দুই শিল্পীর দুই ভুবনের কথকতা

এক

সব শিল্পকর্মেই গল্প থাকে, রেখায়, রঙে আর ত্রিমাত্রিক ফর্মে যার প্রকাশ। এমন হতেই পারে যখন একই বিষয় নিয়ে কাজ করেন দুই শিল্পী তাঁরা ভিন্নভাবে বলেন তাঁদের গল্পটা। এটা যে শুধু তাঁদের ভিন্ন মিডিয়ায় আর শৈলীতে কাজ করার জন্য হয়, তেমন নয়। ভিন্নতা আসে তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের জন্যও। ব্যক্তিত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গি মিলে তৈরি হয় রসবোধ, যা একজনকে অন্যদের থেকে পৃথক করে দেখায়, যদি সেই রসবোধ পরিণত আর অনন্য হওয়ার দাবি রাখতে পারে। সব
শিল্পী-সাহিত্যিকের আরাধ্য এবং ঈপ্সিত এমন একটি রসবোধের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করা। এখানে সফলতা অর্জন কারো জন্য সহজ হয়ে যায়, কেন হয় তা তিনি নিজেও ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারেন না। যাঁদের সহজে হয় না, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেষ্টা করে যেতে হয় নিরলসভাবে আর নিয়মিত হয়ে। এই অধ্যবসায় আর নিষ্ঠা একসময় তাঁদের জন্য সফলতা নিয়ে আসতে পারে এমন মাত্রায় যে তাঁদের কাজ দেখেই বলা যায় কে এবং কার শিল্পবোধ রয়েছে সেই কাজের পেছনে।

ওপরের কথাগুলি তত্ত্বের তাগিদে বলা হয়নি, মনে এসেছে একই সময়ে ঢাকায় দুজন কম পরিচিত শিল্পীর কাজের প্রদর্শনী দেখে। এটা কাকতালীয় যে, দুজনই মহিলা এবং প্রায় সমকালীন। দুজনেরই শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়েছে দুটি সম্ভ্রান্ত চিত্রশালায় বা গ্যালারিতে, একটি শিল্পগুরু সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে এবং দ্বিতীয়টি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে সুবর্ণা মোর্শেদার বহুমাত্রিক (একাধিক  মিডিয়া অর্থে) শিল্পকর্মের প্রদর্শনীকে একই গল্পের ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত করার উদ্দেশ্যে সৃজনশীলভাবে কিউরেট বা পরিকল্পিত উপস্থাপনা করেছেন রেজা দক্ষতার সঙ্গে। সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে প্রদর্শিত সিরামিক শিল্পের প্রদর্শনীর কিউরেটর মনে হয় শিল্পী নিজেই, যেহেতু স্বতন্ত্র কারো উল্লেখ নেই। বলা যায়, বিষয় একই আবেগ-অনুভব আর শিল্পবোধসঞ্জাত হলেও একাধিক মিডিয়ার কাজ থাকায় সুবর্ণা মোর্শেদার শিল্পকর্মের জন্য অভিজ্ঞ কিউরেটরের প্রয়োজন ছিল।

