সুবোধ পটনায়ক : ওড়িয়া থিয়েটারের জনপ্রিয় মুখ

আশিস গোস্বামী

সুবোধের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় খুব আকস্মিকভাবে। বহরমপুরে রাতের খাবার টেবিলে। খুব সামান্য সৌজন্যমূলক কিছু কথা। তারপর যে যার মতো ফিরে এসেছি। কিন্তু আলাপটা থেকে গেল, শুধু থেকে গেল বলাটা ঠিক হবে না, জমেও উঠল। ওই আলাপের আগে ওর তিন-চারটি প্রযোজনা নান্দীকারের সৌজন্যে দেখেছি। তখনই দেখতাম কলকাতায় সুবোধ বেশ জনপ্রিয়। নান্দীকারের উৎসবে অন্য অনেক থিয়েটারে হলভর্তি না হলেও অ্যাকাডেমি ভরে যেত ওর নাট্যচেতনা দলের অভিনয়ের দিন। আমিও সারা উৎসবে আর কোনো প্রযোজনা না দেখলেও সুবোধের কাজ দেখতে যেতাম। এখন তো সারা ভারতেই মঞ্চনাটক খুব ভালো কিছু হচ্ছে না, তাই দেখার আগ্রহটাও ক্রমশ মরে যাচ্ছে। সুবোধ একটা অন্য বাতাস এনে দেয়। আমারই সংগঠন আনন্দসভার সেমিনারে সোহিনী সেনগুপ্ত বেশ মজার একটি তথ্য দিলেন। নান্দীকার নাট্যোৎসবে অনেকবার পরিকল্পনা করে এন. এস. ডি. রেপার্টরির পরে সুবোধের অভিনয় দিন ঠিক করা হতো। কারণ রেপার্টরির প্রচুর মানুষ, প্রচুর জিনিসপত্র, আলো – সেসব সামলাতে নাজেহাল হয়ে যেতে হয় নান্দীকারকে, সকলেই ক্লামত্ম। তখন সুবোধ এতই নিঃশব্দে দলবলসহ অভিনয়ের প্রস্ত্ততি নিত যে অন্যরা একদিনের বিশ্রাম পেয়ে যায়। থিয়েটারের নিরাভরণ Flexibility তার কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সহজে থিয়েটারকে পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কাছে, এটাই তার সবচেয়ে বড় অন্বেষণ, গত ষাট-পঁয়ষট্টি বছর ধরে মঞ্চের প্রায় একই কাঠামো বজায় রেখে অভিনয়, সেই আলো-মিউজিক-লার্জার দ্যান লাইফ পরিকাঠামো বাসত্মববাদী অভিনয় (যার বেশিরভাগ ব্যর্থ অভিনয়) দেখে-দেখে ক্লামত্ম আমরা একটু বসমত্ম বাতাস পাই যেন সুবোধ পটনায়কের প্রযোজনায়। নিরাভরণ সাজটাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।

সুবোধ প্রথমে ভেবেছিল পথনাটক করবে। তারপর ভেবেছিল বাদল সরকারের মতো নাটক করবে। তারপর ভাবল নিজের আইডেনটিটি তৈরি করতে হবে। তার কাজ দেখে কেউ যেন না বলেন, ওর কাজ সফদর হাসমীর মতো বা বাদল সরকারের মতো। অথচ দুজনকেই গুরম্নর আসনে বসিয়েছে সুবোধ কিন্তু গুরম্নর মতো হয়ে উঠতে চায়নি কোনোদিন। আর এই  না-চাওয়াতেই অন্য এক থিয়েটারের জন্ম দিতে পেরেছে সুবোধ। এখন ওড়িয়া থিয়েটারের প্রধান মুখ সুবোধ পটনায়ক। যদিও জানি ওড়িয়া থিয়েটারের অনেক বড়ো, অনেক পুরনো এক ঐতিহ্য আছে। বহু গুণী থিয়েটার পরিচালক-অভিনেতা আছেন, বহু থিয়েটার দল আছে, যারা নিয়মিত অভিনয় করেন। এই প্রেক্ষাপট জেনেছি মাত্র, দেখা হয়নি। তাই তুলনামূলক আলোচনা করা উচিত হবে না। আমরা আরো জেনেছি যে, বর্তমান থিয়েটারে একদল আছে চিরাচরিত মঞ্চ অনুরাগী আর একদলের বেশিরভাগই সুবোধ-অনুসারী। তাই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজের আইডেনটিটি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রমী হিসেবে আছেন কয়েকজন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার প্রাক্তনী – যারা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কিছু কাজ করেছেন এবং করছেন।

