একটি মেয়ে

আফসার আমেদ

\ ২৭ \

রবি ব্যানার্জি সন্ধ্যার আগেই সেঁজুতিকে পৌঁছে দিলো আমরি হাসপাতালে। হাসপাতালে পৌঁছতেই সেঁজুতি কেমন হারিয়ে গেল রবি ব্যানার্জির কাছ থেকে। রবি ব্যানার্জি কাছে নেই, দৃষ্টির সীমায় নেই। মানুষের ভিড় আছে। তার মধ্যে হারিয়ে গেছে। সেঁজুতিও যেন হারিয়ে গেছে। শ্লথপায়ে ওয়েটিং রুমের ভিড়ে চলাচল করল কিছুক্ষণ। যেন তার চোখের দৃষ্টি নেই। এক অচেনা জগতে এসে পড়েছে। হারিয়ে ফেলেছে রবিকেও।

ওয়েটিং রুমের ভিড়ে চেনা কাউকে খোঁজে। চোখ দৃশ্যই তুলে নিতে পারে না, দেখবে কী। অচেনা সবকিছু, ঝাপসা সবকিছু। স্বপ্নোত্থিতের মতো ঘোরে। হয়তো রবি ব্যানার্জি কাছেই আছে, অথচ তাকে দেখতে পায় না। সে নিজেই যেন এক হারিয়ে যাওয়া মানুষ। হারিয়ে যেতে চায়ও।

পায়ে-পায়ে ঘুরতে থাকে সে। ওয়েটিং রুম ঘুরে কখন বেরিয়ে আসে সে। বাইরে এসে দাঁড়ায়।

পরম সামনে এসে হাত ধরে নাড়ায়। ‘এই সেঁজুতি, কতবার ডাকছি, শুনছিস না কেন?’

‘ও পরম তুই?’

‘কেমন যেন করছিস তুই!’

‘কিছুই তো করছি না।’

‘কখন এলি?’

‘এই তো। প্রহর, প্রহর, প্রহর কই?’

‘যাসনি?’

‘যাব কোথায়?’

‘থার্ড ফ্লোরে। কেবিন নম্বর থ্রি। নিচে তো প্রহরের বাবা আছেন। সান্ধ্যকে দেখলি না?’

‘কাউকে দেখতে পাইনি।’

‘তোর কী হয়েছে বল তো। তোকে চেনা যাচ্ছে না। তুই কি অসুস্থ?’

‘হ্যাঁ, আমি অসুস্থ।’

সান্ধ্য এসে দাঁড়াল। ‘কী ব্যাপার রে সেঁজুতি, এতো ডাকছি, শুনতে পেলি না কেন, বাইরে বেরিয়ে এলি?’

সেঁজুতি কিছু বলে না, ফ্যালফ্যাল করে তাকায়।

সান্ধ্য হাত দিয়ে নাড়ায় সেঁজুতিকে। ‘কী হলো তোর? অমন করছিস কেন?’

‘প্রহরের কী হয়েছে? কেন এমন হলো?’

পরম বলল, ‘সব ঠিক হ্যায়। প্রহরদা এখন কথা বলছে। তুই কাছে যা।’

‘আমি যাবো না।’

‘কেন?’

‘আমি গেলে যদি কথা বলতে ভুলে যায়।’

হো-হো করে হেসে ওঠে সান্ধ্য। ‘সাঁজবাতি, তুই কি পাগল হলি?’

‘আমি পাগল হতেই চাই।’

‘মুখে-চোখে জল দিয়ে আয়। ঠিকঠাক দাঁড়া। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তো পারছিস না।’

‘আমার মাথা ঘুরছে।’

‘ন্যাকামি করবি না।’

‘ন্যাকামি?’

‘হ্যাঁ ন্যাকামি।’

‘প্রহর ভালো আছে?’

‘ভালো আছে।’

‘তাহলে আমিও ভালো থাকব।’

সান্ধ্য বলল, ‘তোর কী হয়েছিল যে এতদিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিলি?’

‘খুন করেছিলাম। নিজেকেই।’

‘বেশ।’

পরম বলল, ‘চেপে যা সান্ধ্য, না-হলে মামণি এখুনি ভ্যাঁ করবে।’

এই কথায় সেঁজুতি হেসে ওঠে। স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ‘ঠিক বলছিস, প্রহর এখন ঠিকঠাক?’

