ডলি কাকির নতুন চটি

অবশেষে চটি এলো বাড়িতে। কাকিকে চটিয়ে তবেই এলো। ঝগড়া হলো,

মান-অভিমান হলো, কাকি ও কাকা দুই বিছানাতে ঘুমালো পর্যন্ত। অনেক জল গড়ানোর পর মোক্ষম সময়ে চটি জোড়া এলো। কাকি যেদিন বিয়েতে যাবে তার ঠিক আগের দিন।

ডলি রানি পোদ্দার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। পারে না, তবু টেনে টেনে সময় পার করছে এখন। সেই কবে ঢুকেছে স্কুলে। চল্লিশ বছর হতে চলল। ম্যাট্রিক পাশ করে আর পড়তে পারেনি ডলি। বিয়ে হলো অবনির সঙ্গে। আর বয়সটা আঠারো হতে না হতেই চাকরিটা হয়ে গেল। অবনির বাড়ির গা-লাগা স্কুল। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয়, এক স্কুলেই পার করল পুরো সময়। অবশ্য অনেকবার মনে করেছে, স্বেচ্ছায় অবসর নেবে। অবনিরও একই মত। কিন্তু স্কুলটার দিকে একবার তাকালেই অদৃশ্য শেকলে বাঁধা পড়ে ডলি। এই চল্লিশ বছরে আধাপাকা ঘরটা কতবার রং বদলালো, কতবার মেরামত হলো, কয়েক রকমের

চেয়ার-টেবিল এলো-গেল; কিন্তু মায়াটা দিনদিন বাড়তেই থাকল। স্কুলটা তার কাছে অনেকদিনের যত্নে গড়া একটা বাগান হয়ে উঠেছিল। মায়া-কানন। তখনো শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম হয়নি। রং-বেরঙের পোশাক সবার শরীরে। শিশুদের মনে হতো তার বাগানে শত রঙের ফুল। অবসর নেওয়ার ক্ষেত্রে এই শিশুরাও বাধা। আর এখন সবচেয়ে বড় বাধা তার সহকর্মীরা। তার শুরুর সহকর্মীরা সবাই অবসরে গেছে। সর্বশেষ যে অবসরে গেছে, তাও দশ বছর। এখন যারা আছে, তারা এ-যুগের। যেমন চটপটে তেমন দক্ষ। আবার ফাঁকিবাজও। অবসরের কথাটা তুললে এরাই বন বরইয়ের কাঁটা হয়ে জাপটে ধরে। এ বাঁধন আর খোলা যায় না। তারাও এখন কাকি বলেই ডাকে। শিক্ষকদের মধ্যে দুজন আছে, যাদের বাবা ডলির সঙ্গে চাকরি করেছে। সেই সূত্রেও তারা কাকি ডাকে। এখন সব সূত্রই গেছে। টিকে আছে শুধু বয়সের সূত্র। সেটা ধরেই সহকর্মীরা কাকি সম্বোধন করে। তাদের এক কথা, কাকি আপনার ক্লাসে যেতে ভালো না লাগে যাবেন না। আমরাই যাব। তবু আপনি অবসর নেবেন না। কেউ কেউ বাড়িয়ে বলে, কাগজ-কলমে অবসরে গেলেও কিন্তু আপনাকে রেখেই দেব। শুধু কি বাড়িরগুলিই ছেলেমেয়ে; আমরা তবে কী? কাকি এদের পাগলামি দেখে হাসে। কখনো ভেতরটা ভারিও হয়। অবসর নিতে পারে না ডলি। স্কুলপাড়ার লোকজনও কাকি বলে ডাকে। প্রথমদিকে দিদি, মাঝে ম্যাডাম বলে ডাকলেও এখন শুধু কাকি বলেই ডাকে। ডলি ম্যাডাম এখন কমন কাকি।

ডলি কাকির আরেকটা গুণ আছে।

কাকি বেশ টিপটপেই থাকে। সব সময় পরিপাটি। অবনি কাকারও এদিকটাই বেশ খেয়াল। সেও চায়, ডলি কাকি পরিপাটি হয়ে থাকুক। কাকির মাড় দেওয়া কাপড়ে কখনো ইস্ত্রি করতে ভুলে গেলে, সে নিজেই ইস্ত্রি করে দেয়। সাতটার জায়গায় একটা কুঁচি কম পড়লে অবনি ভুল ধরে শাড়িটা ঠিক করে দেয়। শাড়ি হয় জামদানি, না হয় সিল্ক। পায়ে নামিদামি কোম্পানির জুতো বা চটি। তখনো গ্রামে বাটা জুতোর চল আসেনি। কিন্তু ডলি কাকির পায়ে বাটা। এই হাল আমলে অবশ্য বাটা ছাড়ান দিয়েছে। বাটা কোম্পানিও যেন মরিচের গুঁড়ো-ইটের গুঁড়ো মেশানো মসলা ব্যবসায়ীর মতো হয়ে উঠেছে ইদানীং। তিন মাস না যেতেই স্যান্ডেলের ছাল উঠে যায়। তবে এখনো দামি স্যান্ডেলই পরে কাকি। শহর থেকে কেনা। এসব অবশ্য অবনিই খেয়াল করে। ফিকে হওয়ার আগেই নতুন কিনে আনে। বেশি দাম দেখে কাকি কৃত্রিম রাগ দেখালেও মনে মনে খুশি হয়। শিব ঠাকুরকে মনের মধ্যে এনে প্রণাম করে। লোকটা চিরকালই সেই একই থাকল। মনে মনে বলে – লোকটাকে এমনই রেখো ঠাকুর। মোট কথা পোশাকে কিংবা চলনে বেশ পরিপাটি কাকি। পাড়ার দু-চারজন অবশ্য সাজনি কাকি বা বউদিও বলে মনে-মনে।

