গোদার এবং কলকাতা সিনেমা কার্নিভাল

শব্দ ও ইমেজ : প্রতারক সিনেমা

এবারের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের অবশ্যই সেরা প্রাপ্তি জঁ লুক গোদারের সাম্প্রতিকতম ছবি ইমেজ বুক। ৮৭ বছরের গোদার এখনো সমান তুর্কি তরুণ। সেই ষাটের নবতরঙ্গের গোদারের মতোই। প্রচলিত সিনেমা ব্যাকরণকে তছনছ করে দেন তিনি। ক্যামেরাকে তিনি ব্যবহার করেন কলমের মতোই। ক্যামেরা দিয়ে গোদার প্রবন্ধ লেখেন। তাঁর শেষ তিনটি ছবিতে গোদার সিনেমার শক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দিহান হয়ে উঠেছেন। ইমেজ বুকের অগ্রজ গুড বাই টু ল্যাঙ্গুয়েজ এবং সোশ্যালিজমে তিনি ভাষার মৃত্যু ও সিনেমার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। সিনেমা ইজ ডেড ও ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ ডেড। আজ নয়, সিনেমাসত্যকে প্রায় সেই ষাটের দশক থেকেই চ্যালেঞ্জ করছেন গোদার। তিনি বলেন, ‘সিনেমা ইজ দ্য ট্রুথ টোয়েন্টি ফোর টাইম ইন অ্যা সেকেন্ড।’ সিনেমা সম্পর্কে এই তির্যক বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য থেকেই গোদারের সিনেমা-ভাবনা অনেকটাই আন্দাজ করা যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষে গোদার (হি) স্টোরি দু সিনেমা নামে ২৬৬ মিনিটের এক ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেন। এই ছবি নির্মাণে তিনি প্রায় দশ বছর সময় নেন। টাইটেলে ‘হি’টাকে তিনি প্রথম বন্ধনীতে রাখেন। তাই ইতিহাস হয়ে ওঠে গল্প। তথ্যের ওপর যথেষ্ট জোর দেন তিনি; কিন্তু  এই তথ্যের যা ব্যাখ্যা দেন তিনি তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তাই তাঁর সিনেমার ইতিহাস শেষ অবধি কোনো সরলরৈখিক বয়ান নয়, বরং হয়ে ওঠে এক প্রতিনিয়ত পালটে যাওয়া সিনেমার ক্রমবর্তমানের পরস্পরবিরোধী এক রূপরেখা। যা চলচ্চিত্রের কোনো সরলরৈখিক  কোনো ক্রোনোলজি নয়। যাকে বলে অর্ডার অব টাইম সেটা রাখেন না গোদার এবং ছবির ইতিহাসে তিনি যে মন্তাজের সন্ধান করেন তা  আইজেনস্টাইন-প্রবর্তিত মন্তাজ নয়। এই মন্তাজের উৎস শুটিংয়ে নয়, বরং এডিটিং টেবিলে।

