বিস্ফোরক এ-সময়ে নিজার কাব্বানির কবিতা

অনুবাদ : গোলাম মোরশেদ খান

সিরিয়ান কবি, প্রকাশক ও কূটনীতিবিদ নিজার তওফিক কাব্বানি (২১শে মার্চ ১৯২৩-৩০শে এপ্রিল ১৯৯৮) তাঁর কাব্যে প্রেম, শরীরী ভাষা, নারীবাদ, ধর্ম ও আরব জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর প্রকাশভঙ্গিতে রয়েছে একই সঙ্গে সারল্য ও আভিজাত্য। আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রিধারী কাব্বানি সিরিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে পরবর্তী সময়ে কনসাল কিংবা কালচারাল অ্যাটাশে হিসেবে বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল বৈরুত, কায়রো, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ, লন্ডন, বেজিং প্রভৃতি বিখ্যাত শহর। বেজিংয়ে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র (ইউএআর) দূতাবাসে তিনি ভাইস সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন, যে-সময়টিতে তিনি ব্যাপকভাবে কাব্যচর্চা করেন। তাঁর অনেক সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কবিতা এই সময়কালে (১৯৬৯-৭০) লেখা।

কলেজে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতার বই বের হয়, যা ছিল রোমান্টিক কবিতার একটি সংকলন (‘কৃষ্ণনয়না আমাকে বলেছে’, ১৯৪৪)। এতে নারীদেহের আবেদনময় নানা উপমা তখনকার গোঁড়া, রক্ষণশীল সিরীয় সমাজে বিতর্কের ঝড় তোলে। তবে এরকম প্রতিক্রিয়া আগেই আঁচ করতে পেরে তিনি তাঁর পিতৃবন্ধু ও শিক্ষামন্ত্রী মুনীর আল আজলানিকে দিয়ে বইটির একটি মুখবন্ধ লিখিয়ে নিয়েছিলেন – যা সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে সাহায্য করেছিল। কূটনৈতিক জীবন থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর নিজের নামেই তিনি বৈরুতে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই স্থিত হন।

নিজার কাব্বানি তাঁর সময়ের একজন বিখ্যাত নারীবাদী ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী কবি বলে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে তাঁর এই প্রতিবাদী কবিসত্তার পেছনে রয়েছে একটি বিয়োগান্ত ঘটনা – কিশোর বয়সী কাব্বানির চেয়ে দশ বছরের বড় বোন তাঁর হবু বরকে পছন্দ করতে না পেরে তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং পরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। বোনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, সারাজীবন তিনি তাঁর রক্ষণশীল সমাজের কুসংস্কার দূর করতে যুদ্ধ করে যাবেন। তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তিনি বিপ্লবী কি না। তাঁর উত্তর ছিল – ‘আরব দেশগুলিতে প্রেম হচ্ছে বন্দি, আর আমি তাঁকে মুক্ত করতে চাই। আরবের আত্মা, দেহ ও ইন্দ্রিয়নিচয়কে আমি আমার কবিতা দিয়েই মুক্তি এনে দিতে চাই।’

উনিশশো সাতষট্টি সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরবদের শোচনীয় পরাজয় তাঁর মনোজগৎকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে এবং তাঁর কবিতাকে এক ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। রোমান্টিকতা, প্রেম ও শরীরী আবেদনের কবিতা থেকে তিনি সরে আসেন রাজনৈতিক বক্তব্যপূর্ণ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কবিতার দিকে। পরে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত তাঁর কবিতাগ্রন্থ
‘পরাজয়-কাহিনির বইয়ে মার্জিনে মন্তব্য’ আরব নেতৃবৃন্দের অকর্মণ্যতার বিরুদ্ধে হুল-ফোটানো একটি আত্মসমালোচনা। অবশ্য তাঁর এ-বইটি আরব রাজনৈতিক অঙ্গনের ডান ও বাম – উভয় দিক থেকেই উষ্মার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কবিতা ছাড়াও তিনি কিছু গদ্য লিখেছেন – যেমন, ‘কবিতার সঙ্গে আমার বসবাস’, ‘কবিতা কী?’, ‘বাক্যরাও জানে রাগ কী?’, ‘কবিতা, যৌনতা ও বিপ্লব সম্পর্কে’, ‘পাখিদের ভিসার প্রয়োজন হয় না’ ইত্যাদি। ‘উন্মত্ততার প্রজাতন্ত্র, যা আগে ছিল লেবানন’ – এই নামে তিনি একটি নাটকও লিখেছেন। অনেক বিখ্যাত আরব গায়ক-গায়িকা তাঁর লেখা কবিতায় সুর দিয়ে গেয়েছেন – যাঁদের মধ্যে রয়েছেন উম্মে কুলসুম, ফেইরুজ, লতিফা, মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব প্রমুখ।

