ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু

পূর্ববাংলায় প্রথম রাষ্ট্রভাষার প্রস্তাব ও বঙ্গবন্ধু

বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে কবিগুরু ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে।’

বাঙালি তার সকল বাধা অতিক্রমের জন্য পেয়েছিল হাজার বছররের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

পূর্ববাংলায় সাতচল্লিশে ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম। তারপর এ-আন্দোলনের পুরোটা সময় জুড়েই ছিলেন তিনি। ভাষা-আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশ-প্রতিটির সঙ্গে রয়েছে তাঁর নাড়ির টান। এসবে রযে-কোনো আলোচনায় প্রথমেই চলে আসেন বঙ্গবন্ধু।

তখনো পাকিস্তান হয়নি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আলোচনা চলছে। সে-সময় ‘বাংলা’কে আসন্ন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৭ সালের ৭ই জুলাই কলকাতার ইত্তেহাদ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর এ-দাবি প্রকাশিতহয়েছিল।

কিন্তু এরও অনেক আগে, ১৯২১ সালে নওয়াব আলী চৌধুরী, যিনি ছিলেন বাংলার একজন অন্যতম শিক্ষাবিদ, তিনি প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার লিখিত প্রস্তাব দেন। তাঁর কথা ছিল, ভারতের রাষ্ট্রভাষা যেটা হবে হোক; কিন্তু বাংলাভাষাকে করতে হবে বাংলার রাষ্ট্রভাষা। এরপর শুরু হয় উর্দু আর বাংলার বিতর্ক। দেশভাগের আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, পূর্ববাংলার জন্য ভালো কিছু হচ্ছে না। তাই বাংলার মানুষ তাদের অধিকার রক্ষায় সচেতন হয়। তখন বঙ্গবন্ধু, কাজী ইদ্রিস, শহীদুল্লা কায়সার, রাজশাহীর আতাউর রহমানসহ অনেকেই কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। পূর্ববঙ্গের যুবসমাজের করণীয় ঠিক করা ছিল সে-বৈঠকের উদ্দেশ্য।

এ-সময় আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ এক নিবন্ধ লিখলেন। সে-নিবন্ধে তিনি উর্দুকে প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করেন। ততদিনে বাঙালির আত্ম-অন্বেষণ শুরু হয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি দৈনিক আজাদে লিখলেন, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের যদি একটি রাষ্ট্রভাষা হয়, তবে গণতন্ত্রসম্মতভাবে শতকরা ৫৬ জনের ভাষাবাংলাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। রাষ্ট্রভাষা যদি একাধিক হয়, কেবল তখনই উর্দুর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

তারপর ১৪ই আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তানের জন্ম হয়। নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আসেন। তাঁরা ছাত্র ও যুবনেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাতচল্লিশের ৬ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পূর্বপাকিস্তান কর্মী সম্মেলনের তারিখ ঠিক হয়।

কিন্তু খাজা নাজিমুদ্দিনের সরকার এ-সম্মেলনে বাধা সৃষ্টি করে। কোথাও জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন খানসাহেব আবুল হাসনাত। তাঁর বাড়িতে সম্মেলন হয়। দেশভাগের পর পূর্ববাংলায় এটিই ছিল প্রগতিশীলনে তাদের প্রথম সম্মেলন। ৭ই সেপ্টেম্বর ছিল পূর্ববাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।  এদিন ‘পূর্বপাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ-সম্মেলনে কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল ভাষা সম্পর্কিত প্রস্তাব।

সেদিনের তরুণ নেতা বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘পূর্বপাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করিতেছে যে, বাংলা ভাষাকে পূর্বপাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হইবে, এ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক।’ এভাবেই সেদিন পূর্ববাংলায় বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে প্রথম ভাষার প্রস্তাব উচ্চারিত হয়।

প্রমথ চৌধুরী, মুহম্মদ এনামুল হক, মুজাফ্ফর আহমদসহ অনেক লেখক, গবেষক রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি করতে থাকেন। শুধু লেখক-গবেষক নন, গণ-আজাদী লীগ, তমুদ্দুন মজলিস, গণতান্ত্রিক যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি তুলতে থাকে। এরই মধ্যে আরবি হরফে বাংলা লেখার ষড়যন্ত্র হয়। এর প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ শুরু করে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। কয়েক হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। স্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৪৭ সালের কর্মীসম্মেলনে যে ভাষার প্রস্তাব গৃহীত হয়, ১৯৪৮ সালের শুরুতে সেটা বাংলার ছাত্রসমাজের মুখে উচ্চারিত হতে থাকে। ভাষা-আন্দোলনের শুরু থেকেই যে বঙ্গবন্ধু সরাসরি যুক্ত ছিলেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন সেটা নিশ্চিত হওয়া যায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, বিভিন্নপত্রপত্রিকার লেখা, ভাষা-আন্দোলনের নানান দলিলপত্র, ভাষাসংগ্রামীদেরস্মৃতিচারণাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে।

