প্রজ্জ্বলিত মুখ-২

আবহমান বাংলার রূপ ফুটে উঠত শিল্পী হাসি চক্রবর্তীর ক্যানভাসে। তাঁর শৈশব কেটেছে বরিশালে। সেখানকার আলো-বাতাস গায়ে মেখে বেড়ে উঠেছেন। স্কুলজীবন থেকেই তাঁর ছবি আঁকার শুরু। দুরন্ত শৈশব-কৈশোর তাঁর চিত্রপটে ছাপ রেখেছে প্রতিনিয়ত। যৌবনে পদার্পণের পর তাঁর ছবিতে বাংলার নিসর্গের পাশাপাশি ধরা দিয়েছে সময়ের অস্থিরতা, নৈরাশ্য, প্রতিবাদ, আক্রোশ ও রোমান্টিকতা।

সত্তর দশকের এই চিত্রশিল্পী তেলরঙে স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তবে অ্যাক্রিলিকেও তিনি বেশ কিছু কাজ করেছেন। ড্রইং ছিল তাঁর প্রিয় মাধ্যম।

চিত্রশিল্পী পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক,  সংগঠক ও শিল্পবোদ্ধা-লেখক। দীর্ঘ ৩২ বছর চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ ও চট্টগ্রাম শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। যখন চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ সরকারিকরণ করা হয়নি সেসময় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া ‘ঢাকা পেইন্টার্স গ্রুপ’-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ‘ফাইভ ফিংগার’ ও ‘হাসিস্ স্টুডিও’ নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে বিএফএ সম্পন্ন করে ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে এমএফএ করার উদ্দেশ্যে যান। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে তিনি বি.এড সম্পন্ন করেন।

এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তিনি যুক্ত ছিলেন গভীরভাবে। সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন হাসি চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক।

বরিশাল জেলার গৌরনদীতে ১৯৪৮ সালের ২৫শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এ বরেণ্য শিল্পী। মৃত্যু ২০১৪ সালের ৭ই জুলাই চট্টগ্রামে।

প্রচ্ছদের ছবিটি ২০০১ সালে তেলরঙে আঁকা।

সংগ্রাহক আবুল খায়ের।