বঙ্গবন্ধু : স্বপ্নচারী ও সম্মোহনী নেতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের অনন্য বৈশিষ্ট্য বুঝতে হলে প্রথমে তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেতৃত্বের ধারণাগত  বিশ্লেষণ (conceptual analysis) প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নচারী এবং সম্মোহনী নেতৃত্ব বিষয়ক আলোচনার অবতারণা এবং এ আলোচনায় দুটো পর্ব থাকবে। প্রথমত, তত্ত্ব এবং পরবর্তী পর্যায়ে ইতিহাসকে ফিরে দেখার মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলির বিশ্লেষণ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমত প্রশ্ন আসে যে, নেতৃত্ব বলতে কী বোঝায়। বহুবিধ সংজ্ঞা আছে, তবে মোটা দাগে বলা যায় – নেতৃত্ব হচ্ছে একজন ব্যক্তির সামর্থ্য এবং পারঙ্গমতা, যার মধ্য দিয়ে তিনি ব্যক্তি এবং জনসমষ্টিকে একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালনা করতে পারেন। সকলের পক্ষে এটি পারা সম্ভব হয় না। নেতারাই তা পারেন। নেতারা জানেন কীভাবে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে হয় এবং অনুগামীদের কীভাবে পেতে হয়, নেতার লক্ষ্য অর্জনের কাজটি সম্পন্ন করার জন্য। এ প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রপতি Dwight D. Eisenhower বলেছেন,  ‘Leadership is the art of getting someone else to do something you want done because he wants to do it.’ তবে এর চেয়েও ব্যাপক সংজ্ঞা দিয়েছেন মার্কিন অধ্যাপক ও নেতৃত্ব গবেষক Gary Wills। তিনি বলেছেন, Leaders have a vision, Followers respond to it. Leaders organise a plan. Followers get sorted out to fit the plan. Leaders have willpower, Followers let that will replace their own. …the leader is one who mobilises others toward a goal shared by a leader and followers.

তবে নেতৃত্বসংক্রান্ত যাবতীয় কিছু নিয়ে প্রাচীন চীনের ঐতিহ্যে বেশ কিছু ভালো কথা বলা আছে। সেই কথাগুলিই আলোচনার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। যেমন –

Leadership is a matter of intelligence, trustworthiness, humanness, courage, and discipline. Reliance on intelligence alone results in rebelliousness. Exercise of humaneness alone results in weakness. Fixation on trust results in folly. Dependence on the strength of courage results in violence. Excessive discipline and sternness in command result in cruelty. When one has all five virtues together, each appropriate to its function, then one can be a leader.

নেতৃত্বের সামগ্রিক বিষয়টি চমৎকারভাবে উঠে এসেছে চৈনিক এই উদ্ধৃতির মধ্যে, ঐতিহ্যের মধ্যে। সে-কারণেই এটি আলোচনায় ব্যবহার করা হয়েছে। 

স্বপ্নচারী নেতৃত্ব 

শুরুতেই থাকবে নেতৃত্ব সংক্রান্ত সাধারণ কিছু কথা। এরপর দুটো সুনির্দিষ্ট বিষয় – স্বপ্নচারী এবং সম্মোহনী নেতৃত্ব, যা নিয়ে এ-লেখার অবতারণা। ব্যাপক অর্থে স্বাপ্নিক নেতা তিনিই যিনি একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিজে দেখেন এবং দেখাতে পারেন। অনুসারীদের সেই স্বপ্নে অনুগামী করতে পারেন। সেই কারণে একজন স্বপ্নচারী নেতা তিনিই যাঁর সামনে সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনার ছক আছে। তিনি বায়বীয় কথা বলেন না, যা আমরা প্রায়শ শুনি। তিনি তাঁর লক্ষ্যের কথা বলেন, তাঁর স্বপ্নের কথা বলেন। সেদিকেই আমরা সাধারণ মানুষ সকলেই যাব এবং কীভাবে যাব, তা তিনি নিজে করে দেখান। সেই জন্যে আমাদের নৈমিত্তিক জীবনে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, যে অভীপ্সা আছে, সেগুলি নিয়ে স্বপ্নচারী নেতার সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং লক্ষ্য থাকে। আমরা নেতার নেতৃত্বে যখন পরিচালিত হই, এবং লক্ষ্যের দিকে লক্ষ্যাভিসারী হই তখন সেই নেতাকে আমরা স্বপ্নচারী বলি। তবে সাধারণত দেখা যায় যে, নেতৃত্ব-গবেষকবৃন্দ স্বপ্নচারী নেতার যথাসম্ভব ১৫টি বৈশিষ্ট্য তুলে এনেছেন। সেগুলি হলো – 

১. তিনি সামগ্রিক চিন্তার অধিকারী হন এবং সবসময় সচেতন থাকেন, সতর্ক থাকেন। তাঁর চিন্তা-চেতনায় খণ্ডিত কিছু থাকে না। মানুষের জন্য তাঁর যে-ভাবনা তার সামগ্রিকতা আছে।

২. তিনি উদ্ভাবনী হবেন। গতানুগতিকায় বিশ্বাসী নন। গতানুগতিক কর্মকাণ্ডে তাঁকে কখনোই দেখা যায় না।

৩. তাঁর নিজের স্থির বিশ্বাস থাকে। অর্থাৎ তিনি যা বলছেন, করছেন সে-সম্পর্কে তাঁর বিশ্বাস খুব দৃঢ়।

