অচেনাবৃত্তের চেনা সন্ধ্যা

সংগীতজগতের বিস্ময় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে ‘কিন্নরকণ্ঠী’ বলে ডাকতেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তারাশঙ্করের লেখা গান ‘মধুর মধুর বংশী বাজে কোথা কোন কদমতলিতে’ সন্ধ্যার কণ্ঠের অনবদ্য নিবেদনে সংগীতের দুনিয়ার এক চিরন্তন সম্পদ হয়ে আছে। গান গাইবার ক্ষেত্রে, গীতিকার, সুরকার, যন্ত্রশিল্পী প্রত্যেকের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতেন বলেই হয়তো তাঁর প্রতিটি গান যুগ যুগ ধরে শ্রোতার হৃদয়ে একটা স্থায়ী স্থান করে নিতে সমর্থ হয়েছে।

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যখন ধীরে ধীরে সংগীতজগতে নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন, সেই সময় থেকে, তাঁর জীবনের শেষ পর্ব পর্যন্ত, নিজের ভেতর একটা সাধারণ আটপৌরে চরিত্র বজায় রাখতে পেরেছিলেন, যা ভাবলে সত্যিই বিস্ময় জাগে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। খাওয়া-পরার অভাব ছিল না তাঁর বাপের বাড়িতে। তাই বলে আতিশয্য কিছুই ছিল না। এই যে শৈশব-কৈশোরের ভারসাম্যযুক্ত জীবনযাপন, সেটা কিন্তু তিনি শেষদিন পর্যন্ত, অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্ণভাবে বজায় রেখে গিয়েছেন। তাঁর যাপনচিত্র, সাজপোশাক, আচার-আচরণ – এই সবকিছুর ভেতর কখনো এতোটুকু বাহুল্য দেখা যায়নি। যখন তিনি বিশ্ববন্দিতা সুচিত্রা সেনের লিপে গান গেয়ে খ্যাতির শীর্ষে, পরিমিত আকারে হলেও বিভিন্ন জলসায় অংশগ্রহণ করছেন, তখনো তাঁর সাজপোশাকে এই আটপৌরে প্রকাশ ছিল একটা বিশেষ রকমের ট্রেডমার্ক।

তিনি বলতেন : আমাদের ছোটবেলায় অতো স্নো -পাউডার মাখা, এসবকিছুতে অভ্যস্ত ছিলাম না। আর স্নো-পাউডার মাখার অতো টাকা-পয়সাও তখন ছিল না। তাই কোনো ফাংশনে যাওয়ার আগে অ্যালোভেরা পাতা ভেঙে নিয়ে, সেই অ্যালোভেরার নির্যাস মুখে মেখে বেশ কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে ফেলতাম। মুখ একদম  চকচক করতো।

সাজসজ্জার ঘরোয়া টোটকা – এই জিনিসটার প্রতি  সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চিরদিন একটা বিশেষ রকমের পক্ষপাতিত্ব ছিল। অসুখ-বিসুখে ঘরোয়া টোটকাতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। কথায় কথায় নামিদামি ডাক্তারের কাছে যাওয়া, নামিদামি ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী দুর্মূল্য ওষুধপথ্য খাওয়া, এসবকিছু থেকে তিনি একটা দূরত্ব বজায় রাখতেন। তাই শরীর ঠিক রাখার জন্য পরিমিত আহার, সময়মতো ঘুম – এই দুটো বিষয়ের প্রতি তাঁর ছিল তীক্ষè নজর।

এটা যে কেবল তিনি তাঁর নিজের জন্য করতেন, তা নয়, এই নজরটা স্বামী গীতিকার শ্যামল গুপ্তের প্রতিও তাঁর চিরদিন বজায় ছিল। খেতে ভালো লাগছে বলেই কোনো খাবার অতিরিক্ত খেয়ে ফেললাম, বা অতিরিক্ত তেল-মশলা, ভাজা খাবার খেলাম – এসব তাঁর চরিত্রবিরুদ্ধ ছিল। বাড়িতে অতিথি এলে, তাঁদের জন্য নিজে হাতে খাবার তৈরি করে তাঁদের পেটপুরে খাওয়াতে কখনো কার্পণ্য বা ক্লান্তি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ছিল না।

