আকালির করোনাকাল

গমগম আওয়াজে আকালির ঘুম ভেঙে গেল। ঠিক গমগম নয়, খেলার মাঠে দর্শকদের উত্তেজনামুখর আওয়াজের মতো কিছু। আর তার মনে হলো নিশ্চয় কোথাও ফুটবল খেলা হচ্ছে! নিশ্চয় সেখানে প্রচুর দর্শকের সমাগম। খেলাও তাহলে খুব জমে উঠেছে! না হলে এমন আওয়াজ তার কানে ভেসে আসবে কেন?

আকালি বিছানায় উঠে বসল। আওয়াজটা ভালো করে কানে নিল এবং বুঝতে পারল, স্কুলমাঠের দিক থেকেই আসছে সেটা। তার মানে সত্যি সত্যি স্কুলমাঠেই ফুটবল খেলা হচ্ছে। কিন্তু এই ভোরবেলা ফুটবল খেলা! সেটা তো হয় একমাত্র রথের দিন! সেই কোন জনমকাল থেকে দেখে আসছে! আজ কি তবে রথ?

বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে নিল আকালি সেখ। খুবই সাধারণ মানের সেট হলেও তাতে বাংলা ক্যালেন্ডার আছে। সেখানে আষাঢ় মাস দেখালেও সে দেখল রথযাত্রার আরো বেশ কয়েকদিন দেরি। তাহলে এই করোনাকালে আজ আবার কী এমন উৎসব শুরু হলো যে, স্কুলমাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে?

গভীর চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠল আকালি সেখের কপালে। আর এক এক করে তার সব মনে পড়তে লাগল, হঠাৎ করে বিগত কয়েক মাস ধরে দুনিয়াজুড়ে যা চলছে, সেইসব ঘটনা। বলতে গেলে জীবনে এমন বাধ্য হয়নি কখনো। করোনাভাইরাসের কারণে জনতা কারফিউ থেকে লকডাউনের স্বেচ্ছানির্বাসন মেনে নিয়েছে। তা বলে যে বাড়ি থেকে বের হয়নি, তা নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য গলির মোড়ে আমবারের ‘মুদি-ভাণ্ডার’ কিংবা ওষুধের জন্য পাশের ‘ময়না ফার্মেসি’তে গেছে। আর জরুরি নির্দেশ মেনে মাসে দু-দিন করে স্কুলে   ছাত্রছাত্রীদের   মিড-ডে-মিলের  চাল-আলু বিলি করতে যেতে হয়েছে।

আকালি নিজে একজন শিক্ষা সম্প্রসারক। একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ায়। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি। চলতি শিক্ষাবর্ষে তার প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা একশ তেইশ জন। এমনিতে সারাবছর ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কম থাকে। কেননা, ওরা এতই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান যে, সংসারের অভাব মেটাতে উপার্জনের জন্য ওদের হয় বাবার সঙ্গী হতে হয়, না হয় মায়ের। এমনিতেই এই অঞ্চলের বহু মানুষ সারাবছর দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকে। কেউ রাজমিস্ত্রির কাজের সঙ্গে যুক্ত তো কেউ হকারির সঙ্গে। বছরে দু-তিনবার বাড়িতে আসে। তাও পালপার্বণে। এ-বছর লকডাউন চলাকালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছিল। ওই সময় সবার বাড়ি ফিরে আসার কথা। যেমন প্রতিবছর আসে। আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়াপড়শি সবার সঙ্গে পালপার্বণে অংশগ্রহণ করে।

হই-হুল্লোড়ে মাতে; কিন্তু এ-বছর ওরা ফিরে এসেছিল সময়ের অনেক আগেই নিজে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে। আসলে হঠাৎ করে কর্মস্থলে ওদের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর বলতে গেলে ওরা একরকম তাড়া খেয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল। তখন লকডাউনের কারণে সবরকম যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। তবু কীভাবে ফিরে এসেছিল একমাত্র ওরাই জানে।  তারপর বাড়িতে এসেও যে ওরা খুব স্বস্তিতে আছে, একেবারে তা নয়। আশ্চর্য হলেও একথা সত্যি, নিজেদের বাড়িতেই ওদের লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শির সঙ্গে ওরা মিশতে পারছে না। সবকিছু এড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আকালির এক প্রাক্তন ছাত্র কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকে। কর্মসূত্রে বলতে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ওর মেয়ে আকালির বর্তমান ছাত্রী। নাম আয়েশা খাতুন। প্রথম কি  দ্বিতীয়বার  স্কুলে  মিড-ডে-মিলের  চাল-আলু বিতরণের সময় মায়ের সঙ্গে আয়েশাও এসেছিল। আকালি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তোর আব্বা বাড়ি এসেছে?’

