ভোররাতে একটু দূরে চোখের সামনে দিয়ে ছোট পাখিগুলি দলবেঁধে উড়ে গিয়ে বসল আরেকটা ক্ষেতের মধ্যে। মফিজ আর সাজু তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখল। আসলে জালটা ঠিকমতো পাতা হয়নি। একপাশ খোলা ছিল। না হলে এমনটা হওয়ার কথা নয়।

মফিজ তাকায় সাজুর দিকে, কেমুন হলো রে, তুই কোনো কামের না। এতদিনেও জাল-পাতা শিখলিনে!

মফিজের চাইতে সাজু বয়সে কিছুটা ছোট আর ছটফটে। সে ঠিক বুঝতে পারছিল না, আসলে সমস্যাটা কোথায় হয়েছে, কেননা তার এখনো মনে হচ্ছে, জাল পাতার সময় কোনো ভুল হয়নি। তাহলে পাখিগুলি জালের ফাঁক গলে ফুরুত করে উড়ে গেল কেমন করে?

মাথার ওপরের আধো অন্ধকারে ঢাকা ভোরের আকাশ ধীরে ধীরে ফর্সা হয়ে সূর্যের রক্তিম আভা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কাছে-দূরের গাছগাছালির ওপরে মায়াবী আলোর রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ঘুম ভেঙে গেছে পাখপাখালির। তাদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে সমস্ত বনাঞ্চল।

মুনিয়া পাখির মতো ছোট অনেকগুলি পাখি একটু দূরের ক্ষেতের মধ্যে ছোট ছোট ঠোঁট দিয়ে খাবার খুঁজে চলেছে।

হাতে-ধরা পাখির খাঁচাটাকে একপাশে নামিয়ে রেখে বড় একটা গাছের নিচে বসে পড়ে মফিজ। এখন কী করবি রে … বেশি পাখি তো ধরা গেল না – মফিজ তাকায় সাজুর দিকে।

আজ আর পারবনি, সাজু বলে, সুয্যি উঠে গেছে, এবার চলি যেতে হবে। এ পর্যন্ত কটা পেলুম গো মফিজভাই?

আট-দশটা হতি হতে পারে, বলতে বলতে খাঁচার দিকে তাকায় মফিজ, ওপরে উঠতে উঠতে বলে, নে চল … আজ আর কাজ হবেনে।

দুই হাতে ছড়ানো জাল গুটিয়ে ডাক দেয় সাজুকে, কই, চলে আয় …

মফিজ ভাই …, হঠাৎ দূর থেকে কেউ যেন ডাক দেয়।

মফিজ বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া পায়েচলা পথের দিকে তাকায়। দেখে দূর থেকে হেঁটে হেঁটে ওদের দিকে আসছে লতিফুর। পাশের গ্রামের ছেলে লতিফ শহরে থাকে। খুব চালাক-চতুর ছেলে, কোথায় কী করে, ঠিক করে কেউ জানে না।

তবে লতিফ সম্পর্কে অনেক কানাঘুষা আছে। নারী-শিশু চোরাচালানকারীদের সঙ্গে তার নাকি যোগাযোগ আছে। হয়তো সেজন্যই মফিজ মনে মনে ওকে ঠিক ভালো চোখে দেখে না। তবে ওর একটা গুণ আছে, সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে ওস্তাদ। এমন মিষ্টি করে কথা বলে যাতে ওর ওপর সহজে কেউ রাগ করতে পারে না, শয়তানিটাও ধরতে পারে না। ও যেমন বোঝায়, সবাই তাই বোঝে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের কাছে চলে আসে লতিফুর।

কোথা থেকে আলি রে লতিফ? মজিদ তাকায় ওর দিকে।

ওপার গেছিলাম, কাম ছিল … পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলে লতিফুর। এইবার ভাবছি কিছুদিন থাকুম বাড়িতে। দৌড়াদৌড়ি আর ভালো লাগে না।

ভালো, তবে এবার বাড়িতে থাইকা থিতু হ। বিয়া-শাদি কর। বুড়া বাপ-মা’রে আর কষ্ট দিস না, কয়দিন আর বাঁচবে?

