জীবনের জন্য আচার

অনুবাদ : ইবনে মোতালিব

যখন সে মারা গেল বেশ একটা শেষকৃত্যের আয়োজন করল। বুড়ির বন্ধুরা সবাই এলো, কদাকার কজন বুড়ি, মাথায় উলের টুপি, জন্তুর পশমে তৈরি কলারের শীতের কোট, গন্ধটা রেশমগুটির, যেন ভেতর থেকে বড় ও পা-ুর মাথা ঠেলে বেরিয়ে আসছে। কফিন যখন বৃষ্টিভেজা দড়িতে ঝুলিয়ে নামানো হচ্ছে, তারা বেশ কায়দা করে নাকে শেস্নষ্মা টানল, তারপর ছোট ছোট দলে, অভাবনীয় শৈলীর ভাঁজ করা যায় তাদের এমন ছাতার গম্বুজের নিচে একত্রিত হলো, তারপর বাসস্টপের দিকে এগিয়ে গেল।

সেদিন সন্ধেবেলাতেই সে আলমারি খুলল, বুড়ির দলিলপত্র সেখানেই ছিল, কী খুঁজতে যাচ্ছে তা না বুঝেই সেখানে খোঁজাখুঁজি করল – টাকা নাকি গোপন বন্ড। শরতের পাতাঝরার দৃশ্যের সঙ্গে টেলিভিশনে বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা বন্ডের বিজ্ঞাপন তো সবসময়ই প্রচারিত হয়। খুঁজতে খুঁজতে সে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কিছু পুরনো ইন্স্যুরেন্স পুস্তিকা, বাবার একটি পার্টি মেম্বারশিপ কার্ড পেল। বাবার মৃত্যু হয় ১৯৮০ সালে। তার অভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল যে, সাম্যবাদই আধিভৌতিক অনন্ত গন্তব্য। সে আরো পেল নার্সারি স্কুলে থাকতে তার নিজের আঁকা কিছু ছবি, কার্ডবোর্ডের ফোল্ডারে রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো – এটা পাওয়া যাবে সে কখনো ভাবতেই পারেনি। আরো ছিল আচার, চাটনি ও জ্যামের রেসিপিভর্তি কতগুলো নোটবই। প্রতিটির আলাদা আলাদা পাতায় সলাজসজ্জার শিরোনাম – খাবারের সঙ্গে সৌন্দর্য প্রকাশের একটা তাগিদ থাকে, ‘শর্ষে আচার’, ‘ডায়ানার মিষ্টিকুমড়োর আচার’, ‘এভিনন সালাদ’, ‘ক্রিয়ল স্টাইল মাশরুম’; ছোটখাটো বিষয়ও বাদ পড়েনি – ‘আপেল-চামড়ার জেলি’ কিংবা ‘মিষ্টি সিরায় ব্রাইট ফ্ল্যাগ’ এমন আরো কিছু।
এসব তাকে দ্রম্নত নিচে সেলারে ছুটতে উৎসাহিত করল – বহু বছর সে সেলারে ঢোকেনি; কিন্তু বুড়ি ঠিকই আনন্দে সেখানে সময় কাটিয়েছে। সেলারের কথাটা কখনো অবশ্য তার চিন্তা থেকে ছিটকে যায়নি। যখনই তার মনে হয়েছে সে চড়া ভলিউমে টিভি চালিয়ে খেলা দেখছে; যখন তার মৃদু ক্ষুব্ধ বিড়বিড় কোনো কাজে আসেনি, সে তখন চাবির ঝনঝন শুনতে পায়, তারপর দরজার শব্দ, বুড়ি দীর্ঘ শান্তিপূর্ণ সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যেত।
ততক্ষণে সে আনন্দে নিজের প্রিয় কাজটিতে লেগে পড়ত – রঙিন জার্সির দুই দল মাঠের এক আধেক থেকে অন্য আধেকে ছুটছে আর সে বিয়ারের ক্যান একটার পর একটা খালি করে চলেছে।

