সাগরের উত্তাল জলরাশির ভয় জয় করে যখন নৌকা ঢেউয়ের মাথায় দুলছিল তখন যাত্রীরা চিৎকার করছিল কি না তার মনে নেই, শুধু মনে ছিল, আজকের দিনটাই বুঝি শেষদিন, এরপর এ-পৃথিবীতে তার কোনো চিহ্ন থাকবে না। নৌকা কূলে ভেড়ার পর যখন দেখলো, দিব্যি বেঁচে আছে, তখন নিজের কাছেই সব অবিশ্বাস্য লাগছিল। তারপর শরণার্থীর মতো ভাসতে ভাসতে এই চা-বাগানে।
অনেক দূর পথ। সেও কম ঝক্কির ব্যাপার নয়! এরপরও তো কত কাহিনি। কত দীর্ঘ পথচলা। ওদের বিয়ে হলো, সংসার হলো, বাচ্চাকাচ্চার মা হলো। তারপর মানুষটা জীবন থেকে হারিয়ে গেল। কত কিছু হয়ে গেল – সেই পৈতৃকভূমিতে আর ফিরতে পারল না সুখমণি। মেয়েদের জীবন এমনই মনে হয়, কেউ কেউ আর কোনোদিন পৈতৃক ভিটাতে ফিরতে পারে না। এত বছর হয়ে গেল তারপরও সুখমণির আশা যায় না। মনে হয়, তার বাবার বাড়ি থেকে কেউ না কেউ ঠিকই একদিন আসবে। আসবে তার খবর জানতে। সুখমণি কেমন আছে, কী সমাচার? সে-খবর জানার জন্য ওই দ্বীপবাসী এখনো প্রতীক্ষায় আছে। অন্তত একটা চিঠি আসতে পারে। সে-চিঠির জন্য কত কুড়ি বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে? ঠিক জানে না সে। কুড়ি কুড়ি চার কুড়ি তো হয়ে গেল। তারপরও ছোট্ট বুকটা থেকে আশা যায় না। সেই ভিটেবাড়ি যেভাবে ছেড়ে এসেছিল ঠিক সেভাবেই তার চোখের সামনে ভেসে ভেসে হারিয়ে যায়। এমনকি মানুষগুলোও একই রকম করে মিলিয়ে যায়। ওদের বয়স বাড়ে না। ওরা কেউ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে, তাও হারায় না। চোখ বন্ধ করলেই সে ওদের ছবি দেখে ঠিকঠাক মিলিয়ে নিতে পারে।
শীত পড়েছে খুব। সুখমণি শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। গর্জনগাছের মাথাগুলো দেখা যায় না তেমন। কখন যে সূর্য ওঠে তার কোনো খবর নেই। কোনো কোনো দিন হয়তো দুপুর পার করে উঠবে। আর তখন লাভও হয় না খুব একটা। রোদ দেখা গেল তো তার কিছুক্ষণ পরেই বেলা হারিয়ে গেল কোথায়। তারপর শুরু হয় অনন্তকালের রাত্রি। ফুরোতেই চায় না। আর শরীরের চামড়াগুলো এমন চটচটে হয়ে উঠল যে, সন্ধ্যার দিকেই চামড়া খসখসে চুলকানির মতো হয়। তখন একটু সমস্যাই হয়। কে যেন বলেছিল তেল মাখলে চামড়াগুলোর খসখসানি কমতো। কিন্তু তেল পাবে কোথায়? বেশি বললে অপলা চটে গিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে। অপলা তার ছেলের বউ।
দুই
নিধিরাম সর্দার। নামের কি শ্রী। রোগা, পটকা। নাক দিয়ে সিকনি ঝরে। প্যান্ট কোমর থেকে নিচে নামতেই থাকে। গায়ের রং পাতিলের তলাকেও হার মানায়। ওরই নাম নিধিরাম সর্দার। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। বাপের নাম ছিল জগাইরাম সর্দার। বাপের নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হয় নিধিরাম। একটাই ছেলে। বাচ্চা-কাচ্চা হয়ে বাঁচতো না ওর মার। শেষের দিকে কেমন করে যেন পুজো দিতে দিতে এই ছেলেটাকে পেল। তাই নিধি, তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হলো বাপের নামের সঙ্গে থাকা রাম ও সর্দারকে। হয়ে গেছে নিধিরাম সর্দার। চা-বাগানের কেউ কেউ বলে, ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার।
