রাজা রামমোহন : আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের রায়ে

মুখ ‘বন্ধ’ নয়

বাংলা লোকভাষায় ‘রাম’ শব্দের অর্থ হলো এক। রাঢ় অঞ্চলে ধান মাপার কয়ালপ্রথায় গণনার শুরু হতো রাম শব্দ দিয়ে। রাঢ়ের শিশু ছড়ায় পাই – ‘রাম দুই সাড়ে তিন/ অমাবস্যা ঘোড়ার ডিম’। ইংরেজি   ÔfirstÕ

 শব্দ এসেছে জার্মান ভাষার শব্দ ÔfurstÕ থেকে। ম্যাক্স মুলার এই জার্মান এবং ইংরেজি শব্দ নিয়ে তুলনা করতে গিয়ে ‘রাজা’ শব্দকে অনুষঙ্গক্রমে এনেছেন। তিনি জানিয়েছেন কীভাবে তিনি আমাদের প্রকৃত –

The German name for prince is Furst, in English first, he who is, the first place in fight, the last in flight. Such a furst was Rammohan Roy, a true prince, a real Rajah|Õ

 আবার রাজকীয় উপাধি হলো রাজা, রায়ও তাঁদের পূর্বপুরুষের প্রাপ্ত উপাধি। এমন উপাধির বাঙালি মনীষা – ভারতীয় তথা বাঙালির যুক্তিনিষ্ঠ নতুন চিন্তা-ভাব-ভাবনার মনোরাজ্য মোহন-কারী রাজা হবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই বাঙালি মনীষীর নাম রাজা রামমোহন রায় (২২শে মে, ১৭৭২ – ২৭শে সেপ্টেম্বর, ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ), যিনি বাঙালির১ ভাষা-ভাবনার ইতিহাসে প্রায় দুশো বছর পূর্বেই নতুন নতুন দিশার সঞ্চার করেছিলেন।

রাজা রামমোহনের ভাষা-ভাবনার নতুন অভিমুখ নিয়ে কিছু বলার আগে একটি কৈফিয়ত দিয়ে রাখি। তাঁর জন্মের পর প্রায় আড়াইশো বছর অতিক্রান্ত, ইংরেজি ভাষায় ব্যাকরণ লেখা ও প্রকাশ (১৯২৬)-এর পর কমবেশি প্রায় দুশো বছর অতিক্রান্ত। কাজেই তাঁর এ-সংক্রান্ত চিন্তাচেতনার নেতিবাচক মূল্যায়ন সহজেই করা যায়, অন্তত আজকের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু এটাই সম্ভবত ঠিক কাজ হবে যদি সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি কেন ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ লিখলেন, কেবল শুকনো ব্যাকরণ বা Grammar-এর নীরস উপস্থাপন নয়, কোন কোন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তাতে উঁকি দিয়েছিল, এছাড়া আর কোথায় কোথায়
ভাষা-ভাবনার আধুনিক ইঙ্গিত তাতে রয়েছে এবং তাতে ভাষাগত ভাবনার কী কী অভিনবত্ব রয়েছে, তাঁর  সময়ে এইসব চিন্তাচেতনা কোথায় কোথায় আলাদা ছিল ইত্যাদি প্রশ্নের সদর্থক অনুসন্ধানই করা হয়। আর তাহলেই মনে হয়, তাঁর ভাষাতাত্ত্বিক সত্তার যথাযথ মূল্যায়ন হতে পারে।২  

সেকাল ও একাল : তাত্ত্বিক সমাপতন

আঠারো শতকের আস্সুম্পসাঁউ (১৭৪৩) এবং হ্যালহেডকে (১৭৭৮) বাদ দিলে রামমোহন রায়ের সমকালে যাঁরা ভাষাতত্ত্ব বা ব্যাকরণ চর্চা করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য হলেন উইলিয়াম কেরি (১৮০১, A Grammar of the Bengalee Language), হেরাসিম লেবেদফ (১৮০১, বাংলা ব্যাকরণ), গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য (১৮১৬, A Grammar in English and Bengalee ১৮১৬), রাজা রাধাকান্ত দেব (১৮২১, বর্ণমালা, ব্যাকরণ, ইতিহাস), জি সি হটন (১৮২৩, ব্যাকরণ) প্রমুখ। আমাদের মনে হয়, কেরির সংস্কৃত ভাষাপ্রভাবিত ব্যাকরণটি পড়েছিলেন বলেই রামমোহন আরেকটি ভাষাতত্ত্বীয় আদল খাড়া করতে পারঙ্গম হন। সেজন্যে সমকালীন লোকপ্রচলিত সর্বজনীন বাংলা ভাষার উদাহরণ দিয়ে সমান্তরাল একটি ব্যাকরণ-ধারা চালু করতে চেয়েছিলেন, পেরেও ছিলেন। সেজন্য গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর পাঁচটি সংস্করণসহ স্কুলপাঠ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশিত (১৮৪০) হয় তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পর। বাংলা ভাষার ব্যাকরণাদর্শে তিনি হ্যালহেড ও কেরিকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন, এ-কথাও অনস্বীকার্য। যদিও ১৮৫০-এ প্রকাশিত শ্যামাচরণ সরকারের ব্যাকরণ ছিল যুগের থেকে এগিয়ে, অন্তত আজকের দৃষ্টিতে। এতদসত্ত্বেও বলা যায়, বাংলা ভাষা-চর্চায় রামমোহনকে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কিছুটা অনুসরণ করেছিলেন চিন্তামণি গাঙ্গুলি, নকুলেশ্বর বিদ্যাভূষণ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। 

কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, এমন একটু-আধটু প্রভাব মহৎ মনীষা থেকে পাওয়াই যায়। তার মানে অনুসরণকারীদের মৌলিকতা ছিল না, এমন নয়। তাছাড়া রামমোহন যতটা ভাষার তত্ত্ব-বিজ্ঞান চর্চা (রামেন্দ্র, রবীন্দ্র প্রমুখ করেছিলেন) করেছিলেন তার থেকে বেশি ব্যাকরণ ও Grammar চর্চা করেছিলেন।৩ ব্যাকরণে ভাষার তত্ত্ব ও বিজ্ঞান কি বিগর্ভিত থাকে? হক প্রশ্ন। কথা হলো, একালের পরিপ্রেক্ষিত ধরলে ভাষাবিজ্ঞান ও ব্যাকরণনির্ভর চিন্তাভাবনার মধ্যে কোনো জল-অচল ভেদ নেই। বরং উভয় শাখা এখন সমান্তরালভাবে সচল থাকলেও নানা আলোচনায় অনেক ক্ষেত্রে সমাপতনও ঘটে গেছে, বিশেষ করে আব্রাম নোয়াম চমস্কি (১৯২৮-) আন্বয়িক গঠন সংক্রান্ত বই প্রকাশ (১৯৫৭) ও সঞ্জননী সংবর্তনী ব্যাকরণের ধ্যানধারণা (যাকে বর্তমানে T. G. Grammar বলা হয়ে থাকে) চালু হওয়ার পর থেকে। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ব্যাকরণ ও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের একীভূত পথচলা ভাষাবিজ্ঞানীমহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই বিষয়টি স্বীকার করে আমরা রামমোহন রায়ের ভাষাচিন্তাকে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণের প্রয়াস করবো, ভাষা সংক্রান্ত লেখালেখিকে ভাষাতত্ত্বের আদলে মূল্যায়নের চেষ্টা করবো। ইতিপূর্বে রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাজা রামমোহন রায়ের ইংরেজিতে লিখিত বাংলা ব্যাকরণ’ (শ্রাবণ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ, ভারতবর্ষ), সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘ব্যাকরণকার রামমোহন’, নির্মল দাশের ‘রামমোহনের বাংলা ব্যাকরণ’ ইত্যাদি অসাধারণ প্রবন্ধ লিখিত হয়ে গেছে। আর সেজন্যেই তাঁকে অন্য আদলে দেখার চেষ্টা।

ব্যাক-রণে ব্যা-করণে

ব্যাকরণ শাস্ত্রটা যে একটা কঠিন বিষয়, রামমোহন তা জানতেন। সেজন্যে তিনি শিশুদের মাথায় ব্যাকরণের বোঝা চাপাতে চাননি। প্রথমদিকে ভাষার ব্যাকরণ নিয়ে তাঁর ধ্যান-ধারণা ছিল নেতিবাচক। কারণ তিনি চাননি যে, ব্যাকরণের শুষ্ক তত্ত্ব যেন তরুণ-যুব শিক্ষার্থীদের মানসিক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়াক। সেজন্যে ১৮২৩ সালে সংস্কৃত কলেজ স্থাপন ও অনুদান মঞ্জুর হওয়ার পর তিনি তৎকালীন বড়লাটকে এক পত্রে লিখেছিলেন — ‘ÔThis seminary, can only be expected to load the mind of youth with grammatical niceties (কাঠিন্য) and metaphysical distinctions of little and no practical use.Õ  তবু যখন তাঁকে গৌড়ীয় ব্যাকরণ লিখতেই হয়েছে, তখন নিশ্চয় আধুনিক ভাষাতত্ত্বের আভাস-ইঙ্গিত দেবেন বলেই লেখনী ধারণ করেছিলেন, এমনটাই আমাদের বিশ^াস।

গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ ‘আক্ষেপ’, ‘চিত্তের বিক্ষেপ’ ইত্যাদি শব্দ সুলভ। শিশু-শিক্ষায় প্রথাগত ব্যাকরণের উপযোগিতা ততটা নেই বলেই হয়তো ফিরিঙ্গি তথা ইংরেজ ভদ্রলোকদের জন্য

ইংরেজি ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ লেখেন — Bengali Grammar in the English Language  (১৯২৬)। এই গ্রন্থের ভূমিকায় রামমোহন লিখেছেন – ইউরোপীয় gentlemen ও philanthropist-রা দেশীয় ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ধারণ করাতে ‘philanthropist’ স্বীকার করেছেন। লর্ড আমহার্স্টকে লিখিত এক পত্রে

(১১-১২-১৮২৩) তিনি লিখেছিলেন, `The present Rulers of India, … to govern a people whose language, literature, manners, customs, and ideas are almost entirely new and strange to them, cannot easily become so intimately acquainted with their real circumstances, as the natives of the country are themselves’

সেজন্যেই ইংরেজি ভাষায় বাংলা গ্রামার লেখার প্রয়াস। তাছাড়া তিনি ‘স্কুলবুক সোসাইটির অভিপ্রায়ে’ ‘গৌড়ীয় ভাষা ব্যাকরণ তদ্ভাষায় করিতে প্রবৃত্ত হয়েন’ (ভূমিকা, গৌড়ীয় ব্যাকরণ)। বস্তুত রাঢ় পশ্চিমবঙ্গে একটি কথা বলা হয়, ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’। স্কুল বুক সোসাইটির কর্ণধার রাজা রাধাকান্ত দেবের অনুরোধ ফেলতে পারেননি বলেই হয়তো তাঁকে

শিক্ষার্থীপাঠ্য গৌড়ীয় ব্যাকরণ লিখতে (এই ব্যাকরণকে অনেকে তাঁরই পূর্বোল্লিখিত গ্রামারের বঙ্গানুবাদ বলে মনে করে থাকেন) হয়েছিল গয়ংগচ্ছ করে, তাও আবার শেষ বয়সে; তাছাড়া ব্যস্ততা ছিল, ছিল ‘সময়ের অল্পতা’, ফলে এটি ‘পুনর্দৃষ্টিরও সাবকাশ হয় নাই’।

আজকের স্বতন্ত্র আভাসে

মুশকিল হলো, রামমোহনের লেখালেখি আজকের পাঠককে একটু ধৈর্য ধরে পড়তে হয়, নইলে বোধের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা থাকা অসম্ভব নয়। কিন্তু একটু সতর্ক হয়ে, বার দুই-তিনেক পাঠ করলে তা সহজবোধ্য হয়ে যায়। তবে বাংলা গদ্য বিকাশের

প্রাথমিক পর্বেই একাধিক ভাষা নিয়ে যাঁকে ভাবতে হয়েছিল, লিখতে হয়েছিল এবং একই সঙ্গে পত্রপত্রিকা সম্পাদনা করতে হয়েছিল, তাঁর পক্ষে কেবল মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে পড়ে থাকা চলেনি। সেজন্য শুব্ধ ব্যাকরণ চর্চা নয়, বরং ভাষার ক্ষেত্রেও পরিবারের বিপরীতে গিয়েও কীভাবে একাধিক ভাষা৪ তিনি রপ্ত করলেন – সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, হিন্দি, উর্দু, হিব্রু, গ্রিক, ল্যাটিন, ইংরেজি, ফরাসি৫  ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি বিবর্জিত হয়েও ভাষাগত তুলনার অবস্থান তৈরি করলেন, সে-বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।