সেই ডলি কাকির চটিটা একদিন ফিকে হয়ে উঠল। অবনি খেয়াল যে করেনি, তা নয়। কিন্তু পেরে উঠছে না। কদিন আগেই ভাগির জমি কিনতে গিয়ে হাতটা একেবারেই ফাঁকা। তারপরেও হয়তো কিনে দেওয়া যেত। কিন্তু আর কদিন পরেই স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। রোজা আর ঈদ দিয়ে প্রায় দেড় মাস স্কুল বন্ধ থাকবে। ততদিনে ধান উঠে যাবে। তখন না হয় ভালো দেখে দু-জোড়া কিনে দেওয়া যাবে। এমনটাই মনে মনে ভেবে আছে অবনি। ডলি কাকিও কিছু বলেনি। তবে অভিমান যে একেবারেই হয়নি তা নয়। লোকটা কিনে না দিক, ভাবনা তো করবে। সেটাও করেনি। ফিকে চটিটা পায়ে দিয়ে অবনির সামনে দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে বের হয়। ইচ্ছা করে দেখানোর চেষ্টাও করে। আবার বাড়ি এসে অবনির চোখের সামনে খুলেও রাখে। অবনির যেন চোখেই পড়ে না। অভিমান আরো তীব্র হয় ডলি কাকির। আবার মনের মধ্যে খটকাও লাগে। লোকটার মতিভ্রম হয়নি তো? কাকির মনে সন্দেহের ঝিঁঝি কোন ফাঁকে ঢুকে গেল। ঝিঁঝিটা যখন-তখন ডেকে উঠতে লাগল। অবনির ওপর মনে মনে নজরদারিও করে। বছরখানেক থেকে তারা দুই খাটে ঘুমাতো। কাকি তার তিন বছরের নাতনিকে নিয়ে এক খাটে থাকে। অন্যটাতে অবনি। কদিন হলো আবার এক খাটে এলো ডলি কাকি। নাতনিকে কায়দা করে মায়ের ঘরে পাঠালো। কিন্তু না, এতেও ফল হলো না। চটির দিকে নজর পড়ে না অবনির। অবনি অবশ্য বেশ উপভোগ করছে বিষয়গুলি।

মনে-মনে হাসে। এতে পিত্তি জ¦লে কাকির। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে একটা নিমন্ত্রণপত্র এলো বাড়িতে। ডলির ছোটভাইয়ের ছেলের বিয়ে। একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলের বিয়ে। এদিকে ভাইয়েরও একমাত্র বোন ডলি। ডলি কাকির যেতেই হবে। পত্রে এমনতর ইঙ্গিতও আছে। অবশেষে বাড়িতে আলোচনা করে ঠিক হলো, কাকি যাবে তিনদিন আগে আর বাকিরা যাবে বিয়ের আগের দিন। এবার কাকি ভেবেছিল, নতুন চটি আসবে। কিন্তু কাজের কাজটি হচ্ছে না। কাকি আবারো খাট বদল করল। এবার নাতনি ছাড়াই অন্য খাটে ঘুমাতে লাগল কাকি। মনে মনে কাকি এটাও ঠিক করল, সে বিয়েতে যাবে না। এটা অবশ্য প্রকাশ করল না কাকি। এতে ঝামেলা বাড়বে। কথাটা মনের মধ্যে রেখেই গুমরে গুমরে মরে।