আয়েশা কোনো উত্তর করার আগে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার মা বলে উঠেছিল, ‘এস্যাছে।’

আকালি আবার জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কোথায় আছে?’

‘বাড়িতে।’

‘বাড়িতে কী করছে?’

‘কী করবে আবার সারাদিন ঘরের ভিতর শুত্যা থাকছে।’

‘হাসপাতালে গেছিল?’

‘গেলছিল। পুলিশে তুলে লিয়ে গেলছিল। ডাক্তার কীসব ওষুধ খেতে দিয়াছে আর বুল্যাছে ঘরে শুত্যা থাকতে। তাই ওইসব ওষুধ খেছে, আর ঘরে শুত্যা থাকছে।’

আকালি লক্ষ করেছিল, তার প্রাক্তন ছাত্রের স্ত্রী – বর্তমান ছাত্রীর মায়ের কথায় অস্বস্তি ঝরে পড়ছে। চোখমুখে আতঙ্ক। সেইসঙ্গে সংকোচ। স্বামী কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে ঠিকই কিন্তু হয়তো মজুরি পাইনি। কিংবা পেলেও খুবই অল্প। আবার কবে কাজে যেতে পারবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ওর চরম অস্বস্তি আছে। আর স্বামী বাড়ি এসেও ডাক্তারের নির্দেশ মেনে ঘরে শুয়ে থাকছে বলে সংকোচ। কে জানে স্বামী সত্যি সত্যি শরীরে মারণরোগের জীবাণু বয়ে এনেছে কি না! শুধু পাড়াপড়শিই নয়, হয়তো আত্মীয়স্বজনও কেমন সন্দেহের চোখে দেখছে। সে-কারণে আতঙ্ক।  যদিও এবার করোনার জন্য গ্রামের ঈদগাহে ঈদের নামাজ হয়নি। বকরি ঈদের নামাজও হয়নি। তবে কুরবানি হয়েছে। নিজের নিজের বাড়ি বা বৈঠকবাড়ির আঙিনায়। একইভাবে প্রতিবেশী অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবও সেভাবে পালিত হয়নি। যেমন রথযাত্রার ক্ষেত্রেও ওই একই আইন বলবৎ হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নিয়ম রক্ষার্থে পুরিতে হাতি রথ টেনে নিয়ে যাবে। ভক্তদের রথ টানার কোনো রকম সুযোগ থাকবে না। এমনকি ভক্তরা রথের রশিতে হাত ছোঁয়াতে পারবে না পর্যন্ত। দূরে দাঁড়িয়ে তাও সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে তাদের রথযাত্রা দর্শন করতে হবে। এরপরে তাহলে কী করে ফুটবল খেলা হয়? ফুটবল খেলায় কি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব?

না, আকালি আর বিছানায় বসে থাকতে পারল না। বিছানা থেকে নেমে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে একেবারে নিজের বাড়ির ছাদে গিয়ে উঠল।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা পেয়ে এই একতলা বাড়িটা বানিয়েছে আকালি। আর তার এই বাড়ির উত্তর দিকেই স্কুলমাঠ। কিন্তু সেটা নজরে আসে না। এই করোনাকালে উত্তর দিকে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে সব বহুতল বাড়ি। নাকি আগেই উঠেছিল? খেয়াল করেনি! আজ অনেকদিন পর ছাদে উঠে আকালি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল সব। হরেন ঘোষের বাড়িটা দোতলা হয়েছে। পাশের নজুর বাড়িটা আবার তিনতলা। আর সরকারদের সাদা রঙের বাড়িটা এমনভাবে আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মনে হচ্ছে, উত্তরে আকাশ বলে কিছু নেই। চোখের সামনে যেন সাক্ষাৎ বরফ আচ্ছাদিত শ্বেতশুভ্র হিমালয় পর্বতমালা দাঁড়িয়ে আছে।

