রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

প্রায় ৪০ বছরের কর্মজীবনে জীবন বীমা করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কাজ করার এবং পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রায় সবার কাছ থেকেই আমি সহযোগিতা পেয়েছি। সব মানুষ একরকম হয় না। সবার মনের উদারতাও একরকম হয় না। একজন নারী হয়েও কর্মক্ষেত্রে আমাকে কোনো ধরনের হয়রানি বা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি – এটা সিনিয়র-জুনিয়র সব সহকর্মীর মন-মানসিকতার কারণেই। অফিসে কমবেশি পছন্দ-অপছন্দ, পক্ষ-বিপক্ষ থাকে না, তা নয়। তবে আমি নিজে এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম। কাজটাই আমার কাছে মুখ্য ছিল, কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে অফিসে আমি আলোচনা করতাম না। আমার সঙ্গে সেসব নিয়ে কথা বলতে কেউ প্রশ্রয়ও পায়নি। আমি বরং সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলার চেষ্টা করতাম। নিজে যেহেতু কোনো ঝামেলায় জড়াতাম না, সেহেতু আমার সঙ্গেও কেউ ঝামেলা করতে আসতো না। আড়ালে-আবডালে কেউ আমাকে নিয়ে কোনো কিছু বলতো কি না, বা করতো কি না, তা নিয়েও আমার কোনো কৌতূহল ছিল না। তাই বলা যায়, অফিসে ছোট বা বড় পদে যারা কাজ করেছেন, আমি সবারই ভালোবাসা পেয়েছি।

আমাদের জাতীয় জীবনের কয়েকটি বিশেষ দিনে আমি অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে একটু ভিন্নভাবে উদ্যাপনের চেষ্টা করতাম। ১৬ই ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ এবং ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আমি অফিসে আমার সাধ্য অনুযায়ী মিষ্টিমুখ করাতাম, না হলে অন্তত চকলেট আর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতাম। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পুরুষ সহকর্মীদের বিশেষভাবে ফুল ও চকলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর একটি রীতি আমি চালু করেছিলাম। নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কর হয়। এই দিবসটি উদ্যাপনের সঙ্গে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক  পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা বের হলে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। পরে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯১১ সাল থেকে ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমে মূলত বামপন্থীরাই দিবসটি পালন করলেও ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ এই দিবস পালনের স্বীকৃতি দিলে সারা পৃথিবীজুড়েই দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের অঙ্গীকারের দিন হিসেবে পালন করা হচ্ছে। স্বাধীনতা লাভের আগেই বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি দিবসটি পালন শুরু করে। আমি জীবন বীমা করপোরেশনের হেড অফিসে ক্ষুদ্র পরিসরে নারী দিবস পালনের যে-ধারা চালু করেছিলাম, তা এখনো চালু আছে বলে শুনেছি।

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস। পাকিস্তানি হানাদার-দখলদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এই দিন মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। তাই বিজয়ের আনন্দটা যাতে অমলিন থাকে সেজন্য আমি সহকর্মীদের মুষ্টিমুখ করিয়ে দিনটি স্মরণ করতাম। বাংলা সনের প্রথম দিনটিতেও পুরনো বছরের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সবার সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় ও মিষ্টিমুখের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতাম। আমার এসব ছোট আয়োজন সবাইকে মুগ্ধ করতো বলেই আমার বিশ্বাস। তাই অফিস কলিগদের সঙ্গে আমার একটি সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

আমাদের একজন জিএম (প্রশাসন) ছিলেন মোশাররফ করিম। অত্যন্ত সজ্জন ছিলেন তিনি। কবিতা-ছড়া লিখতেন। উদার ও অসাম্প্রদায়িক মনের মানুষ ছিলেন। কাজের জন্য তাঁর রুমে গেলে খোলা মনে কথা বলতেন, চা কিংবা কফি না খাইয়ে আসতে দিতেন না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা তিনি একদম পছন্দ করতেন না। বলতেন, ধর্ম তো ব্যক্তির বিশ্বাসের বিষয়। এটা নিয়ে বিবাদে জড়ানো ঠিক নয়। মন্দির-মসজিদ হচ্ছে মনস্থির। মনে ঠাঁই না দিয়ে বাইরে এগুলি নিয়ে ফ্যাসাদে জড়িয়ে লাভ কী!