মা নেই। বাপ থেকেও নেই। কোথায় কোথায় থাকে খবর থাকে না। ছেলেটা মানুষের দ্বারে ঘুরে ঘুরে বড় হচ্ছে। এর-ওর গরু-ছাগল চরায়। নিজের খাবার নিজেই জোটায়। কালো হলেও চেহারায় মায়া আছে। চোখ দুটো কেমন সাদাকালো। মণিটা সাদার ওপর বেজায় কালো। মায়ায় ঢলঢল করে। সুখমণির সঙ্গে নিধির বেজায় খাতির। বিকেলের দিকে গরু চরাতে দিয়ে টিলার ওপর বসে দুজন মিলে – কী যে গল্প করে, তা ওরাই ভালো জানে। নিধিরামই বেশিরভাগ বকরবকর করে। আর বয়েসি সুখমণি নীরব শ্রোতা। সুখমণি শুধু কথা গেলে। মাঝে মাঝে দু-একটা ফোড়ন কাটে।
সুখমণির সারাদিনের সঙ্গী নিধিরাম সর্দার। কী কারণে যেন নিধিরাম সুখমণিকে পছন্দ করে। সারাদিন আঠার মতো লেগে থাকে সুখমণির পেছন পেছন। রেগে গেলেই চিৎকার দেয়, মরার বুড়ি বলে। সুখমণি তখন হাসে। একটুও বিরক্ত হয় না। নিধিরাম তখন ওর যত আজগুবি বায়না সুখমণির কাছে করতে থাকে। কিংবা ওর গল্পগুলোর শ্রোতা করে বুড়িকে শোনাতে থাকে। যেমন এখন টিলার ওপর একটা চিকন লাঠি নিয়ে সাঁই সাঁই করে ঘুরাচ্ছে। আর ফটরফটর করে কথা বলছে। আসলে ও একটা গল্প বলছে। কি যে গল্প বলছে, তা ওই জানে। সুখমণি ওর গল্প বুঝতে পারছে কি না, জানে না ও।
সবুজ টিলার ওপর গাছ নেই, তবে একসময় যে ছিল তার সাক্ষ্য হিসেবে শুকনো গোড়াগুলো দাঁতমুখ ভেংচে আছে।
একটা গুঁড়ির ওপর বসে সুখমণি ছাগলটার দিকে নিরিখ করে তাকিয়ে থাকে। প্রায় মরে যাওয়া ঘাসগুলো কীভাবে ছাগলটা উদ্ধার করছে, তাই সে দেখছে তাকিয়ে তাকিয়ে। টিলা থেকে একটা সরু পথ নেমে গেছে। সাপের মতো এঁকেবেঁকে, নিচে নেমে ধানক্ষেতের ভেতর নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে পথটা। তারপর সবুজ ধানক্ষেত। বাতাসে ঢেউ খেলে যায়। তিরতির করে পাতাগুলো কাঁপতে থাকে। আবার কখনো নুয়ে পড়তে চায়। তারপর আবার উঠে গেছে টিলা। মাঝখানে ক্ষেত আর দুপাশে দুই টিলা। কিছু ক্ষেতে ধান আসতে শুরু করেছে। অর্থাৎ ধানের ভেতর দুধ জমছে। টিপলে এখন সাদা দুধ বের হবে। এই রসটুকুই আর কদিন পরে শক্ত চালে রূপান্তরিত হবে। নিধিরাম এই দুধ বের করে প্রায়ই খায়। এই দৃশ্য দেখলে সুখমণি খ্যাক খ্যাক করে ওঠে।
‘এই হারামখোরের বেটা, নাই খাইস। চাল হবে চাল।’
নিধিরাম ঘাড় কাত করে বলে, ‘তুর কী? তুর চাল হবে ইগ্লা? মাইনষের চাল হবে। তুকে দিবে? এক ছটাকও নাই দিবে! চাইতে গেলে লাঠি দিয়ে মাইরবে।’
‘দিতে লাইগবে নাই! নাই খাইস, ভালা নাই হবে।’
‘কিল্লাই ভালা নাই? খাইলে কনে কী হবে?’
‘মুখপোড়া তোর মুখে কুড়িকুষ্টি পইড়বে।’
‘যা, ইগলা কী বইলছিস বুড়ি। কুড়িকুষ্টি কী?’
এবার বিপাকে পড়ে সুখমণি। কুড়িকুষ্টি কী? এমনিতে তো মুখে যা আসে ফটাফট বলে দেয়। এখন এই ছোড়ার প্রশ্নের জবাব কী দেবে? কী জানি, কী ভাবে সুখমণি। ভেবেচিন্তে বলে, ‘কুড়িকুষ্টি হইলো খারাপ। তোর খারাপ হবেরে মুখপোড়া।’
নিধিরাম হাসে। খিলখিল হাসিতে সে গড়িয়ে পড়ে। তারপরও দু-একটা মুখে তোলে। তখন সুখমণি আবারো চেঁচিয়ে ওঠে।
‘খাইচ্ছিস যে মুখপোড়া?’
‘খাব নাইতো কি!’