এসব দেখে আকালি হঠাৎই টের পায় শুধু মাটি চুরি হয় না, আকাশও চুরি হয়ে যায়। কেউ টের পায় না। কিংবা খেয়াল করে না। অথচ ওই আকাশ দিয়েই ভোটের সময় নেতাদের হেলিকপ্টার নেমে আসে তাদের স্কুলমাঠে। সেই কোন ছোটবেলা থেকে আকালি সেখ তার বাড়ির খড়ের চালের ওপর দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখেছে। গণিখান চৌধুরী, সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়রঞ্জন দাশগুপ্ত, আজহারউদ্দিন, রাজবাব্বরসহ আরো কত নেতা-অভিনেতাকে। না, তাদের দেখতে কখনো সে স্কুলমাঠে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। নিজের বাড়ির খড়ের চালে উঠেই দেখেছে সব। এমন কি ফুটবল খেলা পর্যন্ত। একবার শ্যাম থ্যাপার খেলাও দেখেছিল। সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন কলকাতার নামি ক্লাবের প্লেয়ার ছিল। তাদের কীসব নাম, এখন আর মনে নেই। মনে থাকবে কী করে, চালে উঠলেই যে মা গাল পাড়ত। লাঠি চোখিয়ে বলত, ‘আবার চালে উঠ্যাছিস তু? পিছলি পড়ি হাড়গোড় ভাঙলে কে দেখবে তোকে? নেমি আই, দেখাইছি মজা!’ 

মায়ের কথা মনে পড়তে না পড়তে উত্তরের আকাশ ঢাকা পড়েছে দেখে আকালির চোখে কানা-ছায়া ঘনায় এমনই যে, অগত্যা সে নিচের রাস্তার দিকে চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়। আর দেখে তাদের পাড়ার অতিপরিচিত বিড়ালটিকে বিরান রাস্তায় ‘ম্যাঁও’ ‘ম্যাঁও’ করতে করতে কিছু খুঁজে বেড়াতে।

তাদের পাড়ার সব বাড়িতেই বিড়ালটির অবাধ যাতায়াত। গায়ের রং খয়েরি অথচ

 নাম লালি। কে রেখেছে কে জানে! এই করোনাকালে তার ঘরেও দিনে একবার হলেও আসে। ‘ম্যাঁও’ ‘ম্যাঁও’ বলে তিনবার ডাক দিয়ে আবার কোথায় চলে যায়। যেন বলে যায় ‘ভালো থাকিস আকালি’!

আকালি আগে কখনো ব্যাপারটা খেয়াল করেনি। খেয়াল করবে কী, আগে খেয়াল করার সময় ছিল কোথায়? ঘুম ভাঙতেই খেয়ে না খেয়ে ছুটত ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি। মজ্জাতপুর, শিকারপুর, প্রসাদপুর, পিপলা, তেঁতুলিয়াপাড়া, নাটাতলা – এই পাঁচটি গ্রামের স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীরা তার স্বপ্ন। প্রত্যেকেই যাতে প্রতিদিন স্কুলে আসে, সেই জন্য সকাল হতেই ছুটে যেত সবার দুয়ারে দুয়ারে। নিজের বাপকে সে চোখে দেখেনি, তাই বোধহয় ছাত্রদের তার বাপ বলে মনে হতো। আর মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পর খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত মাকে না পেয়ে অনেকদিন পর যখন শিক্ষা সম্প্রসারকের কাজটা পেল, সে তার অনেক মাকে পেয়ে গেল একসঙ্গে। কিন্তু করোনাকাল সেসব কেড়ে নিয়েছে। বাড়িতে বসে বসে বেতন পাচ্ছে। সঙ্গে বিনি পয়সায় রেশন। কোনো কিছুর অভাব নেই। তার ওপর হাতে অঢেল সময়। কাজ না থাকলে সময় এমন পাথর হয়ে সামনে দাঁড়ায় যে দম বন্ধ হয়ে আসে।

সেই পাথর সময়ে সাঁতার কাটতেই হয়তো লালিকে নজরে নিল আকালি। তার বাড়ির সামনেকার গলির রাস্তায় লালি কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। মা হারালে সন্তান যেমন তার মাকে খুঁজে বেড়ায় কিংবা সন্তান হারালে মা নিজের সন্তানকে খুঁজে বেড়ায়, অনেকটা সেরকম অবস্থা যেন লালির।

আকালি এটা বুঝতে পারছে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে। তার মা নিখোঁজ হওয়ার পর সে তার মাকে এভাবেই খুঁজে বেড়িয়েছে দিনের পর দিন। রাতের পর রাত। না, সে তার মাকে খুঁজে পায়নি। তাই তার এখন জানতে ইচ্ছে করছে, এই সাতসকালে কী খুঁজে বেড়াচ্ছে লালি?

