অদৃশ্য কালি : লেখা পাঠ ও পাঠ লেখা১ টনি মরিসন

অনুবাদ : আশফাক স্বপ্ন
একবার এক জনপ্রিয় সাময়িকীর জন্য একটা প্রবন্ধ লিখি। সেই পত্রিকার একটা অনিয়মিত ‘সংস্কৃতি’ বিভাগ ছিল, তার জন্য লেখা। ওরা চাইছিল বই পড়ার মূল্য বা আনন্দ নিয়ে কিছু প্রশংসাসূচক কথা লিখব। ‘আনন্দ’ শব্দটা শুনে বিরক্ত হয়েছিলাম, কারণ আনন্দের সঙ্গে আবেগের যোগটা বড্ড বেশি। আনন্দ, সঙ্গে উৎকণ্ঠা। পাঠের অভ্যাস খুব মৌলিক একটা প্রয়োজন – তবে জোরটা যেন বিনোদনের ওপর।২ আমজনতার চিমত্মাভাবনায় অবশ্য এ-কথা স্বীকার করা হয় যে, পাঠের অভ্যাস মানুষের চেতনাকে উন্নত করে, তাকে নানান কিছু শেখায়, এবং যখন খুব কার্যকর হয়, তখন গভীর চিমত্মায় উদ্বুদ্ধ করে।
একজন লেখক ও কল্পনাপ্রবণ ব্যক্তি হিসেবে, এবং একজন আগ্রহী পাঠক হিসেবে আমি পাঠের অভ্যাস নিয়ে বহু আগে থেকেই চিমত্মাভাবনায় মগ্ন হয়েছি।
আমি তিন বছর বয়সে পড়া শুরু করি। সেটা খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। কঠিন মানে পড়তে কষ্ট হওয়া এই অর্থে কঠিন নয়। আমার সমস্যা হতো শব্দের ভেতরে আর শব্দের অতীত যে-অর্থ রয়েছে তার নাগাল পাওয়া নিয়ে। প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পোষা কুকুর নিয়ে একটা বাক্য ছিল : ‘দৌড়া, জিপ, দৌড়া।’ পড়েই আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, ও কেন দৌড়াচ্ছে? এটা কি আদেশ? যদি তাই হয়, তাহলে ওকে কোথায় যেতে বলছে? কুকুরটাকে কি ধাওয়া করা হচ্ছে? নাকি সে কাউকে ধাওয়া করছে? পরে যখন আমি হ্যানসেল ও গ্রেটেল রূপকথা পড়ি, তখন আরো গুরুতর প্রশ্নে জর্জরিত হলাম। শিশুতোষ ছড়া, খেলার ব্যাপারেও তাই ঘটল : ‘ঘোরো গোলাপ গাছ ঘিরে, পকেটভর্তি ফুল ভরে।’৩ বেশ কিছু সময় পরে বুঝলাম এই ছড়া, খেলা হলো পেস্নগ মহামারির মৃত্যু নিয়ে।
তাই ঠিক করলাম এই সাময়িকীর জন্য প্রস্ত্তত লেখায় পাঠের শৈলী, বিশেষ করে পাঠও যে একটা শিল্পিত প্রয়াস, সেই বিষয়টা বিশদে পরিষ্কার করার চেষ্টা করব।
যা লিখেছিলাম তার কিছুটা এখানে উদ্ধৃত করছি :
মিস্টার হেডের ঘুম ভাঙতে তিনি দেখলেন ঘর চাঁদের আলোয় আলোকিত। উঠে বসে মেঝের দিকে অপলক চোখে তাকালেন – মেঝের রং রুপালি। তারপর বালিশের দিকে তাকালেন। মনে হলো যেন দামি সুতোর কাজ। এক সেকেন্ড পর ৫ ফুট দূরে অবস্থিত দাড়ি কামানোর আয়নায় অর্ধেক চাঁদ দেখলেন। চাঁদটা থমকে আছে, যেন কক্ষে প্রবেশের জন্য তার অনুমতির অপেক্ষা করছে। চাঁদ এগিয়ে চললো, সবকিছুর ওপর যেন একটা রুচিস্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে দিলো। দেয়ালের সাথে লাগানো খাড়া চেয়ার মনোযোগী ভঙ্গিমায় যেন কোনো নির্দেশের অপেক্ষায়। মিস্টার হেডের প্যান্ট বেশ নবাবি চালে চেয়ারে ঝুলছে; ভাবখানা এমন, কোনো মান্যগণ্য ব্যক্তি তার ভৃত্যের দিকে পোশাক ছুড়ে মেরেছে।
