বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ২০২০

২০২০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার পেনরোজ (Roger Penrose), জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল ফিজিক্সের পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক রাইনহার্ড গেনজেল (Reinhard Genzel) এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দরিয়া গেজ (Andrea Ghez)। রাজকীয় সুইডিশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি তাদের প্রেস রিলিজে উল্লেখ করে যে, ‘for the discovery that black hole formation is a robust prediction of the general theory of relativity’-এর জন্য রজার পেনরোজ ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা পুরস্কারের অর্ধেক পাবেন। প্রেস রিলিজে আরো উল্লেখ করা হয় যে, for the discovery of a supermassive compact object at the centre of our galaxy’-এর সদস্য রাইনহার্ড গেনজেল এবং আন্দরিয়া গেজ পুরস্কারের বাকি অর্ধেক অংশ অর্থাৎ ৫ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। উল্লেখ্য, পেনরোজ-যুক্তরাজ্যের কলচেস্টার, গেনজেল জার্মানির হামবুর্গ এবং গেজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন।

২০২০ সালে রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইউনিট ফর দ্য সায়েন্স অফ প্যাথোজেনের পরিচালক ইমানুয়েল শাঁপেনতিয়ে (Emmanuelle Charpentier) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার এ দাওনা (Jennifer A. Doudna)। রাজকীয় সুইডিশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি তাদের প্রেস রিলিজে উল্লেখ করে যে, ‘for the development of a method for genome editing’-এর জন্য নোবেল পুরস্কারের ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা ইমানুয়েল শাঁপেনতিয়ে এবং জেনিফার দাওনা সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। উল্লেখ্য, শাঁপেনতিয়ে ফ্রান্সের জুভিসি-সুর-ওরেজ এবং দাওনা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে জন্মগ্রহণ করেন।

২০২০ সালে শারীরবৃত্ত বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর হারভে জে অল্টার (Harvey J. Alter), কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টার অধ্যাপক মাইকেল হোটন (Michael Houghton) এবং যুক্তরাষ্ট্রের রকফেলার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চার্লস এম রাইস (Charles M. Rice)। ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি তাদের প্রেস রিলিজে উল্লেখ করে যে, ‘for the discovery of Hepatitis C virus’-এর জন্য অল্টার, হোটন এবং রাইস নোবেল পুরস্কারের ১০ মিলিয়ন ক্রোনা সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। উল্লেখ্য, অল্টার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে, হোটন যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে এবং রাইস যুক্তরাষ্ট্রের সাক্রামেন্টোতে জন্মগ্রহণ করেন।

পদার্থবিজ্ঞান

১৭৮৩ সালে জন মিচেল নামে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক লন্ডনের রয়েল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ফিলোসফিক্যাল ট্রানজেকশন (Philosophical Transaction)-এ এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ওই গবেষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, একটি তারকায় যদি যথেষ্ট ভর এবং ঘনত্ব থাকে তাহলে তার মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র এত শক্তিশালী হবে যে আলো সেখান থেকে নির্গত হতে পারবে না। আলো ওই তারকাপৃষ্ঠ থেকে নির্গত না হতে পারলেও তাদের মহাকর্ষীয় আকর্ষণ অনুভব করা যাবে। এরকম বস্তুর অস্তিত্ব মিচেল অনুধাবন করেছিলেন। এ সমস্ত বস্তুপিণ্ডকে আমরা কৃষ্ণবিবর (Black hole) বলি। উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে প্রিন্সটনে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিদ রবার্ট ডিক প্রথম কৃষ্ণবিবর বা  Black hole সম্পর্কে উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে জন হুইলার (John Wheleer) এই ধারণাকে জনপ্রিয় করেন। ফরাসি বিজ্ঞানী ল্যাপলাস তাঁর System of the World গ্রন্থেও কৃষ্ণবিবরের কথা উল্লেখ করেছেন।