অনেকের অভিযোগ এই যে, সমকালে অনেকে লেখ্য বাংলা ভাষার ‘রীতিজ্ঞান’ ঠিকঠাক বুঝতে পারলেও রামমোহন অনেক ক্ষেত্রে তা পারেননি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের কথা হলো এই, যে-মনীষাকে নানা বৃহৎ সমাজ-সংস্কারের জটিল আবর্তে চিন্তাগ্রস্ত থাকতে হয়েছিল, সামাজিক নানা সংস্কারের বিষয়, একাধিক বিষয় নিয়ে লিখতে হয়েছিল, তাঁকে ভাষাবিজ্ঞান চর্চা করতে হয়েছিল তুলনামূলক ভিত্তি বিস্তৃত
চিনে-জেনে৬। তাঁর কি কেবল মাতৃভাষা ধরে থাকাটাই ছিল লক্ষ্য? উত্তর মনে হয়, না।

তবে মাতৃভাষা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাঁর যে গুরুত্বহীনতা ছিল, এমনও নয়। অনেক ক্ষেত্রে মাতৃভাষার সঙ্গে তিনি অন্য ভাষার অবস্থান তুলনা করেছেন। তবে তুলনা যতটা না করেছেন তার থেকে বেশি করেছেন সমন্বয়। সেজন্যে তাঁর ব্যাকরণ দুটিতে কখনো সংস্কৃত ব্যাকরণের পারিভাষিক শব্দ, কখনো ইংরেজি গ্রামারের পদপ্রকরণ, কখনো গ্রিক গ্রামারের ঈধংব-এর ব্যুৎপত্তি ইত্যাদি গ্রহণ করেছেন, অনেক সময় গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ সাধু ভাষার ফাঁক-ফোকরে মৌখিক চলতির দৃষ্টান্তগুলি উঁকি দিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে সূত্রায়নে মৌলিকতাও লক্ষ করা গেছে। ‘খাঁটি বাংলা ভাষার বিশেষণ পদগুলি প্রায়ই হলন্ত নহে, এ-কথা রামমোহন রায় তাঁহার বাংলা ব্যাকরণে প্রথম নির্দেশ করিয়া গিয়েছেন’ (রবীন্দ্রনাথ, ‘বাংলা ব্যাকরণে তির্যকরূপ’, বাংলা শব্দতত্ত্ব)। বর্তমানে প্রবাল দাশগুপ্ত প্রমুখ ভাষাতাত্ত্বিক ধেয়তত্ত্ব অনুসারে চারটি বাংলা কারকের কথা স্বীকার করেন, অনেককাল আগেই রামমোহন যা করেছিলেন।

ভাষা : কথন, লিখন ও প্রায়-ভাষা সংকেতে

ব্যাকরণ দুটিতে রামমোহন যে ধরনের আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের দু-একটি পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করেছেন তা সমকালীন

ব্যাকরণ-আলোচকদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। যেমন একটি শব্দ হলো ‘সংকেত’। ভাষা আসলে সংকেত। যখন তিনি এই চিহ্ন বা সংকেতকে গ্রিক বা ইংরেজি বৈয়াকরণদের কাছ থেকে পাচ্ছেন তখনো চার্লস স্যান্ডার্স পার্স (১৮৩৯-১৯১৪) বা ফার্ডিনান্ড সসুর (১৮৫৭-১৯১৩)-এর আবির্ভাব হয়নি, তখনও  চিহ্নবিজ্ঞান (semiotics) প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। তাঁর বিবেচনায় স্বাভাবিক (natural) ও প্রথানুসারী (conventional) সংকেতের কথা উল্লিখিত হয়েছে। প্রথানুসারী চিহ্নের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে কথ্যভাষার ধ্বনিসংকেত ও লেখ্যভাষার লিপি বা মুদ্রিত ছাপ (তাঁর ভাষায় ÔcharacterÕ।

বক্তার মাধ্যমে চিহ্ন যে signifier ও signified-এর দ্বিবিভাজনকে স্বীকার করে তা কেবল সসুর নয়, রামমোহনও বুঝেছিলেন। সেজন্য আভিধানিক অর্থসহ বিবক্ষিত বা অভিপ্রেত অর্থকেও তিনি উল্লেখ করেছেন, যা এই প্রবন্ধের শেষে আলোচিত হয়েছে।  

বাংলা ভাষাচিন্তায় মৌলিকতা অর্জন ছিল রামমোহনের অভিপ্রেত। যেজন্য কথ্যভাষা তথা মৌখিক বাক্ধ্বনিকে তিনি তাঁর ইংরেজি ভাষার বাংলা ব্যাকরণের শুরুতে গুরুত্ব দিয়েছেন। মুখের কথাকে ধরেছেন oral sound বা ‘বক্ত্রধ্বনি’। বক্ত্র = মুখ, আনন, বদন। আর ধ্বনি  হলো আওয়াজ। বাক্যন্ত্র মুখ তথা ‘কণ্ঠ তালু ওষ্ঠ ইত্যাদির অভিঘাতে’ সৃষ্ট শব্দ বা আওয়াজই ভাষ্, আর ভাষ্ থেকে ভাষার সৃষ্টি ‘Man expresses his thoughts principally by means of oral sounds।’ এই ভাষা সচল, বিবর্তনশীল, জীবন্ত। সেজন্য তিনি তৎকালীন মৌখিক প্রাদেশিক, এমনকি কেন্দ্রীয় উপভাষা তথা মান্য চলতি ভাষা থেকে শব্দাদি গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ উদাহরণ দিতে শ্রম স্বীকার করেছেন। শুধু তাই নয়, সমকালে কেরি প্রমুখ তাঁদের ব্যাকরণে সংস্কৃত ব্যাকরণের আদল স্বীকার করলেও রামমোহন তৎকালীন লেখ্যসহ কথ্য ‘সুগম’ বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত রূপটি তুলে ধরতে ছিলেন বদ্ধপরিকর। অনেক ক্ষেত্রে ‘গৃহব্যাপার নির্ব্বাহের যোগ্য’, ‘সামান্য আলাপের ভাষার ন্যায় সুগম’ (অনুষ্ঠান, বেদান্ত গ্রন্থ) ভাষা তাঁর ব্যাকরণে তথা গদ্যে সুলভ। বাংলা ভাষার দ্বিবাচনিক (diaglossic) ভেদ তাঁর জানা ছিল বলেই হয়তো কখনো সাধু (বিবরণ দানের ক্ষেত্রে), তো কখনো মুখের কথ্যভাষা (নমুনা প্রদানে) প্রয়োগ করেছেন। যেহেতু তিনি এই সত্যটি সহজে বুঝেছিলেন যে, বাংলা ভাষা আর যাই হোক সংস্কৃত বা ইংরেজি নয়, বাংলা ভাষার একটি বিশেষ ধরনের ব্যাকরণ হওয়া বিধেয়। সেজন্য উভয় রীতির শব্দ দিয়ে তাঁর গ্রামার বা ব্যাকরণ লেখার প্রয়াস (একে কেউ কেউ মধ্যপন্থা বলে ধরেছেন)। 

