রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমার সমবয়সী। এর কোলঘেঁষে পৈতৃক বসতভিটে, কাজলা তার নাম। দু-চোখ ভরে দেখেছি ও ভালোবেসেছি তরতর করে বেড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি। স্বাধীনতার পর উপাচার্য শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক খান সারওয়ার মুরশিদ কয়েকজন গুণী শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন। কবি আতাউর রহমান, হাসান আজিজুল হক ও আবুবকর সিদ্দিক তাঁদের অন্যতম। কবি আতাউর রহমান ইহকালে নেই। সিদ্দিক স্যার শয্যাশায়ী। কদিন আগে চিরবিদায় নিলেন যশস্বী শিক্ষক, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, রাজশাহীর গৌরব হাসান আজিজুল হক।
রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন এবং রাজশাহী সিটি কলেজে শিক্ষকতাকালে (১৯৫৮-৬১) হাসান আজিজুল হক শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজ প্রতিভার দীপ্তি ছড়ান। আড্ডা-আসর জমিয়ে রাখেন। রেডিও এবং মঞ্চে নাটক করেন। ছোট ভাড়াবাসার এক কক্ষে ‘ভর দুপুরে বুকের তলায় বালিশ দিয়ে গল্প লিখেন – শকুন।’ সে-গল্প আড্ডার সাথি শিল্পী, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, চাকরিজীবী বন্ধুদের বাসায় ডেকে পড়ে শোনান। এ-প্রসঙ্গে তাঁর স্মৃতিচারণ, ‘ওদের আমি ডেকেছিলাম ‘শকুন’ গল্প পড়ে শোনাব বলে। তখন সেই অর্থে গদ্য কিছুই লিখিনি। সূর্য ভাই ছিল, সবাই ছিল। তো গল্পটা শোনার পরে আজিজুল হক বললেন ‘লা জবাব’। আর অন্যরা বললো – ভালো হয়েছে। সূর্য ভাই গল্পের খুব প্রশংসা করেছিলেন।’ (হাসান আজিজুল হক, ‘ওবায়েদ স্মৃতিকথা’, মুক্তিযোদ্ধা ও লড়াকু কবি ওবায়দুর রাহমান স্মারকগ্রন্থ, প্রথম প্রকাশ মার্চ ২০১৪, রাঢ়বঙ্গ প্রকাশনী, রাজশাহী, পৃ ২৮৩) উল্লিখিত সময়ে আমি হাসান আজিজুল হকের রাজশাহী অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে অবগত নই। তাঁর গুণগান শুনেছি মুস্তাফিজুর রহমান গামার (কবি, গীতিকার, মুক্তিযোদ্ধা, রাজশাহী বেতারের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক)কাছে। আমি তাঁকে জানি ১৯৭৩ থেকে, যখন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষে আমি বাংলা স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-তিনজন শিক্ষক তখন সাইকেল চালাতেন এবং কয়েকজনের গাড়ি ছিল। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কিংবা রিকশা ব্যবহার করতেন। কাজলা মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতাম আর দেখতাম হাসান স্যার সাইকেল ঠেলে শহর থেকে বাজার করে ফিরছেন। আমরা কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে সাইকেল নিয়ে কোথাও যেতে সংকোচ করতাম। তখন অহংকারহীন মানুষটির প্রতি অধিক শ্রদ্ধা জাগতো। কখনো চলতি পথে দেখলে হাত তুলে সালাম দিতাম, স্যার চলন্ত অবস্থায় একগাল হেসে মাথা নাড়তেন।
হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরের বছরই কবি আবুবকর সিদ্দিক বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। নাজিম মাহমুদ আগে থেকেই গণসংযোগ অফিসার, পরবর্তীকালে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনজনেরই বসবাস ছিল খুলনায়। একসঙ্গে কাজ করতেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সন্দীপন’-এ। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন প্রগতিশীল শিক্ষক-সাহিত্যিক বাংলার গোলাম মুরশিদ ও জুলফিকার মতিন, ইংরেজির আলী আনোয়ার, অর্থনীতির সনৎকুমার সাহা, রসায়নের শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। তাঁদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল হয় ভরপুর। এই কৃতী শিক্ষকদের আকর্ষণ ও উৎসাহে সম্পৃক্ত হয় বিভিন্ন বিভাগের একগুচ্ছ শিক্ষার্থী – স্বাধীন বাংলাদেশে যারা নবীন কবি-সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। হাসান আজিজুল হক হয়ে ওঠেন এই শিক্ষক-ছাত্রদলের মধ্যমণি।
হাসান আজিজুল হক প্রধানত ছোটগল্পকার, তারপর ঔপন্যাসিক। সর্বোপরি তিনি নিষ্ঠাবান পাঠক ও শিক্ষক। কথাসাহিত্যের পাশাপাশি প্রবন্ধ, নাটক, শিশুসাহিত্য, স্মৃতিকথা ও অনুবাদকর্মে হয়েছেন নিবিষ্ট। তিনি সর্বদা আড্ডাপ্রিয়, কিন্তু কখনোই সাহিত্যবিচ্ছিন্ন নন। বামপন্থী চেতনাপুষ্ট, তবে কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করেননি। তাঁর বিবেক ও কলমই হয়েছে সত্য প্রকাশের হাতিয়ার। ইচ্ছে করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হতে পারতেন, কিন্তু সে-পথ মাড়াননি। লেখক ও শিক্ষক সত্তাকে জাগ্রত রেখেছেন।
কোনো বিশেষ উপলক্ষে জনসম্মুখে স্বরচিত কবিতা পাঠ বা আবৃত্তির জন্যে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা কিংবা শহিদ মিনার চত্বর বেছে নেওয়া হতো। গোষ্ঠীবদ্ধ বৈকালিক সাহিত্য আসর বসতো খোলা আকাশের নিচে, সবুজ ঘাসের ওপর বৃত্তাকার আসন করে। স্মরণীয়, ‘কবিতা সারথি’র প্রায় নিয়মিত সমাবেশ। নতুন কবিতা নিয়ে উপস্থিত হতেন শিক্ষকদের মধ্যে আতাউর রহমান, আবুবকর সিদ্দিক, আসাদুজ্জামান, শেখ আতাউর রহমান, জুলফিকার মতিন এবং প্রায় অর্ধশত ছাত্র-কবি; কয়েকজনের নাম – জাফর তালুকদার, ইমরোজ সোহেল, শামসুল আলম সরদার, কৌশিক আহমেদ, আহসানুল কবির, জামিল রায়হান, মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন, কল্যাণ মিরবর, গোলাম কিবরিয়া পিনু, ইকবাল আজিজ, মোশতাক দাউদী, তারিক উল ইসলাম, সন্দীপক মল্লিক, আমিনুর রহমান সুলতান, অনীক মাহমুদ, দিলরুবা খানম প্রমুখ। পঠিত কবিতা সম্পর্কে যে কেউ আলোচনা করতে পারতেন; কিন্তু আমরা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতাম হাসান আজিজুল হক, আলী আনোয়ার ও সনৎকুমার সাহার আলোচনা। আলী আনোয়ার ও সনৎকুমার দেশি-বিদেশি কবি ও কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কবিতার স্থান নির্ধারণ করতেন। হাসান স্যার অসাধারণ বাগ্মী, গল্পের ছলে, হালকা ভঙ্গিতে যেন রসের হাঁড়িতে হাত দিয়ে কাউকে তুলে দিতেন রসগোল্লা, কারো ভাগে পড়তো বিষপিঁপড়ার কামড়। তবে কোনো স্যারই আমাদের হতাশ করতেন না। আশা-সাধনার মশাল নিয়ে সাহিত্যপথে হাঁটার প্রেরণা দিতেন।