ভাষা-আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এর প্রমাণ রয়েছেপাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে, He took very active part in the agitation for adopting Bengali as the State language of Pakistan and made propoganda at Dacca for general strike on 11.3.48 on this issue. On 11.3.48 the subject was arrested for violating orders under section 144 Cr. P. C. (Secret Documents of Intelligence Branch on Father of The Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Volume 1 (1948-1950), p 319

১৯৪৭ ও ’৪৮ সালের ভাষা-আন্দোলনের সব কর্মকাণ্ডে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ও নেতৃত্ব দেন।

সাতচল্লিশে রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইশতেহার ও বঙ্গবন্ধু

বাংলা একাডেমিতে বর্ধমান হাউস নামে একটি ভবন রয়েছে। দেশভাগের পর এ-ভবন ছিল পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সরকারি বাসভবন। ১৯৪৭ সালের ৫ই ডিসেম্বর এ-বাসভবনে এক জরুরি বৈঠক হয়। এটি ছিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা কী হবে- এ-বৈঠক ছিল সে-আলোচনা নিয়ে। তখন বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক ও ছাত্ররা এক হন। সবাই মিছিল করে বর্ধমান হাউসে যান। মিছিলের সেøাগান ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে সেøাগান উচ্চারণ করেন। তিনিসহ কয়েকজন এ-মিছিলে নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধু তখন গণতান্ত্রিক যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

পাকিস্তান শাসকেরা বাংলা ভাষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করে। শুরুতে ছিল আরবি অক্ষরে বাংলা লেখার ষড়যন্ত্র।  এতে ছাত্র সমাজ ক্ষুব্ধ হয়। সেটা ছিল ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ। তখন পূর্ববঙ্গের ১৪ জন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠক এক হন। তাঁরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিসহ ২১-দফাসংবলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। পুস্তিকার ৬ নম্বর দফা ছিল রাষ্ট্র ভাষা নিয়ে। এই পুস্তিকা রচনায় বঙ্গবন্ধুর গভীরভাবে সম্পৃক্ততা ছিল। এর ১৪ জনস্বাক্ষরদাতার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম। ইশতেহারটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। নামছিল রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইশতেহার-ঐতিহাসিক দলিল। ভাষা-আন্দোলনেরইতিহাসেএইপুস্তিকাএকটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে স্বীকৃত।

১৫০ মোগলটুলী ছিল সে-সময়ের প্রগতিশীল ছাত্র, যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীদের মিলনকেন্দ্র। এখান থেকে তাঁরা বাংলাভাষাসহ পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক দিকগুলো জাতির সামনে তুলে ধরেন। ভাষা-আন্দোলনের কর্মী বাহিনী নিয়মিত এখানে মিলিত হন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিভিন্ন পরিকল্পনা এখান থেকেই নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু, শওকত আলী, কামরুদ্দিন আহমদসহ সবাই ছিলেন এ-কেন্দ্রেরপ্রাণশক্তি। ১৫০ মোগলটুলী ছিল বিরোধী রাজনীতির অন্যতম আলোচনাকেন্দ্র। কলকাতা থেকে বঙ্গবন্ধু, জহিরুদ্দিন, নঈমুদ্দিনের মতো নেতারা প্রথমে ১৫০ মোগলটুলীতে আসতেন ও আলোচনা করতেন। এভাবেই চলে গেল সাতচল্লিশের দিনগুলো।

ভাষা-আন্দোলনের প্রচার ও বঙ্গবন্ধু

১৯৪৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি। করাচিতেপাকিস্তান সংবিধান সভার বৈঠক হলো। এ-বৈঠকে রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি আলোচনায় আসে। মুসলিম লীগনেতারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বললেন। সে-সভায়পূর্ববাংলারও অনেক মুসলিম লীগ সদস্য ছিলেন। অবাক করার বিষয় হলো, তাঁরাও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দিলেন। কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত আইনসভার সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ওই সভায় ছিলেন। একমাত্র তিনিই বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। কারণ পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষের ভাষা বাংলা। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেন। এজন্য লিয়াকত আলী খান তাঁকে প্রকাশ্যে ধিক্কার জানান। তিনি ও রাজা গজনফর আলী খান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষাকরার কথা বলেন। পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধি খাজা নাজিমুদ্দিন ও তমিজ উদ্দিন খান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা করেন। নাজিমুদ্দিন বলেন, পূর্বপাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চায়। শুরু হলো বাংলাকে বাদ দেওয়ার কঠিন ষড়যন্ত্র।

