বেদূঈন সামাদের উপন্যাসে সমাজ-ভাবনা

১৯৪৭ সালে বৃহৎ ভারতবর্ষের বিভক্তিকরণ, দেশভাগ এবং বাংলাভাগের মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার ফলে বাংলা ভাষায় নতুন দুটি শব্দবন্ধ তৈরি হয়; একটি ‘দেশভাগের পূর্বে’ এবং অপরটি ‘দেশভাগের পরে’। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন তুলনায় বিভিন্ন মাপকাঠিতে শব্দবন্ধ দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। দেশভাগ বাঙালিদের কাছে যতটা না দেশভাগ তার চেয়ে বেশি হলো বাংলাভাগ। বাংলাভাগে কেবল বাঙালির ভূখণ্ডটিই বিভক্ত হয়নি, বিভাজিত হয়েছে বাঙালির সমন্বিত সকল অর্জন। বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের বহমান ধারাটিও খণ্ডিত হয়ে গেল বাংলাভাগের ছোবলে। দেশভাগের পূর্বে অখণ্ড বাংলার সাহিত্যকে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের পটভূমিতেই বিচার করা হতো। দেশভাগের পরে সেই ধারাটি বহমান থাকলেও সাহিত্যের মান বিচার এবং গুরুত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রাদেশিকতা কিংবা আঞ্চলিকতাও প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। পশ্চিম বাংলার সাহিত্য এবং পূর্ববাংলার সাহিত্য কিংবা পশ্চিম বাংলার সাহিত্যিক এবং পূর্ববাংলার সাহিত্যিক – এই রকম মোহরের ছাপও স্পষ্টত দৃশ্যমান হয়। দেশভাগের পরে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যকে পশ্চিম বাংলার সাহিত্য থেকে ভিন্ন রূপ-বৈশিষ্ট্য-বৈচিত্র্যদানের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের একদল সাহিত্যিক সচেতন ও পরিকল্পিতভাবে সাহিত্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁরা খানিকটা সফলও হন। বাংলা সাহিত্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাহিত্যিকদের প্রাধান্য, তাঁদের ধর্মীয় ও পৌরাণিক কাহিনি সাহিত্যের উপজীব্য, তাঁদের রচনায় মুসলমান সমাজজীবন উপেক্ষিত প্রভৃতি কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান সাহিত্যিকগণ বাংলা সাহিত্যের এই দিকগুলি নিয়ে ভাবিত হন এবং তাঁরা মুসলমান সমাজ-সংস্কৃতি-কিস্সানির্ভর সাহিত্য রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে, বিশেষত পূর্ববাংলার সাহিত্যে নতুন মাত্রা সংযোজন করতে প্রয়াসী হন। এঁরা সর্বতোভাবে যে সম্প্রদায় চেতনাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন তা কিন্তু নয়; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাও বলেছিলেন। সবমিলিয়ে দেশভাগের পরে পূর্ববাংলার সাহিত্য বিশেষ একটি সমীকরণে চিহ্নিত হয়ে ওঠে। অর্থাৎ পশ্চিম বাংলার সাহিত্য এবং পূর্ববাংলার সাহিত্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সীমান্তের কাঁটাতারের এপার-ওপারের বিভাজনে আটকা পড়ে। দেশভাগের পরে পূর্ববাংলার সাহিত্যকে নতুন মাত্রা দান করতে এবং বাংলা সাহিত্যে একদা প্রায় অনুপস্থিত মুসলমান সমাজ-জীবনের চিত্র অংকন করতে যেসব কথাশিল্পী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন বেদূঈন সামাদ (১৯২৬-২০০১) তাঁদের অন্যতম। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে, একটু মোটাদাগে বেদূঈন সামাদের সাহিত্যকর্মকে যদিও পূর্ববাংলার নিরিখে বিচার করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়, তথাপি তাঁর কয়েকটি উপন্যাস স্থানকালপাত্রের কোনো প্রাদেশিক গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। বেদূঈন সামাদের সাহিত্যবিচারে আমাদের স্মরণ রাখা প্রাসঙ্গিক হবে যে, তাঁর জন্ম পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দী থানার ভবানীপুর গ্রামে। দেশভাগের পরে তিনি পূর্ববাংলায় চলে আসেন এবং খুলনাইহয়ে ওঠে তাঁর দ্বিতীয় ধাত্রীদেবতা। এপার-ওপার অর্থাৎ দুই বাংলার তথা দুটি দেশের আলো-বাতাস-কাদামাটি গায়ে মেখে যে বেদূঈন সামাদের বেড়ে ওঠা এবং বেঁচে থাকা, তাঁর অন্তরের গহিনে যে অখণ্ড বাংলার অস্তিত্বই জাগরূক থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। সে-কারণেই তাঁর কোনো কোনো উপন্যাসের ক্যানভাস দুই বাংলার বিস্তৃত পটভূমিজুড়ে।