সরাসরি রাজনীতি করতেন না, কিন্তু নানা ভালো উদ্যোগে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, এমন কয়েক মানুষের সঙ্গেও আমার পরিচয় হয়েছিল। তাঁরা বয়সে আমার বড় ছিলেন। কিন্তু আমার প্রতি তাঁদের একটা অন্যরকম আস্থা-ভরসা ছিল। মহিলা পরিষদের সম্মেলন বা অন্য কোনো উপলক্ষে তাঁদের কাছে গেলে কখনো বিমুখ করেননি। মহিলা পরিষদের কাজের প্রতিও তাঁদের সমর্থন ছিল। নারীর প্রতি সহিংসতা, ঘরে-বাইরে নারীকে যে নিগৃহীত হতে হয় তাঁরা তার নিন্দা করতেন। নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করার মানসিকতার সমালোচনা করতেন। অন্তত দুজনের নাম এক্ষেত্রে আমাকে স্মরণ করতেই হবে। একজন আব্দুস সামাদ, অন্যজন শাফায়াত আহমেদ চৌধুরী। তাঁরা দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জীবন বীমার এমডি বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তাঁরা বেসরকারি দুটি বীমা কোম্পানি গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। শাফায়াত চৌধুরীর অফিস রুমে তাঁর বসার পেছনের দেয়ালে শোভা পেত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ছবি। তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। সামাদ সাহেব এবং শাফায়াত সাহেবের কাছে আমি মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে গেছি সম্মেলনের চাঁদার জন্য। তাঁরা দুজনই খালাম্মার হাতে মোটা অংকের চাঁদা তুলে দিয়েছেন।

সুফিয়া কামালের প্রতিও তাঁদের গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল। খালাম্মা তাঁর জীবনব্যাপী সাধনা দিয়েই মানুষের মনে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছিলেন। অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদাসোচ্চার। শুধু নারীর প্রতি অবিচার বা অন্যায্য কিছু ঘটলেই তিনি প্রতিবাদ করেছেন তা নয়, তিনি ছিলেন সব মানুষের সমান ও ন্যায্য অধিকারের পক্ষে। স্বৈরাচারী এরশাদ শাসনের সময়ও পরিণত বয়সে রাজপথে নামতে দ্বিধা করেননি। একবার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে নেতৃত্ব দিলে পুলিশ বাধা দিয়ে খালাম্মাকে অনুরোধ করে বলেছে, আপনি আর অগ্রসর হবেন না। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারাও ছিলেন খালাম্মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

আমার মনে হয়, আমার প্রতি পরিচিতদের আস্থা তৈরির ক্ষেত্রে হয়তো অজয় রায়ের একটি নেপথ্য ভূমিকা ছিল। তাঁরা সরাসরি রাজনীতি না করলেও প্রগতিশীল চিন্তার অনুসারী ছিলেন। অজয় রায়ের রাজনীতি, লেখালেখি সম্পর্কে তাঁরা জানতেন এবং তাঁকে সমীহ করতেন। আমি অজয় রায়ের স্ত্রী হিসেবে তাঁদের কাছে বাড়তি সহানুভূতি পেয়েছি। এসব মানুষের কথা মনে হলে এখন মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়ে। তখন সমাজে এসব মানুষের সক্রিয় অবদান ছিল বলেই খারাপের দাপট ছিল না। একটি সুস্থ মানসিকতার বিকাশের অবস্থা ছিল। আজ সমাজ যে অপরাধপ্রবণ ও দুর্বৃত্তায়িত হয়ে

পড়ছে, তার একটি কারণ হয়তো মাথার ওপর থেকে ভালো, উদার মনের মানুষগুলি চলে গেছেন। এই মানুষগুলি নিজে ভালো ছিলেন, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা

করেছেন নিজ নিজ অবস্থানে থেকে। তখন ছিল ভালো হওয়া ও ভালো থাকার প্রতিযোগিতা। এখন সর্বত্র যেন খারাপের প্রতিযোগিতা।