শ্রেণিকক্ষের বাইরেও ছাত্র-শিক্ষকদের একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে – শিল্প-সাহিত্যমনা হলে এ-সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা সাহিত্যচর্চা করতেন, তাঁদের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক বিভাগভেদ ছিল না। দর্শন বিভাগের ছাত্র না হয়েও আমরা হাসান আজিজুল হককে শতভাগ স্যার মানতাম। তাঁর বাসায় আড্ডা দিতাম। আমি কাজলা থেকে যেতাম, কৌশিক আসতো শহর থেকে, অন্যরা হল থেকে। নতুন কোনো গল্প লেখা হলে স্যার আমাদের পড়ে শোনাতেন। মুগ্ধ হয়ে তাঁর পাঠ শুনতাম। যেন গল্পের চরিত্র, চিত্রকল্প দেখতে পেতাম। স্যারের কণ্ঠে ও উচ্চারণে আঞ্চলিক সংলাপও জীবন্ত হয়ে উঠতো। পঠিত গল্প সম্পর্কে মুক্ত আলোচনার অনুমতি ছিল। আমরা যার যার মতো করে মতামত দিতাম। স্যার গল্পের ভেতর-কাঠামোর কিছু দিক উল্লেখ করে ভাষার প্রসঙ্গ টানতেন। হাসান স্যার রাঢ়বঙ্গ, দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ত করেন। রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের মানুষের জীবনযাপন ও বাচনভঙ্গির প্রসঙ্গ এলে কৌতূহলী চোখে আমার দিকে তাকাতেন। আমি বলতাম, ‘স্যার, আপনার শোনার কান ও দেখার চোখ খুব তীক্ষè। রাজশাহী অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের খুঁটিনাটি আপনি আমার চেয়ে ভালো বোঝেন।’ তিনি হো-হো করে হেসে উঠতেন। এই প্রাণখোলা হাসি ছিল তাঁর আরেক সম্পদ। প্রসঙ্গ পাল্টে তিনি আমাদের লেখালেখির খবর নিতেন। ভালো কোনো লেখা এর মধ্যে পড়েছি কি না জিজ্ঞেস করতেন। আমাদের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যেতেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, শওকত ওসমান, শওকত আলী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস – অতঃপর সতীনাথ ভাদুড়ী, অমিয়ভূষণ মজুমদার, কমলকুমার মজুমদার, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল-শীর্ষেন্দু-সমরেশ-মতি নন্দী-মহাশ্বেতা – কেউই বাদ যেতেন না। কখনো বাংলা সাহিত্যের সীমানা পেরিয়ে চলে যেতেন ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যভাণ্ডারের সন্ধানে। আমাদের বেশি করে রবীন্দ্রনাথ-মানিক পড়ার পরামর্শ দিতেন।
একদিন বিকেল-সন্ধ্যা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত প্যারিস রোডে একাই হাঁটছি। উল্টোদিক থেকে হাসান আজিজুল হক, নাজিম মাহমুদ আসছেন, বোধকরি জুবেরি ভবনে ক্লাবে যাবেন। আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে নাজিম মাহমুদ বললেন, ‘তোমার পাড়ার এক ছেলে আমার অফিস সহকারীর মেয়েকে প্রেম নিবেদন করেছে। মেয়েটি পাত্তা দেয়নি। মেয়ের বাবা দুশ্চিন্তায় আছে।’ হাসান স্যার আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অট্টহাসি দিয়ে বললেন, ‘আরে ঠিকই তো আছে। এরা কি আমাদের যুগের ছেলে, ফুল নিয়ে লুকিয়ে মেয়ের পেছন পেছন ঘুরবে, ফুল শুকিয়ে যাবে; কিন্তু প্রেম নিবেদন করতে পারবে না। এখনকার ছেলেরা পছন্দের মেয়েকে সরাসরি বলবে, তোমার হৃদয়-মন্দির কি ফাঁকা আছে? তাতে আমার ভালোবাসা স্থান পাবে? মেয়েটি হ্যাঁ বা না উত্তর দেবে। তাতে দুজনেরই সময় বেঁচে গেল। সমস্যাও হলো না।’ – এই হলো রসিক ও সদা সাম্প্রতিক হাসান আজিজুল হক। বিশাল উদার মনের মানুষ বলেই আমাদের মতো ছাত্রদের শিক্ষক-ক্লাবে ডেকে চা খাওয়াতেন আর আড্ডা দিতেন। হাসান ঘরানার স্যারগণ ছাড়া অন্য শিক্ষকরা বিব্রতবোধ করলেও তিনি তার তোয়াক্কা করতেন না।