নিধিরাম সুখমণির কথা শুনে মুখে ভেংচি কেটে বলে।
সুখমণি আবারো বলে, ‘বাপ-মা তো কিছু নাই খাওয়ায়!’
‘যা বুড়ি, এইরকুম নাই বলিস! আমার তো মা নাই। বাপ তো একরকম নাই বইল্লে চলে!’
‘হ হ, জানি তো মামিগা, চুপ যা। কিচু বইললেই তো আমার তো মা নাই, বাপ নাই এইসব বলবি।’
নিধিরাম খিকখিক করে হাসে। তখন বুড়ি আবার তেড়ে ওঠে।
‘ওই দেখ না। হারামখোরের বেটা কী কইরছে?’
‘কী কইরলাম?’
‘হাইসছিস কেনে খ্যাক খ্যাক কইরে?’
‘হাইসবো।’
‘হাস, তুকে বান্দরের মতো লাইগছে।’
‘নাই হাসিস, ভালা না।’
‘তো কী কইরবে? নাইচবো?’
‘নাচ হারামখোরের বেটা, নাচ। একেবারে একটা তাণ্ডব নাচ দে।’
নিধিরাম হাসে। বুড়িও হাসে। সুখমণির মুখ দেখে মনে হবে ওর কোনো দাঁত নেই। কিন্তু হাসলেই বুড়ির মুখের সামনের সারিতে দাঁতগুলো ঝিলিক দিয়ে ওঠে। হাসার সময় চোখ দুটো বুজে যায়। ছোটখাট চাইনিজ পুতুলের মতো মুখাবয়ব বুড়ির। হাসি হাসি মুখটা সকলের কাছেই প্রিয়। কারণ সুখমণির কোনো অভিযোগ নেই।
তিন
বিষণ্ন চেহারা সুখমণির। দু-চোখ ঝপসা। সবকিছু ঠিকমতো ঠাহর হয় না। তারপরও দেখার জন্য চোখ দুটো মেলে রাখে। কোনো কিছুর দিকে সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। অনেক সময় নিয়ে দেখে। গর্জন গাছের ফাঁকে, ঢ্যাবার ওপারে ফ্যাক্টরির ডায়ারের চিমনিটাকে দেখে। চেনে, আবার কখনো চেনে না। অসুবিধাটা রাতেই বেশি। মনে হয়, অন্ধকারের পাহাড়টা তার মাথার ওপরেই বুঝি পড়ল। হাঁসফাঁস করতে থাকে ফুসফুসটা। বাতাস টানতে কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় এই বুঝি দমটা বের হয়ে যাবে। ভোরেই তার শান্তি। কিন্তু ভোরে উঠেই শুনতে হয় অপলার চিৎকার-চেঁচামেচি।
‘এই বুড়ি নাই উঠলি। কিল্লাই নাই উঠলি? বাসনগুলান কে ধুবে?’
চা-বাগানের গর্জনটিলা লাইন। প্রতিদিন এমন চিৎকারেই ঘুম ভাঙে সুখমণির। তার নামটা কে রেখেছিল? আজ আর উদ্ধার করার উপায় নাই। সুখমণি দুঃখের সঙ্গে গড়াগড়ি খায়। দুঃখটা যে এভাবে জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি সে। কয়টা থালাবাসন। এগুলো ধুতে তার কোনো কষ্ট হয় না।
বাসন-কোসনগুলো নিয়ে টিলা বেয়ে নেমে যায় ঢ্যাবায়। ধুয়ে নিয়ে আসে। ব্যস, হয়ে গেল! এরপর সুখমণিকে এক থালা চা আর মোটা একটা রুটি দেয় অপলা। সুখমণি খেতে থাকে। খুব আস্তে আস্তে খায় সে। মাঝে মধ্যে অপলা বলে, ‘তুর জামাই কোন জমিদার ছিল যে এমনি কইরে খাইস? তাড়াতাড়ি গিলতে নাই পারিস?’
অপলার কথায় কষ্ট সামলায় সুখমণি। আবার এমনও হতে পারে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন আর অতটা
দুঃখ-কষ্ট তাকে আক্রান্ত করে না। তাই সে ব্যাপারটাকে হালকা করার জন্য হাসে। ইঁদুরের মতো ছোট ছোট দাঁত বেরিয়ে পড়ে। ভাঙা চোয়াল। ভাঁজপড়া চামড়ায় অদ্ভুত টান পড়ে। মুখের ভেতর এখনো দাঁত আছে, দেখে অনুমান হয় না।
অনেকেই বলে – ‘এই বুড়ি তোর দাঁতগুলান আমাদেরকে দিয়ে দে না।’ মানুষের রঙ্গ শুনে সুখমণি হাসে। সেও হেসে বলে, ‘লে খুলে কনে লিয়ে লে!’
