আমাদের তখন খুব ইচ্ছে হতো গান গাইবার

আমাদের তখন খুব ইচ্ছে হতো গান গাইবার। কিন্তু গান তো দূর, আমরা ফিসফিসিয়ে

কথা বলি। আমরা ততদিনে জেনে গেছি, বাতাসেরও কান আছে। আমাদের ঘরের

পেছনে বৃক্ষসারি। সেখানে ঝরাপাতা। রাত হলে সেখানে পাতা ভাঙার শব্দ। বুটের শব্দ

আমাদের বুকে কম্পন তোলে।

তবু আমরা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ খুলি। এয়ার এইড কানে লাগিয়ে ‘চরমপত্র’

আর রক্ত-উত্তাল করা গানগুলো শুনি। মাঝে মাঝে হুইসেল আমাদের কাঁপিয়ে দেয়।

আমাদের কাঁপিয়ে দেয় অলিখিত নিষেধাজ্ঞার ঢেউ ।

মর্টারের শেলে, প্রচণ্ড নিনাদে কেঁপে ওঠে মাটি। মনে হয় এই বুঝি ধসে পড়লো সব।

তবু বুকের ভেতরে বরাভয়। আমাদের ভাইয়েরা এসে গেছে। সারপার বর্ডার থেকে তারা

শেল ছুড়ছে অবিরাম। গেরিলার ছদ্মবেশে তারা নেমে গেছে যুদ্ধে।

আমরা স্বপ্ন দেখি ভাত, কাপড় আর আশ্রয়ের। আমরা স্বপ্ন দেখি মৌলিক অধিকারের।

আমরা ভাবি স্বৈরতন্ত্রের বুট নেমে যাবে। আমাদের বুকে আর কেউ গুলি চালাবে না।

স্বাধীন সার্বভৌম দেশে আমরা আমরাই হবো। আমাদের আর কেউ চোখ রাঙাবে না।

আমরা কথা বলব আনন্দে, নির্বিঘ্নে। গণতন্ত্রের পালে হাওয়া লাগবে দুর্বার ।

আমরা ইচ্ছামতো গলা ছেড়ে গান গাইব, ‘মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে …’।