‘একদম।’

‘ওর বাড়ির লোকজন আসছেন?’

‘ওই তো বাবা এখনো আছেন। মা একটু আগে ফিরে গেলেন। মামাও এসেছেন। ডাক্তার চৌধুরী অপারেশন করলেন। খুব বড়ো সার্জন।’

‘একটা পা কেটে ফেলতে হলো?’

‘হ্যাঁ।’

‘কোন পা-টা?’

‘বাঁ পা। হাঁটুর নিচ থেকে?’

‘কী করে হাঁটবে প্রহর?’

‘ক্র্যাচে।’

‘ইস।’

‘বিদেশে গিয়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে এলে -’

‘তাই হোক।’

পরমের হাত থেকে আধ-খাওয়া সিগারেটটা নিয়ে নেয় সেঁজুতি। তারপর প্রকাশ্যেই খায়। তার কোনো লজ্জা-ভয় নেই। স্রোতে ফিরে এসেছে সে। দায়িত্ব বেড়ে গেছে। বলল, ‘আমি কি যাব প্রহরের কাছে?’

সান্ধ্য বলল, ‘যাবি না কেন?’

পরম বলল, ‘তোর কথা অনেকবার বলেছে।’

সেঁজুতির চোখে সহসা জল এসে গেল।

পরম, ‘এই পাগলি করছিস কী?’

সান্ধ্য হো-হো করে হাসে।

পরক্ষণে সেঁজুতিও হাসে।

ওরা পৌঁছে যায় ওয়েটিং রুমে। ভিজিটিং কার্ড নিয়ে প্রহরের মামা ও এক অফিস কলিগ গিয়েছিলেন প্রহরকে দেখতে, ওঁরা ফিরে এলেন।

পরম বলল, ‘কাকাবাবু তো যাবেন, তুই কি এখন যাবি সেঁজুতি?’

সেঁজুতি চেয়ারে বসে পড়ে, ‘অন্য কেউ যান, আমি একটু পরে যাব।’

প্রহরের বাবা আর কে যেন গেলেন।

তখনই সেঁজুতি দেখতে পেল রবি ব্যানার্জিকে। রবি ব্যানার্জি কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

সেঁজুতি বলল, ‘ও রবিদা, আপনি ফিরে যাননি?’

‘এই যাবো। তুমি একা ফিরে যেতে পারবে?’

‘পারব পারব। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। ইস, আপনাকে এতক্ষণ আটকে রেখেছি!’

‘ঠিক আছে। রাতে কি আমার কাছে খাবে?’

‘না রবিদা, এটা বলার জন্য ধনবাদ।’

রবি ব্যানার্জি হাসেন। ‘পারতে খেতে।’

‘বন্ধুদের হাতে পড়েছি, এখন আমি ওদের হাতে।’

রবি ব্যানার্জি দ্বিধাজড়িত পায়ে ফিরে যান।

সেঁজুতি পরমের পাশে বসে।

সান্ধ্য দাঁড়িয়ে থাকে।

পরম বলল, ‘সান্ধ্যর সঙ্গে তুই যা সাঁজবাতি, কাকাবাবু ফিরে এসেছেন।’

‘কেন, তুই আগে যা না।’

‘সান্ধ্যর কাজ আছে, একটু পরেই বেরিয়ে যাবে।’

‘কী কাজ?’

‘রাতের কলকাতার অ্যাম্বিয়েন্স সাউন্ড রেকর্ড করতে যাবে।’

‘দারুণ তো। আমিও যাব।’

‘যাবি তো যা, প্রহরের কাছে থাকতে হবে না।’

‘প্রহরের কাছে থাকব।’

‘তাহলে যাবি কী করে?’

