আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২১’ তারুণ্যের স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা

‘চাতক বাঁচে কেমনে মেঘের বরিষণ বিনে…’ – লালন শাহের এই অমর সৃষ্টি যখন বাউলশিল্পী শফি মণ্ডলের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল, তখন ভাবছিলাম, সত্যি তো, চাতক এই যে আকাশের পানে চেয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় থাকে, সে কি এমনি এমনি? অবশ্যই নয়, এটা তার সাধনা, তার কর্ম, তার লক্ষ্য। চাতকের মতো মনুষ্য সমাজেও যে-কোনো কাজের জন্য অনুপ্রেরণা, স্বীকৃতি অত্যন্ত প্রয়োজন। তবেই না সে-কাজ গতি পায়, কর্মী-মানুষটি এগিয়ে যায় তার লক্ষ্যে।

গানটি শুনছিলাম এক মহৎ আয়োজনে – আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২১’-এর অনুষ্ঠানে। মহৎ আয়োজন এজন্য যে, বাংলাদেশে শুধু তরুণদের জন্য এমন পুরস্কার প্রবর্তিত নেই বলেই জানি। এদেশে সাহিত্যের নানা শাখায় প্রতিবছরই অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে; কিন্তু নবীন কবি-সাহিত্যিক-গবেষকদের উৎসাহদানের প্রচেষ্টা একমাত্র ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’।

দীর্ঘ তেরো বছরের বিরতিহীন পথ ধরে এবারো চতুর্দশবারের মতো প্রদান করা হয়েছে এ-পুরস্কার।

২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এক মনোজ্ঞ অনলাইন আয়োজনের মধ্য দিয়ে এবারের পুরস্কার-বিজয়ীদের সম্মাননা জানানো হয়। এ-বছর পুরস্কার পেয়েছেন কবিতা বিভাগে সুন্দরবন সিরিজ গ্রন্থের জন্য চাণক্য বাড়ৈ, কথাসাহিত্য বিভাগে বিভা ও বিভ্রম গ্রন্থের জন্য সাদাত হোসাইন এবং প্রবন্ধ-গবেষণা বিভাগে জীবনানন্দের মানচিত্র গ্রন্থের জন্য আমীন আল রশীদ।

কালি ও কলম প্রতিবারের মতো ২০২১ সালের পুরস্কার প্রদানের জন্যও পাঁচটি বিভাগে বই আহ্বান করেছিল। আয়োজকদের বক্তব্য, করোনাকালীন বৈরী সময়েও বই জমা পড়েছিল প্রত্যাশার চাইতে বেশি। কিন্তু বিচারকমণ্ডলী এ-বছর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সাহিত্য এবং শিশু-কিশোর সাহিত্য বিভাগে মানসম্পন্ন বই না পাওয়ায় এ-বিভাগ দুটিতে পুরস্কার দেওয়া সম্ভব নয় বলে সিদ্ধান্ত নেন। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও তাঁদের উদ্দেশে শংসাবচন পাঠের পর এমনটাই জানান বিচারকমণ্ডলীর পক্ষে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। এ-পুরস্কার প্রদানে গঠিত বিচারকমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা হলেন অধ্যাপক বিশ^জিৎ ঘোষ এবং কবি মাহবুব সাদিক।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমরা (বিচারকমণ্ডলী) এ-বছর শিশু-কিশোর সাহিত্য বিভাগে কোনো বইকে পুরস্কৃত করতে পারিনি। কারণ কোনো উপযুক্ত বই আমরা পাইনি। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিভাগেও আমরা কাউকে পুরস্কৃত করতে পারিনি যোগ্য বই না পাওয়ায়।

পুরস্কৃতদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে তাঁরা পথচলা শুরু করেছেন সে-লক্ষ্যে যেন পৌঁছাতে পারেন, সে-আশায় আমরা তাঁদের পথ চেয়ে থাকব। একই সঙ্গে তাঁরা এই পুরস্কারের মর্যাদা কতটা অক্ষুণ্ন রাখতে পারেন তাঁদের কর্মের মধ্য দিয়ে, সেদিকেও আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে। 

কালি ও কলম ২০০৮ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে। প্রথমে সাহিত্যের দুটি বিভাগে পুরস্কারটি প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তী বছরে তিনটি এবং ২০১০ সাল থেকে সাহিত্যের পাঁচটি শাখায় মর্যাদাপূর্ণ এ-পুরস্কার প্রদান করে আসছে কালি ও কলম। আয়োজকদের তথ্যমতে, ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চৌদ্দ বছরে ৫৪ জন লেখক এ-পুরস্কার অর্জন করেছেন।