এখন Net-speak-এর যুগ। হয় লেখা আর বলার সমাপতন লক্ষণীয়, নয় সমান্তরাল ভেদরহিত। সেজন্য আমরা চ্যাটে, মেসেজে আমাদের বক্তব্য লিখে বলি। তিনিও ‘কবিতাকারের সহিত বিচার’-এ লিখেছেন – ‘কহি নাই ও লিখি নাই’। জনসাধারণ অনেক সময় লেখাতেও ‘বলেন’ ‘অনায়াসে বোধগম্য’ (ভট্টাচার্য্যরে সহিত বিচার, ভূমিকা) ভাষায়। তিনিও অনেক সময় লেখাকে বলা শামিল হিসেবে গণ্য করেছেন, যেমনটা এখন চ্যাটে-মেসেঞ্জারে জ্ঞাপনার্থে করা হয়ে থাকে।    

এই জ্ঞাপন ধ্বনি বা লিপিরই নয়, অতিভাষা বা প্রায়ভাষারও (paralanguage)। হাসি, কান্নার আওয়াজসহ Ôgesture of the body or by the other symbols or marksÕ ইত্যাদি দিয়েও মূর্ত হতে পারে মনের ভাব। অনেককাল পরে রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করেছেন এই অঙ্গভাষার (body language) সংকেতকে – ‘ভাবে ভঙ্গিতে ভাষাহীন আওয়াজে, চাহনিতে, হাসিতে, চোখের জলে, অনুভূতির অনেকখানি বোঝানো যেতে পারে’ (বাংলা ভাষা-পরিচয়)। বর্তমানে এই শাখাটির নাম হয়েছে ভঙ্গিবিজ্ঞান (kinesics)। প্রায়-ভাষার বিষয়টি অবশ্য এক একটি সমাজ অনুসারে নির্দিষ্ট আদলে সৃষ্ট।

ভাষা : সমাজ ও পরিকল্পনায়

এবার তাই আলোচ্য – সমাজভাষাবিজ্ঞানের কয়েকটি ক্ষেত্র, যা রামমোহনের আলোচনায় আভাসিত হয়েছে। গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর প্রথম অধ্যায়, প্রথম প্রকরণে লক্ষণীয় ‘সকল প্রাণির মধ্যে মনুষ্যের এক বিশেষ স্বভাব সিদ্ধ ধর্ম্ম হয়, যে অনেকে পরস্পর সাপেক্ষ হইয়া একত্র বাস করেন। … এক নগরে অথবা এক গৃহে বাস করিতে হইলে … পরস্পরের অভিপ্রায়কে জানিবার ও জানাইবার আবশ্যক হয়।’ এখানে তিনি সমাজবদ্ধ প্রাণী হিসেবে মানুষের ভাষামাধ্যমের প্রয়োজনীয়তাকে বুঝিয়েছেন। যদিও সমাজভাষা ও এর ভাষাবিজ্ঞান এ. কে. রামানুজন ও উইলিয়াম ব্রাইটের সৌজন্যে তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে চালু হয় ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে।

তা হোক। কিন্তু রামমোহন অনেক আগেই ভাষাকে সমাজের সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে চেয়েছিলেন (তা উপর্যুক্ত অনুচ্ছেদে বাঁকা অক্ষরে চিহ্নিত হয়েছে) এবং বুঝতে পেরেছিলেন ভাষা মিশ্রণের অনিবার্য আধুনিক ভবিতব্য। সেজন্য বর্তমান শিক্ষিত বাঙালির কথায় বিশুদ্ধ বাংলা ভাষা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাঁর লেখালেখিতে কখনো ইংরেজিতে বাংলা মিশ্রণ, কিংবা বাংলা ভাষাতে সংস্কৃত শব্দ মিশ্রণ লক্ষ করা গেছে। বেদান্ত গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন – ‘সংস্কৃত শব্দ সকল স্থানে দিয়া গিয়াছে এহার দোষ যাহারা ভাষা এবং সংস্কৃত জানেন তাঁহারা লইবেন না কারণ বিচারযোগ্য বাক্য বিনা সংস্কৃত শব্দের দ্বারা কেবল স্বদেশীয় ভাষাতে বিবরণ করা যায় না।’ আরবি ভাষায় ভূমিকা ও পরবর্তী অংশ ফারসি ভাষায় লেখা, এমন বইও তাঁর রয়েছে তুহ্ফত-উল-মওয়াহিদ্দিন। যদিও তাঁর মতো ভাষীর মুখের ভাষা সে-যুগে অবিমিশ্র না মিশ্র ছিল তা জানার উপায় নেই। তবে অনুমান এই যে, তাঁর মতো বহু ভাষাজ্ঞানীর মৌখিক ভাষা মিশ্র হওয়াই স্বাভাবিক। তবে গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ সাধু ও চলতির দ্বিবাচনিকতা কালেভদ্রে উঁকি দিয়েছে।

আবার সমাজের ভাষার সঙ্গে জাতপাত জড়িয়ে যায়, অন্তত একালে অনেকে জাতপাতের ভাষা, ভাষার জাতপাত নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। কিন্তু রামমোহনের মতে, ভাষার ক্ষেত্রে শূদ্রেতর ও শূদ্রায়িত ভেদ জল-অচলভাবে করা যায় না। কেননা একজন নিচুতলার ভাষী তথাকথিত অভিজাত ভাষা শিখতে পারে। ভাষার এই আপওয়ার্ড মোবিলিটি অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায়। সেজন্য তিনি ঈশোপনিষৎ-এর ‘অনুষ্ঠান’-এ ‘অন্ত্যজ জাতি’র উল্লেখ করছেন এবং বেদান্ত গ্রন্থের ‘অনুষ্ঠান’ অংশে লিখেছেন – ‘শূদ্রেরা এ ভাষা সুনিলে পাতক হয়, তাহাদিগ্যে জিজ্ঞাসা কর্ত্তব্য জে যখন শ্রুতি … গীতা পুরাণ ইত্যাদি শাস্ত্র ছাত্রকে পাঠদান করান তখন ভাষাতে তাহার বিবরণ করিয়া থাকেন কি না আর ছাত্রেরা সেই বিবরণ শুনেন কি না … মহাভারত … তাহার শ্লোক সকল শূদ্রের নিকট পাঠ করেন কি না এবং তাহার অর্থ শূদ্রকে বুঝান কি না … আর শ্রাদ্ধাদিতে শূদ্রের নিকটে ঐ সকল উচ্চারণ করেন কি না … তবে বেদান্তের এ অর্থের বিবরণ ভাষাতে করিবাতে দোষের উল্লেক কিরূপে করিতে পারেণ!’