ফ্ল্যানারি ও’কনর (Flannery O’Connor) কাহিনির সূচনায় এই বাক্যগুলোতে পাঠকদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন মিস্টার হেডের দিকে – তার আকাশকুসুম কল্পনা, তার আশা-আকাঙক্ষার দিকে। আবরণবিহীন বালিশ হয়ে গেছে দামি ব্রোকেড। চাঁদের আলোয় কাঠের মেঝে হয়ে গেছে রুপালি এবং ‘সবকিছুর ওপর যেন একটা রুচিস্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে দিলো।’ চেয়ার ‘মনোযোগী ভঙ্গিমায়’ যেন তার আদেশের অপেক্ষা করছে। এমনকি চেয়ারে ঝুলন্ত প্যান্ট ‘বেশ নবাবি চালে চেয়ারে ঝুলছে; ভাবখানা এমন, কোনো মান্যগণ্য ব্যক্তি তার ভৃত্যের দিকে পোশাক ছুড়ে মেরেছে।’ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে মিস্টার হেডের নিজের বনেদিয়ানা সম্বন্ধে বেশ বদ্ধমূল, অলীক, কল্পনা রয়েছে – সেখানে তিনি ভৃত্যদের খুশিমতো নিয়ন্ত্রণ করেন, কর্তৃত্বের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মনে করেন। এমনকি তার দাড়ি কামানোর আয়নায় প্রতিফলিত চাঁদও থমকে যায়, ‘যেন কক্ষে প্রবেশের জন্য তার অনুমতির অপেক্ষা করছে।’ কয়েকটা বাক্য পর আমরা জানতে পারি তার অ্যালার্ম ঘড়ি একটা উলটানো বালতির ওপরে রাখা, তখন তার দাড়ি কামানোর আয়না বিছানা থেকে মাত্র পাঁচ ফুট দূরে কেন সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন জাগে। কিন্তু অতদূর যাওয়ার আগেই আমরা তার সম্বন্ধে অনেকটা জেনে ফেলি – তার হামবড়া ভাব, তার নিরাপত্তাহীনতাবোধ, তার দুর্বল, কাতর আকুতি। গল্প এগোলে তার আচরণ কেমন হবে সেটা সম্বন্ধে আমরা আগাম কিছুটা আঁচ করতে পারি।
নিখুঁত লেখার কী কী গুণ থাকে যার ফলে সেই কথাসাহিত্য বারবার পাঠ করা যায়, তার কল্পনার জগতে এমন আস্থা নিয়ে প্রবেশ করা যায় যে, মনোযোগী পাঠকের জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করছে? আমার প্রবন্ধে আমি সেই গুণগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলাম। জানতে চেষ্টা করছিলাম কী করে সাহিত্যসৃষ্টি সার্থক হয়, এবং আমাকেও সার্থক করে।
আমি যেই উদাহরণ দিয়েছিলাম, সেটা আমার মতে সঠিক হলেও যথেষ্ট নয়। একজন পাঠক কী করে একটি পাঠে অংশগ্রহণ করে, সেটা আমি পরিষ্কার করে বলতে পারিনি। অর্থাৎ পাঠক পাঠ থেকে কী মর্মোদ্ধার করেন সেটা নয়, কী করে সে-পাঠ রচনায় সাহায্য করে সেটা। (অনেকটা গান গাইবার মতো – কথা, সুর সবই আছে, সেইসঙ্গে যুক্ত হচ্ছে গাওয়া – সেটা এই সংগীত সৃষ্টিতে শিল্পীর নিজস্ব অবদান।)
অদৃশ্য কালি বলতে আমি বোঝাচ্ছি সেই জিনিস যা কথাসাহিত্যের ছাপার অক্ষরের লাইনগুলোর গভীরে, দুই লাইনের মাঝামাঝি, এবং তার বাইরে অবস্থান করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না উপযুক্ত পাঠক তা আবিষ্কার করে। ‘উপযুক্ত’ পাঠক বলতে আমি বলতে চাইছি কিছু কিছু বই সকল পাঠকের জন্য নয়। কোনো পাঠক প্রম্নসেত্মর (Proust) রচনাকে বুদ্ধিবৃত্তি বা হৃদয়বৃত্তি দিয়ে আত্মস্থ না করেও তাকে সমীহ করতে পারেন। বইটি ভালোবাসেন বলেই এমন পাঠক তার সেরা বা উপযুক্ত পাঠক নাও হতে পারেন। বইটির জন্য ‘সৃষ্ট’ পাঠক সেইজন যিনি অদৃশ্য কালির ইঙ্গিতটি চিনতে পারেন, অনুধাবন করতে পারেন।
