অনিঃশেষ যাত্রার বিভূতি

সেদিন বিকেলে বেড়াতে গিয়েছেন ধারাগিরি পাহাড়ে, ফুলডুংরির মতো এই জায়গাটাও বিভূতিভূষণের খুব প্রিয়। সঙ্গে লরিবাংলোর ভক্তদা আর কানুমামা। দুদিন আগেই ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা, বনচূড়ায় তখন দ্বিতীয়ার চাঁদ। আমলকী গাছের ফাঁক বেয়ে ঝুরঝুর করে জ্যোৎস্না ঝরছে। পাশের ঝোপ থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে বুনো গন্ধ। একটা পাথরখ–র ওপর অনেকক্ষণ বসে ছিলেন বিভূতি। সাথিরা ফিরে যেতে চাইলেও তিনি কেন যেন কোনো কথা না শুনেই ওপরের দিকে উঠতে লাগলেন। উপায় নেই দেখে তাঁকে কিছুটা পথ অনুসরণ করল সবাই। কিছুদূর গিয়ে অন্যরা পিছিয়ে পড়ল। চারপাশে তখন জোছনা আর পাহাড়ের নিসত্মব্ধতা। হঠাৎ ভয়ার্ত চিৎকার। সবাই ছুটে গিয়ে দেখল দুহাতে মুখ ঢেকে বসে কাঁপছেন বিভূতিভূষণ। সামনে একটা খাটিয়া। কেউ একজন নতুন কাপড়ে আপাদমসত্মক ঢাকা, নিচে নতুন সরায় সিঁদুর-কলা সাজানো। ধারাগিরি জায়গাটা তাদের সবারই চেনা। এমন দৃশ্য আর কখনো এখানে কেউ দেখেনি। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বিভূতিভূষণ স্বগোক্তি করলেন, ‘আমায় বোধহয় চলে যেতে হবে শিগগির।’ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, ‘কে যেন হঠাৎ আমায় ডেকে নিয়ে গেল ওই খাটিয়ার কাছে। কার ইঙ্গিতে যেন মড়ার কাপড়টা তুললাম। জানো কী দেখলাম? আমারই মৃতদেহ ওটা।’ লেখকের জীবনের এ-অভিজ্ঞতা অনেকটা এভাবেই লিখেছেন কিশলয় ঠাকুর ও যমুনা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মৃত্যুর মতো পরিপূর্ণ বিষয়টি হয়তো তখনই এমন বিশেষ করে প্রত্যক্ষ সম্ভব, যখন তা অনেককাল ধরে ব্যক্তিগত যাপনে থাকে। বিভূতিভূষণের সাহিত্যে অনন্তলোকে যাত্রার ঘটনা অন্তত তেমনি  ইঙ্গিত করে। হয়তো ‘মৃত্যুচেতনা’ মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আসে বলেই তা ঘটে। প্রথম স্ত্রী গৌরীর মৃত্যু, এরপর বোন ও মায়ের চলে যাওয়া থেকেই সে-অভিজ্ঞতার জন্ম হয়ে থাকতে পারে, যার অভিজ্ঞান ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর তৈরি সব মৃত্যুর পটভূমির আগে ও পরে। বিভূতিভূষণের সাহিত্যে মৃত্যু এসেছে পথের গতি বদলে যাওয়ার আয়োজন নিয়ে। তাঁর কাছে মৃত্যু মানেই শেষ নয়, বরং অন্য এক শুরু। বলা যায় মৃত্যু মানে অনিঃশেষ এক যাত্রা। তপোব্রত ঘোষ ব্যক্তিগত পুরাণ নিয়ে আলোচনায় উলেস্ন­খ করেছেন, বিভূতিভূষণ বলেছিলেন, জন্মমৃত্যুর চক্রপথে মানুষ চিরপথিক আর সেই চক্রপথের পরিচালক পথের দেবতা বৈশ্রবণ। এখানে তিনি একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘ভাবজীবন’।

আরণ্যক উপন্যাসে সত্যচরণ কল্পনা করেছে, ‘মৃত্যুর পরে অজানা কোন অদৃশ্য লোকে অশরীরী হইয়া উড়িয়া চলিয়াছি ভগবান বুদ্ধের সেই নির্বাণ-লোকে, যেখানে চন্দ্রের উদয় হয় না, অথচ অন্ধকারও নাই।’ পথের পাঁচালীতে দুর্গার মৃত্যুতে পাঠক বেদনায় বুঁদ হয়ে উঠলেও তিনি নির্বিকারচিত্তে লিখে যান … ‘আকাশের নীল আসত্মরণ ভেদ করিয়া মাঝে মাঝে আনন্দের হাতছানি আসে – পৃথিবীর বুক থেকে ছেলেমেয়েরা চঞ্চল হইয়া ছুটিয়া গিয়া অনন্ত নীলিমার মধ্যে ডুবিয়া নিজেদের হারাইয়া ফেলে – পরিচিত ও গতানুগতিক পথে বহুদূরপারে কোন পথহীন পথে দুর্গার অশান্ত চঞ্চল প্রাণের বেলায় জীবনের সেই সবর্বাপেক্ষা বড় অজানার ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে!’ আসলে অপুর জীবনে নতুন বাঁক আনতে দুর্গার মৃত্যু হয়তো দরকার ছিল। এ বিদায় না হলে নিশ্চিন্দিপুর থেকে তাদের কাশী যাওয়ার পথটা সরল হতো না। উপন্যাসে দুর্গার একবারই বিয়ের সম্ভাবনা উঁকি দেয়। লিখেছেন, ‘কি জানি কেন আজকাল তাহার মনে হয় একটা কিছু তাহার জীবনে শীঘ্র ঘটিবে। এমন কিছু শীঘ্রই আসিতেছে যাহা আর কখনো আসে নাই।’ পাঠক ভাবেন, এ যেন বিয়েরই প্রস্ত্ততি। দুর্গার মৃত্যুতে আকস্মিক বোঝা যায়, সেই নতুন কিছুর অনুভব আসলে মৃত্যুর জাল বুনতে বুনতে এসেছেন লেখক। মৃত্যুর পরও পাঠকের মনে রয়ে যায় এক কিশোরীর রেলগাড়ি দেখার মতো তুচ্ছ কিন্তু বৃহৎ ইচ্ছাটা।

ইন্দির ঠাকুরনের সঙ্গে সবর্বজয়ার দুর্ব্যবহারের ঘটনাও মৃত্যুতে শেষ হয়নি। কাশীতে সবর্বজয়ার জীবনে আসে পঁয়ষট্টি-সত্তর বছরের এক বৃদ্ধা। দেখে মনে হয়, একই চেহারার মানুষ সে যেন         কোথায় দেখেছে। ‘মানুষের অন্তর-বেদনা মৃত্যুর পরপারে পৌঁছায় কিনা সবর্বজয়া জানে না, তবু সে আজ বারবার মনে মনে ক্ষমা চাহিয়া অপরিণত বয়সের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিতে চাহিল।’ এই উপন্যাসে একে একে সবার পরিণতিই পরাজয়ের দিকে নিয়ে বিভূতিভূষণ এগিয়ে নিয়েছেন অপু চরিত্রকে। উপন্যাসের শেষে অপুর ‘রঙিন ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্নের মধ্যে মিশে গেছে পরাজিত ইন্দির ঠাকুরন, দুর্গা, হরিহর ও সবর্বজয়ার মৃত্যু।’