৩০ আগস্ট ১৯৮০ – শেখ আতাউর রহমানের গল্পগ্রন্থ নিশাত আমি নরকে চলেছির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে। পরদিন দৈনিক বার্তায় প্রকাশিত খবরের একাংশ, ‘মঞ্চের দেয়ালে শোভা পাচ্ছিলো বইটির বিশাল প্রচ্ছদপট; লেলিহান শিখার ভেতর পুড়ছে অবিরাম এক যন্ত্রণাকাতর যুবক। সভাপতির আসন অলংকৃত করেন প্রবীণ কবি অধ্যাপক আতাউর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রখ্যাত গল্পকার হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা, খোন্দকার সিরাজুল হক, জুলফিকার মতিন ও গবেষক-ছাত্র জয়নুদ্দীন। … শেখ আতাউর রহমানের প্রগাঢ় জীবনবোধের ভূয়সী প্রশংসা করে গল্পকার হাসান আজিজুল হক বলেন, লেখক ক্ষমতার সীমিত প্রয়োগ করেছেন এই সব গল্পে। এই জীবন দৃষ্টিকে প্রসারিত করলে আরো মহৎ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।’ (দৈনিক বার্তা, ২৪ ভাদ্র ১৩৮৭)
নাটকের প্রতি হাসান আজিজুল হকের বিশেষ আগ্রহ ছিল। খুলনায় অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক হিসেবে তাঁর সুনাম আছে। রাজশাহী বেতারের নাট্যশিল্পীও ছিলেন। লেখেন ভাষান্তরিত নাটক চন্দর কোথায়। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী-নির্দেশিত সিরাজউদ্দৌলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চস্থ বেশকটি নাটকে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তাঁর কণ্ঠস্বর সুস্পষ্ট ও জোরালো, উচ্চারণ শুদ্ধ ও নাট্য-উপযোগী, অভিনয়-মুভমেন্ট ও অভিব্যক্তি চমৎকার, নিষ্ঠা আর নাট্যনেশা তো ছিলোই।
নাজিম মাহমুদ ও আলী আনোয়ারের উদ্যোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৮১ সালের নাট্যপ্রশিক্ষণে আমি অংশ নিই। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করি। ২১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ চলে। ২৪ মার্চ ছিল হাসান স্যারের ক্লাস, বিষয় – ‘অভিনয়ে স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতা’। এক ঘণ্টার ক্লাসটি ছিল মনোমুগ্ধকর, তথ্যনিষ্ঠ ও উদাহরণনির্ভর। সেদিনের ক্লাস-নোট আমার সংগ্রহে এখনো আছে। সেখান থেকে তিন-চারটি বাক্য : ‘কোনো অভিনয়ই স্বাভাবিক নয়, কৃত্রিম – স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা মাত্র। আমাদের দেশের নাটক চূড়ান্ত অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বাভাবিকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অভিনয়ের রকম নির্ভর করে নাটকের উপর। ট্র্যাজেডি ও কমেডির অভিনয় ভিন্ন হয়ে থাকে।’