১৯১৫ সালে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের পর মহাকর্ষ কী করে আলোকে প্রভাবিত করে সে-সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর বিশ শতকের ত্রিশের দশকে দেখান, একটি স্থিতিশীল শীতল তারার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ভর কত হতে পারে এবং এই ভরের চাইতে ভর বেশি হলে তারকাটি কীভাবে চুপসে কৃষ্ণবিবরে পরিণত হবে। তবে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী সেই তারকার কী হবে সেটা  ১৯৩৯ সালে প্রথম সমাধান করেন রবার্ট ওপেনহাইমার। তিনি গাণিতিকভাবে দেখান, মহাকর্ষের কারণে একটি তারকার কীভাবে পতন (collapse) হতে পারে। ওপেনহাইমার এবং স্নাইডার বর্তুলাকার প্রতিসাম্যের (spherically symmetric) ধারণা মহাকর্ষীয় পতনের ধারণায় সংযোজন করেন। তাঁরা উল্লেখ করেন যে, কোনো মহাজাগতিক বস্তু সোয়ার্জচাল্ড ব্যাসার্ধের মধ্যে সংকুচিত হয়ে অসীম ঘনত্ববিশিষ্ট অনন্যতায় (singularity) রূপ নিতে পারে। উল্লেখ্য, সোয়ার্জচাল্ড ব্যাসার্ধ হচ্ছে Rs=26M/C2। এখানে G হচ্ছে মহাকর্ষ বল, M

 মহাজাগতিক বস্তুর ভর, C হচ্ছে আলোর গতি। এই জং স্থান-কালের একটি অঞ্চল, যাকে বলা হয় ঘটনা-দিগন্ত (event horizon)।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এবং ওপেনহাইমারের ম্যানহাটন প্রকল্পে নিয়োজিত হওয়ার ফলে কৃষ্ণবিবর নিয়ে গবেষণা বেশিদূর এগোয়নি। ষাটের দশকে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল বস্তুপিণ্ড কোয়াসার (Quaser) আবিষ্কৃত হয়। এই উজ্জ্বলতার কারণ কোনো বস্তুকণার কৃষ্ণবিবরে পতিত হওয়ার কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়; কিন্তু আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে ব্যবহার করে কৃষ্ণবিবর সৃষ্টির ব্যাখ্যা প্রদান এবং স্থান-কালের অনন্যতাকে ব্যাখ্যা করা কী সম্ভব? তাছাড়া ওপেনহাইমার-প্রস্তাবিত মহাকর্ষীয় পতনের পূর্বশর্ত বর্তুলাকার প্রতিসাম্য কী? – সে-বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না। রজার পেনরোজ বর্তুলাকার প্রতিসাম্যের ধারণাকে বাদ দিয়ে মহাজাগতিক পতন নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তবে তিনি ধারণা করেন যে, মহাকর্ষীয় পতনে অংশগ্রহণকারী বস্তুর শক্তির ঘনত্ব ধনাত্মক। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে অনন্যতার ব্যাখ্যা দিতে পেনরোজ নতুন গাণিতিক মডেল এবং টপোলজি (topology) ব্যবহার করেন। পেনরোজ আবদ্ধিক পৃষ্ঠের (Trapped Sarface) ধারণা অনন্যতা ব্যাখ্যায় ব্যবহার করেন। আবদ্ধিক পৃষ্ঠ, দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠ, যেখানে আলোকরশ্মি পৃষ্ঠতলের সঙ্গে উল্লম্বভাবে থাকে এবং ভবিষ্যতের দিকে অভিসরণ (converge) ঘটে। অপরদিকে বর্তুলাকার পৃষ্ঠে আলোকরশ্মি বিকীর্ণ (diverge) হয়। উল্লেখ্য, বর্তুলাকার পৃষ্ঠের ব্যাসার্ধ যদি সোয়ার্জচাল্ড ব্যাসার্ধের চেয়ে কম হয়, তাহলে সে-পৃষ্ঠকে বলা যেতে পারে আবদ্ধিক পৃষ্ঠ। আবদ্ধিক পৃষ্ঠে সময় কীভাবে থেমে যায় এক অনন্যতায়, তা পেনরোজ একটি নকশার মাধ্যমে দেখান (চিত্র-১ দ্রষ্টব্য)। এই নকশা পেনরোজের ১৯৬৫ সালে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারসে প্রকাশিত গবেষণাপত্র ‘Gravitational collapse and span time singularities’-তে উল্লেখ করা হয়। এই গবেষণাপত্রে পেনরোজ আরো উল্লেখ করেন যে, স্থান ও কালে আবদ্ধিক পৃষ্ঠ যখন তৈরি হয় তখন তা থেকে কোনো মহাজাগতিক বস্তুকণার বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। পেনরোজ আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং ঋণাত্মক শক্তির ঘনত্বের ভিত্তিতে আরো দেখান যে, আবদ্ধিক পৃষ্ঠে মহাজাগতিক পতনের মাধ্যমে অনন্যতা সৃষ্টি হওয়াকে ঠেকানো সম্ভব নয়।