তখন তমুদ্দুন মজলিশ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ছিলেন এ-সংগঠনের নেতা। এদিকে বঙ্গবন্ধু সে-সময় মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা। তমুদ্দুন মজলিশ ও মুসলিম ছাত্রলীগ এক হয়। তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং একটি সর্বদলীয় সভা করে। এ-সভা থেকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। কামরুদ্দিন, শামছুল হকসহ অনেকে এ-সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেন। এ-পরিষদ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ করার উদ্যোগ নেয় এবং ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষার দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হয়। এদিকে জেলা ও মহকুমায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের শাখা করা হয়েছে ততদিনে। ভাষার দাবি নিয়ে সবাই বিভিন্ন জেলায় যান।

বঙ্গবন্ধু গেলেন ফরিদপুর, যশোর, দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে। তিনি এসব জেলায় সভা করেন। বক্তৃতায় তিনি বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। যে-কোনো মূল্যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রত্যয় ব্যক্তকরেন। এ-লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু খুলনার দৌলতপুরে একটি কলেজে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বক্তৃতা দিতে যান। সেখানে মুসলিম লীগসমর্থক ছাত্ররা সভা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে। খুব গোলমাল হয়। অনেকে রক্তাক্ত হয়; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সভা বানচাল করতে পারেনি তারা।

আবদুস সবুর খান, বরিশালের মহিউদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রাঙ্গণে সভা করেন। তারপর ঢাকায় ফিরে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। ছাত্ররা তাঁর সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। জগন্নাথ কলেজ, মিটফোর্ড, মেডিক্যাল স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আন্দোলনে যোগ দেয়। এ-আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগ গুন্ডা নামিয়েছিল। তারা অপপ্রচার চালায় যে, এটা পাকিস্তান ধ্বংসের আন্দোলন। পুরনো ঢাকায় ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের।

১৯৪৮-এ ভাষা-আন্দোলনের প্রথম

হরতালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব

১৯৪৮ সাল। ৮ই ফেব্রুয়ারি। করাচির সংবিধান সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা থেকে বাদ দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র শুরুহয়। এর প্রতিবাদে তমুদ্দুন মজলিশের নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেম, বঙ্গবন্ধু, ছাত্রলীগসহ সবাই এক আলোচনায় বসেন। এ-আলোচনা সভা থেকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রামপরিষদগঠিত এবং ১১ই মার্চ হরতাল পালনের সিদ্ধান্তহয়। শুধু সিদ্ধান্তই নয়, যে-কোনোমূল্যে ১১ই মার্চ হরতাল সফল করতে হবে। এজন্য ১লা মার্চ প্রচারমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেদিন এ- বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম, শেখ মুজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধু), পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দীন আহমদ ও আবদুর রহমান চৌধুরী। ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসেএটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এ-উদ্যোগে অপরিসীম ভূমিকা ছিলবঙ্গবন্ধুর।

ভাষা-আন্দোলনের প্রচারশেষে ১০ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আসেন। এদিন রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি আলোচনা সভা বসে। ইতিমধ্যে ভাষা-আন্দোলন নিয়ে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। অনেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কী করবেন। কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে আপস করতে চাইছেন। বঙ্গবন্ধু তখন চিৎকার করে উঠলেন। তিনি বললেন, ‘সরকার কি আপসের প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমুদ্দিন সরকার কি বাংলাভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে, সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে।’ অলি আহাদ, তোয়াহা, শওকত আলী, শামসুল হক সবাই বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দিলেন। তাঁর এ-মনোভাবে সেদিন কেউ আপস করার সাহস পাননি।

পরে এক সাক্ষাৎকারে অলি আহাদ বলেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় যদি মুজিব ভাই ঢাকায় না পৌঁছতেন তাহলে ১১ই মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতো না।’

১১ই মার্চের হরতাল সফল করার জন্য যা করা দরকার বঙ্গবন্ধু এর সবই করেন। সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। হরতালের পক্ষে পোস্টার লাগানো হয়। ১১ই মার্চ ভোর থেকে শতশত ছাত্রকর্মী ইডেনবিল্ডিং, জেনারেল পোস্টঅফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় পিকেটিং শুরু করেন। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। পোস্ট অফিসের সামনে ছাত্ররা ভীষণভাবে মার খান। একদল মার খেয়ে চলে যান, আরেক দল আসেন। এভাবে অনেকক্ষণ চলে। শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এওয়াদুদসহ অনেকে গুরুতর আহত হন।

