আহীর আলমের বাম পা

আর ইকটু ইকটু …শরীরের নিচের অংশ খাটের ওপর রেখে কোমরের ওপরের অংশ শূন্যে ভাসিয়ে পাশের টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা ধরার চেষ্টা করছেন আহীর আলম। বাঁ হাতে মাথার কাছের খাটের বাতা ধরে ঝুঁকে ডান হাত বাড়াচ্ছেন পানির গ্লাসটা ধরার জন্য। বারবার চেষ্টা করছেন; কিন্তু হাফ ইঞ্চির জন্য জলভরা জগটা পাচ্ছেন না নাগালে। চেষ্টা করে নাগালে না পাওয়ায় তৃষ্ণা আরো বাড়ছে। মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কফ জমা হচ্ছে। শিরশিরে একটা অস্বস্তি এবং ভয় গ্রাস করছে আহীর আলমকে, আমি পানি খেতে পারবো না? পানি না খেয়েই মারা যাবো?

বাসা থেকে সিলভিয়া আখতার কখন গেল? তাকান ঘড়ির দিকে, বিকেল সাড়ে চারটায় গেছে। এখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। দুপুরের দিকে বাসা ছেড়েছে স্ত্রী সিলভিয়া আখতার, কন্যা বাসনা আর পুত্র অবিরাম। তিনজনে মিলে গেছে বেড়াতে মাত্র দুদিনের

জন্য। গতকাল দুপুরে খাবার সময়ে সিলভিয়া আখতার কৌশলে প্রশ্ন করেছিল, তুমি দুটো দিন একা একা থাকতে পারবে না?

মুখের মধ্যে গুঁড়ো মাছের সঙ্গে ভাতের লোকমা চিবুতে চিবুতে তাকায় সিলভিয়ার দিকে, একা থাকবো মানে?

আহীর আলমের মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের থালার ওপর চোখ রাখে সিলভিয়া, ওরা বলছিল অনেকদিন নানার বাসায় যায় না।

বেশ তো যাও না – সবাই মিলে ঘুরে আসো দু-চারদিন, সহাস্যে বলেন আহীর আলম।

কিন্তু তুমি পা নিয়ে হাঁটতে পারো না, কী করে কী করবে বাসার মধ্যে একা একা … অনেকটা বিষণ্ন গলা সিলভিয়া আখতারের।

আরে না, আমার কোনো সমস্যা হবে না। ঘুরে আসো দুদিন – বাসার মধ্যে একজন রুগীর সঙ্গে থাকতে থাকতে ওরা বোরিং হয়ে গেছে, আমার জন্য চাল আর তরকারি রান্না করে ফ্রিজে রেখে যাও। আমি তো একটু একটু হাঁটতে পারি বাসার মধ্যে, গরম করে খেতে পারবো। আর গোপালের মা তো আছেই …

তুমি কিছু মনে করবে না তো! বড় কাতর দৃষ্টিতে তাকায় সিলভিয়া আখতার।

আরে না, পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করেন আহীর আলম। আমি তো জানি, আমাকে নিয়ে তোমরা একটা ঘেরাটোপে আটকে আছো। যাও, ওদের নিয়ে তুমি দুদিন ঘুরে এসো। একটু রিক্রিয়েশন দরকার তোমাদের। আর যাই হোক, বোঝার সঙ্গে বেশিদিন একনাগাড়ে থাকা যায় না।

খাওয়াশেষে ভাতের থালা নিয়ে উঠে যেতে যেতে তীর্যক চোখে তাকায় সিলভিয়া, বাজে কথা না বললে ভালো লাগে না?

খাওয়াশেষে হাতের আঙুল চাটতে চাটতে আপনমনে হাসেন আহীর আলম, সত্য তো সত্য। জানি তো আমাকে নিয়ে তোমরা কতটা অসুস্থ দিন যাপন করছো, বিরক্তির উৎপাদন হচ্ছে, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছো – যাও দুটো দিন একটু হাওয়া-বাতাস লাগিয়ে এসো। আমি থাকি আমার মতো।