সব শিল্প-প্রদর্শনীর পরিচিতি বা মুখবন্ধ হিসেবে শিল্পীর আত্মকথন এবং শিল্প-সমালোচক-বোদ্ধার ভূমিকা সংযোজন যে প্রথায় পরিণত হয়েছে তার প্রয়োজন লুপ্ত হয়নি, কেননা আমদর্শক তো বটেই, অধিকাংশ দর্শকের শিল্পবোধ এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি, যেখানে শিল্পী আর দর্শকের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির পূর্বকথন অথবা স্বয়ং শিল্পীর ঘোষণা অপ্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছে। শিল্পকর্মের ‘ভাষা’ যতই জটিল হয়, এই মধ্যস্থতা এবং ইঙ্গিতময়  ভূমিকার প্রয়োজন সমভাবে প্রাসঙ্গিক এবং অর্থবহ। সুবর্ণা মোর্শেদার ‘বহুমাত্রিক’ শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর পরিচিতিমূলক যে-লেখা, শিল্পীর আত্মকথন এবং শিল্পবোদ্ধার ব্যাখ্যা, সেগুলি যথাযথ  হয়ে প্রদর্শিত শিল্পকর্মের ওপর সুবিচার করতে পেরেছে। সুবর্ণার আত্মকথন যতটা  আবেগমথিত এবং অন্তরঙ্গ, জাহিদ মুস্তাফার ভূমিকা পরিপূরক হয়ে সেরিব্রাল এবং নৈর্ব্যক্তিক। তুলনায়,  সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে  ফাহমিদা খাতুনের সিরামিকসের  শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর ভাষা সরল এবং সোজাসাপ্টা, যার সঙ্গে শিল্পীর সংক্ষিপ্ত কথা এবং দুই শিল্পশিক্ষকের মন্তব্য সামঞ্জস্যময়।

দুই

সুবর্ণা মোর্শেদার শিল্প-প্রদর্শনীতে যা প্রথমেই যুগপৎ চমৎকৃত এবং  বিস্মিত করে  তা তাঁর শিল্পকর্মের বহুমাত্রিকতা। একটি মাঝারি আকারের (সংখ্যার দিক দিয়ে) প্রদর্শনীতে এত বিভিন্ন মাধ্যমের কাজের সমাবেশ বেশ বিরল। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জলরং, অ্যাক্রিলিক, কাগজে সায়ানোটাইপ, উড এনগ্রেভিং, লিথোগ্রাফ, এচিং, পেনসিল স্কেচ, কাগজে কালারোগ্রাফি  এবং সিরামিকের শিল্পকর্ম। একজন  শিল্পীর দ্বিতীয় একক প্রদর্শনীতে এমন ‘বহুমাত্রিক’ (মিডিয়ার) শিল্পকর্ম নিয়ে উপস্থিতি তাঁর আত্মবিশ্বাসের এবং পারঙ্গমতার আস্থাসূচক। বিভিন্ন মিডিয়ার স্বল্পসংখ্যক কিন্তু বহুবিস্তৃত পরিধির এই শিল্প-প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি যে  মগ্নতায় নিজেকে অনুধাবনের (ইন্ট্রোস্পেক্ট) প্রয়াস পেয়েছেন তার সফলতা ব্যক্ত হয়েছে অনুভবের বিচিত্র সমাবেশে এবং সংমিশ্রণে। তীব্রভাবে অনুভূত আবেগ যেমন প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে রঙের ব্যবহারে, জীবনের প্রতি বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে বাস্তবের নানা মোটিফ, বিশেষ করে সঞ্জীবনী প্রকৃতির প্রতীক। এর ফলে তাঁর শিল্পকর্ম হয়েছে একই সঙ্গে বিমূর্ত এবং অর্ধবিমূর্ত। জাগতিক অভিজ্ঞতার অভিঘাতে দুঃখে, বেদনায় তাঁর শিল্পীমনের আর্তি তীব্র, কিন্তু আশাবাদী হয়ে তিনি জীবনবিমুখতার পরিবর্তে বেছে নেন জীবনের সেলিব্রেশন। বেদনার প্রতীক নীল রঙের ভেতর তাই আকারে ছোট হলেও উচ্চকিত লাল, সবুজ আর হলুদ প্রাইমারির কালারের উচ্ছ্বাস।

সংখ্যার দিক দিয়ে প্রদর্শনীতে কাগজে জলরঙের কাজই বেশি। লাল, হলুদ এবং নীলের পটভূমিতে নানা আকারের এবং প্রায় ক্ষেত্রে একই রঙের ক্ষুদ্রাকৃতি ফর্ম মোজাইকের মতো বাক্সময়। কাগজে জলরঙের এমন নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যে দক্ষতার পরিচায়ক তার সম্ভাবনা গভীর ও অসীম।

ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক, কাগজে এচিং এবং কাগজে কালারোগ্রাফি মাধ্যমের ছবিগুলি ওয়াটার কালার সিরিজের সঙ্গে তুলনীয়, একই রঙের বিভিন্ন গভীরতার  ব্যবহারে বিভিন্ন ফর্ম সৃষ্টির কুশলতায়। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক নীলের পটভূমিতে লাল, হলুদ, সবুজ রঙের ফুল-লতা-পাতা নভোমণ্ডলের অসীমতাকে যুক্ত করেছে পৃথিবীর শ্যামল প্রকৃতির সঙ্গে।

তুলনায় কাগজে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে সেলাইয়ের ফোঁড় একান্তই বাস্তব, যা ‘সোনালী  কাবিন’  নাম নিয়ে কৌতুক এবং কটাক্ষের ইঙ্গিতবহ। উডকাটের কাজে নীলের পটভূমিতে ফুল-লতা-পাতার বহু বর্ণিলতা এই মাধ্যমের কাজে সৃজনশীলতার এক উচ্চমাত্রার উদাহরণ। অন্যদিকে সাইনোটাইপের নানা আকারের (ছোট, বড়, মাঝারি) কাজগুলির কিছু প্রত্যক্ষতার তীব্রতায় লক্ষ্যভেদী, বাকি যেসব তাদের বলা যায় রঙের সমাহারে উৎসারিত আবেগ। দুশো বছরের প্রাচীন এই আঙ্গিকের সিরিজের ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে ফটোগ্রাফ এবং বিভিন্ন মূর্ত-বিমূর্ত ফর্ম। কাগজে এবং কাপড়ে কেমিক্যাল ইমালসান আর ইউভিলাইট ব্যবহার করে তিনি যে-গল্প বলেন তা বলা-না বলার ভেদরেখা অস্পষ্ট করে দেয় এক শিল্পিত বয়ানে। প্রিন্টমেকিংয়ের বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর বিহার স্বচ্ছন্দ, এটা বেশ বোঝা যায়।

কাগজে পেন্সিল স্কেচ মাত্র একটিই চোখে পড়ল, লিথোগ্রাফের সংখ্যাও  স্বল্প। দুই-এর সাযুজ্য যেমন কালচে নীলরঙে, তাদের বৈপরীত্যও অর্ধবিমূর্ত আর বিমূর্ততায় সোচ্চার। প্রিন্টমেকিং মাধ্যমের কুশলতা উঁকি দেয় পেন্সিল স্কেচে, কেননা প্রথমটির উৎস দ্বিতীয়টিতে।

সিরামিকস মাধ্যমে একটি মাত্র কাজ আছে প্রদর্শনীতে। ফর্মের অভিনবত্বে আর আভিজাত্যে নান্দনিক কাজটি স্মরণীয়।

সুবর্ণার কাজে শুধু বর্ণনা নেই, আছে বক্তব্যও। তাঁর ছবি যেখানে বক্তব্যপ্রধান, সেইসব ছবি ঈশপের গল্পের মতো অন্তিমে একটা মেসেজ রাখে, যা জীবনের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা।

আকারে সীমিত সুবর্ণা মোর্শেদার ‘আত্মদৃষ্টি’ প্রদর্শনী বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। প্রবাদের  ‘বিন্দুতে সিন্ধু’ অবলোকনের এক বিরল অভিজ্ঞতা তাঁর এই প্রদর্শনী।

তিন

সিরামিকস দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় যে-বস্তু তৈরি হয়, তার সঙ্গেই আমাদের বহুল পরিচয়। এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যবহার সম্বন্ধেও অনেকে অবগত। তুলনায় কেবল শিল্পকর্ম হিসেবে সিরামিকের পরিচিতি এবং কদর এদেশে তেমন ব্যাপক নয়। জাপানের মতো দেশে অবশ্য সিরামিকের নিত্যব্যবহার্য পণ্যকে শিল্পের মতো তৈরি করার প্রথা বহু প্রাচীন। সেখানে সিরামিকের কাজ একই সঙ্গে আর্ট এবং ক্র্যাফট।