আকালির প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা। আর ঠিক তখনই সে দেখতে পেল তাদের পাড়ার রাজা আলমকে টোটো চড়ে বস্তাভর্তি করে কী নিয়ে আসতে।

আকালি জিজ্ঞেস করল, ‘সকাল সকাল কী লিয়ে এল্যা জি রাজাভাই?’

রাজা আলম চিৎকার করে বলল, ‘আলু-পিঁয়াজ রে ভাই।’

– এই সাতসকালে তাও আবার এই করোনাকালে কুণ্ঠে পেলা এতো আলু-পিঁয়াজ?

– কেনে হাটে?

আকালি অবাক হয়ে জানতে চাইল, ‘হাট! এই লকডাউনে আবার হাট বসল কুণ্ঠে? লকডাউন উঠ্যা গেল নাকি!’

রাজা আলম বলল, ‘আজ থেক্যা লকডাউন উঠ্যা গিয়ে আনলকডাউন এক শুরু হলো যে রে ভাই। তাই আজ থেক্যা শুরু হল ইস্কুলের মাঠে সবজির হাট বসা। এখুন থেক্যা রোজ বসবে।’

গমগম আওয়াজ কি তবে সেখান থেকেই উঠে আসছে? তাছাড়া হঠাৎ স্কুলমাঠে সবজির হাট বসবেই বা কেন? সবজির হাটের জন্য তো নির্দিষ্ট জায়গা আছে সিন্ডিকেট মোড়ে!

আকালি সেখ কিছুই বুঝতে পারল না। রাজা আলমকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে তাও সম্ভব হলো না। রাজা আলম টোটো চড়ে ততোক্ষণে পগারপার।

দুই

এই গ্রামে আবোল সেখ মস্ত বড় গেরস্ত। তার যেমন জমিজিরাত আছে, আগানবাগান – লিচুবাগান – পুকুর-পুষ্করিণীও কম নেই। সেসব দেখাশোনার জন্যে সবসময় আট-দশজন কাজকামের লোক। তার তদারকিতেই সবাই সেসবের দেখভাল করত। করোনার কারণে আজ ক-মাস হঠাৎ করে সব বন্ধ। বলা নেই কওয়া নেই ক-মাস আগে একদিন পুলিশ এসে বারণ করে গেল। বাড়ির বাইরে কারো বেরোনো চলবে না। ঘরে বসেই দিনরাত কাটাতে হবে। বাইরের হাওয়া-বাতাসে নাকি কী একটা ভয়ংকর অসুখ উড়ে বেড়াচ্ছে। যাকে ধরছে, ছাড়ছে না। অসুখ তো নয়, যমের বাপ বুঝি!

আবোল সেখ শুধু এই গ্রামের নয়, এই অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তি। পুলিশ প্রথমে তার কাছেই এসেছিল। তাকেই বলে গেছিল, ‘সেখসাহেব – আপনার অঞ্চল। এই অঞ্চলে আপনাকে সবাই মান্য করে। আপনি বাইরে বেরোবেন না। যতদিন না এই মারণ অসুখের টিকা বের না হয়। বাড়ির কাজের লোককে ছুটি দিয়ে দিন।’ এমনকি হাঁড়িহেঁসেলে কাজের মেয়েদেরও জন্য ওই একই নিদান দিয়ে গেছিল পুলিশ। এতে আবোল সেখের কোনো সমস্যা হয়নি। বরং গ্রামের লোকের কাছে তার ইজ্জত বেড়ে গেছিল দুয়ারে পুলিশ আসায়। গোটা গ্রামের লোক তা দেখেছিল। সেদিন থেকেই আবোল সেখ তার দোতলার সিঁড়িঘরে গিয়ে সেঁধিয়ে আছে। সিঁড়িঘরের পাশেই পায়খানা-গোসলখানা। সিঁড়িঘরের ছাদে পানির ট্যাঙ্ক। গোসল কিংবা নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া লাগছে না। ওই সিঁড়িঘরে বসেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছে। সময়মতো তিনবেলা ঠিক খাবার পৌঁছে যাচ্ছে তার কাছে।