পরদিন দুপুরের খাবার খেয়ে তিনজনে বের হয়ে যায় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের ভাড়া বাসা থেকে। দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় জানিয়ে বাঁ পায়ের ওপর কম ভর দিয়ে সামান্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসেন আহীর আলম। রুমের মধ্যে, বাসার মধ্যে হঠাৎই নিস্তব্ধতা নেমে আসে, কেউ নেই, কোথাও নেই। মনে হচ্ছে বাসা নয়, আহীর আলম দাঁড়িয়ে আছেন খোলা এক মাঠে। চারদিকে উড়ছে কাক আর চিল। ঘাসের সবুজ থেকে ভেসে আসছে রিমঝিম গন্ধ। শুনছেন অগণিত মানুষের কোলাহল। তিনি আবেগে চক্ষু মুদিত করলেন, মরমে পশিয়া যাচ্ছে সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠের ঘাস ফড়িংয়ের ওড়াউড়ির নিটোল শব্দমালা …। শুনছেন শ্রাবণবৃষ্টির একটানা গল্প … চক্ষু খুললেন, দেখলেন সব ফাঁকা। বসে আছেন বিছানার ওপর পরিত্যক্ত লবণাক্ত থালার মতো, বিষাক্ত শরীরে।

শুয়ে পড়লেন বিছানার ওপর। ছাড়লেন টিভি। টিভিতে চলছে সিনেমা। রাজ্জাক-ববিতার সাদা-কালো ছবি – অনন্ত প্রেম। গত শতকের সত্তরের দশকের ছবি; কিন্তু ভীষণ দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। অসম্ভব জনপ্রিয় একটা গান ছিল – ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই …. সুরকার ছিলেন আজাদ রহমান। শিল্পী ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন ও খুরশীদ আলম। এখন কেউ হলে গিয়ে সিনেমা দেখে না, দেখে হাতের মোবাইলে বা বাসার টিভিতে। দেখতে দেখতে চলে এলো বিজ্ঞাপন বিরতি। বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই অন্য দেশ থেকে বানিয়ে এনেছে কর্তৃপক্ষ! একটা স্বাধীন দেশ, বিজ্ঞাপন বানানোর সকল উপকরণ আছে, টেকনিশিয়ান আছে – তারপরও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এই দেশটাকে ভাগাড়ে পরিণত করে চলেছে। দেখার কি কেউ নেই?

আহীর আলম রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লেন। ডান পায়ের সঙ্গে বাঁ পা ধীরে ধীরে তুলে বিছানার ওপর রাখলেন। ব্যথাটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে বাঁ পায়ের নিচের দিকে। মাসখানেক আগে ব্যথাটা ছিল হাঁটুর মাঝবরাবর। মনে হতো, বাঁ পায়ের মাঝখানের ভেতরের অংশটা জ্বলে যাচ্ছে। পা-টা কেউ বাটা মরিচ আর হলুদের বাটনার মতো বাটছে, কাউকে বলা যাচ্ছে না। কেবল দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যান আহীর আলম। ওষুধ খাচ্ছেন, খুব একটা কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না; কিন্তু খেতে হচ্ছে, খাচ্ছেন। গরম সেঁক দিতে বলেছেন ডাক্তার, দিচ্ছেন। যখন সেঁক দিচ্ছেন, দুই-তিন ঘণ্টা ভালোই যায়, ব্যথাটা কমে গেলেও হাড়-মজ্জার মধ্যে শিরশিরে একটা অনুভূতির আসা-যাওয়া অনুভব করতে পারছেন।

আমি কি কোনোদিন হাঁটতে পারবো না স্বাভাবিকভাবে? বোঝা হয়ে যাচ্ছি? আহীর আলমের চোখের কোণে পানি জমে। আহ, কেন সেই ব্যথাটা পেয়েছিলাম? শরীর তো একটা যন্ত্রের কারখানা। গরু জবাই হলে আহীর আলম লক্ষ করেছেন – গরুর শরীরের মধ্যে যেসব যন্ত্র থাকে, সবই নিশ্চয়ই আছে মানুষের মধ্যেও, আমার শরীরের মধ্যেও। মগজটা গরুর বুদ্ধিমান নয়, ফলে মানুষের মতো প্রাণীদের পোষ মেনে হালচাষ করতে হয়, আবার পেটের উপাদেয় খাবারের মেন্যুও হতে হয়। আরো একটা পার্থক্য গরুর সঙ্গে মানুষের – গরুর চারটেই পা, মানুষের দুই পা দুই হাত। দুই হাতেই সব অপকর্ম করে কিন্তু, উহু … সেই ব্যথাটা কেন পেয়েছিলাম? আর্তনাদে আর আর্তনাদে থেঁতলে যেতে থাকেন।