বিয়ের আর তিনদিন বাকি। এমন সকালে হঠাৎ উধাও হলো অবনি। বলা নেই কওয়া নেই, সকাল থেকে লাপাত্তা লোকটা। দুপুর পর্যন্ত কাকির তেমন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু দুপুর গড়াতেই মনের মধ্যে একটা খটকা লাগে। আশপাশের দু-একজনকে জিজ্ঞাসাও করেছে এর মধ্যে। কিন্তু কেউ কোনো হদিস দিতে পারল না। এবার দুপুর পার হতেই মনের খচখচানি বেড়ে গেল। হাজার কথা মনে এলো ডলি কাকির। – না, লোকটার সঙ্গে অতটা লাগা ঠিক হয়নি। পুরনো চটি পরে কেউ কি বিয়েতে যায় না? নিজেকে আবার শাসায়ও – কি এমন আদিখ্যেতার দরকার ছিল, দুই বিছানা এক করার। করল করল, কিন্তু আবার আলাদা হওয়ারই বা কী দরকার ছিল? অবনির অনেক কথা অনেক কাজ মনে হতে লাগল ডলির। অবনি ডলির জন্য যখন নতুন শাড়ি এনেছে, তখন নিজেই পরিয়ে দিত। সাতটা কুঁচি খুব সুন্দর করে তুলে দিত টেনেটেনে। আবার জুতো কিনে এনে নিজেই পরিয়ে দিত পা দুটো কোচাতে নিয়ে। বলত – আমার টিউবলাইট দুটো ঢেকে দিলাম। এবার মানুষের নজর পড়বে না। আবার কখনো স্যান্ডেল পরিয়ে দিয়ে পাঁচ আঙুল ধরে বলত – আঙুরগুলি বের হয়ে থাক। দু-পায়া শিয়াল টক বলে বলুক। ডলি কাকি এতে মৃদু রাগ দেখালেও মনের মধ্যে গলে। লাল-নীল বেলুন ফাটে ফুটুর ফুটুর করে। সাতপাকে ঘোরা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত অনেক কিছুই মনে হতে লাগল ডলি কাকির।

সন্ধ্যা পার হলো। অবনি ফেরেনি। শঙ্খ বাজলো না বাড়িতে। সাঁঝবাতিও না। কাকি উঁচু বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ছেলে তখন বাইরে বাপের তালাশে। নাতনিটা ডলির পাশে বসে হাজারও প্রশ্ন করছে দাদা সম্পর্কে। কোনো উত্তর নেই দাদির মুখে। সে তাকিয়ে আছে বাইর-দরজা দিয়ে যতদূর দেখা যায় সেদিকে।

সন্ধ্যা তখনো ঝাপসা হয়নি। এমন সময় অবনি বাড়ির মধ্যে ঢুকছে। দুই হাতে দুটি ব্যাগ। ডান হাতের ব্যাগটা আন্দাজ করা যায়, এটি জুতোর ব্যাগ। বাম হাতেরটা ডলি বুঝতে পারল আর একটু কাছে আসতেই। ব্যাগের শরীরে বড় করে লেখা ঊষা সিল্ক। অবনি উঠানের মাঝামাঝি আসতেই ডলি টংটং করে মাটি কাঁপিয়ে ঘরে ঢুকল। সারাদিনের অস্থিরতার লেশ বুঝতে দিলো না অবনিকে।    

রাত যতই বাড়ে ততই মান-অভিমান পর্ব বাড়তে থাকে অবনি আর ডলি কাকির মধ্যে। বাড়ির অন্য সদস্যরা অবশ্য এর মধ্যে প্রবেশ করেনি। তারা আড়চোখে দেখেছে আর মুখটিপে হেসেছে; ডলি কাকির চোখ বাঁচিয়ে। গতরাতের মতো আজো দুজনেই দুই খাটে শুতে গেল। তবে কয়েক মিনিট বাদেই অবনি উঠে গিয়ে ডলির খাটে গিয়ে নিজেকে সমর্পণ করল। বালিশটা ডলির মুখ বরাবর বিছিয়ে চোখে চোখ রেখে দড়াম করে শুয়ে পড়ল। ডলি কাকি অবশ্য উঠে গেল না। তবে পাশ ফিরে মুখ ঘুরিয়ে নিল। তবুও জাপটে ধরল অবনি। এতে ডলি কাকি একটা ঝটকা মারলেও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারল না। পরাজিত সিংহীর মতো গর্জাতে থাকল শুধু।

– শোনো অভির বাবা, ঢং করতে এসো না। অনাছিষ্টি বাধাবো কিন্তু।

– আমিও বলছি অভির মা, তোমাকে কিন্তু কালকে যেতেই হবে। ট্রেনের টিকিট কেটেই এসেছি। প্রিতমকেও বলে রেখেছি তার অটোরিকশা নিয়ে ভোর ভোর স্টেশনে দিয়ে আসবে।

– যেতে হয় তুমি যাও। এই ডলি এক কথার মানুষ। বিয়েমুখো আর হচ্ছি না।

– অমন কথা বলে না আমার ডলি। তুমি তো আমার বোশেখ মেলায় কেনা পুতুল। স্যান্ডেলটা কিনে দিতে এবার অবশ্য বেশ দেরিই হয়ে গেল। আমার ডলির দম দেখছিলাম বলতে পারো। তবে তোমার দম যতটা ভেবেছিলাম ততটা কিন্তু নাই।

