বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তন

জলবায়ুর অবস্থা নির্ভর করে বায়ুমণ্ডল, সাগর, ভূমি, বরফ, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য এবং সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রে অবস্থিত সূর্যের গতিপ্রকৃতির ওপর। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তুলনামূলকভাবে অনেকটা আপেলের খোসার মতো পুরু। এর রাসায়নিক উপাদান নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং স্বল্পমাত্রায় অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থ। এই গ্যাসীয় পদার্থে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্রিনহাউস গ্যাস, যা আমাদের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু এই গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ, বিশেষ করে কার্বন
ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, বৈশ্বিকভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। দেড়শো বছর আগে অর্থাৎ ভিক্টোরিয়ান যুগে বৈশ্বিক তাপমাত্রা যা ছিল তার তুলনায় বর্তমান তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।১ গাণিতিকভাবে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ কম হলেও জলবায়ুর পরিবর্তন ও স্থায়ীভাবে আবহাওয়ার ওপর এর প্রভাব অনেক বেশি। যেমন আমরা লক্ষ করি অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া, সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চলে অতি শীতলতা। সম্প্রতি সাগরের উষ্ণতার গভীরতা পরিমাপ করে দেখা যায় যে, এই উষ্ণতার গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে ধারণা করা হয় যে, বৈশ্বিক স্কেলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিগত ২.৬ মিলিয়ন বছরের পরিবেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে সবসময় বরফ ছিল, তবে সূর্যের চতুর্দিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পৃথিবী কখনো উষ্ণ, কখনো বা শীতল অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে এই প্রাকৃতিক কারণ সম্পর্কযুক্ত হলেও বিগত অর্ধশতাব্দীর অধিক সময় ধরে লক্ষ করা যায় যে, পরিসংখ্যানগতভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের গড় উষ্ণতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে অধিক পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস অর্থাৎ কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং অন্যান্য শিল্পজাত গ্যাস মানে হচ্ছে সূর্য থেকে পৃথিবী যে পরিমাণ শক্তি শোষণ করে, তা পৃথিবীর পৃষ্ঠতল থেকে মহাশূন্যে পুনরায় নিঃসরিত হতে এই গ্রিনহাউস গ্যাস বাধা প্রদান করে। গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণিজ দ্রব্যাদি থেকে জাত জীবাশ্ম-জ্বালানি যেমন কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভূগর্ভে সঞ্চিত হয়েছিল। সেগুলিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ফলে বায়ুমণ্ডলে পুনরায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হয়। ১৭৫০ সালের তুলনায় আমাদের বায়ুমণ্ডলে এখন কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা ৪০ ভাগ বেশি। এমনকি অ্যান্টার্কটিকার হেলি রিসার্চ স্টেশন, যা শিল্প-কারখানা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, সেখানেও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৪০০ পিপিএম, অর্থাৎ ১ মিলিয়ন বায়ুকণার মধ্যে রয়েছে ৪০০টি কার্বন ডাই-অক্সাইড অণু।২

প্রতিবছর মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন

ডাই-অক্সাইড নির্গত হয় ৩৬ বিলিয়ন টন। তার মধ্যে ৩৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড জীবাশ্ম-জ্বালানি এবং
শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত হয়। তার ১৬ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে পুঞ্জীভূত হয় এবং বাকি কার্বন
ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে বায়ুমণ্ডল এবং সাগর, গাছপালা, প্রাণীর বৃদ্ধি ও ক্ষয়ের মধ্যে।৩