বিক্ষিপ্ত অসুস্থ ভাবনার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। হাত থেকে পড়ে যায় টিভির রিমোট। সন্ধ্যার একটু আগে তীব্র শব্দে মোবাইল বাজলে ঘুম ভাঙে – হ্যালো? মোবাইল কানে নেন আহীর আলম।

কী করছিলে? ওপাশে সিলভিয়া আখতার।

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

এখন ওঠো, এক কাপ চা খাও –

ঠিক আছে, ওরা … শব্দটা উচ্চারণ করে থেমে যান আহীর আলম। ওপাশে বুঝে যায় সিলভিয়া আখতার, গত আট-নয় মাসে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। বাসনা মেয়েটা মাঝে মধ্যে বাপের কাছে বসে, ওষুধপথ্য এগিয়ে দেয়, খোঁজখবর রাখে; কিন্তু ছেলেটা একদম একগুঁয়ে। নিজের মতো থাকে, ডাকলেও কাছে যায় না। হাসপাতালে দেখতে যায়নি বাপকে।

হ্যাঁ, ওরা ভালো আছে! ফোন রেখে দেয় সিলভিয়া আখতার।

বুঝতে পারেন আহীর আলম, পালিয়ে

 বেঁচে গেছে স্ত্রী। মনে মনে হাসেন – মানুষ কত ক্ষুদ্র নিজের সংসারে! তিনি বিছানা থেকে খুব ধীরে ধীরে নামলেন। বাঁ পা আরো ভারী মনে হচ্ছে। ডান পা ফেলে বাঁ পা ফেলতে গেলেই গোটা বাঁ পা – কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত মাংসপেশিগুলো প্রতিবাদ মিছিলে ভারী হয়ে যায়। তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে পায়ের মাংস থেকে সারা শরীরের মাংসপিণ্ডের দোকানে দোকানে। দাঁতে দাঁত ঘষে পাশের বাথরুমে ঢোকেন তিনি। অনেক যন্ত্রণায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব সেরে মুখে পানি দিলেন। বাথরুমে ঝোলানা গামছায় মুখ-হাত-পা মুছে আবার ফিরে এলেন সেই যন্ত্রণা সয়ে সয়ে বিছানায়। দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে আহীর আলম শরীর রাখলেন বিছানার ওপর।

এবং শুয়ে পড়লেন বিছানার ওপর। পা সোজা করতে গিয়ে বুঝতে পারলেন, বাঁ পা শরীরের সঙ্গে নেই। শরীর থেকে বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা একটা ব্যথার রাজ্য নির্মাণ করেছে। সোজা শুয়ে আহীর আলম অনেকক্ষণ নিঃশব্দে ব্যথাটা সইয়ে নিলেন। অনেকক্ষণ হলো, পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। তাকিয়ে দেখলেন হাতের কাছে পানির জগ বা গ্লাস নেই। শরীর নিয়ে উঠতে হবে, হাত বাড়ালেও পেতে পারেন পানির জগ …। দূরের টেবিলে পানির গ্লাস আর জগ দেখে পানি পানের ইচ্ছেটা তীব্র হলো।

ব্যথার মধ্যেও হাসি এলো – দুঃসময়ে পানির তৃষ্ণা!

আর একটু – আধা ইঞ্চি হাত গেলেই পানির জগের নাগাল পাওয়া যাবে। অনেক কষ্টে আহীর আলম ডান হাতের সঙ্গে শরীরের অর্ধেক খাটের বাইরে নিয়ে এলেন, পানির জগটা ধরলেন, সঙ্গে সঙ্গে গোটা শরীর ছুটে নিচে পড়ে গেলেন মৃত কুমিরের গতিতে। একই সঙ্গে পড়লো পানিভরা কাচের জগটা। বাঁ পায়ে আবদ্ধ যন্ত্রণা মুহূর্তের মধ্যে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লো। মনে হচ্ছে, গোটা শরীরটা অসাড় হয়ে গেছে। শরীরজুড়ে মাংস আছে, রক্ত আছে, হৃৎপিণ্ড আছে, করোটি আছে; কিন্তু কারো সঙ্গে কারো সম্পর্ক নেই। সব মাংসের অস্তিত্ব শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সেই আলাদা আলাদা মাংসের স্তূপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জগের সমুদয় জল আর ভাঙা জগের টুকরো টুকরো কাচ।