‘সান্ধ্য আমার জন্য অপেক্ষা করবে।’

‘ও একটু পরেই বেরিয়ে যাবে।’

‘তাই তো আমাকে প্রহরের কাছে থাকতে হবে। এখনো তো দেখাই হলো না।’ এক দিশেহারা বোধ সেঁজুতির। এমন একটা নগণ্য বিষয়ে লোভ দেখায় কেন সে? প্রহরের কাছে যাওয়া ও থাকা জরুরি নয়? সে এ কী পাগলামি করছে। বোধহয় এসব পাগলামি বেশি পছন্দ করছে বেশি। বাস্তবতার অাঁচ নিতে পারছে না। জলঢাকার অভিজ্ঞতা তার খুব খারাপ হয়েছে। ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। তার ওপর প্রহরের এই বিপদ! নীরজা নেই হয়ে গেছে। তাকে নিয়ে এসব যেন কৌতুক। বন্দুকের নলের মুখে পড়েছে। আক্রমণে আক্রান্ত সে। বরং ছেলেমানুষি আর পাগলামিতে থাকা ঢের ভালো। প্রহরের সামনে যাওয়াই মুশকিল। কী তাকে সান্ত্বনা দেবে? মোটের ওপর তার ভূমিকাটা কেমন হবে? কীভাবে দাঁড়াবে? কী কথা বলবে? অথচ দায় এড়াতে পারবে না। তাকে গিয়ে পৌঁছতেই হবে।

দ্রুত লিফটে উঠে পড়েছে সে সান্ধ্যর সঙ্গে। আরেকটু পরেই পৌঁছে যাবে সে প্রহরের কাছে। এক দুই তিন।

সান্ধ্য বলল, ‘কী হলো, অমন করছিস কেন?’

‘কী করছি?’

‘কেমন যেন!’

‘আমার খুব টেনশন হচ্ছে।’

‘প্রহর সামলে উঠেছে।’

‘বলছিস?’

‘বলছি। তুই আরো সহজ হ।’

‘হ্যাঁ সহজই হতে হবে।’

‘তোকে খুব মিস করেছে।’

‘এই তো আমি এসেছি।’

বলতে বলতে তারা পৌঁছে যায় প্রহরের কেবিনে।

প্রহরের চোখ সেঁজুতিকে দেখেছে। চিনেছে। ‘কি রে তুই এই এলি?’ প্রহরের স্বর খুব ক্ষীণ।

কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সেঁজুতি। ঝোঁকে। হাত দিয়ে বিছানা ছোঁয়। ‘এই তো তুমি ভালো হয়ে গেছ। আমি জানতাম তোমার কিছু হয়নি।’

‘কোথায় ছিলি?’

‘কোথাও। মরে গিয়েছিলাম, ধরে নিতে পারো।’

‘বাহ্, ভালো বললি।’

‘ঘুমোচ্ছ ঠিক?’

‘ওষুধে ঘুমোই। এমনিতে ঘুম হয় না।’

‘ঘুমোবে, ভালো করে ঘুমোবে। আর ঠিকমতো খাবে।’

‘তুই কি একটু রোগা হয়েছিস?’

‘না তো। বরং তোর কিছু মেদ ঝরেছে। বেশ কিছুদিন আটকা থাকবি, শরীর-স্বাস্থ্য ফিরবে, এখন বোহেমিয়ান হওয়ার চান্স নেই। এখন কী কষ্ট তোর?’

‘সিগারেট না খেতে পারার খুব কষ্ট।’

‘খাচ্ছিস নাকি?’

‘কেউ খেতে দিচ্ছে না।’

‘কেমন জব্দ। আর শারীরিক কষ্ট?’

‘পা-টা যেখান থেকে নেই, সেখান থেকে একটা যন্ত্রণা পাচ্ছি।’

‘অদ্ভুত তো।’

‘অদ্ভুতই।’

‘সময় কাটাচ্ছিস ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে?’

‘বই পড়তে চাইছি। পড়ছিও।’

‘কী ধরনের বই?’

‘ঘোস্ট স্টোরি।’

‘তাই? আমি ভয়ে পড়তে পারি না। আমার খুব ভূতে ভয়। অথচ ভূতে বিশ্বাস করি না।’

‘সে কি রে!’

‘কী খেতে দিলো আজ?’

‘সুপ। সিগারেট দিবি?’

‘নেই।’

‘আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাই।’

‘সে তো যাবি।’

‘আমি বাড়ি গেলে ভালো হয়ে যাব।’

‘ভালো তো এখনই হয়ে গেছিস।’

‘হাঁটতে যে পারি না। পারবও না।’

‘সেসব হবে। পারবি।’

‘পারব?’