গোদারের সাম্প্রতিক ছবি ইমেজ বুক তাঁর আগের এই তিনটি ছবির ভাবনারই সম্প্রসারণ। সিনেমার মূল শক্তি – শব্দ ও ইমেজ, এই নিয়েই গোদারের পরীক্ষা। এই শব্দ ও ইমেজকে কেন্দ্র করে আগের ছবিগুলোতে যেভাবে সিনেমাসত্য নিয়ে পরীক্ষা করেন, এখানেও ব্যবহার করেন একই প্রক্রিয়া। সিনেমায় কখনো বাস্তব যথাযথভাবে প্রতিভাত হয়নি বা ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তবকে অন্য এক চেহারায় উপস্থাপন করা হয়েছে। ইমেজ বুকে গোদার সিনেমার ভায়োলেন্স নিয়ে ক্যামেরা-প্রবন্ধ তৈরি করেন। এই ছবিতে ভায়োলেন্সই তাঁর বিষয়। বুনুয়েল এবং সালভাদর দালির তৈরি সেই আন সিঁয়ে আন্দালুর সেই চোখের মণি ক্ষুর দিয়ে কেটে দেওয়ার দৃশ্য দিয়ে ইমেজ বুকে চলচ্চিত্র ভায়োলেন্স প্রয়োগ ভাবনার পরীক্ষা শুরু করেন গোদার। এই ছবি গোদারীয় প্রয়োগে গণমাধ্যমের নানা শাখা-প্রশাখায় ঘুরলেও শেষ অবধি কেন্দ্রীয় থিম হয় ভায়োলেন্সই। এর জন্য তিনি বেছে নেন নানা ছবির ক্লিপিং – সে-ছবিতে শব্দ আসার সময় থেকে আজ অবধি। গোদারের ছবি মানেই রাজনৈতিক পলিমিক। তা ফিকশন বা ডকুমেন্টারি যে-চেহারাতেই আসুক না কেন। গোদার অবশ্য সিনেমায় গল্প বলায় বিশ্বাস করেন না। বললেও আদি-মধ্য-অন্ত এই চিরকালীন হলিউড ট্র্যাডিশনে বিশ্বাস করেন না। বরং চ্যালেঞ্জ করেন। ইমেজ বুকেও তাই ঘটেছে। বিভিন্ন হলিউড ছবির শব্দ ও ইমেজকে এডিটিং টেবিলে ব্যবচ্ছেদ করেন তিনি। ছবি ও শব্দের প্রচলিত হলিউডি ধ্যান-ধারণাগুলো ভেঙে এক নিখুঁত বিশেস্ন­ষণে তিনি প্রকাশ্যে আনেন হলিউডি ছবির ইমেজের মিথ্যাচারের আসল রহস্য। তাই ইমেজ বুকে তৈরি হয় ইমেজ ও সাউন্ডের মধ্যে এক পলিমিক্যাল দ্বান্দ্বিকতা। তাঁর ছবিতে এসেছে আরব দুনিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া নানা ভায়োলেন্স। বাস্তবের ভায়োলেন্স এবং সিনেমায় নির্মিত ভায়োলেন্সের মধ্যে মূল তফাৎটাও খুলে দেখান তিনি। তাই ইমেজ বুকে ক্রমশই তিনি এই বিশ্বাস সঞ্চারিত করেন যে, সিনেমার ইতিহাস শুধু চলচ্চিত্রের ইতিহাস নয়, বরং তা এক সামাজিক ইতিহাস, যা তাঁর কাছে এক আত্মানুভূতির পাঠ। তাই ইমেজ বুক শেষ অবধি হয়ে ওঠে সিনেমার প্রত্নতত্ত্ব – আর্কিওলজি অব সিনেমা, যেখানে অত্যন্ত সময়োচিতভাবে বিশেস্ন­ষণ করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের পরিবেশ লুণ্ঠন এবং হিংসার ইতিহাস। গোদারের অতীত ও সাম্প্রতিক পৃথিবী নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করে দর্শকদের। এক অসহনীয় বাস্তবতাকে মেনে নিতে বাধ্য হন দর্শক। আর এটাই চান তিনি। আধুনিক সভ্যতার ভেতরের অসারতা তুলে আনেন তিনি ছবিতে, যেখানে প্রধান হয়ে ওঠে সেসব ইমেজ, যেখানে দেখা যায়  সৈন্যবাহিনীর তা-ব, নিদারুণ বোমাবর্ষণ, পর্দা জুড়ে আগুনের  গোলা ও ফুলকি এবং এসবের সঙ্গে চলচ্চিত্রের ক্যামেরার যে-বিরোধাভাস সেটাই ক্রমে স্পষ্ট হয় ইমেজ বুকে। চলচ্চিত্রে যাকে অন্যভুবন বলে মনে হয়, সেটাই আমাদের বাস্তবের ভুবন। এই নিয়েই ইমেজ বুক, যার মধ্যে এক হাতের পাঁচ আঙুল থাকার মতো তিনি পাঁচটি অনুচ্ছেদ ঘিরে নির্মাণ করেন একটি সিনেমা-হ্যান্ড। সিনেমা বই আর ছবির বইথাকে না, হয়ে ওঠে প্রতিবাদী হাত।