নিজার কাব্বানি জীবনে দুবার দার পরিগ্রহ করেছেন। তাঁর প্রথমা স্ত্রী জাহরা আকবিক ছিলেন তাঁরই আত্মীয়া। দ্বিতীয়া স্ত্রী বিলকিস ছিলেন একজন ইরাকি। তিনি ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষিকা এবং তাঁর সঙ্গে কাব্বানির প্রথম পরিচয় হয় বাগদাদে একটি কবিতাপাঠের আসরে। কাব্বানি বিলকিসকে নিয়ে বৈরুতে সংসার পাতেন; কিন্তু লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময়ে ১৯৮১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ইরাকি দূতাবাসে এক সন্ত্রাসী হামলায় বিলকিস নিহত হন। তাঁর মৃত্যু কাব্বানির মধ্যে এক বড় মনোজাগতিক পরিবর্তন নিয়ে আসে – তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘বিলকিস’ কবিতাটিতে সমস্ত আরবজগৎকেই এ-মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন।

বিলকিসের মৃত্যুর পর কাব্বানি বৈরুত ত্যাগ করেন ও লন্ডনে স্থিত হন। সেখানেই তিনি তাঁর শেষ জীবনের ১৫টি বছর কাটান এবং কবিতাচর্চা অব্যাহত রাখেন – একই সঙ্গে জন্ম দেন অনেক বিতর্ক ও সমালোচনার। তাঁর এ-সময়ের জনপ্রিয় কবিতাগুলি হচ্ছে ‘কখন তারা আরবদের মৃত্যু ঘোষণা করবে?’, ‘কা’না শহরের মুখ’, ‘আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে’ ইত্যাদি। তাঁর শেষ কবিতাটি গাজা উপত্যকার বর্তমান বিস্ফোরক সময়ে আমাদের নতুন করে ভাবায় ও প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রেরণা দেয়।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৮ সালের ৩০শে এপ্রিল তিনি লন্ডনে মারা যান। এর কয়েকদিন পর দামেস্কের ‘বার সাগির’ নামক স্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

নিজার কাব্বানি

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি রক্ষা করতে চাই একটি গোলাপকে …

                           একটি নারীকে …

আর একটি নিটোল কবিতাকে;

আকাশের নীলিমাকে, যা আর নেই …

নেই তার জল, কিংবা বায়ু

নেই তাঁবু, অথবা উষ্ট্রী, 

নেই কালো কফি …

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা সাহসের সাথে রক্ষা করতে চাই

বিলকিসের কালো চুল

মাইসনের ওষ্ঠযুগল

হিন্দ … দা’দ

অথবা লুবনা, এবং রাবাব …

আর চোখের পাপড়ি থেকে উদ্দীপনা নিয়ে

ঝরে পড়া কালো সুরমার বৃষ্টি।

তুমি আমার কাছে পাবে না কোনো

গোপন কবিতা,

গোপন কোনো ভাষা

অথবা গোপন কোনো বই,

যা আমি লুকিয়ে রাখি বন্ধ দরজার অন্তরালে …

আমার কাছে কোনো কবিতা নেই

যা হাঁটছে সদর রাস্তায় … হিজাবে মুখ ঢেকে …

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা আমাদের বেঁচে যাওয়া স্বদেশের