৪. তিনি নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নিজের কাছে, জনগণের কাছে। 

৫. তিনি নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যান। তাঁর কাজের কোনো ছেদ নেই। সবাইকে নিয়ে তিনি কর্মরত থাকেন, ক্রিয়াশীল থাকেন। 

৬. তিনি ভালো যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে, তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে যা বলেন তা স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। তিনি খুব ভালো communicator।

৭. তিনি কুশলী হন। রাজনীতিতে কৌশল দরকার, অপকৌশল নয়।  অর্থাৎ সাদামাটা, বুদ্ধিহীন মানুষ কখনো নেতা হতে পারেন না, স্বপ্নচারী তো নয়ই। 

৮. তিনি নিবেদিত কর্মবীর। অন্নদাশংকর রায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে একটি মর্মস্পর্শী প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে একটি জায়গায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন, ব্রতে নিবেদিত কর্মবীর। স্বপ্নচারীরা এমনই হন।   

৯. বিনয়ী ও সৌজন্য আচরণিক। নিজেকে অনেক ছোট ভাবেন, সবাইকে বড় ভাবেন। যে নিজেকে বড় ভাবে, সে সবাইকে ছোট ভাবে। সে নিজেকেই নেতৃত্ব দেয়, মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে না।

১০. তিনি একা কাজ করেন না, সবাইকে নিয়ে কাজ করেন। তিনি যদি দলীয় নেতা হন, নেতা তৈরি করেন। তিনি যদি অনুপস্থিত হয়ে যান, অবর্তমান হয়ে যান, তাতে কর্মক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়বে না, চালু থাকবে। তিনিই আসল নেতা, তিনিই স্বপ্নচারী নেতা। কিন্তু যিনি নিজের নেতৃত্বকে চূড়ান্ত মনে করেন, নেতৃত্ব গড়ে উঠতে দেন না, বটগাছের নিচে আগাছা হতে দেন না, তিনি আপন নেতৃতে বিভোর। দেশ এবং জনগণের নেতৃত্ব তিনি দিতে পারেন না। স্বপ্নচারী তো হতেই পারেন না।   

১১. কাজে নিবেদিত মানুষ। কথায় নয়, তিনি কাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চান যে, তিনি যা বলছেন তার সমান্তরালে আছে তাঁর কাজ।  

১২. তাঁর চিন্তা-চেতনায় একটি জঙ্গম শক্তি আছে। তিনি নিয়ত নিজেকে অতিক্রম করে যান।

১৩. নীতি ও আদর্শকে বাদ দিয়ে, জলাঞ্জলি দিয়ে তাৎক্ষণিক স্বার্থ উদ্ধারের যে রাজনীতি, সেই রাজনীতিতে তাঁর আস্থা কোনোদিনই থাকে না। চিরায়ত আদর্শ ও নীতির প্রতি তাঁর আস্থা অবিচল।

১৪. তাঁর অনুসারী জনগণকে তিনি পরম ভালোবাসেন। যাদের নেতৃত্ব তিনি দিচ্ছেন, তাদের ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হন। তাদেরও খুব ভালবাসেন। পারস্পরিক ভালোবাসার মধ্য দিয়ে স্বপ্নচারী নেতৃত্বের উদ্ভব এবং বিকাশ।  

১৫. তিনি সবাইকে উৎসাহিত করতে পারেন, প্রণোদিত করতে পারেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাঁকে দেখলে, যাঁর কথা শুনলে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি অনুসারী উৎসাহিত হয়, প্রণোদিত হয়। যে নেতা, প্রতিষ্ঠানেরই হোন, দলেরই হোন বা দেশেরই হোন, তিনি যদি হতাশাবাদী কথা বলেন, তবে তিনি নেতা নন। অর্থাৎ, নেতা হতাশাগ্রস্ত হতে পারেন না। যে নেতা হতাশাবাদী কথা বলেন তিনি নেতা নন, দোষে-গুণে একজন গড়পড়তা মানুষ। নেতাকে সাধারণ মানুষের স্তর অতিক্রম করে যেতে হয়। তাঁর ব্যক্তিত্ব দিয়ে, সম্মোহন দিয়ে। সুতরাং, নেতৃত্ব গবেষকদের কাছ থেকে স্বপ্নচারী নেতার এই ১৫টি বৈশিষ্ট্য আমরা পাই।