সাহিত্য-সমালোচনায় (literary criticism) পাঠ্য (text) এবং সুপরিণত (actualized) পাঠক হলো বহুপ্রচলিত মানিকজোড়। পাঠক তার পাঠের উপলব্ধি পালটাতে পারে, কিন্তু পাঠ্য বদলায় না। সেটা সুস্থির। যেহেতু পাঠ্য পালটায় না, সেই যুক্তি অনুযায়ী পাঠকের পাঠলব্ধ উপলব্ধির বদল ঘটলেই পাঠ্যের সঙ্গে পাঠকের সার্থক সম্পর্ক রচিত হতে পারে। আমার তো মনে হয় প্রশ্নটা তাহলে দাঁড়ায় – এই সুপ্ত উপলব্ধির উৎস কি পাঠক, না লেখক? আমি যেটা বলতে চাইছি তা হলো, সবসময় যে সেটা হবে তা নয়। পাঠ্যের মর্মোদ্ধারের দায়িত্ব যদি পাঠকের ওপর বর্তায় বলে মনে করা হয়, সেক্ষেত্রে পাঠ্য যে সবসময় অসাড় হয়ে থাকে, এবং পাঠক তাতে প্রাণসঞ্চার করে তা নয়। আমি এই সমীকরণে তৃতীয় পক্ষ যুক্ত করতে চাই – সে হচ্ছে লেখক।
কোনো কোনো কথাসাহিত্যিক এমনভাবে পাঠ্য প্রস্ত্তত করেন যাতে একটা ঝাঁকুনি সৃষ্টি হয়। সেটা শুধু উত্তেজনাপূর্ণ গল্পকাঠামো, ধারালো বিষয়, চিত্তাকর্ষক চরিত্র, এমনকি ঘটনার তোলপাড়ও নয়। এঁরা তাঁদের কথাসাহিত্য দিয়ে পাঠের অভিজ্ঞতার পুরো আবহকে ঝাঁকুনি দেন, নাড়া দেন, পাঠকের চিত্তকে অধিকার করেন।
উপমা-উৎপ্রেক্ষা বাছাইয়ের মতো উপমা-উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার পরিহার করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কাহিনির গুরুত্বপূর্ণ বাক্যে এমন তথ্য লুকানো থাকতে পারে যা পাঠটাকে পূর্ণতা দেয়, বা তাতে হানা দেয়, বা পাঠকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যা লেখা হয় না, সেটা যা লেখা হলো তার চাইতে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই ফাঁকগুলো ইচ্ছাকৃত, এবং সচেতনভাবে পাঠককে হাতছানি দেয়। ‘উপযুক্ত’ পাঠক এই ফাঁকগুলো পূরণ করে পাঠ্যকে পূর্ণতা দেয়, এবং পাঠ্য যে প্রাণবন্ত সেটা প্রমাণ করে।
এই প্রসঙ্গে Benito Cereno (বেনিতো সেরেনো) উপন্যাসটির কথা ভেবে দেখুন।৪ লেখক কাহিনির বর্ণনায় চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি বেছে নেন পাঠের অভিজ্ঞতাকে সচেতনভাবে প্রভাবিত করার জন্য।
কিছু কিছু বিষয় সম্বন্ধে কিছু অনুমান এই ঝাঁকুনি সৃষ্টি করার জন্য অহরহ ব্যবহার করা হয়। আমি এমন একটা বই দেখতে চাই যেখানে যে-চরিত্রের জবানিতে কাহিনি বর্ণিত হচ্ছে সে নারী কি পুরুষ সেটা উহ্য রাখা হচ্ছে। নারী বা পুরুষ অনেকটা গাত্রবর্ণের মতো – লিঙ্গপরিচয়ের সঙ্গে একগুচ্ছ বদ্ধমূল ধারণা জড়িত। লেখক সেসব ব্যবহার করেন। উদ্দেশ্য পাঠকের চিত্তে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি, বা কখনো প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা।