বঙ্গবন্ধুকর্মীদের নিয়ে ইডেন বিল্ডিংয়ের দিকে যান। সেখানে দেখেন, শামসুল হককে পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। তাঁকে গ্রেফতারের জন্য সিটি এসপিজিপ নিয়ে তাড়া করছেন। এক পর্যায়ে গ্রেফতার হন তিনি। পুলিশের গাড়িতে ওঠার পর দেখেন শামসুল হক, অলি আহাদকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকছাত্রকে ৩০ থেকে ৪০ মাইল দূরে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুসহ প্রায় ৭৫ জনছাত্রকেপাঠান হলো জেলে।

ভাষা-আন্দোলনের পুস্তিকা প্রকাশ, রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন, বিভিন্ন জেলা সফর, ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ হরতালের কর্মসূচি প্রণয়ন, হরতাল বাস্তবায়নে ১০ই মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে পরিকল্পনা গ্রহণ, ১১ই মার্চ পিকেটিংয়ে নেতৃত্ব, পুলিশি হামলার শিকার ও ভাষা-আন্দোলনের প্রথম প্রতিবাদ দিবস ১১ই মার্চের মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। ১৫ই মার্চ মুক্তিলাভের সঙ্গে সঙ্গে খাজা নাজিমুদ্দিনের স্বাক্ষর করা আটদফা চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। আবার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৬ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।  মিছিল নিয়ে পরিষদ ভবন ঘেরাও করেন। ১৭ই মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলের সভায় বক্তৃতা দেন। জিন্নাহর রেসকোর্স ময়দানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদ-এসব ঘটনাই বলে দেয় ভাষার প্রতি তাঁর কী অপরিসীম দরদ ও ভালোবাসা ছিল। কত গভীরভাবে তিনি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১১ই মার্চের হরতালই ছিল পূর্ববাংলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম সফল হরতাল। এর নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

হঠাৎ পাগলাঘণ্টা : খাপড়াওয়ার্ডের

সেই বিল ও বঙ্গবন্ধু

একদিন জেলের মধ্যে হঠাৎ পাগলাঘণ্টা বেজে উঠল। এর অর্থ চরম বিপদ। এ-সময় আইন বলে কিছু থাকে না। সিপাহীরা যাইচ্ছেতাই করতে পারে। বঙ্গবন্ধুদের ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিলেনএকজন বাঙালি সিপাহি। তিনি তালাবন্ধ করে নিচে চলে গেলেন। জমাদার তালা খুলে তাদের মারধর করতে চেয়েছিল। তারপর জেলার, ডেপুটি জেলার ও জেলসুপারিনটেনডেন্ট বিল এলেন। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন, একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সবার মনেই একটা অজানা আশঙ্কা।

জেলের ঘটনার শুরুটা হয়েছিল এভাবে- ১৩ই মার্চ সন্ধ্যা। কারাগারে একটা গোলমাল হয়। একজন অবাঙালি জমাদার প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুদের ওয়ার্ডে এসে গুনে দেখেন সবাই ঠিক আছে কি না। সেদিন আর হিসাব মেলে না। কিছু কমবয়সী ছাত্র ছিলেন। তাঁরা এদিক-ওদিক চলে যেতেন। বঙ্গবন্ধু সবাইকে বুঝিয়ে এক করতেন। পরে অবশ্য হিসাব মিলেছিল; কিন্তু জমাদার বাইরে গিয়ে হঠাৎ পাগলাঘণ্টা বাজিয়ে দেয়।

অল্পবয়সী ছাত্ররা দুষ্টামি করতেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের ছিল দারুণ মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন নয় কি দশ বছরের ছেলে। একদিন তাঁর বাবা এসে বললেন, তাঁকে আজই ছাড়িয়ে নেবেন; কিন্তু তিনি তাঁর বাবাকে বলে দিয়েছিলেন, সব ছাত্রকে না ছাড়লে তিনি জেল থেকে যাবেন না। এ-কথা শুনে সবাই তাঁর নামে জেলের মধ্যে জিন্দাবাদ দিয়েছিলেন। এই ছেলেটির কথা বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন। যাঁরা জেলে ছিলেন কারো মনোবল নষ্ট হয়নি।

১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাবলি বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন। তিনি অনেকবার কারাবরণ করেছেন; কিন্তু তাঁর জীবনে সবচেয়ে দীর্ঘ কারাবাস ছিল ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত। এ-সময় তিনি তাঁর আত্মজীবনী লেখেন। এই আত্মজীবনী লেখার সময় বঙ্গবন্ধুর জেলসুপারিনটেনডেন্ট বিলের কথা মনে পড়ে। জেলসুপার বিল ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি।  বঙ্গবন্ধুর মনে পড়ে যায় ১৯৫০ সালের একটি ঘটনা। তখন রাজশাহী জেলের একটা ওয়ার্ডের নাম ছিল খাপড়াওয়ার্ড। এই বিল সেদিন খাপড়াওয়ার্ডে রাজবন্দিদের ওপর গুলি চালিয়ে কয়েকজন দেশপ্রেমিককে হত্যা করেছিলেন। তাই সেদিন বঙ্গবন্ধুদের বেঁচে যাওয়াও ছিল অনেক বড় সৌভাগ্য। এই দুর্ধর্ষ বিল সেদিন বঙ্গবন্ধুদের মেরেও ফেলতেপারতেন।