সম্মোহনী নেতৃত্ব

ক্যারিশমা তত্ত্বটি বা ভাবনাটি এসেছে জার্মান সমাজবিজ্ঞানী Max Weber-এর কাছ থেকে। যাঁর কথা শুনলে মানুষ প্রণোদিত হতে পারে, সম্মোহনী নেতা তাঁকেই বলা হয়। Max Weber-এর মতে, যিনি তাঁর চারপাশের জনগণকে উৎসাহিত করতে পারেন, প্রণোদিত করতে পারেন। যাঁকে দেখলে, যাঁর কথা শুনলে জনগণ উৎসাহিত হয়ে ওঠে, ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হতে পারে। এমন মানুষকেই আমরা সম্মোহনী নেতা বলি। তাঁর উপস্থিতি, তাঁর কথা, তাঁর অস্তিত্ব সবকিছুই যেন মানুষের বিস্তর সাহস, উদ্দীপনা আর ভবিষ্যৎ ভাবনার প্রণোদনা হয়ে যায়।  সেজন্য দেখা যায়, যে সম্মোহনী নেতা সবসময় তাঁর চারপাশের মানুষকে, তাঁর অনুসারীদের প্রেরণা জোগান। সম্মোহনী নেতার সবচেয়ে বড় গুণটি হচ্ছে,  তিনি যা বলেন তা জনগণের মনে গেঁথে যায়। তারা উৎসাহিত হয়, প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। তাঁদেরই সম্মোহনী নেতা বলা হয়। তাঁদের কথায় এবং কাজে তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে বিস্তর আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ মানুষ তখন আশায় উদ্দীপিত হয়ে ওঠে সেই সম্মোহনী নেতার কথায়, তাঁর কাজে। ১৯৮৮ সালে, দুজন গবেষক Jay Conger এবং Rabindra Kanungo একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘Charismatic  Leadership’। এই প্রবন্ধে তাঁরা গবেষণা করে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে উৎসারিত সম্মোহনী নেতার কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। ১৯৯২ সালে আরো দুজন গবেষক  Robert House এবং Jane Howell নতুন করে ভেবে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা আগের দুজন গবেষককে অনুসরণ করে দেখার চেষ্টা করেন, তাঁরা যা বলেছেন তা কতটুকু সঠিক। তাঁদের প্রবন্ধের নাম ছিল ‘Personality and Charismatic Leadership’। এই চারজন গবেষকের গবেষণাপত্র থেকে আমরা সম্মোহনী নেতার কিছু বৈশিষ্ট্য পাই। তা হলো :

১. তিনি স্বপ্নচারী হবেন। ২. তিনি স্পষ্টবাদী হবেন। কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলবেন না, ইনিয়ে-বিনিয়ে বলবেন না। ৩. তিনি সংবেদনশীল মানুষ। মানুষের দুঃখ, বেদনা, আনন্দ-উল্লাস সবকিছুতেই তিনি আলোড়ন বোধ করেন। ৪. ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন তিনি। ৫. সৃজনশীল। নিত্য-নিয়ত সৃজন করে যান যিনি তাঁর কর্মে। ৬. প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। নিজের মধ্যে বিশ্বাস ধারণ না করলে সবার মধ্যে তা সঞ্চারণ করা যায় না। তিনি কেবল মুখের কথায় কথা বলেন না, বরং দেহের ভাষায় কথা বলেন। অর্থাৎ মঞ্চে অভিনেতা বা অভিনেত্রী যেমন করে মুখের সংলাপ এবং দেহের ভাষায় দর্শকদের বিমোহিত করেন, সম্মোহনী নেতার তেমন গুণ থাকতে হয়।

স্বপ্নচারী বঙ্গবন্ধু

নেতৃত্বের এই তাত্ত্বিক কথা বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে কতটুকু প্রয়োগ করা যায় তার ওপর আলোকপাত করতে গেলে প্রথমেই দেখা যাক, বঙ্গবন্ধু কতটুকু স্বপ্নচারী নেতা ছিলেন, সেই বিষয়টি। ইতিহাসের পেছনের পাতায় ফিরে দেখা যাক, বেশি পেছনে না গিয়ে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ বা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ তাঁর নির্মম লোকান্তরণের পূর্ব পর্যন্ত। নানাবিধ ঘটনা আছে যার মধ্য দিয়ে তাঁর এই স্বপ্নচারিতা প্রমাণ করা যায়। যেমন, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। ভবানীপুরে সিরাজ-উদ-দৌলা হোস্টেলে পূর্ব বাংলার কিছু তরুণকে বললেন, ‘মিয়ারা ঢাকায় যাইবেন না। ওই মাউরাদের সাথে বেশিদিন থাকা যাইব না। এখন থিকাই কাম শুরু করতে হইব।’ আসল কথাটি মেঠো বাংলায় বললেন, ‘ওই মাউড়াদের সঙ্গে বেশিদিন থাকা যাইব না।’ কী চমৎকার ঐতিহাসিক মন্তব্য! মেঠো বাংলায়, অবাঙালি ওই পাকিস্তানের সঙ্গে বাঙালিরা বেশিদিন থাকতে পারবে না। সত্যিই তারা থাকেনি। বাঙালি থেকেছিল ২৪ বছর ৪ মাস ৩ দিন। সেজন্যই ১৯৭৪-এ অন্নদাশংকর রায় বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কবে থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ভেবেছিলেন? বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, ১৯৪৭ থেকে। ইতিহাস তাই বলে।

১৯৪৭-এ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো সাপ্তাহিক মিল্লাত পত্রিকা। সেই পত্রিকার সম্পাদকের অফিসে বসে একটি অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় একটি প্রসঙ্গে শেখ মুজিব (তখনো বঙ্গবন্ধু অভিধায় ভূষিত হননি) বললেন, এই যে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি  হোল, তার রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। কারণ বাংলা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ৫৪ ভাগ মানুষের ভাষা বাংলা। বইতে লেখা আছে, বুদ্ধিজীবীরা লেখেন ৫৬ ভাগ। কিন্তু তারা ভুলে যান ২ ভাগ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কথা, যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। আসলে বাংলা মাতৃভাষা যাদের তাদের আনুপাতিক হার ছিল ৫৪ ভাগ। সেই থেকেই ভাষা-আন্দোলনের শুরু – সেই ১৯৪৭ থেকেই। তাই বঙ্গবন্ধুই ভাষা-আন্দোলনের দ্রষ্টা। সে-কারণেই ভাষা-আন্দোলন ১৯৪৮ সাল থেকে নয়, ১৯৪৭ সাল থেকেই শুরু।