আয়োজনের শুরুতেই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক কৌশিক শংকর দাশ স্মরণ করেন কালি ও কলমের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং পত্রিকাটির সম্পাদক আবুল হাসনাতকে। কোভিড-১৯ অতিমারিকালে ২০২০ সালে এই দুই বিশিষ্টজনকে হারিয়েছে কালি ও কলম তথা এদেশের সাহিত্য-শিল্প ও সংস্কৃতি জগৎ।

কালি ও কলমের এই আয়োজনে বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রথিতযশা কয়েকজন ব্যক্তিত্ব। আনিসুজ্জামান ও আবুল হাসনাতকে স্মরণের পর সেই গুণিজনদের কথা নিয়ে নির্মিত একটি স্বল্পায়তন ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

এরপর কালি ও কলম পত্রিকা এবং আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২১’ বিজয়ীদের উদ্দেশে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, ফরাসি ভাষাবিদ ও অনুবাদক অধ্যাপক চিন্ময় গুহ। তিনি বলেন, যখন অজানা ধূসরতায় ঢেকে গেছে পৃথিবী তখন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে বইয়ের জাদুলণ্ঠন। দীর্ঘ ১৯ বছরের পথ পরিক্রমায় কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকা একটি ঈর্ষিতব্য আসন অধিকার করে আছে উভয় বাংলাতেই।

‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ প্রসঙ্গে চিন্ময় গুহ বলেন, প্রতিষ্ঠিতদের পাশে তরুণদের সৃজনপ্রতিভাকে এরকম ভালোবাসার মাটিতে বাঁচিয়ে রাখার এমন ক্ষমতা আর কটি পত্রিকার ছিল এই উপমহাদেশে। তারুণ্য তো পূর্বপুরুষের পুনর্মুদ্রণ নয়, তা হলো নতুন জীবনের জাল বোনা। এ সময় তিনি ২০১৭ সালে সম্পাদক আবুল হাসনাতের আমন্ত্রণে এ-পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আসার স্মৃতিচারণ করেন। ২০২১ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে অধ্যাপক চিন্ময় গুহ তাঁর বক্তব্যের ইতি টানেন।

অনুষ্ঠানের প্রাণবন্ত আয়োজন ছিল তিন পুরস্কার বিজয়ীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ খোলামেলা আলোচনা ও তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ।

কবিতা বিভাগে বিজয়ী চাণক্য বাড়ৈ বলেন, পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। কিন্তু এ-মুহূর্তে আমি দুজন মানুষের খুব অভাব বোধ করছি, তাঁরা হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও আবুল হাসনাত। তিনি বলেন, আমার প্রথম কবিতা কালি ও কলমে প্রকাশিত হয় এই দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাত ধরে। তাঁরা থাকলে আমার এ-অর্জন আরো পূর্ণতা পেত। 

আমীন আল রশীদ বলেন, এ পুরস্কার অর্জন করে আমার খুবই ভালো লাগছে। একসময় বেঙ্গল শিল্পালয়ে আমি সাংবাদিক হিসেবে অনেক অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে এসেছি, এবার এলাম অন্য পরিচয়ে, এটা খুবই আনন্দের। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। তিনি আরো জানান, পুরস্কৃত বইটি লেখার সময় তাঁকে যে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক ধকল সহ্য করতে হয়েছে তাতে তিনি মনে করেছিলেন, এমন গবেষণামূলক কাজ আর হয়তো করতে পারবেন না। কিন্তু ‘কালি ও কলম পুরস্কার’ তাঁর মধ্যে এ-ধরনের গবেষণামূলক কাজের প্রতি আরো উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

সাদাত হোসাইন বলেন, আমি লেখক পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে স্টোরি টেলার (গল্পকথক) বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি আসলে গল্প বলতে চাই। লেখার পাশাপাশি অন্য আরো মাধ্যমে গল্প বলা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল স্বীকৃতিই অনুপ্রেরণাদায়ী। লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি তাঁর পাঠক; কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি অন্যরকম উদ্দীপনা জোগায়। সেই জায়গা থেকে এই পুরস্কার পেয়ে উদ্দীপ্ত বোধ করছি।