অন্যদিকে যত সমস্যা মাসুমা বিবির। সব বন্ধ কিন্তু হাঁড়ি বন্ধ নেই। তাছাড়াও হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। তাকে একা হাতে সব সামলাতে হচ্ছে। দুই মেয়ে বহুদিন হলো পরের বাড়ির বউ। অবশ্য এক ছেলে আছে। বিয়েও হয়েছে। লোকে জানে সুখের সংসার। কিন্তু তার এমনই কপাল যে, এই আপৎকালে হাতের কাছে কেউ নেই। যেদিন ছেলে বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেল, তার পরদিন থেকেই গাড়িঘোড়া সব বন্ধ হয়ে গেল। ফিরে যে আসবে সে উপায় রইল না। অগত্যা এতো বড় সংসারের যাবতীয় ঝঞ্ঝাট তাকে একলা হাতে সামলাতে হচ্ছে।

তখন সকাল। মাসুমা বিবি স্বামীর জন্য নাস্তা তৈরি করছে। সেই সময়ে হঠাৎ আকালি এসে হাজির, ‘চাছি, কী করছেন?’

মাকে হারানোর পর এই মহিলার কাছে সে আশ্রয় পেয়েছিল। এই মহিলা না থাকলে হয়তো সেও মায়ের মতো কোথায় হারিয়ে যেত।

– মরছি। বিরক্তির সঙ্গে বলল মাসুমা বিবি।

– ছি চাছি! উ কথা কি বুলতে আছে? মরুক আপনার দুশমন।

– দুশমন মরলে কি এদিন দেখতে হয় রে ব্যাটা?

– কুন দিন চাছি?

– এই যি বাড়িতে বেটা-বঁহু নাই। বাড়ির কামের মানুষ কামে আসছে না। একলা হাতে হামি কুন দিক সামলাবো?

– তা কী করতে বুলেন ক্যানে চাছি, হামি কর‌্যা দিছি।

– যা তো তোর চাছাকে নাস্তা দিয়ে আয়!

– চাছা কুণ্ঠে আছে?

– কবরে।

কবর মানে যে ছাদে ‘চাছা’র সিঁড়িঘর। আকালি তা জানে। তবু জিজ্ঞেস করল, ‘এই সুমায় চাছা ওইখানে কী করছে?’

– আণ্ডায় তা দিছে। 

আকালি বুঝতে পারে, তার মাসুমা চাচির আবোল চাচার ওপর খুব রাগ।

নাস্তার থালা হাতে সিঁড়িঘরের দরজায় গিয়ে আকালি হাঁক ছাড়ে, ‘চাছাজি! ও চাছা!’

আবোল সেখ ঘরের মধ্যে কী করছিল কে জানে – বলল, ‘কে রে?’

– হামি চাছা, আকালি।

– তা তু এখ্যানে ক্যানে? কে আসতে বুল্লে? তোকে না বারণ কর‌্যাচছি! জানিস না দুনিয়া জুড়ে কী চলছে?

নাস্তার থালা হাতে দাঁড়িয়ে আকালি ভাবে, দুনিয়া জুড়ে কী চলবে আবার! সেকথা সে তার চাচা আবোল সেখকে জিজ্ঞেস করে, ‘দুনিয়া জুড়ে কী চলছে আবার?’ 

– ক্যানে মাইক চিল্লে বেড়াইছে শুনতে পেছিস ন্যা! বাতাসে নাকি কী একটা ব্যারাম উড়ে বেড়াইছে। বাহিরে ঘুরাঘুরি করলে ধর‌্যা লিবে।

পঞ্চায়েতের চৌকিদার গুরুপদ কাকা টোটোতে মাইক বেঁধে চিল্লে বেড়াচ্ছিল বটে, কিন্তু লকডাউন ব্যাপারটা তো গতকাল পর্যন্ত ছিল। আজ থেকে তো সব আনলক। মানে সবকিছু খুলতে শুরু করেছে। স্কুলমাঠে সবজির হাট বসেছে। সেখান থেকে তাদের পাড়ার রাজা আলমকে আলু-পিঁয়াজ কিনে আনতে দেখেই তো সে বাড়ির বাইরে পা রেখেছে। আবোল চাচা হয়তো ব্যাপারটা জানে না। তাই সে বলে উঠল, ‘চাছা, ল্যান আপনার নাস্তা। আজ থেক্যা সব আনলক। আর কুনু চিন্তা নাই।’

আবোল সেখ চিল্লে উঠল, ‘যেখানে দাঁড়িয়ে আছিস ওইখ্যানে রেখ্যা দে! দিয়ে চলে যা তু। খবরদার! হামার ঘরে ঢুকবি না! যতদিন না ওই মরণ রোগের টিকা বাহির হয়!’