১৯৬১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু, তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি, তাঁর পরিচয় তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। আমরা জানি যে, আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করেছিল ৪২ দফা দাবি নিয়েই; তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। সব দাবিই ছিল বাঙালির স্বার্থসংশ্লিষ্ট। তারপরেও শেখ মুজিবুর রহমান, নিজে নিজে তৈরি করলেন পূর্ববঙ্গ মুক্তিফ্রন্ট। তিনি একটি লিফলেট ছাপালেন নিজের অর্থে এবং বিলি করলেন বাঙালির দ্বারে দ্বারে। লক্ষ্য করলে বিস্মিত হই আমরা যে, স্বাধীনতার স্বপ্নে কতটা বিভোর হলে একটি মানুষ তাঁর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য কতটা কর্মবীর হতে পারেন। 

আরেকটি ঘটনা। তখন দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক ছিলেন তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)। বঙ্গবন্ধু তাঁকে মানিকভাই বলতেন। সেই মানিকভাইয়ের মধ্যস্থতায় বাম ঘরানার দুজন স্বকীর্তিখ্যাত নেতা কমরেড মণি সিংহ এবং কমরেড খোকা রায়ের সঙ্গে গোপন বৈঠক করলেন। বৈঠকের মূল বক্তা শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর কথা একটাই। বাঙালির সব সমস্যার সমাধান হবে স্বাধীনতা পেলে। কমরেড দুজন বললেন, আপনার কথা মানলাম, কিন্তু এখনো আইয়ুব খানের সরকার দেশে। স্বাধীনতার কথা প্রকাশ্যে বললে আপনার বিপদ হবে। সভা শেষ হলো শেখ মুজিবের একটি কথায়, ‘দাদা আপনাদের কথা মানছি, কিন্তু আমার কথাটাই রইল।’ বাঙালির স্বাধীনতা প্রয়োজন। এই ছিল তাঁর স্বাধীনতার স্বপ্ন।

১৯৬৮-তে বঙ্গবন্ধু তখন আগরতলা মামলার আসামি। একদিন তাঁকে বাসযোগে সামরিক আদালতে নেওয়া হচ্ছে। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত আসামি বর্তমানে প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ভূতপূর্ব ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। তিনি বিমর্ষভাবে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলেন যে, আমাদের ভবিষ্যৎ কী? বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, এই বিচার করতে পারবে না পাকিস্তানিরা। জনরোষের কারণে এই বিচার স্তব্ধ হয়ে যাবে। তারপরে পাকিস্তান সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয় অর্জন করবে; কিন্তু ক্ষমতা পাবে না। তারপরেই শুরু হবে
হই-হট্টগোল। বঙ্গবন্ধু দুটো শব্দ ব্যবহার করেছেন – হৈ, হট্টগোল। আপনারা লক্ষ করুন, বঙ্গবন্ধু ঠিক যেভাবে বলেছেন সেইভাবেই ঘটনাপ্রবাহ পরিচালিত হয়েছে। স্বপ্নের ঠিকানা তিনি কীভাবে নির্মাণ করেছেন।  

তবে বঙ্গবন্ধু জ্যোতিষী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে অতীন্দ্রিয় চেতনা  বেশি পরিমাণে ছিল। মনস্তত্ত্ববিদরা যাকে ইংরেজিতে বলেছেন ESP (Extra-Sensory Perception), যা একজন নেতার থাকা বাঞ্ছনীয়, নইলে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। Extra-Sensory Perception নিয়ে নিবন্ধকের কিছুটা পড়াশোনা করতে হয়েছে। কারণ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়তে গিয়ে তাঁকে psycho-history-র একটি কোর্স করতে হয়েছিল। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের Extra-Sensory Perception নিয়ে ইতিহাসবিদদের ভাবতে হয়। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে Extra-Sensory Perception যথেষ্ট ছিল বলে তথ্য-প্রমাণ আমাদের জানিয়ে দেয়।  

১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘জনগণের পক্ষ হইতে ঘোষণা করিতেছি যে এই প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের নাম হইবে বাংলাদেশ।’ নিবন্ধক সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তরুণরা এরপর থেকে আর পূর্ব পাকিস্তান বলেনি, বাংলাদেশ বলেছে। কাগজপত্রে পূর্ব পাকিস্তান লিখতে হয়েছে পাকিস্তানের সময়ে। তবে একথা সবার জানা উচিত যে, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম রাজপথে  স্লোগান দিয়েছিল – ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। বঙ্গবন্ধু সেই ‘বাংলাদেশ’ কথাটি বললেন।