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীবৃন্দ দুটি নাটকে অভিনয় করেন। তার মধ্যে একটি ছিল আলী আনোয়ার-রচিত ও নির্দেশিত পরবাসী। দর্শনীর বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ৩০ এপ্রিল ১৯৮১ সালে। নিরীক্ষাধর্মী এ-নাটকে আমি শক্তিপতি এবং হাসান আজিজুল হক অভিনয় করেন প্রৌঢ় ব্যক্তির চরিত্রে। নাটকটির সফল মঞ্চায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করে। দৈনিক বার্তায় এর দীর্ঘ সচিত্র পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়।
রাজশাহীতে সরকারি দৈনিক পত্রিকা দৈনিক বার্তা প্রকাশিত হলে আমাদের মতো তরুণ লেখকদের লেখার তাগিদ বেড়ে যায়। যদিও সে-সময় দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সাহিত্য এবং শিল্প-সংস্কৃতির পাতায় আমার লেখা প্রকাশিত হতো। এসব পত্রিকা তখন ঢাকা থেকে রাজশাহী পৌঁছতে বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যেতো। দৈনিক বার্তা সকালেই পাওয়া যেত বলে এর পাঠকপ্রিয়তা ছিল বেশি। স্কুল-কলেজে ছোটগল্প দিয়ে আমার লেখা শুরু, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমদিকে কবিতা এবং পরবর্তীকালে প্রবন্ধ-গবেষণায় মনোযোগী হই। দৈনিক বার্তায় প্রকাশিত আমার অধিকাংশ প্রবন্ধের বিষয় ছিল নাটক। একবার জীবনানন্দ দাশের কবিতার কথা প্রবন্ধ গ্রন্থ অনুসরণে ‘জীবনানন্দ দাশের কবিতাচিন্তা’ শিরোনামে একটা লেখা তৈরি করলাম। কবি ও কবিতাকে জানার জন্যে কবিতার কথা খুবই মূল্যবান। ছোট্ট ভূমিকা দিয়ে প্রশ্ন-উত্তর আকারে লেখাটি পূর্ণতা পেল। উত্তর উত্তম পুরুষে হওয়ায় অনেকেই মনে করতে পারেন আমি সরাসরি কবির সঙ্গে কথা বলছি। আসলে আমি গ্রন্থের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে প্রশ্ন করেছি, উত্তরও সেখান থেকেই নিয়েছি। লেখাটি সাহিত্য সম্পাদক শাহ্নূর খান বেশ যত্ন নিয়ে ছাপেন (দৈনিক বার্তা, ৪ জানুয়ারি ১৯৮১)। হাসান স্যারের সঙ্গে দেখা হলে বললেন, ‘তোমার লেখাটি পড়েছি। নতুন আঙ্গিকে জীবনানন্দকে জানা। ভালো হয়েছে। যারা কবিতার কথা পড়েনি, তাদের কাজে আসবে।’ কেবল প্রশংসা নয়, তিনি আমাদের ভুলও সংশোধন করে দিতেন। বিষয়বস্তু ছাড়াও শব্দের বানান কিংবা বাক্য গঠনও তাঁর চোখ এড়াতো না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে এক ধরনের ব্যবধান ছিল। এ-ব্যবধান বা সমন্বয়হীনতা দূর হয় দৈনিক বার্তার সম্পাদক কামাল লোহানী, বেতারের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান গামা, হাসান আজিজুল হক ও আমাদের মতো কয়েকজন নবীন সাহিত্যকর্মীর কল্যাণে। হাসান স্যার তো আগে থেকেই এ-শহরের খুঁটিনাটি জানতেন। শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত সবার সাথেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। কাজেই তাঁর পক্ষে শহরের কোনো অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযাত্রী শিক্ষক-সাহিত্যিকদের নিয়ে আসা কোনো কঠিন ব্যাপার ছিল না।