হি হি হি …। শব্দের উৎসের দিকে তাকালে তিনি দেখতে পান জলে ভিজে থাকা জগের টুকরোগুলো হাসছে। কাচভাঙা জগের টুকরোগুলোকে হাসতে দেখে তিনিও হাসতে শুরু করেন, নিঃশব্দে। আহীর আলমকে হাসতে দেখে ভাঙা কাচের টুকরোগুলো মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।

অসহ্য অসহায়ত্বের মৌনতার গিরিসংকটে বসে তিনি বসে বসে কাঁদতে শুরু করলেন। কান্নায় কোনো শব্দ নেই, কেবল চোখের দুই কোণ বেয়ে নেমে আসছে অশ্রু। জগের পানি ছড়িয়ে পড়ছে গোটা মেঝেতে। মাঝখানে বসে আছেন আহীর আলম। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। নিঃশব্দে বসে আছেন। কতক্ষণ বসে ছিলেন, হিসাবে নেই। বুঝলেন, এভাবে থাকলে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসতে পারে। আহীর আলম অনুভব করলেন, পানির তৃষ্ণা নেই। আবার হাসি পায় আহীর আলমের, পানির মধ্যে বসে থাকতে থাকতে তৃষ্ণা চলে গেছে? নাকি জীবনের পরিধি আমার সঙ্গে পরিহাসের দাবা খেলছে? যাই খেলুক, আমাকে উঠতে হবে। তিনি উঠতে চেষ্টা করলেন মেঝে থেকে। কৌশল অনেকটা জেনে গেছেন গত আট-নয় মাসে। আগে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে কোমরটা উঁচু করে অর্ধেক দাঁড়ান, কোমর বাঁকা করে। সেভাবে অনেক সাধনায় নিজেকে বিছানার ওপর নেওয়ার আগে দাঁড় করান। বালিশের কাছে রাখা গামছা দিয়ে শরীর ভালো করে মুছে, জামা-প্যান্ট পাল্টে বিছানার ওপর বসলেন। তীব্র খিদে পেটের মধ্যে জ্বলে ওঠে। আহীর আলম অনুভব করলেন, বাসায় একা থাকলে খিদেটা পেয়ে বসে পেল্লায়। আবার নামা, ফ্রিজ খোলা, গরম করা!

তিনি তাকালেন পাশের রুমের ডাইনিং টেবিলটার দিকে। টেবিলের ওপর দুপুরের খাবার এখনো ঢাকা আছে, ওসব দিয়ে রাতের খাবারটা চালিয়ে দেবেন। কিন্তু এখন বাজে মাত্র সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা, এখনই ভাত খাবেন রাতের? রাতের ভাত তো খান দশটায়, এগারোটায় ….

আবার মোবাইল বাজে, তাকিয়ে দেখেন স্ত্রী সিলভিয়া আখতারের ফোন। কানে নিয়ে বললেন, হ্যালো?

আব্বা, আমি বাসনা।

বলো মা।

তুমি কী করছো?

শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছি।

তোমার পায়ের ব্যথা কেমন?

আগের চেয়ে কম।

কম?

হ্যাঁ মা। সারাটা সময় তো শুয়ে আছি, বাঁ পায়ের নড়াচড়া নেই, সেই কারণে হয়তো ব্যথা কম।

ডাক্তার তো তোমাকে সেটাই বলেছে, নড়াচড়া না করতে। তুমি কি শোনো? চলো তোমার ইচ্ছেমতো। তুমি তো ওষুধও ঠিকভাবে খাও না। দূরালাপনে মেয়ের বকাটা মধুর স্বাদে গ্রহণ করলেন আহীর আলম। আত্মজা কতদিন পরে এমন করে অনুযোগ করলো! বাসায় থাকলে চোখের ওপর  দেখে,  অনুযোগ  করার  সময় কোথায়? বুকের মধ্যে এক ধরনের চিত্তহরা শোক উথলে ওঠে। প্রাণ খুলে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে; কিন্তু নিজেকে প্রবলবেগে সামলে নিলেন, আর কিছু বলবি?

তোমার তো খিদে লাগে বাসায় থাকলে। খাটের বাঁ পাশে নিচের দিকে, হাতের নাগালে টিপয়ের ওপর আপেল আর বিস্কিটের বয়াম আছে। খিদে লাগলে খেয়ে নিও। আর সমস্যা হলে ফোন

দিও – আমরা চলে আসবো।

না, তোমাদের চলে আসতে হবে না। বেড়াও – আমার কোনো সমস্যা নেই। এভাবে চুপচাপ থাকলে আমি অল্পদিনের মধ্যে ভালোও হয়ে যেতে পারি, গলায় আশাবাদ ফুটিয়ে বলেন আহীর আলম। তোমরা প্রয়োজন মনে করলে আরো দু-চারদিন পরে এসো।

তুমি থাকতে পারবে?