খণ্ডাংশটুকু নিয়ে লিখি

অঙ্গহীন, কবন্ধ … ছিন্নবস্ত্রধারী …

উন্মূল এমন একটি স্বদেশ,

যা খুঁজে ফিরছে তার নাম –

আর এমন একটি জাতি, যার কোনো নাম নেই

এমন একটি স্বদেশ, যা হারিয়েছে তার

মহান কবিতাগুলোকে

শুধুমাত্র ‘আল-খানসার’১ লেখাগুলো ছাড়া …

এমন একটি স্বদেশ, যা হারিয়েছে তার লাল …

নীল … অথবা হলুদ স্বাধীনতা –

এমন একটি স্বদেশ, যা তার পাখিদের

উড়তে নিষেধ করে,

এমন একটি স্বদেশ, যার লেখকেরা

ভয় পেয়ে লেখে শুধু

বাতাসের কাগজে।

এমন একটি স্বদেশ,

যা আমাদের দেশে একটি কবিতা, যা কি না

পূর্বপ্রস্তুতিহীন …

আমদানিকৃত …

বিদেশি মুখ আর জিহ্বার রচনা,

যার কোনো প্রারম্ভ নেই

নেই কোনো অন্ত …

অধিবাসীদের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই,

সম্পর্ক নেই দেশটির সাথে …

তাবৎ মানবজাতির সাথেও …

এমন একটি স্বদেশ,

যা শান্তি আলোচনার টেবিলে

কোনো আত্মসম্ভ্রম ছাড়াই

খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে বসেছে …

এমন একটি স্বদেশ,

যার পুরুষেরা একে অন্যের গায়ে

ভয়ে মূত্রত্যাগ করে –

শুধুমাত্র মহিলারা বেঁচে আছে …

আমাদের চোখে লেগে থাকা নুন

নুন আমাদের ঠোঁটে

অথবা আমাদের বাক্যে …

আমাদের হৃদয়ের শুষ্কতা কি

উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা পেয়েছি

বনি কাহতান থেকে?

আমাদের জাতির মাঝে কোনো ‘মুয়াবিয়া’ নেই

নেই কোনো ‘আবু সুফিয়ান’ …

এমন কেউ নেই, যে ‘না’ বলতে পারে

তাদেরকে, যারা আমাদের

ঘরবাড়ি সমর্পণ করেছে,

অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে ভূমি

আর আমাদের উজ্জ্বল ইতিহাসকে

করেছে একটি মুদির দোকান।

আমাদের জীবনে আর কোনো কবিতা নেই

সুলতানের শয্যাসঙ্গী হয়ে যা তার কৌমার্য হারায়নি,

অপমান গায়ে মাখতে আমরা অভ্যস্ত

একজন মানুষের কী-ইবা বাকি থাকে

যদি সে অভ্যস্ত হয় অপমানে-লজ্জায়?

ইতিহাসের পাতায় আমি তাকাই

‘ওসামা বিন মুনকিজের’ জন্য

‘আকবর বিন নাফার’ জন্য

‘ওমরের’ জন্য, ‘হামজার’ জন্য …

আমাদের ললনাকুলকে দাসী হয়ে বেঁচে থাকা

আর আগুনের শিখা থেকে রক্ষা করার জন্য।

অনন্তকাল থেকে

আমি এমন লোকের জন্য তাকিয়ে আছি –

কিন্তু আমি শুধু দেখতে পাই

অন্ধকারের মাঝে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা বেড়ালদেরকে

ইঁদুরের রাজত্বে যারা ভীত, তাদের জীবন বাঁচাতে।

তারা কি আক্রান্ত জাতীয় অন্ধত্বে?

অথবা বর্ণান্ধতায়?

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা আমাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াকে

প্রত্যাখ্যান করি

মোঙ্গলদের … জায়োনিস্টদের … বর্বরদের হাত থেকে

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা নিরাপত্তা পরিষদের জানালায়

দু-একটি কাগজের ঢেলা ঢিল ছুড়ে মারি

যা দখল করে রেখেছে আজকের জারেরা।

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা প্রত্যাখ্যান করি

মানবিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে

আমেরিকার দিকে আমাদের হাত বাড়াতে,

যার কোনো সংস্কৃতি নেই …

মানবিক সভ্যতার বিরুদ্ধে,

যার কোনো সভ্যতা নেই …

আমেরিকা হচ্ছে এমন একটি দৈত্যাকার দালান

যার নেই কোনোই দেয়াল …

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা এমন একটি যুগকে প্রত্যাখ্যান করি

