অক্টোবরের সমুদ্রে মাছেরা, দিহান ও আমি

হাসান অরিন্দম

আমরা যেখানে রাতে অবস্থান করছিলাম – সেই চারতলা ভবনটা, সমুদ্রসৈকত সেখান থেকে বড়জোর ১২০ মিটার দূরে। আমাদের বেশিরভাগেরই এই প্রথম সমুদ্র-অবগাহন। অক্টোবর মাসের জ্যোৎস্না ছিল সত্যিই চন্দ্রাহত হওয়ার মতো। আমরা রাত ৯টা পর্যন্ত নেচে-গেয়ে সৈকতেই কাটিয়ে দিলাম। আমাদের বৃত্তাকার আড্ডার মাঝে কাঠের আগুন জ্বালিয়ে নিয়েছিলাম। সমুদ্রের উন্মাতাল ঢেউ, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, আর আমাদের মুখে ঠিকরে পড়া আগুনের আলো এক অচেনা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল, আমাদের অধিকাংশেরই নিবাস সমুদ্রসৈকত থেকে দু-তিনশো মাইল দূরে। দলের সঙ্গে ছিলেন বিভাগের চেয়ারম্যান, তাঁর চুলে ঝুঁটিবাঁধা এক কবিবন্ধু এবং একজন কমবয়সী অধ্যাপিকা। চেয়ারম্যান ও তাঁর বন্ধু বিকেল থেকেই উধাও। তাদের নাকি মদ, মেয়েমানুষ দুটোরই অভ্যাস আছে। এদিকে আমাদের রাতের খাবারটা মন্দ হলো না – স্যার না থাকলেও সব ঠিকঠাক করে গিয়েছিলেন। এ-বেলার মেনুতে লইটা শুঁটকি আর রূপচাঁদা মাছও ছিল। এর আগে বান্দরবানে টিলার চূড়ায় আমরা একই রেস্ট হাউসের বিভিন্ন কক্ষে ছেলে ও মেয়েরা আলাদাভাবে ছিলাম। রাতে খাওয়ার পর যখন জানলাম এখানে মেয়েদের নিয়ে ম্যাডাম অন্যত্র থাকবেন, তখন আমাদের কেউ কেউ হতাশ হলো, এমনকি দু-একজন বলল, ‘চল, স্যারকে বলি এ কেমন ব্যবস্থা। আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ ক্লাসে পড়ি – আমরা স্বাধীন, সচেতন, দায়িত্বশীল। এভাবে মেয়েদের আলাদা করে দেওয়া তো মিডল এজের সিস্টেম।’ অবশ্য শেষ পর্যন্ত কেউ আর আপত্তিটা বেশিদূর প্রকাশ করতে চাইল না।
ডিনার-পরবর্তী সময়টাও আমাদের নেহাত মন্দ শুরু হলো না – কেউ কেউ নারী সহপাঠীদের মিস করছিল বটে, তবে মেয়েরা দূরে থাকায় আমাদের আড্ডাটা আরো নিঃসংকোচ ও গভীর হয়ে উঠতে লাগল। যারা সিগারেটে অভ্যস্ত তারা দ্রুতই ধোঁয়ায় ঘরগুলো ভরিয়ে ফেলল, দু-একটা টান দিতে তেমন কেউ বাদ রাখল না। কয়েকজন প্লেইং কার্ড নিয়ে মেতে উঠল। একটা ক্যাসেট প্লেয়ারে ব্যান্ড মিউজিক বাজছিল। আর বারান্দার এক কোনায় দুজনকে নিয়ে দাঁড়ানো দিহানকে দেখা গেল। ওর হাতের জ্বলন্ত সিগারেট ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। দূরে বাতাসে দুলছে বিমূর্ত ঝাউবন। নিজের মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো বারবার এলোমেলো করছে আর সিগারেটে টান দিচ্ছে দিহান। কিন্তু ওর গভীর দৃষ্টি সামনে-রাখা এক সহপাঠীর হাতের পাঞ্জার দিকে। দিহানকে দেখে মনে হচ্ছে বারান্দার আলোটা আরো একটু উজ্জ্বল হলে ওর জন্য ভালো হতো, হাতের রেখাগুলো ভালোভাবে দেখতে পেত। আমি প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করেই বিষয়টাকে নিছক ফান ভাবতে পারিনি দুটো কারণে। প্রথমত. পরিবেশটা বেশ সিরিয়াস, দ্বিতীয়ত. দিহান সম্পর্কে আমার জানা ছিল। ও হস্তরেখা পড়তে পারে, তা আমি জানতাম না বটে কিন্তু এই তরুণের তীক্ষ্ণতা সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল অতি স্বচ্ছ। ওর মতো তুখোড় স্বতঃস্ফূর্ত বক্তা আমি দ্বিতীয় আর কাউকে দেখিনি। যে-কোনো মঞ্চে ওর বক্তব্য মানুষকে বিস্মিত করে দেয়। আমি ওকে দেখে নিজের অপ্রতিভতা-অযোগ্যতা ভেবে লজ্জা পেতাম। আমাদের শিক্ষকরা পর্যন্ত বোধহয় ওকে ঈর্ষা করত। অবশ্য ওর ধৃষ্টতাও কম নয়। একবার এক শিক্ষককে বলে বসেছিল, ‘আপনার ওই চেয়ারটা আছে, আমার নেই। তাছাড়া আপনার সঙ্গে আমার পার্থক্য তেমন নেই। জগতের খুব কম বিষয় সম্পর্কেই আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন!’