‘উমারানী’ গল্পে প্রথমটি শৈল, দ্বিতীয়টি উমারানীর মৃত্যু। গল্পে শৈল লেখকের নিজের ছোট বোন। তাঁর মৃত্যুর খবর যখন পেলেন, তখন দখিন হাওয়া শীত তাড়িয়ে দিচ্ছে। যে-বোনকে তিনি ভালোবাসতেন সে আকাশের সপ্তর্ষিম-লের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। প্রকৃতির সঙ্গে মৃত্যুর উপমায় অভিঘাতটি অন্যরকম হয়ে ওঠে পাঠকের মনে। সেই শৈলর স্বামী বিয়ে করেন উমারানীকে। নিজের বোনের স্থানে কিন্তু লেখকের উমারানীকে ভালো লাগার কথা নয়। তবে উমারানীর হৃদয়ের উত্তাপে তিনি পরাজিত। একসময় ছোট করে ‘রানী’ নামেও ডাকেন লেখক। শৈল নিজের দাদার   (লেখককেই ধরা হচ্ছে কারণ উত্তম পুরুষের ব্যবহার) জন্য বুনতে শিখেও প্রথম মাফলারটি বানিয়েছিল স্বামীর জন্য। এই গল্প শুনে উমারানী, স্বামীর প্রয়াত প্রথম স্ত্রীর ভাইয়ের জন্য পশমের জুতো বোনেন। নিজের খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে ভাইয়ের বিয়ের জন্য রুপার কাঁটা তৈরি করান। লেখকের মনে হয়, শৈল থাকলে এর বেশি কিছু করতে পারত না। পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বিভূতিভূষণের কথাশিল্প নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উলেস্ন­খ করেছেন, ‘একটি মৃত্যু পেরিয়ে আরেকটি জীবন প্রতিষ্ঠা হয় : শৈল ধারাবাহিক উমারানীতে, যদিও এ মেয়েটি অজানা-অচেনা। এভাবেই বিভূতিভূষণের বীক্ষায় জীবন প্রবাহিত হয়, আপনজনের মৃত্যু বিচ্ছেদ ঢেকে দিয়ে আরেক জীবন আসে।’

‘আহবান’ বৃদ্ধার একপাক্ষিক ভালোবাসার গল্প। শিক্ষিত তরুণ গ্রামে দেখা পান এই মুসলমান বৃদ্ধার। লেখকের বর্ণনায় ‘আমগাছের ছায়ায় একটি বৃদ্ধার চেহারা ভারতচন্দ্র-বর্ণিত জরতীবেশিনী অন্নপূর্ণার মত। কোনো তফাৎ নেই, ডান হাতে নড়ি ঠুক ঠুক করতে করতে বোধ হয় বা বাজারের দিকেই চলেছে।’ এই নারী কোনো এক অপত্য স্নেহে বারবার জড়াতে চান তাঁকে। কারণে অকারণে ঘরের সামনে উপস্থিত হয়ে জমির করাতীর বিধবা স্ত্রী ডাকেন ‘ও বাবা’। দুটো আম আঁচলের গেঁরো থেকে খোলেন। একপর্যায়ে লেখক বিব্রত। এ-পাড়ায় মুসলমান বাড়ি থেকে খাবার আসছে, সকলে ভালো চোখে দেখছে না। সামাজিক কারণে বুড়িকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলেন; কিন্তু সে স্নেহ দিয়ে জড়াতে চায়। অগত্যা বৃদ্ধার সঙ্গে বেশ নির্দয় আচরণ করেই তিনি গ্রাম থেকে এসেছিলেন। দেড় বছর বাদে তিনি ফিরলেন। ‘আহবান’ গল্পের বর্ণনানুসারে ‘গ্রামে ঢুকতেই পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরী অবাক হয়ে বলে­ – ও মা, আজই তুমি এলে বাবা ঠাকুর? সে বুড়ি যে কাল রাতে মারা গিয়েচে। তোমার নাম করলে বড্ড।’ এ-গল্পের শেষটা উলেস্ন­খ না করলে মৃত্যুর সঙ্গে বিভূতিভূষণের অনিঃশেষ বোধটা ঠিক স্পষ্ট হয় না। ‘শরতের কটূক্তি গন্ধ ওঠা বনঝোপ ও মাকাললতা দোলানো একটা প্রাচীন তিত্তিরাজ গাছের তলায় বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হচ্ছে। আমি গিয়ে বসলাম … শুকুর মিয়া বলে­, দ্যাও বাবাঠাকুর, তুমিও দ্যাও – তুমি দিলে মহাপ্রাণী ঠান্ডা হবে। দিলাম এক কোদাল মাটি।’  