আর্ট হিসেবে সিরামিকের মাধ্যম নিয়ে স্পেশালাইজ (specialise) করছে, এমন শিল্পী বাংলাদেশে খুব বেশি নেই। এই ধরনের কাজের বাণিজ্যিক চাহিদা এখনো ব্যাপক নয়, এই বাস্তবতা ছাড়াও সিরামিকের কাজের যে বিভিন্ন ধাপ (হাত দিয়ে শেপ তৈরি, পলিশিং, পেইন্টিং, গ্লেজিং, ওভেনে রেখে শুকানো) তা এত সময়বহুল যে প্রায় নিরুৎসাহজনক। এ সত্ত্বেও যে ফাহমিদা খাতুন সিরামিকস নিয়ে যে-কাজ করে যাচ্ছেন তা এই মাধ্যমের শিল্পগুণের প্রতি তাঁর অনুরাগ  এবং আস্থার পরিচায়ক।

১৯৯৫ সাল থেকে ফাহমিদা দেশে এবং বিদেশে গ্রুপ একজিবিশনে অংশগ্রহণ করছেন। ২০০২ সাল থেকে ২০২৩-এর এই পর্যন্ত তাঁর ছয়টি একক প্রদর্শনী হয়েছে। এর মধ্যে সফিউদ্দীন শিল্পালয়েই হয়েছে এ-বছর দুটি। দেশে-বিদেশে পাওয়া পুরস্কারের সংখ্যা  তার মেধা ও দক্ষতার স্বীকৃতির কথা বলে।

চার

‘ব্রোকেন হাউস’ বা ‘বিধ্বস্ত আবাস’ এই শিরোনামে ফাহমিদা খাতুনের যে প্রদর্শনী ২২ থেকে ২৮শে সেপ্টেম্বর শিল্পগুরু সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে হয়ে গেল সেখানে প্রধান প্রদর্শন একগুচ্ছ সিরামিক শিল্পকর্মে ভগ্ন, অর্ধভগ্ন বাসস্থান দেখানো হয়েছে; কিন্তু অধিকাংশই অলংকারময় গ্লেজ করা কাজ। শিরোনামের সঙ্গে একগুচ্ছ শিল্পকর্মের মিল দেখিয়ে তিনি শান্তির সপক্ষে এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য রেখেছেন সেটি ইউরোপে যে যুদ্ধ হচ্ছে তার প্রসঙ্গে হলেও এখন গাজায় ইসারায়েলের বোমা বর্ষণে একটি জনপদ রাতারাতি ভগ্নস্তূপে পরিণত হওয়ার বিরুদ্ধেও শিল্পীর প্রতিবাদ। প্রকৃতপক্ষে, সকল যুদ্ধের বিরুদ্ধেই শিল্পী হিসেবে তাঁর এই অবস্থান। প্রদর্শনীর পুস্তিকায় তিনি লিখেছেন : ‘কেন আমাদের এই ভাঙা ঘর দেখতে হয়? কার জন্য আমাদের এই যুদ্ধ? ভিন্ন দেশ, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্ম এবং ভিন্ন রং কিন্তু আমরা সবাই মানুষ। মানবতার জন্য মানুষ, মানুষের জন্য মানুষ।’। এমন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর যুগে যুগে শিল্পী-সাহিত্যিকদের কাছ থেকেই শোনা গিয়েছে; ফাহমিদা তাঁর সিরামিক ভাস্কর্যে সেই প্রতিবাদ ও আবেদন ব্যক্ত করেছেন। এই কয়েকটি কাজ এবং সার্বিক শিরোনাম দিয়ে তিনিই মনে হয় প্রথম সিরামিক শিল্পকর্মকে শক্তিশালী রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেন। একই সামাজিক-রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রকাশ ঘটেছে বাংলা
ভাষা-আন্দোলনের স্মরণে তৈরি টেরাকোটা ভাস্কর্যে, যেখানে বুলেটবিদ্ধ দেয়ালে ফুলের অর্ঘ্য রয়েছে। এই দুই সিরিজের সিরামিক শিল্পকর্মেই ত্রিমাত্রিকতা ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে। কাজগুলি জটিল, কেননা এখানে শেপ ভাঙতে হয়েছে।