সেলারটা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে, এখানে জীর্ণ একটা কার্পেট, হ্যাঁ তার মনে পড়ছে, ছোটবেলা থেকেই এটা দেখে আসছে; আর এখানটায় ছিল একটা মোলায়েম হাতওয়ালা চেয়ার, এর ওপর সুন্দর করে ভাঁজ করা একটি কম্বল। একটা বাতি ছিল আর কিছু বই, পড়তে পড়তে ছেঁড়াফাড়া অবস্থা। কিন্তু যা চোখে পড়লে কারো তাক লেগে যাওয়ার কথা তা হচ্ছে, শেলফে রাখা পালিশ করা বয়ামভর্তি আচার। প্রত্যেকটার গায়ে আঠাযুক্ত লেবেল লাগানো, নোটবইয়ের নামগুলো লেবেলের ওপর পুনরাবির্ভূত। ‘ঘেরকিনস ইন স্টাসিয়া মেরিনেড ১৯৯৯’, ‘লাল মরিচের অ্যাপেটাইজার ২০০৩’, ‘মিসেস জেড্’স ড্রিপিং’ – কোনো কোনো নাম বেশ রহস্যময় শোনায় – ‘অ্যাপার্টাইজড স্ট্রিঙ্গ বিনস’। ‘অ্যাপার্টাইজড’ শব্দটির মানে কী জীবনভর চেষ্টা করলেও তার মনে আসবে না। তবে বড় বয়ামের ভেতর পা-ুর মাশরুম আর ঠাসাঠাসি করে রাখা রক্তলাল মরিচ তার জীবনের বাসনা জাগিয়ে তোলে। সে বয়ামের সবকিছুই পরীক্ষা করে, কিন্তু এসবের পেছনে কাগজপত্রভর্তি কোনো ফাইল কিংবা প্যাঁচানো টাকা খুঁজে পায় না। দেখে এমনই মনে হয় যেন বুড়ি তার জন্য কিছু রেখে যায়নি।
এখন সে তার বসার ঘরটার পরিসর মহিলার শোয়ার ঘর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলো। এখন সে তার নোংরা কাপড় ও বিয়ারের ক্যান সেখানে ছুড়ে ফেলতে শুরু করল।
কিছু সময় পরপর এক বাক্সভর্তি আচার সেলার থেকে ওপরে নিয়ে আসে, বয়াম খোলে হাতের এক মোচড়ে, তারপর কাঁটাকামচ ঢুকিয়ে দিয়ে ভেতরের জিনিস বের করে নিয়ে আসে। বিয়ার আর বাদাম, সঙ্গে ম্যারিনেটেড মরিচ এবং শিশুর মতো নরম ছোট্ট শসা – দারুণ স্বাদের খাবার। সে টেলিভিশনের সামনে বসে তার জীবনের নতুন পরিস্থিতি ও নতুন স্বাধীনতার কথা ভাবে এবং সে অনুভব করে যেন স্কুলের শেষ পরীক্ষা পাশ করেছে আর এখন গোটা পৃথিবী তার সামনে উন্মুক্ত। যেন একটি নতুন এবং আগের চেয়ে ভালো জীবন তার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তার বয়স হয়েছে – গত বছর চলিস্নশ ছাড়িয়েছে। কিন্তু সে নিজেকে বেশ তরুণ অনুভব করছে, হাই স্কুল পাশকরাদের মতো।
যদিও মায়ের শেষ পেনশনের টাকা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছিল, তখনো তার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সময় নেই – উত্তরাধিকারীর জন্য সে যা রেখে গেছে ততদিনে তা খেয়ে শেষ করে ফেলবে। বড়জোর সে রুটি আর মাখন কিনবে আর বিয়ার। তারপর হয়তো সত্যিই সে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়বে, সে-কথা বুড়ি কুড়ি বছর ধরে ঘ্যানঘ্যান করে তাকে বলে আসছে। সে হয়তো লেবার এক্সচেঞ্জ অফিসে যাবে, তারা হয়তো তার মতো চলিস্নশ বছর বয়স্ক একজন হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েটের জন্য কোনো একটা কাজ খুঁজে বের করবে। বুড়ি যে হালকা স্যুট আর তার সঙ্গে মানানসই নীল শার্ট ইস্ত্রি করে ওয়ার্ডরোবে ঝুলিয়ে গেছে, সেটা পরেই হয়তো শহরের দিকে এগোবে – অবশ্য টেলিভিশনে যদি কোনো ম্যাচ না থাকে।