১৯৬৩ সালে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস-এ ‘Asymptotic properties of fields and space-times’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধে পেনরোজ স্থান-কালের স্বভাবকে দেখার একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন, যার নাম ‘Conformal transformations’ বা ‘উপযোগী রূপান্তর’। এই রূপান্তর অনুযায়ী কোনো ঘটনার স্কেল বা মানদণ্ড স্থান-কালে পরিবর্তন হতে পারে; কিন্তু তার কোণ (angle) একই থাকবে। অর্থাৎ কোনো আলোকরশ্মি যদি ৪৫ ডিগ্রি কোণে ঘটনা-দিগন্তে আসে, তাহলে উপযোগী রূপান্তরের পর এই কোণ একই থাকবে, যদিও স্কেল পরিবর্তন হতে পারে। এই নকশাকেই বলা হয় পেনরোজ নকশা (চিত্র-২ দ্রষ্টব্য)। স্থান-কালের বক্রতার ব্যাখ্যায় এই নকশা অপরিহার্য। ১৯৭০ সালে হকিং এবং পেনরোজ কর্তৃক রয়েল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘The Singularities of gravitational collapse and cosmology’-তে দেখানো হয় যে, মহাজাগতিক অনন্যতার ক্ষেত্রেও আবদ্ধিক পৃষ্ঠের ধারণা প্রযোজ্য। পেনরোজ মনে করেন, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এক ধরনের শংকুবৎ গঠন (চিত্র-৩ দ্রষ্টব্য)। এ-ধারণা থেকে পরবর্তীকালে একটি নতুন মহাজাগতিক মডেল ‘Conformal cyclic cosmology’ পেনরোজ প্রস্তাব করেন।

আমাদের ছায়াপথ (Milky way) দেখতে সমতল চাকার মতো, যার ব্যাস ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। তার মধ্যে রয়েছে প্রায় একশ বিলিয়ন নক্ষত্র। তারই একটি হলো আমাদের সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রে অবস্থিত সূর্য। কিন্তু ছায়াপথের নিজস্ব একটি কেন্দ্র আছে। সেই কেন্দ্রে রয়েছে একটি কৃষ্ণবিবর – নাম সাগিত্তারিয়াস-এ* (Sagittarius A*) (চিত্র-৪ দ্রষ্টব্য)। গত ৩০ বছর ধরে গেনজেল এবং গেজ পৃথকভাবে আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত সাগিত্তারিয়াস-এ*-এর আশেপাশে সমস্ত উজ্জ্বল তারকাকে পর্যবেক্ষণ করেন। এর জন্য গেনজেলের দল VLT (Very Large Telescope) ব্যবহার করে চিলির প্যারানল পর্বত থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেন। অপরদিকে আন্দরিয়া গেজের দল হাওয়াই পর্বতে অবস্থিত কিক অবজারভেটরি থেকে ভিন্ন ধরনের শক্তিশালী দুরবিনযন্ত্র ব্যবহার করে ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করেন। এই বিজ্ঞানী দল প্রায় ত্রিশটি উজ্জ্বল নক্ষত্র আমাদের ছায়াপথে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তার মধ্যে একটি নক্ষত্র ছায়াপথের কেন্দ্রকে প্রতি ১৬ বছরে একবার প্রদক্ষিণ করে। গেনজেলের দল এই নক্ষত্রের নাম দেন S2। একই নক্ষত্রকে গেজের দলও পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তাঁরা এই নক্ষত্রের নাম দেন S-02। যেহেতু কক্ষপথ প্রদক্ষিণের সময় মাত্র ১৬ বছর, সেহেতু বিজ্ঞানীদল পুরো কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করে উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তুলনামূলকভাবে বলা যায়, সূর্যকে ছায়াপথ পুরো ঘুরতে ২০০ মিলিয়ন বছর লাগে। এই দুই দলের উপাত্ত পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করে দুই বিশ্লেষণের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া গেল। তাই পর্যবেক্ষণভিত্তিক ফলাফল দেখায় যে, আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে রয়েছে ৪ মিলিয়ন সৌর-ভরের সমান কৃষ্ণবিবর।