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুটি ভিন্ন বিষয় কিন্তু সম্পর্কযুক্ত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বলতে বোঝায় সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এই উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলাফল। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে বলা হয়েছে জলবায়ু হচ্ছে ‘what we expect’ এবং আবহাওয়া হচ্ছে ‘what we get’। রবার্ট ফিটজরয় (Robert Fitzro) ডারউইনকে বহনকারী বিগল জাহাজের কাপ্তান এবং যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস এর প্রতিষ্ঠাতা ১৮৫৯ সালে দ্য টাইমস পত্রিকায় লেখা এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘মানুষ বায়ুর ক্ষিপ্ততাকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে না, কিন্তু এর গতিবিধি সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পারে। সে ঝড়কে শান্ত করতে পারে না, কিন্তু তার প্রচণ্ডতাকে এড়িয়ে যেতে পারে।৪ ফিটজরয় ১৫০ বছরের অধিক সময় আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থা ইংল্যান্ডে চালু করেছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আবহাওয়াকে যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে আনা সম্ভব। জলবায়ু সম্পর্কে এ-ধরনের পূর্বাভাস প্রদান অভিযোজন প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে।

২০১৭ সালের শেষে দেখা যায়, জীবাশ্ম-জ্বালানি এবং শিল্প-কারখানা থেকে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইড পূর্ববর্তী তিন বছরের তুলনায় শতকরা দুই ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৩ই নভেম্বর ২০১৭ সালের ন্যাচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ‘টিনডেল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ রিসার্চ’-এর পরিচালক উল্লেখ করেন, ‘Global carbon dioxide emmision appears to be going up strongly once again after three years stable period’।৫ গ্লোবাল কার্বন প্রকল্পের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রতিবছর বৃদ্ধি পায় শতকরা ৩ ভাগ। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ছিল শতকরা ০.৪ ভাগ।৬

অন্যদিকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী নয় মর্মে যাঁরা দাবি করেন, তাঁদের দুটি যুক্তি এই রূপ : বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা ০.০৪ ভাগ। সুতরাং বায়ুমণ্ডলে এর প্রভাব অত্যন্ত কম। দ্বিতীয়ত, বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং জলীয়বাষ্প কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। এই দুটি যুক্তির বিপরীতে বিজ্ঞানীরা যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন, তা হচ্ছে এই যে, কার্বন ডাই-অক্সাইড নিম্ন তাপমাত্রার অবস্থায়ও অবলোহিত রশ্মিকে শোষণ করতে পারে এবং বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করতে সক্ষম। ১৮৯৬ সালে সুইডিশ রসায়নবিদ ভান্তে অ্যারোনিউস (Svante Arrhenius) দেখান যে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরমাণু দ্বিগুণ করা হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।৭ পরবর্তী বিতর্কিত প্রশ্ন হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের বৃদ্ধি কী মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে ঘটেছে? না এটি প্রাকৃতিক কারণ? যেমন আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড। গ্লোবাল কার্বন প্রকল্পের প্রতিবেদন অনুযায়ী মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ আগ্নেয়গিরি থেকে প্রাকৃতিকভাবে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে অনেক বেশি। প্রাকৃতিকভাবে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবে শোষিত কার্বন
ডাই-অক্সাইডের প্রায় সমপরিমাণ। সুতরাং নিঃসরণ মানুষের কর্মকাণ্ডের ফল।

জলীয়বাষ্প সম্পর্কে যে-বিতর্ক, সে-সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের যুক্তি হচ্ছে এই যে, কার্বন ডাই-অক্সাইড অবলোহিত রশ্মির যে-অংশকে শোষণ করে জলীয়বাষ্প তা করে না। তাছাড়া তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক পরিমাণ জলীয়বাষ্প বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জলীয়বাষ্পের প্রভাব কী তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে, কিন্তু আইপিসিসি-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, জলীয়বাষ্পের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।৮

উল্লেখ্য, সিলভার ও ডেফ্রিস, তাঁদের গ্রন্থ one Earth, one future : our changing global environment-এ প্রায় দুই যুগ আগে উল্লেখ করেন যে, জলীয়বাষ্পের পর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসই প্রকৃতিতে বেশি পাওয়া যায়।৯ জীবাশ্ম-জ্বালানি দহনের ফলে কার্বন জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। তাছাড়া বন-জঙ্গল ধ্বংস করা বা পোড়ানোর ফলে অথবা সেগুলি পচে গিয়েও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হয়। সিলভার ও ডেফ্রিসের হিসাব অনুযায়ী মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে সঞ্চিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের অর্ধেক প্রাকৃতিকভাবে যেমন সমুদ্র বা উদ্ভিদকুল দ্বারা শোষিত হয় এবং বাকি অর্ধেক বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়। সুতরাং যেভাবেই আমরা দেখি না কেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক কার্বন-বাজেটের পরিমাণ। এই পরিমাণের হিসাব করতে হলে আমাদের জানা প্রয়োজন কার্বন নিঃসরণ হওয়া এবং কার্বন শোষিত হওয়ার পরিমাণ।

জীবাশ্ম-জ্বালানি শিল্প-কারখানা এবং ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তনের কারণে কার্বন নির্গত হওয়ার পরিমাণের সঙ্গে সাগর এবং ভূমি, গাছপালা ইত্যাদি দ্বারা কার্বন শোষণের পরিমাণকে এই গণনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কার্বন-বাজেটের গণনার সঙ্গে উপরোল্লিখিত বাজেটের পার্থক্য এই যে, কার্বন-বাজেট মূলত কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হলে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি বা ২ ডিগ্রির মধ্যে রাখা যাবে তাকে বোঝায়।

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে আমরা পরিবেশ দর্শনের আলোকে চিন্তা করতে পারি। দার্শনিক স্পিনোজার (Spinoza) নৈতিক তত্ত্বে এবং ধারণা তত্ত্বে পরিবেশ বিষয়ে চিন্তাভাবনা লক্ষ করা যায়। স্পিনোজার দৃষ্টিতে এই প্রকৃতিতে ‘সবকিছুই সব কিছুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত’।১০ তাই সম্ভবত জীববিদ এডওয়ার্ড উইলসন বলেছেন, এই গ্রহের প্রতিটি প্রাণ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উইলসন তার সামাজিক জীববিদ্যার তত্ত্বে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বসবাস বা ‘Biophilia’র ধারণা অন্তর্ভুক্ত করেন।১১ বৈশ্বিক উষ্ণতা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন তার কারণ হিসেবে যে সমস্ত ধ্রুবককে শনাক্ত করা হয়েছে, তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যেমন সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি সম্পর্ক রয়েছে আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে। একদিকে আমরা লক্ষ করি চাহিদা বৃদ্ধি, অন্যদিকে আমরা লক্ষ করি সম্পদ বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা। কারণ আমাদের গ্রহের সামর্থ্যরে একটি সীমা রয়েছে। এখানে হেনরি ডেভিড থারো (Henry David Thorea) প্রাসঙ্গিক। থারো ওয়াল্ডেন (Walden) পুকুরের পাশে জঙ্গলের মধ্যে প্রায় দুই বছর বসবাস করে দেখিয়েছিলেন একটি মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ন্যূনতম সম্পদ ব্যবহার করে কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে। ‘প্রয়োজন’ ও ‘প্রয়োজনীয়তা’কে অন্বেষণ করার বিষয়ে থারোর পদ্ধতি অত্যন্ত মৌলিক।১২

উল্লেখ্য, আমরা দার্শনিক দেকার্তের দর্শনে লক্ষ করি কীভাবে মানসিক অবস্থাকে নিম্নপর্যায়ে নিয়ে এসে দেকার্ত শুধুমাত্র ভাবলেন ‘I think therefore I am’। ঠিক তেমনি থারোর ওয়ালডেন হচ্ছে মানসিক এবং শারীরিক অবস্থাকে লঘুকরণের (reduction) মাধ্যমে জীবন যাপন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরেকটি দার্শনিক বিষয় আমাদের সামনে এখন বিবেচ্য এবং সেটি হলো ‘জলবায়ুর ন্যায়পরায়ণতা’ বা climate justice। এই ধারণায় আমরা দর্শন ও অর্থনীতির একটি সমন্বিত রূপ লক্ষ করি। জলবায়ু পরিবর্তনের সুফল ও কুফলকে সমভাবে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে ভাগ করে নেওয়া এই দর্শনের উদ্দেশ্য। তবে জলবায়ু ন্যায়পরায়ণতা বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করার আগে পরিবেশ দর্শনের তিনটি দ্বন্দ্ব সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হবে।

পরিবেশ দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমরা তিনটি দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হই। প্রথম দ্বন্দ্ব হচ্ছে প্রকৃতি মানুষের সেবার জন্য। এরকম দর্শন হচ্ছে মানবকেন্দ্রিক বা anthropocentric দর্শন। এই দর্শনের বিকল্প দর্শন হচ্ছে প্রকৃতির অন্তর্নিহিত মূল্য রয়েছে। এটি শুধুমাত্র মানবকেন্দ্রিক নয়। দ্বিতীয় দ্বন্দ্ব হচ্ছে প্রকৃতিতে মানুষের অবস্থানকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে তা নিয়ে। মানুষ কী প্রকৃতির সমপর্যায়ের, যে-কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবে না অথবা মানুষ প্রকৃতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সুতরাং মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তৃতীয় দ্বন্দ্ব হচ্ছে পরিবেশ দর্শনে নৈতিক বিবেচনার ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে। কোনো প্রাণী বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিষয় কী এই বিবেচনার আওতায় আসবে? জলবায়ু ন্যায়পরায়ণতা আলোচনার ক্ষেত্রে পরিবেশ দর্শনের এই তিন দ্বন্দ্বকে বিবেচনায় আনতে হবে।

সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে দার্শনিক রিচার্ড রোলে (Richard Routley) যুক্তি দেখান যে, প্রকৃতির কোন কোন বিষয় সরাসরি মানুষের কাজে না লাগলেও এর অন্তর্নিহিত মূল্যের কারণে প্রকৃতিকে কখনো ধ্বংস করা ঠিক হবে না। এই অন্তর্নিহিত মূল্য সম্পর্কে রোলে-এর বক্তব্য হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে মানুষের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত।১৩ ঊনবিংশ শতাব্দীর পরিবেশ সংরক্ষণবিদ গিফর্ড পিনচো (Gifford Pinchot) মনে করেন যে, প্রকৃতি মানুষকে জীববৈচিত্র্য উপহার দেয়। প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ওপর বিশ্বের উন্নয়ন নির্ভরশীল।১৪ কেউ কেউ মনে করেন, প্রকৃতি মানুষের জন্য মূল্যবান, কারণ প্রকৃতি থেকে নানা ওষুধ তৈরি করা যায়, যা মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে। কিন্তু পরিবেশবিদরা মনে করেন, প্রকৃতি মানুষের কল্যাণে কাজে না লাগলেও প্রকৃতির প্রয়োজন রয়েছে। যেমন রেইন ফরেস্ট জলবায়ু পরিবর্তনে স্থিতাবস্থা রক্ষার জন্য প্রয়োজন। সাম্প্রতিককালে যেসব পরিবেশবাদী বাস্তবধর্মিতাকে পছন্দ করেন তাঁদের মতে, প্রকৃতির অন্তর্নিহিত মূল্য এবং মানবকেন্দ্রিক মূল্য – এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য নেই। উইলিয়াম জেমস (William James) তাই সম্ভবত বলেছেন, ‘If no difference can be thought of, the dispute is a quarrel over words।’১৫

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত bio centric egalitarianis গ্রন্থে পল টেইলর জীবকেন্দ্রিক সমতাবাদ (Respect for nature)-এর ধারণা উপস্থাপন করেন।১৬ টেইলর যুক্তি দেখান যে, সমস্ত জীবেরই প্রকৃতিতে সমান অধিকার রয়েছে। টেইলর তাঁর ধারণাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, শুধু খেলার জন্য শিকার করা বা মাছ ধরা কাম্য নয়। তবে টেইলর দাবি করেন যে, পশুর জন্য নির্ধারিত কোনো স্থানকে যদি একটি লাইব্রেরি তৈরি করার কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটা যুক্তিযুক্ত। এ-ধরনের যুক্তিকে অনেকে মানবকেন্দ্রিক বলে আখ্যায়িত করেন।

তাহলে প্রকৃতিতে মানুষের অবস্থান কোথায়? মানুষ কী প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ জীব, যার প্রয়োজনে প্রকৃতি মানুষের চাহিদার জোগান দেবে? প্রকৃতিকে দূষিত করার অধিকার মানুষ ছাড়া কারো আছে কী? এরকম দ্বন্দ্ব রয়ে গেল। জীবকেন্দ্রিক সমতাবাদকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে মানুষকে অন্যান্য প্রাণী সংরক্ষণ করার দায়িত্ব দিলে চলবে না। প্রকৃতিকে নিজেই নিজের সমতাবিধানে নিয়োজিত হতে হবে। বস্তুত এই দ্বন্দ্বের নিরসন আজো হয়নি। এটি জলবায়ু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধক।

আমাদের নৈতিকতার ভিত্তি কি? আমরা কি পশুপাখিকে নৈতিকতার আওতায় চিন্তা করব? দার্শনিক জেরেমি বেনতাম (Jeremy Bentham)-এর মতে, ‘Can they feel? If they can then they deserve moral consideration’। অর্থাৎ পশুরা যদি অনুভূতিসম্পন্ন হয় তাহলে তাদের নৈতিকতার আওতায় আনতে হবে। পূর্বে উল্লিখিত পল টেইলরের জীবকেন্দ্রিক সমতাবাদে সমস্ত প্রাণীকুলকে নৈতিকতার আওতায় বিবেচনা করা হয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত পিটার সিঙ্গারের Animal Liberatio গ্রন্থে বিভিন্ন প্রাণীর নৈতিক অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সিঙ্গার মনে করেন, সমস্ত প্রাণীকুলকে নৈতিকতার অধিকার দিতে হবে।১৭

উল্লেখ্য, যারা পরিবেশকে আর্থিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চান এবং যারা পরিবেশের সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে চান – এ দুয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিবেশ বিতর্কে লক্ষ করা যায়। এই দ্বন্দ্ব ইদানীংকালে সম্প্রসারিত হয়ে যে রূপ নিয়েছে তা হলো, আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই পরিবেশকে সংরক্ষণ করতে হবে। সুতরাং বর্তমানকালে পরিবেশ-দর্শনের ভিত্তি বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং তা থেকে জাত জলবায়ু পরিবর্তনকে ঘিরে।

পরিবেশ-দর্শন ও আর্থিক-দর্শনের সঙ্গে জলবায়ু ন্যায়পরায়ণতা বিষয়টি সম্পৃক্ত। মেরি রবিনসন তাঁর Climate Justice গ্রন্থে সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা উল্লেখ করে লেখেন, ‘If there is a climate change problem, it is in large part a justice problem. Our continued existence on this shared planet demands that we agree to a fairer way of sharing out the burdens and benefits of life on Earth and that in the choices we make, we remember the rights of both today’s poor and tomorrow’s children.’১৮

সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাকে ন্যায়পরায়ণতার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে কীভাবে পরিবেশ-দর্শন ও আর্থিক-দর্শন জড়িত। সাম্প্রতিককালে পরিবেশের একটি সমস্যা যেমন প্লাস্টিকদূষণ দিয়ে বিষয়টিকে বর্ণনা করা যায়।

প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন জীবাশ্ম-জ্বালানি এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ এই জীবাশ্ম-জ্বালানি। সুতরাং জীবাশ্ম-জ্বালানি হচ্ছে প্লাস্টিক দ্রব্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাধারণ বিভাজক। গাণিতিকভাবে বিষয়টি দেখা যেতে পারে। ১ কিলোগ্রাম পলিথিন তৈরি করতে প্রয়োজন ২ কিলোগ্রাম তেল এবং কাঁচামাল। এখানে তেল বলতে শক্তি বোঝানো হচ্ছে। ১ কিলোগ্রাম তেল পোড়ালে তা থেকে সৃষ্টি হয় ৩ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড। অন্যভাবে বলা যায়, ১ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক থেকে উৎপাদন এবং দাহন (incineration) এরপর নির্গত হয় ৬ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড। আমরা দৈনন্দিন যে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করি তার ওজন ৮ গ্রাম থেকে ৬০ গ্রামের মধ্যে হয়। অবশ্য এটি নির্ভর করে প্লাস্টিক ব্যাগের আকার এবং কতটুকু পুরু তার ওপর। যদি একটি প্লাস্টিক ব্যাগের গড় ওজন ৩৩ গ্রাম হয়, তাহলে পাঁচটি প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে বায়ুমণ্ডলে আনুমানিক ১ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এখানে উল্লেখ্য এক হিসাবে দেখা যায়, বৈশ্বিক উৎপাদিত তেলের ৮ ভাগ প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাজ্যের গ্রিন পিস প্রতিষ্ঠানের এক হিসাবে দেখা যায়, কোকো-কোলা কোম্পানি প্রতিবছর ১২০ বিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল তৈরি করে। গড় হিসাবে প্রতিবছর ২৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়।১৯ তন্মধ্যে ২০১৬ সালে ইউরোপে ২৭ মিলিয়ন টন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩.৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। সুতরাং এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনে প্লাস্টিকের বিরূপ ভূমিকা অপরিসীম।

প্লাস্টিকের আরেকটি পরিবেশগত সমস্যা হচ্ছে সাগরদূষণ এবং এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রতিবছর অন্তত ১২.৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সাগরে প্রবেশ করে। ২০১৫ সালের proceedings of The National Academy of Science-এ প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, শঙ্খচিল এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পাখির শতকরা ৯০ ভাগের পাকস্থলীতে প্লাস্টিক রয়েছে।২০ সমুদ্রে যে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে তার শতকরা ৮০ ভাগই ভূমি থেকে সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, প্রতিবছর যে-পরিমাণ প্লাস্টিক ভূমি থেকে সাগরে প্রবেশ করে তাতে বাংলাদেশ দশম স্থানে রয়েছে। তবে জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭তম এবং তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যার হিসাবে ডেনমার্কের স্থান ১৯তম স্থানে। অ্যালেন ম্যাক আর্থার ফাউন্ডেন্স ২০১৭ সালে এক হিসাব করে দেখেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে আমরা দেখব সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি।২১ এখানে উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বাংলাদেশই প্রথম দেশ যে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যখন লক্ষ করা যায় যে, প্লাস্টিক ব্যাগ বন্যার সময় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এরপর পৃথিবীর অন্যান্য দেশ প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ মরক্কো ২০১৬ সালে এবং কেনিয়া ২০১৭ সালে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।২২

জলবায়ু পরিবর্তনে প্লাস্টিক দূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে রোধ করতে আমরা কী করতে পারি? আমরা একদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির কলাকৌশল প্রয়োগ করতে পারি এবং অন্যদিক নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ। মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবক্তারা যুক্তি দেখান যে, দূষণ কমাতে হলে এর জন্য বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এই পন্থার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে সুপার মার্কেটগুলি বিক্রীত জিনিসের সঙ্গে বিনামূল্যে প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বরং তারা অতি স্বল্পমূল্যে অর্থাৎ পাঁচ পেন্স বা দশ পেন্সে পুনঃপুনঃ ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ বিক্রি করা শুরু করে। গ্রিন পিসের স্বেচ্ছাসেবক দল এক জরিপ করে দেখেছে যে, উল্লিখিত পন্থা অবলম্বনের ফলে সমুদ্রসৈকতে প্লাস্টিক ব্যাগের বর্জ্য শতকরা ৪০ ভাগ কমে গেছে।২৩