ভাষার দাবির কাছে স্বৈরশাসকের প্রথম

নতি স্বীকার ও বঙ্গবন্ধু

১১ই মার্চের হরতালে দানা বেঁধে উঠল আন্দোলন। প্রায় রোজই শোভাযাত্রা হয়। আওয়ামী লীগ কর্মী ওয়াদুদ ও বখতিয়ারকে ভীষণভাবে মারা হয়েছে। এজন্য তাঁদের হাসপাতালে রাখা হলো। এ-ঘটনায় শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, তোফাজ্জল আলী, ডা. মালেক, সবুর খান, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুনসহ আরো অনেকে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন। নিজ দলের মানুষও প্রতিবাদ করল। এতে নাজিমুদ্দিন কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলেন। এভাবে চললে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।

তিনি কোনো উপায় না পেয়ে সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন। আলোচনা হলো। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ। তিনি জেলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সব জানালেন। নাজিমুদ্দিন বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছেন। পূর্ববাংলার অফিসিয়াল ভাষা বাংলা হবে। কেন্দ্রে বাংলা হবে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা। মামলা তুলে নেবেন। বন্দিদের মুক্তি দেবেন। পুলিশের জুলুম তিনি নিজেই তদন্ত করবেন। এই প্রথম স্বৈরশাসকেরা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে নতিস্বীকার করল। কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, এদের কোনো বিশ্বাস নেই। নাজিমুদ্দিন নিজে হোম মিনিস্টার। আবার তিনিই তদন্ত করবেন। তদন্তের নামে এটা হবে একটা প্রহসন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন তিনতলা জেলের চার নম্বর ওয়ার্ডে। দেয়ালের পাশে ছিল মুসলিম গার্লসস্কুল। স্কুলের মেয়েরা প্রতিদিন সকাল ১০টায় ছাদে উঠত। প্রায় বিকেল পর্যন্তসেøা গান দিত। সেøা গানের ভাষা ছিল- ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’, ‘বন্দিভাইদের মুক্তি চাই’, ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’ ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু শামসুল হককে বললেন, ‘হক সাহেব ওই দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকেরাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না।’ হক সাহেব বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ মুজিব।’ ১৫ই মার্চ বঙ্গবন্ধুসহ সবছাত্রকে মুক্তি দেওয়া হলো। জেলগেট থেকে শোভাযাত্রা করে সবাইকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নেওয়া হলো।

ঐতিহাসিকআমতলায়প্রথমবঙ্গবন্ধুর

সভাপতিত্ব ও ভাষারদাবি

সেদিন ছিল ১৯৪৮ সালের ১৬ই মার্চ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আমতলায় সাধারণ ছাত্রদের সভা। বঙ্গবন্ধুউপস্থিত হলেন। পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দীন আহমদ সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। সবাই সমর্থন করলেন। ঢাকা মেডিক্যালের বিখ্যাত আমতলায় বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে কোনো সভার সভাপতিত্ব করেন। সবার শেষে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ওপর নির্মম জুলুম করেছে। আর খাজা নাজিমউদ্দিন এর তদন্ত করবেন। আবার তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই তদন্ত মানি না।’ এছাড়া ভাষাসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে নাজিম উদ্দিনের যেআপস-মীমাংসা হয়েছে, সেগুলো সভায় অনুমোদন করা হলো। বঙ্গবন্ধুসহ ছাত্ররা তদন্তের প্রস্তাব না মানার বিষয়টি আইন সভায় খাজা নাজিমউদ্দিনের কাছেপৌঁছে দিতে গেলেন। তখন আইনসভার এলাকায় আবার পুলিশের সঙ্গে বেধে গেল গণ্ডগোল। লাঠিপেটা করল পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ল। বঙ্গবন্ধুর চোখে লাগল কাঁদানেগ্যাস। চোখ জ্বলছে। পানি পড়ছে চোখ থেকে। কয়েকজন পলাশী ব্যারাকের পুকুরে নিয়ে পানি দিলেন।