পারবো! পায়ের ব্যথাটা ধীরে ধীরে কোমর থেকে শরীরের গহিনে চোখে না দেখা আজদাহা সাপের শত্রুতায় প্রবেশ করছে। বুঝতে পারছেন আহীর আলম, আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্যথাটা করোটিতে পৌঁছে যাবে।

জানো পাপা, আগামীকাল আমরা শীতলক্ষ্যা নদীতে বেড়াতে যাবো। বাসনার গলায় উল্লাসমাখা আনন্দ। আহারে মেয়েটি কতোদিন এমন করে বাইরে বেড়াতে পারেনি। বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে আহীর আলমের, তাই?

হ্যাঁ পাপা।

কে কে যাবে?

আমি, অবিরাম, শ্রেষ্ঠা, রোজা, অন্তু ভাইয়া, অন্তু ভাইয়ার বউ, জাদু, ছোট

মামা …

তোমাদের মা যাবে না?

যাবে তো।

ওকে ধরে রেখো। তোমার মা পানি খুব ভয় পায় –

আচ্ছা!

তুমিও সাঁতার জানো না, ট্রলারের পাশে যাবে না।

ঠিক আছে, যাবো না – ফোন ছেড়ে দেয় বাসনা।

আহীর আলম ফোন ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেন। মেয়ে তবু ফোন দিয়েছে, বাপের খবর নিয়েছে; কিন্তু পুত্র কি নেবে? একটি বার মনেও করবে না। অবশ্য মনে করাটাও কি জরুরি? কী দরকার? খবরহীন খবর হয়ে থাকাও একটা জীবন। সবার কী খবর হয়? প্রতিদিন রাস্তাঘাটে বনে-বাদাড়ে কত মানুষ মারা যায়? কে খবর রাখে? রাখারই বা দরকার কী? খবর রাখতে হবে – এমন দিব্বি কে দিয়েছে? খবর না নেওয়াও একটা খবর!

আহীর আলম নুয়ে বিছানার নিচ থেকে দুটো আপেল তুলে খেতে শুরু করেন। বিস্কিট খেলে পানি খেতে হবে। এখন কোথায় পাবেন পানি? আপেলের মধ্যে রস আছে, পানির দরকার হবে না। তিনি একটা আপেল খেতে খেতে আবার টিভি ছাড়েন। টিভিতে খবর দেখাচ্ছে – চুয়াডাঙ্গায় জমি ভোগ করার জন্য কিভাবে ছোটভাই, ছোটভাইয়ের স্ত্রী, ওদের চার ও তিন বছরের দুটি সন্তানকে একসঙ্গে হত্যা করে নিজেদের রান্নাঘরের মেঝে খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে – ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষ, পুলিশ। টিভির ক্যামেরায় দেখাচ্ছে খুনি বড়ভাইয়ের মুখে অনেক বড় বড় দাড়ি, মুখখানা গোলাকার, চোখ দুটো ভাবলেশহীন – খুন হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর পক্ষে কাঁদারও কেউ নেই। গ্রামের মানুষেরা বিষাদগ্রস্ত। খুনের সঙ্গে জড়িত বড়ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই ছেলে পলাতক। নিশ্চয়ই পুলিশের জালে ধরা পড়বে। সম্ভবত কোনো খুনের দায় নিয়ে এই প্রথম কোনো নারী পলাতক!

মানুষ কবে প্রথম মানুষ খুন করেছে? আহীর আলম মনে মনে প্রশ্ন করলেও উত্তর পাওয়া কঠিন। ইতিহাসেও কোনো নজির নেই। আপেল দুটি খাওয়ার পর একটু সুস্থির লাগে আহীর আলমের। তিনি টিভি দেখতে দেখতে আবার শুয়ে পড়েন। শুয়ে টিভি দেখতে দেখতে রাত দশটা বাজে। ভাত খেতে উঠতে হবে; কিন্তু বাঁ পায়ের যন্ত্রণা মনে করে চুপচাপ শুয়ে থাকেন। টিভিটা বন্ধ করে দিলেন। হিসাব বা

যোগ-বিয়োগ করার চেষ্টা করছেন – ব্যথা সহ্য করে ভাত খাওয়া ভালো, নাকি না খেয়ে শুয়ে থাকা ভালো? হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারেন না; কিন্তু পেটের মধ্যে ক্ষুধা ক্রমশ জেগে উঠছে। ক্ষুধা নিজেই একটা খুনি। মানুষের যদি ক্ষুধার ব্যাপারটা না থাকতো, জগতের অনেক সমস্যারই সৃষ্টি হতো না, উঠে বসতে বসতে আহীর আলম ভাবেন, আমি কী দার্শনিক হয়ে যাচ্ছি!