আরেকটি উদাহরণ হতে পারে কার্বন ঋণাত্মক প্লাস্টিক তৈরি করা। টিম ফ্লেনারি তাঁর Atmosphere of Hope গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ক্যালিফোর্নিয়ার নিউলাইট টেকনোলজি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড আহরণ করে তৈরি করেছে ‘এয়ার কার্বন’ যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিক।২৪ এক্ষেত্রে জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহার না করে প্লাস্টিক তৈরি করা হয়েছে। উপরিউক্ত দুটি উদাহরণ থেকে আমরা লক্ষ করি, একদিকে আর্থিক-দর্শনের একটি ধারণা মুক্তবাজার অর্থনীতি ব্যবহার করে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মানবকেন্দ্রিক পরিবেশ-দর্শনের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে জ্বালানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পন্থায় প্লাস্টিক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।

বৈশি^ক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের যে সাম্প্রতিক চিত্র আমরা দেখি, তাতে মানুষের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিবেশকে দূষিত করার সুযোগ আর নেই। কারণ এই বিশ্বের জলবায়ু গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা যদি শুধু মানবকেন্দ্রিক দর্শনের আলোকে পরিবেশকে ব্যবহার করি তাহলে এর পরিণাম ভালো ফল বয়ে আনবে না। পরিবেশের অন্তর্নিহিত মূল্যকে অনুধাবন করতে হবে। সেইসঙ্গে জীবকেন্দ্রিক সমতাবাদের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

তথ্যসূত্র

১. 1. Prince of Wales, Juniper, Tony and Shuckburgh, Climate change, Ladybird Books Ltd, London, 2017, P. 6.

2. Ibid, P. 20.

3. Ibid, P. 23.

4. Al-Khalili, Jim (edited), What’s Next? Profile book, London, 2017, P. 43.

5. Peters, Glen P et al, Towards real time verification of CO2 emissions, Nature : climate change, 2017, PP 848-850.

6. Hausfather, Zeke, Analysis: Global CO2 emissions set to rise 2% in 2017 after three year ‘Plateau’, Carbon Brief, 13 Nov 2017, P.2 (Access at https://www.carbonbrief.org on 2 Dec 2018)

7. Emanuel, Kerry, What we know about climate change, MIT Press, Cambridge, 2012, P. 95.

8. IPCC, climate change 2007: Synthesis report, Geneva, 2007, P. 38.

9. Silver, Cheryl Simon and Defries, Ruth S, One Earth, One Future : our changing global environment, National Academy Press, Washington, P. 65.

10. So. Garrett, Don, Nature and Necessity in Spinoza`s Philosophy, Oxford University Press, 2018, P. 89.

11. Wilson, E.O, Half Earth : our planet`s fight for life, W.W. Northern & Company, New York, 2016, P. 211.

12. Thoreau, Henry David, Where I lived and what I lived for, Penguin Books-Great idea series, England, 2005, P. 11.

13. Routley, Richard, `Is there a need for a new, an environmental Ethics?`, Proceedings of the XVth World congress of philosophy, Sofia Press, Balgaria, 1973, P. 205-210.

14. Mann, Charles C, The Wizard and The Prophet : Science and the future of our planet, Picador, UK, 2019, P. 372.

15. James, William, Pragmatism and other writings, Penguin Books, England, 2000, P. 328.

16. Taylor, Paul, Respect for Nature : A Theory of Environment Ethics, Princeton University Press, Princeton, 1986, P. 12.

17. Singer, Peter, Animal Liberation, The Bodley Head, London, PP 5-21.

18. Robinson, Mary, Climate Justice : Hope, Resilience and the fight for a sustainable future, Bloomsburg Publishing, London, 2018, P. 8.

19. McCallum, Will, How to Give up plastic, Penguin Life, UK, 2019, P. 46.

20. ibid, P. 28.

21. Dorey, Martin, No more plastic, Ebury Press, London, 2018, P. 19.

22. McCallum, op cit, P. 51.

23. McCallum, op cit, P. 161.

24. Flannary, Tim, Atmosphere of Hope, Penguin Books, UK, 2015, P. 82.