সম্প্রতি ৫৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে মেসিয়ার ৮৭ (Messier 87) ছায়াপথে আরো একটি কৃষ্ণবিবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেটি সাগিত্তারিয়াস-এ* থেকে সহস্রগুণ ভারী। বস্তুত পেনরোজ দেখান যে, কৃষ্ণবিবর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ফলাফল। অপরদিকে গেনজেল এবং গেজ পৃথকভাবে কৃষ্ণবিবরের সন্ধান পান।

রসায়নবিজ্ঞান

মানুষের দেহের জিন বংশাণুক্রমের একক। রাসায়নিকভাবে বলা যায়, ডিএনএ (ডাইঅক্সি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)-এর মধ্যে বিদ্যমান নিউক্লিওটাইডের অণুক্রম হচ্ছে জিন। জিনের অণুক্রম পরিবর্তিত হয়ে ভিন্নরূপ (Variant) ধারণ করতে পারে। ২০১২ সালে ইমানুয়েল শাঁপেনতিয়ে এবং জেনিফার এ দাওনা CRISPR/ Cas 9 নামে এক ধরনের জেনেটিক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। এখানে CRISPR হচ্ছে জিনের একটি অণুক্রম, যার পুরো নাম Clustered regularly interspaced short palindromic repeats এবং Cas 9 নামে হচ্ছে ‘CRISPR associated’ একটি নির্দিষ্ট জিন। এই প্রযুক্তিকে একটি কাঁচির সঙ্গে তুলনা করা হয়, কারণ এর কাজ হচ্ছে জিনকে সম্পাদনা করা। অনেকটা সম্পাদক কর্তৃক কোনো বাক্যকে কেটে সংশোধন করার মতো। কীভাবে শাঁপেনতিয়ে এবং দাওনা এই জিনপ্রযুক্তি আবিষ্কার করলেন তা এখন দেখা যাক।

