রহিমা আখতার কল্পনা
হারিয়ে যেয়ো না মিঠা জল, প্রিয়পাতা সবুজ সুহৃদ
হারিয়ে যেয়ো না মুখচম্পা, কৈশোরিক চাঁদছোঁয়া নিদ
হারিয়ে যেয়ো না প্রিয়পদ্ম, বর্ষালক্ষ্মী – শৈশবের মুখ
হারিয়ে যেয়ো না জোনাকিরা, রাত ভালোবেসে খোঁজো সুখ।
আড়ালে থেকো না প্রিয়কুঁড়ি, ফুটে ওঠো রোদের সোহাগে
আড়ালে থেকো না কাশবন, ঢেউ তোলো – ধু-ধু চর জাগে
আড়লে থেকো না রাতচরা, এ-প্রহর তোমার একার
আড়ালে থেকো না শ্রুতি-চোখ, এই লগ্ন প্রবাহ দেখার।
আমাকে ডেকো না জলগন্ধী নিরালোকে গাঙুরের ঘাট
আমাকে ডেকো না রাইশস্য, বারোয়ারি পণ্যভরা হাট
আমাকে ডেকো না সুখনিদ্রা, অনায়াস-ভাগ্যে জেতা হীরা
আমাকে ডেকো না প্রিয় ভোর, স্থলপদ্ম – পীড়িত অধীরা।
ছড়িয়ে দিয়ো না স্মৃতিজল, সিন্দুকের লুকানো আতর
ছড়িয়ে দিয়ো না গ্লানিময় পরাজিত হৃদয় কাতর
ছড়িয়ে দিয়ো না বৃন্তচ্যুত পাতাদের গোপন কাহন
ছড়িয়ে দিয়ো না গুপ্ততথ্য – ছদ্মযুদ্ধে কে কার বাহন!
গোপনে রেখো না কৈশোরিক সরলতা, মোহের ম্যাজিক
গোপনে রেখো না জালকাটা পাখিটির প্রেম সামাজিক
গোপনে রেখো না বাজিকর, বৈদ্যনারী, সাপের চালান
গোপনে রেখো না ইবাদত, জপমালা, ঠাকুর-দালান।
কখনো ভুলো না জোড়াদীঘি, আম নিম হিজলের ছায়া
কখনো ভুলো না আলপথ, পাকাধান, ছিপঝাড় – মায়া
কখনো ভুলো না ভরা বর্ষা, উজানের রুপালি মাছেরা
কখনো ভুলো না, খরাকালে কেঁদেছিলো মুমূর্ষু গাছেরা।
পেছনে ডেকো না কালো দিন, গুমখুন বিশ্বাসহীনতা
পেছনে ডেকো না জরাজীর্ণ মৃত সাধ, অপার দীনতা
পেছনে ডেকো না অপবাদী নিন্দুকের ক্রোধের করাত
পেছনে ডেকো না সূর্যালোকে নেমে আসা দুর্যোগের রাত।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.