি, দেশে ফিরেই আলাদা একটা রোমিং নাম্বার নেব। তবে আজকাল হোটেলে ওয়াইফাই থাকে বলে সহজেই হোয়াটসআপ ব্যবহার করা যায়। চীনে আবার হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল, ফেসবুক চলে না। আমাকে টোবিয়াস বিয়ানকোনে জানিয়ে দিয়েছিল ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড করে রাখলে ওসব ব্যবহার করা যায়। অবশ্য বোটিম আমার আগেই ছিল। বোটিমের মাধ্যমে কথা বলা সহজ, তবে যার সঙ্গে কথা বলব তারও বোটিম থাকতে হবে।

বিমানবন্দর থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে লাংফাও শহর। বিশাল আরামদায়ক গাড়িতে করে আমরা সেভেন কাল্টিভেশান্স হোটেলে পৌঁছালাম। সেভেন কাল্টিভেশান্স বলতে বোঝানো হয় – সাতটি বিভিন্ন জীবনযাপন প্রণালি যেমন : সদ্গুণ, খাদ্য, ব্যায়াম, পাঠাভ্যাস, সুগন্ধি, বিশ্রাম ও পুষ্পরাজি – যা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্যে অপরিহার্য। লাংফাও মেট্রো এরিয়ার জনসংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার। কী খোলামেলা আধুনিক শহর। আমাদের পাঁচতারা হোটেলটা বিশাল, নির্ধারিত কক্ষে ঢুকেই মন ভালো হয়ে গেল। বিরাট কক্ষ, দুটো বিছানা, সোফা, পড়ার টেবিল – আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সবই রয়েছে। আমাদের হাতে যে-প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখলাম দুপুরের খাবারের সময় শেষ হতে বেশি বাকি নেই। আমরা তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে আমাদের জন্যে নির্ধারিত রেস্টুরেন্টে বুফে লাঞ্চে এলাম। প্রচুর খাওয়ার ব্যবস্থা।

পরিচিত অল্প দু-একজনকে পেলাম, যাঁরা আমাদের মতো দেরিতে এসে পৌঁছেছেন।

সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে আমাদের হোটেল লবিতে জড়ো হতে বলা হয়েছে যাতে বাসে করে সবাই ওয়েলকাম ডিনারের জন্যে যেতে পারি। আমার ও আমাদের মহাপরিচালক টোবিয়াস বিয়ানকোনের জন্যে আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এবার আইটিআই সভাপতি মোহামেদ আল আফকাম আসেননি। তাই সাম্মানিক সভাপতি হিসেবে আমাকে বিশেষ সম্মান দেখানো হচ্ছে।

আমরা এসে পৌঁছালাম অনুষ্ঠানস্থল নবনির্মিত সিল্ক রোড ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সচেঞ্জ সেন্টারে। বিখ্যাত জাপানি ডিজাইনার ইয়োশিনেপরি চিদোরি ভাসমান মেঘের আদলে এই বিশাল স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ২৭০,০০০ বর্গমিটারের এই ভবনে রয়েছে চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের থিয়েটার, একটি কনসার্ট হল, ১৪টি আর্ট একজিবিশন হল এবং একটি আর্ট স্পেস যা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। উত্তর চীনে আর্ট গ্যালারি, মিউজিয়াম ও পারফরমিং আর্ট সেন্টার – সব মিলিয়ে এমন দ্বিতীয় স্থাপনা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এটি এবং পাশের ইউনিক ড্রিম অফ রেড ম্যানসন একটি বেসরকারি প্রকল্প – যার মালিকানা শিনই হোল্ডিংসের। যাঁর উদ্যোগে এই হোল্ডিংস গড়ে উঠেছে, তিনি লাংফাও এলাকার মানুষ। প্রচুর বিত্ত অর্জন করার পর তিনি সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কথা অনুভব করলেন এবং সেই ভাবনারই রূপায়ণ এই সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স ও পাশের থিম পার্ক।

এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে আরো প্রায় ২৫টি আইটিআই কেন্দ্রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবারের অনুষ্ঠানে। সুসজ্জিত হলে আনুষ্ঠানিক ভোজের আয়োজন। একে একে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতেই কত স্মৃতি মনে ভেসে উঠলো। সেই ১৯৮৩ সালে বার্লিনে আইটিআই কংগ্রেসে ভীরু পদক্ষেপে প্রথম যোগ দিয়েছিলাম। চার দশক পেরিয়ে এসে দেখলাম আমার জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময়ই আমি আইটিআই’র সঙ্গে ছিলাম। কত সাফল্য, কত সংকট এসেছে সংগঠনটির সামনে। অনেক ঘটনার সাক্ষী আমি। আমার অভিজ্ঞতা আমি সবিস্তারে বর্ণনা করেছি আমার লেখা বই – থিয়েটার ওয়ার্ল্ডওয়াইড : মাই আইটিআই ইয়ার্স-এ। অনেকদিন পর দেখা হলো পুরনো বন্ধু চীনের সাবেক উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী ডং উই’র সঙ্গে, যিনি চীন আইটিআই’র সভাপতি থাকার সময়ে বেশ কয়েক বছর আমাদের সঙ্গে আইটিআই নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর উষ্ণ অভ্যর্থনা মন ভরিয়ে দিলো। ছিল চীন কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সেক্রেটারি জেনারেল ওয়াং লিং। সে সবসময়ে কেন্দ্রপ্রধানের দোভাষী হিসেবে কাজ করে। সুদানের আলী মাহদির উপস্থিতি সবার নজর কাড়ে। উগান্ডার জেসিকা কাওয়াও এসেছিলেন। ফিলিপিনসের সিসিল গুইডোতে-আলভারেজ অশক্ত শরীর নিয়েও এসেছিলেন। ভারতের বিদ্যানিধি বানারসে এসে আমাকে প্রণাম করলো। চীন কেন্দ্রের নতুন সভাপতি চেন ইয়ংকোয়ানের সঙ্গে পরিচয় হলো। পুরো চারদিন সব অনুষ্ঠানে তিনি আমাদের সঙ্গ দিয়েছেন।

চেন আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে চীন আইটিআই ও সিল্ক রোড ইন্টারন্যাশনাল আর্টস সেন্টারের পক্ষে স্বাগত জানালেন। আয়োজকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর টোবিয়াস বিয়ানেকোনে আমাদের আইটিআই’র উপস্থিত নির্বাহী পরিষদ সদস্যদের ও আমাকে পরিচয় করালেন।

চীনে আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় ঘূর্ণায়মান টেবিলে একটার পর একটা খাবার আসে, সবাই যার যার মতো সেখান থেকে তুলে নেন। পানীয় নিয়ে টোস্ট করা চিরাচরিত রীতি। কেবল নিজেদের টেবিলের সবার সঙ্গেই নয়, অন্য টেবিলে গিয়েও গ্লাসের সঙ্গে গ্লাস ঠুকে টোস্ট করা হয়ে থাকে। আবার বিনয়ের প্রকাশ হিসেবে যিনি প্রথমে এগিয়ে এসে টোস্ট করেন, তিনি তাঁর গ্লাসটা একটু নিচুতে ধরেন। আমিও তা করার চেষ্টা করি কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই সুযোগ পাই না।