বিছানা থেকে নেমে, বাঁ পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে এলেন খাবারের টেবিলের কাছে। ছোট গামলায় ভাত, ঢাকনা তোলার সঙ্গে সঙ্গে একটা বিদ্ঘুটে গন্ধ পেলেন আহীর আলম। বুঝতে পারলেন, ভাতটা নষ্ট হয়ে গেছে। ছোট মাছের সঙ্গে শাকের তরকারিটাও …। উচিত ছিল দুপুরে খাওয়ার পর সব ফ্রিজে তুলে রাখা; কিন্তু সিলভিয়া আখতার কিংবা মেয়ে কেউ রাখেনি। আবার কান্না পাচ্ছে – টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আহীর আলম প্রাণপণে নিজেকে সহ্য করে নিচ্ছেন, না আমি কাঁদবো না। একবেলা না খেলে কী হয়? সিরিয়ায়, মিয়ানমারে, প্যালেস্টাইনে, ইয়েমেনে কত মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে আছে – কণ্ঠার হাড় জেগে গেছে না খেয়ে …। একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো অনেক বছর পর, বসনিয়া হারজেগোভিনায় সার্বরা কয়েক হাজার মানুষ একটা ক্যাম্পে আটকে রেখেছে, পরনে সামান্য কাপড় সেই সাদা চামড়ার মানুষগুলোর। অনেকদিন না খেতে পেয়ে বুকের হাড়, কণ্ঠার হাড়, পেটের হাড় বের হয়ে গিয়েছিল … লোকগুলো নিষ্প্রাণ পাথুরে চোখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছিল। সেই চোখের দিকে তাকালে সভ্যতাকে ঘৃণা করা ছাড়া উপায় থাকে না।

আবার মোবাইল বাজে। আহীর আলম অনুমান করেন, সিলভিয়া আখতারের ফোন। ফোনটা ধরবেন কি ধরবেন না ভাবতে ভাবতে ফোন শেষ। তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন; কিন্তু নিশ্বাস শেষ করতে পারেন না, আবার ফোন ডাকতে শুরু করে। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবার বিছানার কাছে গেলেন। ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজের অনুমান মেলালেন, সিলভিয়ার ফোন।

হ্যালো।

কী করছো? সিলভিয়ার গলায় হালকা সুখের আমেজ। বাপের বাড়ির কাছে দুই বোনের শ্বশুরবাড়ি। সিলভিয়া আখতার বাপের বাড়ি গেলে ওই দুজন হাজির হয়ে যায়। সঙ্গে ছোটভাই – জমে ওঠে গল্প আর আড্ডা। সেই আড্ডার পরিবেশ থেকে ফোন করেছে সিলভিয়া, বুঝতে পারেন আহীর আলম।

এই মাত্র খেলাম।

ও খেয়েছো?

হ্যাঁ খেলাম।

সব গরম করে খেয়েছো?

গরম? হ্যাঁ তুমি তো জানো আমি ফ্রিজের খাবার গরম না করে খেতে

পারি না।

ঠিক আছে, বাকি খাবার ফ্রিজে রেখে দিও।

রেখে দেবো।

ওষুধ খেয়েছো?

