এই মুহূর্তে সমগ্র শিক্ষিত বাঙালি সমাজে এক স্তব্ধতা নেমে এসেছে শঙ্খ ঘোষের চলে যাবার কারণে। বাংলা ভাষার একজন প্রধান কবি চলে গেলেন বলে শুধু নয়, চলে গেলেন একজন প্রকৃত ‘ধার্মিক’ মানুষ – ধর্ম মানে যেখানে বিশুদ্ধ নৈতিকতা, বিশুদ্ধ মানবতা। কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত খণ্ডিত মানুষের পক্ষে এই রকম একজন প্রকৃত ধার্মিক মানুষ হওয়া প্রায় অসম্ভব। পাশাপাশি তাঁর ছিল সেই দিগন্তপ্রসারী উদারতা যা বিপরীতচিন্তার মানুষের সান্নিধ্যেও কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। তাঁর ছিল অন্য লোকের কথা শোনা আর বোঝার ধৈর্য আর সহমর্মিতা। তাঁর ছিল বিপুল মেধা যার বিস্তার ঘটিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক অমূল্য স্মৃতির ভাণ্ডার। তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের অন্তিম রবীন্দ্রশিক্ষক। আর জাগ্রত বিবেক নিয়ে তিনি চারপাশের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে কথা বলে গেছেন।
তাই তাঁর চলে যাবার শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। অনেকেই তাঁর গোপন দান গ্রহণ করেছে, ধন্য হয়েছে। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন আনন্দময় মানুষ – তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লেগেছে আমাদের।
আপাতত এই কথাটুকু বলে তাঁকে নিয়ে বহু বছর আগে লেখা একটা কবিতা – হয়তো একটা কবিতার খেলা – এখানে স্থাপন করছি।
শঙ্খ ঘোষ
অশীতিপর
কী আশ্চর্য –
নিরীশ্বর
মন্দিরে তাঁর
দিনযাপন
গ্রন্থপাঠ
নিভৃতক্ষণ
নিরভিমান
মগ্ন ঘোর
মধ্যরাত
নিহিত ভোর।
তিনি জাগেন
ভাষাভবন
জাগে পাশে
মনপবন
দ্রুতগতি
নাও বাওয়া
কালবেলায়
ঝোড়ো হাওয়া –
তবু কিছু
কথা থাকে
‘শুভ হোক’
পাখি ডাকে।
তিনি শোনেন –
স্থির যারা
তারা শোনে
ধ্রুবতারা
সাত ঋষি
কালপুরুষ
মেলা বসায়
কথা শুরু
কথা শেষে
কথা শুরু
ধ্রুবতারা
কালপুরুষ ॥
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.