অবনি ডলির খাড়া নাক আর একটু তুলে দেওয়ার ঢঙে টিপে দিলো। ডলি ঝটকা মেরে আবার পাশ ফিরল।

– ঠিকই বলেছো। আমি তো দম-দেওয়া পুতুল। কেনা বাঁদর। তোমার চাবিতেই তো লাফাই।

– আচ্ছা ঠিক আছে, এবার থেকে তুমিই না হয় দম দিও, আমি তোমার ইচ্ছামতো লাফাব। কিন্তু যেতে তোমাকে হবেই।

এবার ডলি কাকির পায়ের কয়েকটি আঙুল মটমট করে ফুটিয়ে দিলো অবনি। মুচকি হেসে বলল – বাব্বা, বুদ্ধি গিজগিজ করছে।

– বুদ্ধি তো গিজগিজ করছেই। গিজগিজ না করলে কি মানুষ সকাল থেকে নিখোঁজ থাকে স্যান্ডেল কেনার বাহানায়? মাথায় যত হিটলারি বুদ্ধি।

– যা বাবা, আমার তীর আমাকেই পাল্টি দিলে। তাও আবার বুক বরাবর। হার্টটা আর ফুটো করো না গো। এখনো যতটুকু আছে, তা দিয়ে করে-কর্মে খাই। ফুটো হলে ডলি রানিকে ভালোবাসব কী করে?

কথাগুলি ডলির কাছে ন্যাকামো শোনালেও পরের কাজটা ন্যাকামো মনে হলো না। ডলিকে জাপটে ধরে একটা চুমু দিয়েই দিলো অবনি।

অবশেষে অবনিকে সাত নদী সাঁতরিয়ে, তেরো ঘটি জল খাইয়ে রাজি হলো ডলি রানী। শর্ত তবে একটাই, নতুন শাড়ি-জুতো নিয়ে যাবে না। অবনি শেষতক তাতেই রাজি হলো। আর কথা ঠিক হলো, ডলিকে সকালে ট্রেনে তুলে দিয়ে ওইদিনই স্যান্ডেল জোড়া দোকানে ফেরত দেবে। দোকানি টাকা ফেরত না দিলে নিজের জন্য না হয় একজোড়া নেবে। তবে অবনি মনে মনে যেটা করবে বলে ভেবে রেখেছিল, সকালে সেটা করতে ছাড়ল না। সময় বুঝে করে ফেলল সেটা। ট্রেনে ডলিকে তুলে দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল অবনি। ডলি কয়েকবার নেমে যেতেও বলল, কিন্তু নামল না। ভাবখানা এমন, যেন ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না। ডলি মুখ ঝামটা দিয়ে বলে – যত আদিখ্যেতা। তবুও নামে না। কিন্তু ট্রেনের চাকা যখন গড়াতে লাগল অমনি ডলির ব্যাগের মধ্যে তার হাতের স্যান্ডেলের বাক্সটা দ্রুত ঢুকিয়ে দৌড়ে নেমে গেল। ডলির তখন কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। তখন তার চোখ ছিল অবনির দিকে; লোকটা ভালোভাবে নামতে পারল, না পড়ে গেল – এটা দেখতে। নিজের ওপর রাগও হলো, বাড়িতে চটির বাক্সটা নিলে কি এমন ক্ষতি হতো। আবার বাক্সটা ফেলে দিতেও পারছে না। বগির সমস্ত যাত্রী যেন তাদেরই দেখছে। রাগ যা হলো তা মনের মধ্যেই থাকল আর টগবগিয়ে ফুটলো। ইচ্ছা হলো সামনের স্টেশনে নেমে বাড়িতে ফিরে যেতে। পরক্ষণে কী একটা মনে আসাতে সেই ইচ্ছাটাও বদলাতে হলো।