মনে পড়ে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর বন্ধু প্রকৌশলী মোকাররম উদ্দিন আহমেদের কথা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর ভগ্নিপতি, রেখা আহমেদের স্বামী। ইন্ডেন্টিং ব্যবসা করে ভালো আয়-উপার্জন যেমন করতেন, তেমনি দান-ধ্যানও করতেন দু-হাতে। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছাকাছি ছিল মোকাররম সাহেবের অফিস। আমার অফিসও ছিল অনতিদূরে। তাই সুযোগ পেলেই তাঁর অফিসে গিয়ে হাজির হতাম। দামি বিস্কুট এবং কফির লোভেই ছিল ওই যাওয়া। তিনি রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না। কিন্তু দেশপ্রেমিক ছিলেন। ছিলেন অসাম্প্রদায়িক এবং উদার মনের মানুষ। তাঁদের পুরো পরিবারই অবশ্য একরকম চিন্তার ছিল। যাঁরা দেশের জন্য কাজ করেন তাঁদের সহযোগিতা করতেন। তাঁর অফিসে আমি প্রয়াত জাসদ নেতা কাজী আরিফ আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুকে একাধিক দিন দেখেছি। মোকাররম সাহেবের সঙ্গে আরো সমমনা বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী কাজ করতেন। তাঁদের কারো কারো সঙ্গেও আমার পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। বিভিন্ন উপলক্ষে তাঁদের কাছ থেকে আমি চাঁদাও নিয়েছি।

মোকাররম সাহেবের অফিসে আমের মৌসুমে আম খাওয়ার এক ধরনের উৎসব হতো। রাজশাহী, রংপুর থেকে ভালো জাতের আম এলেই তিনি আম খাওয়ার দাওয়াত দিতেন। রসালো সুস্বাদু সেসব আমের আঁটি পর্যন্ত আমি চেটেপুটে খেতাম।

মোকাররম সাহেবের ওখানেই পরিচয় হয়েছিল হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনিও প্রকৌশলী ছিলেন। পরে তিনি ইস্টার্ন প্লাজায় আলাদা অফিস করেছিলেন। হুমায়ুন কবিরের ভগ্নিপতিও একজন বিখ্যাত মানুষ, প্রকৌশলী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। শহীদুল্লাহ সাহেবও ছিলেন একজন প্রগতিকামী মানুষ। 

বিয়াল্লিশ

চোখের সামনে কত পরিবর্তন দেখলাম। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের চরম সাম্প্রদায়িক পরিবেশে আমি বেড়ে উঠলেও পরিবার এবং পরিবেশের কারণে অসাম্প্রদায়িক চেতনাই মনোজগতে ঠাঁই করে নিয়েছিল। মানুষকে তার ধর্মীয় পরিচয়ে না দেখে মানুষ হিসেবেই দেখেছি, দেখতে শিখেছি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকরা যতটা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ছিল, সাধারণ মানুষ কিন্তু ততোটা সাম্প্রদায়িক চেতনায় আচ্ছন্ন ছিল না। বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই বসবাসে অভ্যস্ত ছিল। কিছু মানুষ সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনায় জড়িত ছিল না, তা নয়। পাকিস্তান আমলেও মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ছিল, তারা মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির উস্কানি দিত। রাষ্ট্র ও রাজনীতির মদদে অন্তত দুবার – ১৯৫০ এবং ১৯৬৪ সালে পূর্ব বাংলার কয়েক জায়গায় ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটলেও তা ব্যাপক জনগণের মধ্যে বড় কোনো বিরূপতা সৃষ্টি করেনি। ঘোষণা দিয়েই পাকিস্তানকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বানানো হয়েছিল; কিন্তু তারপরও বিশেষ করে পাকিস্তানের পূর্ব অংশে রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক ধারা দুর্বল না হয়ে ধীরে ধীরে বলবান হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের জন্ম, ভাষা-আন্দোলন, কমিউনিস্টদের অবস্থান – সব মিলিয়ে অসাম্প্রদায়িক মানস তৈরি হচ্ছিল। পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ধারাবাহিক যে সংগ্রাম সেটাতে সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণা পুষ্টি পায়নি। বরং ন্যায় ও বিবেকবোধ এবং কল্যাণচিন্তা মানুষকে প্রভাবিত করায় ক্রমেই শান্তির আবহ জোরদার হয়েছে। ধর্মীয় বিভাজনের চেয়ে সব ধর্মমতের মানুষ পরস্পরের সহযোগী হয়ে ওঠার একটি মজবুত গাঁথুনি বাঙালি জাতিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মোহনায় শামিল করেছে।

বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিলিত আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম আমার জীবনকালের সবচেয়ে বড় এবং সেরা ঘটনা। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে কখনো সাম্প্রদায়িকতা ফণা তুলে দাঁড়াবে – সেটা আমার মতো অনেকেরই হয়তো ধারণায় ছিল না। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সংখ্যায় কম হওয়ায় কারো জীবন, সম্পদ বিপন্ন হবে, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হবে, দেশত্যাগী হতে হবে – এটা আমার ভাবনার অতীত ছিল। ধর্মবিভেদের দেয়াল ভেঙে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালির ঐক্যচেতনা ও দেশপ্রেমের যে জাগরণ ঘটিয়েছিল, তা যে এতটা স্বল্পায়ু হবে, সেটা ছিল অকল্পনীয়। অথচ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে  উল্টোযাত্রা শুরু হয় তা এখনো আর ঠিক পথ ফিরে পেল না। পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নতুন করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে আর একপর্যায়ে তা বিপজ্জনক অবস্থা তৈরিতে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এখন তো মানুষকে তার ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতেই দেখা হয়। চোখের সামনেই এক পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশকে দেখছি।

এই যে সমাজে-সংসারে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন এবং মাত্রা কেবলই বাড়ছে, ধর্ষণ, হত্যা, ব্যভিচার যেভাবে নারীর জীবনকে অনিরাপদ করে তুলেছে, সেটা কি আমাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত দোষ দেওয়া হয় নারীকেই, নারীর বাইরে বেরুনো, পোশাক-আশাকের প্রতি ইঙ্গিত করে নির্যাতনের দায় চাপানো হয় তার ওপরই। এক ধরনের বিকৃতি যে আমাদের অনেকের ভাবনা-চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে অন্যায় বা অপরাধপ্রবণ হতে প্ররোচিত করছে, সেটা স্বীকার করতেও দ্বিধা লক্ষ করা যায়। যে-মেয়েটি ঘরে থেকেও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়, যে-শিশুটির কোনো পুরুষের যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ হওয়ার কথা নয় – তাকেও যখন ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়, কিংবা যে-মেয়েটি যথেষ্ট শালীন পোশাক পরেও নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারে না কোনো পুরুষের পশুপ্রবৃত্তির জিঘাংসা থেকে – কীভাবে এসব অপরাধ আমরা মেনে নিচ্ছি নির্দ্বিধায়? এসবের কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কি কারো কাছে আছে?

মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম অবশ্যই পালন করবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে। কাউকে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে বাধ্য করা উচিত নয়। আমার নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে যদি আমি নিজেকে ধর্মপ্রাণ বলে দাবি করি তাহলে তারচেয়ে বড় অন্যায় আর কিছু হতে পারে না। আমি কতটা ধার্মিক তার চেয়ে বড় বিবেচনার বিষয় হওয়া উচিত আমি কতটা মানবিক। অন্তরে বিদ্বেষ-বিরূপতা পুষে রেখে যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, জোড়াজুড়ি করেন, তারাই আজ পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছেন।

এক জীবনে কত কিছু দেখলাম, দেখছি। উদারতা এবং সংকীর্ণতাকে পাশাপাশি দেখেছি। উদারতার পথে হেঁটেছি। সংকীর্ণতাকে পরিহার করেছি। ধর্মকে খারিজ করে নয়, ধর্মকে ধারণ করেই মানবতার জয়গান গেয়েছি। মানুষকে ভালোবাসার চেয়ে বড় ধর্ম যে আর কিছু হতে পারে না – এই বিশ্বাস আগেও যেমন ধারণ করেছি, এখন জীবনের এই সায়াহ্নকালেও তার থেকে বিচ্যুত হওয়ার তাগিদ অনুভব করি না।