রামমোহনের মতে, ভাষা ব্যবহারে জাতপাতের ভেদ নেই, যদিও মর্যাদা-অমর্যাদার ভেদ রয়েছে। অন্তত মানুষের সমাজের স্তর, সর্বনাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। তাঁর গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ তুই-তুমি-আপনি সর্বনাম আলোচিত হয়েছে ‘প্রতিসংজ্ঞা’ ও ‘ক্রিয়া’র আলোচনায়। তাঁর এ-ব্যাপারে বক্তব্য হলো, ‘কনিষ্ঠ ব্যক্তির প্রতি’ বা ‘সমান ব্যক্তির প্রতিও পরস্পর অধিক সখ্য থাকিলে’ (পরিচ্ছেদ-১২) তুমি সর্বনামের প্রয়োগ হয়ে থাকে। আর ‘অতিক্ষুদ্র ভৃত্যের প্রতি অথবা অতিক্ষুদ্র জাতীয়ের প্রতি’ (পরিচ্ছেদ-১২) তুই শব্দ প্রয়োগ হয়ে থাকে। ইনি, উনি, উঁনি ইত্যাদি সর্বনামের প্রয়োগ-ব্যাখ্যাও তিনি করেছেন। 

বলা বাহুল্য, সমাজের একটা প্রথানুসারী সামাজিক প্রণালি থাকে, থাকে শৃঙ্খলিত বাগ্-ধ্বনি, যা স্বীকার করে বক্তা ও শ্রোতা মিথস্ক্রিয়া করে থাকে। আবার বক্তা ও শ্রোতা ‘উভয়ের মর্য্যাদানুসারে নানা প্রকার বাক্যপ্রবন্ধ হয়’। যেমন ‘এ ভৃত্য কিম্বা এ গোলাম হাজির আছে’, ‘হুজুর হইতে কি আজ্ঞা হয়?’ (পরিচ্ছেদ-১২)। সর্বনাম বা প্রতিসংজ্ঞা আলোচনার ক্ষেত্রেও এমন মর্যাদা-অমর্যাদার ব্যাপার জড়িত।

তৎকালীন মুখের চলতি ভাষায় লিঙ্গ পরিবর্তন দেখাতে গিয়ে রামমোহন নাপিত ‘নাপ্তিনী’ লেখেন,
বাগ-বাগিনীও লেখেন। সমাসের আলোচনায় যেসব সমস্যমান পদের উদাহরণ দিয়েছেন সেগুলি একেবারে কেন্দ্রীয় চলতি তথা মুখের কথা। যেমন হাড়ভাঙা, হাড়কাটা, গাছপাকা ইত্যাদি। এছাড়া তালপুকুরে, কাণতুলুসে, মুখচোরা, ঘরপাগলা, মারামারি, দৌড়াদৌড়ি, হাতাহাতি, লাঠালাঠি ইত্যাদি (বর্তমানে যেগুলি একই ক্রিয়াদ্যতক সেগুলিকে ব্যতিহার বহুব্রীহি ধরা হয়)। অনুকার-বিকারযুক্ত শব্দও রয়েছে তাঁর ব্যাকরণে : জলটল, কাপড়চোপড় ইত্যাদি।

কেন্দ্রীয় আদর্শ চলিত বাদ দিয়েও বলা যায়, তিনি রাঢ় তথা বীরভূম, তৎকালীন বর্ধমান জেলা, মুর্শিদাবাদ জেলার তৎকালের আঞ্চলিক ভাষা জানতেন, যেহেতু তিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের অধীনে কিছুকাল চাকরি করেন। সেখান থেকে আরবি-ফারসি মিশ্রিত বইও প্রকাশিত হয়। এমনও হতে পারে যে, সে-সময়ে হুগলি বর্ধমানের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে মুর্শিদাবাদ-বীরভূমের  আঞ্চলিক ভাষার সেরকম তফাৎ ছিল না। তাছাড়া অনেক এলাকায় রামমোহনকে ভ্রমণও করতে হয়েছিল। ফলে আঞ্চলিক শব্দ বা রূপগুলি সম্পর্কে তাঁর পরিচয় হয়েছিল স্বাভাবিক অভিজ্ঞতায়। যেমনটা বিদ্যাসাগরের শব্দ-সংগ্রহ-এ দেখা যায়।

বদকথা (slang) ব্যবহার সমাজভাষার একটি ক্ষেত্র। রামমোহন রুচির মুখ রক্ষা করতে কলম ফসকানোকে প্রশ্রয় দেননি। সেজন্য কখনো বাজে-কথা লেখায় আনেননি (রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বাজে কথা চলতি বাংলায় লিখতে পারেননি)। পথ্যপ্রদান-এ ‘দুর্ব্বাক্য’, কবিতাকারের সহিত বিচার-এ ‘গালি’, ‘স্ফূটকটু শব্দ’, গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ ‘ও লো মাগি’ ইত্যাদি উল্লেখ করলেও ‘অসাধু ভাষা এবং দুর্ব্বাক্য কথন সর্ব্বথা অযুক্ত হয়’ (ভট্টাচার্য্যরে সহিত বিচার)। বিদ্যাসাগরও ‘মাগি’ শব্দ প্রভাবতী সম্ভাষণে প্রয়োগ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ়ের গ্রামাঞ্চলে আজও মেয়েদের বা স্ত্রীকে ‘মাগি’ বলা হয়ে থাকে (এই অঞ্চলে ‘মাগ্ভাতার’, ‘মাগ্ভেড়ুয়া’, ‘মাগের আঁচল-ধরা’, ‘মাগ না ছেল্যা/ ঢেঁকি না কুল্যা’ ইত্যাদি শব্দ, পদ্গুচ্ছ, প্রবচন ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে)। কাজেই, এই শব্দটি এতটা বর্জনীয় শব্দ নয়, তখনো ছিল না।  