আবোল চাচার এমন আচরণে আকালির মন খারাপ হয়ে যায়। কতদিন পর চাচাকে দেখতে এলো। কোথায় ‘কেমন আছিস’, ‘কী করছিস’ জিজ্ঞেস করবে তা নয়, একেবারে কুকুর-তাড়ানোর মতো ‘ছ্যাঃ ছ্যাঃ’ করে তাড়িয়ে দিলো।

না, শুধু আবোল সেখের ছাদ নয়, তার বাড়ি থেকেই বেরিয়ে এলো আকালি।

তিন

আকালি মন খারাপ করে রাস্তায় রাস্তায় একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং অদ্ভুতভাবে লক্ষ করছে, তাদের গ্রামের ডহর রাস্তা লকডাউনে ঝোপ-আগাছার বাড়বাড়ন্তে সংকীর্ণ। তার ওপর একেবারে সুনসান। কোথাও কোনো জনমানুষ নেই। তাহলে কি আবোল চাচার কথাই সত্যি? দুনিয়ার হাওয়া-বাতাসে এখনো মরণ রোগ উড়ে বেড়াইছে?

আকালি কিছু বুঝতে পারছে না। হাঁটতে হাঁটতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। আর  তার চোখে পড়ছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি। কিন্তু সব এক একটা মূর্তি যেন! রাস্তার এখানে-ওখানে কুকুরও শুয়ে আছে ঠিক লাশের মতো। যদিও কোনো মানুষ চোখে পড়ে না তার। মাঠঘাট একেবারে বিরান। খাঁ খাঁ করছে।

বেশ কয়েক মাস গৃহবন্দি থাকার পর আজ বাইরে বেরিয়ে আকালির খুব তাজ্জব লাগে। তার মনে হয়, এই দুনিয়ায় সে নিজেই একমাত্র জীবিত, বাকি সব মৃত। 

হাঁটতে হাঁটতে একসময় গ্রাম ছেড়ে আফরোজ খাঁর আমবাগানের দিকে চলে আসে আকালি। এখন আম, কাঁঠাল, লিচুর সময় নয়। তবু গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের ঘিরে ধরেছে যতসব আগাছা। আসল গাছগুলি তার চোখে পড়ছে না। আর প্রায় সব আগাছেই হয় ফুল ফুটে আছে, না হয় ফল ঝুলে আছে। কী সুন্দর!

আশ্চর্যের ব্যাপার – বাগানে অনেক পাখপাখালিও আছে, তারা কেউ গাইছে না। হনুমান আছে। লাফালাফি করছে না। সব কেমন পাথর। এই ক-মাসে প্রকৃতি যেন ক্যানভাসের ছবি কিংবা পাথরের মূর্তি! সবকিছু একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে এক জড়জঙ্গলের জন্ম দিয়েছে। যদিও পাশের কালীপালের সেই প্রিয় পুকুরটাকে আকালি  দেখতে  পাচ্ছে  না।  পুকুরটা  কোথায় গেল তবে? আর কিছু না হোক, অন্তত ক্যানভাসের ছবি হয়ে তার থাকার কথা! 

তাহলে কি এই করোনাকালে সবার অজান্তে উত্তরের আকাশের মতো পুকুরটাও গায়েব হয়ে গেল? অবশ্য যখন মাটি গায়েব হয়ে যাচ্ছে, আকাশ গায়েব হয়ে যাচ্ছে, তখন পুকুর গায়েব হতে কতক্ষণ? কিন্তু অতবড় পুকুর, তাও আবার কালী পালের পুকুর, সেটা গায়েব হয় কী করে? 

আকালি মহাশূন্যে সাঁতার কাটে। করোনাকালের আগে হলে হয়তো বুঝতে পারত পুকুর ভরাট করে কেউ নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। কিন্তু সেটা সম্ভব কী করে? গতকাল পর্যন্ত করোনার কারণে সবকিছু তো বন্ধই ছিল। তাছাড়া পুকুরটা যে জায়গাটায় ছিল সেখানে সাম্রাজ্য বিস্তারের কোনো চিহ্ন নেই। বদলে একটা ঘন জড়জঙ্গল আছে। জঙ্গলটাকে সে চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে। 

সেই জড়জঙ্গলের ভেতরে আকালির ঢুকতে ইচ্ছে করে খুব। তার ইচ্ছে করে কালী পালের পুকুরটাকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু সেই গহিন জড়জঙ্গলে সে ঢুকবে কী করে? জঙ্গল এতোই ঘন এবং ভয়ানক যে, তার খুব ভয় করছে।

আসলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার দুপাশে এমন জঙ্গল এখন প্রায় সব জায়গায়। এমন জঙ্গলের জন্ম হবে বলেই হয়তো করোনা। যে-জঙ্গলে সন্তান তার মাকে খুঁজে বেড়াবে। কিংবা মা তার সন্তানকে খুঁজে বেড়াবে। হাহাকার উঠবে চারপাশ থেকে। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার থাকবে না। যেমন অনেকদিন আগে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ ছিল না। যেমন আজকে লালিকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই।

এমন ভয় থেকে আকালির মনে পড়ে যায় বহুদিন আগের একটি ঘটনা –

তখন বয়সে সে খুব ছোট। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। আর কালী পালের পুকুরে হাঁটু সমান পানি। ওই গরমের ছুটিতে সাঁতার শেখার জন্য সে সারাদুপুর পড়ে থাকে সেই পুকুরে। হাঁটু সমান পানিতে দাপাদাপি করে। কোনো ভয়ডর নেই তার। বাড়িতে থাকা বলতে এক মা। যে তাকে শাসন করে না। আব্বা তার জন্মের আগেই মারা যায়। মায়ের ওপর অভিমান করেই নাকি লোকটা বিষ খেয়ে মরেছিল। সেই কারণেই কি না, মা তাকে শাসন করতে ভয় পায়। যদিও মাকে সে একটুও ভয় পায় না। মন যা চায়, করে বেড়ায়।

একদিন ওই কালী পালের পুকুরে দাপাদাপি করে সে যখন বাড়ি ফিরল, দেখল বাড়িতে মা নেই। কোথায় গেল মা? সাধারণত মা বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না। সপ্তাহে শুধু একদিন বিড়ির মহাজনের বাড়ি নিজের বাঁধা বিড়ি জমা দিয়ে মজুরি সংগ্রহ করতে আর পরের সপ্তাহের জন্য পাতা-মশলা আনতে যায়। সেটা শুক্রবারে। কিন্তু সেদিনটা ছিল রোববার। বিড়ির মহাজন যে-বাড়িতে বসে, সেটা তাদের গঞ্জের একেবারে শেষপ্রান্তে। কী মনে করে আকালি সেইদিকে হাঁটতে শুরু করে। মায়ের জন্য তার খুব দুশ্চিন্তা হয়। রাস্তায় যার সঙ্গে দেখা হয়, মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। কেউ কিছু বলতে পারে না। আবার রাস্তায় এমন কাউকে দেখতে পায় না যাদের হাতে বিড়ির ডালা আছে। বিড়ির মহাজন যে বাড়িতে বসে, সেই বাড়ির বৈঠক বারান্দায় গিয়ে দেখে সেখানেও কেউ নেই। আকালির খুব ভয় করতে শুরু করে। বাতাসে বিপদের গন্ধ পায় সে। তার হঠাৎ মনে হয় মা তাকে খুঁজতে কালীপালের পুকুরপাড়ে যায়নি তো!

এমন ভাবনা থেকেই সে একসময় গিয়ে হাজির হয় আবার সেই কালী পালের পুকুরপাড়ে। কী আশ্চর্য! দেখতে পায় আবোল সেখকে। কালী পালের পুকুর থেকে লোকটা উঠে আসছে। তাকে দেখতে পেয়ে আবোল সেখ আঁতকে ওঠে, ‘বাপ তুই এখানে কী করছিস, এই সাঁঝের সুমায়? চল চল, বাড়ি চল! তোর মা তোকে ধুড়ে বেড়াইছে। তাছাড়া এই সুমায় এই জায়গা ভালো লয়।’ বলে তাকে কোলে তুলে বাড়ি নিয়ে আসে। বাড়ি বলতে তাদের ভাঙাচোরা বাড়ি নয়, আবোল সেখের নিজের বাড়ি।