চুয়াত্তরের শেষ বা পঁচাত্তরের প্রথম দিকে রাজশাহী বেতার চত্বরে বসে ‘কতিপয় সাহিত্য গোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠন করা হয়। এর সভাপতি মনোনীত হন মুস্তাফিজুর রহমান গামা এবং সম্পাদক আমি। ওই গোষ্ঠী নিয়মিত সাহিত্য আসর ছাড়াও পুস্তক প্রদর্শনী, সাহিত্যসভা, গুণীজন সংবর্ধনা, কতিপয় নামে পত্রিকা প্রকাশ এবং সভাপতির অফিস কক্ষে হাসান আজিজুল হকের একক গল্প পাঠের আয়োজন করে। হাসান স্যার তাঁর জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ) গল্পটি একটানা ক্লান্তিহীনভাবে পাঠ করেন। গল্পের বিষয় খানিকটা প্রতীকী হলেও আগ্রহী শ্রোতাদের কাছে স্যারের পাঠগুণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নাটকীয় ও মাধুর্যমণ্ডিত কণ্ঠের ওঠানামা অনন্য এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। পাঠশেষে গল্পের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করেন আলী আনোয়ার ও জুলফিকার মতিন। হাসান স্যার গল্পটি লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। চা-নাস্তা শেষ হয়, কথা চলতেই থাকে। ঘড়ির কাঁটা রাত এগারোটা পেরুলে যে যাঁর ঘরে ফেরেন। আমরা সাহেব বাজার এসে হক স্যারের আগ্রহে টমটম অর্থাৎ ঘোড়ার গাড়িতে চেপে বসি। আকাশভরা চাঁদের আলো, পদ্মার দখিনা হাওয়া, খটখট শব্দ করে ঘোড়া ছুটে চলে কাজলা-মতিহার। সে এক মোহনীয় স্মৃতি।
হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধগ্রন্থ কথা সাহিত্যের কথকতার (১৯৮১) প্রকাশনা উৎসব হয় রাজশাহীর সোনাদীঘির মোড়ে, বাংলাদেশ পরিষদ উপকেন্দ্রে। সভাপতি কবি আতাউর রহমান। আলোচক তিনজন বিজ্ঞ শিক্ষকসহ কয়েকজন তরুণ গবেষক। তাঁদের দীর্ঘ আলোচনাশেষে হাসান স্যার হঠাৎ করেই আমাকে কিছু বলতে বলেন। দ্বিধা নিয়ে উঠে দাঁড়াই। গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলো আগেই পড়া ছিল পত্রপত্রিকায় প্রকাশের কল্যাণে। কী বলেছিলাম ঠিক মনে নেই, এটুকু মনে আছে, ‘হাসান স্যার কথাশিল্পী, চিন্তক-দার্শনিক। তাঁর দেখার, মূল্যায়নের ও লেখার ভঙ্গি আলাদা। তাঁর প্রবন্ধ গতানুগতিকতার ঊর্ধ্বে, তাতে নতুনত্বের সন্ধান মেলে। মনে পড়ে বুদ্ধদেব বসুর গদ্যের কথা, কিংবা তার চেয়ে বেশি কিছু।’
১৯৮১-র জুন মাসে আমি রংপুর ক্যাডেট কলেজে শিক্ষকতা শুরু করি। ছুটিতে বাড়ি এলে হাসান স্যারের সঙ্গে দেখা হয়। যোগাযোগ কখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি। ’৮০-পরবর্তীকালে তাঁর ও আমার প্রকাশিত বই নিয়ে কথা হতো। মুনীর চৌধুরীর সাহিত্যকর্ম পেয়ে তিনি খুশি হয়েছিলেন। মুনীর চৌধুরী ছিলেন হাসান স্যারের গদ্যের গুণগ্রাহী। তিনি খুলনা সাহিত্য পরিষদের অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বলেন, ‘এই শহরে একজন মানুষ আছেন, নাম হাসান আজিজুল হক। তিনি গল্প লেখায় এক নতুন ভাষাশৈলী নির্মাণ করে চলেছেন।’ (চন্দন আনোয়ার-সম্পাদিত হাসান আজিজুল হক : নিবিড় অবলোকন, পৃ ৫৫)
সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন ছিলেন হাসান স্যারের স্নেহধন্য। তাঁকে নিয়ে স্যার গল্পও লিখেছেন ‘মাটি-পাষাণের বৃত্তান্ত’। আমার সংবাদশিল্পী : মোনাজাতউদ্দিন গ্রন্থে সে-প্রসঙ্গ সবিস্তারে উল্লেখ করেছি। উজান-এ গিয়ে তাঁর হাতে বইটি দিলে তিনি একটানা অনেকটা পড়ে আমার দিকে আনন্দদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলেন – ‘বাহ্’।