সন্ধ্যার পর ফজলুল হক হলে সংগ্রাম পরিষদের সভা। বঙ্গবন্ধু সে-সভায় আবার বক্তৃতা করলেন। কয়েকদিন আন্দোলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলো। কারণ দেশভাগের পর এই প্রথম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় আসবেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল না; ফরিদপুর, যশোরে কয়েকশো ছাত্র বন্দি হলেন। রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুরসহ অনেক জায়গায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল। এ-আন্দোলনকে বানচাল করতে নিখিল পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ অনেক চেষ্টা করেছিল, পারেনি। ভাষার আন্দোলন শুরু করেছিলেন ছাত্ররা; কিন্তু এটা শুধু ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, অনেক সাধারণ মানুষও রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পথে নেমেছিলেন। সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তারা বলেছিল, কলকাতা থেকে হিন্দু ছাত্ররা এসেছে। এসব ছাত্র পায়জামা পরে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা গেল, যে ৭৫ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একজনও হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিলেন না।

পূর্ববাংলার বেশিরভাগ মানুষের ভাষা বাংলা। যেকোনো বিবেচনায় বাংলাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা। তারপরওবাংলা ও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এদিকেমুসলিম লীগ সরকারের যুক্তি ছিল, উর্দু ইসলামিক ভাষা; কিন্তু এটা ছিল চরম প্রতারণা। উর্দু কোনো ইসলামিক ভাষা নয়। পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের কোনো অঞ্চলের ভাষাই উর্দু নয়। প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্তপ্রদেশ ও বেলুচিস্তানের নাগরিকেরা তাদের নিজস্ব ভাষা পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পশতু ও বালুচ ভাষায় কথা বলতেন। ইসলামের কথা বলে পূর্ববাংলার ধর্মভীরু মানুষদের ধোঁকা দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানসরকার; কিন্তু পারেনি।

‘উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’র প্রতিবাদ ও বঙ্গবন্ধু

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একধরনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তাঁর ন্যায়সঙ্গত কথা সবাই মেনে নিতেন। মুসলিম লীগ সরকার মনে করেছিল, জিন্নাহকে দিয়ে রাষ্ট্রভাষার পক্ষে বলাতে পারলে কেউ কথা বলবে না। শেষ ট্রাম্পকার্ড হিসেবে তাঁকেব্যবহার করতে চেয়েছিল তারা; কিন্তু পূর্বপাকিস্তানের মানুষ কী চায়, জনগণ কোন পথে- এ-সম্পর্কে তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহকে ব্যবহার করেও তারা ব্যর্থ হয়।

১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ জিন্নাহ ঢাকায় এলেন। মুসলিম লীগ চাইল, জিন্নাহ যেন বলেন, উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তখন ঘোড়ারদৌড় খেলা হতো। সেজন্য তখন এ-স্থানকে ঘোড়দৌড়ের মাঠ বলা হতো। ইংরেজি নাম হলো রেসকোর্স ময়দান। ২১শে মার্চ এই ময়দানে জিন্নাহর গণসংবর্ধনার আয়োজন হয়। সেদিনের বিশাল জনসভায় জিন্নাহ বললেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। বঙ্গবন্ধু প্রায় ৫০০ ছাত্র নিয়ে সেই সভায় ছিলেন। তাঁরf সবাই চিৎকার করে জানিয়ে দিলেন, ‘উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা মানি না।

তারপর ২৪শে মার্চ কার্জন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ভাষণদানের সময় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আবার সেই একই কথা ঘোষণা করলেন। এবারো হলের ছাত্ররা এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ‘না, না’ ধ্বনিতে চিৎকার করে উঠলেন। জিন্নাহর কণ্ঠ স্তিমিত হয়ে গেল। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে, এতো মানুষ তাঁর মুখের ওপর ‘না, না’ করবে। এসবই বঙ্গবন্ধুতাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন। জিন্নাহর সামনে ‘না, না’ বলার পর তিনি প্রায় পাঁচ মিনিট চুপ করে বসেছিলেন। জিন্নাহ যতদিন বেঁচে ছিলেন, আর কোনোদিন বলেননি, উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।

জিন্নাহ চলে গেলেন। তারপর ফজলুল হক হলের সামনেএক ছাত্রসভা হলো। সে-সভায় এক ছাত্র বললেন, ‘জিন্নাহ যা বলবেন, তা-ই আমাদের মানতে হবে। তিনি যখন উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা বলেছেন, তখন উর্দুই রাষ্ট্রভাষা হবে।’ সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ করে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, ‘কোনো নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাঁকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরুর দাবি মানতেইহবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। তাতে যা-ই হোক না কেন, আমরা প্রস্তুত আছি।’