মানুষ বিপদাপন্ন হলে তাকে রক্ষার জন্য তার ধর্মপরিচয় জানার চেষ্টা করা গুরুত্বহীন।

হিন্দু না ওরা মুসলিম

ওই জিজ্ঞাসে কোন জন,

কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ

সন্তান মোর মার –

বিদ্রোহী কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বাণী হোক আমাদের চিরন্তন বিশ্বাসের প্রত্যয়ী ধ্বনি।

তেতাল্লিশ

হিন্দু মা-বাবার ঘরে আমার জন্ম হয়েছে। তাই বিশ্বাসের দিক থেকে আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু আমি এমন একটি পরিবেশে বড় হয়েছি, যেখানে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না। আচার-অনুষ্ঠান কিংবা পূজা-অর্চনায় অবশ্যই অংশগ্রহণ করেছি, এখনো করি, তবে সেটা যতটা না ধর্ম রক্ষার জন্য, তারচেয়ে বেশি সামাজিকতা, লৌকিকতা এবং আনন্দ উদযাপনের জন্য।  সংকীর্ণতা এবং কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে সব ধর্মকে সম্মান করার উদারতা সব সময় আমার মধ্যে ছিল, আছে এবং আমৃত্যু তা থাকবে বলে বিশ্বাস পোষণ করি।

বয়স এবং শিক্ষাজীবন এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মধ্যে কিছু মানুষের, বলবো, মানুষ হয়েও যারা বিপুলসংখ্যক মানুষকে তাঁদের কর্ম, বিশ্বাস এবং জীবনাচার দিয়ে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছেন, আমার মনেও তাঁরা বিশেষভাবে দাগ কেটেছেন। তাঁদের একজন একটি ধর্মমতের জনক। তিনি মহামতি গৌতম বুদ্ধ – বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব যাঁর হাত ধরে। অন্যজন স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি হিন্দু ধর্মকে নবজাগরণের পথ দেখিয়েছেন। আরেকজন প্রচলিত ধারার ধর্মগুরু না হয়ে অসংখ্য মানুষের কাছে ‘গুরুদেব’ হিসেবে বিবেচিত, তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই তিনজনের ছবি দেখে আমার মধ্যে ধর্মবোধের চেয়ে মনুষ্যত্ববোধের চেতনা শাণিত হয়ে উঠেছে।

গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন ছবি দেখে আমার মধ্যে একটি বিশেষ অনুভূতি কাজ করে। বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি – এই বাণী উচ্চারণ করে বিশেষ পোশাক পরিহিত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পথচলা সুযোগ পেলেই আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। শান্তি এবং অহিংসার পথে গৌতম বুদ্ধ যে কোটি কেটি মানুষকে আনতে পেরেছিলেন, তার অন্তর্নিহিত শক্তির কথা ভেবে আমি আপ্লুত হই। গৌতম বুদ্ধের কয়েকটি বাণী আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি বলেছেন :

* তুমিই কেবল তোমার রক্ষাকর্তা, অন্য কেউ নয়।

* সবকিছুর জন্য মনই আসল। সবার আগে মনকে উপযুক্ত করো, স্থিতিশীল হও। আগে ভাবো, তুমি কী হতে চাও।

* আনন্দ হলো বিশুদ্ধ মনের সহচর। বিশুদ্ধ চিন্তাগুলি খুঁজে খুঁজে আলাদা করতে হবে। তাহলে সুখের দিশা তুমি পাবেই।

* জীবনে প্রথম ভুল হওয়া মানে এই নয় যে, এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাও।

* অনিয়ন্ত্রিত মন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। মনকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে চিন্তাগুলিও তোমার দাসত্ব মেনে নেবে।

* তোমাদের সবাইকে সদয়, জ্ঞানী ও সঠিক মনের অধিকারী হতে হবে। যতই বিশুদ্ধ জীবনযাপন করবে, ততোই উপভোগ করতে পারবে জীবনকে।

* আমরা অনেকেই একটা কিছুর সন্ধানে পুরো জীবন কাটিয়ে দিই। কিন্তু তুমি যা চাও তা হয়তো এরই মধ্যে পেয়েছ। সুতরাং এবার থামো।

* সুখের জন্ম হয় মনের গভীরে। এটি কখনো বাইরের কোনো উৎস থেকে আসে না।

* অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাও তোমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

* অনেক মোমবাতি জ্বালাতে আমরা কেবল একটি মোমবাতিই ব্যবহার করি। এর জন্য ওই মোমবাতিটির আলো মোটেও কমে না। সুখের বিষয়টিও এমনই।

* অন্যকে কখনো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করো না, নিয়ন্ত্রণ করো কেবল নিজেকে।

* ঘৃণায় কখনো ঘৃণা দূর হয় না। অন্ধকারে আলো আনতে তোমাকে কোনো কিছুতে আগুন জ্বালাতেই হবে।

* শুভর সূচনা করতে প্রত্যেক নতুন সকালই তোমার জন্য এক একটি সুযোগ।

কী অসাধারণ সব বাণী। এগুলির মধ্যে কি কোনো ধর্মচিন্তার প্রভাব আছে? আমার তো মনে হয়, পৃথিবীর সব প্রান্তের, সব মানুষের জন্যই এগুলি চিরন্তন সত্য। ধর্মের নামে হিংসা বা ঘৃণা না ছড়িয়ে আমরা যদি মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা গ্রহণ করতাম, তাহলেই পৃথিবীটা মানুষের সত্যিকার বাসযোগ্য হতো।

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ – স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী যেদিন প্রথম শুনেছি, সেদিনই তা মনে গেঁথে গেছে গভীরভাবে। নরেন্দ্রনাথ দত্ত, যিনি পরে সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন, তিনি কি আসলে বিশেষ ধর্মের কথা প্রচার করেছেন? ‘জীব হচ্ছে শিব’ – এই শিক্ষা তিনি পেয়েছেন তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে। মানুষকে সেবা করলেই যে ঈশ্বরের সেবা করা হয় – এই তো তিনি প্রচার করেছেন। তিনি কি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান – এভাবে মানুষকে ভাগ করে কখনো কোনো কথা বলেছেন? তিনি সবাইকে সত্যের পথে থেকে অস্বার্থপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :

* যখন আপনি ব্যস্ত থাকেন, তখন সবকিছুই সহজ মনে হয়। কিন্তু অলস হলে কোনো কিছুই সহজ বলে মনে হয় না।

* কখনো না বলো না, কখনো বলো না – আমি করতে পারবো না। তুমি অনন্ত এবং সব শক্তি তোমার ভেতরে আছে, তুমি সবকিছুই করতে পারো।

* যা কিছু আপনাকে শারীরিক, বৌদ্ধিক  এবং আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে তোলে সেটাকে বিষ ভেবে প্রত্যাখ্যান করুন।

* দুনিয়া আপনার সম্বন্ধে কী ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দিন। আপনি আপনার লক্ষ্যগুলিতে দৃঢ় থাকুন, দুনিয়া একদিন আপনার পায়ের সম্মুখে হবে।

* কখনো বড় পরিকল্পনার হিসাব করবেন না, ধীরে ধীরে আগে শুরু করুন, আপনার ভূমি নির্মাণ করুন, তারপর ধীরে ধীরে এটাকে প্রসারিত করুন।

* জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত থেমো না।

* পৃথিবী হলো সবচেয়ে বড় ব্যায়ামাগার, যেখানে আমরা শক্ত-সমর্থ হয়ে উঠি।

* মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে সব সময় মনকে অনুসরণ করবে।

* প্রতিদিন নিজের সঙ্গে অন্তত একবার কথা বলো, অন্যথায় হারাতে হবে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সংসর্গ।

* সেই বিষয়ই ত্যাগ করো যা তোমাকে শরীর, বুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে তোলে।

* নেতৃত্ব যখন থাকবে তখন ভাব হবে দাসের মতো, হতে হবে সম্পূর্ণ স্বার্থহীন, অসীম ধৈর্য ধরতে হবে। তাহলে সাফল্য শুধু তোমারই।

* মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সকলকে জাগাতে হবে, তবেই তো দেশের কল্যাণ।

* তুমি খ্রিষ্টের মতো ভাবলে তুমি একজন খ্রিষ্টান, তুমি বুদ্ধের মতো ভাবলে তুমি একজন বৌদ্ধ। তোমার ভাবনা, অনুভূতিই তোমার জীবনশক্তি, জীবনীশক্তি।

* মুক্তি কী? যখন তুমি প্রত্যেক মানুষের মনের মন্দিরে ঈশ্বরের অবস্থান অনুভব করতে পারবে, সমস্ত বন্ধন থেকে তুমি মুক্তি পাবে। মুক্ত হবে তুমি।

* সমাজ অপরাধীদের কারণে খারাপ হয় না। বরং ভালো মানুষের নীরবতার কারণে হয়।

* আর কিছু করার দরকার নেই। দরকার শুধু প্রেম, ভালোবাসা ও সহিষ্ণুতা। জীবনের অর্থ বিস্তার আর বিস্তার ও প্রেম একই কথা। সুতরাং প্রেমই জীবন, এটাই জীবনের একমাত্র গতি।

* চোখ আমাদের পেছনের দিকে নয়, সামনের দিকে, অতএব সামনের দিকে অগ্রসর হও। আর যে-ধর্মকে নিজের ধর্ম বলে গৌরববোধ করো, তার উপদেশগুলিকে কাজে পরিণত করো। ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করুন।

* দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে যেন আমি ঈশ্বরকে দেখি। নিজের মুক্তির জন্য তাদের কাছে গিয়ে তাদেরই পূজা করবো, ঈশ্বর তাদের মধ্যে রয়েছেন।

এইসব কথামৃত আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে বলেই হয়তো আমি মানুষকে বেশি ভালোবাসি, মানুষের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রাখতে পছন্দ করি। যদিও দিনদিন অনেক কিছুই বদলে যেতে দেখছি, মানুষে মানুষে বিভেদ-বিভ্রান্তি তৈরির ক্ষেত্র প্রসারিত হতে দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছি, তারপরও মানুষের শুভবোধের ওপর আস্থা হারাতে চাই না।

আমার চিন্তা-ভাবনা প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকাও কোনো অংশেই কম নয়, বরং বেশি বলেই মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান-কবিতা এবং অন্য রচনাপাঠে নিজেকে সামান্য হলেও সমৃদ্ধ করতে পেরেছি – এটা আমার এক বড় পাওয়া। শুধু বাংলায় এমএ পাশ করেছি বলে নয়,  অজয় রায়ের মতো একজন জ্ঞানপিপাসু এবং মুক্তচিন্তার মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়ে, তাঁর সঙ্গে এক ছাদের নিচে বসবাস করেও আমি আমার চিন্তার প্রসারতার সুযোগ পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : আমি ‘হিন্দু’ আমি ‘মুসলমান’ – এই কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো; কিন্তু আমি ‘মানুষ’-এ কথা কাহাকেও বলতে শুনি না। যারা মানুষ নয়, তারা হিন্দু হোক বা তারা মুসলমান হোক, তাদের দিয়ে জগতের কোনো লাভ নেই। 

আমি আমার ‘মানুষ’ পরিচয়টি নিয়েই গৌরববোধ করতে চাই। হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়েছি, এটা আমার কোনো অপরাধ নয়। এতে আমার কোনো হাত নেই। এ নিয়ে আমার লজ্জাও নেই। কারণ আমার ধর্মের কাছ থেকে আমি মানবপ্রেমের শিক্ষাই পেয়েছি। বহু দেব-দেবীর প্রতি অশ্রদ্ধা জাগে না এজন্য যে, অন্তরে আমি এক ঈশ্বরকেই ধারণ করি। মানবিকবোধশূন্য কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত হওয়া থেকে নিজেকে সচেতনভাবে  বিরত রাখি, বিপন্ন মানুষের সঙ্গে একাত্মবোধ করি। মানুষের  প্রতি সংবেদনশীলতা নিয়েই যেন জীবনের শেষ দিনটিও পার করতে পারি। (চলবে)