তারপরও সে বুড়ির চটিজোড়ার ঘুরে বেড়ানো, একঘেয়ে খসখসে শব্দ পাচ্ছে না বলে অনুভব করছে, এর সঙ্গে থাকত শান্ত স্বরের কিছু কথা, ‘টেলিভিশনটাকে একটু বিরাম দিতে পারিস না? বাইরে বেরিয়ে কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, কিংবা একটা মেয়ের সঙ্গেও দেখা করে আসতে পারিস না? বাকি জীবনটা কি তুই এভাবেই কাটাতে চাস? তোর নিজের একটা ফ্ল্যাট খুঁজে নেওয়া উচিত। এখানে তো আমাদের দুজনের জায়গা হয় না। মানুষ বিয়ে করে, তাদের ছেলেমেয়ে হয়, ছুটিতে ক্যাম্পিং করতে বেরিয়ে পড়ে, বার-বি-কিউর জন্য মিলিত হয়। কিন্তু তোর কি কোনো লজ্জা-শরম নেই, আমার মতো একটা অসুস্থ বুড়িকে সবসময় বিরক্ত করে চলেছিস? প্রথমে তোর বাপ, এখন তুই – সব কাপড়-চোপড় আমাকে ধুতে হয়, ইস্ত্রি করতে হয়, বোঝা বয়ে বাজারসদাই ঘরে আনতে হয়। ওই টেলিভিশনটা সবসময় আমার জন্য বিরক্তিকর। আমি ঘুমোতে পারি না। কিন্তু ভোর পর্যন্ত তুই এটার সামনে বসে থাকিস! সারারাত ধরে তুই কী দেখিস? তোর একঘেয়েও লাগে না?’
বুড়ি এমন করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বলে যেত, সে তখন শব্দ এড়াতে কয়েকটা ইয়ারফোন কিনে আনে। এটা এক ধরনের সমাধান বটে – বুড়ি টেলিভিশনের শব্দ শোনে না আর সে শোনে না বুড়ির কথা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেশি রকম শান্তি। তার একদা পরিচ্ছন্ন ও গোছানো রুমে ছড়িয়ে আছে ম্যাট, কার্ডবোর্ডের বাক্সের নিচে ঢুকে পড়েছে গস্নাস ক্যাবিনেট, অদ্ভুত বাজে গন্ধ আসছে, গন্ধটা পচা ঝুরঝুরে কাপড়ের, ফাঙ্গাস ধরা প্লাস্টারের আর একটি ঘের দেওয়া জায়গায় বাতাস চলাচল না থাকায় গেঁজানো শুরু হয়েছে। একদিন সে যখন পরিষ্কার তোয়ালের খোঁজ করছে, ওয়ার্ডরোবের নিচের তাকে পেয়ে যায় আরো সারিবাঁধা আচারের বয়াম। বেডিংয়ের নিচে উলের গোলার আড়ালে লুকোনো, পার্টিজানদের মতো, বয়ামের জগতে ফিফথ কলাম। সে সতর্কদৃষ্টি মেলে দেখল বয়ামের বিচারে এগুলো সেলারের আচার থেকে ভিন্ন। লেবেলের ওপর লেখাগুলো কিছুটা মলিন হয়ে এসেছে, ১৯৯১ ও ১৯৯২-এর বয়াম কয়েকটাই দেখা গেল; কিন্তু বিচ্ছিন্ন নমুনার কয়েকটি আরো পুরনো – ১৯৮৩ আর একটা ১৯৭৮-এর। বাজে গন্ধ এখান থেকেই বেরোচ্ছিল। বয়ামের ধাতব