‘হ্যাঁ।

‘আমাকে সবাই মিথ্যে বলে। সান্ত্বনা দেয়।’

‘দিনের বেলায়ও ঘুমোস নাকি?’

‘না। বই পড়ি।’

‘সারাক্ষণ?’

‘না। এফএম শুনি। অপারেশন টেবিলেও আমি মারা যেতে পারতাম।’

‘কী যা-তা বলছিস। অনেক কথা বলেছিস, এবার চুপ করে থাক।’

‘তুই আমার সামনে এসে বোস, তোকে দেখি। তুই এখুনি ফিরে যেতে পারবি না।’

‘যাব না। ভিজিটিং আওয়ারের পরও।’

‘কীভাবে?’

‘তোর খাটের নিচে লুকিয়ে পড়ব।’

প্রহর হাসে।

সান্ধ্য উঠে দাঁড়ায়। ‘আমি কাটলাম।’

‘বাই’ বলে হাত তোলে প্রহর।

সান্ধ্য বেরিয়ে যায়।

নার্স আসেন। প্রহরের হাতের চ্যানেলে ইঞ্জেকশন দিলেন। স্যালাইনের মাত্রাটা একটু কমালেন। এসি রুম। ভালোই ঠান্ডা। ঠান্ডায় কাঁপুনি এলো সেঁজুতির। প্রহর চোখ বুজিয়ে রেখেছে। প্রহরকে নীরবে দেখছিল সেঁজুতি। অনেক কথা বলেছে। একটু বোধহয় কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশ্রামে থাকুক। প্রহর ভালো হয়ে যাক, এই প্রার্থনায় সেঁজুতির মন ঘন হয়ে উঠল, নীরব হয়ে উঠল। এভাবে প্রহরকে রেখে যদি নিচে নেমে যায় সে? পালাবার এমন স্বস্তি সে রচনা করতেই পারে। কিন্তু এই অসহায় প্রহরকে দেখে তার কর্তব্যবোধই তাকে তার কাছে সান্নিধ্যনিষ্ঠ করে তুলছে। আমাদের পালাবার কত রাস্তা। কিন্তু মুখোমুখি থাকারও প্রয়োজন আছে। সেখানে তিলে তিলে স্বস্তি নির্মাণ করা যায়। এখানে প্রহরের জানালার পর্দার রং দেখে কাটানো যায়। ঘরের আলো-ছায়া দেখে স্নিগ্ধ হওয়া যায়। প্রিয় মানুষটা যে এখানে আছে। মরণের সঙ্গে লড়ে বেঁচে উঠছে। নীরজা আর নেই। সে যেন নীরজা হয়ে উঠছে। অসহায় নিরাশ্রয় মানুষ এমনই খড়কুটো চায়। তাকে তার আকাঙ্ক্ষার  জায়মানতায় রাখতে হবে। বন্ধু হতে চায় সেঁজুতি, প্রকৃত বন্ধু।

চোখ মেলে প্রহর।

ডান হাতটা বিছানার প্রান্তে বাড়ায়।

করতলে হাত রাখে সেঁজুতি। ‘কিছু বলছিস?’

‘না। চোখ বুজে তোকেই দেখছিলাম।’

‘আমি চলে যাইনি।’

‘যাবি না জানি।’

‘চলে যাওয়ার কথা ভেবেছি।’

‘চোখ বুজে তোকেই দেখতাম।’

‘কথা বলিস না।’

‘দেখি তোকে।’

‘ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়েছে, ঘণ্টি বাজছে।’

‘না, তুই যাবি না।’

‘আমি আসার জন্য যাব।’

আঙুলগুলো জোরে চেপে ধরেছে প্রহর। আঙুলগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘আসি রে, ভালো থাক, আমি তোর সঙ্গে আছি।’

সহসা কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো সে। তার চোখে জল এসে গেল। লিফটে আর গেল না সেঁজুতি। সেখানে লোকজন আছে। চারতলা থেকে একা একা সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে নিজের কান্নার জন্য অনেকটা সময় পাবে সে। সেইভাবে সে নিজেকে সাজাল। মনে করতে পারল, নিরাশ্রয়ের পৃথিবীতে সে এখন একা নয়। গ্রহণের আলো আসার জন্য সব জানালা-দরজা খুলে রেখেছে। প্রহরের নিরাশ্রয়তার ভেতর নিজের এক আশ্রয় খোঁজে সে। মেয়ে হিসেবে তো সে একাই, একটি মেয়ে। আর এই পৃথিবীরই মেয়ে। লড়তে হবে। লড়াই করতে হবে তাকে। এখনো কত লড়াই তার বাকি।

সান্ধ্য তখনো যায়নি। সেঁজুতিকে দেখে বলল, ‘কী রে চলে এলি?’