২৭শে মার্চ বিশ্বনাট্য দিবস। ১৯৬২ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বনাট্য দিবস উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ১৯৬২ সালের ২৭শে মার্চ আইটিআই’র একসময়ের প্রধান নাট্যোৎসব ‘থিয়েটার অব নেশানস্’-এর উদ্বোধনী দিন ছিল, তাই সে-দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল নাটক নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সমবেতভাবে আত্মশক্তি উদ্যাপনের জন্যে। প্রতিবছর একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এ-দিনটি উপলক্ষে একটি বাণী প্রদানের জন্যে। শুরু থেকে গত কয়েক বছর যাঁরা বাণী দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জাঁ ককতু, আর্থার মিলার, লরেন্স অলিভিয়ার, হেলেনা ভাইগেল, পিটার ব্রুক, পাবলো নেরুদা, রিচার্ড বার্টন, এলেন স্টুয়ার্ট, ইউজিন আয়োনেস্কা, ওলে সোয়িংকা, ভাসলাভ হাভেল, গিরিশ কারনাড, আরিয়ান মুশকিন, সুলতান বিন মোহাম্মদ আল কাসিমি, অগাস্টো বোয়াল, দারিও ফো, আনাতোলি ভাসিলিয়েভ, পিটার সেলার্স ও ইয়ন ফসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একমাত্র পিটার ব্রুক দু-বার (১৯৬৯ ও ১৯৮৮) বাণী দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাণী প্রদানকারী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্তত ২২ জনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে চেষ্টা করা হয়েছে আইটিআই কেন্দ্রীয়ভাবে যেখানে বিশ্বনাট্য দিবস উদ্যাপন করে, সেখানে উপস্থিত থেকে বাণী প্রদানকারী যেন তাঁর বাণীটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেন। এবার অবশ্য ইয়ন ফসের পক্ষে চীন আসা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে প্যারিসে ইউনেস্কো ভবনে অগাস্টো বোয়াল যখন বাণী প্রদান করেছিলেন, সেদিন আইটিআই সভাপতি হিসেবে আমি স্বাগত বক্তব্য দিয়েছিলাম। সেটা আমার জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে। বাংলাদেশ আইটিআই ১৯৬২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেওয়া আন্তর্জাতিক বাণীগুলোর একটি সংকলন প্রকাশ করেছিল ইংরেজি, বাংলা ও ফরাসি ভাষায়। আমাদের ইচ্ছা আছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সব বাণী নিয়ে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা। নরওয়ের নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক ইয়ন ফসে ২০২৩-এ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন আর তার পরের বছরেই আমরা তাঁকে পেয়েছি বিশ্বনাট্য দিবসের বাণী প্রদানের জন্যে। তাঁর বাণীর শেষ কথা ছিল, যুদ্ধ ও শিল্প পরস্পরবিরোধী, যেমন যুদ্ধ ও শান্তি বিপরীতমুখী। শিল্পই শান্তি।

বিশ্বনাট্য দিবসের সকালের অনুষ্ঠানে ছিল চারজন নাট্যবেত্তার কী নোট বক্তৃতা। তাঁরা ছিলেন চায়না থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অভিনেতা পু কানশিন, সামোয়ার কোরিওগ্রাফার-নির্দেশক ও আইটিআই ওয়ার্ল্ড থিয়েটার অ্যাম্বাসাডর লেমি পোনিফাসিও, উগান্ডার নির্দেশক, অভিনেতা ও শিক্ষক জেসিকা কাওয়া এবং চায়না থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন ও চায়না রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি লেখক-নাট্যকার চেন ইয়নি। তাঁদের মধ্যে লেমির বক্তব্য ছিল মৌলিক, আকর্ষণীয় ও চিন্তা উদ্রেককারী। এর আগেও তিনি তাঁর এক বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন সামোয়ার মতো ২ লাখ লোকের আবাসভূমি এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখার সংগ্রামের কথা।

দুপুরের খাবারের বিরতির পর তিনটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম প্যানেলের বিষয় ছিল ‘নাটক : মানুষের হৃদয়ের সেতুবন্ধন’। এখানে চীনের তিনজন এবং ক্যামেরুন, ফিলিপিন্স ও জর্জিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দ্বিতীয় প্যানেলের বিষয় ছিল ‘নাটক : সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মঞ্চ’। এখানেও চীনের তিনজন, সুদান, নাইজেরিয়া, সাইপ্রাস ও মরক্কোর আমন্ত্রিত বক্তা অংশ নেন। সুদানের আলী মাহদী একবার আমাদের আইটিআই সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন এবং কর্মশালা পরিচালনা করেছিলেন। মরক্কোর লতিফা আহ্রারে আমাদের উৎসবে নাটক অভিনয় করে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন।

তৃতীয় প্যানেলের বিষয় ছিল, ‘নাটক : তারুণ্যের মঞ্চ’। এখানে চীনের চারজন, হাঙ্গেরি, ভারত ও ঘানার নির্ধারিত আলোচকরা অংশ নেন। প্রতিটি প্যানেলের সময়সীমা ছিল এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট। তবে সব আলোচকই যে সময়সীমা মেনে চলেছেন, এমন নয়। একজন তো বললেনই যে তিনি অধ্যাপক, তাই একটু বেশি বলার অভ্যাস। আবার অনেকে বিষয়বস্তু মেনে কথা বলেননি। নিজ দেশের নাট্যাভিজ্ঞতা নিয়ে লিখিত বক্তব্য পেশ করেছেন। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন ফিলিপিন্সের সিসিল, যিনি অলিখিত আন্তরিক বক্তব্যে বিষয়কে বিস্তারিত করেছেন।

সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – যার শিরোনাম ছিল ‘গালা নাইট’। এখানে নৃত্য-গীত-নাটক পরিবেশন করে চিলির লা হুয়েলা থিয়েট্রো, চীনের লিয়াংশান কালচার ও ট্যুরিজম বোর্ড, চীনের লিটল প্লাম ব্লসম আর্ট ট্রুপ, ফ্রান্সের দ্য ওয়াইল্ড ডংকিস, পোল্যান্ডের গ্রোটস্কি ইনস্টিটিউট, কিউবার মাই কোম্পানিয়া কনটেমপোরারি ডান্স ট্রুপ ও চীনের ঝে জিয়াং উ অপেরা রিসার্চ ইনস্টিটিউট। মাঝে মাঝে ফরাসি অভিনেতা ও ক্লাউন জুলিয়েন কতেরো চমৎকার একক অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করে দর্শকদের প্রভূত আনন্দ দিয়েছেন।

উন্নতমানের অনুষ্ঠানও অতি দীর্ঘ হলে ভালো লাগে না। এখানেও তাই হয়েছিল। নামকরা সব দল, কিন্তু একসঙ্গে এত পরিবেশনা না থাকলে ভালো হতো। উদ্যোক্তাদের একজনকে অনুষ্ঠান শেষে আমি বিষয়টা বলেছিলাম। তিনি জানালেন, অনেক দলই তাদের নির্ধারিত সময়সীমার বেশি সময় নিয়েছে। একটি দল ২০ মিনিটের জায়গায় ৪০ মিনিট অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে।

চীনের প্লাম ব্লসম আর্ট ট্রুপ দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে। ওদের পরিবেশনা আমি আগেও একাধিকবার দেখেছি। এবার দেখলাম ওদের শিশুদের দলের। কী পরিবেশনা নৈপুণ্য! ছোট থেকেই ওদের খুব যত্ন নিয়ে তৈরি করা হয়।

গ্রোটস্কি ইনস্টিটিউটের ‘কাইরস’ ও মাই কোম্পানিয়ার ‘মনডো’ ছিল দীর্ঘ ও জটিল।

গালা নাইট শেষে ছিল রিসেপশন। আমরা যারা সন্ধ্যায় ডিনার করার সুযোগ পাইনি, তারা রিসেপশনে টুকিটাকি খেয়েই ক্ষুধা নিবৃত্ত করলাম।

২৮শে মার্চ সকালে হোটেলের একটা কনফারেন্স রুমে ছিল দুটো মিটিং। প্রথমটা ছিল যেসব আইটিআই কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা এখানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন, তাঁদের নিয়ে। মূল আলোচ্য বিষয় ছিল চার্টার পরিবর্তনের সর্বশেষ অবস্থা সবাইকে জানানো। চেন ঝংওয়েন আমাকে আড়ালে বললেন যে, প্রথমেই আমি তোমাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্যে আহ্বান জানাবো, তুমি বিষয়টার গুরুত্ব সম্পর্কে বলবে। আমি সবাইকে বললাম যে, চার্টার পরিবর্তন সময়ের দাবি এবং আইটিআই’র ভবিষ্যতের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা প্রত্যেক আইটিআই কেন্দ্রই এই পদক্ষেপে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। তারপর প্রস্তাবিত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে কথা হলো। আগে যেমন আইটিআই সভাপতি সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন না। নির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত

 সদস্যরা তাঁদের মধ্য থেকে সভাপতি নির্বাচিত করতেন। এবার প্রস্তাব করা হয়েছে, সভাপতিও নির্বাহী পরিষদের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে সাধারণ পরিষদের প্রতিনিধিদের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হবেন।

তারপর অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কাউন্সিলের সভা। এখানে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপিন্স, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কোরিয়ার প্রতিনিধি বর্তমানে এ কাউন্সিলের সভাপতি। এ-কথা স্বীকার করতেই হবে যে, এই আঞ্চলিক মোর্চাটির তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নেই। দুটো সভায়ই আমার সঙ্গে দেবপ্রসাদ দেবনাথ অংশ নিয়েছিলেন।