আংটায় মরচে পড়েছে এবং ভেতরে বাতাস ঢুকে গেছে। বয়ামের ভেতর যা-ই থাকুক, এখন তা বাদামি একটি দলায় পরিণত হয়েছে। বিরক্ত হয়ে সে এটা ছুড়ে ফেলল। বয়ামের লেবেলে একই ধরনের লেখা দেখা গেল ‘কিশমিশ পুরিতে মিষ্টিকুমড়ো’, ‘মিষ্টিকুমড়ো পুরিতে কিশমিশ’, কিছু কচি শসাও ছিল। পুরো সাদা রং ধরেছে। এরকম আরো অনেক বয়াম আছে, যদি লেবেলে সবিনয়ে নামটা না থাকত তার পক্ষে বের করা সম্ভব ছিল না কী আছে ভেতরে। মাশরুমের আচারটা শনাক্ত করার অযোগ্য অন্ধকারবর্ণ জেলি হয়ে গেছে – জমাটবাঁধা কালো জ্যাম। বয়ামের পিঠা জমে কোঁচকানো ক্ষুদ্র টুকরো দেখতে মুঠির মতো মনে হয়েছে।
জুতোর আলমারিতে এবং বাথটাবের পেছনের ফাঁকটিতে আরো কতগুলো বয়াম পেয়ে গেল। আচারের বিস্ময়কর এক সংগ্রহ। বুড়ি কি এগুলো তার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল? এতগুলো বয়ামভর্তি আচার সে কি নিজের জন্যই বানিয়ে রেখেছিল – একদিন ছেলে তো চলেই যাবে, এই ভেবে? নাকি সে এসব আসলে ছেলের জন্যই রেখে গেছে – এই ভেবে যে সে তো আগেই মারা যাবে। এটা
তো ঠিক মায়েরাই ছেলেদের আগে মারা যায়, হতে পারে ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এতগুলো বয়াম ভর্তি করে রেখে গেছে।
সঞ্চিত আচারগুলোকে সে একধরনের আদর ও বিবমিষার মিশেল দিয়ে পরীক্ষা করছিল। দেখতে দেখতে সে পেয়ে গেল রান্নাঘরের সিঙ্কের নিচে বয়ামের লেবেলে লেখা ‘ভিনেগারে জুতোর ফিতে ২০০৪’ – এটা দেখে তার সতর্ক হওয়ার কথা। সে ভেতরের দিকে তাকিয়ে দেখল, বাদামি রঙের ফিতে পেঁচিয়ে বল হয়ে নোনা পানিতে ভাসছে, ভেতরে মশলার কালো গুঁড়ো। সে অস্বস্তিবোধ করে, এ পর্যন্তই।
যখনই সে কান থেকে ইয়ারফোনটা বের করে বাথরুমে যায়, বুড়ি তার অপেক্ষায় থাকে। বুড়ি তড়িঘড়ি করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে তার পথ আগলে দাঁড়ায়। ‘সব ছানাই তো পাখির বাসা ছেড়ে যায়, এটাই প্রকৃতির নিয়ম, বাবা-মায়ের তখন বিশ্রাম দরকার হয়। এই আইন প্রকৃতির সবার জন্য। তাহলে তুই কেন এখনো আমাকে জ্বালিয়ে মারছিস? অনেক আগেই তো তোর বেরিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, তারপর নিজের জীবন শুরু করতি।’ গোঙানো স্বরে কথাগুলো বলে। তারপর ছেলে যখন আসেত্ম করে তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করে, সে তার শার্টের হাতা আঁকড়ে ধরে, তার স্বর চড়ে ওঠে – চিৎকারের মতো, ‘আমি একটি নীরব বার্ধক্যের জীবন চাই, আমাকে একা থাকতে দে, আমি বিশ্রাম চাই।’ ততক্ষণে সে বাথরুমে ঢুকে পড়ে, ভেতর থেকে চাবি ঘুরিয়ে সে নিজের ভুবনে ডুবে যায়।