দেশভাগের পরে, পঞ্চাশের দশকে, বেদূঈন সামাদ যখন সাহিত্যের আসরে অবতীর্ণ হন তখন পূর্ববাংলায় উল্লেখ করার মতো মুষ্টিমেয় সংখ্যক ঔপন্যাসিক এবং উপন্যাসের নাম পাওয়া যায়। দেশভাগের পরে বেদূঈন সামাদের প্রথম উপন্যাস বেলা শেষে (১৯৫৬) প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত নয় বছরে (১৯৪৭-১৯৫৬) পূর্ববাংলায় রচিত এবং প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর (১৯২২-৭১) লালসালু (১৯৪৮), আ. ন. ম. বজলুর রশীদের (১৯১১-৮৬) পথের ডাক (১৯৪৯), আশফাক-উজ-জামান খানের (১৯১১-২০০৮) মঞ্জিল (১৯৪৮), আকবর হোসেনের (১৯১৫-৮১) অবাঞ্ছিত (১৯৫০), কী পাইনি (১৯৫২), মোহমুক্তি (১৯৫৩), আবু ইসহাকের (১৯২৬-২০০৩) সূর্য দীঘল বাড়ি (১৯৫৫), আবুল মনসুর আহমদের
(১৮৯৮-১৯৭৯) সত্যমিথ্যা (১৯৫৩), জীবনক্ষুধা (১৯৫৫), কাজী আফসার উদ্দীন আহমদের (১৯২১-১৯৭৫) চরভাঙা চর (১৯৫১), মবিন উদ্দীন আহমদের (১৯১২-১৯৭৮) হোসেন বাড়ির বউ (১৯৫২), ভাঙা বন্দর (১৯৫৪),  কুদরৎখাঁর ভিটে (১৯৫৫) প্রভৃতি। এই ধারাবাহিকতায় এসে হাজির হন বেদূঈন সামাদ (১৯২৬-২০০১) তাঁর বেলা শেষে (১৯৫৬) উপন্যাস নিয়ে। উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকমহলে যে সাড়া পড়ে যায় তা এক কথায় বলতে গেলে তুলনাহীন। সবমিলিয়ে তাঁর মোট ২২টির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এতএব একটি ক্ষীণতনু প্রবন্ধে বেদূঈন সামাদের উপন্যাসগুলি নিয়ে কথা বলা অসম্ভব, অশোভন এবং অনুচিতও। আমরা এখানে তার গোটা চারেক সামাজিক উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা বলার অনুসন্ধান করবো। উপন্যাস চারটি হলো – বেলা শেষে (১৯৫৬), নিষ্পত্তি (১৯৫৭), দুই নদী এক ঢেউ (১৯৬০) এবং পথে যেতে যেতে (১৯৬৯)।

সাহিত্যকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সুতরাং সাহিত্যের দর্পণে সমাজের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে লেখকের দেখার চোখ, মতাদর্শ, যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা, জীবনদর্শনও তাঁর সমাজচেতনা নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যে-কোনো লেখকের সমাজভাবনার স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গেলে ওই লেখকের সময় ও সমকালকেও বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হয়। কেননা সময় এবং সময়কে ঘিরে আবর্তিত নানান মতবাদ, আন্দোলন, রীতিনীতি, প্রথা, রাজনীতি, অর্থনীতি একজন লেখকের চেতনাকে আলোড়িত করে। সেই আলোড়নের প্রভাব পড়ে তাঁর সাহিত্যসৃজনে। বেদূঈন সামাদের চোখের সামনেই ঘটেছে ব্রিটিশ শাসনের নানান কূটকচাল, মন্বন্তর-দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগ ও বহু মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। এটি হলো বাইরের দিক। ভেতরে চলেছে অজ্ঞানতার অন্ধকার, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, রক্ষণশীলতা এবং প্রগতিশীলতার দ্বন্দ্ব, সমাজে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ, জাতপাতের ব্যবধান প্রভৃতি। লেখক বেদূঈন সামাদ উদার মানবতাবাদী কথাশিল্পী। তবু সংগত কারণেই অধিকাংশ লেখকের মতোই তিনি নিজের সমাজ এবং মানুষের কথাই বলতে চেয়েছেন তাঁর উপন্যাসে। অবশ্য সামগ্রিক মানুষ এবং জীবনব্যবস্থাকে তিনি এড়িয়ে যাননি তাঁর দায়বোধের অঙ্গীকার থেকে। এমনকি ব্যক্তিগত জীবনে, মুর্শিদাবাদের সেই শৈশব-কৈশোরের দিনগুলিতে, তিনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক চেতনার শিকার হলেও সেই মনোভাব তাঁর সাহিত্যকর্মে কোথাও ছাপ ফেলেনি। বরং সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরিতেই প্রয়াসী হয়েছেন। অবশ্য তিনি সকল ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি।

বেদূঈন সামাদ তাঁর উপন্যাসে সমাজকে দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছেন প্রথমত দর্শকের চোখে, দ্বিতীয়ত লেখকের দৃষ্টিতে এবং তৃতীয়ত বিশ্লেষকের যুক্তির নিরিখে; কিন্তু কোনোভাবেই সমাজ-সংস্কারকের ভূমিকা নিয়ে নয়। সেটি সম্ভবও নয়। বেদূঈন সামাদ সমাজকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে সমাজের বিদ্যমান পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রকে বিদ্রোহী বা প্রতিবাদী করে নির্মাণ করেছেন পুরনো সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে আধুনিকতার অগ্রযাত্রায় শামিল হতে। মানুষের প্রয়োজনের চেয়ে, সুবিধা-অসুবিধার চেয়ে, বেঁচে থাকার আকুতির চেয়ে, মানবিক বোধের চেয়ে, হৃদয়বৃত্তির চেয়ে যদি সামাজিক সংস্কার এবং বিধিবিধানটাই বড় হয়ে ওঠে, তাহলে সেসব নিষেধের বেড়াজাল ছিন্ন করতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে বেদূঈন সামাদের সৃষ্ট চরিত্রগুলি – যারা তাঁর মানসসন্তান, যাদের ভেতর দিয়ে লেখক মূলত নিজের চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