মাত্র তো ভাত খেলাম, ওষুধ একটু পরে খাবো।

ঠিকাছে! শোনো, বাসনা বলেছে না, আমরা শীতলক্ষ্যা নদীতে যাচ্ছি Ñ

হ্যাঁ শুনেছি। সাবধানে থেকো।

ঠিক আছে।

ওদিকে আড্ডা চলছে। সেই আড্ডার মধ্যে মনে করে ফোনে স্ত্রী খবর নিয়েছে, অনেক বড় ঘটনা! হাসেন আহীর আলম, খবর না নিলে বা কী করতে পারতাম? কেউ খবর না নিলে কি বাড়াবাড়ি করা যায়? আমি অসুস্থ, কিন্তু চারপাশের মানুষ কি অসুস্থ? আমি আমার অসুখ দেখতে পাচ্ছি, ওরা কেন দেখতে পাচ্ছে না? তিনি আবার বিছানায় শুয়ে পড়েন। শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করেন। রুমের লাইটও অফ করেন বিছানায় রাখা সুইচ টিপে। গোটা বাসাটা অন্ধকারে ডুবে যায়। অনেকদিন পর আহীর আলম বাসায় একা। মনে হলো, নীরব নিস্তব্ধ কবরের মধ্যে ডুবে আছেন। কবর কি এমন অন্ধকারে মোড়ানো? নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড় হয়। তিনি বাঁ পা-টাকে সোজা করে ডান পা-টাকে বাঁকা করে মোড় ফিরলেন। ফিরেই দেখলেন বালিশের পাশেই ক্ষুধা এবং অন্ধকার গলা ধরাধরি করে শুয়ে আছে। দুজনার মুখে তীক্ষè ছুরির ধারালো হাসি। সেই ধারালো হাসি নিয়ে ক্ষুধা এবং অন্ধকার আহীর আলমকে আলিঙ্গন করতে আসছে। আলিঙ্গনের কুৎসিত আঘাতে ঘুমিয়ে গেলেন তিনি।

সকালের অনেক পরে ঘুম ভাঙতেই আহীর আলম নাকে একটা সূক্ষ্ম গন্ধ পেলেন। কিসের গন্ধ? চারদিকে তাকালেন। না, এই গন্ধ ইলেকট্রিক তার পোড়ার গন্ধ না। বাইরে বা দূর থেকে গন্ধটা আসছে না, গন্ধটা আসছে বিছানা থেকে? বিছানা থেকে? হতভম্ব আহীর আলম? বিছানা থেকে এমন গন্ধ? তিনি শরীরের ওপর রাখা পাতলা কাঁথা সরিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে গন্ধটা বাড়লো আরো। বুঝলেন গন্ধটা আসছে বাম পায়ের নিচের গোড়ালি থেকে। জানালা দিয়ে বাইরের ঝকঝকে রোদের দিকে দেখলেন; কিন্তু মুখের ভেতরটা তিক্ততায় ভরে আছে। শরীর ও মন একত্রে ক্ষুদ্র বালুকণার গতিতে ঝরে ঝরে যাচ্ছে, তিনি ক্রমশ অশরীরী হয়ে যাচ্ছেন? শরীরে মন নেই, মনে শরীর নেই। তিনি হালকা পালকের শরীরে বিছানার ওপর যাবতীয় ক্লেদ আর ভারাক্রান্ত মাংসের স্তূপের মতো বসে আছেন। বুঝতে পারছেন, বাঁ পায়ের গোড়ালি বা নিচের দিকে কোথাও পচন ধরেছে।

আহীর আলম নিজের ডান গালে ডান হাতে চটাস শব্দে একটা থাপ্পড় দিলেন – হ্যাঁ, বেঁচে আছি; কিন্তু এ কেমন বেঁচে

থাকা? উহু! প্রচণ্ড ব্যথা পেলেন নিজের ডান গালে এবং ডান হাতে। বাঁ পা নাড়াতে

 চাইলেন; কিন্তু কয়েকশো মণ ভারী পাথরের ওজনে বাঁ পা বিছানার ওপর বসে গেছে। বাথরুমের চাপ পেয়েছে প্রচণ্ড, দাঁত ব্রাশ করে মুখটা ধোয়া দরকার। কিন্তু কিভাবে নামবেন তিনি খাট থেকে?

বাথরুমের প্রবল বেগের কারণে দাঁতে দাঁত চেপে নিচে ডান পা-টা বাড়িয়ে, শরীর নুইয়ে দুই হাতে বাঁ পা হাঁটুর নিচে ধরে খাটের নিচে নামিয়ে হাঁপান, বাজে মোবাইল। খাটের ওপর মোবাইলটা চিৎকার করছে। তাকিয়ে দেখেন স্ত্রী সিলভিয়া আখতারের ফোন। নিজেকে সামলে ফোনটা কানে নেন আহীর আলম, হ্যালো।

তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো? ওপাশে উল্লাসে বিচ্ছুরিত গলা সিলভিয়া আখতারের।