বাথরুম থেকে বেরোনোর পথে বুড়ি আবার তাকে আটকাবে, এবার তেমন কড়া কিছু বলার জোর থাকত না। তারপর সে এখানে-ওখানে ঘুরে নিজের বেডরুমে নিরুদ্দেশ হয়ে থাকে, পরদিন সকাল পর্যন্ত তার কোনো হদিসই নেই। তারপর ইচ্ছে করে হাঁড়ি, বাসন- কোসনের আওয়াজ করত, যাতে ছেলে আর ঘুমোতে না পারে।
কিন্তু এ তো সবাই জানে, মায়েরা তাদের সন্তানদের ভালোবাসে, আর সেজন্যই তো মায়েরা আছে – ভালোবাসবে, ক্ষমা করে দেবে। কাজেই সেলারে পাওয়া জুতোর ফিতে কিংবা টমেটো সসের স্পঞ্জ নিয়ে সে মোটেও উদ্বিগ্ন ছিল না। খুব আনুগত্যের সঙ্গে লেবেলে লেখা ‘টমেটো সসের মধ্যে স্পঞ্জ ২০০১’। সে কয়েকটা খুলে দেখল লেবেলে যে লিখা আছে তা মিথ্যে নয়। তারপর এটা বিনে ছুড়ে ফেলল। কিন্তু সে কিন্তু সত্যিকারের সুস্বাদু জিনিসই পেয়ে গেল। সেলারের ওপরের শেলফের শেষ জারটিতে পেয়ে গেল মজাদার পর্ক নাকল্ – শূকরের পায়ের পাতার হাড়ের ও মাংসের রান্না; বুড়ির রুমের পর্দার পেছনে পেল ঝাল মশলার বিটের আচার। দুদিনে সে কয়েক বয়ামভর্তি খাবার শেষ করে ফেলল। মিষ্টান্ন জাতীয় কিছু খাবারের খোঁজে আঙুল দিয়ে বয়াম থেকে তুলে নিল নাশপাতির জ্যাম।

ইংল্যান্ড-পোল্যান্ড ম্যাচ দেখার আগে সেলার থেকে পুরো বাক্স ভরে আচার তুলে আনল, আর চারপাশে সারি সারি বিয়ার। যখন যেটা খুশি বাক্স থেকে বয়ামে তুলে এনে কী খাচ্ছে সেদিকে না তাকিয়ে একটার পর একটা সাবাড় করতে থাকল। তার নজর পড়ল একটি ছোট বয়ামের ওপর – লিখতে গিয়ে বুড়ি একটি মজার ভুল করেছে মাশরুমের বদলে লিখেছে ‘মাশডুমের আচার ২০০৫’। নরম সাদা টুপির মতো টুকরোগুলো তুলতে সে কাঁটাচামচ কাজে লাগাল; এটা জীবন্ত কিছুর মতো তার গলা দিয়ে নেমে গেল। এর মধ্যে কয়েকটা গেলা হয়ে গেল, সে যে অনেক বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেলেছে তার সে-খেয়ালও নেই। সে যখন রাতের বেলা বাথরুমে গেল তার মনে হলো বুড়ি সেখানে দাঁড়িয়ে, অসহ্য তীক্ষন স্বরে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছে, তারপর তার মনে হলো সে তো নেই, আসলে মারা গেছে। সকাল পর্যন্ত তার বমি হতে থাকল, এতে তেমন কাজ হয়নি। হাসপাতালে তার লিভার ট্রান্সপস্ন্যান্ট জরুরি বলে জানানো হলো, কিন্তু কোনো দাতা পাওয়া গেল না; কাজেই তার জ্ঞান আর ফিরল না, এ-অবস্থায় কয়েকদিন পর তার মৃত্যু হলো।
কিছু সমস্যা দেখা দিলো। মর্গ থেকে তার লাশ নিয়ে শেষকৃত্যের আয়োজনের জন্য কেউ এগিয়ে এলো না। শেষ পর্যন্ত তার মায়ের বন্ধুরাই এগিয়ে এলো, সেই কদাকার হ্যাটপরা বুড়ির দল, বিদ্ঘুটে শৈলীর ছাতা কবরের ওপর ফেলে তারাই তার দায়সারা শেষকৃত্যের আচারগুলো সম্পন্ন করল।