১৯৬৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর পত্রিকা যখন ছাপা হলো, তখন দেখা গেল বর্ষীয়ান বাঙালি রাজনীতিবিদ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং আতাউর রহমান খান বিবৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এই প্রস্তাব সমর্থন করলেন। এর পেছনে অনেক যুক্তি আছে। এরপর ১৯৬৯-এর ২৫শে মার্চ, আইয়ুব খান বিদায় নিয়ে ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা দিয়ে গেলেন। সামরিক শাসন থেকে সামরিক শাসন। আইয়ুব খান শেষ দিকে বেসামরিকীকরণ করেছিলেন, উর্দি ছেড়ে স্যুট পরেছিলেন, তবে শাসনটা সামরিক কায়দায়ই চলছিল। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেই ঘোষণা করলেন, ১৯৭০-এর শেষদিকে সাধারণ নির্বাচন হবে। বাঙালি হলো উল্লসিত, আলোড়িত। কিন্তু তার পরপরই তিনি একটি ফতোয়া জারি করলেন। যাকে ইংরেজিতে বলা হয়েছে Legal Framework Order (LFO) – ‘আইনি কাঠামো আদেশ’। নির্বাচন কীভাবে হবে, নির্বাচন-পরবর্তী কী কাজ করবেন রাজনীতিবিদরা, আষ্টেপৃষ্ঠে হাত-পা বেঁধে দিলেন। ২৫ ও ২৭ ধারায়, স্পষ্ট করে বলা হলো যে, পাকিস্তানের লক্ষ্য-আদর্শ কোনো কিছুই পরিবর্তন করা যাবে না। ১২০ দিনের মধ্যে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। কারণ ১৯৬২ সালে প্রণীত সংবিধানটি বাতিল হয়ে গেছে। তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা গেল। আওয়ামী লীগ যা চাচ্ছিল তা ততদিনে পরিষ্কার। তা হলো – ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে নতুন সংবিধান রচিত হবে। উল্লেখ্য, ৬ দফা – একটি স্বপ্নের ঠিকানা নির্মাণ করেছিল বাঙালির জন্য। সেই স্বপ্ন অনুযায়ী যদি সংবিধান রচনা করতে হয় তাহলে ইয়াহিয়া খান যা বলেছিলেন তার বিরুদ্ধে চলে যাবে। সেজন্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তখন নির্বাচন করতে চাননি। তাঁরা ভেবেছিলেন যে, নির্বাচন করে লাভ নেই, বরং আন্দোলন করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী সব সময়। তিনি কিন্তু চাইলেন যে নির্বাচন হবে। তখন তিনি একটি কথা বলেছিলেন যা সামরিক গোয়েন্দারা টেপে ধারণ করে ইয়াহিয়া খানকে শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের পর আমি এলএফও টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলব। আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা।’ ইয়াহিয়া খানকে এই টেপ শোনানোর পরে বলেছিলেন, ‘যদি শেখ মুজিব আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে তাকে আমি দেখে নেব।’

১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে, নভেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় হলো। ৫ থেকে ১০ লাখ মানুষ হতাহত হলো, পাকিস্তান সরকার উদাসীন ছিল। বঙ্গবন্ধু নিজে ত্রাণের কাজকর্ম শেষ করে নানা বক্তব্য-বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। তখন নির্বাচন হবে কি হবে না – এটি নিয়ে সংশয় দেখা দিলো। মওলানা ভাসানী  স্লোগান দিলেন ‘ভোটের আগে ভাত চাই’, ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (NAP) নির্বাচন বয়কট করল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন এবং বললেন, উপদ্রুত এলাকায় নির্বাচন পরে হবে, নির্ধারিত তারিখে অন্যান্য নির্বাচন হতে হবে। তাই হয়েছিল।

পাকিস্তানে কর্মরত সাংবাদিক Anthony Mascarenhas বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামসের গণহত্যার বিবরণ তিনি লন্ডন থেকে প্রকাশ করেছিলেন। নির্বাচনের তিনদিন আগে তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আপনার দল কয়টি আসন পাবে। বঙ্গবন্ধু কালবিলম্ব না করে বলেছিলেন, নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পাবে ১৬৭টি। আর দুটো আসন পাবে ময়মনসিংহ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পিডিপি নেতা নূরুল  আমিন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়। ফলাফল তাই হয়েছে। তাঁর কাছে তথ্য ছিল। তাঁর Extra-Sensory Perception ছিল, যার ভিত্তিতে তিনি সঠিক কথা বলতে পেরেছিলেন। অথচ পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনী, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী, ইয়াহিয়া খানকে বুঝিয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ ৮০টির বেশি আসন পাবে না। মার্কিন নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন অন্য কথা। যা পরে সত্য প্রমাণিত হয়। তিনি আরো একবার তাঁর বিচক্ষণতা প্রমাণ করলেন।       

একটি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, যা তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে দেখে আসছিলেন, তা সমন্বিত আকারে উঠে এসেছিল ৭ই মার্চের ভাষণে। Andrew Newberg এবং Robert Waldman মতে, সেদিন যাঁরা তাঁর কথা শুনেছিলেন, তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আসে। বিভ্রান্ত বাঙালি জাতি সেদিন পেয়েছিল পথের দিশা। তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এটি লক্ষণীয়, স্বাধীনতার আগে মুক্তির কথা বলা হয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণে চারবার ‘মুক্তি’র কথা বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতা’ একবার বলা হয়েছে। নিবন্ধকের নিজের ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী, ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে ১,৩০৮টি শব্দের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর জীবনে সংক্ষিপ্ততম অলিখিত ভাষণ। এই ভাষণে বাঙালির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়েছে। জনগণের গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তি স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রকাশ এই ভাষণ। বাঙালির রাজনৈতিক বিবর্তনের ইতিহাস – সেই শশাঙ্ক থেকে শুরু করে, ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে শুরু করে, যে বাঙালির ইতিহাস (তারও আগে ইতিহাস আছে) তারই সন্নিবেশ হয়েছে এই ৭ই মার্চের ভাষণে। এর মধ্য দিয়ে একটি বাঁকবদল ঘটেছিল বাঙালির মানসিকতার। বাঁকবদলের অনুঘটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন তিনি জননন্দিত রাজনীতিবিদ থেকে জননন্দিত রাষ্ট্রনায়কে উন্নীত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, এই ভাষণটি ৩০শে অক্টোবর ২০১৭-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন UNESCO-র বিশ্ব প্রামাণিক ঐতিহ্যের অংশ। উল্লেখ্য, ১৩ই ডিসেম্বর ২০২০ ইউনেস্কো সৃজনশীল অর্থনীতিতে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে। এমন পুরস্কার আরো ২৩ জনের নামে আছে।