ঠিকই কইছো, মজিদভাই … আসলে এমন কইরা আর চলে না …

মজিদ কোনো কথা বলে না। নিঃশব্দে হাঁটতে থাকে। লতিফুরও পাশে পাশে হাটে। তবে মনের মধ্যে তার কী চিন্তাভাবনা চলতে থাকে, সেটা কেউ বুঝতে পারে না।

কিন্তু মফিজ জানে, আসলে লতিফ মানুষ ভালো নয়। বেশ কিছুদিন আগে এই গ্রাম থেকে দুটো মেয়েকে কাজ দেওয়ার নাম করে শহরে নিয়ে গিয়ে বর্ডার পার করে ওপারের পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছিল। তা নিয়ে মহাগণ্ডগোল হয়েছিল। পরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে একটি মেয়েকে উদ্ধার করা গেলেও অন্যজনকে আর উদ্ধার করা যায়নি। এই ব্যাপারে লতিফ জেল খেটেছিল তিন বছর। তারপরে দু-তিন বছর সে আর এই গ্রামেই আসেনি। মফিজের ধারণা, ও যত যাই বলুক না কেন, চোরাকারবারিদের সঙ্গে ওর এখনো যোগাযোগ আছে। তবে এখন সে নিজ গ্রামে মেয়ে ভাগানোর কাজ করে না। অন্য গ্রামে করে।

যশোরের ঝিকরগাছা হয়ে আরো ভেতরে শিমুলিয়া বাহাদুরপুরের পরে এই গ্রামগুলি একেবারে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া – একটা বড়সড় খালের এপার-ওপার, দুই দেশের দুই জনপদ, যেখানকার বেশিরভাগ মানুষের পেশাই হচ্ছে মানুষ থেকে শুরু করে গরুসহ নানা জিনিসপত্র চোরাচালান করা।

মফিজের পেশা এপার থেকে নানা ধরনের পাখি ধরে ওপারে নিয়ে বিক্রি করা। ওপারেও তার লোক আছে, যারা এসব পাখি কেনাবেচা করে। সেই সুবাদে অনেক চোরাচালানিকে সেও চেনে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়। তাদেরই একজন একদিন লতিফুরের আসল ব্যবসাটার কথা বলে দিয়েছিল মফিজকে। সেই থেকে লতিফ সম্পর্কে অত্যন্ত খারাপ ধারণা গড়ে উঠেছিল মজিদের মনের মধ্যে। সেই ধারণা এখনো বদলায়নি। সব সময় সে ওকে সন্দেহের চোখে দেখে।

গ্রামে ফিরে আসার পরদিনই সকালে বেরিয়ে পড়ে লতিফুর। এবারের টার্গেট এখান থেকে দুই গ্রাম পরে রসুলপুরের রশিদ হাওলাদারের বাড়ি। রশিদ মিয়ার বড় মেয়েকে এবার চাকরি পাওয়ার কাগজ দেখিয়ে নিয়ে যাবে শহরে। এই রকমই

কথাবার্তা চলছে মাসতিনেক আগে থেকে। এসব ব্যাপার এ-গ্রামের কেউ কিছু জানে না। কিছু বুঝতে পারবে – তেমন সুযোগও সে রাখে না। টোপটাই ফেলা হয় যতটা সম্ভব গোপনে।

জেল খেটে বেরিয়ে আসার পর মফিজ তার চতুরতা আর মিষ্টি ব্যবহার দিয়ে সেই বদনাম প্রায় ভুলিয়ে দিতে পেরেছে এখানকার মানুষদের। অর্থাৎ এখন সে ভালো হয়ে গেছে।

কিন্তু আসলে জেলে থেকে কিছু ভয়ংকর অপরাধীর সঙ্গে মিলেমিশে ভেতরে ভেতরে সে আরো দুষ্টবুদ্ধিসম্পন্ন এবং কৌশলী হয়ে উঠেছে। এটা কেউ বুঝতে পারছে না। ফলে সে থেকে যাচ্ছে সবার সন্দেহের বাইরে।

এখন সব সময়ই লতিফ একটা ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়। এবারে বাড়িতে আসার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সে প্রচার করে দিয়েছে, বাড়ি এসে এবার বিয়ে-শাদি করে কিছুদিন বাড়িতে থেকে তারপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে শহরে চলে যাবে। এই গ্রামেই আর থাকবে না।

লতিফের এই রটনাটা অনেক মানুষ বিশ্বাস করলেও মফিজ বিশ্বাস করে না। তার যেন কেন মনে হয়, লতিফুরের এই রটনার পেছনে লুকানো কোনো দুর্বুদ্ধি আছে। বড় ধরনের চাল আছে। মফিজ ভাবে, এমনও হতে পারে, শাদি করে যে মেয়েটাকে নিয়ে যাবে তাকেও সে শেষ পর্যন্ত চোরাকারবারিদের হাতে তুলে দেবে।

বেশি সময় লাগল না, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই লতিফুর চলে এলো রসুলপুরে রশিদ হাওলাদারের বাড়িতে। ঠোঁটের ভাঁজে ঝুলে আছে চমৎকার মৃদু হাসির আভাস। গ্রামে ফিরে আসা অবধি এই মুখোশটি সে মুখ থেকে আর খোলেনি।