দুপুরে খাবার পর আমরা গেলাম রেড ম্যানসন থিয়েটার পার্কে। ৩০০,০০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে নির্মিত এ-পার্কে রয়েছে ১২টি থিয়েটার ও ১০৮টি স্পেস যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন বিষয় দেখানো যায়। তাছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এ-প্রকল্পটি নির্মাণে সময় লেগেছে আট বছর। চীনে সাংস্কৃতিক পর্যটনের ক্ষেত্রে এ-পার্কটি অগ্রগণ্য নাম। এখানে অত্যাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতির সহায়তায় চীনের বিভিন্ন চিরায়ত কাহিনির দৃশ্যকল্প উপস্থাপন করা হয়। পর্যটকদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে কাহিনিগুলো জানানোর জন্যে এ বিশাল ব্যয়বহুল আয়োজন।

চীনের চিরায়ত উপন্যাস ড্রিম অব রেড ম্যানসন্স-এর অংশ  অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন থিয়েটারে। আমরা মঞ্চে যেভাবে নাটক দেখতে অভ্যস্ত, তা থেকে বেরিয়ে এসে এখানে স্টেজ ইমারশান টেকনোলজির সহায়তায় বিভিন্ন দৃশ্য তৈরি করা হয়। দর্শকরা বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে এক বিরল নাট্যাভিজ্ঞতা লাভ করেন। 

আমরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে পাঁচটি প্রদর্শনী দেখেছিলাম। সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা হলো, থিয়েটার অব বেডস্-এ ঢুকে। হলের ভেতরে সারি সারি বিছানা সাজানো – কোনোটা একজনের, কোনোটা দুজনের বেড। সবাইকে চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হয়। রিফ্লেকশনের মাধ্যমে সামনে বা উপরের পর্দায় দৃশ্য দেখতে হয়। কখনো অভিনেতারা আমাদের পাশে বসে হাত ধরছেন, সেটাও আমরা সামনের পর্দায় দেখতে পাচ্ছি। কয়েকজন তো ক্লান্তিতে ঘুমিয়েই পড়লেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা পার্ক থেকে বের হয়ে এলাম।

২৮শে মার্চ দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ-পার্কেই তিনটা কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। ফ্রান্সের ম্যাথিউ রওচভার্গার নাটক ও সংগীতের মেলবন্ধন নিয়ে কর্মশালা পরিচালনা করেন, যেখানে চিলড্রেনস্ এক্সপেরিমেন্টাল গ্রুপের শিশু-কিশোররা অংশ নিয়েছিল। কিউবার কোরিওগ্রাফার সুজানা পোস পরিচালিত নৃত্যবিষয়ক কর্মশালায় ইউনিক ড্রিম অব রেড ম্যানসনসের তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অংশ নিয়েছিলেন। অভিনয়বিষয়ক তৃতীয় কর্মশালার পরিচালক ছিলেন পোল্যান্ডের জারোস্লাভ ফ্রেট ও মনিকা ওয়াচউইক, যেখানে গোল্ডেন সেইল আর্ট ট্রুপের শিল্পীরা অংশ নিয়েছিলেন।

বেইজিংয়ের এত কাছে থেকেও আমরা চীনের রাজধানী না দেখে চলে যাবো? তাই উদ্যোক্তারা ২৯শে মার্চ রেখেছেন আমাদের বেইজিং দেখার জন্যে। সকাল সকাল আমরা সবাই রওনা হয়ে গেলাম। আমাদের বলা হয়েছিল পাসপোর্ট সঙ্গে নেওয়ার জন্যে। পথে দেখলাম একজায়গায় পুলিশি তল্লাশি। আমাদের পাসপোর্ট ভালো করে দেখার পর রাজধানী অভিমুখে যাত্রার অনুমতি মিললো।