আসলে তাঁকে ঘরোয়া পরিবেশে দেখার সুযোগ পেয়েছি বলেই বুঝতে পেরেছি, কী অসামান্য অধ্যবসায়ের ভেতর দিয়ে তিনি সংগীতশিল্পী হিসেবে কেবল বাংলা নয়, কেবল ভারতে নয়, গোটা বিশ্বের সংগীতভুবনে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। তিনি যখন উচ্চাঙ্গসংগীতের কোনো কনফারেন্সে গাইবার জন্য স্বীকৃত হতেন, তখন দীর্ঘদিন কোনো লঘুসংগীত গাইতেন না, অর্থাৎ উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে লঘুসংগীতের একটা সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়ে তাঁর মন-মেজাজের ওপর তার প্রভাব পড়ুক, এটা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কোনোদিনও বরদাশত করতে পারতেন না। তাই লঘুসংগীত যখন গাইতেন, তখন আবার উচ্চাঙ্গসংগীতের পরিবেশ থেকে নিজেকে খানিকটা দূরেই রাখতে পছন্দ করতেন।

কালজয়ী বেসিক রেকর্ড, ফিল্মি গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের লেখা দেশাত্মবোধক গান, নানা ধরনের হিন্দি গীত, ভজন – এসব গাওয়া সত্ত্বেও উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রতি ছিল তাঁর এক বিশেষ ধরনের পক্ষপাতিত্ব। তাই তাঁর যখন প্রথম উচ্চাঙ্গসংগীতের লং প্লেয়িং রেকর্ড প্রকাশিত হয় গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে, সেটির দীর্ঘ আলোচনা দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন খ্যাতির শীর্ষে। সুরকার হিসেবে এক বছরের চুক্তিতে তখনকার বোম্বে, আজকের মুম্বাইতে, নচিকেতা ঘোষকে নিয়ে যান হেমন্ত; কিন্তু সেই এক বছরে একটি গানেও তিনি নচিকেতাকে দিয়ে সুর করাননি। কার্যত অকর্মণ্য হয়ে, মাইনে নিয়ে বসে থাকাটা নচিকেতা ঘোষের পক্ষে খুব অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিল। এই সময় শারদ উৎসবের কিছুটা আগে কলকাতায় এসেছিলেন নচিকেতা। তিনি  ইচ্ছা প্রকাশ করলেন  সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সেবারের পুজোর গান সুর করার।

গানটি লিখলেন প্রখ্যাত গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় – ‘মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা’। মোহাম্মদ রফির স্বল্পপরিচিত গান ‘স্বপ্না লেকে আয়ে রে চান্দা’ গানটার একটা বাংলা অনুবাদ করলেন শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। জীবনসায়াহ্নে শিবদাসকে খুব গর্বের সঙ্গেই বলতে শুনেছি যে, ‘চলে যাওয়ার আগে এই আত্মতৃপ্তি আমার মধ্যে আছে, ‘মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা’র  রিমেক হবে না।’

এ-গানটি বিভিন্ন মাহফিলে অসাধারণ ভঙ্গিমায় বিভিন্ন শব্দকে নানা আঙ্গিকে উচ্চারণ করে গাইতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গানটিতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনেক আসরে তবলায় সংগত করতেন রাধাকান্ত নন্দী। সেই দুর্লভ দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা যাঁদের হয়েছে, তাঁরাই মনে করতে পারেন, রাধাকান্ত নন্দী সম্বন্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সেই উক্তি – ‘রাধাকান্তবাবু তবলা বাজাতেন না, তিনি তবলায় গান বাজাতেন’ – সেটির  যথার্থতা।