 

২৫-এ এক লাখ

পরের বছরই রজতজয়মত্মী। এবার ২৪তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন ২০ হাজার দর্শক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রজতজয়মত্মী বর্ষে এই উৎসব যাতে এক লাখ মানুষ দেখতে পান সে-চেষ্টাই হবে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব এখন সিনে-বুদ্ধিজীবীদের কব্জা থেকে বেরিয়ে অনেকটাই সাধারণ মানুষ তথা কমন পিপলের কাছাকাছি। চলচ্চিত্র ফেস্টিভাল নয়, যেন সিনেমা কার্নিভাল। ১০ থেকে ১৭ নভেম্বর সে-মেজাজেই কাটাল কলকাতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতীয় সিনেমার মূলস্রোতের নায়ক শাহরুখ খান এবং কিংবদন্তি নায়িকা ওয়াহিদা রেহমান। ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ফেস্টিভাল চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ এবং চলচ্চিত্রজগতের আরো অনেকেই। ছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন। তিনি কয়েক বছর ধরেই এই উৎসব উদ্বোধন করছেন। তিনি প্রতিবারই সেমিনারসদৃশ এক প্রয়োজনীয় বক্তব্য রাখেন। কোনোবার সেটা হয় বাংলা সিনেমার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস, কোনোবার বাংলা সিনেমার সংগীত ইত্যাদি। এবার সে-ধারাতেই তিনি পর্দার পেছনের বাংলা সিনেমার মানুষদের নিয়ে বললেন। ব্যারিটোন কণ্ঠে তিনি যখন গবেষণামূলক বক্তব্য রাখেন, তখন কুড়ি হাজার দর্শকভর্তি স্টেডিয়ামে পিনপতন নীরবতা। উৎসবমঞ্চে ছিলেন ইরানের পরিচালক মজিদ মাজিদি। তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে এবার রেট্রোস্পেক্টিভ। বাংলা সিনেমার এবার ১০০। তাই মনে হয় উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হলো উত্তমকুমার-অভিনীত এন্টনি ফিরিঙ্গি। বাংলা সিনেমার ১০০ ঘিরে এক প্রদর্শনী হয় শিশিরমঞ্চে। নন্দন চত্বর সিনেমাময়। টালিউডদের মূলস্রোতের শিল্পীদের ভিড়। মঞ্চে নানা সেমিনার। বেশিরভাগটাই মেইনস্ট্রিম-ভাবিত। এবারের ফোকাস দেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখানকার একঝাঁক ছবি মাতিয়ে রাখে উৎসব। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক ফিলিপ নয়েসের ছবিতে আত্মিক টান অনুভব করেন দর্শকরা। অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক ফিলিপ নয়েসেরও রেট্রো ছিল এ-বছর। এই বিভাগে তাঁর আটটি ছবি দেখানো হয়  – ক্লিয়ার অ্যান্ড প্রেজেন্ট ডেঞ্জার, প্যাট্রিয়ট গেমস, ‍¨vবিট প্রুফ ফেনস, দ্য বোন কালেকটর, দ্য কোয়াইট আমেরিকান, নিউজ ফ্রন্ট, সল্ট, ও’ডেড ক্লাম্ব। নন্দন চত্বরে ছিল অস্ট্রেলিয়ান সিনেমাকে ঘিরে এক চমৎকার প্রদর্শনী। এই উৎসব উপলক্ষেই কলকাতায় এসেছেন পরিচালক ফিলিপ নয়েস। তিনি জানান, কলকাতা ইজ অ্যা সিডাকটিভ। এর  প্রেমে না পড়ে উপায় নেই।

 