২০০২ সালে শাঁপেনতিয়ে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নিজস্ব গবেষকদল নিয়ে পুঁজোৎপাদক স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus pyogenes)-এর ওপর কাজ শুরু করেন। কারণ এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের অনেক ক্ষতি সাধন করে, যেমন টনসিলের সংক্রমণ এবং জীবাণু-দূষণ (Sepsis)। শাঁপেনতিয়ের গবেষণার বিষয় ছিল এই ব্যাকটেরিয়ার জিন কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। অপরদিকে দাওনা ২০০৬ সালে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষক দলকে নিয়ে আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)-এর হস্তক্ষেপ বা প্রতিবন্ধকতা (RNA interference)-এর ওপর কাজ শুরু করেন। কোন কোষে জিনের কার্যক্রম কীভাবে আরএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় – এ নিয়ে দাওনা গবেষণা শুরু করেন। এদিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী অণুজীববিদ দাওনাকে জানান যে, তাঁরা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার জিনের মধ্যে একই ধরনের ডিএনএ-র অণুক্রম দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু এই অণুক্রমের মধ্যে তাঁরা আরো একটি অণুক্রম দেখতে পান যা ভিন্ন ধরনের। একটি বাক্যের মধ্যে কোনো শব্দের পুনরাবৃত্তি হলে যে অবস্থা হয়, একে সেরকম একটি অবস্থা বলে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন। এই অণুক্রমের পুনরাবৃত্তিকেই অণুজীববিদরা নাম দেন CRISPR। এই অণুক্রমের মধ্যে যে-অণুক্রমের পুনরাবৃত্তি হয় না, তার সঙ্গে ভাইরাসের জেনেটিক কোডের মিল রয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, ব্যাকটেরিয়াকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষার পেছনে এই ধরনের একটি প্রাকৃতিক অনাক্রম্য পদ্ধতি কাজ করে। এ-বিষয়ে গবেষণার জন্য একটি প্রতিকল্প হচ্ছে এইরূপ : কোনো ব্যাকটেরিয়া যদি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়, তাহলে ভাইরাসের জেনেটিক কোড ব্যাকটেরিয়ার জিনের মধ্যে যুক্ত হয়। দাওনা ও তাঁর গবেষকদল এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং তাঁরা ধারণা করেন যে, ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে ব্যাকটেরিয়ার রক্ষাকবচ সম্ভবত আরএনএ-র হস্তক্ষেপ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। দাওনা CRISPR পদ্ধতি সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানতে শুরু করেন। CRISPR অণুক্রমের সঙ্গে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন এক ধরনের জিন, যার নাম দেয়া হয় CRISPR associate বা Cas । দাওনা লক্ষ করেন যে, ডিএনএকে কর্তন করার জন্য যে-জেনেটিক কোড সংবলিত প্রোটিন ব্যবহার করা হয়, তার সঙ্গে Cas প্রোটিনের কার্যক্রমের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রশ্ন হলো,  Cas প্রোটিন কী ভাইরাসের ডিএনএকে কর্তন বা বিচ্ছিন্ন করতে পারে? দাওনার গবেষকদল কয়েক বছরের চেষ্টায় CRISPR/Cas পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা ব্যাকটেরিয়ার অনাক্রম্যতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে। উল্লেখ্য, দাওনার পদ্ধতি অনুযায়ী বিভিন্ন Cas প্রোটিন ব্যবহার করা যায়।

অপরদিকে শাঁপেনতিয়ে ২০০৯ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানে জিন-নিয়ন্ত্রিত আরএনএ অণু নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি স্ট্রেপটোকক্কাসের মধ্যে বিদ্যমান সকল আরএনএ-র একটি ম্যাপ তৈরি করেন। তিনি লক্ষ করেন যে, এই ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে অধিক পরিমাণে যে আরএনএ রয়েছে, তার জেনেটিক কোড অনেকটা CRISPR অণুক্রমের মতো। শাঁপেনতিয়ে ধারণা করেন যে, এর মধ্যে কোথাও মিল রয়েছে। এ নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাঁপেনতিয়ে এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, CRISPR অণুক্রমের যে-অংশের পুনরাবৃত্তি ঘটে, তার সঙ্গে একটি অজানা আরএনএ-অণুর মিল রয়েছে। শাঁপেনতিয়ের গবেষকদল পুঁজোৎপাদক স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে বিদ্যমান CRISPR

পদ্ধতি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেন। দেখা গেল, একটি মাত্র Cas প্রোটিন, যাকে বলা হয় Cas 9, তা দ্বারা ভাইরাসের ডিএনকে কর্তন করা হয়। শাঁপেনতিয়ে আরো দেখান যে, এই অজানা আরএনএ হচ্ছে trans-activating CRISPR RNA (সংক্ষেপে বলা হয় tracrRNA)। শাঁপেনতিয়ে ২০১১ সালের মার্চ মাসে tracrRNA আবিষ্কারের বিষয়ে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।