পাকিস্তান জেলে ২৯০ দিন অতিবাহিত করার পর, ১৯৭২-এর ৮ই জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলেন। লন্ডনে পৌঁছে ওইদিনই লন্ডনের ঈষধৎরফমবং হোটেলে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করছেন বঙ্গবন্ধু। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে কী করবেন? সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটি দেশ।’ বঙ্গবন্ধু স্বভাবসুলভ আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার মাটি ও মানুষ যদি থাকে আমি আবার উঠে দাঁড়াব।’ প্রকৃতপক্ষে, মাটি ও মানুষ দুটোই তাঁর ছিল। তিনি ফিনিক্স পাখির মতো বাংলাদেশের পুনরুত্থানের কল্পনা করেছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত বাংলার উন্নতির শীর্ষে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।   

এই উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন সম্পূর্ণ সূচিত হয়েছিল যখন ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে রেসকোর্সে ১৭ মিনিটের অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিলেন। ওই ভাষণেই ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কথা স্পষ্ট উঠে এলো। ‘সোনার বাংলা’ – বাংলার মানুষের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি সংবলিত একটি স্বপ্নাদর্শ। সেখানে তিনি যে কথাগুলি বলেছিলেন, প্রথমত, আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন।  তারপরে বলেছিলেন, বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বসবাস করবে,
খেয়ে-পরে সুখে থাকবে। বেকার যুবক যদি চাকরি না পায়, মানুষ যদি খেতে না পায়, এই স্বাধীনতা মিথ্যে হয়ে যাবে। অর্থাৎ যে মুক্তির কথা বলেছিলেন ৭ই মার্চে, সেই মুক্তির কথা আবার বললেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি নিয়ে তাঁর যে-স্বপ্ন রচিত হয়েছিল, তার নির্দেশনা এলো এমন কথায় – ‘বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে; যা কোনো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হবে না। বাংলাদেশের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র।’ ১৯৭২ সালের যে-সংবিধান, যা কি না বঙ্গবন্ধুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান, সেখানে জাতীয়তাবাদ সংযুক্ত করে চারটি মূলনীতির কথা বলা হয়েছে। 

১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫, বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্ন রূপায়ণের জন্য সময় পেয়েছিলেন ১৩১৪ দিন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর কাজটি কত জটিল, কঠিন ছিল, দারুণ বৈরী পরিবেশের মধ্যে তার সূচক হচ্ছে ড. হেনরি কিসিঞ্জারের মন্তব্য – ‘বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে।’ এই অভিসম্পাত নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু ১৯৭২-এর জুলাই-আগস্ট মাসেই সেই তলাবিহীন ঝুড়িতে তলা লেগেছিল, ঝুড়িতে বেশকিছু জমা পড়েছিল। ততদিনে বিশ্বের ৮৬টি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তখন ছিল ৭.৪ শতাংশ। 

১৯৭৫-এর ২৫শে জানুয়ারি থেকে আরেকটি পর্ব শুরু হয়েছিল যাকে বলি ‘বাকশাল পর্ব’। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) কোনো একটি বিশেষ দল ছিল না। পরিস্থিতির অনিবার্যতায় একটি অভিন্ন জাতীয় মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণ সাময়িকভাবে। ‘বাকশাল’ স্বপ্নটির মধ্যে সারা বাংলাদেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের রূপরেখা ছিল। সর্বসাকল্যে ২৩৩ দিন প্রস্তুতিমূলকভাবে কার্যকর ছিল বাকশাল। সেই সময়ের মধ্য যত তথ্য-উপাত্ত আমরা পাই তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সব সূচকের ঊর্ধ্বগতি ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সেই স্বপ্নটি রূপায়ণের সুযোগ দেওয়া হলো না। বাংলাদেশ একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে ছিল। তথ্য-উপাত্ত তাই বলে। ঔপনিবেশিক আমলের সব ঐতিহ্য ঝেড়ে মুছে দিয়ে নবযাত্রার সূচনা হবে – এই ছিল বাকশাল প্রতিষ্ঠার মূলকথা। বঙ্গবন্ধু একটি গান গাইতেন – ‘মা আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল।’ বঙ্গবন্ধু ১০ই জানুয়ারি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, তাঁর সাধ মিটে গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু তাঁর আশা তো পূরণ হয়নি। বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, হতে পারল না। 