সুবোধ পটনায়ক ১৯৮৬ থেকে সিরিয়াস নাট্যচর্চায় জড়িত। তার আগে বিজয় মহামিত্ম, অজিত দাস, অসীম বসু, মনোজ পটনায়ক – এদের সঙ্গে কাজ করেছে কিন্তু থিয়েটারে নিজস্ব আইডেনটিটির অনুসন্ধান ওই ১৯৮৬-তে। নিজের দল নাট্যচেতনার জন্ম। জন্মলাভ এই বিশ্বাস নিয়ে Live together, plan together and work together। সঙ্গী কিছু স্বপ্নদেখা থিয়েটারপ্রেমী। কাজের জায়গা কোনো খোলা মাঠ, ভাড়াটে ঘর, ঠাসাঠাসি করে থাকা। সুবোধ তখন পথ খুঁজছে। কোন পথে যাবে থিয়েটার গড়তে। ছুটে গিয়েছিল প্রথমেই সফদর হাসমীর কাছে। থিয়েটার দর্শনের মতামত্মরে ফিরিয়ে দিলেন সুবোধকে।

তুমি কি রাজনৈতিক থিয়েটারে বিশ্বাস করো?

নাহ! আমি থিয়েটার করতে চাই।

তুমি কি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য?

নাহ!

তাহলে কী করে আমার সঙ্গে কাজ করবে?

আমার কাছে থিয়েটার একটি পথ আর রাজনীতি আর একটি পথ।

যেদিন রাজনৈতিক থিয়েটারে বিশ্বাস করবে সেদিন আমার কাছে এসো। আমার কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। পছন্দমতো কিনে নিয়ে যাও।

সুবোধ ফিরে এসেছিল। কয়েক বছর পর বুঝেছিল উত্তরে কোথায় ভুল ছিল। তার বলা উচিত ছিল, পার্টি রাজনীতিতে বিশ্বাস নেই কিন্তু থিয়েটার রাজনীতিতে সে বিশ্বাস করে। সুবোধ সে-কথা বলার সুযোগ আর পায়নি কারণ সফদর হাসমী নিহত হলেন।

এবার কী করবে সুবোধ? কার কাছে যাবে? নিজের বিশ্বাস যাই থাক, একজনের কাছে দীক্ষা নেওয়াটা জরম্নরি। সে আয়নার মতো তার ভাবনা-চিমত্মাকে একবার পরখ করে নেবে। তাই সিদ্ধামত্ম নিল বাদল সরকারের কাছে যাবে, যাঁর নাটক সে পড়েছে, যাঁকে সে তৃতীয় থিয়েটারের প্রবক্তা বলে জানে, তাঁর কাছে যাবে। কিন্তু এত উঁচু একজন মানুষের কাছে যাওয়ার প্রস্ত্ততি চাই। ততদিনে নাট্যগ্রাম তৈরির কাজও শুরম্ন হয়েছে। ১৯৯০-এ খুর্দা রোডের কাছে একেবারে পাথুরে ২ হেক্টর জমি কিনে কাজ শুরম্ন হয়েছে। আরো বছরখানেক আগে থেকেই বাদল সরকারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধামত্ম হয়। একটু-একটু করে অর্থ সঞ্চয় করতে হচ্ছে আলাদা করে। বাদলবাবুর ফ্লাইট ভাড়া জমিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর কাছে এবং সত্যিই একদিন সাড়ে তিন হাজার টাকার থলেটা নিয়ে সুবোধ চলে গেল তাঁর বাড়ি। বাড়িটা দেখে অবাক হলো সুবোধ। পুরনো, অনেকদিন না-সারানো একটি দোতলা বাড়ি। লুঙ্গি আর গেঞ্জি গায়ে একমুখ সাদা দাড়িওয়ালা একজন মানুষ। এতবড় একজন মানুষ অথচ এত এলেবেলে চলন। বাক্-রহিত সুবোধ কোনোমতে বলল,

আমি ভুবনেশ্বর থেকে এসেছি। গ্রামে-গ্রামে নাটক করি। আপনি একবার চলুন আমাদের ওখানে। সাড়ে তিন হাজার টাকা এনেছি আপনার ফ্লাইট ভাড়া। ওটাই আছে আমাদের।