তরুণ শিক্ষক বলেন, ‘আমি দেখে নেব তোমাকে’ ইত্যাদি।
দিহান বলে, ‘আপনার তো এই চাকরিটাই হওয়ার কথা নয় – স-ব দলবাজি – আপনার চেয়ে অনেক মেধাবী ছাত্র এই বিভাগ থেকে বের হয়েছে, তারা অন্যত্র তাদের যোগ্যতা ও সুনাম নিয়ে আছে। আপনি তো আজো গদ্যটাই ঠিকমতো লিখতে শেখেননি।’
‘তুমি কিন্তু খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছ। এর ফল খুব মারাত্মক হবে।’
তর্কটা খুব বিশ্রী পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। শেষে চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় ব্যাপারটার বিহিত হয়। দিহানকে দিয়ে সরি বলানো হয়, আর সিদ্ধান্ত হয় সামনের একটা বছর মানে দিহানদের শেষ বছরে ওই শিক্ষকের কোনো কোর্স থাকবে না। আমরা জানতাম দিহান কেন অতটা ঔদ্ধত্য দেখাতে পেরেছিল। দল ক্ষমতায় নেই দুবছর। আর দিহান জানত নিজের সব জায়গায় বুক ফুলিয়ে চলার জন্য ক্যাম্পাসে ওই দলের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সখ্য থাকা জরুরি। মনে মনে ও ওই নেতাদের ঘৃণা করলেও দিহান ওপরে নিপুণভাবে সম্পর্কটা রক্ষা করত, বস্ত্তত ওর চেয়ে ভালোভাবে আর কেউ এ-কাজটা করতে পারত না। দলের সভাপতি ও সম্পাদক ওর কাছে বক্তৃতা শিখতে আসত, আবার নেতাদের দু-একটি গাঁজার আড্ডায় দিহান নিজেকে অসাধারণভাবে মানিয়ে নিত। তাই ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক কাউকে তার বিশেষ পরোয়া করে চলতে হতো না।
দুজনের ভাগ্যনির্ণয় শেষ হলে আমি ওর সামনে হাত রাখি। কেন যেন দিহান আমার দিকে সামান্য বিরক্ত-চোখে তাকায়। বলে, ‘তোরটাও বলতে হবে?’
‘কেন – ওদেরটা বলা গেলে আমারটা নয় কেন?’
‘আরে দূর – তুই এসবে বিশ্বাস করিস! আমি ওদের সঙ্গে একটু মজা করছিলাম।’
‘ঠিক আছে, মজা করো আরেকটু, আপাতত আমিই তোমার গিনিপিগ।’
ও আমার হাত ছেড়ে দেয়, আর আমার চোখের দিকে তাকায়, ওর দৃষ্টি আমার চোখের ভেতর কর্নিয়া আর আইরিশের গভীর আকাশে কী খুঁজে পায় জানি না। ওর দৃষ্টি উজ্জ্বল ও বিহবল হয়ে ওঠে। তারপর আমার মুখের রেখা, ভ্রূর কোণ, চিবুকের বাঁক প্রভৃতি পাঠ করে। খানিক বাদে দুই হাতের পাঞ্জা এক করে কি-সব মেলায়। বলে, ‘তোর জন্ম কি বুধবারে, খুব ভোরে?’ আমি শুধু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ি। কোথায় যেন দুটো বিড়াল ঝগড়া করছে; আমার মনে হলো বিড়ালদুটোর একটা সাদা আর একটা কালো হবে। সমুদ্রে হয়তো জোয়ার আসছে – মনে হলো, আমি জলের শব্দ শুনতে পাচ্ছি; আমাদের নির্বাক আট-দশ মিনিট কেটে যায়। দিহান আরো একটা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে। আকাশের দিকে তাকায়, দূরে তাকিয়ে হয়তো সমুদ্রের ঢেউও দেখে নেয় একবার। ওর আচরণ কেমন বদলে যায় – অচেনা আর নেশাগ্রস্ত দেখায় ওকে। আমি বলি, ‘কিরে বল – কিছুই তো বলছিস না।’
ও বলে, ‘তুই কখনোই আমার সামনে আর এসব ব্যাপার নিয়ে আসবি না।’ আমি ওর চোখে আগুন দেখি।
‘কেন – সেটা অন্তত বল!’