প্রদর্শনীতে ফাহিমদা খাতুনের সিরামিক শিল্পকর্মগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় : গ্লেজ করা সিরামিক টাইল, সিরামিকের মুখোশ, সিরামিকের গ্লেজ করা বাটি, সিরামিক প্লেট, গ্লেজ করা সিরামিকের পটারি, সিরামিকের গ্লেজ করা বাক্স, সিরামিকের মিনিয়েচার প্রাণী, বিমূর্ত নগর। বেশির ভাগ কাজই সমতলে রাখার জন্য, কিছু সিরামিক ভাস্কর্য দেয়াল থেকে ঝোলানোর জন্য তৈরি, যেমন মুখোশ। গ্লেজ করা মুখোশ রঙের বৈচিত্র্যে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত।

সিরামিক টাইলস সিরিজে কাজের সংখ্যাই বেশি। এখানে অখণ্ড ফর্ম যেমন আছে, পাশাপাশি পরিপূরক অংশ দিয়ে তৈরি টাইলও দেখা যায়। এই কাজগুলি  বাস্তববাদী এবং অলংকৃত-বিমূর্ত, উভয় বৈশিষ্ট্যের। প্রথম শ্রেণিতে প্রকৃতির মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন ফুল-লতা-পাতা। গ্লেজ করা পটারি, প্লেট এবং বাটি অলংকৃত হওয়ায় একই সঙ্গে গৃহসজ্জার উপযোগী এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারযোগ্য।

বিমূর্ত সিরামিক ভাস্কর্যের মধ্যে ‘সিটিস্কেপ’ প্রতীকী এবং অত্যাধুনিক। অপরদিকে গ্লেজ করা সিরামিক বাক্সগুলি স্টাইলাইজড (stylised), টেক্সচারে প্রাণী এবং প্রকৃতির আকীর্ণ ফর্ম রয়েছে।

টেরাকোটা পটারিগুলি রঙে বিশিষ্ট, ফর্মে স্টাইলাইজড এবং আর্ট নভো শৈলীর মতো ছন্দময়। ভেতরটা ফাঁপা এবং বাইরে অসমান সারফেস (surface) ছিদ্রবিশিষ্ট। এদের শেপ তৈরিতে এবং ওভেনে শুকানো বেশ আয়াসসাধ্য। এই শ্রেণির কাজে ডিটেইলসের প্রতি শিল্পীর মনোযোগ উল্লেখযোগ্য।

পাঁচ

ফাহমিদা খাতুন এবং সুবর্ণা মোর্শেদা – দুই শিল্পী দুটি ভিন্ন ভুবন সৃষ্টি করেছেন। একজন এর জন্য ব্যবহার করেছেন একটি বিশেষ মাধ্যম, দ্বিতীয়জনের ভুবন তৈরি হয়েছে একাধিক মাধ্যমের সমাহারে। কিন্তু তাঁরা দুজনই  জীবন এবং প্রকৃতির গল্প বলেছেন অন্তরঙ্গ হয়ে, আন্তরিকতার সঙ্গে। বলতে গিয়ে তাঁরা চেষ্টা করেছেন নিজেদের ভাষা বা স্টাইল নির্মাণে, যেখানে শিল্পজ্ঞান আছে, আছে রসবোধ। তাঁদের শিল্পিত ভিজুয়াল গল্প ‘শোনার’ জন্য মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়।