তখনো সূর্যের তাপ জেঁকে বসেনি। ট্রেন দুনিয়ার সমস্ত কোলাহলকে ঠাট্টা করে সামনে ছুটে চলেছে। ডলি কাকির পাশের জানালা খোলা। কাকি এক ধ্যানে তাকিয়ে বাইরে। বাইরের গাছপালা, ক্ষেত, ফসল তারা যেন পেরে উঠছে না কাকির মাথার জট আর ট্রেনের গতির সঙ্গে। ঠাহর করার আগেই হুস করে হারিয়ে যায় পেছনে। চলন্ত ট্রেনের জানালায় ধাক্কা খাওয়া বাতাসে যেমন ঠান্ডা আছে, তেমন একটা শাসানিও আছে। মনের মোড় ঘোরাতে ওস্তাদ। খানিক আগের চিন্তাগুলি, রাগগুলি, অভিমানগুলি থিতিয়ে যেতে লাগল ক্রমশ। মন-পুকুরের গাবানিতে টলটলে ভাব এলো; আবার পদ্মও ফুটলো। সেই পদ্মের ওপর একজনকে পদ্মাসনে বসাও দেখল। অবনি। সমস্ত হলাহল এক নিমিষেই পান করে লোকটা। সেই কবে এসেছে তার ঘরে। সে-ই জোর করে পড়ালো। আবার বলা চলে সে-ই চাকরিটা পাইয়ে দিলো। তার ওপর যতই রাগ দেখাও গালি পাড়, সে যা তাই। শরীরে ব্যাঙের রক্ত। গরম হতে চায় না। অথচ ডলিকে রাগাতে ওস্তাদ। ডলিকে রাগাবে কিন্তু সে রাগবে না। ডলির কেন জানি মনে হলো, অবনি ইচ্ছা করেই চটি জোড়া দেরি করে কিনলো। ডলি কতটা রাগতে পারে, তার শেষ দেখতে চেয়েছিল। তাই বলে অতটা? ইচ্ছা করে অমন গালমন্দ শোনার কোনো মানে হয়? এবার বেশ কয়েকটা বাজে আর শক্ত কথা শুনিয়েছে ডলি। কথাগুলি মনে হতেই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হলো। আবার অভিমানও হলো, লোকটা কেন অমন করে? কী মনে হলে জানালা দিয়ে এবার মাথাটা ভরে দিলো। মনে হলো কাকি শুধু বাইরে নয়, কী একটা দেখতে চাইলো। কাকি দেখতে পেল দুটি বক উড়ে যাচ্ছে আগপিছ হয়ে। সামনেরটা পেছনেরটাকে পিছে ফেলতে ব্যস্ত, আবার পেছনেরটা সামনেরটাকে ধরতে প্রাণপণ পাখা ঝাপটায়। আগেরটা যেখানেই যাক, পেছনেরটা আগেরটার কাছে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাবেই। যতই দূরত্ব তৈরি হোক, গন্তব্য এক। আজব দুনিয়া।

জানালা থেকে মাথা টানতেই চোখ দুটো গিয়ে পড়ল অবনির গুছিয়ে দেওয়া ব্যাগের ওপর। আবার মনটাও যেন সায় দিলো, ব্যাগের মধ্যে হাতটা দেওয়া যেতেই পারে। চটি জোড়ার প্যাকেটটা অন্যবারের থেকে আলাদাই মনে হয়েছিল। কী মনে করে বাঁ হাতটা ব্যাগের মধ্যে ভরে দিলো। কষ্ট করে হলেও প্যাকেটটা খুলে একটা চটি বের করে আনলো। চোখের সামনে ধরতেই একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল মন-শরীর জুড়ে। এমন চটি এর আগে কখনো দেখেনি ডলি। কাউকে পরতেও না। বাটা না; মার্কা নতুন। চটির গায়ের দাম দেখে একটু রাগ হলো অবনির ওপর। এত দাম দিয়ে কেনার কোনো মানে হয়? এই টাকায় তিন জোড়া হতো। মনে এও বলে সান্ত্বনা দিলো – যাই হোক, বারবার তো কিনছি না। অন্তত বিয়েবাড়িতে বেশ ডাঁট  মারা যাবে। লোকটার পছন্দ আছে বলা চলে। জালফাঁস মতো সামনে একটা ছই তোলা। পেছনে যমজ ফিতার বন্ধনী। ফিতার বেড় দিয়ে পরা যায়, আবার না দিয়েও পরা যায়। ফিতাটা সামনে তুলে দিলেই ছইয়ের সঙ্গে মিলে যায়। একের মধ্যে দুই স্বাদ। মাপে বড়-ছোট হবে না, এটা ডলি জানে। কারণ এতদিন অবনিই তার স্যান্ডেল জুতো কিনে দিয়েছে। কোনোদিন খাটো বা বড় হয়নি। আজো হবে না। তবু দু-পায়ে দুটো পরে দেখতে ইচ্ছা করল। এবার ডান হাত ব্যাগের মধ্যে ঢোকালো, অন্যটা বের করতে।