ও’কনর, কোটজি (Coetzee) বা মেলভিলের (Melville)উদাহরণ প্রমাণ করে, গাত্রবর্ণ নিয়েও কিছু বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে। অন্যত্র আমি লিখেছি গাত্রবর্ণ নিয়ে যে প্রচলিত বর্ণবাদী সামাজিক প্রথা চালু রয়েছে, সেটাকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেটা কখনো পাঠকের বদ্ধমূল ধারণাকে পরিষ্কার করার জন্য, কখনো তাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। ভার্জিনিয়া উলফ (Virginia Woolf) কাহিনিতে ফাঁক রেখে, ফকনার (Faulkner) তাঁর কাহিনিতে বিলম্ব ব্যবহার করে উভয়েই পাঠককে নিয়ন্ত্রণ করেন, এবং তাকে পাঠ্যের অধীনে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু এ-কথা কি সত্যি যে-পাঠ্য তার সম্বন্ধে আশা বা তার পরিবর্ধন সৃষ্টি করে না? বা এই সৃষ্টি কি সম্পূর্ণত পাঠকের ওপর বর্তায়, যাতে পাঠকের নিজ মনে পাঠ্যের বদল ঘটে?
আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমার প্রায় সব বইয়ে আমি এসব রীতি সচেতনভাবে ব্যবহার করেছি। আমি খোলাখুলি দাবি করেছি, পাঠক শুধু কাহিনিতে মগ্ন হবে না, তাকে পাঠ্য সৃষ্টিতে সাহায্য করতে হবে। কখনো সেটা করেছি একটা প্রশ্ন উত্থাপন করে। Song of Solomon (সলোমনের গীত) উপন্যাসের শেষে কার মৃত্যু হয়? তাতে কি কিছু যায়-আসে? কখনো ইচ্ছা করে লিঙ্গপরিচয়টা বলি না। Love (প্রেম) উপন্যাসের শুরুর বক্তা কে? যে-চরিত্র বলে : ‘মেয়েরা ঊরু ফাঁক করে দেয় আর আমি গুনগুন করি’, সে কি নারী না পুরুষ? Jazz (জ্যাজ) উপন্যাসে যে-চরিত্র বলে ওঠে : ‘আমি এই শহরটাকে ভালোবাসি’, সে কি নারী না পুরুষ? যে-পাঠক এর জন্য তৈরি নয়, তার কাছে এইসব ছল বিরক্তিকর লাগবে – যেন রুটির টোস্ট পরিবেশনের পর মাখনটা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মনে হবে দরজাটা যেন একটু ফাঁক হয়েছে, সে ভেতরে আসার জন্য মিনতি করছে।
গাত্রবর্ণ উহ্য রাখায় আমি একা নই। জন কোটজি তাঁর Life & Times of Michael K (মাইকেল কে-এর জীবনযাপন) উপন্যাসে এ-কাজটি অত্যন্ত কুশলতার সঙ্গে করেছেন। বইটির ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘটছে, চরিত্র এক দরিদ্র শ্রমিক। সে কখনো ভবঘুরে, মানুষের প্রবণতা তাকে এড়িয়ে চলা। এই তথ্যগুলো জেনে আমরা চটজলদি কিছু বিষয় ধরে নিই। কিন্তু তার ওপরের ঠোঁট কাটা, সেটাও তার দুর্ভাগ্যের কারণ হতে পারে। সারা বইয়ে কোথাও এই চরিত্রের গাত্রবর্ণ কী – তার উল্লেখ নেই। পাঠকরা একটি কিছু ধরে নেন, বা ধরেন না। আচ্ছা, আমরা যদি অদৃশ্য কালির লেখা পাঠ করি, তারপর জানতে পারি ব্যাপারটা তা নয় – আসলে এই কাহিনি এমন একটি চরিত্রের ভোগামিত্মর কাহিনি, সে আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরিদ্র শ্বেতাঙ্গ (সেখানে এমন মানুষ প্রচুর)?