এদিকে রশিদ মিয়ার মুখোমুখি বসে কিছুটা দ্রুততার সঙ্গেই আগের কথার জের টেনে প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে আনে লতিফুর, আপনারা ওর জন্য একদমই চিন্তাভাবনা করবেন না, চাচা। আমি তো আছি। গার্মেন্টসে এখন হাজার হাজার মাইয়ালোক কাজ করে, আমাগো মাইয়াও করব।

তুমি তো ঠিকই বলছ, বাবা। কিন্তু আমাগো মন যে মানে না।

আমাকে আপনে বিশ্বাস করেন না, চাচা?

করি তো, না হইলে তোমার হাতে মাইয়াডারে তুইলা দেই?

রশিদ মিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে শুনতে জাহেদার আম্মা রাশেদা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার চোখ মোছেন।

এই দেখেন কাগজপত্র, পকেট থেকে কোনো এক গার্মেন্টসের নিয়োগপত্রের একটা ফটোকপি রশিদ মিয়ার হাতে তুলে দেয় লতিফুর।

কাগজটার লেখাগুলির ওপর চোখ বুলিয়ে কীসব ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ পরে একটা দীর্ঘশ^াস ফেলেন রশিদ মিয়া।

কবে যাওন লাগবো? পাশ থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানতে চান রাশেদা বেগম।

কয়েকদিন পর আমি যখন শহরে যামু তহন লইয়া যামু, সবকিছু গুছাইয়া রাখবেন।

এই দেখেন, ভুইলা গেছি, কোম্পানির মালিকের কাছ থিকা অর প্রথম মাসের মাইনার কিছু টাকা অগ্রিম লইয়া আইছি। এই নেন – বলতে বলতে লতিফুর পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে রশিদ মিয়ার হাতে দেয়।

এইবার তাইলে আমি যাই, চাচা, আরো অনেক কাম পইড়া রইছে …, বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় লতিফুর।

এখানকার কাজ শেষ। এরপর এখানে আর বেশিক্ষণ থাকার দরকার নেই। চারদিকে একবার চোখ বুলায় লতিফুর, তারপর দ্রুত পায়ে বাড়ির বাইরের বড় রাস্তাটার দিকে চলে আসে।

আপাতত এই পর্যন্ত, মনে মনে ভাবে লতিফুর, দু-চারদিনে এদিকে আর আসা ঠিক হবে না। কথাবার্তা যা হওয়ার এখন মোবাইলেই হবে। টাকা-পয়সা কিছু যখন হাতে ধরানোই গেছে, তখন পাখি আর খাঁচার বাইরে যাবে না।

বড় রাস্তায় বেরিয়ে এসে একটু দাঁড়ায় লতিফ। তারপর বাড়িতে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা নারকেলগাছটার দিকে হঠাৎ চোখ পড়তেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকা আধবুড়ো লোকটাকে দেখতে পায়। বাড়িতে ঢোকার সময় এই লোকটা এখানে ছিল বলে তো মনে পড়ছে না, তাহলে? আর নিজের গ্রাম না হওয়ার কারণে এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষেরই ওকে চেনার কথা নয়।

এই সময় প্যান্টের পকেটের মধ্যে রাখা মোবাইলটা হঠাৎ বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখে অচেনা একটা নম্বর। সঙ্গে সঙ্গে কেটে দেয়। এখানে বসে কোনো ফোন ধরা যাবে না। একটু দূরেই আবার ওই লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একটু পরে রহস্যময় ওই লোকটির দিকে তাকিয়ে তাকে আর দেখতে পেল না। আশ্চর্য তো!

মনটা কেমন ভারী হয়ে উঠল লতিফের, এমন কেন হচ্ছে? ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে একসময় বাড়ির পথ ধরল লতিফুর।

এদিকে যথাসময়ে মফিজ সব খবরই পেয়ে গেল তার ঠিক করা মানুষের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার বুঝে গেল, লতিফ এখন নিজের গ্রাম ছেড়ে জাল ফেলেছে অন্য গ্রামে। যে-গ্রামের মানুষ লতিফকে ঠিকমতো চেনেই না।

মফিজের লোক ঠিকভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। দুদিন পরে দূরবর্তী আর এক গ্রামে লতিফুরের আরেকটি শিকারের খবর নিয়ে এলো। তবে ঘটনার বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে, তাকে নেওয়া হবে আর কিছুদিন পরে, এবারে হবে না।