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের শেষপ্রান্তে তাঁকে কিছু আর্থিক সাহায্য করার জন্য আমাকে বললেন। সামান্য কিছু অর্থ তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর হাতে তুলে দিলাম। পরবর্তীকালে শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে ফোন করে, তাঁকে মনে রেখে, তাঁর আর্থিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে, এই যে অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো, তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।

একবার শিলিগুড়িতে একটি জলসায় গাইতে চলেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। রাধাকান্ত নন্দীও আছেন তাঁদের সঙ্গে। এয়ারপোর্টে ছাড়তে এসেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পত্নী বেলা মুখোপাধ্যায়। তিনি আবদার ধরে বসলেন তাঁর স্বামী হেমন্তের কাছে, ‘শিলিগুড়ি থেকে কিছু একটা নিয়ে এসো।’

এই ঘটনাক্রম যখন বলা হচ্ছে তখন শিলিগুড়িতে হংকং মার্কেট তৈরি হয়নি। নানা রকম বিদেশি জিনিসপত্র পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা পরবর্তী সময়ের মতো ছিল না। তাই একটু আশ্চর্য হলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘শিলিগুড়ি থেকে কী জিনিস আনব?’ রাধাকান্ত নন্দী তখন বললেন, ‘বেলা দেবী, শিলিগুড়ির গামছা কিন্তু খুব বিখ্যাত।’

রাধাকান্তের মজাটা ধরতে পারলেন না বেলা মুখোপাধ্যায়। ব্যাপারটাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে তিনি স্বামী হেমন্তকে বললেন, ‘তাহলে শিলিগুড়ি থেকে গামছাই নিয়ে এসো।’

এই সম্পর্কের নানা স্মৃতি রোমন্থনে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শেষ জীবনে মাঝে মাঝে বিভোর হয়ে যেতেন। তখন যেন মনে হতো, তাঁর একদম শেষদিকের গাওয়া সেই গানটার কথা, ‘আমার স্মৃতিতে অনুপম আর রবীন চট্টোপাধ্যায়, গানে গানে দিন, ছিল কি রঙিন, জাগে স্মৃতি এই রাতটায়।’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বলতেন, ‘আমরা সংগীতজীবনের মানুষেরা হেমন্তদাকে যতটা চিনি-জানি, তার থেকে অনেক বেশি হেমন্তদাকে চেনেন, জানেন সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য।’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের যে-হিমালয়সদৃশ ব্যক্তিত্ব, তাকে সন্ধ্যা চিরদিন অত্যন্ত সম্মান আর মর্যাদার আসনে বসিয়ে ছিলেন।

ছোটিসি মুলাকাত চলচ্চিত্রটি করার পর বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশের মানুষের অসহযোগিতায় ভয়ঙ্কর রকমের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন উত্তম কুমার। এই সময়ে তিনি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা সম্মানী নিয়ে বিভিন্ন জলসায় অংশগ্রহণ করতেন। সে-সময়ে বসুশ্রী সিনেমা হলের এক জলসায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখনো এসে পৌঁছাননি। উত্তম কুমার অনুরোধ করলেন, তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে সেই বিখ্যাত গানটি সপ্তপদী চলচ্চিত্রের ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো’ গাইতে। অবলীলাক্রমে মঞ্চে উঠে উত্তম কুমারের সঙ্গে সন্ধ্যা গাইতে লাগলেন সেই গানটা।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে একটা আড়াল রাখতেই হয়েছিল, তা না হলে তাঁর মতো শিল্পীর সংগীত সাধনা ব্যাহত হতো। সেই আড়ালটাকে তিনি হয়তো খানিকটা নিজের ইচ্ছাতেই ভেঙে দিয়েছিলেন শ্যামল গুপ্তের মৃত্যুর পর। শ্যামল গুপ্ত যতদিন বেঁচে ছিলেন, কখনো কোনো রকম রাজনীতির তাপ-উত্তাপের ভেতরে পত্নী সন্ধ্যাকে এতোটুকু আসতে দেননি তিনি। নীলকণ্ঠের মতো সমস্ত রাজনীতি, সংগীতজগতের চাপানউতোর – এসবকিছু সামলাতেন শ্যামল গুপ্ত।