ভাষা-পরিকল্পনাকারী হিসেবে রামমোহন গণ্য হতেই পারেন। তাঁর সমকালে মর্যাদাবান ভাষাগুলিকে মূল্য দিয়ে ফারসি ভাষা পর্যন্ত শেখেন। ইংরেজি তো শাসকের ভাষা ছিল তখন, কাজেই মূল্য না দিলে সমস্যা হতো – এখন যেমন আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে মর্যাদা দিতে হয়। ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে সংস্কৃত, গ্রিক, ল্যাটিন, হিব্রু ইত্যাদির চর্চা করেছিলেন। আর মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ছিল তাঁর ভালোবাসার ভাষা, যার জন্য বাঙালি মনীষাদের মধ্যে তিনিই প্রথম আঙ্গিক পরিকল্পনা করলেন, লিখলেন ব্যাকরণ ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায়। 

রামমোহন জানতেন এবং মানতেন ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হলো বৌদ্ধবাদের সহনশীল সংস্কৃতি। সেজন্য তাঁর মধ্যে একদিকে যেমন ছিল একাধিক সংস্কৃতির শান্তিপূর্ণ মনোভাব, তেমনি ছিল সহ-অবস্থানের ভাষাগত সহনশীলতা, যা দুই ভাষার গ্রামার-ব্যাকরণেও কিছু লক্ষণীয়, এমনকি অন্যান্য ভাষাচর্চাতেও।

বানান, পরিভাষা ইত্যাদি মাতৃভাষার আঙ্গিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন স্মরণীয় বৈয়াকরণ। কারণ প্রাণি, বাঙ্গালি ইত্যাদি বানান সে-যুগে লিখতে পেরেছিলেন। আর নতুন নতুন পরিভাষা নির্মাণে ছিলেন যথেষ্ট সচেতন। যেমন – অকর্ম্মক – intransitive অক্ষর – character, অন্বয় – syntax, ব্যঞ্জন/হল্ – consonants, বক্ত্রধ্বনি – oral sounds, সকর্ম্মক – transitive, স্বর – vowels ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, তখন পরিভাষা প্রণয়নের কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ছিল না।

রূপান্তরে সর্জন

সঞ্জননী ধ্বনিতত্ত্ব ধরে বলি, সংবর্তনী সঞ্জননী ব্যাকরণের বীজ রামমোহনের বাংলা ব্যাকরণে আমরা লক্ষ করতে পারি। নোয়াম চমস্কি পাণিনিকে সংবর্তনী ব্যাকরণের বিগর্ভনকারী হিসেবে ধরতে চেয়েছেন। আর রামমোহন অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের ধারণা গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ স্বীকার করেছেন। ফলে তাতে অনেক ক্ষেত্রেই সঞ্জননীর ধ্যান-ধারণা নিহিত থেকে গেছে। অন্তত বাক্য বা অন্বয়ের সংজ্ঞা ও উদাহরণ প্রদানে। তাঁর প্রদত্ত বাক্যের সংজ্ঞা লক্ষ করলে অন্বয়ের ধারণা যে তাতে নিহিত আছে তা বোঝা যায় – ‘পদ সকল পরস্পর অন্বিত হইয়া অভিপ্রেত অর্থকে যখন কহে, তখন সেই সমুদায়কে বাক্য কহি।’ আসলে তিনি যতটা ব্যাকরণগত বাক্যের আলোচনা করেছেন তার থেকে বেশি করেছেন গ্রহণযোগ্য (acceptable) অন্বয়ের ব্যাখ্যা। গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর প্রথম অধ্যায়ের প্রথম প্রকরণের পাদটীকায় লিখেছেন – ‘অন্য শব্দ উদ্বোধক হইলে কখন সম্পূর্ণ বাক্যের অধ্যাহার হয়। অধ্যাহার = উহ্য বাক্য পূরণ, যাকে বর্তমানে বলা হয়ে থাকে অধোগঠন (deep structure/ D-str..) ও অধিগঠন (surface structure/ S-str.)। তাঁর প্রদত্ত উদাহরণ নেওয়া যাক – ‘আহার করিয়াছ?’ এর উত্তরে বলে থাকি ‘হ্যাঁ’ (তাঁর নিহিত বিন্যাসার্থ – ‘আহার করিয়াছি’, এটি অধোগঠন; কিন্তু অধিগঠনে কেবল ‘হ্যাঁ’ প্রযুক্ত হয়ে থাকে), ‘যাও’ (অধিগঠন), অধোগঠন – ‘তুমি যাও’; অধিগঠন ‘আমি তো যাই’, অধোগঠন ‘আমি যাই যদিও কার্য্যসিদ্ধির নিশ্চয় নাই’; অধিগঠন ‘আমি তো করিব’, অধোগঠনে ‘আমি অবশ্যই করিব অন্যে করে আর না করে’; অধিগঠন ‘আমিও যাইব’, অধোগঠনে ‘তুমি যাইতেছ, আমিও যাইব’, অধিগঠন ‘আমাকেও তুচ্ছ করিলেক’, অধোগঠনে ‘সে পূর্ব্বে অন্য সকলকে তুচ্ছ করিয়াছিল, এখন আমাকেও তুচ্ছ করিলেক’ ইত্যাদি।         

গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর ‘ক্রিয়ার প্রকার’ থেকে ‘যাওন ক্রিয়া’ পর্যন্ত যে উদাহরণ সহযোগে সমাপিকা ক্রিয়ার ব্যাখ্যা তা আসলে সঞ্জননী ব্যাকরণের ভাব, কাল, পুরুষ অনুসারে উক্ত ক্রিয়ার যে রূপবৈচিত্র্য হয়ে থাকে তার প্রাথমিক স্তরের ব্যাখ্যা হিসেবে গণ্য করা চলে। যদিও একালের পারিভাষিক শব্দগুলির উপস্থিতি নেই, অথচ ভিত্তি আধুনিক ব্যাকরণের। যেমন –

কাল                   পুরুষ সমাপিকা ক্রিয়া    [বিভক্তি]

সাধারণ অতীত   ‘আমি              মারিলাম’             [ মার-ই-ল-আম]

পুরাঘটিত বর্তমান           ‘আমি              মারিয়াছি’             [ মার-ই-য়া-ছ-ই]

সাধারণ ভবিষ্যৎ              ‘আমি মারিব’                 [মার-ই-ব] 

এক্ষেত্রে কাল (-ল, -ছ, -ব ইত্যাদি কাল বিভক্তি), পুরুষ (-ই পুরুষ বিভক্তি), ভাব ইত্যাদি ক্রিয়াশীল থেকে স্বতন্ত্র সমাপিকা ক্রিয়ার রূপ গঠিত হয়েছে।