দাওনা ও শাঁপেনতিয়ে ২০১১ সালে পোর্টোরিকায় এক কনফারেন্সে তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন। সেই কনফারেন্স থেকেই তাঁদের মধ্যে গবেষণার বিষয়ে সহযোগিতা শুরু হয়। দাওনা Cas 9 নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি লক্ষ করেন যে, tracrRNA-এর উপস্থিতিতে Cas 9 ডিএনএ অণুকে কর্তন করতে পারে। অর্থাৎ Cas 9 একটি কাঁচির মতো কাজ করে। শাঁপেনতিয়ে ও দাওনা এই জেনেটিক কাঁচিকে আরো সহজভাবে ব্যবহার করার জন্য tracrRNA এবং CRISPR RNA-কে সমন্বিত করে যে-অণু তৈরি করেন, তার নাম দেন ‘Guide RNA’। জেনেটিক কাঁচির এই ভিন্ন রূপকে ব্যবহার করে গবেষকদল তাঁদের ইচ্ছেমতো ডিএনএ-র বিভিন্ন অংশকে কর্তন করতে সমর্থ হন। ২০১২ সালে দাওনা ও শাঁপেনতিয়ে তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে বিজ্ঞানজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। শুরুতে তাঁদের ধারণা ছিল যে, পুঁজোৎপাদক ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করবেন; কিন্তু তা না করে তাঁরা তৈরি করলেন এক ধরনের জেনেটিক কাঁচি, যার সাহায্যে ডিএনএ কর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হলো। এই প্রযুক্তির কলাকৌশল চিত্র ৫-এ দেখা যায়।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা এখন কোনো প্রাণীর ডিএনএ-কে পরিবর্তন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, নিউজিল্যান্ডে সম্প্রতি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গরুর ডিএনএ পরিবর্তনের মাধ্যমে কালো গরুর চামড়াকে ধূসর বর্ণে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তার কারণ কালো গরুর চামড়া সূর্য থেকে অধিক মাত্রায় তাপ শোষণ করে। ফলে গরু ক্লান্ত অবস্থায় থাকে এবং এই অবস্থায় তাদের দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায়। তাই এই জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধূসর রঙের গরুর চামড়ায় রূপান্তর ঘটানো হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সারাবিশ্বে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন গবাদিপশু চাপের সম্মুখীন। এই অবস্থায় জিন প্রযুক্তি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া নানা রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। CRISPR/ Cas 9 প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যান্সার এবং অ্যানিমিয়া রোগ নিরাময়ের জন্য অনাক্রম্যতা থেরাপির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে এই প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। কারণ এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। যেমন – এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো ভ্রূণের গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘We will face new ethical issues, but this new tool may well contribute to solving many of the challenges now facing humanity’ সাম্প্রতিককালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ তার মধ্যে একটি।

শারীরবৃত্ত বা চিকিৎসাবিজ্ঞান

ভাইরাস এক ধরনের সংক্রামক অণু, যা প্রাণকোষের সংস্পর্শে এলে তার প্রতিরূপ (Replicate) তৈরি করতে পারে। ভাইরাসের জেনেটিক বস্তু ডিএনএ অথবা আরএনএ। পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের মধ্যে লক্ষ লক্ষ ভাইরাস রয়েছে। যকৃতের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। এই রোগ সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়। যে-ভাইরাসের কারণে দূষিত খাদ্য বা পানি থেকে যকৃতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস। যে-ভাইরাস রক্ত বা দেহের অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমে যকৃতের প্রদাহ সৃষ্টি করে, তাকে বলা হয় হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশক থেকে বিজ্ঞানীদের জানা ছিল হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসের কথা। কিন্তু রক্তবাহী যকৃতের প্রদাহ থেকে মানবদেহে সিরোসিস বা ক্যান্সারের মতো রোগ সৃষ্টি হয়। এ-ধরনের রোগের ভাইরাস সম্পর্কে তেমন কিছু বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। ষাটের দশকে বারুস ব্লুমবার্গ (Baruch Blumberg) রক্তবাহিত হেপাটাইটিস রোগের কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এর জন্য ব্লুমবার্গ ১৯৭৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।

সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথে কাজ করার সময় হার্ভে অল্টার লক্ষ করেন যে, যে সমস্ত রোগীর শরীরে রক্ত পরিভরণ করা হয় (Blood transfusion), তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস রোগ বেশি। পরীক্ষা করে অল্টার জানান যে, এই রোগের কারণ হেপাটাইটিস-বি বা হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস নয়। তবে অল্টার মনে করেন যে, এটি অন্য ধরনের ভাইরাস হতে পারে, যার নাম দেওয়া হলো ‘Non A, Non B’ হেপাটাইটিস বা সংক্ষেপে NANBH। অল্টারের গবেষকদল আরো লক্ষ করেন যে, এই রোগ মানুষের দেহ থেকে শিম্পাঞ্জির দেহে প্রবেশ করতে পারে। ১৯৭২ সালে এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র অল্টার প্রকাশ করেন।

মাইকেল হোটন আশির দশকে চিরন (Chiron) নামে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করার সময় শিম্পাঞ্জির সংক্রমিত রক্ত থেকে ভাইরাসের জেনেটিক অণুক্রম হাফ করতে সমর্থ হন। তারপর এই জেনেটিক অণুক্রম এবং অ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, এটি একটি নতুন ধরনের আরএনএ ভাইরাস, যা ফ্লেভি ভাইরাস (Flavi Virus) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই নতুন ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শুধু এই ভাইরাস কি হেপাটাইটিস রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী? এর জন্য জানা প্রয়োজন নতুন আবিষ্কৃত ভাইরাস দেহের মধ্যে তার প্রতিরূপ সৃষ্টির মাধ্যমে মানবদেহকে রোগাক্রান্ত করতে পারে কি না?

চার্লস রাইস ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁর গবেষণার প্রতিকল্প ছিল এইরূপ : হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসের জেনেটিক অণুক্রমের একটি অঞ্চল, যা এই ভাইরাসের প্রতিরূপ সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। এই ভাইরাসের জেনেটিক অণুক্রমের অংশবিশেষ প্রতিরূপ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এরকম একটি প্রতিকল্প নিয়ে রাইস গবেষণা শুরু করেন এবং এতে ব্যবহার করেন জেনেটিক প্রকৌশল। রাইস হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসের আরএনএ-র ভিন্নরূপ তৈরি করে তা শিম্পাঞ্জির যকৃতের মধ্যে প্রবেশ করান। মানুষের যকৃতে যেভাবে প্রদাহ লক্ষ করা যায়, ঠিক সেরকম প্রদাহ শিম্পাঞ্জির মধ্যে লক্ষ করা গেল। এভাবেই রাইস প্রমাণ করেন যে, হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস রক্তবাহী দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস রোগের কারণ। হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসের গঠন চিত্র-৬ দ্রষ্টব্য। এভাবেই অল্টার, হোটন এবং রাইস হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস আবিষ্কারের মাধ্যমে দেখান, রক্তবাহী দীর্ঘস্থায়ী যকৃত প্রদাহের অন্যতম কারণ এই ভাইরাস। এই ভাইরাস শনাক্তকরণের মাধ্যমে এই রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

পরিশেষে, কৃষ্ণবিবরের অস্তিত্ব নিয়ে রজার পেনরোজের গাণিতিক মডেল এবং পরবর্তীকালে রাইনহার্ড গেনজেল এবং আন্দরিয়া গেজ কর্তৃক কৃষ্ণবিবরের অস্তিত্ব প্রমাণ পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে সমন্বিত করে কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির নতুন তত্ত্ব আগামীদিনে কৃষ্ণবিবরের অভ্যন্তরের ক্রিয়াকলাপকে ব্যাখ্যা করবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। রসায়নবিজ্ঞানে শাঁপেনতিয়ে এবং দাওনার আবিষ্কার জিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার মানবকল্যাণে সুফল বয়ে আনবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অল্টার, হোটন এবং রাইসের

হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসের আবিষ্কার যকৃতের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে নতুন ওষুধ তৈরির মাধ্যমে মানবকল্যাণে অবদান রেখে চলেছে। বস্তুত, ২০২০ সালের নোবেল পুরস্কার-স্বীকৃত আবিষ্কার আগামীদিনে মানবকল্যাণে নানাভাবে অবদান রাখবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

তথ্যসূত্র

পদার্থবিজ্ঞান

১. Press release (6th October 2020) : The Nobel Prize in Physics 2020. NobelPrize.org. Nobel Media AB 2020. (Accessed at : https://www.nobelprize.org/prizes/physics/2020/press-release/ on 1 Feb 2021)

2.  The Nobel committee for Physics (2020), Theoretical foundation for black holes and the supermassive compact object at the Galactic Centre, The Royal Swedish Academy of Sciences, Stockholm.

3.  Penrose, R (1963), Asymptotic properties of fields and space-times, Physical Review Letters, Vol 1,  No 2, pp. 66-68.

4.  Penrose, R (1965), Gravitational Collapse and Space-Time Singularities, Physical Review Letters, Vol 14, No. 3, pp 57-59.

5.  Penrose, R (2010), Cycles of Time : An Extraordinary View of the Universe, The Bodley head, London.

6.  Genzel, R, Eisenhawer, F, and Gillessen, S, (2010), The Galactic Center massive black hole and Nuclear Star Cluster, Reviews of Modern Physics, Vol 82, No 4, pp. 3121-3195.

7.  Ghez, A. M. ed. al (1998), High Proper-Motion Stars in the Vicinity of Sagittarius A*: Evidence for a Supermassive Black Hole at the Center of Our Galaxy, The Astrophysical  Journal, V. 509, No 2, pp. 678-686.

রসায়নবিজ্ঞান

১.  Press release (7th October 2020) : The Nobel Prize in Chemistry 2020. NobelPrize.org. Nobel Media. (Accessed at : https://www.nobelprize.org/prizes/chemistry/2020/press-release/ on 21 Dec 2020).

2.  Scientifc Background on the Nobel Prize in Chemistry 2020. A Tool for Genome Editing. The Royal Swedish Academy of Sciences, Stockholm.

3.  Knott, G. J and J. A. Doudna (2018), CRISPR-Cas guides the future of genetic engineering, Science, 361 (6405), pp. 866-869.

4.  Jinek M, Chylinski K, Fonfara I, Hauer M, Doudna JA, Charpentier E. (2012), A programmable dual-RNA-guided DNA endonuclease in adaptive bacterial immunity, Science, 337 (6097) : 816-21 (Accessed at Pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/22745249/ on 10 Jan 2021)

wPwKrmvweÁvb

1.  Press release (5th October 2020) : The Nobel Prize in Physiology or Medicine. NobelPrize.org. Nobel Media. (Accessed at : https://www.nobelprize.org/prizes/medicine/2020/press-release/ on 2 Feb 2021).

2.  Scientific Background : The discovery of Hepatitis C Virus, The Nobel Assembly of Karolinska Institute, Stockholm, 2020.

3.  Alter H. J., Purcell R. H., Holland P. V., Popper H. (1978), Transmissible agent in non-A, non-B hepatitis, Lancet, 1 (8062) : 459-463.

চিত্রঋণ

চিত্র ১-৫ : রাজকীয় সুইডিশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি/য়োহান জারনেসটেড।

চিত্র ৬ : wikipedia.org/wiki/hepatitis_C_Virus.

পদার্থবিজ্ঞানীদের ছবি : Nobel Prize Outreach Photo : A.  Buhl, B. Ludewig, F. Kennedy.

রসায়নবিজ্ঞানীদের ছবি : Nobel Prize Outreach Photo : B. Ludewig, B. Hosea-Small..

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ছবি : Nobel Prize Outreach Photo : J. Asico, M. Holly, F. Montmare.. [দ্রষ্টব্য : এই প্রবন্ধে ব্যবহৃত চিত্র লেখক কর্তৃক নোবেল ফাউন্ডেশন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত]