ঠাকুরের দেশ

(আমার প্রথম ঢাকা সফর স্মরণে)

পদ্ম প্রসাদ দেবকোটা

 

যা ছিল আমার ওপর অধিষ্ঠিত

সে-অনন্তের ঊর্ধ্বে আমার অধিষ্ঠান

এবং আমি অগ্রসরমান –

নিচে আলোর চুমকিখচিত মাটি।

ও ঠাকুরের দেশ,

আধেক চাঁদ মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে

কখন তোমার বাণীরে শুনিতে পাব?

 

হিমালয়ের কঠিন সৌন্দর্য

তোমার জলমগ্ন নিষ্কলুষ স্নিগ্ধতায়

বিলীন হয়ে যায়,

আর একদিন তুমি পৃথিবী-জাগানিয়া

অগ্নিময় কোনো নীরবতার মতো জেগে উঠবে

কর্মের মহতী প্রয়োজনে।

তবে তাঁর সংগীতের ধ্বনিতে বেড়ে ওঠো,

সস্তা রেস্তোরাঁ অথবা পথে

মানুষ তার ধুলোমলিন আত্মা নিকিয়ে নেয় –

আর মামুলি আকৃতির আবক্ষমূর্তি হয়ে ওঠে।

তৃষ্ণার দহনের মতো অন্তরে জ্বলে স্বাধীনতা,

আনন্দের তীব্রতাহীন হৃদয় ক্ষয়িত হয়।

নবাবের প্রাসাদে আভিজাত্যের ছাপ,

বিশাল মহলগুলোর মহার্ঘ আসবাব

প্রতারিত করে সরল হৃদয়।

 

 

 

শহরে একজন ভিখারিনি

আর তার শিশুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল,

আমাকে বলেছিল – তুমি ভালোবাসতে জানো না।

এক টুকরো হাসির পশ্চাতে লজ্জা ঢেকে

প্রস্থান করলাম,

মন বা হৃদয় কোনোটাই দিতে প্রস্তুত ছিলাম না,

আশীর্বাদহীন ব্যস্ত নগরীতে হাঁটলাম

অথবা গাড়িতে ধাবমান

খুঁজলাম ঠাকুরের দেশ।

 

হর্নের বিকট শব্দ, হাজার-লক্ষ চলন্ত পা,

গাড়ির চাকা, ঝুলন্ত ধোঁয়া, পূতিগন্ধ নর্দমা,

মোড়ে মোড়ে আবর্জনার স্তূপ – সমস্তই

বোকার হদ্দ বলে বিদ্রƒপ করল আমাকে!

 

সবুজ বনজ গ্রাম

পুকুর দিঘির গ্রাম,

সেখানেই খুঁজে পাবে রবীন্দ্র ঠাকুর –

তাঁর বাঁশি আর বেদনা যেখানে।

 

 

(কবি পদ্ম প্রসাদ দেবকোটা নেপালের ত্রিভুবন বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক। জন্ম ২৯ জুন, ১৯৫২। কবিতা ছাড়াও নেপালি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকায় তিনি প্রবন্ধ ও সমালোচনা সাহিত্যে অবদান রেখেছেন। তিনি ‘Literature’  নামে ইংরেজি সাহিত্য জার্নাল সম্পাদনা করেছেন এবং Literary Association of Nepal-এর সঙ্গে ১৯৮১ সাল থেকে জড়িত। ১৯৯৯ সালে তাঁর ছোটগল্প সংকলন Madness of a Sort প্রকাশিত হয়।)