বেদূঈন সামাদের প্রথম উপন্যাস বেলা শেষে রোমান্টিক প্রেমের আখ্যান হলেও তৎকালীন সমাজমানসের চিত্রও চমৎকারভাবে এতে প্রতিভাত হয়েছে লেখকের কলমের জাদুস্পর্শে। লেখক হিসেবে তিনি সময় ও সমাজের প্রতি তাঁর দায় এড়াতে পারেননি, এড়ানোর চেষ্টাও করেননি। তাই সমকালের সকল ঘটনাই স্পর্শ করেছে তাঁর উপন্যাসের পটভূমিকে, প্রভাবিত করেছে উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে দেশে দেশে ও সমাজে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে সেগুলি লেখকের নজর এড়ায়নি। বেলা শেষে উপন্যাসে নানান চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বাঘেরপাড়া (বাঘারপাড়া) থানার দারোগা কাজী ফরহাদ আহমদের জীবনের বেলা শেষে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষগুলি একে একে এসে মিলিত হয়েছে ঝিকরগাছা মনিরা সেবা সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে। মীজানুর ও রেবেকার প্রণয় এবং পলায়নের মধ্য দিয়ে উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়ে বহু বিচিত্র পথ পেরিয়ে, দেশকালের সীমানা ছুঁয়ে, প্রজন্মান্তরের জীবনবিন্যাসের ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে পরিণতির পথে। এই পথে ঘটেছে অনেক ক্ষয় ও ক্ষতি। তবু জীবন থেমে থাকেনি। পিতা-মাতার অনুমোদনের বাইরে কিংবা বিবাহপূর্ব জীবনে তরুণ-তরুণীর নিজস্ব ভালোবাসাজাত প্রেমকে সমাজ কোনোকালেই সহজ-স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। জাতপাতের ব্যবধান, প্রতিষ্ঠা-প্রতিপত্তিগত ব্যবধান ছাড়াও সামাজিক সংস্কার এবং রক্ষণশীলতা অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রেমের পরিণতির পথে। হৃদয়বৃত্তির কোনো স্বীকৃতি বা মূল্য সহজে মেলেনি। স্বামী-স্ত্রী পূর্ব  থেকে পরস্পরকে না চিনে, না জেনে, না বুঝে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তে যে বিবাহবন্ধনে বাধ্য হয় তা বহুলাংশেই কল্যাণ বয়ে আনে না। সামাজিক অবস্থার কারণে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপায় থাকে না বলে আজীবন তাদের প্রেমহীন ভালোবাসাহীন দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করতে হয় আর পাঁচটি নিয়ম বা প্রথাপালনের মতো। পুরুষের মতামতের মূল্য থাকলেও নারীদের মতামতের সামান্যতম গুরুত্ব থাকে না দাম্পত্যজীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। বেদূঈন সামাদ তাঁর বেলা শেষে উপন্যাসে অশিক্ষা আর ধর্মীয় কুসংস্কারের আগল ভেঙে নারী স্বাধীনতাকে স্বাগত জানাতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হননি। গৃহশিক্ষক মীজানুরের সঙ্গে রেবেকার প্রেম, বাড়ি থেকে পলায়ন এবং পরিণয়ের মাধ্যমে লেখক সমাজের পুরনো ধ্যান-ধারণা-বিশ্বাস দিয়ে গড়া অচলায়তন ভাঙার সাহস দেখিয়েছেন। নানারকম ঘটনা-দুর্ঘটনা-ঘাত-প্রতিঘাতের ছোবলে রেবেকা যখন সংসার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেই পঞ্চাশের দশকে একজন মুসলমান মেয়ের কলকাতা মহানগরীতে গিয়ে স্বাবলম্বী হতে চেয়ে একাকী নিঃসঙ্গ আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াটা বিরুদ্ধ সময়ের প্রতিকূলে পথ হাঁটা। রেবেকা লেখকের মানসকন্যা। পুরুষরা স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের তুলনায় একটু বেশি সাহসী এবং অগ্রগামী। লেখক রেবেকাকে পুরুষের সমকক্ষ হিসেবে নির্মাণ করতে চেয়েছেন। কারণ আধুনিক সমাজ গঠনে মেয়েদেরও পেছনে পড়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাই রেবেকা অধিকতর সাহসিকতা এবং প্রগতিশীলতার পরিচয় দিয়েছে। সেই যুগে মেয়ে হয়ে কলকাতা নগরীতে কারো বাড়িতে ছাত্রী পড়িয়ে, নিজে লেখাপড়া শিখে চাকরি জোগাড় করে একাকী জীবনধারণ করার সাহস রেবেকাকে যেন রেনেসাঁসের মন্ত্রে দীক্ষিত করে। একটু পেছনে ফিরে তাকালে, অর্থাৎ মীজানুর-রেবেকা যখন ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর তখনো রেবেকার অন্তরে সমাজ-সংসার-মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। সমাজের আপামর মানুষের কল্যাণচিন্তা, পিছিয়েপড়া পল্লীবাংলার হতদরিদ্র অশিক্ষিত রুগ্ণ মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা নির্মাণের স্বপ্ন-সর্বজনীন এক মানবতাবোধে উজ্জীবিত করে রেবেকাকে। সে মনে মনে ভাবে :

… দূরে শহর হতে দূরে কোনো একটি পল্লীগ্রামের ঘুমন্ত বুকে গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য খুলব দু’টি স্কুল। ছেলেদের জাগিয়ে তোলার ভার নেবেন মাস্টার সাহেব আর মেয়েদের ঘুম ভাঙাবো আমি। … দারিদ্র্য হয়তো হবে আমাদের নিত্য সাথী, কিন্তু শান্তির থাকবে প্রাচুর্য। সেখানে থাকবে না সমাজের দলাদলির হলাহল, থাকবে না মানবতার নামে পৈশাচিকতা। হবে না মানুষের জীবন নিয়ে লীলাখেলা। চলবে না বড়লোকের ধনৈশ্বর্যের প্রতিযোগিতা। (পৃ ২২-২৩)

বেদূঈন সামাদ পেশায় ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। পেশাগত কারণে সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র, বলা যায় অভিভাবকতুল্য চরিত্র, কাজী ফরহাদ আহমদও পেশায় ছিলেন পুলিশ। পুলিশি দায়িত্ব পালনে কখনো কখনো কঠোর হতে হলেও একজন স্বামী, একজন পিতা, একজন পরিবারপ্রধান অর্থাৎ সবকিছু ছাপিয়ে তিনি যে একজন হৃদয়বৃত্তিসম্পন্ন মানুষ, পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও তাঁর যে কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকতে পারে এবং থাকা উচিতও, সেই চেতনা নিয়ে সমাজে শিক্ষার আলো বিস্তারে এবং মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজী ফরহাদ আহমদ বিদ্যালয় ও সেবাসদন প্রতিষ্ঠা করে সমাজগঠনের যে-ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তা মূলত বেদূঈন সামাদেরই সমাজভাবনার রূপায়ণ। 

বেদূঈন সামাদের নিষ্পত্তি উপন্যাসটিকে কবি সুফিয়া কামাল (১৯১১-৯৯) মুসলমান সমাজে আশরাফ-আতরাফ সমস্যার এক ‘নিদারুণ চিত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন – ‘সেই সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজের কাছে লেখকের এ আবেদন সত্যিই মর্মস্পর্শী। এতে করে আমাদের ধর্মের যে মানবতাবোধের নির্দেশ বিদ্যমান, সে তথ্যটুকু সকলের হৃদয়গ্রাহী হবে বলে আশা করি।’ সমাজের দুটি ভিন্ন বংশ মর্যাদার দুই মানব-মানবীর প্রেমের সংঘাতময় পরিণতি এই উপন্যাসের উপজীব্য। শেখ বংশের শহীদ এবং কাজী বংশের শিরিনের প্রেম যতই পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে অভিজাত-অনভিজাত যুযুধান দুই গোষ্ঠীর সামাজিক অবস্থা ও অবস্থান ততই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

শহীদের সঙ্গে শিরিনের বিয়ের প্রস্তাব উঠলে দুই বংশের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, পাল্টাপাল্টি বোঝাপড়ার জেদ ও ক্রোধ ঘনীভূত হয়ে ওঠে। কাজীরা আশরাফ, শেখরা আতরাফ। সংগত কারণেই কাজীরা অর্থবান, প্রভাবশালীও। তাই শেখ বংশে কাজী বংশের মেয়েকে বউ করে আনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে লড়াই শুরু হয় শেখ আর কাজীদের মধ্যে। আত্মসম্মান রক্ষার লড়াই। স্বাভাবিকভাবে যখন কিসমত শেখের ছেলে শহীদের জন্য ইব্রাহিম কাজীর মেয়ে শিরিনকে পাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে তখন এক রাতে কিসমতের ইন্ধনে অগ্নিসংযোগ করা হয় ইব্রাহিমের ঘরে। শিরিন তখন অগ্নিগ্রাসী ঘরের মধ্যে বন্দি। কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে না কিংবা ঝুঁকি নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে হায় হায় করছে। লেখকের ভাষায় :

শিরিনের এই সন্ধিক্ষণে কে একজন সাহসী মানুষ সর্বশরীর সিক্ত চটে জড়িয়ে বিদ্যুৎ বেগে প্রবেশ করল ঘরের মধ্যে এবং ক্ষণেক পরে মুমূর্ষু শিরিনকে খড়ের উপর ফেলে ছুটে এল বেরিয়ে। তারপর তাকে ভিড়ের মধ্যে ফেলে অদৃশ্য হল নিমিষের মাঝে। জনতা শিরিনকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ চিন্তাও করল না, কে এই নির্ভীক বীর, কোথা হতে এল কোথায় বা গেল সে।
(পৃ ২১)

বলা বাহুল্য, এই যুবকটি আর কেউ নয়, সে কিসমত শেখের ছেলে শহীদ। কিসমত শিরিনকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। আর তারই ছেলে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে শিরিনকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল। দুই বংশের দীর্ঘকালীন বিরোধ সত্ত্বেও, বিপদে শত্রুকেও রক্ষা করার এই মানবিক বোধ শহীদ অর্জন করেছে শহরে থেকে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে। সময় গড়াতে থাকে। শিরিনকে নানারকম কুৎসিত বাক্য শুনতে হয়। কে তাকে আগুনের ভেতর থেকে উদ্ধার করল? কেন করল? তার সঙ্গে কী সম্পর্ক? অথচ শিরিন যে তাকে চেনে না সে-কথা কাউকে বিশ্বাস করানো গেল না। তারপর নানান ঘটনার ভেতর দিয়ে শহীদ-শিরিন পরস্পরকে আবিষ্কার করে, ঘনিষ্ঠ হয়, ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। বাধা হয়ে দাঁড়ায় আবার সেই সামাজিক ব্যবধান। শিরিনের পিতা ইব্রাহিম এক রাতে তার পরলোকগত স্ত্রী আয়েশাকে স্বপ্ন দেখে। শিরিনের বিয়ের ব্যাপারে স্বপ্নে কথা হয় স্বামী-স্ত্রীর। কথা হয় মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম সামাজিক ব্যবধান নিয়ে। মৃতা স্ত্রীর কথা শুনে অবাক হয় ইব্রাহিম। ইব্রাহিমের স্ত্রী বলে :

… তখন আমি ছিলাম তোমারই মতো একজন জীবন্ত মানুষ। মন ছিল নিয়ম-কানুনের আওতায়। তখন ছিলাম একজন সমাজী। মন ছিল তখন ক্লীব-ক্লেদপূর্ণ। তাই জাত-বেজাত, বংশাবংশ বেছে চলতাম। কিন্তু এ ভুলটা ধরা পড়ল মরণের পরে। এখানে এসে দেখি রাজা-মহারাজা, বাদশা-ফকির, দিন-হীন, চোর-দস্যু, পাপী-তাপী একই ঘাটে পানি খায়, উন্মুক্ত সবুজ আস্তরণে শয়ন করে – একই ভাষায় কথা বলে। এখানে বাদশা বাদশাহী চায় না, পীর পীরত্ব চায় না, দস্যু দস্যুত্ব চায় না, এখানে সকলের মুখে এক কথা ঐ ‘আমার কী হবে, আমার কী হবে’। সুতরাং মানুষের মুখ্য উদ্দেশ্য কী তা অনেক পরেই বুঝতে পেরেছি। ভক্তি, ভালোবাসা, প্রেম ও স্নেহের দিক দিয়ে মানুষ অর্থে মানুষ। সেখানে ধনী-গরিব, জাত-বেজাত, বংশাবংশের কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না। তোমরা দেখ মানুষকে কদার্থে। তাই ছোট-বড়, জাত-বেজাতের প্রশ্ন উঠে। (পৃ ৩০)

আয়েশার জবানিতে লেখক চিরন্তন এক জীবনদর্শনের কথা শোনান।

কাহিনির প্রবহমানতায় শহীদ-শিরিনের প্রেমের বিষয়টি যখন গোটা অঞ্চলজুড়ে আলোচনার বিষয়, দুই বংশের দীর্ঘকালীন শত্রুতা যখন যুদ্ধংদেহী চেহারা ধারণ করেছে, মুসলমান সমাজের আশরাফ-আতরাফ সমস্যার কুফল বোঝাতে লেখক হিন্দু সমাজের সঙ্গে মুসলমান সমাজের একটি তুলনামূলক চিত্র অংকন করেছেন। দেশভাগ-পূর্ববর্তীকালে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-প্রশাসনিক-প্রাতিষ্ঠানিক যেসব ব্যবধান প্রকট হয়ে উঠেছিল, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের পেছনে পড়ে থাকার যে কারণগুলি বিদ্যমান ছিল, লেখক মুসলমান সমাজের আশরাফ-আতরাফ ব্যবধানকেও সেজন্য দায়ী করেছেন। অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমানের অবস্থানগত ব্যবধানকে লেখক প্রগতিশীলতা এবং রক্ষণশীলতার ব্যবধান হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন। কৃত্রিম বংশগত পার্থক্য যে মানুষেরই তৈরি এবং তা সমাজের জন্য কোনো কল্যাণ কয়ে আনে না, বরং বিভেদের ফাটলকে বিস্তৃত করে, কাজী আর শেখদের দ্বন্দ্বমুখর পরিস্থিতি বোঝাতে লেখক সেই প্রসঙ্গে বলেন :

পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে মুসলমান নেই। কিন্তু সর্বত্রই তারা আজ নিজেদের মধ্যে দলাদলির হলাহলে জর্জরিত। ক্রোধের নিষ্ঠুর অক্টোপাশে তারা মরছে যুঝে। কে তাদের দিবে মুক্তি, কে শুনাবে আশার বাণী? বেশিদূর গিয়ে প্রয়োজন নেই। তোমাদেরই পাশের গ্রামের হিন্দু সমাজটির দিকে চেয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে, তারা প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে সুষ্ঠু ও সাবলীল গতিতে। (পৃ ৬০)

লেখকের এই আত্মসমালোচনা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন পাঠক এবং সমালোচকদের একাংশকে আনন্দ দিতে পারে, আরেক পক্ষকে করতে পারে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ। কিন্তু আত্মসমালোচনা ছাড়া আত্মশুদ্ধি হয় না – এটিই লেখক মনে করেন। কাজী ও শেখ বংশের দ্বন্দ্ব নিরসনের মানসে কলেজ থেকে শহীদের বন্ধুরা যখন একটি মিশন নিয়ে এসে হাজির হয়, দুই পক্ষকে একস্থানে জড়ো করে সমঝোতার বাতাবরণ তৈরি করতে চায়, তখন গ্রামের অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ মানুষেরা ধান্দাবাজ মাওলানা কাজী জয়নাল আবেদীনের কথামতো তরুণদের তাড়া করে। শুরু হয় রক্ষণশীলতা এবং প্রগতিশীলতার লড়াই। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর (১৯২২-১৯৭১) লালসালু উপন্যাসের ভণ্ড পীর মজিদ কিংবা আহমদ ছফার একজন আলি কেনানের উত্থান পতন উপন্যাসের ভণ্ড দরবেশ আলি কেনানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মাওলানা জয়নাল আবেদীন ঘোষণা করে :

ভাইগণ, ইসলাম আজ বিপন্ন। এই সমস্ত শয়তান কওমের খাদেম নামে নিজেদের পরিচয় দিয়ে প্রচার করছে মুসলমান সম্প্রদায়ের ভেতর নাছারা ধর্ম। এরা খৃস্টানদের ভাড়াটিয়া গুণ্ডা। এদের সমাজ হতে না খেদাতে পারলে ইসলাম ধর্ম অচিরেই লুপ্ত হবে। এরা মুসলমান নামধারী শয়তান।

(পৃ ৭৪)

পাকেচক্রে এই মাওলানার সঙ্গেই শিরিনের বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়। অনুরূপ আরেকটি চরিত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় পথে যেতে যেতে উপন্যাসের প্রতারক ইমাম মোহাম্মদের মধ্যে। যাই হোক মাওলানার সঙ্গে শিরিনের বিয়ে যখন কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব নয়, তখন শিরিন আত্মহত্যার কথা ভাবে। হঠাৎ একদিন রাতে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে অপার্থিব এক স্বর্গীয় দূত এসে শিরিনকে আত্মজয়ী হওয়ার মন্ত্রণা দেয়। এই দূত মূলত লেখক নিজেই। সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদেরই জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন লেখক :

তুমিও এই সময় রুখে দাঁড়াও। বল, আমি মানুষ, আমারও স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার অধিকার আছে। বল, নারী কেবল পুরুষের ভোগের সামগ্রী নয়, স্বেচ্ছাচারী নরের খেলাঘরের পুতুল নয়। বল, মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় মানুষ এবং নর ও নারীকে স্বতঃস্ফূর্ত আদান-প্রদানের নাম বিয়ে আর দু’অজানা মনের সংযোগ সাধনের জন্য মৌখিক মতামত বিয়ের নামে বিসর্জন। (পৃ ৮৯)

সমাজ প্রগতির অগ্রযাত্রায় নারীকেও পুরুষের পাশাপাশি শামিল করতে নারীর আত্মজাগরণ, আত্মসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন লেখক। শিরিনের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটিই যেন শোনা যায় দুই নদী এক ঢেউ উপন্যাসের সুরাইয়ার কণ্ঠেও – মেয়েদের শিক্ষিত করে তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে আত্মমর্যাদা সম্বন্ধে জ্ঞান; তাদের দিতে হবে নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সম্বন্ধে ভাববার আত্মাধিকার। আরও দিতে হবে তাদের মতামতের ন্যায্য মূল্য। মেয়েদেরও বুঝতে হবে যে তারা বাজারের পণ্য নয় যে, পয়সা থাকলেই যে কেউ কিনতে পারে, তা যত খুশি দরকার তার। সুতরাং যেদিন সমাজের নারী হয়ে উঠবে শিক্ষিতা, যেদিন উন্মেষ হবে তাদের আত্মমর্যাদাজ্ঞান, বুঝতে শিখবে তারা বাজারের পণ্যদ্রব্য নয়, সেইদিন সমাধান হবে এ সমস্যার। (পৃ ১৪)

বেদূঈন সামাদ সর্বদাই গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারমুক্ত একটি মানবসমাজের স্বপ্ন দেখতেন। পথে যেতে যেতে উপন্যাসে তিনি তীব্র শ্লেষের সঙ্গে লিখেছেন : ‘বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগেও মানুষ যার হাত হতে রেহাই পায়নি, মুক্ত করতে পারেনি নিজেকে যার নাগপাশ হতে তিনি হচ্ছেন এই সসাগরা ধরিত্রীর একাধিচ্ছত্র সম্রাট-কুসংস্কার।’ (পৃ ৭৫) তাই লেখকের সৃষ্ট চরিত্রগুলির কেউ কেউ কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। শিরিনের মতো একদা অসূর্যস্পর্শা অবরোধবাসিনী নারীও তাই মাওলানাদের মিথ্যা বয়ানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে, পুরুষতন্ত্রকে কটাক্ষ করেছে পৌরুষহীন কার্যকলাপের জন্য। ভীরু প্রেমিকপ্রবর শহীদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে শিরিন প্রকাশ করে ধর্ম-সমাজ-সংস্কারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ক্রুদ্ধ সর্পিনীর মতো হুংকারে – আমার ধারণা ছিল পুরুষ জাতি বড় সাহসী। কিন্তু এখন বুঝেছি পাত্রভেদে পুরুষ ক্লীব, মেয়েদের চেয়েও একমাত্রা বেশি। তা না হলে মাওলানা যেদিন ধর্মের দোহাই দিয়ে নেকি বিক্রি করলে দু’হাতে আর ন্যায়-অন্যায় না বুঝে মূর্খ গ্রামবাসী সে নেকি কিনে নিলে কতগুলি নিরীহ ভদ্রসন্তানকে প্রহার করে। অথচ তোমাদের সাহস হয়নি এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে, গোঁড়া মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে ন্যায় অন্যায় দেখিয়ে দিতে। কিন্তু তোমরা যা পারনি আমি তা পারব। তোমরা নীরবে মার খেয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালে আর আমি রক্ষণশীল সমাজের বিরুদ্ধে জেহাদ করে হাসতে হাসতে প্রাণ দেব। আমি বাঁচার জন্য ছুটে পালাবো না, মুক্তির জন্য বরণ করব মরণ। কারণ মরণেও একটি উগ্র নেশা আছে, আছে সার্থকতা। (পৃ ৯০)

উপন্যাসের কাহিনি গড়াতে থাকে গন্তব্যের দিকে। বেদূঈন সামাদ রহস্যের জাল বুনে পাঠককে এক ধরনের ঘোরের ভেতর রাখেন। পর্যায়ক্রমে রহস্যের জট খুলতে থাকে। একটি পর্যায়ে এসে জানা যায়, শেখ বংশে লালিত-পালিত হলেও শহীদ মূলত কাজী বংশেরই ছেলে। ইব্রাহিম কাজীর নিরুদ্দিষ্ট ভাইয়েরই ছেলে শহীদ। এরপর শহীদ-শিরিনের মিলনের পথে আর কোনো বাধা থাকে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ইব্রাহিম কাজীর নিরুদ্দিষ্ট ভাই কাজী জালাল উদ্দিনকে ফিরিয়ে আনা হয় রহমতপুরে। শয়তানরূপী মাওলানা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে শিরিনের আসন্ন বিয়ে ভেঙে দিয়ে জয়নালকে প্রহারে উদ্যত হয় শহীদের কলেজ হোস্টেলের বিগ ব্রাদার। তখন জালাল উদ্দিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে –

দোষ মাওলানার নয়, রহমতপুরের শেখ কাজীদেরও নয়। এ দোষ গোঁড়া সমাজের-কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের। আজ হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের এ সহজাত মিলন, শুধু শহীদ শিরিনের একার নয়, রহমতপুরের শেখ-কাজীদেরও নয়। এ মিলন সারা দুনিয়ার বংশ অহংকারান্ধ মানুষের। আজ প্রতিশোধ নেবার দিন নয় বন্ধু, আজ মিলনের দিন।

(পৃ ১০২)

শেষ পর্যন্ত শিরিনকে আত্মঘাতিনী হতে হয় না। কাহিনির রহস্যজাল ছাড়াতে ছাড়াতে শহীদ-শিরিনের বিয়েও হয়ে যায়। বেদূঈন সামাদ শ্রেণিবৈষম্যহীন, জাতপাতহীন, বংশগৌরবের অহংকারহীন, কুসংস্কারমুক্ত যে-সমাজের স্বপ্ন লালন করতেন সে-স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর উপন্যাসের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রগতিশীল চরিত্রগুলির মধ্যে। অর্থাৎ তাঁর নিজস্ব সমাজচেতনা, সমাজভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে শেখ-কাজীদের বংশপরম্পরার দ্বন্দ্বকে শহীদ-শিরিনের পরিণয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে ভেদাভেদহীন সমাজ গঠনের সূচনায়।

দুই নদী এক ঢেউ উপন্যাসে দেখা যায়, একটি হিন্দু মেয়ে প্রথম স্বামীগৃহে যাওয়ার কালে ডাকাত ও ঝড়ের কবলে পড়ে। স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন মূর্ছিত হয়ে পদ্মার চরে পড়ে থাকা মেয়েটি স্টিমার-ক্যাপ্টেনের নজরে পড়লে তাকে উদ্ধার করে এনে সেবা-শুশ্রƒষা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। পূর্বেকার সমাজ-সংসারে ঠাঁই না পাওয়ার আশংকায় মেয়েটি পিতা এবং স্বামীর পরিচয়দানে অস্বীকৃত হলে স্টিমারের এক যুবক যাত্রী তার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। কেউ কারো নাম ও ধর্মপরিচয় জানে না, জানতে আগ্রহীও হয় না, ভাই-বোনের সম্পর্ক পাতিয়ে তারা ঘর বাঁধে। পাঠকরা পরে জানতে পারেন, পদ্মার চরে কুড়িয়ে পাওয়া বলে মেয়েটির নাম পদ্মিনী আর যুবকটির নাম আলাউদ্দিন। উপন্যাসে দেখা যায়, ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পরও এদের মধ্যে তেমন কোনো বিরাগ বা বিতৃষ্ণার আভাস মেলে না। বরং কুড়িয়ে এনে আশ্রওয় দেওয়ার কৃতজ্ঞতাবোধে মেয়েটি বিভোর হয়ে থাকে। চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সময় কাটে দুজনের। তবু পদ্মিনীকে একটু যাচাই করার জন্য একদিন আলাউদ্দিন বলে :

… কিন্তু তুমি কি পারবে তোমার মনের সমস্ত নারীসুলভ লজ্জা ও কুসংস্কারের চক্রব্যুহ ভেদ করে এই যবনকে দাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করতে? পারবে কি তুমি তোমার তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর ওপর বিশ্বাস হারিয়ে সহজাত সংস্কারের শক্ত ফাঁস ছেদ করে তোমার ‘দাদা’ সম্বোধনের মর্যাদা রাখতে? (পৃ ২৭)

আলাউদ্দিনের জিজ্ঞাসার জবাবে পদ্মিনীর জবাবটিও চমৎকার। সেই জবাবে যেমন আছে উদার মানবতাবাদ, আছে আলাউদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা, আছে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত মানবসমাজের প্রতি তীব্র ক্ষোভ। পদ্মিনী বলে :

… যে সমাজ শুধু জানে মেয়েদের শাস্তি দিতে, জানে না ক্ষমা করতে, যে সমাজ নিরপরাধ জেনেও পারে না সহজভাবে গ্রহণ করতে, সে সমাজকেই বা আমি মনে প্রাণে কেমন করে গ্রহণ করি? সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমার সমাজ বড়ো না আমার দাদা বড়ো, যিনি আমার নাম, পরিচয়, গোত্র ঠিকানা না জেনেও অবলীলাক্রমে আমাকে স্থান দিয়েছেন বোনের আসনে? তাই আজ আর আমার ধর্মে বিশ্বাস নেই দাদা, সমাজের ওপরও নেই। আজ আমার একমাত্র বিশ্বাস নরদেবতার ওপর, যিনি জাতি ধর্ম গোত্র বিচার না করে সব মানুষকে দেখেন মানুষ হিসেবে, ঘৃণ্য কেউ নয় যার কাছে। (পৃ ২৭)

পদ্মিনীর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘মুসলমানীর গল্প’-এর নায়িকা মেহেরজানের সুর শোনা যায়। অবশ্য পদ্মিনী মেহেরজানের মতো বলিষ্ঠ চরিত্র নয়। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। পদ্মিনীর কথার সূত্র ধরে  আলাউদ্দিন সমাজ ও ধর্ম নিয়ে দার্শনিকের মতো অনেক কথা বলে যায়। ধর্মের মাহাত্ম্য স্বীকার করে নিয়ে সে চরম একটি বাস্তব প্রসঙ্গের অবতারণা করে – কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কোনো ধর্মই হিংসাকে প্রশ্রয় না দিলেও, বরং সমস্ত ধর্মই স্ব-স্ব ধর্মে বিশ্বাসী মানুষকে স্বাধীনভাবে নিজ ধর্মকর্ম করার অবাধ সুযোগ ও অঙ্গীকার দিলেও, এক ধর্মের মানুষ কোনোদিনই বরদাস্ত করতে পারেনি অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষকে। (পৃ ২৭)

আলাউদ্দিন এবং পদ্মিনীর সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ভাই-বোনের পরিচয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। ভাই-বোন পরিচয়ে একই ঘরে আলাদা বিছানায় দিনযাপন করলেও প্রতিক্রিয়াশীল পাড়াপ্রতিবেশীদের কানাঘুসোর স্পষ্ট জবাব দিতে কিংবা দুজনের মধ্যে বাস্তব বোধের যুক্তিতেই হোক কিংবা ভবিষ্যতে পারস্পরিক অবলম্বনের কারণেই হোক, তারা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। একান্ত গৃহকোণে মালাবদল করে পদ্মিনী আলাউদ্দিনকে প্রণাম করে। অকস্মাৎ পদ্মিনীর এক বান্ধবী হাজির হয়ে বিয়েকে শাস্ত্রসিদ্ধ করার জন্য একজন মৌলভিকে ডেকে আনতে চাইলে আলাউদ্দিন বলে – সৃষ্টির স্রষ্টা, সকল সৃষ্টির মালিক যাদের সাক্ষী, তাদের ক্ষেত্রে অন্তত দোহাই তোমার মৌলবী-পুরোহিত ডেকে আর সেই অসীমকে অপমান করো না। সমুদ্রে যারা অবগাহন করেছে … পানা পচা ডোবার পানিতে স্নান করতে অনুরোধ করো না। (পৃ ৪৭)

অর্থাৎ, আলাউদ্দিন-পদ্মিনীর বিয়েতে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধান এবং আচার পালন করা হয় না। এ পর্যন্তই বোধহয় ঠিক ছিল। এর পরে কাহিনি যতই সামনের দিকে এগোতে থাকে বেদূঈন সামাদ এবং আলাউদ্দিন ততই স্ববিরোধিতার কবলে পড়তে থাকেন। চিন্তাচেতনায় সীমাবদ্ধতা এসে ভর করে। কেবল ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ক পাতিয়ে অনাত্মীয় দুই নর-নারী সারাজীবন রোদবৃষ্টি, আলো-অন্ধকার পেরিয়ে একঘরে বসবাস করতে পারে না। ভাই-বোনের যে উচ্চাঙ্গ মাহাত্ম্য নিয়ে উপন্যাস শুরু হয়ে সেটি আর বজায় থাকে না। এটি লেখকের সীমাবদ্ধতা। শুরুতেই তিনি দুজনকে অনুরাগের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে দিতে পারতেন। লেখকের ভাষ্যমতে কেউ কারো পরিচয় জানে না বলা হয়েছে। আলাউদ্দিনের পরিচয় পদ্মিনী না জানতে পারে। কিন্তু পদ্মিনীকে যখন পদ্মার চর থেকে উদ্ধার করা হয় তখন ‘অস্পষ্ট তার সিঁথির সিঁদুর প্রমাণ দিচ্ছে সে পরপত্নী’ (পৃ ২০)। লেখক না বললেও পাঠকের বুঝে নিতে কষ্ট হয় না যে, কপালে যেহেতু সিঁদুরের দাগ তার হাতে নিশ্চয়ই শাঁখাও ছিল। কিংবা ‘কথাবার্তায় মনে হচ্ছে হিন্দুমেয়ে’ (পৃ ২৩)। কাজেই পদ্মিনীর পরিচয় অজ্ঞাত নয়। তাছাড়া পদ্মিনীর আরো নানান কথায় তার ধর্মীয় পরিচয়ের আভাস মেলে। ভিন্নধর্মী দুজন নর-নারীর বিয়ে কখনো দুই ধর্মের রীতিপদ্ধতি মেনে সম্পন্ন হতে পারে না। কাজেই একই বিয়ের আসরে ‘মৌলবী-পুরোহিত’ ডাকার প্রসঙ্গটিও অবাস্তব কল্পনা এবং যুক্তিহীন বলে মনে হয়। পদ্মিনী ক্রমান্বয়ে আপন সত্তা হারিয়ে কিংবা বিসর্জন দিয়ে আলাউদ্দিনে বিলীন হয়ে যায়। আলাউদ্দিনের সমাজধর্মে নিজেকে সমর্পণ করে। সহজ করে বললে দাঁড়ায়, আলাউদ্দিন-পদ্মিনীর প্রারম্ভিক জীবনের মানবধর্ম ধীরে ধীরে শাস্ত্রীয় ধর্মের কবলে পড়ে স্বাতন্ত্র্য হারায়। যে উদারনৈতিক চেতনা নিয়ে আলাউদ্দিন-পদ্মিনী উপাখ্যানের মাধ্যমে লেখক প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে ভিন্নধর্মী এক মানবসমাজের পত্তন করবেন, পাঠকরা মনে মনে যেমনটি আশা করেছিলেন, প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিধিবিধানের বাইরে নতুন একটি প্রজন্মের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক ভেদজ্ঞানহীন এক নতুন পৃথিবীর সূচনা হবে, কার্যত তা হয়নি। সেটি হলে লেখকের সমাজ ও জীবনদর্শন নতুন একটি মাত্রা পেত। লেখক তার পরিচিত পারিপার্শ্বিক সমাজবৃত্তেই বন্দি হয়ে পড়েন। তিনি হয়তো প্রয়াসী ছিলেন কিন্তু সমাজবাস্তবতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। হয়তো বিদ্রোহ করতে চেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বহুযুগের অচলায়তন ভাঙার সাহস তিনি পাননি।

পথে যেতে যেতে উপন্যাসে দেশভ্রমণের নেশায় চলতি পথে লেখকের দেখা, জানা ও শোনা বিভিন্ন মানুষ ও তাদের জীবনের সুখ-দুঃখ হতাশা-বেদনা-বঞ্চনার কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে। বইটি পড়তে গেলে খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই জরাসন্ধের লৌহকপাট এবং আব্দুল জব্বারের বাংলার চালচিত্র বইদুটির কথা মনে পড়ে। বেদূঈন সামাদ তাঁর অনুসন্ধানী এবং জিজ্ঞাসু নেত্রে দেখতে পান এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করেন – কেন মানুষ এত লোভী ও স্বার্থপর হবে, গরিব চাষি কেন মহাজনের দ্বারা শোষিত-বঞ্চিত হবে, সংসারে কেন এত অপরাধ-অনাচার, কেন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে গুমরে কাঁদে। লেখক নিজেই এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেন : ‘প্রকৃত গলদ আমাদের সমাজব্যবস্থায়।’ তারপরও লেখক নিরাশ হন না। রবীন্দ্রনাথের মতোই মানুষের ওপর আস্থা রাখেন। যে-মানুষ বাঁচতে জানে, সে বাঁচাতেও জানে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের The old man and the sea উপন্যাসের বৃদ্ধ লোকটির বিখ্যাত উক্তি – Man can be defeated but must not be destroyed  – শোনা যায় বেদূঈন সামাদ-সৃষ্ট চরিত্র ক্যাপ্টেন চৌধুরীর কণ্ঠে –

পৃথিবীতে এখনও দয়া আছে, আছে মায়া,

সাধুতা-সজ্জনতা, মানবতা, আছে মানুষের ভালো করার প্রেরণা, মানুষের দুঃখ দেখে মানুষের চোখে অশ্রু। সুতরাং ওগুলো বাঁচলে পৃথিবীতে মানুষের প্রেমও বাঁচবে, ওগুলো টিকলে প্রেমও টিকবে, ওরা জিতলে প্রেমও জিতবে …।

(পৃ ১৯২-১৯৩)

মানুষের প্রেম নিয়েই তো মানুষ বাঁচে। প্রেমই কেবল পারে গোটা সমাজের সমস্ত মানুষকে নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে রাখতে। প্রেম আছে বলেই সমাজ আছে। যতদিন মানুষে মানুষে প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-ভালোবাসা, দয়া-মানবতা বহমান থাকবে ততদিন সমাজও থাকবে। এটিই হলো বেদূঈন সামাদের সমাজভাবনার মূলকথা।

উপন্যাসসমূহ

১. বেলা শেষে, বাকধারা প্রকাশনী, খালিশপুর, খুলনা ১৯৯৫ (ষোড়শ সং)।

২. নিষ্পত্তি, স্টুডেন্ট ওয়েজ, বাংলাবাজার, ঢাকা, ১৪১৪ (অষ্টম সং)।

৩. দুই নদী এক ঢেউ, স্টুডেন্ট ওয়েজ, বাংলাবাজার, ঢাকা, ১৩৯৯ (অষ্টম সং)।

৪. পথে যেতে যেতে, স্নেহনীড়, বেজপাড়া, যশোর, ১৩৯২ (চতুর্থ সং)।