আবুল হাসনাত : প্রগতিশীল বাঙালির অহংকার

গত ১ নভেম্বর, ২০২০  বাংলা সংস্কৃতি-জগতে একটি নক্ষত্রপতন ঘটে গেল। পঁচাত্তর বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন বাংলা সাহিত্য তথা সংস্কৃতি জগতের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব আবুল হাসনাত।

আবুল হাসনাত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্তম্ভপত্রিকা কালি ও কলমের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। কালি ও কলম ছাড়াও তিনি গণসাহিত্য, সংবাদ সাময়িকীসহ আরো বেশ কয়েকটি পত্রপত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। কিন্তু সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। এককথায় বলতে গেলে, মানুষটি ছিলেন বাংলা-সংস্কৃতির অন্যতম অভিভাবক তথা সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালির বিবেক।

আজীবনকাল আপাদমস্তক বামপন্থী এই মানুষটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ক্ষেত্রে অনেক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে, বাঙালি জাতির ওই মহাসংকটকালে, এই মানুষটিই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে সক্রিয় রাখার গুরুদায়িত্বটি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছিলেন। এছাড়াও, ১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী-মেলায় তাঁর অনন্য সৃষ্টি লাল গোলাপের জন্য অসংখ্য সংস্কৃতিপ্রেমী বিদগ্ধজনের বিপুল প্রশংসা লাভ করেছিল ।

আবুল হাসনাত কেবল অজস্র মননশীল প্রবন্ধই লেখেননি, কেবল একাধিক মননশীল পত্রিকা সম্পাদনাই করেননি, তিনি ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণির কবিও। দুই বাংলার প্রথম শ্রেণির পত্রপত্রিকাগুলিতে তাঁর অসংখ্য মননশীল কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কিশোরদের জন্যও তিনি অনেক লেখা লিখেছেন। এছাড়া তিনি একটি উদ্দীপক আত্মজীবনীও লিখে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা অনেক। তার মধ্যে রয়েছে চারটি কাব্যগ্রন্থ এবং একাধিক কিশোর-সাহিত্য ও প্রবন্ধের বই।

সবচেয়ে বড় কথা, তিনি দুই বাংলার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের ছিলেন একান্ত আপনজন। প্রগতিশীল বাঙালি-সত্তা তাঁর কাছে চিরটা কালই এক স্বতন্ত্র অর্থ বহন করত। সেই কারণেই বাঙালি জাতির মধ্যে কোনো ধরনের মৌলবাদ ছিল তাঁর দু-চোখের বিষ। সেই কারণেই, দুই বাংলা জুড়ে যে-কোনো ধরনের মৌলবাদের বিরুদ্ধে আজীবনকাল চলেছিল তাঁর আপসহীন লড়াই। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আবুল হাসনাতের চলে যাওয়ায় বাংলা সংস্কৃতি-জগতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এতদ্বারা প্রগতিশীল বাঙালি-সমাজ তাঁদের একজন একান্ত আপনজনকে হারালেন।