নীহারুল ইসলাম

  • নব্বইয়ের গিরা

    নব্বইয়ের গিরা

    কী রাঁধবে না রাঁধবে ভাবতে ভাবতে আঙিনা ঝাঁট দিচ্ছিল সালমা। ঘরে চাল আছে। ডাল আছে। আলু আছে। বড়ি আছে। ঘরের চালে কুমড়ো আছে। কান্টার মাচায় পুঁইশাক আছে। সজনে গাছে সজনে শাক আছে। ওল আছে। এসব তো রোজই থাকে। গেরস্তবাড়ি বলে কথা! কিন্তু ওই একই জিনিস রোজ রোজ আর কত খাবে? মুখে ছালি পড়ে গেল! স্বামীটাও…

  • গল্পকার

    গল্পকার

    এই গল্প একজন গল্পকারের, যে আমার বন্ধু। গল্পটা তারই লেখার কথা ছিল। সে আমাকে প্রায়ই বলত, ‘জানিস, আমি আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখব।’ তারপর গল্পটা কেমন হবে, তার টুকরো টুকরো বিন্যাস আমাকে সে শোনাত। যাই হোক, সে এখনো গল্পটা লিখতে পারেনি। আর পারবে বলেও মনে হয় না। তাই আমাকেই গল্পটা বলতে হচ্ছে। শুনুন তাহলে গল্পটা…

  • আকালির করোনাকাল

    আকালির করোনাকাল

    গমগম আওয়াজে আকালির ঘুম ভেঙে গেল। ঠিক গমগম নয়, খেলার মাঠে দর্শকদের উত্তেজনামুখর আওয়াজের মতো কিছু। আর তার মনে হলো নিশ্চয় কোথাও ফুটবল খেলা হচ্ছে! নিশ্চয় সেখানে প্রচুর দর্শকের সমাগম। খেলাও তাহলে খুব জমে উঠেছে! না হলে এমন আওয়াজ তার কানে ভেসে আসবে কেন? আকালি বিছানায় উঠে বসল। আওয়াজটা ভালো করে কানে নিল এবং বুঝতে…

  • কুহেলিকা

    কুহেলিকা

    দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত শীত এসেছে। বেশ জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ছে। তীব্র, কনকনে ঠান্ডা। সঙ্গে অস্বস্তিকর কুয়াশা। এমন আবহাওয়ায় হাঁসের মাংস আমার খুব প্রিয়। আমি জানি, একমাত্র হাঁস-ই তার যাবতীয় উষ্ণতা বাঁচিয়ে রাখে নিজের শরীরের পালকের নিচে। সেই পালক উপড়ে আমি উষ্ণতা খুঁজি আমাদের কৈশোরবেলা থেকে। এ-কারণেই ছেলেবেলায় গ্রামে থাকতে আমি হাঁস পুষতাম। নিয়ামত ডিমবালার কাছ…

  • বিসর্জন

    বিসর্জন

    ডাকুকে আমি ক্ষ্যাপা বলেই জানতাম। বছর-পঁয়ত্রিশের ডাকু পাশের পাড়ার ছেলে হলেও সে আমাদের পাড়াতেই দিনমান কাটায়। আমাদের পাড়াতে যেসব দোকান আছে, ডাকু সেইসব দোকানদারদের ফাইফরমায়েশ খাটে। ফাইফরমায়েশ বলতে কাউকে চা এনে খাওয়ায়। কাউকে বিড়ি-সিগারেট এনে দেয়। আমার কাউকে বিকেলবেলা চপমুড়ি এনে খাওয়ায়। সঙ্গে নিজেও খায়। আমাদের পাড়ায় হরেকরকমের দোকান আছে। মুদিখানা, ফার্মেসি, জুতোর দোকান, মিষ্টির…

  • শ্রদ্ধেয় সম্পাদক আবুল হাসনাত

    শ্রদ্ধেয় সম্পাদক আবুল হাসনাত

    সবচেয়ে বেশি গল্প লিখেছি যে-পত্রিকায়, তার নাম সাংস্কৃতিক সমসময়। সম্পাদক অশোক চট্টোপাধ্যায়। পত্রিকাটি প্রায় চার দশক ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে এপার বাংলার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থেকে। তারপর বেশি গল্প লেখার ক্ষেত্রে যে-পত্রিকাটির নাম উঠে আসে সেটি হলো ওপার বাংলার ঢাকা থেকে প্রকাশিত কালি ও কলম পত্রিকা। সম্পাদক আবুল হাসনাত। সম্পাদকের সঙ্গে ব্যক্তিগত…