‘মরার বুড়ি দাঁত খুলে দিয়ে দিচ্ছে দেখ না।’
অপলার কথায় সুখমণির রাগ ধরে কি না বোঝা যায় না! আসলে তার মুখের গড়ন এমন যে রাগ বোঝার উপায় নেই।
‘আমি নাই পারি। কিল্লাই এইরকুম বইলছিস! আমার জামাই জমিদার কিল্লাই থাইকবে! আমার জামাই ঘণ্টি পিটাইত। আমার জামাইকে সকলে অটল মাঝি ডাইকতো। আমি অটল মাঝির বউ লাগি।’ এই বলে বুড়ি হাসতে থাকে। সে কি হাসি! হাসির ব্যামো পেয়েছে যেন বুড়িকে। ভাঁজপড়া গালের চামড়ায় টান পড়ে। ছোটখাট শরীরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। এত হাসির কী আছে! ভেবে পায় না অপলা। রাগ করে সে শাশুড়িকে ‘বুড়ি’ ডাকে। ডাইনিও ডাকে। কিন্তু সুখমণি রাগ করে না। কিন্তু অপলার মন যখন ভালো থাকে, তখন মা-ও ডাকে। বুড়ি তাকে অনেক সাহায্য করে।
গরুটা বেঁধে ঘাস খাওয়ায়। ছাগলটাকে চোখে চোখে রাখে। আবার ঘরদোর সাফসুতরো করে রাখে। দুপুরের চালটাও ফুটিয়ে রাখে। কোনো অভিযোগ নেই। কিছু দরকার আছে কি না তাও মুখ ফুটে বলে না। শুবনী পিসি তো ওইদিন নম্বরে বলেই দিল, ‘অপলা তুর কপালটা অনেক ভালোরে। সুখমণির মতো শাশুড়ি পেয়েছিস। লাকড়ি টুকায়, ঘুঁইট্টা দেয়, তোর ছাগল-গরু দেইখে রাখে। কে দিচ্ছে এইরকম কইরে বল? আইজকালকার দিনে কেউ দিবে নাইরে। সবকিছু তৈয়ার পাইস। তারপরেও তুর মুখে শাশুড়ির কুৎসা শুনি! বুড়া মানুষটাকে একটু ভালাবাইসতে নাই পারিস?’
‘একটা মানুষ পাইলে দেখ না, কেমন লাগে। সবকিছুর যেমন দাম বাইড়ছে। অইরকুম নাই কইরলে আমরা বাঁইাচব কেমনে?’
‘হ হ, জিনিসের দাম বাইড়ছে। আর মানুষের দাম কইমছেরে।’
‘মানুষের আবার দাম আছে নাকিন!’
‘তুদের মতো মানুষের কাছে লাই আর কি! তাই নারে অপলা?’
‘যা পিসি, এমুন কইরে দুষ কিল্লাই দিচ্ছিস? তুর মেজাজ খারাপ বটে!’
‘আমার মেজাজ ভালা আছে! তুই সুখমণির দিকে একটু খেয়াল দিস, বুড়িটাকে কষ্ট নাই দিস। এমুন মানুষ আর পাবি নাই!’
অপলা ধম্ মেরে থাকে। মাঝে মাঝে একথা সেও ভেবেছে, আসলেই সুখমণি খুব ভালো। কিন্তু সকাল-বিকাল তাকে চা দেওয়াটা খুব বিরক্তিকর। বিশেষ করে বিকেলে। অপলার মেজাজ ঠিক থাকে না। কতদিন সে বলেছে, ‘নিজে বানিয়েলে।’ তারপরও সে শোনেনি।
‘এটা কোনো কথা হইলো!’