সেই  থেকে  ওই  আবোল  সেখের ঘর-গেরস্থালি হয়েছিল তার নিজের বাড়ি। যেখানে সে মাসুমা চাচিকে পেয়েছিল। যে তার মায়ের অভাব ভুলিয়ে দিয়েছিল। তারপর হারানো মায়ের আর খোঁজ করেনি আকালি। কিন্তু আজ করবে। আবোল সেখ তাকে কুকুরের মতো ছ্যাঃ ছ্যাঃ করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এই অপমানের বদলা নিতে সে তার মাকে খুঁজে বের করবে।

কালী পালের পুকুরটা আর সেদিনের কালীপালের পুকুর হয়ে নেই। এই করোনাকালে একটাজড় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কী জানি কেন, যা দেখে আকালির বুক থরথর করে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে, ওই জড়জঙ্গল ঘিরে চারপাশে শূন্য মাঠ পড়ে আছে সন্তানহারা মায়ের মতো। দূরে নিরন্তর বয়ে চলা নহরে স্রোতে কলকল আওয়াজ নেই। খালি নহরের বুকে বয়ে যাওয়া শুকনো বাতাসের সাঁই সাঁই আওয়াজ আছে, যা আপন খেয়ালে পাগলের মতো বয়ে চলেছে ফাঁকা মাঠের ওপর দিয়ে। যদিও সেই বাতাসে মিশে আছে আশ্চর্য এক মাদকতা। যে-মাদকতায় সাধারণ মানুষেরও মনপ্রাণ অস্থির হয়ে ওঠে। আকালি নিজেও অতি সাধারণ মানুষ। তাই এই মুহূর্তে নিজের মনপ্রাণকেও স্থির রাখাটা খুব জরুরি মনে হলো তার। কেননা, এখনই তাকে ওই জড়জঙ্গলে প্রবেশ করতে হবে। 

চার

একটা জড়জঙ্গল। ভেতরে ঢোকার কোনো পথ নেই। তবু মাটির মানুষ আকালি অদ্ভুত কৌশলে পথ তৈরি করতে করতে তার ভেতর থেকে ভেতরে প্রবেশ করছে। এতো কাঁটাঝোপ যে, ওসবের খামচানিতে তার শরীর থেকে পোশাক-আশাক খসে পড়ছে। কাঁটার আঁচড়ে তার শরীর থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্তও ঝরছে।

না, বুকে আর থরথর ভয় নেই এখন। তবে মায়ের জন্য সেই সেদিনের মতো আজো উদ্বেগ আছে। যে-উদ্বেগ থেকে গহিন জড়জঙ্গল ভেদ করে কালী পালের পুকুরপাড়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে সে। তার স্থির বিশ্বাস, মা নিশ্চয় সেখানেই আছে। হাতে একটা লাঠি নিয়ে কালী পালের পুকুর থেকে তার উঠে আসার অপেক্ষা করছে। লাঠি চোখিয়ে মুখে বলছে, ‘উঠে এলি তু! না হামি নামব?’   

এমন বিশ্বাস পাগলের হয়। গহিন জড়জঙ্গল পাগল আকালিকে পাত্তা দেয় না। সে আরো ঘন হয়। আরো জমাট বাঁধে, যাতে তার ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।

শেষ পর্যন্ত আকালির সঙ্গে জঙ্গলটা পেরে ওঠে না। একসময় আকালি সব বাধা অতিক্রম করে গিয়ে হাজির হয় কালী পালের সেই পুকুরপাড়ে। আর দেখতে পায় তার ক্ষতবিক্ষত বিবস্ত্র মাকে কালী পালের পুকুরের  সবুজ পানিতে চিৎ হয়ে ভেসে থাকতে। আশপাশে তখন কেউ নেই। শুধু কয়েকটি শেয়াল পরম তৃপ্তিতে কালী পালের পুকুরপাড়ে এই করোনাকালে গজিয়ে ওঠা ঘন সবুজ ঘাসে তাদের রক্তমাখা মুখ মুছে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে একটা দাড়িওয়ালা শেয়ালও আছে। যার দাড়ি থেকে রক্তের দাগ কিছুতেই মুছছে না।