মফিজ জানে, এসব ক্ষেত্রে যাওয়া-আসার জন্য ব্যবহার করা হয় সাধারণত একেবারে ভোরবেলা অথবা সন্ধ্যার পরের সময়। যে-সময় রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম থাকে।

কিন্তু মফিজ মনে মনে ভাবে, ওকে আটকানো যাবে কীভাবে? কখন কোথা দিয়ে পাখি ফুরুত করে উড়ে যাবে, ও হয়তো জানতেই পারবে না।

মাঝখানে কদিন খোঁজখবর না থাকলেও দিনতিনেক পরে বাজারে হঠাৎ পথের মাঝে লতিফুরের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মফিজের।

কেমন আছো, লতিফ? বাড়িতে আছো তো আরো কিছুদিন? বিয়া-টিয়ার কী করলা?

মাইয়ার খোঁজে আছি, এক জায়গায় কথাবার্তা হইছে, পরশু একবার দেখতে যামু … বলতে বলতে বাজারের দিকে চলে যায় লতিফুর।

মফিজও কোনো কথা না বলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বাঁদিকের রাস্তায় চলে যাওয়া লতিফুরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর হাঁটা শুরু করে।

হাঁটতে হাঁটতে লতিফের কথাটাই ভাবছিল মফিজ, পরশু যাবে? কোথায়? মাইয়া দেখতে, নাকি মাইয়া লইয়াই যাবে!

কথাটার মধ্যে নির্ঘাত প্যাঁচ আছে … তাইলে কি পরশুর পরের দিন, নাকি আগামীকাল? একটা ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেল যেন মফিজ। এর মধ্যে যে-কোনো একটা দিন হবে, তাতে আর ভুল নাই।

না, কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, হাত ফসকে বেরিয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

বাজার থেকে ফেরার পথে সাজুকে খবর পাঠালো মফিজ, কাল ভোরে আবার পাখি ধরতে যাওন লাগবে।

কিছুটা অন্ধকার থাকতেই খুব ভোরে পাখি ধরার জাল নিয়ে চলে এলো সাজু। পাখির খাঁচা-হাতে বেরিয়ে এলো মফিজ।

আইজ আবার ধরন লাগবে? পাখি তো আছে। সাজু রীতিমতো বিরক্ত।

আইজ নতুন পাখি ধরুম …

কথাটা ঠিক বুঝতে পারে না সাজু, অবাক হয়ে মফিজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে কী যে কন আপনে মফিজভাই, বুঝিই না …

আইজ লঞ্চঘাটের দিকে যাইতে রাস্তার পাশের কলই ক্ষেতে পাখি ধরুম।

ওইখানে! সাজু আরো অবাক হয়, ওইখানে পাখি তো দেখি নাই …

আইজ দেখবিনে … নে, জলদি চল …

ওরা যখন লঞ্চঘাটে যাওয়ার রাস্তার মাঝামাঝি ততক্ষণে আকাশ থেকে কিছুটা অন্ধকার মুছে গিয়ে নীলের আভাস ফুটে উঠেছে। আশপাশের গাছগাছালিতে পাখপাখালির ডানা ঝাপটানো শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত বনবাদাড় ওদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠবে।

আর কিছুটা পথ পেরিয়েই থমকে দাঁড়াল মজিদ। তারপর রাস্তার ডানপাশে যেখানে দু-তিনটা বড় গাছ একসঙ্গে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতের ইশারায় সাজুকেও ওর পাশে যেতে বলে।

সাজু কিছুটা অবাক হয়ে মজিদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, এটা কী হইতেছে মফিজভাই! বলতে বলতে মজিদের কাছে চলে আসে সাজু, কোথায় আপনার পাখি, কোথায় আপনার ফাঁকা জায়গা, জালই বা পাতুম কোথায় …

মজিদ ওর অর্ধেক কথা শোনার মধ্যেই রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখে আধো অন্ধকারের মধ্যে দ্রুত দুটি মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে আসছে।

আরেকটু কাছে আসতেই মজিদ লতিফুরকে একটা ব্যাগ-হাতে পরিষ্কার দেখতে পায়, পেছনে বোরকা-পরা সেই মেয়েটি।

আর সময় নষ্ট করে না মজিদ। হাতে-ধরা পাখির খাঁচাটা মাটিতে নামিয়ে রেখে এক লাফে গাছের পাশ দিয়ে বেরিয়ে রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।

ওর সামনে এসেই থমকে দাঁড়ায় লতিফুর। … মজিদভাই, তুমি এইখানে!

এক পা এগিয়ে গিয়ে খপ করে লতিফুরের একটা হাত ধরে ফেলে মজিদ, এইফির তোরে জেলের ভাত খাওয়ামু আমি।