Paradise (স্বর্গ) উপন্যাসের প্রথম বাক্যে অদৃশ্য কালির একটি পরিষ্কার উদাহরণ রয়েছে। ‘ওরা সাদা মেয়েটাকে প্রথমে গুলি করলো, তারপর বাকিদের ওপর সময় নিয়ে চড়াও হলো।’
কোন চরিত্রটা সাদা মেয়ে, এটা ঠাহর করতে পাঠকের কল্পনা কতখানি ব্যতিব্যস্ত হবে? পাঠক কখন বিশ্বাস করবে, সে তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে? কখন এ-কথা পরিষ্কার হবে যে, শহরের তস্করদের জন্য এই তথ্য জরুরি হলেও পাঠকের তাতে কিছু এসে-যায় কি? যদি তাই হয়, যেই চরিত্রই বাছাই করা হোক না কেন, আমি পাঠককে বাধ্য করেছি পাঠ রচনায় সহায়তা করতে। এই পাঠককে আমি অদৃশ্য কালির টানে কাহিনির কাছাকাছি এনেছি, পাঠ্যকে ঝাঁকুনি দিয়েছি, পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এনেছি।
A Mercy (দয়া) উপন্যাসের প্রথম বাক্য ‘ভয় পেয়েছ?’ পাঠককে শান্ত করে, অঙ্গীকার করে কোনো অনিষ্ট করবে না। শেষ পরিচ্ছেদের আগের পরিচ্ছেদে রয়েছে : ‘ভয় পেয়েছ? পাওয়া উচিত।’
পাঠ লেখানোর মধ্যে একটু বশীকরণের ব্যবহার রয়েছে – পাঠককে ছলেবলে পাতার বাইরের জগতে নিয়ে আসতে হয়। তাতে সুস্থিত পাঠ্যের ধারণা নস্যাৎ করে নতুন একটা ধারণা চালু করা হয়। সেখানে পাঠ্য সুপরিণত ও সক্রিয় পাঠকের ওপর নির্ভর করে, যে পাঠটাকেই লিখছে অদৃশ্য কালিতে।
আমি শেষ করছি একটা বই থেকে কিছু শব্দ চয়ন করে। আমার বিশ্বাস এটি আরো একটি উদাহরণ :
ওরা পুরুষের মতো উঠে দাঁড়াল। আমরা দেখলাম। ওরা পুরুষের মতো দাঁড়াল।

টীকা
১। ‘Invisible Ink’, Wilson College Signature Lecture Series, Princeton University, Princeton, New Jersey, March 1, 2011. The Source of Self-Regard : Selected Essays, Speeches, and Meditations পুস্তকে গ্রন্থিত।
২। কথাটার ইংরেজি word play বাংলায় প্রতিফলিত নয়। মূল পাঠ : ‘Reading is fundamental – emphasis on the ‘fun’.’
৩। মূল পাঠ : ‘Ring around the rosie, pocket full of posies.’
৪। Benito Cereno (বেনিতো সেরেনো) হারম্যান মেলভিল-রচিত ছোট উপন্যাস। ডন বেনিতো সেরেনো একটি স্পেনীয় ক্রীতদাসবাহী জাহাজের নাবিক। উপন্যাস সেই জাহাজের বিদ্রোহের বিবরণ।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার : রিটন খান)