বঙ্গবন্ধুর এ-বক্তৃতার পর ছাত্ররা তাঁকে সমর্থন করলেন। পূর্ববাংলার ছাত্র-যুবকরা একত্র হলেন। তাঁরা শোভাযাত্রা করলেন। সভা করলেন। ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হলো। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই দৃশ্যপট বদলে গেল। নিখিল পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রায় কোনো সমর্থকই রইল না। শুধু কয়েকজন নেতা রইলেন। তাঁরা মন্ত্রীদের বাড়ি যাওয়া-আসা করতেন। এছাড়া তাঁদের আর কোনো কাজ রইল না।

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু

১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ববাংলার ইতিহাসে আরো একটি ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও উদ্যোগে এদিন ‘পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সে-সময় এ-সংগঠনের ১০ দফা করণীয় ঠিক করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম দফা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ-সংগঠন রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনকরেছে। বিশেষ করে ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেতাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করেছেন।

১৯৪৮ সালের ভাষা-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে জেলে যেতে হয়। রাজনৈতিক কারণে এটিই ছিলব ঙ্গবন্ধুর প্রথম জেল।  এরপর পূর্ববাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বারবার তাঁকে বন্দি হতে হয়। এভাবে আসে ১৯৪৯ সাল। ওইবছরের ১৪ই  অক্টোবর ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে এক জনসভা হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করেন। সভাশেষে ভুখামিছিল বের করেন। এ-মিছিল থেকে মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।  এবার তিনি প্রায় দুই বছর পাঁচমাস কারাগারে ছিলেন। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তি পান; কিন্তু কারাগারে থেকেও তিনি নানাভাবে নেতাকর্মীদের ভাষা-আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ভাষাসংগ্রামী ও ছাত্রনেতা আব্দুস সামাদ আজাদ বঙ্গবন্ধুর ভাষা-আন্দোলনে নির্দেশনা প্রসঙ্গে লিখেছেন : ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এ বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবারও গ্রেফতার হন এবং সেই সময় তিনি একাধারে প্রায় আড়াই বছরকারাবরণ করেন। প্রতি ১৫ দিন অন্তর তাঁকে (বঙ্গবন্ধুর) আদালতে আনা হতো এবং সেই সুবাদে আমিসহ অনেকেইবিভিন্নভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতাম। ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজহাস পাতালে আনা হয়। আমি ও তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজসহ আমরা অনেকেই বিভিন্ন সময় গোপনে তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ করতামএবংভাষা-আন্দোলন সম্পর্কেপ্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতাম।’

২৬শে ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই বঙ্গবন্ধু দৈনিক আজাদে লিখলেন- ‘আপনারা সংঘবদ্ধ হোন। মুসলিম লীগের মুখোশ খুলে ফেলুন। এই মুসলিম লীগের অত্যাচারে মাওলানা ভাসানী, আবুল হাশেম ও অন্যা কর্মীরা আজ কারাগারে। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। বাঁচতে চাই। লেখাপড়া করতে চাই। ভাষা চাই।’ তিনি রাষ্ট্রভাষার ওপর গণভোট দাবি করে বলেন, ‘মুসলিম লীগ সরকার আরমর্নিং নিউজগোষ্ঠী ছাড়া প্রত্যেকেই বাংলাভাষা চায়।’ উর্দুর পক্ষে কথা বলার জন্য তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীরও কঠোর সমালোচনা করেন।

’৫২-র ভাষা-আন্দোলনের সময়টাতে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু চিরকুটের মাধ্যমে ছাত্রনেতাদের নির্দেশদিয়েছেন। পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণসম্পাদক খালেক নেওয়াজ খান, কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদসহ অনেক ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি তাঁদের আন্দোলনের নির্দেশনাদিতেন। ছাত্রনেতারা আন্দোলন সফল করে তুলেছেন। তিনি কারাগারে বা বাইরে যেখানেই থাকুন, বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনেতাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাছিলবলেই ২৬শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়ার পরও সরকার তাঁকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছিল। তাছাড়া বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু তো জাতীয়নেতা। তখন তিনিপূর্বপাকিস্তানেরপ্রধান বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম-সম্পাদক।

অলি আহাদ লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারি হইতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন। চিকিৎসার কারণে সরকার তাঁকে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজহাসপাতালেস্থানান্তরিত করেন। প্রহরী পুলিশের ইচ্ছাকৃত নির্লিপ্ততার সুযোগ গ্রহণ করিয়া আমরা তাঁহার সহিত হাসপাতালেই কয়েকদফা দেখা করি। তিনি ও নিরাপত্তাবন্দী মহিউদ্দিন আহমদ ১৬ই ফেব্রুয়ারি হইতে মুক্তির দাবিতে অনশন ধর্মঘট করিবেন, সেই কথা শেখসাহেবইআমাদিগকেজানাইয়াছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিবৃতি দেন।