মনে ফুর্তি নিয়ে বিছানায় গা মেলে দিলো অবনি। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যেস নেই। তবুও আজ ইচ্ছা করল শুতে। তাছাড়া শরীরটা কেমন ভার ভার ঠেকছে। খাওয়া বেশি হয়ে গেছে আজ। কাতলা মাছের মাথাটা আজ পুরোটাই খেয়েছে। আজ মাথা খেয়েছে অনেক বছর পর। ডলির বিয়ে হয়ে আসা অবধি সে-ই খায়। অবশ্য ডলিকে জোর করে অবনিই খাওয়ায়। আজ অবনিকে জোর করে খাওয়াল তার ছেলের বউ। খুব মজা করে খেয়েছে মাথাটা। মাথা খাওয়ার মজা যেন আজ নতুন করে আবিষ্কার করল অবনি। পুবের জানালাটা খোলা। জানালামুখী হয়ে শুয়ে আছে অবনি। অনেকদূর দেখা যায়। দূরের রেললাইন, রেল আর রেলের যাত্রীর গন্তব্য যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে বিছানা থেকে। ডলি এতক্ষণ পৌঁছে গেছে। নিশ্চয়ই চটি জোড়া বের করেছে ডলি। বাড়ির সবাই ডলির কাছে ছুটে এলেও তারা চটি জোড়াই দেখছে। প্রশংসা করছে অবনির পছন্দের। এতে ডলি মৃদু রাগ দেখায়। তাদের প্রশংসাতে বাধা দেয়। অবনি জানে, ডলি যতই রাগ দেখাক; চটি তার ঠিকই পছন্দ হয়েছে। বিয়ের দিন বেশ ডাঁট করবে। অবনি দূর থেকে দেখবে আর মুচকি মুচকি হাসবে। যতদূর পারে ডলিকে রাগানোর চেষ্টা করবে। এক সময় যখন খুলে রাখতে যাবে, তখন না হয় গোপনে কান ধরে মাফ চেয়ে নেবে। নিজেই চটি জোড়া আবার পরিয়ে দেবে। এমনই সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল অবনি। আর ঘুমের মাঝেও বোধহয় ডলিকে নিয়ে, চটিকে নিয়ে নানান দিবা স্বপ্ন দেখছিল। এমন সময় খাটের তলায় হড়াম করে একটা শব্দ হওয়াতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। ইঁদুর বিড়াল দেখার জন্য চারদিক খেয়াল করলেও কিছু দেখতে পেল না। কিন্তু পরক্ষণেই খাটের তলা থেকে নাতনি তিশাকে বের হতে দেখে চমকে উঠল।

– এই কী করছিস ওখানে?

– আমার মদন কুমারকে নিতে এসেছি।

মদনকুমার তিশার এক পুতুলের নাম। মধুমালা আর মদনকুমারের গল্পটা অবনি একদিন তিশার কাছে করেছিল। সেই থেকে তিশা তার পুতুল দুটির নাম দিয়েছে মধুমালা আর মদনকুমার। কদিন হলো তার মধুমালাকে কে যেন চুরি করেছে। এখন আছে মদনকুমার।

– তোর মদন কুমার এখানে কেন?

– কাল থেকে ঘুমিয়ে আছে। নতুন খাট পেয়েছে তো, তাই।

– নতুন খাট কোথায় পেলি?

– কালকে কেনা হয়েছে।

কথা আর না বাড়িয়ে তিশা খাটের তলা থেকে তার পুতুলের খাট দাদুর সামনে তুলে ধরল। দাদু বোধহয় সত্যি সত্যিই এবার স্বপ্ন দেখছে। আর স্বপ্নের ঘোরেই লাফ দিয়ে উঠল। আর একটু হলে বোধহয় বর্গার সঙ্গে মাথা বাড়ি খেত।

– তুই করেছিস কী এটা?  কখন করেছিস?

– কাল রাতে নিয়েছি।

– আর একটা কই?

– একটাই নিয়েছি। শুধু তো মদনকুমার, দুটি খাট কী করব?

– বাকিটা তাহলে কী করেছিস?

– বারে, আমি বলছিই তো একটা নিয়েছি। বাকিটা প্যাকেটের মধ্যেই আছে।

অবনি এবার কী করবে আর কী ভাববে বুঝে উঠতে পারল না। নিজের ওপর রাগও হলো। নিজের মাথায় নিজেই মারতে ইচ্ছা করল। সকালে প্যাকেটটা কেন খুলে দেখেনি। ডলি একটা চটি দিয়ে কী করবে? আর প্যাকেট থেকে একটা চটি বের হলে তখনই বা ডলি কী করবে? ধপ্ করে বসে পড়ল অবনি।

– তুই এটা কী করলি বোন?

– আরে বুড়ো, এ তো বুঝে না দেখছি। বলছি তো মদনকুমারের জন্য খাট করেছি। সুন্দর বিছানা দিয়েছি। এমনিতেই তার মধুমালা নেই। ঘুমাতে পারছে না কদিন থেকে। সুন্দর বিছানা দিয়েছি বলে তাই একটু ঘুমাচ্ছে। তুমি চিল্লাচিল্লি করবে না।

– মদনকুমারের বিছানা করতে গিয়ে তুই যে আমার বিছানাতে সারা জীবনের জন্য আগুন দিলি বোন।