এতসব করতে পারে বুড়ি, শুধু নিজের চা-টা বানাইতে নাই পারে, না? সারাদিন খাটুনি করে এসে বুড়ির চা বানাতে গেলে মেজাজ ঠিক থাকে না। তাই প্রতিদিন অপলা গলা চড়ায়।
শাপ-শাপান্ত করে। আবার বুড়িটাকে না বললে যদি সে বেঁকে বসে। অপলাকে না মানে। সে-কথা ভেবে অপলা বুড়িকে একটু টাইট দিয়ে রাখে। আর এটাও সে বেশ উপভোগ করে যে, সুখমণি কোনো প্রতিবাদ বা প্রত্যুত্তর করে না।
সুখমণি কিছু বলে না। অপলা গালাগাল যা-ই করুক না কেন, ঠিকই তাকে এক মগ চা বানিয়ে দেবে।
আর সে তৃপ্তির একটা হাসি চোখেমুখে ফুটিয়ে তুলে
সুরুৎ-সুরুৎ করে চা পান করবে।
আজকাল চোখে পিচুটি জমছে, ভালো লক্ষণ নয়! বলেছে অনিল বুড়া। পিচুটি নাকি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পূর্বলক্ষণ। মাগো! এমনি সে একটু আঁধার ঘনিয়ে এলে দেখতে পায় না। তার ওপর একেবারে নষ্ট হলে সে-চোখ নিয়ে কোথায় যাবে? অনিল বুড়া কী তার সঙ্গে ইয়ার্কি করলো? এক একবার তাই মনে হয়। আবার পরক্ষণেই সেই সন্দেহ মন থেকে উবে যায়, কারণ অটল বুড়ার সঙ্গে অনিলের খায়-খাতির ছিল। তাই মনে হয় তাকে ঝুট কথা বলবে নাই অনিল বুড়া।
চার
শীত এলো খুব বিশ্রী রকমের। শীতের প্রকোপে চা-বাগানের দুই বুড়ো মরে গেল। অনেক বুড়োই মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে রইল। তাদের মধ্যে সুখমণি একজন। না, সুখমণি মরল না। শুধু সুখমণির দুঃখের অন্ত রইল না। বুড়ো হাড়ে গিয়ে কাঁপন তুলল শীত। মনে হলো সারাক্ষণ আগুনের কুণ্ডলীর মধ্যে বসে থাকে। প্রতিবছরই মনে হয়, এবারই হয়তো শেষ, আর বোধহয় বাঁচবে না। কিন্তু তারপরেও নিজেকে জীবিত দেখে সুখমণি অবাক হয়। মনে মনে সে বলে, ‘আসলেই তুই ডাইনি লাগিসরে! কত মরার খপর আইসছে, খালি তোর মরার খপরটা নাই শুইনলাম। আইচ্ছা, আমাকে বল তো, তোর মরার খপরটা আমকে কে বইলবে?’
এই ধরনের চিন্তায় সুখমণি বিড়বিড় করে একাকী। আর এই সময় কখনো-সখনো সে অপলার তাড়া খায়। ঝিম মেরে বসে থাকতে দেখলেই অপলা বুঝে যায় সুখমণি বসে বসে কিছু ভাবছে।
‘এই বুড়ি কীসের মন্ত্র পইড়ছিস? ডাইনি বুড়ি …!’
বুড়ি লজ্জিত হওয়ার ভান করে। বলে, ‘চোখে বেশি দেখিসরে তুই। কই, আমি তো কিচু নাই বলি!’
‘হ, আমি তো দেইখলাম তুই মুখ লাইরছিস।’
‘হারামখোরের বেটি, বেশি বেশি দেখিস। দেখবি তো দেখ। দেখে কনে কী হয়?’
অপলার বাচ্চা হবে। আগের তুলনায় সংসারের কামকাজ ছোঁয় না বললেই হয়। সবকিছুই এখন সুখমণির ঘাড়ে। লাকড়ি কুড়ানো, উঠান ঝাড় দেওয়া, চুলা জ্বালানো, রান্না করা, থালাবাসন ধোয়া ইত্যাদি নানা কাজ। কিন্তু একটা কাজই সে করতে পারে না। নিজের চা-টা নিজে তৈরি করা। কেন যে এটা হয় সুখমণি তা বোঝে না। আসলে কাজটার পেছনে সুখমণির মনস্তত্ত্বের একটা বিষয় রয়েছে। এ-কাজটা সে মন দিয়ে করে না। কিংবা সে আশায় থাকে এ-কাজটা কেউ তাকে করে দিক। তাই সে পারলেও আর এ-কাজটা করে না।
এখন তার চা অনিয়মিত হয়ে যায়। সকালবেলা জোটে কিন্তু ওই বেলা চায়ের দেখা পায় না। পরপর দুদিন খুব কাকুতি-মিনতি করল। কিছুতেই অপলা বুড়িটাকে চা দিলো না। তৃতীয় দিনে প্রায় মারতে উদ্যত হলো। বুড়ি ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলল। তারপরেও অপলার মন গলল না। কিছুতেই সে একটু চা করে দিলো না। এদিকে শীতটাও পড়েছে বেজায়। সুযোগ পেলেই শুকনো পাতার আগুনের দিকে যেতে ইচ্ছে করে। লাইনে লাইনে ছেলেমেয়ে পাতা কুড়িয়ে আগুন জ্বালায়। এ সময় সুখমণির