লেখালেখির অনুপ্রেরণা ও অন্যান্য প্রসঙ্গের আলোচনাকালে আমীন আল রশীদ বলেন, জীবনানন্দের মানচিত্র গ্রন্থটি রচনার ক্ষেত্রে আমার সব পরিশ্রম সার্থক হয়েছে এ-পুরস্কার অর্জনের ফলে। তিনি আরো বলেন, পুরস্কার তো আসলে অর্থমূল্য দিয়ে বিচার করা যায় না। যাঁরা লেখালেখি করেন তাঁরা সবাই জানেন কালি ও কলম পুরস্কারের ওজন। তাই আমি মনে করি, এ-পুরস্কার আমার জন্য শুধু বড় একটা অনুপ্রেরণাই নয়, এটা আমার কনফিডেন্সও (আত্মবিশ^াস) বাড়িয়ে দিয়েছে।

সাদাত হোসাইন বলেন, আমি গল্প লেখার অনুপ্রেরণা পাই জীবন থেকে। তিনি বলেন, সাহিত্যচর্চার জন্য বই পাঠ আবশ্যক। তবে তার চেয়ে অতি-আবশ্যক জীবন-পাঠ করা। জীবনের চেয়ে বড় ঐশ^র্যমণ্ডিত বা সমৃদ্ধ কোনো বই নেই। সাদাত আরো বলেন, আমি যে জীবন যাপন করেছি, যে জীবনকে আমি উপলব্ধি করেছি, যে জীবনের মধ্য দিয়ে আমি বেড়ে উঠেছি, সেই জীবনঘনিষ্ঠতা আমার লেখালেখিতে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

চাণক্য বাড়ৈ বলেন, পৃথিবীর সৌন্দর্য ও রহস্য আমার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা। এছাড়া এ-পৃথিবীতে আমার আপনজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা আমাকে লেখালেখির পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমি ও আমার অনেক বন্ধু স্বপ্ন নিয়ে কবিতার পেছনে ছুটেছি। একটি নতুন শব্দ, একটি নতুন অভিব্যক্তি প্রকাশ করার যে আনন্দ, সে আনন্দই আমাকে কবিতা লিখতে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে।

‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে নবীনদের কতটা প্রভাবিত করছে – জানতে চাইলে আমীন আল রশীদ বলেন, বাংলাদেশে অনেক পুরস্কার দেওয়া হয়, কিন্তু কালি ও কলম পুরস্কারের ব্যাপারে লেখকদের একটা বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এ পুরস্কার মানদণ্ডের বিবেচনায় নবীনদের জন্য একটা বড় উৎসাহের স্থান বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সাদাত হোসাইন বলেন, লেখালেখি করতে গিয়ে আমি সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও অনুৎসাহের শিকার হয়েছি। জীবনভর আমি আমার নানা রকম অতৃপ্তিকে, অপ্রাপ্তিকে পূরণ করতে চেয়েছিলাম স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। কালি ও কলম পুরস্কার ঠিক তেমনিই একটি স্বপ্নের মতো ব্যাপার, যেটা বাস্তবে পূরণ হয়ে আমার হাতে ধরা দিয়েছে, যেটা একটা দারুণ অনুপ্রেরণা।

চাণক্য বাড়ৈ বলেন, ২০০৫ সালে যখন কালি ও কলমে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় মূলত তখনই আমি আমার স্বীকৃতি পেয়ে গেছি। আজ, মানে পুরস্কারপ্রাপ্তি, হচ্ছে তার আনুষ্ঠানিকতা। তিনি আরো বলেন, কবিরা চান পৃথিবীর সুন্দরকে নিজেদের লেখার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে, পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য নয়। তবে পুরস্কার অর্জন অবশ্যই সেই কর্মস্পৃহায় নতুন মাত্রা যোগ করে।

তিন তরুণের সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনার পর বক্তব্য রাখেন আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ এ সারওয়ার। তিনি বলেন, কালি ও কলম একটি অনন্য ও উঁচুমানের সাহিত্য পত্রিকা। তাঁরা সাহিত্য ও শিল্পচর্চার পাশাপাশি নবীন কবি ও লেখকদের উৎসাহদানের জন্য ২০০৮ সাল থেকে এ-পুরস্কার প্রবর্তন করেছেন, সেজন্য কালি ও কলম ধন্যবাদার্হ।