তিশা এবার দাদুর কথা কিছুই বুঝতে পারল না। সে বিরক্তি ভাব নিয়ে বের হয়ে যেতে চাইল। এমন সময় দেখল তার মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। মা খানিক আগেই এসে দাঁড়িয়েছিল। মেয়ের হাতে চটিটা দেখে সেও পাথর হয়ে পড়েছে। তার কী করা উচিত সে নিজেও ভেবে পায় না। মাকে দেখে তিশা কী যেন বলতে চাইল দাদু সম্পর্কে। কিন্তু সেটা আর বলা হলো না। এর আগেই মা গিয়ে তিশার দুই গালে দুটো থাপ্পড় মারল। তিশা দৌড়ে গিয়ে লুকালো দাদুর পেছনে। তবে দাদু তাকে কোলের মধ্যে টেনে নিল না। তার চোখ-মন কোনোটাই তখন ঘরে নেই। তার চোখ বাইর দরজার দিকে। এই বুঝি ডলি ফেরত এলো। সে কোনো কূল-কিনারা পায় না, চটির প্যাকেট খোলার পর ডলি কী করতে পারে এই ভেবে। তিশাকে তার মা এবার টানতে টানতে নিজ ঘরে নিয়ে গেল। আরো দু-থাপ্পড় দিলো। এবারো অবনি আটকালো না। সে তখনো ডলিকে দেখছে। চোখ তার বাইর দরজার দিকে।

না ডলি ফিরে আসেনি। পরদিনও না। সে বিয়ে পর্ব শেষ করে তবেই এসেছে। অবনি বিয়েতে যায়নি। সাহসে কুলোয়নি। তবে অবনি এ-কদিন বাড়ি থেকে এক তিল সরেনি। বসে থেকেছে বাইর বারান্দায়। আর দিনে অন্তত দুবার বাড়িতে থাকা একপাটি চটিটার ঝাড়পোছ করেছে। চকচকে ভাব যেন কোনোভাবেই মলিন না হয়। আর একের পর এক পরিকল্পনা করেছে, ডলিকে কী করে শান্ত করা যায়। কিন্তু তার গোছানো কথাগুলি একটাও যেন জুতসই হয় না। কথা গোছায় আর ভাঙে। অবশেষে সব পরিকল্পনা একপাশে ঠেলে রেখে দড়াম করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। ডলি বাড়িতে ঢুকতেই অবনি তার উদোম পিঠ সামনে এগিয়ে দিয়ে বলবে, নাও তোমার হাত দুটো আগে শানিয়ে নাও। মুখ না হয় পরে হবে। এসব পর্ব শেষ হলে, ডলি ধকল সারার আগেই কাচের গ্লাসে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি সামনে দেবে। গ্লাসটা খালি হওয়ার পর রেখে যাওয়া চটিটা হাঁটু গেড়ে সামনে ধরবে গোলাপ দেওয়ার ঢঙে। ডলির নাড়িনক্ষত্র সব চেনে অবনি। খানিক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য আফসোসের শেষ থাকবে না তার। হয়তো কেঁদেই ফেলবে ডলি।

ডলি এলো সাঁঝবাতি দেওয়ার খানিক আগে। ছেলেবউ প্রস্তুতি নিচ্ছে বাতি দেওয়ার। অবনি বারান্দায় চেয়ারে বসে। এমন সময় ঢুকল ডলি। চোখমুখ কালো হয়ে উঠেছে। বিয়েবাড়িতে বেশ ধকল গেছে হয়তো। কিংবা রোদেও হতে পারে। যদিও তখন রোদের তেজ ছিল না। তবে অবনি এসবের কোনোটাই ভাবল না। সে ভাবল, ডলির রাগের উদ্গিরণেই ঝলসে গেছে সারা মুখ। যেন মুখ নয়, তেতে ওঠা খোলা। ধান দিলেই খই হবে। ধান হয়তো পুড়েই যাবে। দৌড়ে গিয়ে ডলির হাত থেকে ব্যাগটা নেওয়া উচিত ছিল অবনির। সাহসে কুলালো না। ডলি সোজা ঘরে গেল না। বারান্দায় ব্যাগটা রেখে সেখানেই দড়াম করে বসে পড়ল খুঁটিতে হেলান দিয়ে। পাখা দিয়ে একটু বাতাস করতে ইচ্ছা করল অবনির। পারল না। ডলির মুখের দিকে তাকিয়ে সে আরো অনেক কিছুই করতে পারল না। যা যা গুছিয়ে রেখেছিল, তার সবই ভুলে গেল। ছেলেবউ পাখা দিয়ে বাতাস করতে লেগেছে শাশুড়ির মাথায়। চোখ তার শাশুড়ির ব্যাগের দিকে। চটির প্যাকেটটা খুঁজছে মনেমনে। এর মাঝেই হঠাৎ ডলি কাকি খেঁকিয়ে উঠল।

– আমাকে বাতাস করতে হবে না বউমা। তোমার শ্বশুরের মাথায় করো। বদমায়েশের ধাঁড়ি কোথাকার।

– শোনো ডলি, মাথা ঠান্ডা করো। পরে বলছি কেন যাইনি। অবনি মনে করেছিল বিয়েতে তার না যাওয়ার কারণেই এমন কথা বলল ডলি।

– তা যাবে কেন? গেলে যে মানুষ ছিঃ-ছিক্কার করবে। মাথা না হয় কিছুটা গেছে জানতাম, এখন যে চোখটাও গেছে। কেন, চোখে কি তোমার ঢেলা উঠেছে?