বাদল সরকার হেসে উঠলেন। বললেন, কে বলেছে আমি ফ্লাইট ছাড়া যাই না? আমি ট্রেনে করেই যাব।

ব্যস। সুবোধ আনন্দে আত্মহারা। ১৯৯১-এ বাদল সরকার গেলেন, ওয়ার্কশপ করালেন। তারপর আবার গেলেন, নিজের দল শতাব্দী নিয়ে গেলেন। সুবোধ দেখালেন নিজের প্রযোজনা কাঠ (অ)। বেশ ভয়ে-ভয়ে ছিল সুবোধ। কারণ কাঠ (অ) কোনোভাবেই বাদল সরকারের মতো ডিজাইন নয়। সুবোধ নিজের মতো করে তৈরি করেছে; কিন্তু বাদলবাবুর ভালো লাগল। জনে-জনে বলে বেড়াতে লাগলেন। নাটক দেখে এতই খুশি যে, বাদলবাবু সেটের ওপরে উঠে বসে গল্প জুড়ে দিলেন অভিনেতাদের সঙ্গে। সুবোধের এটা পরমপ্রাপ্তি, যা সাহসী করল তাকে।

সুবোধ তার থিয়েটারকে দুরকম ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। সাইকো থিয়েটার (Cyco Theatre) এবং ইনটিমেট থিয়েটার (Intimate Theater)। দুটোই ইনটিমেট কিন্তু উভয়ের গঠন প্রক্রিয়া আলাদা, অভিনয়ের সময় আলাদা, দর্শক আলাদা। প্রথমদিকে পথনাটকের চর্চা করলেও মন ভরেনি সুবোধের। দর্শকদের সঙ্গে যে-ঘনিষ্ঠতা যে-প্রতিক্রিয়া তার কাঙিক্ষত তা পাচ্ছিল না সে। পথনাটকের দর্শক তো পথচলতি মানুষ। তাঁরা নিজের কাজে নিজের ভাবনায় পথ চলতে-চলতে থমকে দাঁড়ান অভিনয়ের সামনে। অনেকে পুরো নাটকটি দেখেন, অনেকে দেখেন না। পুরো নাটক দেখার পরই ছুট লাগান নিজের কাজে। কোনো ভাবনার আদান-প্রদান হয় না বললেই চলে। সুবোধ বেশিদিন থাকতে পারেনি পথনাটকের অনুষঙ্গে। সুবোধ তথা নাট্যচেতনার সকলেই বিশ্বাস করে, নাটকের শেষে হাততালি পাওয়া মানে ব্যর্থ প্রযোজনা। তারা দর্শককে সচেতন করতে চায়, ভাবাতে চায়, ক্রুদ্ধ করতে চায়, সক্রিয় করতে চায়। তাই সুবোধের আবিষ্কার সাইকো থিয়েটার। এর প্রক্রিয়াটি কেমন?

ক. যেসব গ্রামাঞ্চলে অভিনয় হবে সেখানকার সমমনস্ক মানুষ বা সংস্থার অনুসন্ধান। কারণ অভিনয়ের পর দর্শক প্রতিক্রিয়া এবং নাটকের বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক চর্চা করবেন তাঁরা। তার আগে থিয়েটার গড়ার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবেন সেই মানুষজন বা সংগঠন।

খ. নাট্যকর্মীরা গ্রামের মানুষের কাছে যাবে। মেলামেশা করবে, তাদের শিল্প -সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবে।

গ. এরপর নাটকের পা-ুলিপি তৈরি হবে। সেই পা-ুলিপি নিয়ে সমমনস্ক মানুষ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা-পরিমার্জনা চলবে। কারণ তাঁরাই পা-ুলিপির বিষয় আহরণের মূল চালিকাশক্তি। সেইসঙ্গে অভিনয়ের পর তাঁরাই ধারাবাহিক কাজ করবেন। তাই সর্বাধিক প্রয়োজনীয় এই মানুষগুলির মতামত।

ঘ. নাটকের মহড়া শুরম্ন হবে। সংলাপ-আঙ্গিক-আবহ-পোশাকে ট্র্যাডিশনকে গুরম্নত্ব দিয়ে কাজটা করতে হবে। এভাবেই প্রযোজনাটি তৈরি করা হয়।

ঙ. এরপর সাইকেলে চড়ে অভিনয় করতে যাওয়া হয় এ-গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। সর্বাধিক সাতশো কিলোমিটার এভাবে টানা সাইকেলে করে গিয়ে ৩৭ জায়গায় অভিনয় হয়েছে।

চ. যে-কোনো গ্রামেই যাওয়া হয় আগাম না জানিয়ে। সেখানে পৌঁছে ঢোল বাজিয়ে সারা গ্রাম প্রচার করা হয়। আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ছ. ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের নাটক দিনের আলোয় অভিনয় হয়।

জ. দর্শক-প্রতিক্রিয়া লক্ষ রাখা এবং তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বারবার সংশোধন প্রক্রিয়া চলে।

ঝ. বড় কাপড় বা গামছা বিছিয়ে দেওয়া হয় সাধ্যমতো অর্থ সহায়তার জন্যে।

ঞ. তারপর পুরো প্রক্রিয়াটির পর্যালোচনা চলে এবং আর এক প্রস্ত্ততির দিকে এগোন হয়।

১৯৯৩ পর্যমত্ম এই ধরনের প্রযোজনার সংখ্যা ৪১টি। কোনো একটি নাটকের সর্বোচ্চ অভিনয় ২০০টি আর সর্বনিমণ ৫টি। সর্বমোট অভিনয় এক হাজার ৪৫৪টি। সুবোধ তার থিয়েটারে সাইকেলকে অপরিহার্য করে নিল। সাইকেল থেকেই কি সাইকো কথাটি পেয়ে গেল সুবোধ, জানি না, হতেই পারে। অর্থগত ভিন্নতা থাকলেও এটা তো ঠিক যে, সাইকো থিয়েটারে সাইকেলটা অপরিহার্য। কেন এমন একটা বাহন বেছে নিল সুবোধ? গ্রামীণ জীবনে সাইকেল, চলার সবচেয়ে ব্যবহৃত মাধ্যম। সাইকেলের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক আছে মানুষের। গাড়ি করে গ্রামে ঢুকলেই মানুষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। ইনটিমেট হওয়া যায় না। সুবোধের সেটা কাম্যও নয়। যেমন প্রচারের সময় ঢোল ছাড়া অন্য কোনো বাজনা ব্যবহার করা হয় না। এসবই সাইকো থিয়েটারের সচেতন প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। কিছুতেই গ্রামের সাধারণ মানুষের থেকে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। তাহলে যে-থিয়েটার সে করতে চায়, তা ফলপ্রসূ হবে না। সুবোধ নিজের আইডেনটিটি এভাবেই গড়ে তুলেছে। দেশে-বিদেশে সমাদৃত এ-প্রয়াস। এই সাইকো থিয়েটারের কথা সে বলেছে ইতালি, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, নেপালের মতো দেশে।

সাইকো থিয়েটার যদি চলমান হয়, ইনটিমেট থিয়েটার সুনির্দিষ্ট স্থানে অভিনয় হয়। সাইকো থিয়েটার যদি দিনের আলোয় অভিনয় হয়, ইনটিমেট থিয়েটার অভিনয় হয় সন্ধ্যায় বা রাতে। সাইকো থিয়েটারের দর্শক যদি হন গ্রামের মানুষ, ইনটিমেট থিয়েটারের দর্শক শহর বা সদর মফস্সলের। সাইকো থিয়েটারের আঙ্গিক যত নিরাভরণ, ইনটিমেট থিয়েটারে সেট-পোশাক-আলো ব্যবহার হয়। এসবই সুবোধ-কথিত থিয়েটার লক্ষণ। এভাবেই সে থিয়েটারের    জন্য ঘুরে বেড়ায় আর এক থিয়েটার নিয়ে সে থিতু হয়ে বসে। দর্শকের জন্য অপেক্ষা করে। দর্শক তার অন্যসব কাজ শেষ করে শুধু থিয়েটার দেখতেই আসেন। অভিনয় চলাকালীন বা অভিনয়ের পর বাতচিত করে সকলে মিলে। সেই কারণে যে-কোনো থিয়েটার হল তার কাছে ইনটিমেট থিয়েটার স্পেস মাত্র। প্রচলিত মঞ্চনাটকের ধারণায় সে এই থিয়েটার তৈরি করে না। এই থিয়েটারেরও সুনির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষণকে মেনে চলে।