৭০ দেশ, ১৭০ ছবি

২৩টি বিভাগে ৭০টি দেশ, ১৭০টি ছবি। তার মধ্যে পাঁচটি প্রতিযোগিতামূলক – ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন : ইনোভশন অব মুভিং ইমেজ, কম্পিটিশন অন ইন্ডিয়ান শর্ট ফিল্মস, কম্পিটিশন অন ডকুমেন্টারি, কম্পিটিশন অন ইন্ডিয়ান ফিল্মস, এশিয়ান সিলেক্ট। এছাড়া সিনেমা ইন্টারন্যাশানাল বিভাগে ছিল কান, ভেনিস প্রভৃতি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো সব ছবি। চলচ্চিত্রকারদের সাম্প্রতিক ছবিগুলো এক জায়গায় এনে করা হয়েছে ‘মেস্ট্রো’ বিভাগ। এই বিভাগে ছিল মোট ২১ ছবি, যার মধ্যে ছিল জাফর পানানি, লাস ভন টায়ারস, পাওলো সোরেনটিনো, ব্রম্ননো দুমোন্ট, গ্যাস্পার নো, কিম এল দুকের মতো দুনিয়া-কাঁপানো পরিচালকের ছবি। সেদিক থেকে এই উৎসবে ছিল সাম্প্রতিককালে তৈরি সেরা কিছু ছবি দেখার সুবর্ণ সুযোগ।  নজরুলমঞ্চে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ঘোষণা হলো পুরস্কার। ইনোভেশন অব মুভিং ইমেজ বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিল আস মেফেয়ার-পরিচালিত দ্য থার্ড ওয়াইফ; সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন আবু বার্ক শকি, তাঁর দ্য জাজমেন্ট ডে ছবির জন্য আর স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেল চূর্ণি গাঙ্গুলির তারিখ। ভারতীয় ভাষার ছবির প্রতিযোগিতায় সেরা ছবি পারভীন মোখেল-পরিচালিত উইডো অব সাইলেন্স, সেরা পরিচালক অরিজিৎ বিশ্বাস – ছবির নাম সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে এবং বিশেষ জুরি পুরস্কার ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্তের কেদারা। সেরা ভারতীয় তথ্যচিত্র  – এসানি কাঞ্জিলাল দত্ত-পরিচালিত সে চিজ। সেরা ভারতীয় ছোট ছবি গণেশ শেদালের গাধুল

ভিয়েতনামের মহিলা পরিচালক আস মেফেয়ারের ছবি দ্য থার্ড ওয়াইফের সময়কাল উনবিংশ শতাব্দী। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে ১৪ বছরের এক বালিকা, যার বিয়ে হয় ভিয়েতনামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বর তার চেয়ে বয়সে অনেক বড় এবং সে তার স্বামীর তৃতীয় বউ। তিন বধূই একই বাড়িতে থাকে। গৃহস্বামী পুত্রসন্তানের আশায় বেশিরভাগ সময়ই কাটান মে নামের বালিকাবধূর সঙ্গে। ১৪ বছরের মেয়ের কাছে যৌনতা এক অচেনা ভুবন। কিন্তু তাকে যৌনতার নানা ছলাকলা শিখিয়ে দিতে  থাকে তার সতীনরাই। সে ক্রমশ যৌনভুবন চিনে ফেলে এবং সে খুঁজে নেয় এক মুক্তজীবন। স্বামীর সঙ্গে যৌনতায় সে ক্রমশ নিয়ে আসে পুরুষশাসিত যৌনতার বদলে নারীশাসিত এক যৌনজীবন; কিন্তু স্বামীকেন্দ্রিকই। সেদিক থেকে শেষ অবধি দ্য থার্ড ওয়াইফ হয়ে ওঠে এক ফেমিনিস্ট ফিল্ম। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির সোনার সিংহ জিতে নেয় কিল কি ডুকের সাম্প্রতিকতম ছবি হিউম্যান, স্পেস, টাইম, অ্যান্ড হিউম্যান। পাশাপাশি পেলাম জাফর পানানির নতুন ছবি ৩ ফেসেস