হাসপাতাল থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য চিকিৎসা শেষ না হতেইবঙ্গবন্ধুকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। তখন তিনি ও মহিউদ্দীন আহমেদ চিঠি দিয়ে সরকারকে জানান, ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুক্তি না দিলে ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা অনশন ধর্মঘট শুরু করবেন।

‘ভাষাআন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ শিরোনামে গাজিউল হক লিখেছেন, ‘মুজিব তখন কারাগারে। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিছিল-ধর্মঘট হয়েছিল। মিছিল করে সারা ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করেছিল শত সহস্র ছাত্র-জনতা। মিছিলশেষে বেলতলায় জমা হয়েছে সবাই পরবর্তী ঘোষণার জন্য। শামসুলহকচৌধুরী, গোলামমওলা, আব্দুস সামাদ আজাদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু খবর পাঠিয়েছেন। তিনি সমর্থনজানিয়েছেনএকুশেরদেশব্যাপী হরতালের প্রতি। একটি বাড়তি উপদেশ-মিছিল করে সেদিন আইনসভা ঘেরাও করতে হবে, বাংলা ভাষার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আইন সভার সদস্যদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে। আরও একটি খবর পাঠিয়েছেন যে, তিনি এবং মহিউদ্দিন সাহেবরা জবন্দীদের মুক্তির দাবিতে অনশন করবেন। একুশে ফেব্রুয়ারি হরতাল হবে।’

আটচল্লিশেরভাষা-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুসরাসরি অংশগ্রহণকরেছেন। বায়ান্নরভাষা-আন্দোলনে কারাগার থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বায়ান্নর আন্দোলনে জেলে বসে আওয়ামী লীগের অনেকনেতারবিরুদ্ধেগিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিছাত্রলীগেরসদস্য ও সমর্থকদের ১৪৪ ধারাভঙ্গেরপক্ষেথাকতেনির্দেশদেনবঙ্গবন্ধু।

তিনিই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বাংলাভাষার পক্ষে মতপরিবর্তনে বাধ্য করেন। সে-সময় সোহরাওয়ার্দীর উপদেশে আওয়ামী লীগেরপ্রবীণ নেতারাআন্দোলন থেকে বিরত থাকলে ভাষা-আন্দোলনের সাফল্য অনেক কঠিন হয়ে যেত।

আইয়ুব খান বাংলায় রোমান হরফব্যবহারেরচক্রান্তকরেছিলেন। এইচ ক্রান্তের বিরুদ্ধে মুনীর চৌধুরীসহবিশিষ্টশিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরাযে-আন্দোলন গড়ে তোলেন, বঙ্গবন্ধু তার প্রতি প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে একাত্মতাঘোষণাকরেন। কোনো সন্দেহ নেই, ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেনবঙ্গবন্ধু।

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ২১শে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচিতেবঙ্গবন্ধুরমুক্তিরশর্তযুক্তথাকাপ্রমাণকরেযে, বায়ান্নরভাষা-আন্দোলনেতাঁরগুরুত্বপূর্ণভূমিকাছিল।

দেশভাগের যেমন সূচনা পর্ব থেকেই বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছেন, তেমনি পরবর্তীকালেআইনসভারসদস্য ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন।

স্বাধীনতার পরবঙ্গবন্ধু সংবিধানে বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বিধিবদ্ধকরেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় সর্বপ্রথম ভাষণ দেন। বাংলাকেআন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদায় উন্নীত করেন।

ভাষা-আন্দোলনের ফলে বঙ্গবন্ধুর মধ্যে অন্যরকমচেতনা সৃষ্টি হয়। এখান থেকে তাঁর বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রামের পথরচিতহয়। ভাষা-আন্দোলনের মাধ্যমেই রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি মহানায়কের ভূমিকায় অবর্তীণ হন।

সূত্র

১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবু ররহমান।

২. কারাগারের রোজনামচা, শেখ মুজিবুর রহমান।

৩. আমার দেখা আমার লেখা, গাজীউল হক।

৪. ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর, আরজুমান্দ আরা বানু।

৫. রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু : বিদ্বেষ-বন্দনা বনাম ঐতিহাসিক সত্য, ড. এম আবদুল আলীম।

৬. ‘রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, এমআর মাহবুব, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

৭. ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গাজীউলহক,  সারাবাংলা/ আইই।

৮. ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, বিশ্বজিৎ ঘোষ, কালের কণ্ঠ

৯. ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুরভূমিকা ও অবদান’, বাংলাদেশ জার্নাল।

১০. ‘মহান ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান’, আরকে চৌধুরী, ইনকিলাব।

১১. ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’, মো. মোকছেদআলী, কালের কণ্ঠ

১২. ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’, যায়যায়দিন। ১৩. উইকিপিডিয়া : বাংলা ভাষা আন্দোলন।