আমাদের প্রথম গন্তব্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফরমিং আর্টস – এনসিপিএ। তিয়েন আন মেন স্কোয়ারের সামনে চীনের সংসদ ভবন গ্রেট হল অফ দ্য পিপল-এর পাশেই ‘দ্য জায়েন্ট এগ’ নামে খ্যাত এই কলাকেন্দ্রের অবস্থান এক কৃত্রিম সরোবরের মাঝখানে। উপগোলকের মতো দেখতে এই ‘দৈত্যাকার ডিম্ব’-এর খোলস তৈরি হয়েছে টাইটেনিয়াম ও কাঁচ দিয়ে। ফরাসি স্থপতি পল অঁদ্রের নকশা অনুযায়ী এ কলাকেন্দ্র নির্মাণে সময় লেগেছিল ছয় বছর এবং ব্যয় হয়েছিল ৩০০ মিলিয়ন ইউরো।

এনসিপিএ’তে রয়েছে তিনটা বড় হল। দৃষ্টিনন্দন অপেরা হাউসে বসতে পারেন ২৪১৬ জন দর্শক। পূর্বদিকের মিউজিক হলের আসন সংখ্যা ২০১৭ এবং বড় থিয়েটার হলে বসতে পারেন ১০৪০ জন দর্শক। আরো কয়েকটা এক্সপেরিমেন্টাল হল আছে। ২০১৭-তে এখানকার থিয়েটারে জাপানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাট্যনির্দেশক তাদাশি সুজুকির দল ‘স্কট’-এর দ্য ট্রোজান উইমেন দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেবারে আমার সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম ও নাট্যসমালোচক অংশুমান ভৌমিক।

এনসিপিএ’র ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সচেঞ্জের সিনিয়র ম্যানেজার ঝু টিয়ানশিন আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ উল্লেখযোগ্য অংশগুলো ঘুরিয়ে দেখালেন। আমরা নিচে যখন হাঁটছি,

মাথার ওপর কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখছি সরোবরের পানি। দারুণ অনুভূতি।

অনেকগুলো ডিসপ্লে এরিয়া আছে। কোথাও শোকেসে সেটের মডেল, কোথাও জমকালো পোশাকের প্রদর্শনী। হলে ঢোকার মুখে বাজনা শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। একাধিক কাফে ও গিফট শপ তো রয়েছেই। এনসিপিএ’র ভেতর থেকেই সাবওয়ে ধরা যায়। এ-ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক স্থাপনা যে কোনো জাতির জন্য গর্ব।

ডিমের ভেতর থেকে বেরিয়ে পার্কিংয়ে এলাম। আজ আমাদের জন্যে প্যাকেট লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার খেয়ে সবার ফরবিডেন সিটিতে প্যালেস মিউজিয়াম দেখার কথা। আমি আগে দু-বার দেখেছি বলে এই ভরদুপুরে রোদের মধ্যে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তাছাড়া সেখানে হাঁটতে হয় প্রচুর। দুলালেরও হাঁটার সমস্যা, তাই আমি আর দুলাল সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে আলাদা গাড়িতে শহর দেখতে ও শপিং এরিয়ায় যাওয়ার জন্যে বেরুলাম। একটা ওয়াকিং স্ট্রিটে পর্যটকদের জন্যে চীনা পণ্য ও চায়ের প্রচুর বিপণি।

বিকেল ৫টায় আমরা দলের সঙ্গে মিলিত হলাম এক ঐতিহ্যবাহী পিকিং ডাক রেস্টুরেন্টে। এদের হাঁসের মাংস সত্যই সুস্বাদু। এবার যাওয়ার পালা একটা পুরনো থিয়েটারে অপেরা দেখতে। আমার মতো যারা ক্লান্ত বোধ করছেন, তাঁদের জন্যে লাংফাওতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই আমিও অপেরা না দেখে হোটেলে ফিরে এলাম। এ বয়সে একদিনে এতটা ধকল সহ্য করা কঠিন।

চারদিনের চীন পুনঃদর্শন শেষে ৩০শে মার্চ সকালে আমি আর দুলাল বিমান ধরতে বেইজিং রওনা হলাম। আমাদের ফ্লাইট ছিল বিকেলের দিকে। দুলাল সঙ্গে থাকাতে যাত্রা ক্লান্তিকর হয়নি। চীনা বন্ধুদের উষ্ণ আতিথেয়তার আনন্দময় স্মৃতি নিয়ে রাতেই ঢাকা ফিরে এলাম।