আমি রংপুরে থাকাকালে হাসান আজিজুল হক দুবার বিশেষ উপলক্ষে রংপুর গেছেন। একবার উদীচীর অনুষ্ঠানে, সঙ্গে ছিলেন মতিন স্যার। সেবার তাঁরা আমার বাসায় আসেন। এখনো তাঁদের ছবি ধরে রেখেছি। দ্বিতীয়বার আসেন মুক্তধারার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী বইমেলা ও রবীন্দ্র-প্রয়াণবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে। আলোচনাসভার দ্বিতীয়দিন ছিল ৪ আগস্ট ১৯৯১, স্থান রংপুর টাউন হল। প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রবন্ধের বিষয় – ‘রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন প্রসঙ্গ’। সভাপতি হাসান আজিজুল হক, প্রধান অতিথি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি মুস্তাফা নূরউল ইসলাম এবং চারজন আলোচকের মধ্যে আমি একজন। হলভর্তি জনসমাবেশে অনুষ্ঠানটি ছিল উপভোগ্য।
এর মধ্যে আমি বিভিন্ন কলেজ ঘুরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিই ২০১১ সালের মার্চ মাসে। ১০ মে থেকে সাতদিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, পাবনা জেলা শাখা উদ্যাপন করে ‘সার্ধশততম জন্মবর্ষে – হর্ষে হর্ষে রবীন্দ্র জন্মোৎসব’। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়দিন প্রধান অতিথি ও আলোচক ছিলেন হাসান আজিজুল হক, বিষয় – ‘রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক অর্থনীতি’। আমি প্রধান অতিথি ও আলোচক ছিলাম চতুর্থদিন। আলোচ্য বিষয় – ‘রবীন্দ্র ভাবনায় নারী স্বাধীনতা’। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে আটকে পড়ায় আমি হাসান স্যারের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি, তাঁকেও ওই রাতে রাজশাহী ফিরতে হবে বলে আমার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারেননি। মোবাইলে কথা হয়েছে মাত্র।
যখন যে কলেজে বদলি হয়েছি, কলেজ পাঠাগারের জন্যে হাসান আজিজুল হকসহ বাছাই করা লেখকদের প্রচুর বই কিনেছি। নব্বইয়ে দশক থেকে হাসান স্যারের নিকট-সান্নিধ্য আগের মতো না পেলেও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সবসময় পড়ার টেবিলে রেখেছি। পড়েছি আমরা অপেক্ষা করছি, রোদে যাবো, মা-মেয়ের সংসার, অতলের আঁধি, একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা, সাবিত্রী উপাখ্যান, আগুনপাখি এবং স্মতিকথাসমূহ। তিনি যেমন বলতেন, সারাজীবনই তাঁকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়তে হবে; আমাদেরও বলতে হচ্ছে, আমৃত্যু হাসান আজিজুল হক পড়তে হবে।
হাসান আজিজুল হকের কোনো লেখাই শিল্পমূল্যহীন নয়। কোনো লেখকেরই সব লেখার মূল্যমান এক হয় না। হাসান স্যারও তার ব্যতিক্রম নন। তাঁরও বিভিন্ন মানের লেখা। আমার কাছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোটগল্প এবং যেসব গল্প-উপন্যাসে নিম্নবর্গের মানুষের জীবনচিত্র, সমাজের দগদগে ঘা, নির্মম অমানবিক আচরণ, সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা বিদ্যমান – আর তা থেকে উত্তরণের পথনির্দেশ কিংবা চপেটাঘাত আছে, সেসব কথাসাহিত্যই বেশি গ্রহণীয়। এদের মধ্যে ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘ঘর গেরস্থি’, ‘ফেরা’, ‘কেউ আসেনি’, ‘সরল হিংসা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘মা-মেয়ের সংসার’ ও ‘আগুনপাখি’ উল্লেখযোগ্য। হাসান আজিজুল হকের এসব গল্প-উপন্যাসে যতই নেতিবাচক বাস্তবচিত্র থাক না কেন, গল্পের প্রান্তসীমায় এসে ঠিকই প্রতীকী সদর্থক ভাবনা যুক্ত করে দেন। এখানেই লেখক হিসেবে তাঁর দায়বদ্ধতা – দেশ, মানুষ ও জীবনের কাছে। ‘কেউ আসেনি’ গল্পের আসফ মুক্তিযুদ্ধশেষে দেশে ফিরেছে। যুদ্ধাহত আসফের একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে। আসফ সহযোদ্ধা গফুরের কাছে জানতে চায়, ‘দ্যাশ স্বাধীন হলি কি হয়। … কেউ তো এসে আমাকে কলো না যে দ্যাশ স্বাধীন হয়েছে।’ বিষণ্ন আসফ চিৎকার করে বলে, ‘আমি বাড়ি যাবো। আমার ঠ্যাং নে বাড়ি যাবো। আমার মাকে দেখাবো।’ আসফের বাড়ি যাওয়া হয় না, মারা যায়। কিন্তু পাঠকের মনে গেঁথে যায় আসফের দেশাত্মবোধ আর মাতৃপ্রেমের আকুতি।
যে সুখ-স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধরা যুদ্ধ করেছিলেন, স্বাধীন দেশে তা পূরণ হয়নি। সরকার অস্ত্র জমা দিতে বলে। টাউটদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। গল্পকার গল্পের সমাপ্তি টানেন – ‘আলেফ রাইফেল হাতে বাড়ির পিছনে ডোবার ধারে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর গায়ে যত জোর আছে সব দিয়ে রাইফেলটা ডোবার মাঝখানে ছুঁড়ে দেয়। বাড়ির দিকে ফিরে আসতে আসতে আলেফ ভাবে, ডোবাটা ছোট – লাইফেলটা খুঁজে পেতে তেমন কষ্ট হবে না।’
‘সরল হিংসা’ গল্পে তথাকথিত নগরসভ্যতার মুখে লাথি মারা হয়েছে। সভ্য-মুখোশধারী খদ্দের ও পতিতা জীবনের করুণ চিত্রের শিল্পিত প্রকাশ আর প্রতিবাদ – ‘তসিরুন একা সবাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তার মুখের উপর দুই পা তুলে দাঁড়ায়। এইবার আপন বুকে দুহাতে দমাদম আঘাত করতে করতে সে নগরীর দিকে চেয়ে খলখল করে হেসে ওঠে।’
ভারত ভাগের পেছনে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা ছিল সক্রিয়। ধর্মকেন্দ্রিক এই মানসিক অন্ধকার হাসান আজিজুল হক খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই আগুনপাখি উপন্যাসের এক চরিত্রের মুখে তুলে দেন এ প্রত্যাশাসূচক সংলাপ :
সকাল হোক, আলো ফুটুক, তখন পুবদিকে মুখ করে বসব। সুরুজের আলোর দিকে চেয়ে আবার উঠে দাঁড়াব আমি।
এভাবেই গড়ে উঠেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে, জীবনবাদী কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যভুবন। বিরাশি বছর, বলা যায়, পরিণত বয়সেই তাঁকে যেতে হলো পরকালে। আমাদের নিবেদন – হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যকর্ম অধিক পঠিত, মূল্যায়িত ও অনূদিত হোক; বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনে তাঁর নাম ও কাম অনির্বাণ আলো ছড়াক।
ছবি : প্রণবেশ দাস, উইকিপিডিয়া
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.