সম্মোহনী নেতা বঙ্গবন্ধু

১৯৬৬-তে ৬ দফা আন্দোলন সূচিত হওয়ার পর সিরাজুল আলম খান, (ছাত্রলীগের অগ্রগণ্য একজন নেতা এবং একটি যুব ফ্রন্ট ‘নিউক্লিয়াস’-এর প্রধান, যা স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ করছিল), মন্তব্য করেছিলেন যে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন করতে হবে। কারণ লোকে তাঁর কথা শোনে। এই হলো সম্মোহন। বাঙালির অনেক নেতা আছেন, ছিলেন – মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী – সবাই জননন্দিত রাজনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো করে কেউ সাধারণ মানুষকে এত কাছে টানতে পারেননি, কেউ মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করতে পারেননি। তিনি তাঁর বক্তৃতা-দক্ষতা দিয়ে জনমানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন – যা একটি সম্মোহনী বৈশিষ্ট্য। 

বঙ্গবন্ধুর  সম্মোহন করার ক্ষমতা তো একদিনের গড়ে ওঠার বিষয় নয়, ক্রমাগতভাবে গড়ে উঠেছিল। মানুষকে আকর্ষণ করার এই শক্তি, মানুষের অন্তরে প্রবিষ্ট হওয়ার শক্তি। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর কাজে শেখ মুজিব যখন পায়ে হেঁটে টুঙ্গিপাড়ায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন এক বৃদ্ধা তাঁকে দোয়া করে বলেছিলেন, ‘গরিবের দোয়া তোমার জন্য সব সময় আছে।’ সারা জীবন এই মানুষটি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের হয়ে রাজনীতি করেছেন। শুধু বাংলাদেশের না, সারাবিশ্বের। বঙ্গবন্ধুর তখন বয়স ছিল ৩৪। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘যখন আমি ঐ বৃদ্ধার কুঁড়েঘর ছেড়ে আসলাম, তখন আমার চোখে পানি এসে গেছে। সেইদিন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম নিজের কাছে যে, কোনদিন মানুষের সাথে প্রতারণা করবো না।’১০ করেনওনি কখনো। ইংরেজ সাংবাদিক David Frost ১৮ই  জানুয়ারি ১৯৭২, তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার যোগ্যতা কী?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি মানুষকে ভালোবাসি।’ ‘আপনার দুর্বলতা কী?’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি তাদেরকে বেশি ভালোবাসি।’ সে-বছরেরই ২৩শে সেপ্টেম্বর, আমেরিকার NBC চ্যানেলের সাংবাদিক পল নিক্সনকে বলেছিলেন, ‘আমি কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস পেয়েছি। তাদের জন্য প্রাণ দিতে পারলেও আমি নিজেকে সার্থক মনে করব।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাজীবনে এই বিশ্বাসই লালন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনের চূড়ান্ত মুহূর্তটি ছিল ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯। যখন রেসকোর্সে নাগরিক সংবর্ধনায় তৎকালীন ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের প্রস্তাবনায় জনতা হাত তুলে সমর্থন জানাল যে, শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু। জনগণের দেওয়া উপাধি, এটি স্ব-আরোপিত নয়।

১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনের একমাত্র নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যা করতে বলেছেন, আর যা করতে নিষেধ করেছেন, সেভাবেই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। সেজন্যই, বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের শুরুতেই বলেছিলেন যে, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই।’ তিনি লোকরঞ্জক নেতা ছিলেন না, তাঁর রাজনীতি ছিল মানুষলগ্ন। তিনি লোকানুবর্তী (populist) নেতাও ছিলেন না। জনগণের স্বপ্ন নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে, জনগণ এবং নিজেকে সমন্বিত করে স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কাজেই তাঁর লোকানুবর্তিতা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় যেভাবে ব্যবহার হয়, সেই পরিধির বাইরে গিয়ে ভাবা প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনের আরেকটি অগ্নিপরীক্ষা হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। আমরা সবাই জানি যে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল নয় মাস। কিন্তু অনুপুঙ্খ হিসাব করে পাওয়া যায়, আট মাস একুশ দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম মুক্তিযুদ্ধ ছিল আমাদের। এতে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ইতিহাসস্বীকৃত হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।

১৯৭২-এর ১০ই জানুয়ারি যখন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন  তখন লন্ডনের The Guardian পত্রিকায় প্রথম পাতায় শীর্ষ খবরে বলা হলো, ‘As soon as Sheikh Mujib walks out of the Dhaka airport the republic of Bangladesh becomes a reality.’ সত্যি তাই হয়েছিল। ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশ যেন অসমাপ্ত, অপরিপূর্ণ বাংলাদেশ ছিল। বাংলাদেশ পরিপূর্ণ হলো ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২-এ।

কেবল দেশের মানুষের কাছেই তিনি সম্মোহনী নেতা ছিলেন না, বিদেশি নেতারাও তাঁর সম্মোহন ক্ষমতার তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলেন। ১৯৭১-এ ঢাকায় কর্মরত আমেরিকার কনসাল জেনারেল Archer K. Blood, তাঁর লেখা বই The Cruel Birth of Bangladesh : Memories of an American Diplomat-এ উল্লেখ করেছেন –

Mujib’s very appearance suggested raw power, a power drawn from the masses and from his strong personality. He was taller and broader than most Bengalis, with ruggedly handsome features and intense eyes. A no-nonsense moustache gave added strength to his face, as did the heavy rimmed dark glases he invariably wore… his dress was that of a native politician.১১

অধিকন্তু, আমেরিকার The Newsweek পত্রিকায় ৫ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রকাশিত সংবাদে বঙ্গবন্ধুকে ‘Poet of Politics’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। যে আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে ছিল, সেই আমেরিকার পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনীতির কবি’ বলা হয়। এটি অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সম্মোহন তাঁর নিজের দেশের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ। লক্ষণীয়, সকল দেশের, সকল বয়সের, সকল রাজনীতিবিদের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই সাংবাদিক লোরেন জেনকিন্স এই উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় –