‘না, কিছু বলা যাবে না।’
‘আসলে তোর সব ভন্ডামি – তুই কিছুই জানিস না।’ আমি ইচ্ছা করেই ওকে রাগিয়ে দিয়ে ওর মুখ থেকে কিছু বের করতে চাই।
‘এই তোরা একটু সরে যা-তো। এই নে সিগারেট।’ দিহান ওর প্যাকেট থেকে দুটো বেনসন বের করে দেয়। অন্য দুজন ঘরের ভেতর চলে গেলে দিহান মিনিটখানেক নীরব থাকে। তারপর গলা আরো গম্ভীর করে বলে, ‘আজ থেকে আমি তোকে নতুন করে চিনলাম।’
‘মানে?’
‘মানে কিছু নয় – তুই একটা ভিন্ন আকাশের পাখি। অন্য সাগরের মাছ। মানুষের ভেতর এক স্বতন্ত্র ছায়াবাজি।’
‘এইসব হেঁয়ালি বাদ দিয়ে সোজা করে বল। আমি ওসব বুঝি না।’
‘বোঝ না – তাই না! তুই ভেতরে ভেতরে এই – এতটা কঠিন, এতটা উচ্চতা – এতখানি আকাশ জুড়ে আছিস! এত শক্তি তোর পাখায়! আমিও চেষ্টা করেছিলাম, উড়তে পারিনি; মুখ থুবড়ে পড়ে আছি। এ-পথ কিন্তু সহজ নয়।’
‘আবারও সেই কাব্যিকতা! নাহ! রাখ ওসব কিছু বলার থাকলে বল!’
‘কিছু বুঝতে পারছ না – তাই না? তুমি খুব ভালো করেই উপলব্ধি করছ আমি কী বলছি।’ তুই মজা পাচ্ছিস – বিস্মিত হচ্ছিস আমি তোকে এভাবে আবিষ্কার করেছি বলে।’
আমার দৃষ্টি চলে যায় বাইরের আকাশে – একটা আলোকপি কোত্থেকে যেন কোথায় চলে গেল – বোধহয় উল্কাপাত। অন্য কক্ষগুলোতে আড্ডা আরো জমে উঠছে, ওদের হল্কা করার আওয়াজ ভেসে আসছে, সাহস করে দুজন বিচ থেকে ওয়াইনের বোতল কিনেছিল, সেগুলো বোধহয় খোলা হচ্ছে। বারান্দার বাতাস ততক্ষণে সামান্য হিমেল হয়ে উঠেছে, হালকা কুয়াশা নামায় জ্যোৎস্নাও অনেকটা ফিকে।
দিহান ঠিকই বলছে। আমি ওর কথায় অবাক হচ্ছি। ওর অন্য আর এক তীক্ষ্ণতা আমাকে নতুন করে বিস্মিত করছে। একজন মানুষ কীভাবে পারে এতকিছু?
ও আবার মুখ খোলে। আমার বিষণ্ণ শৈশব, আমার ছেয়ে-রুপালি ভয়, অলৌকিক দুঃস্বপ্ন, আমার পাথুরে কান্না, আমার হারানো স্বজন, আকাঙ্ক্ষার রোদ, আমার চেতনার স্রোত কীভাবে যেন একে একে বলে যায় আমার বন্ধু – আমার সহপাঠী দিহান। দিহানের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব বিশেষ ঘনিষ্ঠ নয় আমি জানি, ও-ও জানে; ওর ২০ জন সেরা বন্ধুর মধ্যেও আমি নেই। অথচ ওর সামনে কীভাবে আমি একটা খোলা ডায়েরি হয়ে উঠি। ও একের পর এক পড়ে যায় আমারই দিনলিপির সোনালি অক্ষর। সে-শব্দরাশি ওর চোখে দ্যুতি ছড়ায়, ওর চোখের দ্যুতি কীভাবে যেন মেশে আমার আলোর উঠোনে।
আমি বলি, ‘আরো কিছু বলো – এবার একটু খোলসা করো।’
‘তোকে খোলসা করা আমার সাধ্য নয়। ওই লাইনটা তো জানিস?’
‘কোনটা?’
‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’
‘জানি, কিন্তু এখানে তার প্রাসঙ্গিকতা কী? ইহজনমে আমার অসুর বধ করার সাধ জাগেনি কোনোদিন।’
‘সত্যি করে বল, তুই অসুরনাশ চাস না? তোর স্বপ্ন নয় আকাশ পেরুনো?’