ধ্বনি৭ তথা বাগ্ধ্বনিও সংবর্তিত হয় সঞ্জননী ধ্বনিতত্ত্ব অনুসারে। প্রতিবেশ বা অনুষঙ্গ অনুসারে প্রণব বা স্বনিমের বিচ্যুতি ঘটে স্বাভাবিকভাবে। শব্দে প্রযুক্ত হলে ধ্বনির প্রকৃত রূপ বদলে যায়। এই স্বনিম উচ্চারণের চ্যুতির ক্ষেত্রে দুটি স্তর অন্তর্লীন (underlying) স্তর ও অধি (surface) স্তর। বলা বাহুল্য যে, একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেশে এক একটি ধ্বনির স্বলক্ষণ বদলে যায়। রামমোহনের গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর প্রথম অধ্যায়ের ৩ প্রকরণের ‘নিয়মের অতিক্রম’ অংশে এমন উদাহরণ তিনি দিয়েছেন। যেমন ঞ> ন : চঞ্চল, ঝঞ্ঝা, পিঞ্জর, বাঞ্ছা; ম> চন্দ্রবিন্দু (নাসিক্যীভবন)৮; য > জ : যমুনা, ন্যায্য, ধৈর্য্য, আর য-ফলা > সংশ্লিষ্ট ব্যঞ্জনদ্বিত্ব; স > ছ : মোছলমান; ণ, ন > ন (একীভবন, যাকে উনি বলেছেন ‘সমান উচ্চারণ’) এবং তিন স, শ, ষ > তালব্য-শ, দন্ত্য-স। সবক্ষেত্রে উদাহরণ নিষ্প্রয়োজন, বরং আগ্রহী পাঠক উপর্যুক্ত অংশটি দেখে নিতে পারেন। একালে এই ধ্বনি সংবর্তনকে সংযোজন, বিয়োজন, বিকল্পন, বিপর্যাস ইত্যাদি প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। 

নামৈব কেবলম

এবার নাম (onomastic)-তত্ত্বে আসি। ব্যক্তি, স্থান, তথা কোনো বস্তুকে বিশেষ বিশেষ নাম দিয়ে আমরা চিহ্নিত করে থাকি। কাজেই, নামের মূল্য অসীম। রামমোহন এই মূল নামের সঙ্গে ‘রাজা’ ও পদবি ‘রায়’ তাঁর প্রাপ্ত আখ্যা বা পদবি। সেজন্য মূল নামের প্রথম অংশ ‘রাম’-এর প্রতি আসক্তি ও আকর্ষণ বেশি। এর বেশকিছু ক্ষেত্র আমরা নমুনা সহযোগে তাঁর গৌড়ীয় ব্যাকরণ থেকে দেখাতে পারি। যেমন রামকমল, রামচন্দ্র, রামচরণ, রামভদ্র, রামহরি প্রভৃতি। ইংরেজি ভাষায় লেখা বাংলা ব্যাকরণেও ‘রাম’, ‘রামা’, ‘রামদাস’ ইত্যাদি নামের উল্লেখ বিদ্যমান। গ্রামার-এ অবশ্য ঔড়যহ, জরপযধৎফ, আর ব্যাকরণে শ্যাম, হরি, হরিদাস ইত্যাদিও লব্ধ। যাই হোক, তিনি ব্যক্তিনামের কতগুলি সূত্রায়ন করেছেন গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ। যেমন যেসব হলো নাম-শব্দ এক প্রযত্নে উচ্চারিত হয় না তার ‘অন্তে একার আইসে’, যেমন মাণিক-মাণিকে (মান্কে), গোপাল-গোপালে (গোপ্লে)। কিন্তু যেসব শব্দ অন্য শব্দের সঙ্গে মিলিত হয় এবং সেই শব্দের শেষ অক্ষর দীর্ঘ স্বরওয়ালা না হলে সেই শব্দ এক প্রযত্নে উচ্চারিত শব্দের মতো রূপ পেয়ে থাকে (গৌড়ীয় ব্যাকরণ, প্রকরণ ৪) যেমন রামধন, রামধনা (রাম্ধনা)। যেসব নাম-শব্দের শেষে ই, ঈ থাকে সেগুলির ক্ষেত্রে ‘একার হয়’। হরি – হরে, কাশী – কাশে/কেশে। আ-কার বা উ-কারওয়ালা শব্দ > ও-কার হয় – রাখা – রেখো, শম্ভু – শম্ভো। কিছু আবার অনিয়মে পরিবর্তিত হয় স্বরূপ – স্বরূপো, গণেশ – গণশা। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না – বামা, শ্যামা। পদবি ছাড়া নাম মূল নামকে কোনো না কোনোভাবে ‘ভ্যাস্লানো’ হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার পদবিহীন নাম-বিচ্যুতি গালিগালাজের সমগোত্রীয় হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।         

শুধু তাই নয়, স্থান-নামের ক্ষেত্রও অনেক সময় সুলভ। যেমন বর্দ্ধমান – বর্দ্ধমানে (যদিও বর্ধমেনে, বদ্দমেনে-ও হয়)সহ ঢাকাই, পাটনাই, নদিয়াই, ভাগলপুরী বা ভাগলপুরে, গাজীপুরে (কাপড়) ইত্যাদি উদাহৃত হয়েছে তাঁর গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ। এইভাবে স্থানিক ব্যক্তি বা বস্তু বোঝাতে স্থান+শব্দাংশ তথা সংবর্তিত স্থানিক শব্দ বাঙালি সমাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, প্রসঙ্গটি গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর তৃতীয় অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে।

সাধারণার্থাতিরেক

এটি যেমন অর্থের সঙ্গে তেমনি আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গ অর্থতত্ত্ব (semantics)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। রামমোহনের সমকালে বিচিত্র অর্থাদির আলোচনা অবশ্য গুরুত্ব পেত না। বরং অর্থ, ‘একার্থ’ বা ‘আভিধানিক অর্থ’ বা বাচ্যার্থ, ‘পদার্থ’ (পদ ও অর্থ), লক্ষণার্থ, ‘বিবক্ষিত’ তথা ‘অভিপ্রেত’ অর্থ, বাক্যিক পদন্যাসে ‘অর্থের বিপর্যয়’, ‘অর্থবোধের কাঠিন্য’ ইত্যাদি তিনি তাঁর আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। এমনকি বাক্ধ্বনির অর্থ, যৌগিক তথা যুক্ত ক্রিয়ার অর্থের স্পষ্টতা কীভাবে তৈরি হয় তাও সংক্ষেপে দেখিয়েছেন। যেমন ‘মারা যাই’, ‘চলা যায়’ ইত্যাদি।