  • হুজুরচোর

    হুজুরচোর

    শেষ পর্যন্ত বাশেদ মোড়লের হেগে পানি খরচের কাঁসার বদনাটা চুরি গেছে। খবরটা কীভাবে ভোরের বাতাসে গোটা গ্রামেই ছড়িয়ে পড়ল। আর যে যেখানে ছিল, নিজের নিজের কামধান্ধা ফেলে সবাই প্রথমেই ছুটে এলো ওই বাশেদ মোড়লের দুয়ারে। হাজার হলেও গাঁয়ের মোড়ল বলে কথা! মোড়লের দুয়ার-লাগোয়া বিশাল বৈঠক-বারান্দা। যেখানে সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে দরবার বসে। গ্রামের নীতি নির্ধারণ হয়।…

  • হাহাকার

    হাহাকার

    আমাদের পাড়ায় একটা কাক ওড়াউড়ি করে। সারাদিন ‘কা-কা-কা’ রবে গোটা পাড়া মাতিয়ে রাখে। আজ হয়েছে কী, খুব আনন্দেই ছিল সে। পাশের চামারবেড়ার ডিহিতে মিঞা পিরের মাজারে গতরাতে ওরস ছিল। সেইসঙ্গে বিফ-বিরিয়ানির ভূরিভোজ। আজ সারাদিন সেই ভূরিভোজের উচ্ছিষ্ট খেয়ে মনের সুখে এসে চুপচাপ বসেছিল আমাদের পাড়ার তিনমাথার মোড়ে রাস্তার পাশে একটা সজনে গাছের ডালে। বসন্তকাল। ডালে…

  • লিটনের   গঙ্গা-দর্শন

    লিটনের গঙ্গা-দর্শন

    গরুগাড়ির কাফেলা। সাত-সাতখানা গরুর গাড়ি। পরপর এগিয়ে চলেছে শালবনের ভেতর দিয়ে। আসছে রাঢ় থেকে। যাবে বাগড়ি। নদী পেরোবে। ভাগীরথী নদী। লোকে বলে ‘মা-গঙ্গা’! যার অনেক গল্প শুনেছে লিটন। কখনো চোখে দেখেনি। আজ দেখবে। এতদিন পুকুর দেখেছে – রখিদ, টুটিকাটা, আকারপুকুর। দিঘি দেখেছে – পোঁপাড়ার সাগরদিঘি। খরার সময় জল কমলে সেই দিঘির মধ্যেকার মন্দিরের চূড়া জেগে…

  • দ্বিজেনের স্বর্গদর্শন

    দ্বিজেনের স্বর্গদর্শন

    বাদাম বিক্রি করতে বেরিয়ে দ্বিজেন ভুল করে পুরনো বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছে। একেবারে রানী-পুকুরপাড়ের তেমাথার মোড়ে। সাধারণত এই মোড়ে সে আসতে চায় না। ভুল করে কখনো চলে এলে মন খারাপ হয়ে যায়। যেমন এখন এই পড়ন্ত দুপুরে তার মন খারাপ হয়ে গেল। এই মোড়ে কখনো তার একটা সেলুন ছিল! ছিল বলতে সেলুনটা এখনো আছে, ‘টিপটপ সেলুন’।…

  • ডুমুরের ফুল এবং সাপের পাঁচ পা

    ডুমুরের ফুল এবং সাপের পাঁচ পা

    ডুমুরের ফুল আর সাপের পাঁচ পা দেখা নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। তবে ওই দুই জিনিসই কখনো চোখে দেখা যায় না। কেউ কখনো দেখেনি। আমি অন্তত এতদিন সেটাই জানতাম। কিন্তু হঠাৎ করে আন্দু আমাকে বলল, ডুমুরের ফুল দেখবি? আন্দু আমাদের বন্ধু। তার কথায় আমি চমকে উঠলাম। বললাম, তুই একটা পাগল নাকি! ডুমুরের ফুল হয় নাকি…