ওই আগুনের প্রতি খুব লোভ জাগে। একটু আগুনের স্পর্শ পাওয়ার জন্য সে কাছে ছুটে যায়। যেদিন আগুন জ্বালানো হয় না, সেদিন শরীরটা বুঝি আর টিকতে চায় না। ধরে রাখা যায় না। মনে হয়, এই বুঝি বরফ হয়ে গেল। এই বুঝি অসাড় হয়ে গেল। কিন্তু তারপরও হয় না। সুখমণি বেঁচে থাকে। প্রতিটা রাত কীভাবে যেন কেটে যায়। প্রতিটা রাতেই সে ভাবে, সকালে মনে হয় সে আর উঠে নতুন দিন দেখবে না। রাতেই মনে হয় তার মৃত্যুটা হয়ে যাবে। এই আশংকায় সুখমণির ঘুমটা ঠিক মতো হয় না। একটা ভয় ভয় কাজ করে। মনটার ভেতর কি যে চলতে থাকে তা বুঝতে পারে না। নিজেই নিজের নিশ্বাসটাকে ভয় পায়। একটা গাছের পাতা ঝরে গেলেও সে ভয় পায়। কুকুরের চিৎকার কিংবা অন্য যে কিছুই সে শুনতে পায়, যেন কেউ হেঁটে হেঁটে তার কাছেই আসছে। এমন ভাবনার মধ্যে কখন যে রাত পার হয়ে যায়, সে বুঝতে পারে না। আবার এমনও হয় যে, এমন ভাবনাগুলো এলে চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায়।
রাতে সুখমণি একটা ছেঁড়া বস্তার ভেতর ঢুকে যায়। বাইরে গর্জন গাছের পাতা থেকে টুপটুপ করে শিশির ঝরার শব্দ শোনে। কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে। ওদের চিৎকারে রাতের নীরবতা ভাঙে। মাটি থেকে একটা সরীসৃপের মতো হিমপরশ তার বুকের ভেতর ধাক্কা মারতে থাকে। কিছুতেই তার ঘুম আসে না। দু-চোখের পাতা এক করে পড়ে থাকে। ঘুম যখন আসবে, তখন আসবে। এখন জেগে জেগে স্মৃতি চর্বণ করা ছাড়া উপায় নেই। না, তাতেও ভালো লাগে না। আর কত ঘুম আসবে, একজীবনে তো আর কম ঘুমাল না। ঘুম যে কোথায় গেল, সুখমণি তার রেশও খুঁজে পায় না। আজ অপলা তাকে খেতেও ডাকেনি। প্রথম রাতে চুলার গরম থাকে বলে শীতকে তার শীত মনে হয় না। বস্তাটাও কেমন গরম গরম মনে হয়। কিন্তু রাত যত বাড়ে শীত ততটাই তাকে আঁকড়ে ধরতে চায়। মনে হয়, তার সঙ্গে শীতটা পাঞ্জা লড়ছে। চুলার পাশে কিছু ঘুঁটে আর শুকনো পাতা থাকে। অসহ্য শীতটা যেদিন মরণ কামড় দেবে সেদিন আর দেরি করবে না। সেদিন অপলাকেও আর ভয় পাবে না। সেদিন সে নিজেই আগুন জ¦ালিয়ে দেবে। ইচ্ছে করে মাঝমাঝে পুরো ঘরটাতেই আগুন লাগিয়ে দেয়। তাতে আর যাই হোক আগুন তাপানোর জন্য সুবিধা হতো। তবে শীতটাকে যখন সে পাত্তা না দিয়ে নিজের মধ্যে হারিয়ে যেতে চায়, তখন একটা ব্যাপার ঘটে। সুখমণি তার কারণটা বুঝে উঠতে পারে না।
সবাই ঘুমিয়ে গেলে কি এক অস্থিরতায় উঠে বসে সুখমণি। কে যেন তাকে ডাকছে। বলছে, এই সুখমণি আয়, চা খাবি? তবে উইঠে আয়। সত্যিই তাকে কেউ ডাকছে নাকি! এই পৃথিবীটা কত বড়, এই চা-বাগানটা ছাড়াও তো আরো অনেক চা-বাগান আছে। কোনোদিন সে অন্য কোথাও যায়নি। পাহাড়ি নদী পেরিয়ে মাইল তিনেক দূরে বাজারের মেলায় গিয়েছে, চড়ক সংক্রান্তিতে। তখন দেখেছে কত বড় বড় গাড়ি। পেটের মধ্যে মানুষ পুরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। সুখমণির ইচ্ছে করে খুব, দূরে কোথাও যেতে। অনেক অনেক মানুষ দেখতে, কিন্তু আবার একটা ভয় কাজ করে – যদি হারিয়ে যায়! তবে কেমন করে ফিরে আসবে?
তাকে কেউ চিনিয়ে দেবে প্রিয়লালের ঘরটা! হয়তো চিনিয়ে দেবে আবার নাও দিতে পারে। যদি না দেয়, তবে মৃত্যুর আগে ছেলেটার হাতের পানি পেয়ে মরতে পারবে না। এই চিন্তায় কখনো সে দূরে কোথাও যেতে পারল না। না হলে তার পিসতুতো ভাই বিহারি বলেছিল, ‘চলরে সুখমণি, আমাদের কাছ থেইকে দুই মাস ঘুইরে আসবি।’
‘বাপরে, দাদা কী বইলচে!’