ধর্মের প্রভেদে যে-স্নেহ গ্রহণে এত বাধা, সেই ধর্মবিভেদ উঠে যায় মৃত্যুতে। ব্রাহ্মণের হাতের এক কোদাল মাটিতে শামিত্ম পাবে এক স্নেহপরায়ণ মুসলমান নারী। এই যে মৃত্যুতে জীবনের একটি বিভেদ ভেঙে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হলো তাই যেন অনিঃশেষ যাত্রার প্রতীক।

এই অনুভূতি সবচেয়ে প্রবল দেবযান উপন্যাসে। প্রথম স্ত্রী গৌরীর মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় তিনি এ-ঘোর কাটাতে পারেননি। বিভূতিভূষণের বন্ধু নীরদ চৌধুরী খুব কাছ থেকে দেখেছেন তখন। কিশলয় ঠাকুরের পথের কবি বইতে পাওয়া যায়, গৌরীর প্রিয় চাঁপা ফুল তখনো মাঝে মাঝে কিনে সঙ্গে রাখেন বিভূতি। তাঁকে আবার বিয়ের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বন্ধু নীরদ। না বলে এক জায়গায় কনেও দেখিয়ে এনেছিলেন। নীরদ চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেছেন, কোনো লাভ হলো না। কাজের মধ্যে কাজ হচ্ছে, ‘কনে দেখা’ নামে একটা গল্প লিখলেন বিভূতি। কাজ হবে কেমন করে, বিভূতি তখন গৌরীর আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চর্চায় ব্যসত্ম। থিওসফিক্যাল সোসাইটিতে নাম লিখিয়েছেন। এমনকি মহাপুরুষ ত্রিপুরাবাবুর সঙ্গে তাঁর আত্মা-আবাহন, চক্রাধিবেশনে বসার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে হ্যাপাও কম পোহাতে হয়নি লেখককে। হুগলীর জাঙ্গিপাড়া স্কুলে অস্থায়ী প্রধান শিক্ষকের পদে বসে দিনদুপুরে আত্মা নামাচ্ছেন শুনে সরকারি কর্মকর্তা এসেছিলেন তদমেত্ম। ফলে ভূত নামানোর অভিযোগ কাঁধে নিয়ে বিভূতিভূষণকে ছাড়তে হয়েছিল জাঙ্গিপাড়ার স্কুল। তিনি যে নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন, সে-প্রমাণ দুই যুগ পরে ১৯৪৪ সালে লেখা দেবযান

এ-উপন্যাসের শুরু যতীনের মৃত্যু দিয়ে। কুড়ুলে বিনোদপুরের যতীন জ্বরে মৃত্যুর পরই আবিষ্কার করল, তেইশ বছর আগে বসন্ত রোগে মরে যাওয়া খেলার সাথি পুষ্প তাঁর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে। একসময় পুষ্পর চেয়ে প্রিয় তার জীবনে কিছু ছিল না। সেই পুষ্প জানাল, সে নিয়ে যেতেই এসেছে। গল্প শুরু। যতীন তখনো বুঝতে পারেনি সে জীবিত নেই। যতীনের যাত্রা শুরু অনন্তলোকে। বেঁচে না থাকার সত্যটি যখন সে জানল, বিভূতিভূষণ বর্ণনা করেছেন – ‘একেই বলে মৃত্যু? এরই নাম যদি মৃত্যু হয় তবে লোকে এত ভয় করে কেন?’ এ-উপন্যাসে বিভূতিভূষণ বারবার বলতে চেয়েছেন, মানুষের অজ্ঞতা দূর করতে পারলে  আত্মা পার্থিব অসিত্মত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে। আর প্রকৃতিতে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা মানুষের সাধারণ সহজ দৃষ্টিতে আসে না। তাই নিজের মৃত্যুশয্যায়ও স্ত্রীকে বিভূতিভূষণ বলেছিলেন, ‘আমার দেবযানে বিশ্বাস রেখো কল্যাণী’।

বুদ্ধভক্ত বিভূতিভূষণ সৃষ্টিকে দেখতে পেতেন এবং দেখাতে চেয়েছেন অনন্ত হিসেবে। এর কোনো শেষ নেই, মৃত্যুতে ক্ষয় নেই, শুধু এক পরিবর্তন। তবু সেই যাত্রাপথ যে বিচ্ছিন্নতার বেদনা-মেশানো, তা যেমন সাহিত্যে পাঠকের জন্য তেমনি লেখকের ব্যক্তিজীবনেও। যমুনা বন্দ্যোপাধ্যায় উপল ব্যথিত গতি বইয়ে বিভূতিভূষণের মৃত্যুর সময়ের স্মৃতিচারণে বলেছেন, সে-সময় তিনি ঘরের ভেতর আত্মাদের উপস্থিতি দেখেছিলেন। সে-কথা প্রকাশও করেছেন বিভূতিভূষণ। তবে সেই ধারাগিরি পাহাড়ে নিজের মরদেহ প্রত্যক্ষ করার দুদিন আগেই হয়তো তাঁর মনে হয়েছিল কিছু ঘটতে যাচ্ছে। সেদিন ২৫ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমার রাত। ডাক্তার সুবোধকুমার বসুর আয়োজনে আসর বসেছে। সংবর্ধনার নামে আড্ডা। এই দলটি চা খাবারের নামে, বইয়ের অজুহাতে এমনকি ঝগড়া করবে বলেও জমে যায়। সেবারের অনুষ্ঠানে বেমক্কা সুর ছুটিয়ে দিলেন তিনি। পাঠ করলেন, যদিও সন্ধ্যা নামিছে মন্দ মন্থরে, সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া … আনন্দের কলতান মুহূর্তে
মস্নলান হয়ে উঠল। বিভূতিভূষণ বললেন, ‘বেশি বেশি সংবর্ধনা পেলে মনে হয় কানের কাছে কেউ এসে বলে যাচ্ছে, তোমার সময় ফুরিয়ে আসছে। দ্রুত যেতে হবে। তোমরা আর আমায় এত সংবর্ধনা দিও না।’ কেন মৃত্যুর ছয়দিন আগে অমন ভেবেছিলেন তা নিজেও হয়তো জানতেন না, তবে বিশেষ কিছু নিশ্চয়ই অনুভবে ধরা দিয়েছিল। এর দুদিন বাদেই ধারাগিরিতে নিজের মরদেহ দেখার অভিজ্ঞতা আর তার চারদিন পরই মারা গেলেন বিভূতিভূষণ। সাহিত্যে যেমন করে দেখেছেন, সেভাবেই নিজের মৃত্যুরও একটা অনিঃশেষ রূপ হয়তো পেয়েছিলেন তিনি। এক নভেম্বর তিনি চলে গেলেন। এরপর পাকুড় থেকে বৈদ্যনাথ চ্যাটার্জির নামে একজনের চিঠি আসত ঘাটশিলার বাড়ির ঠিকানায়। সে-চিঠিতে লেখা থাকত, বিপদ কাটেনি। বিভূতিভূষণের মৃত্যুর এক সপ্তাহ বাদে মারা যান তাঁর ছোট ভাই নুটু বিহারী। এর পরও এসেছিল সে-চিঠি, তাতে সতর্কতা ছিল সরে যাওয়ার। একমাত্র সমত্মানকে নিয়ে তখন বিভূতিভূষণের স্ত্রী কল্যাণী ঘাটশিলা থেকে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বৈদ্যনাথ কে, সে-রহস্য আজো অজানা।