এবারের মেস্ট্রো বিভাগ ছিল খুবই আকর্ষণীয়। গোদার, পানানি, কিম কি ডুকের সঙ্গে এই বিভাগেই তো দেখানো হলো পায়োল পায়োলস্কির দ্য কোল্ড ওয়ার, বিলি অগস্টের অ্যা ফরচুনেট ম্যান, জর্জ অভাসিলির কাবুলা – এরকম বিখ্যাত পরিচালকদের সাম্প্রতিক সব ছবি।

 

সত্যজিৎ, মান্টো ও ঋত্বিক

এবার সত্যজিৎ রায় মেমোরিয়াল ভাষণ দিলেন অভিনেতা পরিচালক নন্দিতা দাস। আগেরবার এই ভাষণই দেন আরেক অভিনেত্রী পরিচালক অপর্ণা সেন। নন্দিতা তাঁর ভাষণে সত্যজিৎ এবং ঋত্বিকের জীবনযাপনের বৈপরীত্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ঋত্বিকের জীবনে ছিল এক দুরন্ত সংগ্রাম, যা প্রতিনিয়ত। ঋত্বিকের জীবনসংগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যায় সাদাত হাসান মান্টোর জীবনকে। নন্দিতা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, শিল্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনসংগ্রামের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে আছে তার প্রমাণ তো ঋত্বিক এবং মান্টোই। সত্যজিতের সংগ্রাম প্রতিনিয়ত জীবনের সংগ্রাম নয়, তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি স্তরের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম ঋত্বিক ও মান্টোর জীবনেও ছিল। তাঁর সঙ্গে বাড়তি হিসেবে ছিল প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই। আর এই লড়াইকেই তাঁরা শিল্পসৃষ্টিতে রূপান্তরিত করেন। তাঁর থেকেই তাঁদের জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। সাদাত হাসান মান্টোকে নিয়ে ছবি করেছেন নন্দিতা। সে-ছবি বেশ বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। নন্দিতা আরো বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত জীবনসংগ্রামের সঙ্গে মান্টোর জীবনযুদ্ধের কোথায় যেন এক মিল খুঁজে পাই, যা আমাকে মান্টোকে নিয়ে ছবি করতে উৎসাহ দেয় বা বলা ভালো, আমাকে দিয়ে মান্টো ছবিটি করিয়ে নেয়। মান্টো ছবি নির্মাণ আমার জীবনে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।’ নন্দিতা আরো মনে করেন, আমরা এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি। এই সময় মান্টোর মতো ছবি করতে যাওয়া বেশ ঝুঁকির কাজই ছিল। আর সেই ঝুঁকি তিনি অত্যন্ত ধৈর্যের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছেন।

 

দেশকাল ও মাজিদি

সিনেমা কখনো দেশকালের সীমানা মানে না, এটাই বিশ্বাস করেন ইরানের পরিচালক মাজিদ মাজিদি। এবারের কলকাতা চলচ্চিত্রে তাঁর  রেট্রোস্পেক্টিভে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন মাজিদ। ১৯৫৯-এ তেহরানে জন্ম নেওয়া এই পরিচালকের চারটি ছবি দেখানো হলো। ১৯৭৮ সালে ইরানে বিপস্ন­ব হওয়ার পর সিনেমা-অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন মাজিদ।  সেখান থেকেই সিনেমা পরিচালনা। ভারতের পটভূমিতেও একটি ছবি করেছেন – বিয়ন্ড দ্য ক্লাউড। সে-ছবিও দেখানো হলো এই উৎসবে। দেখানো হলো মাজিদির বিতর্কিত ছবি – মহম্মদ : দ্য মেসেঞ্জার অব গড। গোদারের পরেই মাজিদি ছিলেন আরেক আকর্ষণ। এবার বার্গম্যান ১০০। শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে দেখানো হলো তাঁর আটটি ছবি।