Tall for a Bengali (he stands  5 feet 11 inches), with a stock of graying hair, a bushy mustache and alert black eyes, Mujib can attract a crowd of a million people to his rallies and hold them spellbound with great rolling waves of emotional rhetoric. “Even when you are talking alone with him,” says a diplomat, he talks like he’s addressing 60,000 people,” Eloquent in Urdu, Bengali and English, three languages of Pakistan, Mujib does not pretend to be an original thinker, he is a poet of politics, not an engineer, but the Bengalis tend to be more artistic than  technical, anyhow, and so his style may be just what was needed to unite all the classes and ideologies of the region.

১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যোগ দিয়েছিলেন। ৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, সেখানে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত – শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ সম্মেলনে উপস্থিত কিউবার বিপ্লবী রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল কাস্ত্রো দৌড়ে এসে শেখ মুজিবকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘মুজিব, এটি আমারও সংগ্রাম।’ একই সম্মেলনে কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে তিনি হিমালয়ের মতো। কাজেই আমার হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।’ একই সম্মেলন চলাকালে এক অবকাশে বঙ্গবন্ধু ও লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির ৩৫ মিনিটের আলোচনা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশবিরোধী গাদ্দাফি দুই হাত তুলে বাংলাদেশের জন্য মোনাজাত করেন। ধারণা হয়, বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী রসায়ন গাদ্দাফির বাংলাদেশবৈরী মানসিকতা পরিবর্তন করেছিল।

১৯৭৩-এর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়ে আরবদের জন্য বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন ও সহমর্মিতা মুসলিম দুনিয়ায় ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল। সুতরাং একজন আরব সাংবাদিক বাংলাদেশের সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রধানমন্ত্রী [বঙ্গবন্ধু] একটি বড় যুদ্ধে একটি মাত্র গুলি না ছুড়েও অর্ধেক আফ্রিকাসহ আরববিশ্ব জয় করে নিয়েছেন।’১২

সমাপনী বক্তব্য

বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নচারী ছিলেন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়; স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁর স্বপ্নের সমান। স্বপ্নের দ্বিতীয় পর্ব ছিল স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলা করা; যা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনের মতোই অসমাপ্ত থেকে যায়। বঙ্গবন্ধুর সম্মোহন তাঁকে প্রিয় করেছিল শুধু দেশের মানুষের কাছেই নয়; সারাবিশ্বের গুণীজনও তাঁর প্রতি আকর্ষিত ও শ্রদ্ধাবনত ছিল। প্রসঙ্গক্রমে জার্মান নেতা হিন্ডেনবুর্গ (জার্মান প্রেসিডেন্ট ১৯২৫-৩৪) সম্পর্কে চার্চিল যা বলেছিলেন, তা উদ্ধৃত করা যায় বঙ্গবন্ধুর ওপর এ আলোচনার শেষে –

Hindenburg! The name itself is massive. It harmonizes with the tall, thick-set personage with beetling brows, strong features, and heavy jowl, familiar to the modern world. It is a face that you could magnify tenfold, a hundredfold, a thousand-fold, and it would gain in dignity, nay even in majesty; a face most impressive when gigantic.১৩

টীকা ও তথ্যনির্দেশ

1.    Gary Wills (1994), ÔWhat Makes a Good Leader The Atlantic Monthly.

2.     Jia Lin in commentary on Sun Tzu, The Art of War : Complete Texts and Commentaries, 2003, P. 44 translated by Thomas Cleary.

3.    Anne Kinsey, ÔWhat is Visionary LeadershipÕ, google.

4.    `ªóe¨ Maximillan Weber, Theory of Social and Economic Organization, chapter ÔThe Nature of Charismatic Authority and its Routinization,Õ Abyev` A. R. Anderson and Talcott Parsons, 1947. 

৫.       অনলাইন তথ্য।

৬.       প্রয়াত কর্নেল শওকত আলী লেখকের কাছে মন্তব্য করেছিলেন।

৭.       মনোবিদরা মনে করেন, সব মানুষের ঊঝচ আছে; কারো ক্ষেত্রে তার বহিঃপ্রকাশ বেশ প্রকট।

৮.       পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বঙ্গবন্ধুর মন্তব্যটি গোপনে ধারণ করে ইয়াহিয়াকে শুনিয়েছিল; তার মন্তব্য ছিল, ‘শেখ মুজিব যদি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে আমি তাকে দেখে নেব।’

৯.   Andrew Newberg and Robert Waldman, Words Can Change Your Brain (Pennsylvania : Avery, 2021).

10.  Sheikh Mujibur Rahman, The Unfinished Memoirs (Dhaka : The University Press Limited, 2016), p 260.

11. Archer K. Blood, The Cruel Birth of Bangladesh (Dhaka : The University Press Limited, 2002), p 47.

12.  D×…Z Syed Anwar Husain, ÔSheikh Mujibur RahmanÕ, in Majeed Khan (ed.), Twenty Great Bengalis (Dhaka : The University Press Limited, 2008), p 274.

13. The Right Hon. Winston S. Churchill, Great Contemporaries (London : Readers Union
Ltd. and Thornton Butterworth Ltd.,1939),  p 111.