যেখানে আমেরিকা হয়েছে

দাম্ভিক … সম্পদশালী … বেপরোয়া …

আর একজন বিশ^স্ত অনুবাদক

হিব্রু ভাষার।

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা এখন একটি গোলাপ ছুড়ে মারি

জেরুজালেমের দিকে …

হেবরনের দিকে … গাজার দিকে …

নাজারতের দিকে …

যদি আমরা রুটি আর পানি নিয়ে যাই

অবরুদ্ধ ট্রয় নগরীর দিকে …

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করি

আমাদেরকে একঘরে করে রাখা শাসকদের বিরুদ্ধে

কথা বলি তাদের বিরুদ্ধে, যারা তাদের

ঘোড়ার জিনকে বদলে দিয়েছে

আর ভাড়াটে লোক দিয়ে দখল করেছে

শ্রমিক সংগঠনকে।

আমরা অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে

যদি আমরা আমাদের স্বদেশের সম্মানকে

রক্ষা করতে চাই

যদি আমরা আমাদের জাতির ওপর

অনৈতিক জুলুমের প্রতিবাদ করি

বিদ্রোহ করি হাত-মোচড়ানোর বিরুদ্ধে …

যদি আমরা আমাদের মরুভূমির

শেষ পাম গাছটিকে রক্ষা করতে চাই

রক্ষা করতে চাই আকাশের শেষ নক্ষত্রটিকে

আর আমাদের নামের শেষ অক্ষরগুলোকে …

আর এটিই যদি হয় আমাদের অপরাধ

তাহলে সন্ত্রাসবাদ কতই না মধুর!

আমি একজন সন্ত্রাসী

যদি সন্ত্রাসবাদ আমাকে রক্ষা করতে পারে

রাশিয়া থেকে আসা অভিবাসীর হাত থেকে

রোমানিয়া … হাঙ্গেরি … পোল্যান্ড থেকে আসা

অভিবাসী – যারা জেঁকে বসেছে প্যালেস্টাইনের ঘাড়ে

জেরুজালেমের মিনারগুলো হরণ করেছে

‘আল আকসার’ তোরণ, আর তার

গম্বুজের সাজসজ্জাকে …

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যদি আমি যিশুখ্রিষ্টকে রক্ষা করতে পারি

রক্ষা করতে পারি কুমারী মেরিকে …

আর পবিত্র নগরীকে

মৃত্যু আর ধ্বংসের দূতদের হাত থেকে

গতকাল জাতীয় সড়কটি ছিল আমাদের ভূমিতে

একটি আরবীয় ঘোড়ার মতোই বিজয়দর্পী

আর আমাদের সড়কদ্বীপগুলো

উদ্যম ও সম্মানের জোয়ারে উপচে পড়ছিল

কিন্তু আজ ‘অসলোর’ পর

আমরা হয়ে পড়েছি নখদন্তহীন,

পরিণত হয়েছি অন্ধ-বধির একটি জাতিতে।

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যদি সন্ত্রাস আমার মানুষকে

অত্যাচার আর অত্যাচারীর হাত থেকে

মুক্ত করতে পারে,

আমার মানুষকে বাঁচাতে পারে

বর্বরদের হাত থেকে।

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যদি তা আমাকে ইহুদিবাদী জারের

আর রোমান সিজারের অত্যাচার থেকে

রক্ষা করতে পারে।

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যদি এই নতুন দুনিয়া

আমেরিকা আর ‘ইসরাইলের’ মাঝে

সমান ভাগে বণ্টিত হয়ে থাকে।

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যতদিন এই নতুন দুনিয়া

আচরণ করে একটি নেকড়ের মতো …

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যদি মার্কিন কংগ্রেস

সব আইন তার নিজ হাতে তুলে নেয়

আর নির্ধারণ করে পুরস্কার কিংবা শাস্তি …

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যতদিন এই নতুন দুনিয়া

কোনো আরবের শরীরে ঘামের গন্ধ

প্রবলভাবে ঘৃণা করে …

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে

যতদিন পর্যন্ত এই নতুন দুনিয়া

আমার শিশুদের হত্যা করতে চায়

আর তাদের টুকরো টুকরো করে

বানাতে চায় কুকুরের খাদ্য …

আর এ সমস্ত কারণেই

আমি দৃঢ়পদে দাঁড়িয়ে

উঁচু গলায় বলতে চাই –

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে …

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে …

আমি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে …

লন্ডন, ১৯৯৭

টিকা

১. আল-খানসা – ইসলামপূর্ব যুগে দক্ষিণ আরবের একজন মহিলা কবি। অনেকে বলেন, তিনি মদিনায় গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যিনি আল-খানসার কবিতার অনুরাগী হয়েছিলেন।