শাহ এ সারওয়ার বলেন, গত বছর থেকে আমরা এ-পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আইএফআইসি ব্যাংক আগে থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এবং বিভিন্ন শাখায় গুণিজনদের পুরস্কার প্রদান করে আসছে। কালি ও কলমের এই পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা (আইএফআইসি ব্যাংক) গর্বিত। এ সময় তিনি আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কারে’র সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। শাহ এ সারওয়ার বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান কালি ও কলমের প্রকাশক আবুল খায়েরকে। এছাড়া তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, পৃষ্ঠপোষক ও গ্রাহক-শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

কালি ও কলমের প্রকাশক আবুল খায়ের তাঁর বক্তব্যে বলেন, উনিশ বছর একটি সাহিত্য পত্রিকাকে একই মাপে ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও আবুল হাসনাতের তত্ত্বাবধানে কালি ও কলম পরিবার সেই অসাধারণ কাজটিই করেছে এবং এখনো করে চলেছে।

তিনি আরো বলেন, আঠারো কোটি মানুষের বাংলাদেশে কালি ও কলমকে কীভাবে অন্তত এক কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, সেটা নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে এবং সেটাই এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

কালি ও কলম পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আবুল খায়ের আইএফআইসি ব্যাংককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি ২০২১ সালে বিজয়ী তিনজনসহ এ পর্যন্ত যাঁরা এ-পুরস্কার অর্জন করেছেন তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনারা (পুরস্কার-বিজয়ীরা) লেখালেখির মধ্যেই থাকবেন। কারণ আপনারা লেখালেখির মধ্যে না থাকলে সাহিত্যজগৎ হারিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা এ-পুরস্কার দিয়ে আসছি। কালি ও কলম পুরস্কারের জন্য তরুণদের বেছে নেওয়ার কারণ হলো তাঁদের ওপর আমাদের আস্থা এবং ভরসা। তরুণরা অত্যন্ত মেধা, মনীষা ও সৃজনশীলতার ওপর নির্ভর করে কাজ করে যাচ্ছেন। নতুন নতুন ধারা তাঁরা সৃষ্টি করছেন। তাঁদের এ-প্রয়াস আমাদের আনন্দ দেয়।

কালি ও কলমের শুরুর কথা বলতে গিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, মানসম্পন্ন সাহিত্য জার্নালের অভাব পূরণের জন্য কালি ও কলম সৃষ্টি হয়েছিল। আঠারো বছর ধরে কালি ও কলম সেই কাজটিই করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যাঁরা সাহিত্যচর্চা করেন তাঁদের সমাবেশ ঘটাতে পেরেছে কালি ও কলম। মেধা ও মনীষার একটা সমন্বয় এতে সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও আবুল হাসনাতকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তিনি বলেন, কালি ও কলমের জন্য যে-পথ তাঁরা দেখিয়ে গেছেন, যে-উদ্যোগ তাঁরা নিয়েছিলেন, সে-বিষয়গুলো আমরা ক্রমাগত অনুসরণ করে যাচ্ছি।

‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ আয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তরুণ লেখকদের উদ্দেশে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আপনারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে সবসময় অগ্রাধিকার দেবেন। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের যে-বিষয়গুলো শিখিয়েছে, আমাদের দেশ গড়ায় ও সংস্কৃতির বিকাশে যে-অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সেগুলো জীবনে ধারণ করলে আপনারা ঐতিহ্য থেকে কখনোই দূরে সরে যাবেন না। বিশ^কে ধারণ করতে হবে নিজেদের শর্তে। আমরা অন্যের সঙ্গে আদান-প্রদান করব, কিন্তু নিজ ভূমি যেন আমাদের অধিকারে থাকে। এই ভূমির ভাষা, ঐতিহ্য, সামাজিক সংহতি আমরা যেন কখনো বিনষ্ট হতে না দিই। একটি সত্যিকারে সুন্দর বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে লেখনীর মাধ্যমে তরুণদের এই কথাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২১’-এর প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে।

দ্বিতীয় পর্বে গান পরিবেশন করেন বাউলশিল্পী শফি মণ্ডল। ‘যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান জাতিগোত্র নাহি রবে, এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে …’ লালনের এই অমর বাণী দিয়ে শুরু হওয়া সংগীতায়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নবীন লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী আয়োজন আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২১’। ছবি : বেঙ্গল ফাউন্ডেশন