‘হাসপাতালের লোকজন আর থাকতে দিলো না, তাড়িয়ে দিলো। তুই এখনো গেলি না যে?’

‘তুই কি আমার সঙ্গে যাবি অ্যাম্বিয়েন্স সাউন্ড রেকর্ডিংয়ে?’

‘কতক্ষণের কাজ?’

‘গাড়ি আছে, ঘণ্টা দুয়েক লাগবে।’

‘তারপর আমরা এখানেই ফিরব না?’

‘এখানে?’

‘এখানে তো কেউ না কেউ প্রহরের জন্য রাত জাগবে।’

পরম বলল, ‘থাকবে তো, আমার ভাই।’

সেঁজুতি বলল, ‘আমিও এখানে রাত জাগব। এখন তোর সঙ্গে ঘুরে আসাই যায়। আমারও সময় কাটবে। তবে সান্ধ্য তোকেও এখানে ফিরতে হবে।’

‘দেখা যাক।’

‘দেখা যাক নয়।’

‘তুই হাসপাতালে রাত জাগবি কেন? এখন কারো থাকার কথা না, নিয়মমাফিক কেউ একজন থাকবে।’

‘আমাকে থাকতেই হবে। চল বরং ঘুরে আসি।’

‘পাগলামি করছিস?’

‘হ্যাঁ এটা আমার পাগলামিই। – এখন কটা বাজে?’

‘সন্ধ্যা ৭টা।’

‘চল চল, দশটার মধ্যে ফিরে পড়ব।’

‘এই পোশাকে?’

‘হ্যাঁ, এই পোশাকেই।’

পরম বলল, ‘শাবাশ বেটি!’

তারপর সেঁজুতি কী ভেবে বলল, ‘তুই চলে যা সান্ধ্য, আমি যাব না।’

‘কেন রে?’

‘আমি প্রহরকে ফেলে ঘুরে বেড়াতে পারব না।’

পরম বলল, ‘ঠিকই তো।’

সেঁজুতি বলল, ‘আমি যা বলছি ঠিক।’ তারপর কেঁদে ফেলল।

পরম, সান্ধ্য চুপ করে দেখতে লাগল তাকে। কিছু কথা বলল না।

সেঁজুতি কান্না সামলাতে পারল না। একা একা কেঁদে যাচ্ছে। নিজেকে সামলাতে বাথরুমে সটান ঢুকে পড়ে সেঁজুতি। বেসিনের সামনে আরশিতে নিজেকে দেখে। মনে করতে পারল সে সত্যিই প্রহরকে ভালোবাসে। আর প্রহরও তাকে ভালোবাসে।

বাথরুম থেকে সেঁজুতি যখন বেরিয়ে এলো, দেখল ওয়েটিং রুমে পরম আর সান্ধ্যরা নেই। সে তখন বাইরে তাদের খুঁজতে থাকে। চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। সেঁজুতি কাছে যায় তাদের।

পরম চায়ের ভাঁড় এগিয়ে ধরে সেঁজুতির দিকে। ‘চা খা।’

‘কি রে সান্ধ্য, তুই গেলি না?’

‘না। কাজটা ক্যানসেল হলো।’

‘তাহলে তুই থাকবি?’

‘থাকব।’

‘পরম।’

‘আমিও থাকব।’

‘বেশ।’ হেসে ওঠে সেঁজুতি। চোখে তার আনন্দের অশ্রু। মনে আশ্বাস পেল, বাঁচবে সে। প্রহর বেঁচেছে। সেও বেঁচে উঠবে। এই সমবায় যেমন সত্যি, তেমনি এও সত্যি, সে একটি মেয়ে।  (সমাপ্ত)