ক. প্রযোজনায় মঞ্চোপকরণ হিসেবে বাঁশ দিয়ে সেট তৈরি করে। বাঁশ আর দড়ি – এই সহজলভ্য উপকরণই তার মঞ্চসজ্জার অবলম্বন। চারদিক খোলা, প্রবেশ-প্রস্থান যে-কোনোভাবে হতে পারে। পুরো সেটের পিছনে একটি কালো কাপড় ঝোলানো থাকে। তার পিছনেই সমসত্ম অভিনেতা থাকেন। দুদিক থেকে অভিনয়ের আসরে ঢোকেন এবং বেরিয়ে যান। এই আপাত-নিরীহ অভিনয় প্রক্রিয়াই সুবোধের কাজের বৈশিষ্ট্য।

খ. আলো ব্যবহার করলেও আলোর আলাদা কোনো এফেক্ট তৈরি করে না। দর্শক যাতে ভালোভাবে অভিনয় দেখতে পান, আলো শুধুমাত্র সেই কারণেই ব্যবহার হয়। এমনকি অভিনয় চলাকালীন আলো কখনো নেভানো হয় না।

গ. আবহ হিসেবে হারমোনিয়াম, ঢোল জাতীয় দেশজ ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার হয়।

ঘ. পোশাক হিসেবে উড়িষ্যার ট্র্যাডিশনাল পোশাক ব্যবহার হয়। শাড়ি, গামছা, ফতুয়া – সবই নিজ রাজ্যের গ্রামীণ পরম্পরা অনুসারী হয়।

১৯৯০ থেকে ২০১৫-এর মধ্যে এ-ধরনের প্রযোজনার সংখ্যা ২৪টি। এর মধ্যে কয়েকটি প্রযোজনা খুবই খ্যাতি এনে দিয়েছে সুবোধের। তার ভারতজোড়া খ্যাতির পেছনে রয়েছে এসব প্রযোজনার সাফল্য। যেমন, কাঠ (অ), ১৯৯২; ভূত (অ), ২০০৩, ধুয়া, ২০০৫, ফুল (অ), ২০১০, চিড়িং চিড়িং, ২০১২, শোশ (অ), ২০১১ ইত্যাদি।

১৯৯০-এ দুই হেক্টর পাথুরে রুক্ষ জমি কিনেছিল নাট্যচেতনা একটি নাট্যগ্রাম তৈরির স্বপ্ন নিয়ে। ১৯৯১-এ কাজ শুরম্ন ও পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের চেষ্টা চলে। এই কাজের পেছনে যে-ভাবনা ছিল সে-প্রসঙ্গে নাট্যচেতনা জানিয়েছিল, The thought of living, planning and working together was the core objective of Natyachetana to imbibe a spirit of togetherness amongst the inmates and to lead a vibrant community life as a model for others. Accordingly a master plan was deviced to democrate the new site into different portions to fulfill the objectives and accommodate theatre related activities. এই ভাবনা থেকে নাট্যগ্রামকে তাঁরা যেভাবে গড়তে চেয়েছে তা সত্যিকার অর্থেই থিয়েটারের অন্য এক স্বপ্নপূরণ। যেমন সেখানে থাকবে –

A residential training complex

A documentation unit

A stage for theatre reperotory

A market of theatre related materials and publication

A publication house

A complex to stay together by Natyachetana full timers with families.

A co-ordination unit of the village.

আর এগুলোর মধ্য দিয়েই All these when in place shall be a platform for renaissance of theatre and progressive life-style. ২০১৫ পর্যমত্ম একটু-একটু করে সুবোধ গড়ে
তুলেছে একটি মহড়া বা workshop space – যাকে চলতি কথায় বলা হয় গোলঘর। অর্ধবৃত্তাকার এই গোলঘরই নাট্যগ্রামের মূল আকর্ষণ। এ ছাড়াও থাকার জায়গা, মিউজিয়াম, ৩০র্ x ৪০র্ অভিনয়মঞ্চ ইত্যাদি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একটি দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে।

এই নাট্যগ্রামে প্রতিবছর ১ ফেব্রম্নয়ারি (সুবোধের জন্মদিন) থেকে ৫ ফেব্রম্নয়ারি পর্যমত্ম একটি নাট্যমেলার আয়োজন হয়। দেশ-বিদেশের বহু অতিথির সমন্বয়ে প্রতিবছরই অসাধারণ এক অন্য থিয়েটার মেলা হয়ে ওঠে। যে-কোনো থিয়েটারকর্মীর জন্যে অবারিত দ্বার। সব মিলিয়ে সুবোধ পটনায়ক অন্যধারার থিয়েটারের অন্যতম নাম। ওড়িয়া থিয়েটারের অন্যতম মুখ।