‘দূর – কী যে বলিস! কীসের সঙ্গে কীসের তুলনা! ও তো মিথ!’
দিহানের চোখজোড়া বেশ লাল হয়ে ওঠে। ও বলে, ‘আমার মাথার ভেতরটা কেমন যেন করছে – তুই যেন একটা কী – যা এখান থেকে। সর!’
আমি বলি, ‘মাথা বেশি ব্যথা? সরি বন্ধু, আগে জানলে আমি তোকে বলতাম না – ফালতু এসব ভাগ্যগণনা!’
‘থাক, ন্যাকা সাজতে হবে না। আমি বোধহয় সারারাত ঘুমুতে পারব না। যা এখান থেকে, তুই যেন আমার ঘরে থাকবি না, অবশ্যই অন্য ঘরে।’
দিহানকে আমার হঠাৎ ভয় লাগে। ও তো অদ্ভুত এক জিনিস – কী যে সব আজগুবি বলতে জানে। আমি যখন বিছানায় যাই, মশারির ভেতর তখন আমার নিজেকেও নিজের ভয় লাগে। কানের দুপাশ দিয়ে নিরন্তর ঝিঁঝি ডেকে চলে। চোখের পাতায় আছড়ে পড়ে বালুময় ঢেউ। ঘুম আসে না। কী সব কথা – ওড়ার আকাশ, কোমল আলোর ডাক! আমি চোখ মেলি, আবার চোখ বন্ধ করি। সবাই বোধহয় গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে। এবার সত্যিই আমার চোখে মৃদু জ্যোৎস্না ঠিকরে পড়ে। আমি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়ি। আমি বোধহয় জেগে উঠি। তারপর কী মনে হয় দরজা খুলে নগ্নপায়ে সৈকতের দিকে এগোই। পায়ের তলায় কোমল বালির সামান্য শীতলতা মন্দ লাগে না, কোনো মানুষ জেগে নেই এদিকে। আবহাওয়াটা এখন ঠিক মনোরম নয়। বাতাস এলোমেলো, খানিকটা ঝোড়ো। আমি তবু এগোই একা। একটু ভয় লাগে, থামি না। সাগর আমাকে টানছে – টানছে অসীম। পেছনে কী যেন ছায়ার মতো। ভূতের ভয় আমার চিরকালই। না তাকিয়ে পারি না। সাহস করে ঘাড় ঘুরাই।
‘দিহান!’
আমি শব্দ করে ওর নাম উচ্চারণ করতে যাই। ও কাছে এসে আমার মুখ চেপে ধরে। ‘চুপ, কথা না – চল এগোই, আমাদের গন্তব্য তো একই।’
আমি এই রহস্য-রাতে ওকে জানাই, ‘শোন একটা সত্যি কথা বলি – আমি কিন্তু ভাগ্যগণনায় বিশ্বাস করি না, ওসব জাস্ট ফালতু!’
দিহানের জবাব, ‘আরে দূর – বাদ দে ওসব। আমিও কি বিশ্বাস করি? ওই দেখ সমুদ্রের সব মাছ আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।’
আমি অবিশ্বাসীর চোখে সমুদ্রের দিকে তাকাই – সত্যিই তো শুশুক, ডলফিন, তারামাছ, অক্টোপাস, তিমি, হাঙর, ছুরি, টুনা সব ঢেউয়ের তোড়ে জল ছেড়ে উড়ে আসছে, ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমি ভাবি – একি! মাছেদের হাসিমাখা মুখ – ওরা হাসতেও জানে!
আমরা জানতাম হেমন্তের রাত ক্রমেই বাড়ছে। মাছেদের এমন কান্ড আমার ঘুমন্ত বুন্ধরা কেউ দেখতে পেলো না বলে একটু মন খারাপের মতো হয়; যদিও আমি জানি, ওরা বিশ্বাস করবে না। দিহানের দিকে তাকিয়ে দেখি উড়ন্ত মাছেদের দিকে দৃষ্টি মেলে ও-ও হাসছে। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার এই সমুদ্রসঙ্গী দিহানই ছিল, দিহানের বেশধারী কোনো অশরীরী নয়। ফিকে হয়ে আসা জ্যোৎস্নার নিচে আমিও মাছেদের হাসির ভাষা রপ্ত করতে চেষ্টা করলাম। আমরা চাচ্ছিলাম – বলা ভালো প্রার্থনা করছিলাম, প্রবল ঢেউ এসে আমাদের দুজনকে নিস্তল মহাকালিক জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাক – আমরা দুজন নির্ভয় মাছের মতো নক্ষত্রের চারিপাশে উড়তে থাকি। 