এছাড়াও ‘অভাবার্থ’, ‘ন্যূন অর্থ’, ব্যাবত্তানার্থ, কালার্থ, সমানার্থ, পার্থক্যার্থ, বিপরীতার্থ ইত্যাদি তাঁর গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এ তিনি উল্লেখ ও আলোচনা করেছেন। আসল কথা এই যে, তিনি কেবল অভিধানের অর্থে আটকে না থেকে অন্যান্য অর্থও যে বিদ্যমান তার আভাস দিতে প্রয়াস করেছিলেন, বর্তমান নানার্থ সন্ধানের যুগে তা সহজেই বুঝতে পারি।

টীকাসূত্র

১। তখন বাংলা শব্দটি ভাষার জন্য স্থির হয়নি, বরং ‘ভাষা’, ‘বাঙ্গালি ভাষা’ (অনুষ্ঠান, ঈশোপনিষৎ), ‘বাঙ্গলা ভাষা’ (অনুষ্ঠান, বেদান্ত গ্রন্থ), ‘বাঙ্গলা ভাষা’, ‘বাঙ্গালা ভাষা’ (ব্রাহ্মণ সেবধি), ‘গৌড়ীয় ভাষা’ (গৌড়ীয় ব্যাকরণ), ‘BunglaÕ (Bengali Grammar) ইত্যাদি তখন চলত।

২। সেইসঙ্গে এ-কথাও উল্লেখ্য যে, প্রাচীন বা মধ্যযুগের বিষয় যদি আধুনিক তত্ত্বের নিরিখে বিচার্য হয়ে থাকে তাহলে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের আলোকে রামমোহনের এই আলোচনা বৈধ হতে বাধা থাকে না। তাছাড়া তাঁর বিশ্লেষণে এমন সূত্রাদি বিগর্ভিত ছিল বলেই এরকম আলোচনা সম্ভব হয়েছে।  

৩। কারণ রামমোহন জানতেন যে, ব্যাকরণ-এর অর্থ হলো ভেঙে দেখানো, আর Grammar হলো শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ধারণ, যেমন উচ্চারণশুদ্ধি (orthoep), লিপিশুদ্ধি (orthograph) ইত্যাদি। তাঁর ইংরেজির বাংলা গ্রামার ও বাংলা ব্যাকরণে এগুলি অনেকখানি বিদ্যমান। 

৪। রামমোহন পাঠশালা ও টোল বা চতুষ্পাঠীতে মাতৃভাষা ও সংস্কৃত পড়েন; পরে কাশীতে সংস্কৃত শাস্ত্র পড়েন, মক্তবে ফারসি ও আরবির প্রাথমিক পাঠ নেন; পাটনাতেও শিখতে যান আরবি-ফারসি। মুর্শিদাবাদে নবাবের দরবারে চাকরির সূত্রে তাঁর লেখা প্রকাশ তুহ্ফত-উল-মওয়াহিদ্দিন (=একেশ^রবাদীদের প্রতি উপহার), এই গ্রন্থের ভূমিকা আরবিতে, অবশিষ্ট অংশ ফারসিতে লিখিত। এই গ্রন্থের শেষে ‘মনজারাতুল আদিয়ান’ (=নানা ধর্ম সম্পর্কে) আদৌ প্রকাশিত হয় কি না জানা যায়নি। ফারসিতে সংবাদপত্র মিরাৎ-উল-আখর্বা (১৮২২)-ও তিনি সম্পাদনা করতেন। তাঁর লেখা হিন্দি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়, বেদান্তগ্রন্থ (১৮১৫) ও বেদান্তসার (১৮১৫) পাওয়া যায়নি, সুব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রীর শীত বিচার (১৮২০) ছাড়া। গ্রিক, হিব্রু তো আগেই রপ্ত করেন। কলকাতায় পৈতৃক বাড়ি পাওয়ার পর তেজারতির ব্যবসা শুরু করলে ইংরেজদের সঙ্গে পরিচয় ও ইংরেজি ভাষা শেখায় আগ্রহ।

৫। উডফোর্ডকে লেখা এক পত্রে তিনি জানিয়েছেন ‘I have been studying French with a French gentleman who accompanied me to London and now is living with me (31/01/1833).Õ

৬। বাংলা ভাষার খণ্ডধ্বনি তাঁর হিসাবে ১৬+৩৪ = ৫০ (পরে যা ১২+৪০= ৫২)। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান যে, বাংলা ভাষায় অনেক ধ্বনি বা বর্ণ ‘উচ্চারণে আইসে না’ (গৌড়ীয় ব্যাকরণ, ১ম অধ্যায়/২) – several of these are of rare use এখনো বাংলা প্রাইমারে উল্লিখিত ৫২-টির মধ্যে অনেকগুলি বর্ণ ও ধ্বনি সম্পর্কে একই কথা প্রযোজ্য।

৭। যিনি একাধিক ভাষার গ্রন্থ লেখেন, যে-লেখক-সম্পাদক সম্পাদনা করেন একাধিক ভাষার সংবাদপত্র-পত্রিকা, অধ্যয়ন করেন প্রায় ১০টি ভাষা ও এর শাস্ত্র তিনি আর যাই হোক কেবল মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে একনিষ্ঠ নিরবচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনাই করবেন তা প্রত্যাশিত নয়।

৮। বিষম যুক্ত ব্যাঞ্জনে ম প্রযুক্ত হলে ‘পূর্ব্ব বর্ণকে সানুনাসিক করে’। যেমন স্মৃতি, লক্ষ্মী। বাংলা ভাষার অনেক দোষের মধ্যে ‘এ এক প্রধান দোষ’।

তথ্য-ঋণ

১. নির্মল  দাশ (১৯৯৫), ভাষাপরিচ্ছেদ, সাহিত্যলোক, কলকাতা, পৃ ৩৪-৫৭, ১০৮-১১০। 

২. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (২০০২), বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পৃ ৩০-৩১।

৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৪০২ বঙ্গাব্দ), বাংলা শব্দতত্ত্ব, বিশ^ভারতী গ্রন্থণ বিভাগ, কলিকাতা, পৃ ৬, ১৩৮। 

৪. রাজা রামমোহন রায় (১৮৩৩), গৌড়ীয় ব্যাকরণ, স্কুল বুক সোসাইটি, কলকাতা (১৮২৬), Bengalee Grammar in English Language, Uniterian Press, Calcutta.

.

৫. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (২০০৩), মনীষী স্মরণে,

বাক-সাহিত্য, কলকাতা, পৃ ১-৯।

এছাড়াও রামমোহনের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার অন্যান্য রচনা, আন্তর্জালিক কিছু তথ্য ইত্যাদি সহায়ক হয়েছে।