শ্যামল গুপ্তের অসুস্থতার সময় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মহম্মদ সেলিম, শ্যামলী গুপ্তের মতো প্রথম সারির বামপন্থি নেতারা যে-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই সহযোগিতাকে আপন করে নিতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এতোটুকু দেরি হয়নি। শ্যামল গুপ্তের মৃত্যুর খবর পেয়ে আধঘণ্টার মধ্যে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিমান বসুর মতো প্রথম সারির বামপন্থি নেতা মহম্মদ সেলিমকে সঙ্গে নিয়ে।

সন্ধ্যা  মুখোপাধ্যায় চিরদিন অন্তরালে থেকে, নিজের সংগীত সাধনা ঘিরেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করতেন। তাই যখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে, তখনকার শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে নানা সময়ে তাঁকে নানা ধরনের অনুরোধ-উপরোধ জানানো হতো; কিন্তু সেসব অনুরোধের ভেতরে যদি দেশ রক্ষার তাগিদ, দেশের সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ – এসব বিষয়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকত, তাহলে সেগুলোর সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে দিতে কখনো দেরি করেননি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

তিনি যখন বেসিক রেকর্ড আর চলচ্চিত্রের গানের বদৌলতে খ্যাতির শীর্ষে, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ড. হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজভবনে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেবামূলক কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান হতো। সেসব অনুষ্ঠানের মূল সংগঠক ছিলেন উৎপলা সেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বরাবরই বন্ধু উৎপলার আমন্ত্রণ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতেন। এসব অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শ্রোতাদের মন মাতিয়ে দিতেন।

এই কর্মকাণ্ডের ধারা আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গান গেয়ে শ্রোতাদের জয় করে, তার ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভাবনাকে তিনি মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নাগরিক হিসেবে কখনো রাজপথ-জনপথে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি মনে করতেন, সচেতনতা ঘটাতে গেলে কেবল সভা-সমিতিতে যেতে হবে, তার কোনো সঠিক অর্থ নেই। নিজের মতো করে, নিজের জীবনযাপনের ভেতর দিয়েও যে মানুষের কাজের প্রতি সমস্ত রকমের সম্মান, সহযোগিতা, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রাখা যায়, সেটাই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর গোটা জীবন ধরে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন।

অবশ্য সেই ভাবধারার একবারই আমরা ব্যতিক্রম দেখেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান  শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি সমর্থনে রবীন্দ্রসদন চত্বরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ধরনায়  বসেছিলেন। একেবারই তৃণমূল কংগ্রেস দলটির দলীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে তাঁর এই রাজনৈতিক অবস্থান। তাঁর  গোটা জীবনের যাপনচিত্রের বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল এটি। অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন যে, শ্যামল গুপ্ত যদি জীবিত থাকতেন, তাহলে হয়তো পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের সভায় ওই রকম রাজনৈতিক ভঙ্গিমায়, বুকে রাজনৈতিক সেø­াগানের প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্রদের সঙ্গে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ধরনায় বসতেন না।

এমন ব্যতিক্রমী কাজ আরেকটি ক্ষেত্রে তাঁকে করতে দেখা গিয়েছিল, সেটি হলো, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের পর বামফ্রন্ট সরকারের নিয়োজিত রাজ্য সংগীত একাডেমীর সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত প্রখ্যাত সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের পরিবর্তে তাঁকে ওই পদে নিযুক্ত করে নতুন সরকার। তিনি সেই পদটি গ্রহণ করেছিলেন।