‘কেনরে, কি বইললাম!’
‘তোদের ওইখানে যাইতে বলছিস।’
‘হঁ, বইললাম তো! কী হইল, গেলে কী হয়?’
‘হঁ, যাইতে তো মন চায়, যদি আর ফিরতে নাই পারি!’
‘ক্যানে ফিরতে লাই পারবি কিল্লাই!’
‘এত দূরে মানুষ ক্যামনে যায় দাদা, তুই-ই বল?’
‘এইটা এমুন কী দূররে! মানুষ তো প্লেনে চাইপে আরো আরো অনেক দূরে যাইচ্ছে গই।’
‘নারে দাদা, উয়াদের ছাইরে কোথাও যাবো লাই, বাপরে!’
এই ভেবে মনে শংকিত হয়ে পড়েছিল সুখমণি। কতদূর সে চা-বাগানটা। পেটমোটা গাড়িতে চড়তে হয়। নেমে আবার পায়ে হেঁটে যেতে হয়। তারপর সে চা-বাগান। যদি হারিয়ে যায়! না, সে যায়নি! তার এখান থেকে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। বাপের বাড়ির খবর তো আর আসে না। যদি এসে কেউ তাকে না পায়। যদি হতাশ হয়ে কেউ ফিরে যায়। কিংবা কোনো চিঠি আসে তার অনুপস্থিতিতে, কেউ সেই চিঠি ছিঁড়ে ফেলে। পরে আফসোস করে মরতে হবে। এত বছর অপেক্ষায় রইল, আর কটা দিন কোথাও না গেলে কী আর এমন হবে!
সুখমণি কিছুতেই শুয়ে থাকতে পারল না, উঠে এলো। বাইরে এত আলো! কোত্থেকে এলো এত আলো? রাতে তো সে চোখে দেখে না। সুখমণি রাস্তা ধরে এগিয়ে গেল। হ্যাঁ, ডাক তো ওদিক থেকেই এসেছে। ওই তো একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে, নাকি চোখের ভুল! কিন্তু এখানে তো কোনো বাড়ি ছিল না। পরিপাটি বাড়িটা রাতারাতি এলো কোত্থেকে! ছিমছাম এমন বাড়ি তো এ চা-বাগানে আর কখনো দেখেনি! আলো ঠিকরে আসছে। সুখমণি দেখতে পাচ্ছে। আসলেই কি সে দেখতে পাচ্ছে? সংশয় আর চিন্তায় তার অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। পরক্ষণেই নিজের ওপর রেগে ওঠে। না, অতসব ভেবে কাজ নেই। এগিয়ে গেল সে। ধীর পায়ে এগোচ্ছে। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছতে এত সময় লাগছে কেন? মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে। কেন, স্বপ্ন কেন হবে! স্বপ্ন তো এমন বাস্তব হতে পারে না। এই তো সে চলে এসেছে। আর অল্প। বুড়ো পা জোড়ায় শীতের কুয়াশা লেগে ভিজে উঠেছে। দু-পায়ে কোনো সাড়া নেই। ঠান্ডায় জমে গেছে। মাথায় শনের মতো চুলে কুয়াশার রিং মাকড়সার জাল বুনেছে। নিজেকে দেখতে পেলে সুখমণি হয়তো অবাক হতো। সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাঁটছে।
অবশেষে সুখমণি দরজায় এসে দাঁড়াল। আর কি অদ্ভুত! দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল বলে মনে হলো। হাজার বছরের পুরনো দরজার পাল্লাটা কি ভারি! আর কালো কুচকুচে দেহ তার। গায়ে কারুকাজ। ঘরের ভেতর ঠান্ডা। মনে হচ্ছে অদ্ভুত ঠান্ডা। গৃহকর্ত্রী মৃদু হেসে সুখমণিকে সম্ভাষণ জানাল।
‘কই এসো, এসো গো।’
সুখমণিও তার সম্ভাষণে মাথা নাড়ল। মিষ্টি করে হাসতে গিয়ে তার সুদৃশ্য দাঁতের সারি আর গোলাপি মাঢ়ি বিকশিত হলো। তাতে গৃহকর্ত্রী খুশি হলো, না বিরক্ত হলো – বোঝা গেল না। মনে হলো, তিনি সুখমণির জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। অনেকদিন থেকে তার এই প্রতীক্ষা। আজকে তার প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। সুখমণি শিশিরভেজা পা জোড়া নিয়ে কিছুতেই ভেতরে যেতে চাইছিল না। কিন্তু মহিলা তাকে জড়িয়ে ধরে খুব যত্ন করে একটা মোড়ায় বসিয়ে দিলো। ঘরময় ধূপের গন্ধ। নাক টানলেই কেমন জানি লাগে। শরীর হালকা পালকের মতো হয়ে আসে। মনে হচ্ছে সুগন্ধে ঠাসা ঘর। গৃহকর্ত্রী বলল, ‘চা খাবে, চা বুড়ি?’
