সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের শীর্ষ গবেষক, আমৃত্যু শিক্ষাব্রতী, প্রাবন্ধিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রসারে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ও একটি গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ-আন্দোলনের ধীমান ভাবুক ড. আনিসুজ্জামান ১৪ মে ২০২০ সালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অন্যতম ট্রাস্টি, কালি কলম পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এবং আমাদের সকল কর্মের সহযাত্রী ও প্রেরণাদাতা। তাঁর প্রযত্ন ও উপদেশকে ধারণ করে কালি কলম হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির জন্য যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা সহজে পূরণ হবে না। কালি কলম সাহিত্যপত্রিকা হারালো তার অভিভাবক। জন্মলগ্ন থেকে তিনি এ-পত্রিকার জন্য যে নীতি নির্ধারণ করেন আমরা তা যথাযথ পালন করেছি, তাঁর উপদেশ ও নির্দেশনায় আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি ও বিরতিহীনভাবে এ পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি। বাংলাদেশের সাহিত্যপত্রিকার ইতিহাসে এই যাত্রা কম গুরুত্ববহ নয়।

আনিসুজ্জামান বহুধারার কাজের মধ্যে বাঙালির স্বরূপের অনুসন্ধান ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির চিন্তা ও ভাবুকতায় যে-মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন তা এদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে। তাঁর চিন্তা ও সকল প্রয়াসে এই অনুসন্ধান প্রত্যক্ষ করা যায়। উল্লিখিত বহুবিধ কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি মনীষার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন। কৈশোর-উত্তীর্ণ কাল থেকে তাঁর সামাজিক দায় ও অঙ্গীকার গড়ে উঠেছিল। এই দায়ই তাঁকে সর্বদা চালিত করেছে বহুমুখিন সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও সামাজিক আন্দোলনকে খরপ্রবাহিনী করে তুলতে। তাঁর চরিত্র মাধুর্য, স্বভাবধর্ম ও সৌজন্যে যে-বিনয় ছিল এবং সকলকে ভালোবাসা ও স্নেহ করার যে-উজ্জ্বল প্রকাশ ছিল তা ড. আনিসুজ্জামানকে করে তুলেছিল এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। বহু লেখক, শিক্ষক, শিল্পী, শিক্ষার্থীকে দেশচেতনায় উদ্দীপিত করেছেন তিনি। জাতীয় ও সামাজিক সংকটকালে তাঁর নেতৃত্বের দায় বহন এ-অঞ্চলের বাঙালিকে প্রাণিত করেছে পথ চলতে।

এই মানুষটিকে হারিয়ে আমরা শোকে স্তব্ধ।

কালি কলম দেশে বিরাজমান সংকটকালেও প্রয়াসী হয়েছে তাঁকে নিয়ে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক সংখ্যা প্রকাশ করতে। আমরা চেষ্টা করেছি তাঁর গবেষণা এবং দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর অবদানকে স্মরণ করতে, তাঁর গবেষণাকর্ম এবং স্বরূপ সন্ধানের প্রয়াসের মর্ম ধরতে এবং এই মহান ব্যক্তিত্বের নানা দিক নিয়ে প্রবন্ধগুচ্ছ পত্রস্থ করতে। আমাদের প্রয়াসে অনুকূল সাড়া দিয়ে যাঁরা প্রবন্ধ লিখেছেন তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে কালি কলমের বর্ধিত কলেবরের এ-সংখ্যাটি পঞ্চম-যষ্ঠ/ আষাঢ়-শ্রাবণ ১৪২৭, যুগ্ম সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হলো।