কানে মোবাইল ধরেন ঠেসে, চেপে। হ্যাঁ, অনেক মানুষের কলরব শোনা যাচ্ছে, ইঞ্জিনের শব্দ আসছে, গান-বাজনা হাসি-আনন্দেরও উচ্ছ্বাস ভেসে আসছে। বুঝতে পারছেন আহীর আলম, স্ত্রী-কন্যা-পুত্র এখন মচ্ছবে আছে। শীতলক্ষ্যা নদীর স্রোতে ভাসমান এবং চলমান ট্রলারের মেশিনের কদাকার শব্দের ভয়াবহ উচ্ছিষ্ট ভেসে আসছে মোবাইলে।

হ্যাঁ, ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় উত্তর দিতে চেষ্টা করছেন আহীর আলম স্ত্রী সিলভিয়া আখতারের প্রশ্নের – তোমরা তো ট্রলারে শীতলক্ষ্যায় আছো?

ঠিক ধরেছো, বড় আপাও এসেছে। জীবন আর মোহনও এসেছে। ওরা ড্রাম বাজাচ্ছে আর নাচছে আর গাইছে গান। তুমি থাকলে খুব ভালো হতো।

আছি তো তোমাদের সঙ্গে, মোবাইলে।

নাস্তা করেছো?

হ্যাঁ করেছি।

গোপালের মা এসেছিল?

না, আসেনি।

বলো কি? কেন আসেনি? আচ্ছা, আমি ওর জামাইয়ের নম্বরে ফোন দিচ্ছি। তোমার দুপুরের খাবার গরম করে দিয়ে যাক আর বাসাটা পরিষ্কার করে …

সিলভি – বাঁ পা নিচে নামান আহীর আলম। গোড়ালির মধ্যে, হাড়ে ও মাংসে তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যথায় গোটা শরীর টনটন করছে তার – শোনো, ও মহিলা আসুক বা না আসুক, তুমি টেনশন করো না। অনেকদিন পর একটু বাইরে গেছো, উপভোগ করো। আমার বাসায় আমি আছি, কোনো সমস্যা নেই।

ঠিক আছে, আমি বিকেলের মধ্যে বাসায় আসছি। তুমি দিনটা কোনোভাবে কাটাও … বাই। লাইন কেটে দেয় সিলভিয়া আখতার।

মোবাইল নামিয়ে রেখে আবার বিছানার ওপর বসেন আহীর আলম। বসার সঙ্গে সঙ্গে ওপরের ভারের চাপ কমে যাওয়ায় বাঁ পায়ের ব্যথাটা কমে যায় খানিকটা; কিন্তু বাথরুমের চাপটা … অসহায় হাসিতে মুখটা উদ্ভাসিত আহীর আলমের, ব্যথার ফাঁদে আটকেপড়া এক বগা আমি …।

মনে পড়ে আব্বাসউদ্দিনের গাওয়া গান – ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে …। হায় কোথায় সেই উদাস সুরের শিল্পী? সুরের ভাবনার মধ্যে আবারো বাথরুমের ধাক্কা। কী করবেন আহীর আলম? হঠাৎ বিছানা থেকে নেমে উপুড় হয়ে মাটিতে বসেন এবং চার হাত-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে বাথরুমের দিকে যেতে শুরু করেন। অনুভব করলেন, বাঁ পায়ের ব্যথাটা তেমন লাগছে না। নিজের আবিষ্কারে মুগ্ধ হামাগুড়ি দেয়া আহীর আলমের মুখে হাসি ফোটে, শুয়োরের বাচ্চার মানুষ হারে না, হারে না মানুষ।

বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করেন তিনি।

সকাল আর দুপুর মিলিয়ে আহীর আলম বিস্কিট আর আপেলই খেলেন। হামাগুড়ি দিয়ে পানিও আনলেন। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বিকেলের দিকে। কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে জেগে বসতেই মেয়ে বাসনার চিৎকার, পাপা! তাড়াতাড়ি দরজা খোলো। আমি বাথরুমে যাবো। বাইরে থেকে আসলেই বাসনার এই চিৎকারটা শোনা যাবেই।

বাসায় প্রবেশ করার দরজা না, কলাপসিবল গেট। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বাসার লম্বা বারান্দা অনেকটা দেখা যায়। কলাপসিবল দরজার বাইরে অপেক্ষায় থাকা বাসনা, অবিরাম আর সিলভিয়া আখতারের তিন জোড়া চোখ দেখতে পায় চারপেয়ে একটা জন্তু আসছে, মুখে চাবির গোছা।