শিরোনামহীন

এদেশের চিত্রকলা আন্দোলনে প্রথম প্রজন্মের শিল্পী কাজী আবদুল বাসেত শিল্প-ঐশ্বর্যের গুণে ও মৌলিকত্বে বিশিষ্ট এক চিত্রকর। তাঁর সৃজনধারায় বহু ভাবনার ছাপ আছে। বাস্তবধর্মী ও বিমূর্ত এই দু-ধারাতেই তিনি কাজ করেছেন। ১৯৬৩ সালে চিত্রকলায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করার জন্যে তিনি শিকাগো যান। এই সময়ে পাশ্চাত্যের শিল্পভুবনে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং আলোড়িত হওয়ার মতো নানা ঘটনা ঘটেছে। কাজী আবদুল বাসেত এই আন্দোলন থেকে সরাসরি পরিগ্রহণ করেননি। বরং পরবর্তীকালে তিনি দেশীয় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে তাঁর সৃষ্টির বৈভবকে সমৃদ্ধ করার জন্য সচেষ্ট থেকেছেন। সেই জন্যেই তাঁর বাস্তবধারার কাজ যে কত প্রাণময়, সে নতুন করে উপলব্ধি হচ্ছে।

১৯৬৫ সালে তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ষাটের দশকে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশে স্বরূপ-চেতনার যে-আন্দোলন চলছিল তা তাঁর হৃদয়-মনে গভীর প্রভাব ফেলে। ষাটের মধ্যভাগ থেকে তিনি বিমূর্ত ধারার কাজে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরবর্তীকালে আবার বাস্তবধারার কাজে মনোযোগ দেন। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে প্যাস্টেলে কিছু কাজ করেন, যা খুবই মনোগ্রাহী বলে বিবেচিত হয়েছে। যুদ্ধশেষে অপেক্ষা করে আছেন প্রিয় সন্তানের জন্য মা এবং কখনো প্রিয় স্বামীর জন্য স্ত্রী, এ হলো ছবির বিষয়। প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটি এই সিরিজের। এই রীতির ছবিই তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল। ১৯৩৫ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ঢাকায় কাজী আবদুল বাসেতের জন্ম, মৃত্যু ২০০২ সালের ২৩শে মে।

প্রচ্ছদের সেরিগ্রাফ প্রিন্ট মাধ্যমে করা চিত্রকর্মটির সংগ্রাহক আবুল খায়ের।