– আপনি শান্ত হোন মা। বউমা এবার শাশুড়ির পাশে গিয়ে বসল।

– শান্ত আর কী হবো। আমি থাকব না এই বাড়িতে। তোমরাই থাক।

– ডলি আসল কথাটা আগে শোনো। পরে না হয় আমাকে যা ইচ্ছা কোরো। অবনি এবার উঠে দাঁড়ালো।

– কিসের আসল কথা হা? কেন, চটি কেনার সময় মনটা কোথায় ছিল? প্যাকেটটা ব্যাগে ভরার সময় দেখে নিতে পারোনি? নাকি কোনো ঢেমনির মুখ দেখতে পেয়েছিলে তখন। দোকানদার প্যাকেট দিলো আর অমনি ঢ্যাং-ঢ্যাং করে চলে এলে।

ডলির মনে এখনো গেঁথে আছে, ভুল দোকানদার করুক আর অবনিই করুক, ভুলটা দোকানেই হয়েছে।

– ঢ্যাং-ঢ্যাং করে এসেছি ঠিক কিন্তু বিশ^াস করো, ওই সময় তোমার মুখ ছাড়া আর কারো মুখ সামনে ছিল না। কথাটা ডলিকেই বলল বটে, কিন্তু ডলির দিকে তাকাতে পারল না অবনি। নিজের কথার ভারে নিজেই আবার আগের মতো হুড়মুড়িয়ে বসে পড়ল। মনে মনে এও ভাবল, এখনই ঘর থেকে চটিটা এনে ডলির সামনে ধরতে হবে। সম্ভব হলে ব্যাগ থেকে অন্যটা বের করে ডলিকে পরিয়ে দিতে হবে। তবে ডলির দিকে তাকিয়ে কেমন ভড়কে গেল। ডলি তাকিয়ে আছে অবনির দিকে। ছোঁ পাগল দৃষ্টি। ছোঁ মারার আগে বাজপাখিও বোধহয় এভাবে তাকায় না। তবু সেই চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেই ফেলল অবনি – এবার ভাবো, আমি না গিয়ে কত ভালো করেছি। আর তোমার সঙ্গে গেলে তো ট্রেনের মধ্যেই কেলেংকারি হয়ে যেত।

– ভাগ্যিস সঙ্গে যাওনি। সারা জীবনের পুণ্যি তাহলে ট্রেনের মধ্যেই করতাম।

এবার অবনি উঠবে ঘরে যাওয়ার জন্য। বউমাকে ইশারা করতেই সে ডলির ব্যাগ হাতড়াতে লাগল। কিন্তু চটির প্যাকেট খুঁজে পেল না। এবার বউমা কিছুটা নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা করল – মা চটিটা কোথায়?

– কেন চটি দিয়ে কী করবে? তোমার শ^শুরের কণ্ঠহার করবে?

বউমা মনে মনে হাসলেও তখনো ব্যাগের মধ্যে চটি খুঁজছে।

– খুঁজো না বউমা। পাবে না। ওটা ফেলে দিয়েছি।

– কী বলছো! কোথায় ফেলেছো? অবনি এমনভাবে কথাটা বলল, যেন ডলি বাড়িতে ঢোকার আগে চটিটা বাড়ির সামনের নালার মধ্যে ফেলে এসেছে। অবনি এখনই দৌড় দেবে সেটা আনতে।

– ট্রেনের জানালা দিয়ে তখনই ফেলে দিয়েছি। একটা চটি মানুষকে দেখিয়ে কী বলব, এই দ্যাখো আমার পতিধন আমাকে ধন্য করেছেন? 

কথাটা বলেই ডলি উঠে দাঁড়াল। মাটি কাঁপিয়ে হাঁটাও দিলো। বউমা ভেবেছিল শ্বশুরের বুক বরাবর যাচ্ছে। কিন্তু না, সে অবনিকে পাশ কাটিয়ে সোজা ঘরের মধ্যে ঢুকল। ঘরে ঢুকলে প্রথমেই অবশ্য চোখে পড়বে ঘরে থাকা চটিটা। সেভাবেই রাখা আছে সিথানের পাশের ছোট টেবিলটার ওপর। অবনি এবার চেয়ার থেকে ধপ করে মাটিতেই বসে পড়ল। ডলিকে বলা হলো না, চটিটা কীভাবে বাড়িতে ছাড়া পড়েছিল। তখন সাঁঝ ঘনিয়ে গেছে। পার হয়ে গেছে সাঁঝবাতি দেওয়ার সময়।