সুখমণি লজ্জায় কিছু বলতে পারল না। শুধু ঠোঁটের কোণে একটা মিটিমিটি হাসি ঝুলিয়ে রাখল।
নিঃশব্দে ভেতরের ঘর থেকে গৃহকর্ত্রী ধোঁয়া ওঠা একটা মগ নিয়ে এলো। সুখমণির হাতে ধরিয়ে বলল, ‘চা-বুড়ি, চা খাও।’
সুখমণি ছানিপড়া চোখ দুটো দিয়ে ঠাহর করে তাকিয়ে রইল। মহিলাটিকে চিনতে চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনে করতে পারছে না। মহিলাটাকে তার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এর আগে কোথায় যেন সে দেখেছে তাকে। কি পরিপাটি মহিলা। শুভ্র কাপড় লাল চওড়া পাড়। পাতলা একজোড়া চটি পায়ে। চোখ জোড়া কাজল কালো। হাতে চিকন দুটো চুড়ি। মহিলাকে ছাড়িয়ে এবার সুখমণি ঘরটার চারদিকে চোখ বুলাল। কী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কোথাও কোনো নোংরা নেই। এমন করে সাজিয়ে রেখেছে গৃহকর্ত্রী। আচ্ছা, ওদের মনে হয় কোনো বাচ্চা নেই। না হয় ঘর এলোমেলো থাকত। অগোছালো থাকত। আর বাচ্চাকাচ্চা থাকলেও তো এত সময় তাদের চিৎকার কিংবা কথাবার্তা তার কানে আসতো।
সুখমণি গরম চায়ের কাপে ঠোঁট রাখল। একটা চুমুক। আরেকটা চুমুক। আহ! কী সুখ! চা-চা-চা। না, অপলার ওপর সে রাগ করেনি। করবেও না। ওর জন্যই সে এই অদ্ভুত চায়ের সন্ধান পেল বুঝি! চা না পেলে তার কণ্ঠনালি একেবারে শুকিয়ে যায়। ভেতরটা ছটফট করে। মাথাটা উষ্ণ হয়ে ওঠে। মেজাজটা একটু চড়তে থাকে। চা পান করতে গিয়ে সুখমণির কোনো শব্দ হয় না। নীরবে শুধু মগের চা কোনো এক মন্ত্রবলে ঠোঁট গলে কণ্ঠনালী পার হয়। সুখমণি আর ফিরে যাবে না। রয়ে যাবে এই সুন্দর বাড়িতে। এসব ভাবতে তার ভালো লাগে।
‘চা-বুড়ি, কী অত চিন্তা করছো? চিন্তা করো না। তোমাকে চা দেব।’
সুখমণি লজ্জা পেল। তাই সে ‘না না’ বলে হেসে উঠল।
তখন বাড়ির গৃহকর্ত্রী তাকে আবার প্রশ্ন করল, ‘সুখমণি তোমার বাপের বাড়ি কোথায় গো?’
সুখমণি চোখমুখ উল্টে সাগরের বর্ণনা দিতে লাগল। হাঁটাপথের বর্ণনা দিতে লাগল। গাড়ির বর্ণনা দিতে লাগল। তাদের বাড়ির চারপাশের বর্ণনা দিতে লাগল। মানুষের বর্ণনা দিতে লাগল। আর এতদিন পর যে তার বাপের বাড়ি থেকে একটা চিঠি কিংবা একটা মানুষ আসবে – সে-কথাও জানাতে ভুল করলো না। সে-খবরটির জন্য সুখমণি অপেক্ষায় আছে। না হয় সে কবে তার পিসতুতো দাদার বাড়ি চলে যেত। যায়নি শুধু খবরটির জন্য। একটা লোক সেই দ্বীপ থেকে আসবে। বাপের বাড়ির একটা চেনা মানুষের পথ চেয়ে সুখমণির জীবন কেটে গেল।
সুখমণি কী বলতে চাইল, বলতে পারল না। আসলে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। একটা ঘোরের ভেতর সে অচেতন হয়ে রইল। সুখমণি এসময় কোনো কথা বলতে চায় না। যদি কথা বললে তার ঘোর কেটে যায়! সুখমণি অপূর্ব চায়ের স্বাদ নিতে থাকে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.